#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
|চতুর্থ পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌
“তোমার মান ভাঙাতে শতবার ভেঙে যেতে হলে তাই হব। তোমার অশ্রুসজলে কাজল লেপ্টে গেলে বারবার মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইবো। তোমার হাতের রাঙিয়ে লাগা মেহেদীর সুঘ্রাণ নিয়ে রজনী পাড় করব।”
” তবে তুমি চলেই গেলে, অতীতের স্মৃতি রয়ে।”
কফি শপে বসে গোয়েন্দার কাজে নিযুক্ত হয় সন্ধ্যা।হাতে সুন্দর ছোট একটি ডায়েরি রয়েছে যার মধ্যে সুখ এবং দুঃখের কিছু কথা লিখা আছে। অপরাহ্নের শেষ সময়ে অফিসের কাজের সূত্রে বাহিরে আসতে হয়েছে তাকে। আরো একটি কারণ আছে, আজ সোমবার। প্রতি সপ্তাহে এই দিনে সন্ধ্যা ছল করেই হোক বা বাহানা করেই হোক অফিসের বাইরে বের হবে একজনের সাথে দেখা করার জন্য।
” কি পড়ছো, উষসী?”
একজন আগন্তুক কফি শপে এসে সন্ধ্যার পাশের চেয়ারে বসে তাকে প্রশ্ন করে।
” ডায়েরি। আমাদের পুরোনো স্টোর রুম থেকে পেয়েছি।”
সন্ধ্যা ডায়েরি বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে হেসে ফেলে। সন্ধ্যার হাসিতে আগন্তুক নিজের বুকে হাত চেপে ধরে যেন সে এই হাসিতেই খু’ন হবে। সন্ধ্যা লাজুক হাসে আগন্তুকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ” আমার উপহার?”
আগন্তুক বুকপকেট থেকে একগুচ্ছ ভৃঙ্গরাজ ফুল সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে দেয়। সন্ধ্যার চোখ মুখ খুশিতে চিকচিক করছে। সন্ধ্যা ফুলগুলো প্যাঁচিয়ে হাতের চুড়ি বানিয়ে পরে নিল। আগন্তুক সন্ধ্যার পাগলামি দেখে হাসছে।
” তোমার জন্য এত কষ্ট করে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ফুলগুলো এনেছি, বিনিময়ে কিছু দিবে না?”
” কি চান বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাব্বি সাহেব?
রাব্বি খানিকটা বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলল, ” এভাবে সাংবাদিক বলে আমাকে ছোট করো না তো উষসী? আমি সাধারণ জনগণ।”
সন্ধ্যা প্রত্যুত্তর কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ” আমাকে এভাবে সময় অসময়ে উষসী বলে ডাকবেন না। আমার নাম সন্ধ্যা। মানুষ আমাকে ভালোবেসে সন্ধ্যাবতী ডাকে। আপনিও তাই ডাকবেন।”
” সবাই আর আমি কী এক হলাম? তুমি আমার কাছে যেমন স্পেশাল, আমি মনে করি আমিও তোমার কাছে তেমন স্পেশাল। তুমি ভালোবেসে আমাকে যেমন ভালোবাসার নাম দাও। আমিও ভালবেসে তোমাকে ভালোবাসার নাম দিলাম। উষসী, আমার উষসী।”
” তা যাই ডাকুন না কেন। আপনি প্রতিবারের মতো আজও দেরী করে এসেছেন। এখন বলুন, এত দেরি করলেন কেন? নিশ্চয়ই আবার কোন কে’সে আটকে গিয়েছিলেন? যাক বাদ দেন, এসেছেন তো এসেছেন আমার হাতে বেশি সময় নেই চলুন কিছুক্ষণ হেঁটে আসি।’
সন্ধ্যার তাগাদা দেখে রাব্বি হাতের বন্ধনীতে দৃষ্টিপাত করল, ” আমার হাতে বেশি সময় নেই। বাহিরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছি। তোমার সাথে কিছুক্ষণ সময় কা’টি’য়ে চলে যাব। বলো কী খাবে?”
