সন্ধ্যালয়ের প্রণয় পর্ব-১১+১২

0
1172

#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| এগারো তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌

” সন্দেহের বশে এমন কোন কাজ করবেন না যা ভবিষ্যতে আপনার বিপদ হয়ে দাঁড়াবে, মিস্টার নীলয় নীলাভ। আপনি আমার থেকে ছয় বছরের বড়ো হতে পারেন তবে জ্ঞানের দিকে খুবই দুর্বল। সারাদিন, সন্ধ্যা, রাত আপনার সাথে ছিলাম! তবুও বলছেন, আজকের দুর্ঘটনার জন্য আমি দায়ী?”

ছমছমে পরিবেশ। সন্ধ্যার স্পষ্টকথা শহরের প্রতিটা দেয়ালে বাড়ি খেয়ে জোরে আওয়াজের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করছে। নিলয়ের মুখশ্রী কাঠিন্যতায় ছেয়ে আছে।
হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে যেন ভুলবশত সন্ধ্যাবতীর গায়ে হাত না তুলে ফেলে। চোখ বন্ধ করে সে রাগ নিয়ন্ত্রণের বৃথা প্রচেষ্টা করে বলল,
” ঘরে ফিরে যাও সন্ধ্যা। নয়তো তোমায় আঘাত করতে আমি দ্বিতীয়বার ভাববো না।”

সন্ধ্যা কথা শুনলো না উলটো নিলয়ের কাছে এসে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কর্কশ আওয়াজে বলল,

” নিজেকে কি ভাবেন। আরিফ সরকারের প্রিয় বলে যা ইচ্ছা তাই করবেন?”

” রাগিও না সন্ধ্যা। বলেছি চলে যেতে চলে যাও।”
” যাব না। কি করবেন শুনি?”

নিলয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। সন্ধ্যার হাত মোচড়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সন্ধ্যার পিঠ নিলয়ের বুকে গিয়ে ঠেকেছে। নিলয়ের গরম নিশ্বাস সন্ধ্যার পিঠে পড়ছে। ঘন ঘন নিশ্বাসে জানান দিচ্ছে নিলয়ের আকাশ সমান রাগের কারণ। সন্ধ্যা ভয় পেয়ে যায়। একা ছাদে এসেছে ভেবে আফসোস করে।

” এত সাহস দেখানো ভালো না মিস ঐরাবতী। মেয়েদের গলা নামিয়ে কথা বলতে হয় নয়তো পদে পদে বিপদে পড়তে হয়। আজ যেই স্বর দিয়ে তুমি আমাকে শাসাচ্ছ আগামীকাল যদি সেই স্বরে যদি আওয়াজ না আসে তখন কী করবে।”
” মে’রে ফেলার পরিকল্পনা করছেন?”

সন্ধ্যা ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না তা নিলয়ের অজানা না। সন্ধ্যার হাত ছেড়ে দেয়। সুযোগ দেয় পলায়নের কিন্তু সন্ধ্যা! সে তো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ত্যাড়া। ঠায় দাঁড়িয়ে রয় সেখানে। নিলয় এবার সন্ধ্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
” ভুল সংশোধন করার সুযোগ দিচ্ছি।”

নিলয় আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না। সন্ধ্যার জিদের সাথে মোকাবিলা করলে নিলয়েরও একই রুপ ধারণ করতে হবে যা সে এই মুহূর্তে চায় না। এদিকে নিলয় চলে যেতেই সন্ধ্যা চোখ খুলে তাকায়। রাগে সন্ধ্যার চোখ লাল টকটকে দেখাচ্ছে। সন্ধ্যা আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

” আপনাকে কখনোই ক্ষমা করব না, মিস্টার অসভ্য দুর্লয়।”
———————————-

সকালের সতেজ ঠান্ডা বাতাসে শরীর হিম হয়ে আসছে নিলয়ের। শরীরের পাতলা কাঁথা আরেকটু আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয় সে। কারো নরম স্বর কানে আসায় ঘুম হালকা হয়ে আসে নিলয়ের। পিটপিট করে চোখ খুলতেই সে শুনতে পায়,
” উঠো নিলয়। আরে উঠো না! আর কত ঘুমাবে। বিয়ের পরের সকালে কেউ এত ঘুমায় নাকি?”

চোখ খুলে পুরো পৃথিবীর দেখতে চেয়েও চোখ বন্ধ করে নেয় নিলয়। স্বপ্ন নয় বাস্তবে কোন রমণীর ছায়ামূর্তি তার ঘরে অবস্থান করছে বুঝতে পেরে নিলয় তড়িৎ গতিতে বসে পড়ে। নিলয়ের সামনে সন্ধ্যা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে লাল শাড়ি, গা ভর্তি গহনা, হাত ভর্তি মেহেদী। লাজুক মুখখানা লাল হয়ে আছে লজ্জায়। নিলয়ের মন জুড়িয়ে যায়, গা ছুঁয়ে ঠান্ডা বাতাস বইয়ে যায়। চোখে শান্তি চলে আসে।

” কি গো! কোথায় হারিয়ে গেলে। নতুন বউয়ের মুখ দেখে গিফ্ট দিতে হয় জানো না! কোথায় আমার গিফ্ট?”

