#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| পনেরো তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌
কর্মজীবনে সবাই ব্যস্ত সাথে ব্যস্ত নগরীও। দুপুরের উত্তপ্ত রোদে ঘেমে একাকার হয়ে কাজ করছে কর্মজীবী মানুষেরা।
নিলয় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। মুখশ্রীতে চিন্তার ভাজ স্পষ্টত বিদ্যমান। ড্রাইভ করতে করতে আশপাশ নজরে রাখছে। সন্ধ্যাবতীকে যদি দেখতে পায়!
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যার খোঁজ নেই। নিলয় এই কয়েকঘণ্টায় পাগলের মতো সন্ধ্যাকে খুঁজছে। সন্ধ্যা লগনে আর কিছু সময় বাকি। সারাদিনের অনাহারে এবং চিন্তায় নিলয় হাঁপিয়ে উঠেছে সে। অবশেষে হতাশ হয়ে নিলয় গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির পথে ফিরে আসে।
ব্যস্ত শহরের মাঝে পরিত্যক্ত পুকুর রয়েছে। বছর খানেক আগে যা পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ ছিল। ছোট বেলায় সন্ধ্যার মন খারাপ হলে অর্নব সরকার এখানেই নিয়ে আসতো। নিলয়ের কেন যেন মনে হচ্ছে সন্ধ্যা এখানে আছে। সন্ধ্যা লগনে সন্ধ্যাবতীর একাকিত্ব নির্জন স্থানে অবস্থান করা ভেবে নিলয়ের ভয় হচ্ছে। গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে নিলয় পুকুরের কাছে যায়। নিলয়ের ধারণাই সঠিক। কাঠ দিয়ে তৈরী পুকুরের আশপাশের রাস্তায়। রাস্তাটা অনেক পুরোনো। হেঁটে গেলে করাত করাত শব্দ হয়। নিলয় সেই পথেই এগিয়ে যায়।
ঘোলাটে পানির দিকে সন্ধ্যা একমনে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা নড়ছে না, শরীরের অঙ্গভঙ্গি ও পরিবর্তন হচ্ছে না। সন্ধ্যার পাশে এইটুকুনি খালি জায়গায় নিলয় খুব সতর্কতার সাথে বসে পড়ে। সন্ধ্যা তখনও স্থির নয়নে অদূরে পুকুরের পানি দেখছে। নিলয় নিশ্চুপ হয়ে সন্ধ্যার দৃষ্টি অনুসরণ করে পুকুরে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা আগের অবস্থান পরিবর্তন না করেই বলে,
” আমার কাছে পৌঁছতে এত দেরি করলেন যে?
নিলয় হতবাক হয়ে যায়। তার মানে কী সন্ধ্যা তার জন্য অপেক্ষা করছিল? প্রশ্নটা মনে আসে। মুচকি হেসে সে প্রত্যুত্তরে বলে,
“অপেক্ষা করছিলে বুঝি?”
সন্ধ্যা মলিন হাসে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলয়ে দিকে তাকায় সে, এরপর বলে,
” অপেক্ষা বলা ঠিক হবে না। আমি জানি আপনি আসবেন, আমাকে খুঁজবেন। পৃথিবীতে একমাত্র আপনি আছেন যে আমার খবর নিবেন।”
“আজ ঝগড়া করবে না?”
” মুড নেই। আপনার ইচ্ছে করছে?”
” অনেক কিছুই তো করতে ইচ্ছে করে। সবকিছু করা যায় বুঝি?”
” বাদ দেন। সারাদিন কিছু খেয়েছেন?”
আজকে নিলয়ের অবাক হওয়ার দিন। সন্ধ্যাবতীর একেক কথায় অবাকের উপর অবাক হচ্ছে সে। নিজেকে সামলে সন্ধ্যার চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়,
” কাজের চাপে খাওয়া হয়নি। তুমি খেয়েছ?”
” খাইনি।”
“এখন কি করবে?”
“সারারাত এখানে বসে থাকব। আর জীব জন্তুদের পাহারা দেব।”
“মশকরা হচ্ছে?”
