সন্ধ্যালয়ের প্রণয় পর্ব-৫+৬

0
1511

#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| পঞ্চম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌

ছোট্ট নীলিমা। নিলয়ের ছোট বোন। এবার দশম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট বলার কারণ হচ্ছে, পুরো সরকার বংশের মধ্যে একমাত্র নীলিমায় সবার ছোট এবং আদরের। নিলয়ের জান বলা যায়। নিলয় খুব ভালোবাসে।
নীলিমা লাল একটি গাউন পরিধান করে অনুষ্ঠানে ঘুর ঘুর করছে। লাল ফর্সা হওয়ার লাল রংটা নীলিমার শরীরে ফুটে উঠেছে। পুরো অনুষ্ঠানে নীলিমার সমবয়সী কেউ নেই। সবাই তার বড়ো। এজন্য তার মন খুব খারাপ। নীলিমা সন্ধ্যা বলতে পাগল। সন্ধ্যার চালচলন অনুসরণ করে সে। এই যে আজ যেই গাউন পরিধান করেছে, সন্ধ্যাকে একদিন সাদা গাউন পরতে দেখেছিল ঠিক একইরকম। নিলিমার অনেক ইচ্ছে হয় সন্ধ্যার সাথে কথা বলতে, আপু বলে ডাকতে, জোরে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু তার আর সুযোগ কোথায়? সন্ধ্যা তো তাদের দেখলেই পালিয়ে যায় অথবা চোখ মুখ কুঁচকে রাখে যেন নীলিমা তার চোখের বিষ।

হাঁটাহাঁটির এক পর্যায়ে নীলিমা হঠাৎ সরকার বাড়ির প্রধান ফটকের দিকে নজর দেয়। সাদা একটি গাউন পরে সন্ধ্যাবতী গোমড়ে মুখে এগিয়ে আসছে। বাহিরে রমরমা পরিবেশ। আপাতত কারোর এদিকে খেয়াল নেই। নীলিমা সুযোগ পেয়ে যায় এবং খুব খুশি হয়। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় সন্ধ্যার সাথে কথা বলতে।
” আপু!”
সন্ধ্যা নিলয়কে খুঁজছিল। কারোর ডাকে সম্মুখে ফিরে তাকায়। ডাগর চোখের অধিকারী একজন মেয়ে গোল গোল চোখে সন্ধ্যাকে দেখছে। শক্ত মনের অধিকারী সন্ধ্যা নরম হয়ে যায়। নীলিমার দিকে তাকিয়ে রয়।
” আমার সাথেও কী কথা বলবে না?”

নীলিমার ডাকে সন্ধ্যার ধ্যান ভাঙে। এদিক সেদিক নজর ঘুরাচ্ছে। সবাইকে উপেক্ষা করা যায়, নীলিমাকে নয়। নীলিমার প্রতি আলাদা দুর্বলতা কাজ করে সন্ধ্যার। কি উত্তর দিবে সন্ধ্যা? নীলিমা সন্ধ্যার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে। সন্ধ্যা মোমের ন্যায় নরম হয়ে যায়। সেও নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে।
” আমার লিলিপুট।”
সন্ধ্যার মুখে লিলিপুট শুনে নীলিমা চট করে ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যার হাত ধরে বলে, ” ভাইয়াও আমাকে লিলিপুট ডাকে। তুমি আর ভাইয়া কি বন্ধু?”

” শত্রু।”

সন্ধ্যা চলে যায়। নীলিমার নিকট থাকলে আদর করতে ইচ্ছে করবে। সন্ধ্যার কোন ভাই-বোন নেই। নীলিমার জন্মের দুই বছর পর তারা আলাদা হয়ে যায়। নীলিমা সন্ধ্যার চলে যাওয়া দেখে জোরে বলে,
” আম্মুর অনেক অসুখ। তার সন্ধ্যাকে দেখতে চাইছে।”