” গিফ্ট তো আনি নি।”

হাসিমাখা সন্ধ্যার মুখশ্রীতে নিমেষেই আঁধার নেমে এল যেন। তা দেখে নিলয়ের মুখশ্রীতেও বিষাদ নেমে আসে। নিলয় খেয়াল করে দেখল আঁধারে ঢাকা মুখশ্রী হঠাৎ বিকৃতিরূপ ধারণ করেছে ঠিক যেন ভুলভুলাইয়া সিনেমার মঞ্জুলিকা।

” গিফ্ট আনিসনি মানে কী হ্যাঁ! নতুক বউকে গিফ্ট দিবি না তো কাকে দিবি তোর ঐ এক্স ইরাবতীকে? তা আর হতে দিব না। আজই তোর ঘার মটকে খাব। আসছি, আমি আসছি।”

সন্ধ্যার রূপ পরিবর্তন দেখে নিলয় ঘাবড়ে যায়। সন্ধ্যার চাঁদের ন্যায় মুখ মিনিটেই পরিবর্তন হয়ে রা’ক্ষ’সী রূপ নেয়। নিলয় চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে,

” আমি কোনদিনও আর এমন ভুল করব না মিস ঐরাবতী! তোমাকে বউরূপে আর দেখতে চাইব না।”

স্বপ্ন দেখা ভালো তবে দুঃস্বপ্ন দেখা ভালো না। ঘুম ভাঙতেই নিলয় শোয়া থেকে উঠে পড়ে। সারা শরীর ঘামে ভিজে জবুথবু হয়ে আছে। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে নেয় সে। ভোর রাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। নিলয় মাথার চুল টেনে বিড়বিড় করে বলে,

” এমন রাক্ষসীকে আমি বউ হিসেবে চাই না। এই স্বপ্ন যেন সত্যি না হয়।”
——————

সকালে নাস্তা টেবিলে নিলয় গভীরমুখে করে বসে আছে। আরিফ সরকার অনেকক্ষণ যাবত নিলয়ের ভাবভঙ্গি খেয়াল করছেন। তিনি ভেবেছিলেন তার প্রিয় নাতি নিজ ইচ্ছায় তাকে আসল ঘটনা খুলে বলবে, কিন্তু তা হল না। নিলয়ের গাম্ভীর্যমাখা মুখ আরিফ সরকারের পছন্দ হল না তাই কোন সংকোচ না করে জিজ্ঞেস করে,

” কি হয়েছে নিলয়? কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করছ?”

নিলয় মলিন হাসে। দাদার কথার জবাবে বলে,

” দোয়া কর দাদা যেন খারাপ কিছু না হয়। আমি যা ভাবছি তা যেন না হয়। তাহলে আমাদের সরকার বাড়ির মান সম্মান ডুবে যাবে।”

” খারাপ কিছু মানে?”

” আমার ওপর ভরসা রাখো। খারাপ কিছু হলেও খারাপটাকে ভালো করতে আমি জানি।”

” তোমার উপর ভরসা রাখি বলেই সরকার কোম্পানির দায়িত্ব তোমার উপর ছেড়ে দিয়েছি। আমার পরিপূর্ণ বিশ্বাস আছে তোমাদের প্রতি। তুমি এবং সন্ধ্যা আমাদের কোম্পানিকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে।”

সন্ধ্যাবতীর নাম নিতেই সন্ধ্যা এসে হাজির হয়। কালো রঙের এক সেট থ্রি পিস পডরেছে সে। সাথে কালো কানের দুল হাতে কিছু কাঁচের চুড়ি।

সন্ধ্যা নিচে এসে সকলকে একসাথে দেখতে পেয়ে মাথা নিচু করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে নিলেই নিলয় বাঁধা প্রদান করে,

” সন্ধ্যা দাঁড়াও। গতকাল তোমাকে বলেছিলাম না আজকে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে! আমরা এখন সরাসরি সেই জায়গায় যাব।”
এরপর দাদার উদ্দেশ্যে সে বলে,

” দাদা আসছি সাবধানে থেকো। আমি গার্ডদের বলে যাচ্ছি যেন কড়া পাহারা দেয়।”

বাড়ি থেকে বের হতেই সন্ধ্যা দেখতে পায় সরকার বাড়ির বাহিরে একটি নতুন গাড়ি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। নিলয়ের দিকে তাকাতেই নিলয় বলে,

” নতুন কিনেছি। চলো যাওয়া যাক।”