“একদমই না।”
“চলো ফিরে যাই।”
” আচার খাবেন? চালতার আচার। মরিচের গুড়া দিয়ে মাখিয়ে ঝাল করে চালতার আচার।”
” আমি ওসব খাই না। তুমিও খেয়ো না। পেট খারাপ করবে।”
সন্ধ্যাবতী বিস্তৃত হাসে। পুকুরপাড় থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এক হাত বাড়িয়ে দেয় নিলয়ের দিকে। সন্ধ্যার হাসি মাখা মুখ দেখে নিলয় চমকায়। কী হয়েছে সন্ধ্যার যে, সে এমন ব্যবহার করছে? নিলয় ভাবছে, সন্ধ্যা হয়তো কোন বিষয় জেনেছে। যা হওয়ার কথা ছিল না তাই হয়েছে। নিজের ভুলের মাশুল দিচ্ছে সে।
সন্ধ্যাযর হাত না ধরেই নিলয় গা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
” অস্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়াই ভালো। চলো কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে যাই, খেয়ে আসি।”
সন্ধ্যা প্রত্যুত্তরে কিছু বলে না। নিলয়ের হাঁটা অনুসরণ করে সে সামনে আগাচ্ছে। আবারো দুজন নিশ্চুপ নিলয় আড়চোখে সন্ধ্যাকে দেখছে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যাই মুখ খুলে,
” আপনি আমার বয়সে অনেক বড়ো। তবু আপনার নিকট একটি অমান্য আবদার। রাখবেন কী?
” রাখা যায়। তবে আজকে তোমাকে অন্যরকম লাগছে। আমি আগের ঐরাবতীকে মিস করছি।”
” ইরাবতীকে মিস করেন না বুঝি?”
” যার অস্তিত্ব এই জগত সংসারে নেই, যাকে ছুঁয়ে দেওয়ার আমার কোন অধিকার নেই। যার ছায়া কখনো মাড়াতে পারব না। তাকে কীভাবে মনে করি।”
” মানে?”
” সে নেই সন্ধ্যা। মনের অনুভূতি জানানোর পূর্বেই অন্য কারোর হয়ে যায়। বছর পাড় হতেই উপর ওয়ালার প্রিয় হয়ে যায়।”
সন্ধ্যার খারাপ লাগা কাজ করছে। প্রসঙ্গ পাল্টাতে সে বলে,
“আপনাকে অন্যরকম লাগছে।”
“কেমন।”
” এই যে আজ আমাকে আপনি থেকে তুমি, তুমি থেকে আপনি উলটপালট সম্বোধন করছেন না। সেই কখন থেকে তুমি ডেকে যাচ্ছেন। মন যখন ভালো থাকলে তখন তুমি ডাকেন, আর যখন মাথা গরম করে ফেলি তখন আপনি ডাকেন তাই না?”
আজ ছেলে হয়েও সন্ধ্যার কথা শুনে নিলয় লজ্জা পাচ্ছে। মাথা চুলকে হেসে বলে,
” বুঝতে যেহেতু পেরেছ। পাল্টা প্রশ্ন করছো কেন?”
“আপনাকে লজ্জায় ফেলতে।”
তাদের মাঝে আর কোনো কথা হয় না। গাড়ির কাছে আসতেই দুজনে উঠে যায়।
——————–
সময় কীভাবে অতিবাহিত হয় তা কারো জানা নেই। বলা হয়, “সময় এবং স্রোত করা জন্য অপেক্ষা করে না।” কথাটা সত্যি। দেখতে দেখতে অনেকদিন কে’টে গিয়েছে। সন্ধ্যা এবং নিলয়ের মাঝে এখন ঝগড়া কম, বন্ধুত্ব বেশি হয়। এখন তারা একে অপরের খুব কাছের। একে অপরের এত কাছাকাছি আসা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সন্ধ্যার জন্য। সন্ধ্যা নিলয়ের কাছাকাছি থাকলে কথার ঝুড়ি নিয়ে বসে আর নিলয় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তা শুনে। সারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরেও বেশ রাত পর্যন্ত ছাদে বসে আড্ডা দেয় দুজনে।
অফিসে আজ কাজের খুব চাপ। নিলয় সকাল বেলায় নাস্তা না করেই বের হয়ে গেছে। সন্ধ্যাকে গতকাল রাতেই জানিয়ে দিয়েছিল সে আগে চলে যাবে।