সন্ধ্যা শুনেও শুনেনি। অফিসের লোকজনের সাথে মিশে কথা বলতে শুরু করে।

রাত দশটা বাজে। অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্ত। বাগানে একপাশে সকলে আহার গ্রহণ করছে। সন্ধ্যা এত সময়ে নিলয়কে একা পায়নি। সে মনে মনে ছক কষে নিয়েছে কীভাবে নিলয়কে শায়েস্তা করবে। বিকেলে রাব্বির সাথে এক কাপ কফি পান করেছিল তারপর থেকে এই পর্যন্ত পেটে কিছু পড়েনি। ক্ষুধার তাড়নায় পেট গুলিতে আসছে কিন্তু আত্মসম্মানবোধের কারণে খাচ্ছে না। খাবার দেখলেই নাকি খাবারের লোভ বাড়ে।
সন্ধ্যা বাগানের একপাশে চলে আসে।
বাগানের একপাশে আলোর ব্যবস্থা থাকলেও অপরপাশটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। কাজের চাপে এবং বাবার চাপে সুন্দর কখনো বাগানটায় ঘুরে আসা হয়নি সন্ধ্যা ভাবছে বড় মায়ের কথা আম্মুর কথা নিলয়ের মাকে সন্ধ্যা প্রতি আম্মু বলে ডাকে সময়ের পরিবর্তনে সন্দেহ পরিবর্তন হয়ে গেছে সন্ধ্যা বাবার চাপে পড়ে সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছি থেকে কিন্তু মায়া কাটাতে পারেনি। সন্ধ্যা আনমনে ভাবছিল আর হাঁটছিল আকস্মাত কারো ধস্তাধস্তির আওয়াজ পেয়ে সন্ধ্যা সতর্ক হয়ে যায়। “ঐখানে কে” বলে আওয়াজ দেয়। গাউন পরিধান করে হাঁটা কষ্টদায়ক হয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যার জন্য তবুও সন্ধ্যা অনড়। তাড়াহুড়া করে হাঁটতে গিয়ে কয়েকবার হোঁচট খেয়ে পড়তে নিয়েও বেঁচে যায়। সুন্দর সাদা গাউনটা গোলাপ গাছের কাটার সাথে লেগে কয়েক জায়গায় ছিড়ে যায়। সন্ধ্যা থেমে নেই। ধস্তাধস্তির আওয়াজের দিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতেই মনে হল কেউ দেয়াল টপকে চলে গেছে।
সন্ধ্যা অন্ধকারে সেই জায়গায় এসে দাঁড়ায়। ঝাপসা আলোয় দেখতে পায় কেউ একজন শুয়ে আছে। সন্ধ্যা হাতড়ে মানুষটাকে পর্যবেক্ষণ করতে নিলেই হাতে ভেজা অনুভব করে। হালকা আলোতে সন্ধ্যার বুঝতে দেরী হয়নি যে হাতে র’ক্ত লেগেছে। সন্ধ্যা ভয় পেয়ে যায়। রাগের বসে ঘর থেকে বেরোনোর সময় ফোন হাতে নিয়ে আসেনি। এখন সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সন্ধ্যা স্বইচ্ছায় কখনো চাইবেনা সরকারের বাড়ির কোন ক্ষতি হোক। সম্মুখে আগাবে না পিছনে ফিরে কাউকে ডাক দিবে কিছু বুঝতে পারছে না।

সন্ধ্যা সিদ্ধান্ত নেয় পেছনে ফিরে যাবে এবং কারো কাছে সাহায্য চাইবে। তাড়াহুড়ো করে দৌঁড়াড়োর ফলে সন্ধ্যা মাটিতে পড়ে যায়। হালকা ব্যথা পায় বটে কিন্তু সেদিকে তার ধ্যান নেই। সন্ধ্যার স্বরণে আছে সেদিন অফিসের গোপন কক্ষের কথা। নিশ্চয়ই তাদের কেও খারাপ চায়। সেদিন সেখানে কিছু করতে এসেছিল আর আজও অনুষ্ঠানের সুযোগ পেয়ে কিছু করতে এসেছে। সন্ধ্যার ভাবছে যদি তাদের আশেপাশে বো’মা ফিট করে দিয়ে যায় তাহলে কি হবে?
সন্ধ্যা সময় নষ্ট করতে চায় না। ঘেমে সন্ধ্যার অবস্থা নাজেহাল। দিক বৈদিক ভুলে সম্মুখে হাঁটছে।

এদিকে নিলয় সন্ধ্যার খোঁজ করে যাচ্ছিল। সন্ধাকে সে প্রথম থেকে নজরে রাখছিল। সাদা গাউনে অপ্সরী লাগছিল মেয়েটাকে। নিলয়ের নজর আটকে যায় সাজ বিহীন সন্ধ্যার মুখশ্রীর দিকে। ঠোঁটে হালকা লিপজেল, কানে সাদা পাথরের কানের দুল। নিলয়ের হৃদপিন্ড খুব জোরে আওয়াজ করতে থাকে। নিজেকে সামলানোর জন্য সে আড়ালে চলে যায়। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু কিছুক্ষণ যাবত সন্ধ্যা নজরের বাহিরে চলে গিয়েছে। নিলয় আশেপাশে তাকিয়ে সন্ধ্যার খোঁজ করছে। সন্ধ্যা কাদায় জর্জরিত শরীরে দৌড়ে আসছে। নিলয় এগিয়ে যায়। সন্ধ্যার চোখে মুখে ভয়ের আভা। ঘেমে একাকার হয়ে তুতলিয়ে কিছু বশছে নিলয়কে। সন্ধ্যার শরীর কাঁপছে। না খেয়ে থাকার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে আসছে। ভয়, এবং দুর্বলতা একসাথে গ্রাস করছে সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যার কোন কথা নিলয় বুঝতে পারছে না।