তিনতলা বিশিষ্ট দালানের সামনে নিলয় গাড়ি থামায়। সন্ধ্যা গাড়ি থেকে নেমে বুঝতে পারে তারা ফরেনসিক ল্যাবে এসেছে। নিলয় গাড়ি লক করে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
” চলুন যাওয়া যাক।”

নিলয় সামনে হাঁটছে। নিলয়ের হাঁটার তালে সন্ধ্যা পেরে উঠছে না। সে নিলয়ের পিছনে এক প্রকার দৌঁড়াচ্ছে। সন্ধ্যার মনে ভয়ের সাথে কৌতূহল জন্মাচ্ছে। ধৈর্য ধারণ করতে পারছে না। তাই নিলয়কে প্রশ্ন করে,

” আমরা কেন এসেছি? সেদিনের ঘটনার রিপোর্ট নিতে? তারা কী আপনাকে খবর পাঠিয়েছে? নাকি ইচ্ছে করে এসেছেন।”

সন্ধ্যার বিচলিত হওয়া দেখে নিলয় বাঁকা হেসে উত্তর দেয়,
” আর কিছু সময় অপেক্ষা করুন মিস ঐরাবতী। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।”

সন্ধ্যাকে নিয়ে একটা ফাঁকা কেবিনে নিয়ে যায় নিলয়। চেয়ারে বসতে বলে সে আবার বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। সন্ধ্যা বসে না থেকে মুঠোফোন বের করে কাউকে ফোন করে,

” বার বার ফোন দিচ্ছিলে কেন? তোমাকে বলেছি তো আমি ব্যস্ত আছি। ঐ অসভ্য দুর্লয় আমাকে ফরেনসিক ল্যাবে নিয়ে এসেছে নতুন নাটক করতে। আমি এবার এই লোকের ফাঁদে পা ফেলব না। আরেকটা কথা গতকাল যা করেছো তার শাস্তির জন্য তৈরি থাকো। যা বলেছি তা করো, কেউ যেন টের না পায়।”

সন্ধ্যা ফোন কে’টে দেয়। আশেপাশে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ঠিক এই কেবিনটা কীসের। সন্ধ্যা ভালো করে খেয়াল করে দেখতে পেল সন্ধ্যা বসে আছে যে স্থানে সে স্থানের ঠিক পিছনটায় একটা কাঠের সেল্ফ রয়েছে। সেখানে চলে যায় সে। কাঠের বক্সের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পরীক্ষনীয় যন্ত্র দেখতে পায়।
সন্ধ্যা ভাবতে থাকে এসব যন্ত্রের কথা। ফরেনসিকের ডাক্তাররা অপরাধীদের অপরাধ ধরে ফেলে, হাজারো মানুষ অপরাধ করে শাস্তি পায় এসব যন্ত্রেরই সাহায্যে।

সন্ধ্যা আনমনে ভেবে হঠাৎ খেয়ালে আসে, সে যদি রাব্বির সাথে নিলয়ের ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার কিছু আলামত এখানে এনে দেয় তাহলে নিশ্চয়ই কিছু একটা বের করা যাবে। সন্ধ্যা ভেবে নেয় নিলয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে একবার সেই গোডাউনে যাবে এবং কিছু আলামত খুঁজবে। যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে নিলয় আসল কালপ্রিট।

কেবিনের দরজা খোলায় আওয়াজে সন্ধ্যার সেদিকে ফিরে তাকায়। নিলয় রিপোর্ট হাতে দাঁড়িয়ে আছে নিলয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে সন্ধ্যা বিচলিত স্বরে বলে,

” ফলাফল এসেছে? কে সে মানুষ? কে ছিল? আমাদের অফিসের কেউ? নাকি বাহিরে কেউ?”

সন্ধ্যার কথা শুনে নিলয় ভিলেন মার্কা হেসে বলে,

” এত বিচলিত হচ্ছ কেন সন্ধ্যাবতী? ধরা পড়ে গিয়েছ বলে?”

” মানে কি বলতে চাইছেন?”

” আমি বলতে চাইছি এখন থেকে ঠিক বার ঘণ্টার মধ্যে তোমার বিচলিত থাকার কারণটার কথা।”
” পরিষ্কার করে বলুন কি বলতে চাইছেন।”

নীলের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। টেবিলের উপর রিপোর্টটি শক্ত করে ফেলে দাঁড়িয়ে যায় সে এরপর কর্কশ আওয়াজ বলে,

” তুমি কিছুই বুঝো না? কী নিখুঁত অভিনয় করেছ তুমি। কি ভেবেছিলে ছেলে সেজে আমাকে ধোঁকা দিতে পারবে! তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছিলে সন্ধ্যা আমি অফিসের আনাচেকানাচে সি সি ক্যামেরা লাগিয়েছি। আমি কেবিনি বসে সকল খবর রাখি।”