সন্ধ্যা তৈরি হয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে নেয়। আজ নীল শাড়িতে নিজেকে আবৃত করেছে। হাতে নীল কাঁচের চুড়ি, কানে এক জোড়া ঝুমকো, কপালে ছোট টিপ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে চিন্তা করে প্রিয় মানুষটি তাকে এই অবস্থায় দেখলে কী করবে। হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে? নাকি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তির উপর ঢলে পড়বে।
সন্ধ্যা লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে। এই লাজ একজনের জন্যই হচ্ছে। হাতের বন্ধনীতে সময় দেখে সে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
বাবা-মেয়ের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে। নিলয়ের জন্মদিনের পর থেকে দুজনের মধ্যে কথা খুব কম হয়। সন্ধ্যার সাজগোজ দেখে নীরব সরকার প্রশ্ন করতে চেয়েও করেনি। মেয়ে চলে যেতেই মুঠোফোনে কাউকে ফোন করে সে।
” তোমার উপর ভরসা করেই এতদিন চুপ ছিলাম। আজ তার বাড়াবাড়ি একটু বেশি পর্যায়ে চলে গেছে। কিছু করো, নয়তো সব ধ্বংস হয়ে যাবে।”
—————
রাফসান এবং হ্যারি আজ প্রথম একটি জরুরী মিটিংয়ের উপর ভিত্তি করে নিলয়দের অফিসে এসেছে। নিলয় নিজেই তাদের স্বাগতম জানিয়েছে। মিটিং রুমে বর্তমানে তিনজন ব্যক্তির আলাপ আলোচনা চলছে। সন্ধ্যা অনুপস্থিত, নিলয় তিন চার বার সন্ধ্যাকে ফোন করেছে। তার আফসোস হচ্ছে কেন সে সন্ধ্যাকে সাথে করে নিয়ে আসেনি। হয়তো জ্যামে আটকে পড়েছে তাই দেরী হচ্ছে। নিলয় একবার হাতের বন্ধনীতে তো একবার দরজার দিকে দৃষ্টি ঘুরাচ্ছে। নিলয়ের ভাবভঙ্গি রাফসান এত সময় ধরে লক্ষ্য করছিল। তাই সে নিলয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
” কোন সমস্যা মিস্টার নিলয়? আপনি কী কারোর জন্য অপেক্ষা করছেন?”
রাফসানের কথা শেষ হতেই মিটিং রুমের দরজা দিয়ে সন্ধ্যা প্রবেশ করে তা দেখে নিলয়ের মুখে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠে। আনমনে রাফসানকে উত্তর দেয়,
” একজন নীল পরীর জন্য ছটফট করছিলাম।”
নিলয়ের কথা রাফসানের কানে যায়নি। সন্ধ্যাকে দেখা মাত্রই সে দাঁড়িয়ে যায়। আওয়াজ করে বলে,
” সো লাভলী।”
তিনজনের স্থির চাহনিতে সন্ধ্যা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। কপোলের উপরে আসে অবাধ্য চুলগুলো কানের পিছনে নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
” আমি খুবই দুঃখিত। আমরা চাইলে এখন মিটিং শুরু করতে পারি।”
নিলয়ের পাশের চেয়ারটায় সন্ধ্যা বসে পড়ে। আড়চোখে নিলয়ের দিকে তাকাতেই নিলয়ের রক্তিম চোখ চোখে ভাসে। সন্ধ্যা শুকনো ঢোক গিলে। এক হাতে কান ধরে আওয়াজ না করে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে,
” এবারের মতো সরি। আর হবে না।”
সন্ধ্যার সরি বলাতেও নিলয়ের কোন পরিবর্তন হলো না। সে সন্ধ্যার দিকে কঠিন দৃষ্টিপাত করে আছে। সন্ধ্যা ভাবছে তার দেরী করে আসার কারণে নিলয় রেগে কিন্তু আমাদের বোকা সন্ধ্যাবতী তো আর জানে না। নিলয়ের সামনে অন্য একজন সন্ধ্যার প্রশংসা করেছে বিধায় নিলয় রেগে আছে।
যথারীতি মিটিং শুরু হয়ে যায়। রাফসান সর্বপ্রথম কথা বলা শুরু করে।
” আমরা চাইছি আমাদের রানিং প্রজেক্টটা আরো সফল হোক। তারজন্য আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন।”
নিলয়ের ভ্রু যুগল কুঁচকে আসে। প্রজেক্ট ভালো এগোচ্ছে। রাফসানের কথার প্রত্যুত্তরে বলে,
” তার জন্য আমাদের কী করণীয়?”
” আভাদের এই প্রজেক্টটি আরো বঢ়ো করতে হবে তার জন্য অনেক টাকাও ইনভেস্ট করতে হবে।”
” আমরা অলরেডি আমাদের কোম্পানি থেকে সত্তর পার্সেন্ট টাকা ইনভেস্ট করেছি। এখন যদি আরো বাড়াতে চান তাহলে আমাদের দ্বারা সম্ভব না।”
রাফসান একটুও চমকায় না। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে নেয় সে।
” বর্তমানে পুঁজি নিয়ে মাঠে নামাটাই বোকামি। ব্যাংক ব্যালেন্সে আদান প্রদানের হাত লম্বা করতে হয়। আমরাও আপনাদের মতো ইনভেস্ট করেছি। জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। আপনি ভেবে দেখুন নয়তো এই প্রজেক্টটি অসফল হয়ে যাবে।”
সন্ধ্যা গভীর ভাবনায় ডুবে যায়। রাফসানের কথাটা তার কাছে মন্দ মনে হয়নি। সে রাফসানের উদ্দেশ্যে বলে,
” আমরা নিজেদের মধ্যে কিছু আলাপচারিতাকরে নিয়ে চাই।”
” অবশ্যই সুন্দরী। আপনার জন্য আঘাত সময় রয়েছে।”
রাফসানের লোভতুর দৃষ্টি সন্ধ্যার চোখে এড়ায় না। সে নিজেকে পরিপাটি করে নিলয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
” একটু কেবিনে আসুন তো?”
রাগের বশে নিলয় এতক্ষণ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছিল। সন্ধ্যার মিষ্টি স্বর শুনে রাগ যেন হাওয়ায় মিশে গেল। রাফসানদের থেকে বিদায় নিয়ে সে চলে যায় কেবিনে।
সন্ধ্যা সিরিয়াস ভঙ্গিতে নিলয়ের সাথে কথা বলতে নিতেই নিলয়ের গাম্ভীর্য মুখশ্রী দেখতে পায়।
” এভাবে ফেলে আছেন কেন? আমি কী করেছি।”
সন্ধ্যার কথা বলাটাই ভুল ছিল। নিলয় সন্ধ্যার নিকট এগিয়ে এসে তার হাত মুচরে ধরে।
” শাড়ি পরে আসতে বলেছে কে আপনাকে, মিস ঐরাবতী?”
” আহ অসভ্য দুর্লয়। শক্তি মানবদের মতো কাজ করলে আপনাকে মানায় না। হাত ছাড়ুন বলছি নয়তো আমি আগের রূপে ফিরে যাবো।”
নিলয় হাত ছেড়ে দেয়। মুখশ্রী অন্য দিকে ফিরিয়ে বলে,
” বলো কেন ডেকেছো।”
” আমাদের মিস্টার রাফসানের কথায় সায় দেওয়া উচিত।”
” কোম্পানির ক্ষতি হবে।”
” হবে না। আমরা দুজন সব সামলে নিব।”
” বলছো তো?”
” হুম। আপনি চাইলে আরিফ সরকারের সাথে আলোচনা করে নিতে পারেন।”
” উনি তোমার দাদা হয়।”
” আমি বাবার আদর্শে বড়ো হয়েছি।”
” এই আদর্শ একদিন তোমার কাল হয়ে দাঁড়াবে।”
নিলয় চলে নিতেই সন্ধ্যা আবারো ডেকে উঠে,
” আমাকে কেমন লাগছে?”
নিলয় থেমে যায়। মুচকি হেসে বলে,
” হাতিনীকে আবার কেমন লাগবে। পেট মোটা আনারস লাগছে।”
———————-
দুই কোম্পানির প্রজেক্টের নতুন করে মিটিং ফাইনাল হওয়ায় রাফসান এবার নিলয় এবং সন্ধ্যাকে রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার একসাথে খাওয়ার আমন্ত্রণ করেন। সন্ধ্যা এবং নিলয়ও অমত করেনি। নামীদামি রেস্টুরেন্টে এসে উপস্থিত হয় সে। তারা বর্তমানে যেই রেস্টুরেন্টে অবস্থান করছে সেখানে একটা অদ্ভুত নিয়ম রয়েছে। এই রেস্টুরেন্টের সকল কর্মচারী মেয়ে।
আলাপচারিতার মাঝেই খাবার চলে আসে। হাসি মজায় রাতের খাবার সম্পন্ন করে সবাই। সন্ধ্যার পায়েস খুব পছন্দের। ডেজার্টের সে পায়েস বেছে নেয়। কর্মচারীরা পায়েস পরিবেশন করার সময় অসাবধানতাবশত সন্ধ্যার শাড়িতে ফেলে দেয়। রাফসান এতে রেগে যায়। কর্মচারীকে বকা ঝকা করে ইচ্ছেমত। নিলয়ের এই বিষয়টি পছন্দ হয়নি। রাফসানকে থামিয়ে সন্ধ্যাকে বলে পরিষ্কার করে নিয়ে আসার জন্য।
শাড়ি পরিষ্কার করে সন্ধ্যা চলে আসতে নিতেই থমকে দাঁড়ায়। সন্ধ্যার শাড়ির আঁচলে কিছু বাঁধা আছে। সে আঁচলের গিট খুলে দেখে একটা চিরকুট। কৌতূহল বশত সন্ধ্যা চিরকুট খানা চোখের সামনে খুলে ধরে যেখানে লিখা,
” প্রিয় উষসী,
এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? আমি তো তোমায় ভুলতে পারি না! প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছি। তুমিও তাদের সাথে শামিল হলে! ক্ষমা নেই, তোমার, নিলয়ের কারোর ক্ষমা নেই আমি ফিরে এসেছি। তোমার আশাপাশেই আছি। আর কিছুদিন তারপর……
সন্ধ্যা ভয় পেয়ে যায়। চিঠি ফেলে দৌড়ে বের হয়ে যায় সেখান থেকে। নিলয় এদিকেই আসছিল। রাত অনেক হয়েছে বাড়ি ফিরতে হবে। সন্ধ্যাকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে থেমে যায় সে। সন্ধ্যা নিলয়কে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ভয়ে নিলয়কে জড়িয়ে ধরে বলে,
” সে আমাদের বাঁচতে দিবে না নিলয়, একদম বাঁচতে দিবে না।”
চলবে……
#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| ষোল তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌
অন্ধকারে একজন মেয়ের কান্না আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মেয়েটি আর্তনাদ করে বলছে,
” ছেড়ে দাও। আমি এই বিয়ে মানি না। আমি কখনোই নিলয়কে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করব না।”
মেয়েটির কথার প্রতিধ্বনি দেয়ালে প্রতিফলিত হচ্ছে। কিন্তু আফসোস দেয়ালের ঐপারে মেয়েটির কথা কেউ শুনতে পাচ্ছেনা।
কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির চোখের পানি ফুরিয়ে গিয়েছে। সে ধীরে দুর্বল পায়ে উঠে দাঁড়ায়। অন্ধকারে দেয়াল হাতরে দরজার কাছটায় এসে দরজার হাতল ঘোরায়। দরজা অপরপাশ থেকে তালাবদ্ধ। দরজার হাতল বারবার ঘুরিয়েও লাভ হলো না। মেয়েটি শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে দরজায় কড়াঘাত করে তাতেও কোন ফলাফল পেল না। সে পূর্বের ন্যায় আর্তনাদ করতে লাগলো।
” মিস্টার নিলয় নীলাভ আমাকে ছেড়ে দিন বলছি। আমার জন্য সে অপেক্ষা করছে কি করেছেন আপনি তাকে? গতবারের মতো এবার ওকে মেরে ফেলেছেন? গতবার তো ভাগ্যের জোর ছিল বলে সে বেঁচে গিয়েছিল। এবার তার সাথে আপনি কি করেছেন? কোন ক্ষতি করবেন না। তাকে ছাড়া আমি ম’রে যাব।”
চিৎকার করতে করতে মেয়েটি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো। সময় অতিবাহিত হতে থাকে, রজনী আরো গভীর হতে থাকে। কিন্তু কেউ মেয়েটিকে দেখতে আসে না। মেয়েটি এভাবে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকে মাটিতে।
মধ্যে রজনী। পৃথিবীর সকলে যখন ঘুমে মগ্ন তখন একজন লোক টলমল শরীরে হেঁটে একটি দরজার সামনে দাঁড়ায়। সারা শরীরে তার র’ক্তে’র ছিটাফোটা বিদ্যমান। পকেট থেকে চাবি বে করে তালা খুলে লোকটি প্রবেশ করে। দেয়াল হাতড়ে সুইচবোর্ডে চাপ দিতেই পুরো ঘর আলোকিত হয়ে পড়ে। লোকটি দেখতে পায়, তার আদরের সন্ধ্যাবতী মাটিতে পড়ে আছে। লোকটি সেই অবস্থায় সন্ধ্যার পাশে বসে পড়ে। সন্ধ্যার শুকনো মুখের উপর থেকে এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। তার ঠান্ডা হাত দ্বারা সন্ধ্যার গাল স্পর্শ করতেই সন্ধ্যা কেঁপে উঠে। লোকটি বাঁকা হেসে বলে,
” দেখো সন্ধ্যাবতী, এই নিলয় নীলাভকে তুমি অনেক অপছন্দ করো। অথচ দেখো! এখন তুমি তাঁর কাছে।অতি কাছে। বউ হয়ে সারাজীবন এই নিলয়ের কাছেই থাকবে।”
নিলয় দুর্বল শরীরে উঠে দাঁড়ায়। পেশিবহুল শরীর থেকে একটানে শার্ট খুলে ফেলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পিটের অংশ দেখতে চেষ্টা করে সে। তিন স্থানে গভীরভাবে কেঁটে গিয়েছে। নিলয় তা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
” মনের ক্ষতটা যদি কেউ দেখতে পারতো তাহলে বুঝতো কেমন কষ্ট হচ্ছে। বাহ্যিক এই আঘাত তো ক্ষণিকের জন্য অভ্যন্তরীণ আঘাত খুবই গভীর। আমকে এবং আমার পরিবারকে যতটা কষ্ট দিয়েছ তার চেয়ে বেশি আমি তোমাকে কষ্ট দিব মিস ঐরাবতী। আগামীকাল থেকে তোমার দুঃখের দিন শুরু।”
নিলয় আর ক্ষতস্থানে পট্টি লাগাল না। সেই অবস্থায়ই দেয়াল ঘেঁষে বসে এক দৃষ্টিতে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে থাকে।
—————–
সরকার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সন্ধ্যার মায়ের মৃত্যুর আজ এক সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে। আরিফ সরকারের হাঁপানি রোগ বেড়ে গিয়েছে তিনি যেন এই পৃথিবীতে থেকেও নেই। নিলয়ের মা রেহানা একা হতে সব সামলাচ্ছেন। প্রভাতের সময়ে ফারুক সরকার এবং তার স্ত্রী সরকার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। দুজনের চোখেই খুশির ঝিলিক যেন তারা একটা মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় ছিল এতদিন আর সেই সুযোগ আজ পেয়েছে। রেহেনা সকালের নাস্তা বানাচ্ছিল। সকাল সকাল ফারুককে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায়। কিছু মাস পূর্বেই ফারুক সরকারকে আরিফ সরকার রিহাবে পাঠান। অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে ছেলেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই এই ব্যবস্থা। ফারুক এসে রেহানার উদ্দেশ্যে বলে,
” ভাবি, সরকার বাড়ি তো এবার ধ্বংসের পথে। বাবা তোমার ছেলেকে ভরসা করে কোম্পানির দায়িত্ব দিয়েছিল। আমাকেও ভরসা করেনি। এখন কী হলো! কোম্পানি তো শেষ।”
” এভাবে বলছো কেন ফারুক? শেষ থেকে শুরু করা যায়। বাড়ির এমন অবস্থায় এসব কথা বললে নয় কী? বাবা ও তো অসুস্থ। নিলয় সন্ধ্যা বাড়ি ফিরুক সব সমস্যার সমাধান হবে।”
” পুলিশের ভয়ে তোমার ছেলে আর সন্ধ্যা পলাতক। তারা আর ফিরবে না। এবার আমি এসেছি, সরকার বাড়ির সব দায়িত্ব আমি কাঁধে নিলাম।”
ফারুকের কথা শেষ হতে আরিফ সরকারের কন্ঠস্বর শোনা যায়। তিনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে ছেলেকে বলেন,
” আমি এখনো বেঁচে আছি ফারুক। এই সরকার বাড়ির সকল সিদ্ধান্ত এ আরিফ সরকার নেবে। কাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হবে তা এই আরিফ সরকার বলবে। তোমার এত চিন্তা করতে হবে না।”
” কিন্তু বাবা কারখানায় না গেলে তো আরো নিচে নামবে।”
” সে চিন্তা তোমার করতে হবে না। সব আমি করব।”
ফারুক সরকার ক্ষেপে যায়। বাবার সামনে উঁচু আওয়াজে কথা বলে সে।
” বাবা তুমি আমাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করছো। আমি কিন্তু এবার আমার সম্পত্তির ভাগ চাইবো।”
আরিফ সরকার গর্জে উঠেন তার ছেলের এমন অধঃপতন দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
” ফারুক!”
আরিফ সরকারের চিৎকারে সরকার বাড়ির কেঁপে উঠেছে। সাথে সরকার বাড়ির মানুষজনকেঁপে ওঠে। ফারুক বাবার রাগ সম্পর্কে অবগত আপাতত সে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করে। তাই নিজের স্ত্রীকে সাথে নিয়ে চলে যায় নিজ কক্ষে।
রেহানার চোখে জল ছেড়ে বাবার উদ্দেশ্যে বলেন,
” আমাদের সুখের পরিবার কি থেকে কি হয়ে গেল। আগের মত কি আর হবে না?”
” জানিনা বউমা। তবে আমার সন্ধ্যার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে না জানি মেয়েটা এখন কি অবস্থায় আছে।”
আরিফ সরকার এবং রেহানার কথোপকথনের মাঝে নীরব সরকারের চিৎকার করে কান্না করার আওয়াজ তাদের কানে ভেসে আসে। গত এক সপ্তাহ ধরে নীরব নিজের ঘর বন্দী করে রেখেছে। কারো সাথে কথা বলে না কারো খবর নেয় না। শুধুমাত্র সুমি বলে কিছুক্ষণ পর পর আর্তনাদ করে উঠে। এভাবেই চলছে নীরবের প্রভাত রজনী।
————————-
ভোর সকাল আশপাশে পাখিদের কিচিরমিচিরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত কোন জঙ্গলে আছে তারা। পাখির আওয়াজেই সন্ধাবতী চোখ খুলে তাকায়। বুঝতে চেষ্টা করে সে এখন কোথায় আছে। অবশেষে মনে পড়ে সে এখন বিবাহিত এবং তাকে জোর করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।
সারারাত জমিনে শুয়ে থাকার কারণে সন্ধ্যার সারা শরীর ব্যথা হয়ে গিয়েছে। শরীরের অসহনীয় যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠে আহ করে আওয়াজ করে উঠে সে।
চোখ তুলে আশপাশ দৃষ্টিপাত করে সম্মুখেই শার্ট বিহীন নিলয়কে দেখতে পায় সে। নিলয় দেয়ালে হেলান দিয়ে হাঁটুতে এক হাত ঝুলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সন্ধ্যা খেয়াল করে ঝুলে থাকা হাতে র’ক্ত শুকিয়ে আছে। সন্ধ্যা ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে, নিলয়ের কিছু হয়নি তো? বেঁচে আছে কী?
সন্ধ্যা দুর্বল পায়ে নিলয়ের দিকে এগিয়ে যায়। নিলয়ের কাছে এসে দাঁড়াতেই সে থমকে যায়। নিলয়ের পিঠে গভীর ক্ষত যা থেকে র’ক্ত গড়িয়ে সারা পিফ ছড়িয়ে গিয়েছে। র’ক্ত শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে
সন্ধ্যা কাঁপা হাতে নিলয়ের ক্ষতস্থানে হাত ছুঁয়ে দেয়। এতে নিলয়সজাগ হয়ে যায়। সন্ধ্যার চোখে মুখে দুঃখের আভাস পেয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। সন্ধ্যার চুলের মুঠি ধরে একদম কাছে টেনে হিসহিসিয়ে বলে,
“কী দেখতে এসেছিলে। বেঁচে আছি কিনা? এই দেখো, আমি বেঁচে আছি। তোমার আঘাতে মরিনি।”
” আমাকে ছেড়ে দিন, অসভ্য দুর্লয়।”
“এ জীবন থাকতে কখনোই না।”
” কেন করছেন এমন? কী পাচ্ছেন আমাকে বন্দি করে?”
” প্রশ্নটা তো আমার করা উচিত। কী পেলে আমাদের এত বড়ো ক্ষতি করে? তোমার একটা ভুলের জন্য তোমার জন্মদাত্রী মা আজ আমাদের মধ্যে নেই। এখনো তোমার আফসোস হচ্ছে না? ভালোবাসায় এতটাই অন্ধ হয়ে গেছো তুমি?”
” আমার মাকে আমি মারিনি। আমার মাকে আপনি হত্যা করেছেন।”
” হাসালে সন্ধ্যাবতী! সব সময়ের মতো নিজের দোষটা আমার ঘাড়ে চাপালে!”
সন্ধ্যা নিলয়ের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করে থাক। নিলয় এতে করে সন্ধ্যার চুলের মুঠ আরো শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে আনে বলে,
” নড়াচড়া করে লাভ হবে না। এই নিলের বন্ধন থেকে কখনো মুক্তি পাবে না। আজ থেকে তোমার দুঃখের দিন শুরু। আমার পতন চেয়েছিলে কিন্তু দেখো আজ আমি ঠিক আছি। তোমার এবার কি হবে সন্ধ্যা?
“আপনার মন বলতে কিছু আছে?”
” আমরা দায়িত্বের পিছনে ছুটতে ছুটতে বক্ষস্থানের বাম পাশটায় ছোট হৃদয়ের কথা ভুলে যাই। ভুলে যাই সেখানে কাউকে স্থান দিতে পারি, কাউকে আপন করতে পারি। আমি সেই স্থান তোমাকে দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে নিঃস্ব করে দিলে।”
সন্ধ্যা নীলার কথা শুনে কাঁদতে থাকে। ব্যথাতুর স্বরে বলে,
” আমাকে ছেড়ে দিন নিলয়। আমার মনেপ্রাণে অন্য কারো বাস। আপনার অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু শ্রেয়।”
নিলয় আরো রেগে যায়। সন্ধ্যাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
” মৃত্যুর যন্ত্রণা তে কত কঠিন তা তুমি জানো না সন্ধ্যাবতী। আমার মনে যে আঘাত দিয়েছো সেই ক্ষত সারিয়ে নাও। তারপর ছাড়া পাওয়ার চিন্তা করবে।”
নিলয় কথা বলা শেষ করে চলে যায়। পিছনে রেখেযায় অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে থাকা সন্ধ্যাবতীকে।
——————
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এসেছে। সন্ধ্যা সেই অবস্থায় একটি ঘরে আবদ্ধ রয়েছে। তিন বেলা অনাহারে থাকায় শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে তার। ক্ষুধার তাড়নায় সন্ধ্যা পুরো ঘর তছনছ করে ফেলেছে কিন্তু খাবার পায়নি। অবশেষে সন্ধ্যা বিছানায় বসে পড়ে। মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে।
এমন সময় নিলয় দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করে, সন্ধ্যাকে কান্না করতে দেখে কোন কথা বলে না হাত থেকে খাবারের প্যাকেট বিছানার উপর রেখে চলে যায় ওয়াশরুমে।
নিলয়ের হাতে এবং পিঠে ব্যান্ডেজ করা। ব্যান্ডেজ এর উপরে র’ক্তে’র ছোপছোপ দাগ ভেসে উঠেছে। সন্ধ্যা কিছু বলেনা। এক দৃষ্টিতে খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকে। এদিকে নিলয় সন্ধ্যার ভাবগতি সবই পর্যবেক্ষণ করছিল। হাত পা ধুয়ে এসে খাবার প্যাকেট খুলে নিজে খাওয়া শুরু করে দেয়। সন্ধ্যা লজ্জায় কিছু বলছে না। নিলয় বাঁকা চোখে সন্ধ্যা সন্ধাকে দেখছে শুধু। অবশেষে নিলয় এক লোকমা খাবার সন্ধ্যার মুখের সামনে ধরে।
” ভাঙবে তবু মচকাবে না। ক্ষুধার তাড়নায় মরে যাচ্ছো কিন্তু খাবার খাচ্ছো না। খাবার খেয়ে নাও, নয়তো আমার সাথে পাঙ্গা নিবে কীভাবে? শক্তি তো থাকতে হবে তাই না?”
সন্ধ্যা কোন কথা না বলে নিলয়ের হাতে খাবার খেয়ে নেয়। নিলয় উঠে দাঁড়ায়। পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে সময় দেখে নেয় এরপর সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
” পালাতে চেষ্টা করো না সন্ধ্যাবতী। সফল হবে না। আমি এখন যাচ্ছি আবারো ফিরে আসবো। অনেক প্রশ্নের উত্তর চাইবো। তৈরি হয়ে নাও।”
নিলয় চলে যায়। সন্ধ্যা ভাবতে থাকে অতীতের সেই দিনগুলোর কথা।
অতীত……
চলবে…….