” কি হয়েছে, সন্ধ্যা? তোমার এই অবস্থা কেন? কোথায় গিয়েছিলে।”

” নিলয় ভাইয়া, ঐখানে ঐখানে লললা’শ।”

সন্ধ্যার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে যতোই না অবাক হয়েছে তারচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হচ্ছে লা’শের কথা শুনে। সন্ধ্যা ঢলে পড়ে নিলয়ের উপরে। নিলয় কয়েকবার সন্ধ্যাকে ডাকার চেষ্টা করে কিন্তু আফসোস সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। নিলয়ের সময় থেমে গেছে। সন্ধ্যার মুখশ্রীর দিকে এক দৃষ্টিতে অবলোকন করে আছে। সন্ধ্যাকে অনেক নিষ্পাপ লাগছে। সন্ধ্যা যে দিক থেকে এসেছিল হঠাৎ সেই দিকে ছোট্ট একটি বি’স্ফো’র’ণ ঘটে।
নিলয় সন্ধ্যাকে আগলে নেয়। একদম বুকের সাথে মিশে নেয়। নিলয়ের হৃদপিন্ড কাঁপছে। দ্বিতীয়বার কোন কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় গ্রাস করছে।

কেউ বাড়ির এই পাশটায় বো’মা ফিট করে রেখেছিল। শক্তিশালী বো’মা হলে এতক্ষণে পুরো বাড়ি চুরমার হয়ে যেত কিন্তু না, শত্রুপক্ষের দলেরা হয়তো নিলয়দের ভয় দেখাতে চাচ্ছে।
বি’স্ফো’র’ণে’র আওয়াজ পেয়ে সকলে এই পাশটায় এগিয়ে আসে। সন্ধ্যাতে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে আরিফ সরকার ভয় পেয়ে যায়।

” কি হয়েছে সন্ধ্যার? বেশি ক্ষতি হয়নি তো?

” জানিনা দাদা। হাসপাতালে নিতে হবে। আমি গার্ড বাড়িয়ে দিচ্ছি। আপনি এদিকে সামলান। সন্ধ্যাবতীর চিকিৎসার প্রয়োজন।”
——————–

হুইল চেয়ারে বসে আছে নীরব। নীরবের একটা পা নেই। আজ পনেরো বছর পর বাহিরে বের হয়েছে সে। পনেরো বছর আগের সেই কালো দিনটার পর থেকে নিজেকে ঘরবন্দি রাখতেন। হাসপাতালে সন্ধ্যার মা সুমি নিয়ে আসে। হাসপাতালের বারান্দায় নিলয় বসা অবস্থায় ছিল। নীরবকে হুইল চেয়ারে চড়ে আসতে দেখে সে অনেকটাই বিস্মিত হয়। পনেরো বছর আগে চাচ্চুকে দেখেছিল। হ্যান্ডসাম ছিল। কত সুন্দর পরিবার ছিল তাদের।
সাদা চাদরের উপর শায়িত সন্ধ্যাবতী। পরিধানে আগের পোশাক। সাদা চাদরে সাদা পোশাকের দিকে নীরব সরকার এক ধ্যানে দৃষ্টিপাত করে রয়েছেন। পুরো কেবিনে নীরবতা ছেয়ে আছে। সুমি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করেন। স্বামীর ভয়ে মেয়ের কাছে ঘেষসেন না।

সদ্য জন্ম নেওয়া ফুটফুটে একটি বাচ্চা মেয়েকে সাদা তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে নার্স নীরবের হাতে দিল। নীরবের কেন যেন সাদা রংটা পছন্দ হয়না। সে বাবা হয়েছে, আল্লাহ তাকে একটা জান্নাত দিয়েছে, মেয়েটা থাকে গোলাপের পাপড়ির ভেতর। তা না করে নার্সরা মেয়েটাকে কিনা সাদা কাফনে মুড়িয়ে দিয়েছে? দেখতে কেমন কাফন মনে হচ্ছে। নীরব এসব ভেবে গর্জে ওঠে। নার্স ডাক্তার সবাইকে ডেকে এক করে ফেলে।
” আমার মেয়েকে কেন সাদা তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন অন্য কোন রং ছিল না? লাল দিতেন, নীল দিতেন বা গোলাপি দিতেন। আমার ফুটফুটে মেয়েটাকে এখনই কাফন পরিয়ে দিলেন?”

নিরব সেদিন সবাইকে অনেক বকা বকি করছিল। শেষে নিলয়ের বাবা অর্ণব দৌড়ে এসে ছোট ভাইকে থামায়, বলে।
” সব বাচ্চাদেরকে যেভাবে দেওয়া হয়, তোর মেয়েকেও সেভাবে দেওয়া হয়েছে। সাদা রং দিয়েছে বলে তুই পুরো পৃথিবী মাথায় উঠিয়ে নিবি সেটা ঠিক দেখায় না। গাধা! তুই চাইলে তো একটা নতুন তোয়ালে দিয়ে তোর মেয়েকে মুড়িয়ে নিতে পারিস এত হাইপার হচ্ছিস কেন?

নীরব সেদিন বড়ো ভাইয়ের ধমকে থেমেছিল।
আজ নীরবের সেই প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে গেল। সাদা বিছানার উপর সাদা কাপড় পরিধান করে তার ছোট্ট পরীটাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। নীরব হুইল চেয়ারটার চাকা নিজেই ঘুরিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার কাছে গিয়ে থামায়। মেয়ের মুখমণ্ডলে হাতের ছোঁয়া দিয়ে পরপর আঘায করে, ডাকতে থাকে,

” মা, ও মা! ঘুমিয়ে আছো? এই যে দেখো বাবা এসেছে। বাবা আর তোমাকে কাজ করতে বলবে না। বাবা তোমাকে আর চাপ দিবে না বাবা তোমাকে একটুও বকবে না। বাবা তোমাকে সেই আগের মত ভালবাসবে। আমি বাহিরে আসি না বলে, তুমি না সবসময় বলতে! ‘ বাবা চল না বাহিরে যাই, একটু খেলে আসি। বাবা চলো না ঘুরতে যাই, আইসক্রিম খাব।’ এই যে দেখ মা! আজকে আমি স্ব-শরীরে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। উঠো মা! আমার ভালো লাগছে না। আমার বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে।”

পুরো কেবিনের উপস্থিত মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে আছে। একজন বাবার আকুতি শুনে সকলের চোখের অশ্রু টলমল করছে। সুমি মুখে আঁচল চেপে কান্না করছে। নীরবকে এত বছর নরম স্বরে কষ্টের কথা বলতে দেখল। সুমির যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না যে, এই নীরবকে কোন এক সময় সে ভালোবেসেছিল। কিছুদিন আগেও ভাবতো সে নরকে আছে। তার নীরব পাল্টে গেছে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে না! তার নীরব এখনো আছে কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সে নিজেকে শক্ত করে রেখেছে।

নিরব এবার রেগে যায়। ডাক্তার নার্সদের ডাকতে থাকে। অবশেষে নিলয় নীরবের কাছে যায়। নীরবকে এমন হাইপার হাতে দেখে কাছে এসে বলে, ” চাচ্চু থামো। ওর কিছু হয়নি। দুর্বলতার জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। সারারাত স্যালাইন চলেছে। এখন ঘুমাচ্ছে।”

নীরব চুপ হয়ে যায় কিন্তু নিলয়ের দিকে তাকায় না। সুমির উদ্দেশ্যে বলে,

” আমাকে বাহিরে নিয়ে চলো সুমি। আমি পানি খাব।”

নিলয় মুঠো ফোনে আরিফ সরকারকে নীরবের এখানে আসার কথা জানায়। এরপর এক ধ্যানে তাকিয়ে রয় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যার গালে কিছুটা কাদা লেগে আছে। নিলয় এগিয়ে যায় সেখানে।

” তুমি সাদা, তুমি সুন্দর। তুমি অমায়িক, তুমি অপরূপ। সাদা রঙের উপর দাগ লাগলে দাগটা যেমন সর্বপ্রথম চোখে পড়ে। তেমনি তোমার শরীরের আচর আমার চোখে পড়েছে। বেমানান লাগছে আমার কাছে। ”

বিড়বিড় করে কথাগুলো বলে নিলয় আলতো হাতে সন্ধ্যাবতীর গাল থেকে ময়লা পরিষ্কার করে দেয়। এরপর সন্ধ্যার গালে হাত রেখেই বলে,

” তুমি খুব খারাপ। মাথা খেয়ে ফেল একদম। আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও না। এই যে এখন নিশ্চিন্তে শুয়ে আছো কিন্তু আমাকে শান্তি দিচ্ছো না। তোমার চিন্তায় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। কেন এত চিন্তা হচ্ছে? তোমার প্রতি কেন আমি আলাদা টান অনুভব করছি? আমি তো এমনটি চাই না। দ্বিতীয়বার আর কারো প্রতি দুর্বল হতে চাই না। তুমি এক কাজ করিও আমার সামনে আর এসো না। সুস্থ হলে আমার থেকে অনেক দূরে চলে যাও। হ্যাঁ! না না আমি কি বলছি, আমি তো তোমাকে দেখতে চাই। সবসময় আমার চোখের সামনে থাকবে, আমার আশপাশ ঘুর ঘুর করবে, আমার চোখের সামনে ছোটাছুটি করবে আর আমি তোমাকে মন ভরে দেখবো। আর তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইব অসভ্য দুর্লয়।”