নতুন খবর পেলে যেমন মানুষ অবাক হয় সন্ধ্যাও তেমন অবাক হয়েছে। তা দেখে নিলয় আবারো তেতে ওঠে,

” একদম ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করবে না সন্ধ্যা। আমি জানি সেদিন তুমি অফিসের গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে চেয়েছিলে। সেখানের পাহারায় নিযুক্ত লোককে মাথায় আঘাত করেছিলে ঐ কক্ষে প্রবেশ করার জন্য। তুমি খুব সাবধানে যেন সি সি ক্যামেরায় ধরা না পরো তাই সেই লোককে আড়াল করে কক্ষের সামনে আসো। সময়ের সংক্রমণে সেই কক্ষে প্রবেশ করতে পারোনি তাই চলে আসতে নিতেই কক্ষের দরজার হাতলে তোমার হাত লেগে যায় এবং কিছুটা ছিলে যায়। এই যে এই রিপোর্টে সব প্রমাণ রয়েছে। ফরেনসিক ডাক্তাররা পাহারাদারের র’ক্তে’র সাথে তোমার র’ক্তে’র স্যাম্পল পেয়েছে। তুমি এতোই চালাকি করেছ যে, এই সম্পূর্ণ কাজ করতে মাত্র সাত মিনিট সময় নিয়েছো। পূর্বের ন্যায় পাহারাদারের আড়ালে থেকে বাহিরে বের হয়ে গিয়েছ। এবং খুবই চতুরতার সাথে পোশাক পরিবর্তন করে নিজের ডেক্সে গিয়ে বসেছো। ”

” এসব মিথ্যা। আপনি ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চাইছেন। আমি সেদিন ফাইলে মগ্ন ছিলাম। আপনি নিজেই আমাকে টেনে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ”

” গলা উঁচু করবে না সন্ধ্যা। এটাই সত্য। ফরেনসিক ল্যাবে আমার কোন চাচাতো মামাতো ভাই নেই যে আমাকে সাহায্য করবে। এরপরের কাহিনী শুনবে না?”
” আমি কিছুই শুনবো না। আপনার মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী শুনে আমি কখনোই বিশ্বাস করব না।”

” ঠিক আছে। তাহলে প্রমাণ দেই।”

নিলয় ফরেনসিক রিপোর্ট সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে দেয় যার মধ্যে স্পষ্টত সন্ধ্যার নাম লিখা আছে। এছাড়াও আরেক পাতায় সি সি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যাচ্ছে স্পষ্টভাবে দেখা না গেলেও বুঝা যাচ্ছে সেখানে একজন মেয়ে ছিল। আরেক ফুটেজে জুম করে দেখানো হয়েছে সন্ধ্যা সেদিন হাতে যেই আংটি পরেছিল সেই আংটিই সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখাচ্ছে।”

সন্ধ্যার হাত থেকে রিপোর্টটি পড়ে যায়। নিলয় তা দেখে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

” এমনটা করে কি পেলে সন্ধ্যা! এত জিদ এত জিদ তোমার এবং চাচ্চুর! আমাকে দাদা কোম্পানীর দায়িত্ব দিয়েছে বলে তোমরা এই কোম্পানীর ক্ষতি করতে দ্বিতীয়বার ভাবলে না! আরে সন্ধ্যা! তোমরা কীভাবে ভুলে গেলে। এই সরকার কোম্পানীটা আরিফ সরকার বা আমার একা না তোমাদেরও। দাদা স্বপ্ন দেখে আমি আর তুমি এই কোম্পানী অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবো। অথচ তোমরা!”

সন্ধ্যা মাথা নীচু করে রেখেছে। এখন আর কিছু বলার নেই তার।

চলবে……..

#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| বারো তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌

” আমি নির্দোষ। তার প্রমাণ খুব শীঘ্রই আপনি পেয়ে যাবেন মিস্টার নিলয় লীলাভ। তার আগে আপনি দোষী সেটার প্রমাণ আমি করব।”
” পুরো দুনিয়ায় এমন কোন মানুষ পাবে না যার মাধ্যমে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করবে।”
সন্ধ্যা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
” দেখা যাবে।”
নিলয় পায়চারি করছে। সন্ধ্যার অপরাধের ক্ষমা নেই। আবার পুলিশ ঝামেলা হলে সরকার বাড়ির ক্ষতি। আরিফ সরকার তো হৃদ যন্ত্রণায় ম’রে যাবে।
নিলয় সন্ধ্যার পানে তাকিয়ে উপলব্ধি করে সন্ধ্যার মুখের ভাবগতি। সন্ধ্যার মুখশ্রীতে অনুশোচনার কোন চিহ্নের ছিটে ফোঁটা নাই। নিলয় হতাশ হয়ে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,
” তোমার মনে একটুও অনুশোচনা হচ্ছে না!”