নিলয় কয়েক সপ্তাহ যাবত সন্ধ্যার চালচলন লক্ষ্য করছিল। প্রতি সোমবার সন্ধ্যার গায়েব হয়ে যাওয়া নিলয়কে ভাবনায় ফেলে দেয়। প্রথম প্রথম যখন বিভিন্ন দুষ্টুমিতে বা রাগ করে অফিস থেকে বের হয়ে যেত তখন সে পাত্তা দিত না কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহ ভালো করে খেয়াল করে যখন দেখতে পায়, সন্ধ্যা প্রতি সোমবারে কোথায় যেন চলে যায়। নিলয় প্রথমে আরিফ সরকারকে জানায়। আরিফ সরকার বলেন, তার খোঁজ নিতে। কেননা আরেক সরকার কখনো চাইবেন না তার বংশের কোন মেয়ে খারাপ দিকে ধাবিত হোক।
আজকে সকাল থেকেই নিলয় সন্ধ্যার পেছনে কয়েকজন লোক লাগিয়েছিল। সন্ধ্যার সকল খোঁজখবর তাকে যেন দেয়। অফিস থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এক কফি শপে সন্ধার খোঁজ মেলে। নিলয় সেখানেই উপস্থিত হয়। গাড়িতে বসে দূর থেকে সন্ধ্যার ভাবগতি পর্যবেক্ষণ করছে। সন্ধ্যা হাসি মুখে কারো সাথে কথা বলছে। কখনো হাতে হাত রাখছে, কখনো হাসতে হাসতে মানুষটার উপর ঢলে পড়ছে। নিলয়ের কেন যেন সহ্য হচ্ছে না। তার ইচ্ছে করছে সন্ধ্যার কাছে গিয়ে ঠাটিয়ে দুইটা থাপ্পড় দিতে। নিলয় যেখানে অবস্থান করছে সেখান থেকে সন্ধ্যার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিন্তু অপরপাশের লোকটির পিছনে অংশটুকু শুধুমাত্র দেখতে পারছে। নিলয় নিজের মুঠোফোনে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। গাড়ি চালু করে শক্ত কণ্ঠে বলল,
” আজকের শাস্তির জন্য তৈরি হও, মিস ঐরাবতী। তোমার ডানা অনেক বেড়ে গেছে। আজকে তোমার ডানার সবগুলো পশম আমি উপড়ে ফেলব।”
————
আরিফ সরকার প্রিয় নাতির সফলতায় ছোট্ট একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। যেখানে আমন্ত্রণ করেছেন শহরের কিছু বিশিষ্ট মানুষদের। অফিসের সকলেও আমন্ত্রিত। সায়াহ্নে অফিস ছুটি দিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যা অফিসের কাজে বাহিরে নিলয় ইচ্ছে করে সন্ধ্যার কানে বার্তাটা পৌঁছায়নি। নিলয় চায় সন্ধ্যা অফিসে আসুক এবং কাউকে না পেয়ে নিরাশ হোক। নিলয় অফিসে সন্ধ্যার জন্য সারপ্রাইজ রেখে এসেছে। এটাই সন্ধ্যার জন্য শাস্তি।
সরকার বাড়ির বাগানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নীরব সরকার নিজ ঘর থেকে সব দেখছেন। চোখের সামনে শত্রুদের আনাগোনা তার সহ্য হচ্ছে না। আজ দুপুরেই সন্ধ্যার মা সুমি বাড়ি ফিরেছেন। স্বামীর জন্য সকলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। ঘরবন্দি থাকতে সুমি কখনোই পছন্দ করত না কিন্তু স্বামীর জন্য ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হয়। প্রথম প্রথম সুমিকে বাবার বাড়িতেও যেতে দিত না নীরব। সুমির হাজার দিনের অনশন পালন এবং কান্নার রেশে অনুমতি পায় সে। এই সুযোগে যখন ইচ্ছে হয় বাবার বাড়ি চলে যায়। কিছুক্ষণ আগেই স্বামীকে চা বানিয়ে দিয়ে যায় সে। চুলায় রান্না বসানো। এসেছিল চায়ের কাপ ফেরত নিতে। কিন্তু সুমি দরজার সামনে এসে আশ্চর্য হয়ে যায়। চায়ের কাপ নিচে পড়ে আছে। সুমি দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে। স্বামীর পাশে দাঁড়াতেই বলে, “এদের এসব আমার সহ্য হচ্ছে না সুমি। আমি সব ভেঙে ফেলবো, আগুন ধরিয়ে দিব চারপাশ।”
” আর কত বছর এভাবে থাকবেন বলুন তো?”