নিলয় নিলে নিজে কথা বলে নিজেই বোকা বনে যায়। সন্ধ্যের পাশ থেকে উঠে কিছুক্ষণ পায়চারি করে নিজের মাথার চুল নিজেই টানতে শুরু করে। অবশেষে হাসপাতাল থেকে চলে যাবে বলে উদ্যোগ নেয়।

————-
আরিফ সরকার গম্ভীর মুখে বসে আছেন সন্ধ্যার পাশের সোফাটায়। দৃষ্টির সম্মুখে ছোট ছেলেকে দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ ভেসে উঠে। এত বড়ো দুর্ঘটনার কথা ছোট ছেলে কেন গোপন করেছে ভাবাচ্ছে উনাকে। এর মধ্যে, সন্ধ্যার ঘুম ভাঙে। বাবাকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে অবাক হয় সে। নিজের দিকে দৃষ্টিপাত করে বি’স্ফো’র’ণ’রে সময়কালের ঘটনা মনে পড়ে যায়।
” সন্ধ্যা, কেমন লাগছে?”

আরিফ সরকারের কথায় সকলে সন্ধ্যার দিকে দৃষ্টিপাত করে। নীরব মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
” বাবাটার কষ্ট হচ্ছে বুঝি?”
” না বাবা, আমি ঠিক আছি। নিলয় ভাইয়া কোথায়? উনির সাথে আভার জরুরি কথা আছে।”

আরিফ সরকার বিলম্ব না করে নিলয়কে ফোন করে।
অফিসে এসে নিলয় কোন কাজে মন বসাতে পারছিল না। বারবার সন্ধ্যার মুখশ্রী চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। এই পর্যন্ত চার কাপ কফি পান করেছে সে। চোখ বন্ধ করে চেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। মুঠো ফোন বেজে উঠায় নিলয় চোখ খুলে তাকায়। আরিফ সরকারের ফোন আসা দেখে দ্রুত রিসিভ করে নেয়।

” আপনাকে প্রয়োজন, মিস্টার অসভ্য দুর্লয়।”
নিলয় স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

” আমাকে স্বরণ করছো আর তোমার কাছে আসব না তা কীভাবে হয়, মিস ঐরাবতী? আমি আসছি।”

চলবে……….

#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| ষষ্ঠ পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌

“ঘুমিয়ে আছো?
এত কেন নিষ্পাপ।
তাকিয়ে দেখো!
দাঁড়িয়ে আছি অপেক্ষায়।
ছুঁয়ে দেই!
চলে যাবে কী অজানায়?
হবে কী আবারো
সন্ধ্যালয়ের প্রণয়।”

সন্ধ্যাবতী ঘুমিয়ে আছে সন্ধ্যা লগ্নে। কেউ একজন ঘুমন্ত সন্ধ্যার অগোচরে এসে মুগ্ধ নয়নে হেসে তার প্রতিচ্ছবি মুঠোফোনে বন্দি করে চলে গিয়েছে তার অজান্তে। সন্ধ্যাবতী যদি জানতো তাহলে তুলকালাম বাজিয়ে ফেলতো।

সন্ধ্যা নেমেছে। সূর্যিমামা দূর আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যাবতীর শরীর পূর্বের তুলনায় ভালো। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। সরকার বাড়ির ফটকে ইতিমধ্যে দুইটা গাড়ি এসে থামে। একটি গাড়ি থেকে আরিফ সরকার নেমে আসেন। অপরটি থেকে সন্ধ্যা, সুমি এবং সুমির সাহায্যে নীরব নেমে আসে। নীরব একাই হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে সামনে আগাচ্ছে। সুমি সাহায্য করতে চাইলে বাঁধা দেয় সে। পনের বছর পর বাহিরে বের হয়ে আসে নীরব। সরকার বাড়ির বাগানের একপাশে আসে সে। ঘর থেকে এত বছর বাগানের এই দিকটা প্রতিদিন দেখতো সে। এই পাশের প্রত্যেকটা গাছ,পাতা গোনা তার। হাত দিয়ে ফুল, পাতা ছুঁয়ে দেখেছে। গতকাল রাতের বি’স্ফো’র’ণ যেই পাশটায় হয়েছিল সেখানে কিছু পুলিশ এবং বোম স্কোয়াড লোকেরা এসেছেন তদন্ত করতে। নিলয়ও সেখানে উপস্থিত হয়েছে। গতকাল রাতে এখানে কি ঘটেছিল তা একমাত্র সন্ধ্যা জানে। নিলয় পুলিশদের সাথে কথা বলে সকলের দিকে এগিয়ে আসে। নীরব মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিলয় কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল।

আরিফ সরকার গম্ভীরভাবে রাজকীয় চেয়ারে বসে রয়েছেন। এই চেয়ারটা আরিফ সরকারের দাদা মরহুম শেখ আলতাফ সরকারের। সেই কালে সত্তর গ্রাম চলতো আলতাফ সরকারের কথায়। সময়ের প্রত্যাবর্তনে গ্রাম থেকে শহরে পরিণত হয়েছে আর সরকার বাড়ির ক্ষমতাও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তবে আরিফ সরকারের বাবা লতিফ সরকার ; সরকার বাড়ির নাম সকলের মুখে থেকে যাওয়ার জন্য খুব পরিশ্রম করেন। অর্থ সম্পদ সঞ্চয় করে কঠোর পরিশ্রমে নিজের চারটা কাপড়ের কারখানা তৈরি করেন। পরবর্তীতে দেশ বিদেশে আরিফ সরকারের মাধ্যমে ডাক নাম ছড়িয়ে পড়ে। আরিফ সরকার চারটা কারখানা থেকে আরো পাঁচটা কারখানা স্থাপন করেন এবং সেখানের সব হিসাব নিকাশ, ডকুমেন্ট এসব কিছু হিসেবের জন্য নিলয়ের অধীনে একটি কোম্পানিতে কর্মচারী রাখেন। নিলয় দাদার কথামত নিজের বুদ্ধিমত্তা প্রকাশে এই কোম্পানি এখন শহরে টপ হয়েছে।
আরিফ সরকারের তিন ছেলে। নিলয়ের বাবা অর্নব সরকার পনের বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গত হোন। মেজো ছেলে নীরব সরকার। প্রচন্ড জেদী, একরোখা, নিজে যা বুঝে তাই করে। কারোর পরোয়ানা করে না। আরিফ সরকারের ছোট ছেলে ফারুখ সরকার। বিভিন্ন নেশা, জুয়া খেলায় মশগুল থাকেন।
আরিফ সরকার বড়ো ছেলে গত হওয়ার পর অবশ্য মেজো ছেলেকে দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কোন এক অজানা কারণে মেজো ছেলে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আর ছোট ছেলের উপর ভরসা করা মানে সরকার বাড়ি ধ্বংস হওয়া সেই ভয়ে প্রাণ প্রিয় বড়ো নাতি নিলয়কে দায়িত্ব প্রদান করেন।

নীরব সুমির সাহায্যে সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠতে নিলে আরিফ সরকার হাঁক ছাড়েন,

” এতবছর নিজেকে গুটিয়ে রেখেছ কিছু বলিনি। নিজের মেয়েকে আপনজনের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছ তবুও কিছু বলিনি। এতবড়ো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার কারণ জানাওনি, তবুও কিছু বলিনি। তবে আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, শুনেছি পাগলও নিজের বুঝ বুঝে। কীভাবে পাড়লে এমন সাংঘাতিক খেলা খেলতে? নিজের মেয়েকেও ছাড় দিলে না?”

সরকার বাড়ি কেঁপে উঠেছে। বাড়ির সকল সদস্য একজোট হয়ে আছে। নীরব নিশ্চুপ। আরিফ সরকারের কাছে এসে প্রত্যুত্তরে বলেন, ” আমি আর যাই করি আপনজনের ক্ষতি করিনি। পৃথিবীতে অনেক পিতা আছেন যারা পক্ষপাতিত্ব করেন আমি উনাদের মতো নই। আমি আমার পরিজনদের ক্ষতি চাই না। আপনি খোঁজ করে দেখুন ঘরের শত্রু কোন কোণা থেকে আপনাকে টার্গেট করছে। ”

নীরব সরকার সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। সকলের দৃষ্টি সেখানেই নিবদ্ধ। আরিফ সরকারের হাঁপানি রোগ বেড়ে যায়। নিশ্বাসের গতি বেড়েছে। বড়ো বড়ো নিশ্বাস গ্রহণ করছে আবার ত্যাগ করছে। নিলয়ের মা রেহেনা দ্রুত ইনহেলার নিয়ে আসলেন।

পাঁচ মিনিট পর আরিফ সরকার ঠিক হলেন। বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন।

” বউ মা, এত বছর কি তোমারও এটাই মনে হয়েছে যে, আমি পক্ষপাতিত্ব করেছি কোন সন্তানের সাথে?”

” না আব্বা। আপনি এসব কিছুই করতে পারেন না। নীরব ছোট মানুষ আপনি ওর কথা ধরবেন না। আর এখন আমাদের সংসারে যা পরিস্থিতি আমাদের মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে।”

সন্ধ্যা দুর্বল শরীরে দূরে দাঁড়িয়ে সবকিছু অবলোকন করছে। দাদা এবং বাবার কার্যকলাপ সবকিছুই তার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। বাবা এবং ছেলের মাঝে কীসের এত শত্রুতা তা সন্ধ্যার অজানা। সে অনেকবার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু উত্তর পায়নি। এক পর্যায়ে বাবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে নিজেকে বাবার মত গড়ে তুলেছে যেমনটা বাবা চাইতো।

আকস্মাত কেউ সন্ধ্যার হাত চেপে ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে। সন্ধ্যা হতভম্ব, গভীরভাবে কোন কিছু চিন্তা করায় উপলব্ধি করতে দেরি হয়ে যায় তার।
কেউ একজন তাকে সরকার বাড়ির প্রধান ফটকের আড়ালে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। সন্ধ্যাবতীর চোখ বন্ধ। সম্মুখে দাঁড়ানো মানুষটার ঘনশ্বাস সন্ধ্যাবতীর মুখশ্রীর উপর পড়ছে।

” চোখ খুলো।”

সন্ধ্যাবতী পিটপিট করে চোখ খুলে। নিলয় অপলক দৃষ্টিতে সন্ধ্যাকে দেখছে। সন্ধ্যাবতী সেই দৃষ্টির অতল গভীরে হারিয়ে যায়।

” দুর্বল লাগছে?”
” তাতে আপনার কি?”
” ভালো হবে না?”
” কখনোই না।”
” ফেঁসে যাচ্ছি।”
” জেলখানায় পুরে দেব।”
” মরে গেলে।”
“আমি সিংহাসনে বসবো।”

নিলয় হাসছে এমন তেজী মেয়েকে বাঘে আনতে নিলয়ের সর্বদা কাঠ পুড়াতে হয়। নিলয় সর্বদা এ বিষয়টা খুব উপভোগ করে। সন্ধ্যাবতীর নাক টেনে বলে,
” হাউ সুইট মিস ঐরাবতী। আপনার কথায় এত ঝাঁজ!শুনলে শরীর জ্বলে যায়।”

” শুনতে চান কেন? আপনি আমার শত্রু আজীবনের জন্য। আমরা কখনো বন্ধু হতে পারবো না। এমন কাছে আসলেও না।”
” বন্ধু হতে কতক্ষণ।”
” ক্ষণিকের জন্যও না।”

নিলয় দূরে সরে দাঁড়ায়। বি’স্ফো’র’ণে’র জায়গাটার দিকে তাকিয়ে বলে,

” গতকাল কী দেখেছিলে সেখানে?”

সন্ধ্যার মুখের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। এতক্ষণে মুখশ্রীতে লেপ্টে থাকার তেজী ভাবটা উধাও হয়ে যায় এবং সেখানে চলে আসে কিছুটা ভয় এবং সংশয়। নিলয় সবকিছু খেয়াল করে। সন্ধ্যাবতীর দিকে ফিরে বলে,

” বাঘিনীর তেজ যেন কখনো না ফুরায়। মুখে যেন আঁধার ছেয়ে না আসে। অন্তরের সংশয় না থাকে। সকলের সামনে তুমি যেমন তেজী মানবী আড়ালেও তেমনি তেজী এবং সাহসী মানবীর হয়ে থাকবে। এবার বলো।”

সন্ধ্যাবতী নিলয়কে একে একে সকল ঘটনা বলে। সব কিছু শুনে নিলয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। গম্ভীর মুখে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,

” চলো আমার সাথে।”

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সন্ধ্যাবতী বারবার নিলয়কে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, ” আমরা কোথায় যাচ্ছি?” নিলয় নিরুত্তর।
সন্ধ্যার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। এক পর্যায়ে রেগে নিলয়ের হাত খামচে ধরে এবং বলে,

” আগে আমার সাথে কথা বলুন। আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমাকে বলতে হবে নয়তো আমি এখনই গাড়ি থেকে নেমে যাব।”

নিলয় গাড়ি ব্রেক করে।
” পৃথিবীতে কাকে বেশি ভালোবাসো এবং কাকে বেশি বেশি বিশ্বাস করো?”

” অবশ্যই বাবা মাকে ভালোবাসি। নিজে ব্যতীত অন্য কারো উপর আমার বিশ্বাস নেই।”

” যদি তুমি কখনো শুনো তোমার ক্ষতি করার পিছনে তোমার একজন ঘনিষ্ঠ মানুষ দায়ী, তখন কি করবে?”
” খু’ন করে ফেলবো। এই পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার কোন প্রয়োজনই নেই।”

নীলের মুখে বাঁকা হাসি দেখা ফুটে উঠে। সন্ধ্যাবতীর কন্ঠনালী থেকে এই কথাগুলোই শুনতে চাচ্ছিলসে।

” নামো।”

পুরনো একটি গোডাউনের সামনে নিলয়দের গাড়ি থেমেছে। সন্ধ্যাবতী গাড়ি থেকে নেমে আশপাশটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ভয়ে নিজের শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। এমন একটা স্থানে নিলয় কেন তাকে নিয়ে এসেছে মনে প্রশ্ন জাগে। নিলয় কী তাকে মে’রে ফেলতে এখানে এসেছে?

নিলয়ের মুখশ্রী স্বাভাবিক। কিছুক্ষণ পূর্বের রাগটা এখন নেই। সন্ধ্যাবতী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এই ভেবে যে নিলয় সন্ধ্যাবতীর কোন ক্ষতি করবে না।

“এসো আমার সাথে।”

নিস্তব্ধ পরিবেশে গোডাউনের শ্যাটার খোলার শ শব্দে ভয়ঙ্কর আওয়াজ তৈরী হয়। সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। নিলয়ের সাথে প্রবেশ করে। জনমানবশূন্য গোডাউন দেখে সন্ধ্যাবতীর গাছ ছমছম করে। নিলয় সন্ধ্যার হত চেপে ধরে বলে,

” কেউ একজন তোমার ক্ষতি করতে চায়। তাকে এখানে আটকে রেখেছি। গতকাল রাতের সে ভয়ানক বি’স্ফো’র’ণে’র পেছনেও তার হাত রয়েছে। আমার গার্ডরা তাকে পলায়নের সময় ধরে ফেলেছিল।”

গোডাউনের ভেতরেও তিন থেকে চারটি কক্ষ রয়েছে। আসবাবপত্র চকচকে। এগুলো গোপন কক্ষ। নিলয় সর্বশেষ কক্ষটিতে সন্ধ্যাবতীকে নিয়ে যায়।

দরজা খুলতে কেউ একজন এসে নিলয়ের মাথায় আ’ঘা’ত করে বসে। সন্ধ্যা আতকে উঠে, আঘাতকারী লোকের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে।

” সাংবাদিক সাহেব? তুমি এখানে কি করছো? তোমার এই অবস্থা কেন?”

রাব্বির অবস্থা নাজেহাল। র’ক্তা’ক্ত হয়ে আছে পুরো শরীর। ঠোঁট কে’টে র’ক্ত বের হচ্ছে। কপাল থেকে র’ক্ত ঝ’র’ছে।

“আমাকে বাঁচাও উষসী? এই লোকটা আমায় মেরে ফেলবে।”

নিলয়ের হাতে লোহা। কপোল বেয়ে র’ক্ত ঝড়ছে। লোহা হাতে এগিয়ে যাচ্ছে রাব্বির দিকে। এদিকে সন্ধ্যা চিৎকার করে বলছে,
” আগাবেন না নিলয়। সে আমার ভালোবাসা। সে কখনো আমার ক্ষেতি করবে না।”

নিলয় শুনেনি। লোহা দিয়ে পর পর আ’ঘা’ত করে রাব্বির বাহুতে। একসময় রাব্বি নিজেকে বাঁচাতে পাল্টা আ’ঘা’ত করে। সন্ধ্যা দৌঁড়াচ্ছে। চিৎকার করে সাহায্য চাইছে। আকস্মাত পুরো গোডাউনে সাদা ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়। নিলয় বুঝতে পারে কেউ স্মোক বোম ছড়িয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
” এই ঘর থেকে বের হও সন্ধ্যা! নিজেকে বাঁচাও। গাড়িতে গিয়ে বসো।”

সন্ধ্যা শুনেনি। আর্তনাদ করে বলছে, ” দোহায় লাগে নিলয়। আমার সুখকে ক্ষতি করবেন না। ওর কিছু হলে আমি কখনো আপনাকে ক্ষমা করব না।”

সন্ধ্যা হাঁপিয়ে গেছে। ধোঁয়ার কারণে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। শুধুমাত্র ধস্তাধস্তির আওয়াজ কানে আসছে। হঠাৎ বিকট শব্দ সন্ধ্যার কানে আসে এরপর নীরবতা। নিলয়ের কন্ঠস্বরে “শিট” শব্দটা ভেসে উঠে।

সন্ধ্যা জানে সেই আওয়াজ কীসের। দুর্বল শরীরে জমিনে বসে পড়ে। উভয় পাশে পীনপতন নীরবতা। স্মোক বোমের সময়সীমা শেষ। চারদিকে সবকিছু স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। অদূরে নিলয় বসা তার সামনে রাব্বির র’ক্তা’ক্ত দেহ। সন্ধ্যার দৃষ্টি শান্ত, দুর্বল স্বরে বলে,

” শেষ করে দিলেন?”

[বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে