#সন্দেহ
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৩২
.
.
অনেক কষ্টের পর ইরা অনুকে সরাতে পেরে শান্তিতে বসে আছে। মুড ফ্রেশ লাগছে। কথায় আছে না?আসলে মন ভালো তো দুনিয়া ভালো।
ইরার ইচ্ছে করছে গান শুনতে কিন্তু পারছে না। বাসায় সবার মন এত খারাপ হওয়ার কি আছে কে জানে.?
মনে হচ্ছে কে যেনো মরেছে। এত শোক পালন করছে সবাই। আরে আপদ বিদেয় হয়েছে। তোমাদের খুশি হওয়া উচিৎ আর তোমরা কি না? হুহ্ এসব ভাবতে ইচ্ছে করছে না। গান তাকে শুনতেই হবে৷ তাই ইয়ারফোন নিয়ে ধীরে ধীরে বিছানায় এগুলো ইরা৷
.
ফুল ভলিউমে গান শুনছে
.
দিলবার দিলবার।
তন্দ্রার মতো লেগে আসছিলো। এতটুকু ড্রিংকস এ নেশা হওয়ার কথা না। তবুও ঘুম পাচ্ছে কেনো?
দুচোখ বন্ধ করে ঘুমেরর মধ্যে চলে যাচ্ছিলো ইরা।
হঠাৎ ইয়ার ফোনে বাজতে লাগলো অদ্ভুত এক গান৷
ঠিক ঠাউর করতে পারছে না। মনে হচ্ছে রবীন্দ্র সংগীত। হ্যাঁ, রবীন্দ্র সংগীত, অনুর গাওয়া
.
.
আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার,
পরানসখা বন্ধু হে আমার।
আকাশ কাঁদে হতাশ-সম,
নাই যে ঘুম নয়নে
দুয়ার খুলি হে প্রিয়তম,
চাই যে বারে বার।
পরানসখা বন্ধু হে আমার।
বাহিরে কিছু দেখিতে নাহি পাই,
তোমার পথ কোথায় ভাবি তাই।
সুদূর কোন্ নদীর পারে,
গহন কোন্ অন্ধকারে
হতেছ তুমি পার।
পরানসখা বন্ধু হে আমার।
.
.
ইরার তন্দ্রা ভাব কেটে যায়। বাহিরে ঝড় হচ্ছে। আচ্ছা? সত্যি কি কোন পাপ করে ফেললাম? অনুর সাথে? ওর বাচ্চা টার সাথে?
বাচ্চাটার কথা মনে হতেই সে ফোন বের করলো।
বাবুর কয়েকটা ছবি সে তুলেছিলো।
চেহারা টা অনেক সুন্দর। অজান্তেই আদর করতে ইচ্ছে করছিলো।
অনুর সাথে তো কোন শত্রুতা নেই। নিলয় কে যে চাই ই চাই।
যদি গর্ভবতী না হতো তাহলে আহামাদ কে নিয়ে আসতো। কোন না কোন উপায় করেই৷
.
এত কিছুর পর একটা সমস্যা রয়েই গেলো। নীলাভ্র……৷
কি করে কি করবে ভাবতেই আবার অস্থির লাগছে।
নীলাভ্র কে সে ভালোবাসে না কিন্তু এত বছর সংসার করার পর আলাদা মায়া জন্মেছে। কি করবে ইরা? নিলয় আত্মায় মিশে আছে আর নীলাভ্রর সন্তান তার গর্ভে।
.
.
নীলাভ্রর গাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে ড্রাংক কিন্তু ওর তো এমন বাজে নেশা নেই। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে৷ গাড়ি থেকে নেমেই নীল কে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে লাগলো।
সীমন্তিনী শুধুই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
.
.
.
-শানসাইন! কই তুমি? ক্লান্ত লাগছে খুব। আগে আমার কাছে আসো তো।
.
কি হলো ডাকছি না?
আজব! কই তুমি? জবাব দিচ্ছো না কেনো?
অনু…..
.
.
অনু বলে ডাকতেই নিলয়ের হুশ হলো। শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে গায়ের শার্ট টা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। কি সব ভাবছে? অনু কই থেকে আসবে? ও তো হাসপাতালে।তাছাড়া ও আর এখানে কোন দিন আসবেও না। কিছুক্ষণ আগেই তো নিজ হাতে সাইন করা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে। অনু সাইন করেও দিয়েছে। ডিভোর্স টাও তো হয়েগেছে। উকিল কাল কোর্টে সাবমিট করবে আর কাজির মাধ্যমেও সম্পর্ক শেষ করে এসে সে কি না অনু কে খুজছে মনে মনে?
এটা অন্যায়। অনুর ঠকানোর পর হয়তো সে অন্য কোন মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারবে না কিন্তু অনু যে তার অভ্যেস নয় স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে। ওর প্রতিটি স্পর্শে অনুর বাস। রুমের চারপাশে অনুর স্পর্শ, হাসি, কান্না, অভিমান সব মিশে আছে।কিভাবে ছাড়াবে নিলয়?
.
অভ্যেস তো পাল্টানো যায় খুব সহজেই কিন্তু স্বভাব?
.
.
চলবে…..
#সন্দেহ
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৩৩
.
.
আশার ইচ্ছে হচ্ছে অনুকে খুব করে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে। যতসব ফালতু মেয়ে। মনে মনে এত বিষ ছিলো? ওর করা সব নাটক এখন আসার কাছে পরিষ্কার। হ্যাঁ! সাম্য কে বিয়ে করবে বলেই তাহলে মেঝভাই কে ডিভোর্স দিতে এক বারে রাজি হয়ে গেছে।
রাস্তার মেয়ে যতসব। এসব ভাবতে ভাবতেই সে ইঞ্জেকশন টা জোড়ে পুশ করলো অনুর হাতে। ব্যথায় ককলিয়ে উঠলো। কিন্তু কিছু বললো না।
.
.
– আশা আপু! তোমার কি মন খারাপ?
– আজ ভাবী ডাকলে না যে?
– তুমিও তো ডাকোনি। তাই……
.
– আসলে তা নয়৷ কথা হচ্ছে তুমি আসলে এখন সাম্য কে চাইছো। আমাকে ভাবী ডাকলে তো আর সাম্য কে নিজের করে পাবা না৷ এটাই! এটাই ঠিক। তাই তো বলি, মামাতো ভাইয়ের একটু বেশিই দরদ। আচ্ছা? বাচ্চা কি সত্যি আমার ভাইয়ের? আমার তো মনে হয় এটাও পাপ। যেমন টা তুমি। তোমার জায়গায় আমি থাকলে না? জানো কি করতাম? গলায় দড়ি দিতাম। বেহায়া মেয়ে। নিজেই এক পাপ ঠাই হয় নাই বাপের ঘরে, এখন স্বামীর ঘর ও তো গেলো। আরেক পাপ জন্ম দিতেও লজ্জা করলো না। যদি জানতাম তুমি আমার এত বড় ক্ষতি করবে আমি তোমাকে অটির ভিতরেই শেষ করে দিতাম। সাথে তোমার পাপ টা কে।
.
.
কথাগুলো বলেই আশা আর এক মিনিট দাড়ালো না৷ চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো।
আহামাদ কে কোলে নিয়ে অনু চুপচাপ বসে আছে।
অজানা হাসি ফুটেছে তার ঠোঁটের কোণে।
.
..
হসপিটালের সব বিল পেমেন্ট করে সাম্য কেবিনের সামনে এসে দাড়াতেই দেখলো আশা দৌড়ে চলে যাচ্ছে।
সাম্য সেদিকে খেয়াল দিলো না কারণ কাল রাতেই তার সাথে আশার সাথে সব কথা হয়েছে। সে কেনো আশা কে বিয়ে করতে চেয়েছিলো সব বলেছে৷
যদি আশাকে সে বিয়েও করে নিতো হয়তো পুরুষ মানুষ হিসেবে কাছে টেনে নিলেও মন থেকে কোন দিন কাছে আসতে পারতো না। কারণ অনুর জায়গা কেউ নিতেই পারবে না। হোক না সে সব থেকে সুন্দরী।
.
অনুর কোল থেকে সাম্য আহামাদ কে কোলে তুলে নিলো।
.
– আসসালামু আলাইকুম জনাব! কেমন আছেন? আপনার মায়ের মুখ ভার কেনো? দুষ্টমি করেছেন কোন?
.
অনুর দিকে তাকালো সাম্য। সে এখনো চুপচাপ।
এবার অনুর মাথায় হাত রাখলো সাম্য।
.
– অনু! কিছু হয়েছে? মন খারাপ?
– উঁহু!
– কিছু লুকাচ্ছো?
– না তো!
– শোন আমি একটু বের হবো। কাজ আছে। কিন্তু পরে আসবো আর সীমো আসবে আমার সাথেই। সব গুছানো হয়ে গেছে। কাল চেকাপের পর আমরা বাসায় চলে যাবো। যত দ্রুত পারি আমি চলে আসবো, এই সময় টা প্লিজ কেয়ারফুল। ওকে?
.
– হুম!
– আহামাদ কে খাইয়ে নাও৷ ক্ষুধা লাগছে।
-আজ যে তুমি করে বলছো?
– কারণ পিচ্চিটার একটা পিচ্চু হয়েছে তো তাই পিচ্চি বড় হয়ে গেছে।
.
সাম্য দরজা অবধি গিয়ে আবার ফিরে এলো।
অনুর সামনাসামনি বসে বললো
.
– সব ঠিক হয়ে যাবে! আমি আছিতো। কিন্তু মনে রেখো
নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমাকে কেউ কিছুই করতে হবে না। নিজের আত্নসম্মান টা ধরে রাখো। জীবন তো একটাই তাই না?
.
– সাম্যদা…
– হ্যাঁ বলো
– মায়ের কাছে যাবো! আমাকে মায়ের কাছে রেখো প্লিজ।
– অনু….মার একটাও মাটিতে পড়বে না। মেরে ফেলবো এসব বললে।
– জড়িয়ে ধরবে একবার? প্লিজ!
.
সাম্য কোন কথা না বলে অনুর মাথা ওর বুকে রাখে।
– আমি সব জানি সাম্যদা৷ কেনো আমায় কিছু বলোনি? কেনো এত অভিনয়? তোমাকে আমি বুঝি না। নিলয়ের অত্যাচার গুলো শুনে তুমি চাইতে আমি নিজে বাঁচি আবার ওর সাথে হাসতে দেখে চাইতে তোমাকে ঘৃণা করি। আমার খুশি এতটাই দরকার?.
– হ্যাঁ! এখন থাকো। আমি আসছি একটু পর। বাসায় গিয়ে এসব নিয়ে কথা হবে। এক্সামের বেশি সময় নেই। কিছুই তো পড়া হয়নি তোমার। অনেক প্রিপারেশন বাকী। আমি যাই?
.
– হুম! ভালো থেকো।
.
ইরার আজ বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে।
প্রেগ্ন্যাসির কারণে শরীর ইদানীং খারাপ যাচ্ছে।
কিছুই করতে ইচ্ছে করে না। নীলাভ্রর আদরের দুটো হাত কে বড্ড মিস করছে।
তলপেটে হাত দিয়ে কথা বলা,খেয়াল রাখা সব। কোথায় সে? কিন্তু নীলাভ্র কেনো এখন তার চিন্তাজুড়ে শুধুই নিলয় থাকবে। নিলয় রাখবে তার খেয়াল। তবে কি এক সাথে সংসার করতে করতে নীলাভ্র কে ভালোবেসে ফেলেছে? ?
.
.
.
অনুর বলা শেষ কথাটা বড্ড ভাবাচ্ছে তাকে। কিছুক্ষণ পর সে তো ফিরেই আসবে তাহলে ভালো থেকো বলার কি দরকার? আবার কিছু করে বসবে না তো? নাহ্! এখন তো একজন মা। আগে আহামাদের কথা চিন্তা করবে। বাবা ছাড়া সন্তান বড় হতে যতটা না কষ্ট করে তার থেকে তিনগুণ বেশি কষ্ট হয় মা ছাড়া বাঁচতে।অনু জানে। নিজের জীবন দিয়ে। তাই ও কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিবে না। কিন্তু মন তো কু গাইছে……..
.
এসব ভাবতে ভাবতেই সাম্যর গাড়ি নিলয়দের বাড়ির গেটের সামনে দাড়ালো।
.