” আমার আশা পূরণের আগ পর্যন্ত।”
” ঘরে বসে স্বপ্ন দেখলে কী তা পূরণ হবে?”
” আমার মেয়ে পূরণ করবে। আমার মেয়েই আমার শক্তি, আমার অহংকার। দেখবে সুমি, আমাদের সন্ধ্যা একদিন শহরের মস্ত বড়ো বিজনেস ওমেন হবে।”
” আগুনকে নিয়ে খেলো না নীরব।”
নীরবের রাগ আরো বেড়ে যায়। রাগ মানুষের মস্তিষ্ককে দুর্বল করে তুলে। সুমিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সে। অগ্নিরুপ ধারণ করে রক্তিম চোখে বলে,
” আগুনের গোলার কাছে যেই আগুন আসুক, ভষ্ম হয়ে যাবে। মানুষের চিন্তা করা বাদ দাও সুমি। আমার মত হতে শিখো, মন থেকে যত তাড়াতাড়ি আবেগ মুছে ফেলবে তত তাড়াতাড়ি তোমার জন্য মঙ্গল হবে।”
নীরব অন্যদিকে ফিরে তাকায়। সুমি নিচ থেকে চায়ের কাপের ভাঙা অংশগুলো উঠিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
———–
বাড়িতে পৌঁছাতে সন্ধ্যার রাত আটটা বেজে যায়। সন্ধ্যার চেহারায় স্পষ্টত রাগের আভা দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই সে অফিসে গিয়েছিল। অফিসে পৌঁছে সন্ধ্যা অবাক হয়। পুরো অফিস অন্ধকারে ঘেরা। সন্ধ্যা ভাবছে, বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করার সময় তো দারোয়ান তাকে আটকায়নি তবে অফিস অন্ধকারাচ্ছন্ন কেন? সন্ধ্যা ভেবেছে সবাই হয়তো মজা করছে তার সাথে। আকাশ, ফুয়াদ আঙ্কেল সহ আরো কয়েকজনকে ডাক দেয়। কারোর সাড়া না পেয়ে সন্ধ্যা দেয়াল হাতড়ে কারেন্টের সুইচে চাপ দেয় কিন্তু আফসোস আলো জ্বলেনি। সন্ধ্যা আরো ভয় পায়। ফোনে আলো জ্বালিয়ে নিজের ডেক্সে চলে যায় কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে। সন্ধ্যার টেবিলের উপর পাথর দিয়ে আটকানো একটা কাগজ দেখতে পায়। এই পাথরটা সন্ধ্যার চেনা। নিলয়ের কেবিনের পাথর যা এক সময় সন্ধ্যা চুরি করেছিল এবং পরবর্তীতে ধরা ও পড়েছিল। সন্ধ্যা পাথর সরিয়ে কাগজ খুললতেই তেলাপোকা তার কোলে এসে পড়ে। অনেকেই বলে মেয়ে মানুষ মানেই ন্যাকামো সামান্য তেলাপোকাকে কেউ ভয় পায়? অনেকেই অন্তর দুর্বল থাকে। আকস্মাত কোন অপ্রত্যাশিত বস্তু দেখলে ভয় পেয়ে যায় এতে করে মানুষটার ক্ষতিও হতে পারে। সন্ধ্যাও ভয় পায় চিৎকার করে উঠে। নিস্তব্ধ অফিসে সন্ধ্যার চিৎকার শোনার কেউ নেই। সময় নিয়ে সে নিজেকে ঠিক করে। কাগজে লিখা অংশটুকু পড়ে রাগ পাহাড়ের চূড়ায় পৌছে। কাগজে লিখা ছিল, ” মিস ঐরাবতী, অফিস ছুটি। হাতের পাথর আমার কেবিনে রেখে আসবে। আর হ্যাঁ, ভুলেও আমার টিবিলের ড্রয়ার খুলবে না।”
নিষিদ্ধ কাজের প্রতি সবাই আগ্রহী। নিলয়ের নিষেধ অমান্য করে সন্ধ্যা ঠিকই টেবিলের ড্রয়ার খুলে এবং সেখানে একটা র’ক্তে ভেজা পুতুল দেখতে পায়। সন্ধ্যার অবস্থা আহার্ট শো এর মত। ভয়ে ঘেমে জবুথবু। সেই অবস্থায় ই অফিস থেকে বের হয়ে আসে।
বর্তমান,
অনুষ্ঠানে বড়ো মাপের মানুষদের দেখে রাগ দমে আসে। এছাড়াও অফিসের কার্মচারীদের উপস্থিত হতে দেখে সন্ধ্যা বুঝতে পারে নিলয় ইচ্ছে করেই তাকে কিছু বলেনি। সন্ধ্যা ভেবে নেয় সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিবে। ক্লান্ত শরীরে সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। সে সকালের আড়ালে বাড়িতে প্রবেশ করে বিশ্রাম নিবে বলে ইচ্ছে পোষণ করে। কিন্তু কে জানতো সন্ধ্যার নিজেদের বাড়িতে নিজেই প্রবেশ করতে পারবে না!
কোথায় থেকে আকাশ দৌড়ে আসে। সন্ধ্যার পথ অবরোধ করে দাঁড়ায়। আকাশের হাতে টুকটুকে লাল গোলাপ ফুলের তোড়া এবং এক বক্স চকলেট। আকাশের মুখে মিষ্টি হাসি।
” দোস্ত আমার, আমাকে খারাপ ভাবিস না। তুই তো জানিস তুমি আমার আপন দোস্ত। তোকে আমি খুবই ভালোবাসি। তুই আমার দোস্ত বলেই তোকে ফুল এবং চকলেট দিলাম যেন তুই আমার সাথে রাগ করে থাকতে না পারিস। আগেই বলে দিলাম, দোস্ত উলটা পালটা কিছুই ভাববি না। তোর সাথে একদিন কথা না বললে আমার পেটের ভাত হজম হয়না রে!
বাল্যকালের বন্ধু না হলেও তুই তো আমার অফিসের দোস্ত। তুই আমার সাথে রাগ করে থাকলে ভালো লাগে না। বিশ্বাস কর বন্ধু, আজকে আমি কাজে মনোযোগ দিতে পারিনি। আর নিলয় স্যারের কাছে কতবার ব’কা খেয়েছি হিসাব নেই।”
” দূর হ আক্কাইস্সা। তোর সাথে কোন কথা নাই। তুই সুযোগ পেলে আমাকে ওই অসভ্য দুর্লয়ের সামনে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে যাস। এখন আসছে আমার রাগ ভাঙাতে। আমি ফারিহাকে সব বলে দেব যে, তুই একশত টা প্রেম করিস। আর আমাকেও প্রেমের জালে ফাঁসাতে চাস। দাড়া একটা সেলফি তুলি।”
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে সত্যি সত্যি সন্ধ্যা মুঠোফোন বের করে সেলফি তুলে নেয়। আকাশ যে নিজের চেহারা আড়াল করবে সেটার কথা ভুলে গেল যেন। সন্ধ্যার মুখে বিশ্বজয়ী হাসি। মুঠোফোন আকাশের দিকে তাক করে বলল,
” হাউ সুইট। এখন আমি এই ছবি ফারিহাকে দিব। এরপর বলব, তুই ফুল আর চকলেট নিয়ে আমাকে প্রপোজ করতে এসেছিস, হাঁদারাম কোথাকার।”
সন্ধ্যাবাতী চলে গেল। আকাশ অসহায় চোখে সন্ধ্যাবতীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। সন্ধ্যা আড়াল হতেই আকাশ হাতের ফুল এবং চকলেটের বক্সের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
” এই মেয়েটা আস্ত একটা হিটলারনী।”
——–
নিলয় এতক্ষণ আকাশ এবং সন্ধ্যার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছিল। সন্ধ্যার রাগ করা,দুষ্টুমি করে হাসা, ছবি তোলা সবকিছু দেখে নিলয়ের কপাল কুঁচকে আসে। নিলয় ভেবেছিল সন্ধ্যা অফিসে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিলয়ের সাথে ঝগড়া করবে। কিন্তু তেমন কিছু করেনি।
অনুষ্ঠানের পরিবেশ বেশ জমজমাট। আরিফ সরকার এবং নিলয় যথেষ্ট চেষ্টা করছেন অতিথিদের আপ্যায়নে যেন কোন ত্রুটি না হয়। তারা হেঁটে হেঁটে সকলের কাছে গিয়ে টুকটাক কথা বলছেন। আরিফ সরকার অনেকক্ষণ যাবৎ লক্ষ্য করছেন সকলে উপস্থিত হলেও সন্ধ্যা এখানে নেই। আরিফ সরকারের নিকট সন্ধ্যা নিলয় সমান। নিলয়কে অফিসের এমডি করেছে বলে সন্ধ্যাবতীর সাথে যে সে অন্যায় করেছেন সেটা না। তিনি চেয়েছেন সন্ধ্যা নিলয়ের সাথে থেকে কাজ সম্পর্কে জানুক, বুঝুক এবং শিখুক। নিলয়কে এখন যেমন সম্মান এবং স্থান দেওয়া হয়েছে পরবর্তীতে সন্ধ্যাকে ঠিক সেই সম্মান এবং স্থান দেওয়া হবে।
সরকার বাড়ির আশেপাশে সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যবস্থা করেছেন স্বয়ং নিলয়। সরকার বাড়ির পিছনে এক দল লেগেছে যারা সরকার পরিবারের ক্ষতি করতে চায়। নিলয় কাউকে বিশ্বাস করে না। পরিবারের লোকজন থেকে ধরে বাহিরের লোকজন কাউকে না। আর আজকের এই অনুষ্ঠানের মুহূর্তে যে কেউ কিছু করবে না তার গ্যারান্টি নেই।
নিলয়ের কিছু ভালো লাগছে না। অনুষ্ঠান কেমন নিরামিষ মনে হচ্ছে। নিলয় চাচ্ছে, তার বিপরীত পক্ষী কেউ আসুক, নিলয়কে টক্কর দিক। আর এই কাজ একজনের দ্বারা সম্ভব সে হচ্ছে সন্ধ্যাবতী। নিলয় মিস করছে তাকে। সন্ধ্যাবতীর সাথে লাগতে না পেরে মন কেমন উশখুশ করছে।
নিলয়ের পাশ দিয়ে একজন লোক জুস ক্যারি করে নিয়ে যাচ্ছিল। সেখান থেকে সে এক গ্লাস জুস হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। নিলয় আজ প্রথম সন্ধ্যাদের বাড়িতে প্রবেশ করবে। সরকার বাড়ি আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানে এ পর্যন্ত কেউ যায়নি। একমাত্র সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যাবতীর মা নিচে আসে কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কোন কথা বলে না। ঘর থেকে বের হয় না।
নিলয় গুনগুন করে গান গাইছে। সন্ধ্যাদের সিঁড়ি দিয়ে সে উপরে উঠে দাঁড়ায। একই সারিতে চার থেকে পাঁচটা ঘর গোলাকারে দাঁড় করা। এই ঘর গুলোর মধ্যে সন্ধ্যাবতীর ঘর কোনটা সেটা ভাবছেন নিলয়।কিছুক্ষণ ভাবনার পর অবশেষে মনে পড়ল নিলয়ের ঘর থেকে সন্ধ্যাবতীর ঘরের বারান্দা দেখতে পায়। সেই অনুযায়ী পরিমাপ করে নিলয় একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজার কাছে এসে দুই তিন বার করাঘাত করে। সন্ধ্যায় এসে দ্বাড় খুলে দেয়। পরিধানে ঢোলা গেঞ্জি আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। নিলয়ের হাসি আসে। এইটুকু বাচ্চা নিলয়ের সাথে টক্কর দেয় এই ভেবে মজা পাচ্ছে।
এদিকে সন্ধ্যা নিলয়কে উপরে আসতে দেখে অবাক হয়ে যায়। চারপাশের চোখ বুলিয়েরাগান্বিত স্বরে বলে,
” আপনার সাহস তো কম না, মিস্টার অসভ্য দুর্লয়? আমার ঘরে আসার অনুমতি আপনাকে কে দিয়েছে।”
“আমার সাহস এখনো দেখোনি মিস ঐরাবতী। চুপচাপ তৈরি হয়ে নিচে আসো নয়তো তোমাকে তুলে এখান থেকে নিয়ে যাব।”
” আমি যাবো না। কি করবেন শুনি?”
নিলয় সন্ধ্যার থেকে কিছুটা দূরত্ব অবস্থান করছিল। সন্ধ্যার কথা শুনে সে আস্তে করে এগিয়ে আসে। সন্ধ্যা ভয় পেয়ে যায়। কিছুটা পিছিয়ে যেতে আটকা পরে যায় নিলয়ের হাতের বন্ধনীতে। নিলয়ের এত কাছে আশাতে সন্ধ্যার অস্বস্তি অনুভব করছে। নিলয়ের থেকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
” এটা কেমন ধরনের অসভ্যতা। আপনি যে অসভ্য সেটা কি জানেন?”
” অসভ্যের ট্যাগ যেহেতু গায়ে লাগিয়ে দিয়েছো, তো অসভ্যতামি করতে সমস্যা কোথায়! চুপচাপ তৈরি হয়ে নিচে আসো। নয়তো বুঝতেই পারছো এই নিলয় কি করতে পারে।”
নিলয় সন্ধ্যাকে ছেড়ে দিয়ে নিচে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতেই সন্ধ্যাবতীর কথা শুনে থেমে যায়।
” আপনি আপনার সীমা অতিক্রম করছেন মিস্টার নিলয়। আমি মেয়ে বলে দুর্বল ভাববেন না। আমারও সময় আসবে, আপনাকে নিঃশেষ করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করছে শুধু।”
” আমি অপেক্ষায় রইলাম, মিস ঐরাবতী।”
নিলয় বাঁকা হেসে সন্ধ্যার বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
সরকার বাড়িতে দুই পরিবারে প্রবেশ করার জন্য দুইটা সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। আর নিচতলা ফাঁকা থাকে। সেখানে আড্ডা দেওয়া হয়। নিলয়দের বাড়িতে সবসময় রমরমা পরিবেশ থাকে, মানুষ ভর্তি অপরদিকে সন্ধ্যাতের বাড়িতে গুমোট পরিবেশ। বাড়িটা দেখতে মনে হয় ভূতুড়ে বাড়ি।
নিলয় বাইরে বের হয়ে সন্ধ্যার ঘরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“আমি জানি তুমি আসবে, মিস ঐরাবতী।”
চলবে ……….