” দোষ করলে তো অনুশোচনা হবে! আপনি কেন আমার পিছু পড়ে আছেন। আসল কালপ্রিটকে অনুসন্ধান করুন, কাজে আসবে।”
” সন্ধ্যাবতী! আসল নকল জানি না। প্রমাণ আমার হাতেই আছে। তবুও তোমার কথা বিবেচনা করে আমি নিজে তদন্ত করব। তোমার উপর সর্বদা আমার নজর থাকবে। আমি নিলয় নীলাভ সরকার বাড়ির কোন ক্ষতি হতে দিব না।”
———–

সন্ধ্যালয়ের আগমন ঘটেছে। ঘরে ঘরে আলো জ্বলছে। দোকানীদের দোকানে কেনা বেচা বেড়েছে। গাড়িতে দুজন মানব মানবী আরোহণ করে অজানা গন্তব্যস্থলে এগিয়ে যাচ্ছে। দুজনই নিশ্চুপ। নিলয় আড়চোখে কয়েকবার সন্ধ্যার দিকে তাকাচ্ছে। সন্ধ্যার মুখশ্রী একদম নিষ্পাপ। নিলয়ের বিশ্বাস হচ্ছে না যে সন্ধ্যাই আসল কালপ্রিট। নিলয়ের আজকের যাত্রা অজানা পথে। নিলয় মূলত সন্ধ্যার ভাবগতি পর্যবেক্ষণ করছে এত সময় নিয়ে। নিলয় ভাবছে, সন্ধ্যা সেদিন একাই অফিসে কাজ করছিল। কাজের মধ্যে এতটাই ডুবে ছিল যে নিলয়ের উপস্থিত সেদিন টের পায়নি। এছাড়াও সন্ধ্যাকে অফিসের গোপন কক্ষপথে নিয়ে যাওয়ার সময় হাজারটা প্রশ্ন করেছিল এবং র’ক্ত দেখে প্রচুর ভয় পেয়েছিল।
নিলয়ের ভাবনায় সন্ধ্যার ছোটবেলার একটি ঘটনা মনে পড়ে যায়। নিলয় তখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে চলে যায়। নিলয় চলে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর নাকি সন্ধ্যা বাগানে জুয়েনা নামক একজন কাজের মহিলার সাথে খেলছিল। জুয়েনা ছিল কিশোরী বয়সী, বাড়ির বাহিরে বের হলেই পৃথিবী অন্যরকম মনে হতো। সেদিন বিকেলে সন্ধ্যার সাথে খেলছিল সে। পাশের বাড়ির দারোয়ানের নজর ছিল তার প্রতি। সবসময় বিরক্ত করতো। নিলয়ের বাবা অর্নব দারোয়ানকে অনেকবার সাবধান করেছিল যেন জুয়েনাকে জ্বালাতন না করে। দারোয়ান শুনেনি সেদিন, মনে হয়তো ক্ষো’ভ পোষণ করে রেখেছিল। সন্ধ্যার সাথে খেলা অবস্থায় সে আইসক্রিমের বায়না ধরে এতে জুয়েনার গেইটের বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সন্ধ্যাকে গেইটের কাছে দাঁড় করিয়ে সে বাহিরে যায়। আইসক্রিম আনার জন্য রাস্তা পাড় হতেই সেই দারোয়ান জুয়েনাকে জোর করে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চায়। হাতের ধস্তাধস্তিতে জুয়েনা অনেক আহত হয়। এদিকে সন্ধ্যা জুনেয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখে চিৎকার করে অর্নব এবং নীরবকে ডাকতে থাকে। এতে আশেপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে। দারোয়ান ধরা পড়ে যাবে বুঝতে পেরে জুয়েনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে একটা গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়। এদিকে জুয়েনার মাথা রাস্তায় পড়ে থাকা ইঁটের সাথে লেগে ফে’টে যায়। র’ক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। পিচ ঢালা রাস্তার রং পরিবর্তন হয়ে লাল রং হয়ে গেছে। জুয়েনার সাথে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা সন্ধ্যার চোখের সামনে হয়েছে। র’ক্ত দেখে সন্ধ্যা ভয় পেয়ে যায় এবং রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। সেই ঘটনার পর থেকে সন্ধ্যার র’ক্তে ফোবিয়া।

এই ঘটনা নিলয়ের মা নিলয়কে জানিয়েছিল। ঝাপটা বাতাসে নিলয় ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে। সন্ধ্যার পাসে তাকিয়ে দেখে সে বাহিরে দেখতে ব্যস্ত। আকস্মাত সন্ধ্যা চিল্লিয়ে উঠে,
” গাড়ি থামান।”
“কেন? পালিয়ে যাবে?”

নিলয়ের কথায় সন্ধ্যা বিরক্ত হয়। একে তো সন্ধ্যার রাগ লাগছে তার উপর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সন্ধ্যা দাঁতে দাঁত চেপে প্রতুত্তুরে বলে,
” আপনি তো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অসভ্য দুর্লয়। না খেয়ে দিনে দিনে বয়স কমাচ্ছেন।”
” বেশী বলছো মিস ঐরাবতী।”
” আরে রাখেন বেশি কম। গাড়ি থামান চা খাবো।”
নিলয় কথা বাড়াতে চাচ্ছে না। গাড়ি একটা চায়ের টংয়ের পাশে দাঁড় করায়।

সন্ধ্যা এই নিয়ে তিন কাপ চা পান করে ফেলেছে। নিলয় এতে খুবই বিরক্ত। নিলয় খুব করে জানে সন্ধ্যা অপ্রকাশ্যে আর যাই করুক না কেন নিলয়কে শায়েস্তা করতে ঠিকই পারে। এই যে বর্তমানে নিলয়ের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। সন্ধ্যা খুব ধীরে ধীরে চায়ে ফু দিয়ে চা পান করছে। এমন ভাবে চা পান করছে যেন শেষ হয়ে যাবে। চতুর্থবার মত চায়ের অর্ডার দিতে নিলে নিলয় ক্ষেপে যায়।

” চা পান করতে করতে কী আজ রাত পার করে ফেলবে? এত ক্ষুধা লেগেছে বললেই তো হতো। রেস্টুরেন্টে তোমাকে পেট নয়, গলা ভর্তি করিয়ে খাইয়ে নিয়ে আসতাম।”

” খোটা দিচ্ছেন? আপনি কি ভেবেছেন আপনি একাই কোটিপতি? শুনুন মিস্টার অসভ্য দুর্লয়, আমার ব্যাগে এখনো টাকা আছে। আমার টাকা, আমার পেট, আমার গলা, আমার মুখ মুখ দিয়ে খাব তাতে আপনার কী?”

” বেশি বকবক না করে গাড়িতে ওঠো। দাদা ফোন করেছে। শীঘ্রই বাসায় যেতে বলেছে। মা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”

নিলয়ের মায়ের কথা শুনে সন্ধ্যা অর্ডার ক্যানসেল করে দেয়। নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দোকানিকে দিতে নিলেই নিলয় বাঁধা দেয়।

” আমাকে কি অকর্মঠ মনে কর? আমি কর্মজীবী মানুষ। কর্ম করে উপার্জন করি। আমার সামনে একজন মেয়ে বিল পরিশোধ করবে সেটা মানতে পারব না। যাও গাড়িতে গিয়ে বসো। আমি চায়ের দাম দিয়ে আসছি।”

নিলয়ের কথা শুনে সন্ধ্যা দাঁত কেলিয়ে হাসে। ভুলে যায় অতীতের সব কথা। গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে সে বলে,

” ইশ আমার টাকাটা বেঁচে গেল।”

সন্ধ্যার কথা শুনে নিলয় হাসে। মাথার চুলকে দোকানিকে টাকা পরিশোধ করে গাড়িতে এসে বসে।
——————-

সরকার বাড়ি আজ নিস্তব্ধ। আশেপাশে প্রতিটা বিল্ডিংয়ে আলো দেখা যাচ্ছে একমাত্র সরকার বাড়ি ছাড়া। এখন নিস্তব্ধ অন্ধকার পল্লী মনে হচ্ছে। মানুষদের আনাগোনা নেই। নিশ্বাসের আওয়াজ নেই। সন্ধ্যা ঘাবড়ে গিয়ে নিলয়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়।
” ব্যাপারটা কী বলুন তো? বড়ো মার খারাপ কিছু হয়নি তো?”
” সবসময় উলটা পালটা না ভাবলে হয় না! মিস ঐরাবতী?”
” আমি কী করেছি। এমন অন্ধকারে ভয় পাচ্ছি তো!”
নিলয় সন্ধ্যার হাত আলতো করে ধরে ভিতরে প্রবেশ করে। একজন মানুষের অভ্যন্তরীণ ঝগড়া, অহংকার, রাগের বাহিরেও আরেকটা দিক আছে সেটা হচ্ছে কোমল হৃদয়। নিলয়কে বর্তমানে একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক মনে হচ্ছে সন্ধ্যার কাছে যে খুব যত্নে সন্ধ্যার খেয়াল রাখছে। দেয়াল হাতড়ে নিলয় সুইচে চাপ দেয় সাথে সাথেই নীলিমা বেলুন ফুটিয়ে চিল্লিয়ে বলে, ” শুভ জন্মদিন ভাইয়া।”
নিলয় হাতের বন্ধনীতে দৃষ্টিপাত করে। এখন সময় বারোটা দশ মিনিট। নিলয় আশাপাশ ভালোভাবে তাকায়। জমজমাট আয়োজন না করা হলেও ঘরোয়াভাবে আয়োজনের কমতি নেই। পাশের রান্নাঘর থেকে পায়েসের মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে, সন্ধ্যার প্রিয় কালা ভুনারও ঘ্রাণ আসছে। এদিকে সন্ধ্যা আশেপাশে সূক্ষ্ম দৃষ্টি স্থাপন করে দেখতে পায় তার বাবা-মা এক কোণায় বসে আছে। নীরব সরকারের মুখ গুমরে রেখেছে এদিকে সন্ধ্যার মা স্বামীর ভয়ে চুপসে আছে। সন্ধ্যা জানে তার মার এখন ইচ্ছে করছে বড়ো মার সাথে গল্প করতে।
আরিফ সরকারের কথায় সন্ধ্যা বাবা-মার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।
” বয়স তো অনেক হয়েছে। বিয়ে করবে কবে নিলয়?”

জন্মদিনের আনন্দের সময় মুরুব্বিদের ঠাট্টা মশকরা হয়েই থাকে। নিলয় দাদার কথায় ভীষণ লজ্জা পায়। নীলিমা ভাইয়ের হাত ধরে সোফায় নিয়ে বসায়। নিলয়ের মা ছেলের মুখে মিষ্টি তুলে দেন। কেক কাটার পর্ব আগামীকাল হবে। আরিফ সরকার সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,

” আগামীকাল আমার নাতির জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। পরিবারের সকলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে। আমার যেন কাউকে ডাকতে না হয়। এখন সবাই একসাথে রাতের খাবার খাবো। বড়ো বউ, সুমি? টেবিলে খাবার দাও।”

মেজ ছেলেকে ইঙ্গিত করে বলা কথাটা পরিবারের সকলে বুঝতে পারেন। আরিফ সরকারের কথা অমান্য করার সাধ্য কারোর নেই। সুমি স্বামীকে উপেক্ষা করে নিলয়ের মায়ের কাছে আসেন। দীর্ঘ বছর পর বড়ো বোনকে জড়িয়ে ধরে আবেগপ্রবণ হয়ে যায়।
নীরব সরকারের কাছে এমন আদিখ্যেতা ভালো লাগছে না। সে অচল নয়তো একাই চলে যেত নিজ গৃহে। এদিকে সে সুমিকেও হাতের নাগালে পাচ্ছে না যে কিছু বলবে। অবশেষে সন্ধ্যাকে ডেকে বলে,

” সন্ধ্যা আমাকে উপরে নিয়ে চলো। এখানে আর ভালো লাগছে না। আর তুমিও আমার সাথে উপরে চলো। তোমার মায়ের ক্লাস আমি পরে নে।ব আমার আদেশ অমান্য করা বের করব।”

সন্ধ্যা বাবাকে হুইলচেয়ারে ধরে। উদ্দেশ্য নিজেদের বাড়ির দিকে। পথিমধ্যে আরিফ সরকার এসে পথ আটকায়। হুইল চেয়ারের সামনে সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,

” তোমার সাহস তো কম নয়, আমার কথা অমান্য করো? আমার সাথে কথা বলছো না ঠিক আছে। তাই বলে তোমাদেরকে এত আদর সোহাগ করে যেই ভাবী বড়ো করেছে তার কথাও অমান্য করবে? সে এত কষ্ট করে তোমাদের জন্য রান্না করছে সেটা প্রত্যাখ্যান করে চলে যাবে? যাও খাবার টেবিলে গিয়ে বসো।”

বাবা মেয়ে দুজনেই আরিফ সরকারের সামনে মাথা নত করে ফেলে। নীরব সরকার মেয়েকে ইশারা দেন খাবার টেবিলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সন্ধ্যা তাই করে বাবাকে নিয়ে এগিয়ে যায় খাবার টেবিলের কাছে। আজ নীরব সরকারের মুখের বুলি শেষ হয়ে গেছে।

অনেকদিন পর পুরো পরিবার একসাথে খাবার খাচ্ছে। আরিফ সরকারের চোখ শীতল হয়ে আসে। নিলয়ের মা সকলের উপস্থিতিতে নিজের স্বামীকে খুব মনে করেন। আজ যদি তার স্বামী এখানে থাকতো তাহলে কত সুখে থাকতো তারা ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করেন।
—————

আজকে অফিসে কাজের চাপ বেশি। সন্ধ্যাবতী সকাল থেকে দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছে না। নতুন প্রজেক্টে হাতে আসার পর আজ প্রথম সকাল। নিলয় সহ কয়েকজন গিয়েছে নতুন ফ্যাক্টরিতে। আর এখানে সমস্ত অফিসের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছে সন্ধ্যার হাতে। কিছুক্ষণ পরপরই এক এক করে ফাইলের সমস্যার সমাধান করতে হচ্ছে তাকে। এমনিতেও সন্ধ্যা সকাল থেকে না খাওয়া তারমধ্যে এত কাজ করতে করতে বেহাল দশা তার।

চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে সন্ধ্যা। শরীরকে একটু জিরিয়ে নিতে চাইছে সে। ক্ষুধার্ত পেটে ইতিমধ্যে গুরগুর ডাক ডাকছে। নাকের সামনে নুডলসের ঘ্রাণ আসায় সন্ধ্যা চোখ খুলে তাকায়। আকাশ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে গরম নুডলসের বাটি।
” খাইয়া নে জানু। তোর জন্য কত কষ্ট করে রান্না করে নিয়া আসছি।”
সন্ধ্যা খাবার হাতে নেয়। চামচে দুই তিন ফু দিয়ে খাফার মুখে পুরে নেয়। নুন,মরিচ, সস, মসলায় খাপে খাপ। আকাশকে কিছু না বলে গাপুস গুপুস করে খেয়ে নেয় সে। আকাশ তৃপ্তি হাসে পাশে তাকিয়ে কাউকে হাতের ইশারায় সব ঠিক আছে জানায়।
কেউ একজন আকাশের ইশারা পেয়ে সন্তুষ্টি হয় এবং চলে যায় নিজ কাজে।

” হ্যাঁ রে, আক্কাইস্সা। এত ভালো রান্না কবে শিখলি রে? তোর বউয়ের তো আর কষ্টই হবে না। যা মজা হয়েছে না?”

” আরে কি যে বলিস সন্ধ্যা! আমি তো অল রাউন্ডার।ঘরের কাজ বা অফিসের কাজ আমি এক তুড়িতে করে ফেলতে পারি।”

সন্ধ্যা হাসে। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলে,
” তবে যাই বলিস, তোর নুডলস রান্নায় আমি বড়ো মায়ের স্পেশাল মসলার স্বাদ পেয়েছি। তুইও কী রাজশাহী থেকে স্পেশাল মসলা কিনে এনেছিস নাকি?”

সন্ধ্যার কথা শুনে আকাশ শুকনো কাশে। তুতলে উত্তর দেয়,

” আরে হ্যাঁ হ্যাঁ ঐ মসলা খুব কষ্টে পেয়েছি দোস্ত! আচ্ছা আমি এখন যাই। তুই কাজ কর।”

আকাশ কোনরকম নিজের জীবন বাজি রেখে চলে যায়। সন্ধ্যা এতকিছু না ভেবে কাজে মন দেয়।
দুপুরে বিরতির সময় সন্ধ্যা সকলের চোখের আড়ালে অফিস থেকে বের হয়ে আসে। নিলয় অনুপস্থিত এই সুযোগে সন্ধ্যা নিজর কার্যসিদ্ধি সম্পূর্ণ করতে চাইছে। নিলয় সন্ধ্যাকে নিয়ে আসা সেই গোডাউনে সে সময় নিয়ে পৌছায়। গোডাউনের সামনে দুইজন পাহারাদার দাঁড়িয়ে আছে তাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করা অসম্ভব। সন্ধ্যা অপেক্ষা করছে যেন কোন চমৎকার হয়। সন্ধ্যার দোয়া যেন কবুল হয়ে যায়। দুজনের মধ্যে একজন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে দূরে চলে যায়। একজনকে সামলানো এতটা কষ্টের হবেনা সন্ধ্যার জন্য। বুদ্ধি খাটিয়ে একজনকে দূরে নিতে হবে। সে একটি ইটের টুকরা গোডাউন থেকে কিছু দূরে নিক্ষেপ করে। তৎক্ষণাৎ থেকে যাওয়া পাহাদার কে কে বলে আওয়াজের উৎসের দিকে চলে যায়। সন্ধ্যা এই সুযোগে গোডাউনের ভেতর প্রবেশ করে।নিলয়ের সাথে আসার সময় যেভাবে তারা এক এক ধাপ পেরিয়ে প্রবেশ করেছিল ঠিক সেভাবেই সে প্রবেশ করে।
পুরো কক্ষে চোখ বুলিয়ে সন্ধ্যা কোন কিছুই খুঁজে পায় না যার দ্বারা নিরয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে
সন্ধ্যা হতাশ হয়ে যায় গোডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে একটি মোটা রডের দিকে নজর পড়ে। যেখানে শুকনো র’ক্ত লেগে আছে। সন্ধ্যা খুব দক্ষতার সহিত হাতে কাপড় প্যাচিয়ে লোহার রড হাতে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। দরজার সামনে আসতেই সন্ধ্যা লক্ষ্য করে দুজন পাহারাদার একে অপরে আলোচনা করছে। সন্ধ্যা সুযোগ বুঝে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।
কাকতালীয়ভাবে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে সন্ধ্যা সেখানে প্রবেশ এবং বের হতে পেরেছে তা সন্ধ্যার অজানা। সে শুধু এতটুকু জানে, যেভাবেই হোক রাব্বির খু’নে’র শা’স্তি নিলয়কে পেতেই হবে। সন্ধ্যা নিজে শা’স্তি দিবে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে