সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী (moon)
পর্বঃ ১৫ থেকে ১৮
.
.
পর্বঃ১৫
.
.
সীমন্তিনী কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো এমন কিছুই হয়তো হবে। ভাইয়ের ফোন,ল্যাপটপ ওয়ালপেপারে, ওয়ালেট এ অনুর ছবি সে দেখেছে।
আজ আসার সময় তার কথা, ভাইয়া যাওয়ার পর অনুর কান্না, সব কিছু পরিষ্কার হচ্ছে ধীরেধীরে। তবে কি অনুকে বিয়ে দিয়ে বড্ড ভুল করে ফেললো? কিন্তু তখন এর থেকেও ভালো কোন উপায় তো জানা ছিলো না। ভাইয়া চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর
ভাইয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সে রিমি কে বিয়ে করবে না। রিমি কেনো কাউকেই না।
তারপর রিমি এসে বাসায় খুব তামাশা করলো। মায়ের চোখে বিষ হলো অনু।
মাঝেমধ্যে মারতো। এদিকে অনুর বাবাও খোঁজ নিতো না।
মাসের মাস টাকা পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ।
অনুও ভেঙে পড়েছিলো। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। রাতে মাঝেমধ্যে সীমন্তিনী দেখতো অনু ফুপুর শাড়ি পড়ে বারান্দায় গিয়ে কারো সাথে কথা বলছে।
ফোনে বললে নরমাল ছিলো। কিন্তু কথা বলতো আকাশের দিকে তাকিয়ে।
মায়ের অত্যাচার আরো বাড়লো। তাইতো নীলদের প্রস্তান ফিরিয়ে দেয়নি সীমন্তিনী আর ওর বাবা।
.
.
.
সাম্যর কান্ড দেখে রীতিমতো অবাক সীমন্তিনী। পরিস্থিতি সামাল দিতে দৌড়ে এগিয়ে যেতে যেতে বললো
– আরে আমিও তো আছি। আমাকে ছাড়াই তোমাদের গ্রুপ পুড়ো হবে না।
.
এই বলে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওদের।
কিছুক্ষণ পর সাম্যকে বললো
– ভাই! কি হচ্ছে কি? এটা অনুর শ্বশুর বাড়ি আর মেঝভাই দেখলে ওকে মেরে ফেলবে।
.
.
অনু অনুভূতিহীন হয়ে আছে৷ দুচোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো নীলয়।
ভয়ে শিউরে উঠলো। হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।
.
সীমন্তিনী জোড় দিয়েই সাম্য কে ছাড়িয়ে নিলো। সাম্য এতদিন পর অনুকে দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেনি।
কিভাবে পারবে? খুব ভালোবাসে যে তাকে।
সাম্য ছেড়ে দিতেই অনু
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
সীমন্তিনী সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলো। কথায় বুঝাচ্ছিলো সাম্য এতদিন পর অনুকে দেখে এভাবে রিয়্যাক্ট করেছে কারণ বিয়েতে ছিলো না আরো কত কি।
পরিস্থিতি সামলে নিলো।
ঠিক তখন অনু দাঁড়ানো থেকে পড়ে যাচ্ছিলো।
সাম্য নিলয় দুজনেই ধরলো। নীলয়ের বাম হাতে অনু পুরোটা ভর ছেড়ে দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।
.
.
কিছুক্ষণ আগের আমেজ টা হারিয়ে গেছে।
অনুর এট্যাক এসেছে৷ যখন খুব টেনশনে থাকে তখন ওর এমন হয়।
হাত পা কাপবে,সেন্সলেস হয়ে যায়।
হঠাৎ শক পাওয়ার কারণে এমন হয়েছে।
.
আশা চেকাপ করে বললো এখন ঠিক আছে। তবে এমন হলে বেবি এর্বোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
.
রুম থেকে সবাই বের হওয়ার পর নীলয় দরজা লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছে।
অনুকে কেউ স্পর্শ করুক তার সহ্য হয় না।
কিন্তু জানে এখানে অনুর কোন দোষ নেই। সে পুরোটা সময় দেখেছে।
.
– আসবো?
– আসুন।
– পরিচয় হয়নি আমাদের! আমি সাম্য, সীমন্তিনীর ভাই।
– আমি নিলয়। সম্পর্কে আপনি আমার সুমন্ধি হন!
– হ্যাঁ! অনু আমার থেকে সাত বছরের ছোট।
– কখনো ওর মুখে আপনার কথা শুনিনি।
– হয়তো ওর বাবার মতো আমাকেও স্মৃতি থেকে মুছে দিয়েছে।
– বুঝলাম না।
– আরে কিছু না। আমি এতটা স্পেশাল নই তাই জানেন না।
– আচ্ছা। ডিনার করেছেন?
– উঁহু। এটা অনুকে দিবেন। ওর জন্য আমার ছোট্ট একটা উপহার। আজ আসি। খুব শীঘ্রই দেখা হবে।
.
.
সাম্যর ব্যবহার, কথাতে কেমন কেমন একটা রহস্য লাগে ইরার।
তবে কি??
বাহ্! এমন হলে বড্ড ভালো হয়। মেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেছে।
ওয়ারড্রব খুলে ওয়াইন বের করলো।
আজ তো একটু চলেই৷
প্লে লিস্টে গান ছেড়ে দিলো…
.
.
Kaise Kahun Ishq Mein Tere
Kitna Hun Betaab Main
Aankhon Se Aankhe Mila Ke
Chura Lun Tere Khwaab Main
Kaise Kahun Ishq Mein Tere
Kitna Hun Betaab Main
Aankhon Se Aankhe Mila Ke
Chura Lun Tere Khwaab Main
Mere Saaye Hain Saath Mein
Yaara Jis Jagah Tum Ho
Main Jo Jee Raha Hun
Wajah Tum Ho..
Wajah Tum Ho..
Main Jo Jee Raha Hun
Wajah Tum Ho..
Wajah Tum Ho.. O…
.
.
নীলয়ের ব্যবহারের কথা সাম্য শুনে প্রথমে সীমন্তিনী কে কষিয়ে থাপ্পড় মারলো।
তারপর গিয়ে মায়ের কাছে যাচ্ছে তাই শুনিয়ে এলো।
কেনো এমন করেছে।
সাম্যর বাবা শুধু বললো
– এতই যখন ভালোবাসিস তাহলে আমাকে একবার জানাতি। আমরা খারাপ হলে তুই দুধে ধোওয়া তুলসি পাতা না।
.
.
সকালবেলা ঘুম থেকে অনু উঠতেই কাল রাতের কথা মনে হলো। শিউরে ওঠে সে৷
নীলয় পিছ থেকে জড়িয়ে
ধরে কাধে মাথা রেখে বলে
.
– গুড মর্নিং শানশাইন।
– শুভ সকাল। কাল রাতে….
– এত ভয় পেয়েছিলে কেনো?
– আসলে এভাবে… আমি… মানে…
– এত কিছু বলার দরকার নেই। সীমের তরকারি সব বলেছে। ( সীমন্তিনী কে নীলয় সীমের তরকারি বলে)
– জলদি ফ্রেশ হয়ে নাও। ডক্টরের কাছে যাবো।
.
.
নাস্তার টেবিলে বসতেই ইরা দৌড়ে উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
কাল রাতে মনে হয় বেশিই হয়ে গেছে। বমি করে ভাসিয়ে দিচ্ছে সব।
.
কিন্তু আশার মনে হচ্ছে মেঝভাবির পুচকোর সাথে খেলার জন্য বড়ভাবীর একটা পুচকো আসতে চলেছে।
.
.
পর্বঃ১৬
.
.
ইদানীং সাম্যর বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে আশার সাথে।
সে বিভিন্নভাবে এবাড়িতে আশা যাওয়া করছে। এতে কারো কোন আপত্তি নেই।
কারণ ছেলে হিসেবে সে ভালো। আশা যে তাকে পছন্দ করছে খুব ভালো ভাবে বুঝে সবাই। কিন্তু সাম্য আসলেই অনু বেশ গুটিয়ে যায় ওর জন্য তৈরী করা নিলয়ের ছোট্ট শহরে সে বেশ ভালো আছে।
কিন্তু ভয় হয় কেনো যেনো মনে হয় খুব দ্রুত সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।
.
.
ইদানীং রাত গুলো অনুর কাটতে চায়না। ঘুমালে বেশ অদ্ভুত এক স্বপ্ন এসে ভর করে দু চোখের সামনে এক অদ্ভুত একটা মেয়ে কে সে দেখতে পায়।মুষলধার বৃষ্টিতে অনু কোথাও আছে।
আশেপাশে দেখে মনে কোন ছাদে আছে । বিশাল ছাদ। অনেক উঁচু বিল্ডিং।
হঠাৎ অনু রেলিং ধরে হাটছে।
তার কোলে সাদা কাপড়ে প্যাচানো আছে একটা ছোট্ট বাচ্চা।
হাত পা নাড়াচ্ছে। অনু তাকে জড়িয়ে চুমু খায়৷
তারপর হঠাৎ সেখানে থেকে পড়ে যায়।
.
.
অনু ধড়ফড়িয়ে উঠে। ঘুম ভেঙে যায়। সারা শরীর ঘামে ভিজে জবজব করে।
নিলয় উঠে পানি দেয়। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
সব ঠিক আছে বলে কিন্তু অনুর যেনো কেনো মনে হয় মেয়েটা সে নিজেই।
আর যা দেখে সব তার নিকটবর্তী ভবিষ্যৎ।
.
.
ইরার বাবু হবে। তিন মাস৷ সেখানে অনুর সাত চলছে । শ্বাশুড়ি তো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। পাবেই বা না কেনো? ঘর ভরে যাবে ছোট ছোট আবদারে। সমান তালে দুজনের খেয়াল রাখছে ।
কাজের লোক বাড়িয়ে নিয়েছে। দুই বউ কে নিয়ে নিয়ম করে নামাজ পড়ে। হাদিস পড়ে শোনায়। দুজনেই খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে।
কিন্তু ইরা নেতিয়ে পড়েছে৷
সাত মাস চলতেও অনু নিয়ম করে সকালে বিকালে শ্বশুড়ের জন্য হালকা নাস্তা বানায়। সবাই কে খাবার বেড়ে দেয়। টুকটাক সব করে কিন্তু সেদিকে ইরা সারাদিন ঘুমিয়ে, শুয়ে কাটায়।
.
ওদের শ্বাশুড়ির মনে হয়
ইরা হচ্ছে লবণের মতো আর অনু চিনির মতো। দুটোই পানির সাথে তো মিশে যায় কিন্তু স্বাদ দেয় ভিন্ন।
.
.
কয়েকদিন পর নীলদের আকদ।
আজকে বাসায় সবাই বসবে আলোচনা করতে।
সবাই বলতে
ইরা,নীলাভ্র,সাম্য, সীমন্তিনী, নীল, আশা,নিলয় আর অনু।
নিলয় এখনো আসেনি, তাই অনুও বের হচ্ছে না।
নিলয়ের আসতে দেরী হবে সেটা সাম্য জানে।
হয়তো এটাই চাচ্চিলো সে।
কারণ সব শোনার পর তার ইচ্ছে করছে না অনুকে এখানে রাখতে।
হ্যাঁ, নিলয় ভালো থাকলে তো অনুকে সে নিতে চাইতো না, কিন্তু এখন সে রাখবে না।
একবার শুধু অনু রাজি হয়ে নিক ।
সে কোন কিছুর তোয়াক্কা করবে না।না সমাজ,না পরিবার।চলে যাবে তারা দেশ ছেড়ে। অনেক দূরে। কারো সাথেই যোগাযোগ করবে না। বাচ্চাকে নিজের নাম দিবে। অনুর কাছে সে অপরাধী তবুও কি সে সব ঠিক করবেই।
.
.
সবাই আড্ডা বসিয়েছে। অনু আসরের নামাজ পড়ে উঠে বিছানা গুছিয়ে কাথা নিয়ে বসেছে।
পুচকুর জন্য কাথা সেলাই করছে।
সে জানে বাহিরে সাম্য আছে। সাম্যর উপস্থিতি সে টের পায়।
তাই এখন সে এখানেই থাকবে। নিলয় আসলে যাবে।
ফোন টা চার্জে দিয়ে আনমনে কাথা সেলাই করছে সে।
হঠাৎ আশা এলো।
.
– মেঝভাবী চলো।
– কোথায়?
– বাহিরে!
– কেনো?
– সবাই বসেছে তুমিও চলো, সবাই ডাকছে।
– তোমার ভাইয়া আসুক! তারপর…
– উহু হবে না! চলো
– আসলে একটু বুঝার চেষ্টা করো .
– মেঝভাই না করেছে?
– এমা! তা হবে কেনো? আমি দেখো না সেলাই করছি!
– পরেও হবে। আমি হেল্প করবোনে।
.
এসময় সীমন্তিনী এসে জোড় করে নিয়ে গেলো। সাম্যর সামনাসামনি আশার পাশে বসলো। অনুর পেট ভালোই বড় হয়েছে।
কোমড়ে ভর দিয়ে হাটতে হয়।
সুবিধা মতো বসার পর সাম্য এগিয়ে এসে সামনে বক্স খুললো।
.
অনুর চোখ ছানাবড়া। কুচি কুচি করে কাটা কচি কাঠাল,তেতুল, শুকনো মরিচ৷
উফফ! আর কি চায়৷
সীমন্তিনী নিয়ে কাঠাল,মরিচ,লবণ,মরিচ আর তেতুল দিয়ে মাখিয়ে দিলো।
অনু আকাশের চাঁদ পেয়েছে একটু একটু করে খাচ্ছে আর জিব্বা দিয়ে চটকাচ্ছে।
.
.
নিলয় অফিস থেকে ফিরেছে।
অনুকে খুজছে। আড্ডার আসরে অনুকে দেখে বেশ রেগে আছে সে। বুঝতে পারলো।
কোন কথা না বলেই অনুর কাছে চলে যায় সে।
অনু উঠে দাড়াতেই নিজের সব টুকু শক্তি দিয়ে অনুকে থাপ্পড় মারলো।
ঝোক সামলাতে না পেরে অনু আশার উপরে পড়লো।
ঠোঁটের একপাশ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সাত মাসের পেট নিয়ে নিজের চলতে সমস্যা তার উপর থাপ্পড়। পেটে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে অনুর।
.
.
পর্বঃ ১৭
.
.
নিলয়কে মারতেই এগিয়ে যাচ্ছিলো সাম্য। এত সাহস হয় কি করে?
আশা থামালো। ফিসফিস করে বললো
– আপনি গেলে আরো বেশি মারবে।
.
ততক্ষণে আশার থেকে তুলে নিয়ে অনুকে বেশ কথা শোনাচ্ছে নিলয়।
ফোন কোথায় রেখেছে? কল রিসিভ করেনি কেনো? এত কিসের আড্ডা আরো কত কিছু।
.
বেচারি অনু! কেউ ওকে ধরতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ আগে যখন নিলয় মারতো একদিন নীলাভ্র ফিরিয়েছিলো।
রাগে নিলয় অনুকে আরো বেশি করে মারে।
.
.
অনুর চোখে কোন পানি নেই। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সাম্য অনুকে দেখে অবাক। এতটা সহ্য ক্ষমতা? মেয়েটার শরীর খারাপ করতেছে। হাত পা কাপছে কিন্তু নিলয় কি চোখে দেখছে না? এই অনু খুব সুখে আছে?
নিলয় অনুকে টেনে রুমে নিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার আগে অনু সাম্যর দিকে তাকালো । এক পলক! হ্যাঁ! এক পলক তাকিয়ে সাম্য কে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলো কারণ ওই চাহনি বলছিলো সাম্যর অবহেলা গুলোই আজ এসবের জন্য দায়ী।
.
.
বাসায় ফিরে সিগারেটের পর সিগারেট শেষ করছে সাম্য।
চোখ লাল হয়ে আছে।
অনুর চাহনি ভুলতে পারছে না সে।
অনুর ওই কাটা ঠোঁটের একপাশ, অনুর চোখের পানি, থরথর করে কাপা হাত পা, পড়ে যাওয়ার সময়ের নিজেকে না সামলে দুহাতে পেট ধরা সব। সব সাম্য কে পোড়াচ্ছে ভিতরে ভিতরে।
.
অনুর সাথে থেকে বুঝেছে অনু সব সহ্য করবে কিন্তু সাম্যর কাছে ফিরবে না। কিন্তু অনুকে সে এতটা কষ্ট দিতে পারবে না। তার জন্য যা করতে হয় করবে। এমন কিছু যাতে অনু, সীমন্তিনী সুখে থাকে।৷ নিজের সব সুখ শান্তিকে তো ওই বাড়িতে আগেই দিয়েছে এখন ভালোবাসাটাও ওই বাড়ির বউ হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে সীমন্তিনী কে কেউ কিছু না বলে আর অনুর শরীরেও হাত না তোলে।
জেদ হোক,রাগ হোক,অনুতাপ কিংবা আগ্রাসন
সাম্য জীবনের সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো।
.
.
এই সাম্য ছেলেটা কে কেমন কেমন জেনো লাগে বুঝেছো?
.
ইরার প্রশ্ন শুনে নীলাভ্র পাত্তা না দিয়ে ফোন নিয়ে ব্যস্ত।
– কিছু বলছি? শুনেছ?
– কেমন আবার ভালোই তো।
– উহু! মোটেই না! আমার কি মনে হয় জানো?
– কি?
– সাম্য আর অনুর কিছু একটা ছিলো।
– কি সব আজেবাজে কথা বলছো?
– সত্যি বলছি। না হলে ওর গিফট দেখছো? কেউ নাকফুল দেয় অন্যের বউ কে?
– অন্যের বউ হওয়ার আগে ওর বোন।
– তারপরেও! অনুর সব ভালোলাগা,মন্দ লাগা,পছন্দ, অপছন্দ সব জানে ছেলেটা।
অবশ্যই নরমাল না।
– কেমন?
– সাম্য অনুকে ভালোবাসে।
– যদি এমন হতো তাহলে অনুকে এ বাড়িতে দিতো না। আচ্ছা এখন ঘুমাও তো রেস্ট করো।
.
.
ইরাকে ঘুমাতে বললেও ওর কথা গুলো ফেলে দিতে পারলো না নীলাভ্র । ছেলেটা সত্যি অনুর খুব কেয়ার করে। কিন্তু এর মানে তো আর ওসব নয়।
অনু যথেষ্ট ভালো মেয়ে। তবুও সত্যি কি কিছু ছিলো??
.
.
রাত ১২ টা হবে হয়তো।
ঘুম ভেঙে গেলো। কত সময় ঘুমিয়েছে সে জানেই না। জানতেও ইচ্ছে করছে না। বিকেলের কথা মনে হলো। কিছুটা সময় নিয়ে উঠে বসলো।
খুব ক্ষুধা পেয়েছে অনুর।
টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দেখলো নিলয় ঘুমিয়ে আছে।
রাক্ষস রাজ রাবণ। হুহ বললো অনু।
সামান্য কল রিসিভ না করাতেই এত কান্ড?
যদি মরে যাই তখন কিভাবে থাকবেন?
বলেই পাশ ফিরলো অনু।
.
পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো নিলয়।
– কি আর করবো? আরেকটা বিয়ে করবো। দেবদাস তো হতে পারবো না।
– হু! আমার বাবার মতো করিয়েন। আমি মারা যাওয়ার তিনদিনের মধ্যে। পুরুষ মানুষ কে একা থাকতে নেই। সংসার বলে কিছু একটা আছে।
.
– এত অভিমান?
– না তো! অভিমান করে কি হবে? জানেন তো! মা থাকতে খুব অভিমান করতাম কারণ মা অভিমান ভাঙাতো। মা মারা যাওয়ার সাথে সাথে আমার রাগ,অভিমান,ক্লান্তি,ইচ্ছে,স্বপ্ন,আশা,ভরসা সব নিয়ে গেছে। ভয় পাবেন না! আমি অভিমান করি না।
.
– সরি। সারাদিন মাথায় দাপাদাপি, ফালাফালি করো। অফিসে কাজ করতে দাও না। তারপর কল রিসিভ না করলে চিন্তা হয় তো। আর রাগ,টেনশনে তাই…
.
– সমস্যা নেই। আমি আসছি, আপনি ঘুমান।
– কোথায় যাবা?
– ক্ষুধা পেয়েছে।
– বসো আমি আসছি। উঠলে পা ভেঙে দিবো।
.
নিলয় খাবার গরম করে নিয়ে এসে খাইয়ে দিলো। আজকে বেশি হয়ে গেছে। না! সে অনুকে সন্দেহ করতে চায় না। কিন্তু ইরা যে বড়ভাই কে কথা গুলো বলছিলো সেসব সত্যি।
কারণ অনুও প্রথম প্রথম ঘুমের মাঝে যখন নিলয় ওকে স্পর্শ করতো অস্ফুটস্বরে সাম্যদা ছাড়ো বলে ছাড়িয়ে নিতো।
এতদিন খেয়াল না করলেও আজ সব মনে পড়ছে তার।
তবে কি? সাম্যর সাথে অনু ফিজিক্যালি
না!না!না! এমন হবে কেনো?
পবিত্র কিংবা কুমারিত্ব সব নিলয়ের জানা। ভুলেও সে অনুর পবিত্রতা নিয়ে সন্দেহ করতে পারে না।
.
.
পরের দিন থেকে ধুমধামে আয়োজন শুরু হলো নীল দের আকদের অনুষ্ঠানের।
এর মধ্যে মামা এসে সাম্যর জন্য আশা কে চাইলো। সবাই খুশি। কেউ দ্বিমত করেনি।
সেদিন আশা লজ্জায় অনুর রুমে বসেছিলো।অপরুপ লাগছিলো আশা কে। লজ্জায় লজ্জাবতী রুমের দরজারভ
পর্দার আড়ালে থেকে অনু সাম্য কে দেখলো।
.
সাম্যর পাশে সত্যি আশা কে মানায়। স্মার্ট, সুন্দরী, রুপসী,শিক্ষিত।
এত কিছু হলেও অনু রুম থেকে বেরিয়ে এলো না।
যখন পাকা কথা হচ্ছিলো অনু বারান্দায় দাড়ালো।বিড়বিড় করে বললো –
আকাশ টা সত্যি বিশাল বড়।
.
.
খুব শান্তু কিন্তু ধুমধামে আয়োজন করে আকদ হচ্ছে। সবাই সাজগোজের জন্য অনুর রুমে ভিড় জমিয়েছে।
আটমাসের ভরা পেট নিয়ে অনু ক্লান্তহীন ভাবে সবাই কে সাজিয়ে দিলো। বাকি শুধু আশা।
.
– মেঝভাবি!
– এসো ভাবি।
– তুমি সবসময় আমাকে উল্টো ভাবী ডাকতে এখন দেখো সত্যি ভাবী হয়ে গেলাম।
– হুম! কি পড়বে?
– কালো শাড়ি?
– এটা পড়ো।
.
অফ হোয়াইট শাড়িতে পাড়ের অংশে লাল স্টোনের ফুলের নকশা । শাড়িতে যে কাউকে অপরুপ লাগবে।
– কিন্তু? এটার সাথে জুয়েলারি নেই।
.
আশা কে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে অনু। আশা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। জুয়েলারি পড়ে নিচে যেতেই সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
সাম্য আশার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো৷
কানে, নাকে সেই সব গহনা যা সে প্রথম ইনকাম দিয়ে অনুর জন্য কিনেছিলো।
অনু এটাও আশা কে দিয়ে দিলো? এতটাই পর হয়ে গেছে?
.
.
পর্বঃ১৮
.
.
হালকা গোলাপি বড় ঢিলেঢালা পোশাক পড়ে আছে অনু। সহজ ভাষায় যাকে মেক্সি বলে।
চুল গুলো ছাড়া। কোমর ছাড়িয়ে আছে। পুরো ঘরের অবস্থা খারাপ। নিজ হাতে গুছিয়ে কাজের মেয়েকে ডেকে মুছিয়ে নিলো৷
আপাতত বাহিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। কারণ দুটো হতে পারে
.
১. সাম্যর পাশে আশাকে দেখে খুব কষ্ট লাগে
অথবা
২. শরীর ভালো লাগছে না।
.
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই শান্তি লাগছে।
নিলয় অনেক আগেই রেডি হয়ে বাহিরে গেছে। অনেক কাজ তো। সামলাতে হচ্ছে৷
বাসায় আপাতত কেউ নেই, সবাই নিচে। আমোদ ফুর্তি করে সময় কাটাচ্ছে।
.
অনুর আজ মনে হচ্ছে তার চোখে রাজ্যের ঘুম। ধীরেধীরে তলিয়ে যায় গভীর ঘুমের দেশে।
.
বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি নামছে। মুষলধারে বৃষ্টি। ছাদের একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মেয়ে। পড়নে হাসপাতালের কোন পোষাক মনে হচ্ছে। মাথায় বেশ বড় চুল। কোমর ছাড়িয়ে যাবে। তার কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা। বাচ্চা টা কে নিয়ে ধীরেধীরে এগিয়ে যাচ্ছে রেলিঙের দিকে। আস্তে আস্তে উপরে উঠলো। হঠাৎ মেয়েটা বাচ্চা সহ রেলিং থেকে পড়ে গেলো ।
.
.
অনুর ঘুম ভেঙে গেলো। ঘামে ভিজে গেছে তার শরীর। অহ কারেন্ট নেই। স্বপ্ন দেখছিলো সে।
উঠে বসতেই নিলয় কে পেলো পাশে।
চুপচাপ তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ভ্রু কুঁচকে তাকায় অনু।
– কি?
– কি?
– উল্টো প্রশ্ন করো না তো?
– উল্টো প্রশ্ন করো না তো?
.
অনু রাগি রাগি ভাবে তাকায়। নিলয় বলে
– আজকে সীমের তরকারির আকদ আর তুমি ঘুমে? তোমার না বোন? শিমুদি?
– ভালো লাগছে না। তুমি যাও।
– দুজনেই চলো। মা ডাকছে।
– কিন্তু?
– কিন্তু কি?
– এই পোশাকে যাবো না। আর শাড়ি পড়লে পেট…..
– আমি আছি তো।
.
.
অনু আসছে আবাশ টা সাম্য আগেই পেয়েছে। ওর আলাদা সুবাস পায় সাম্য।
দূর থেকে দেখলো অনু আসছে।
কালো শাড়ি পড়েছে। এই শাড়ি টা ওর মায়ের। লাল পাড়ের কালো শাড়ি। হাতে সোনার বালা, কানে ওর মায়ের দুল আর চুল গুলো হাত খোপা করা। ঘুমঘুম ভাব৷ মনে হচ্ছিলো ঘুম থেকে সবে উঠেছে।
সাত মাস হলে না কি মায়ের মধ্যে স্বর্গীয় রুপ নেমে আসে। অনুকে না দেখলে এটা হয়তো সাম্যর আর দেখাই হতো না।
.
অনু ধীরে ধীরে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময়ের পালা শেষ করলো।
নিলয় ওর ডান হাত টা শক্ত করে ধরে আছে। সাম্যর এটা লাগছে খুব কিন্তু ইরা বেশ ভালোই বুঝে গেলো।
মনে মনে বললো
– সত্যি সবুরের ফল মিঠা হয়৷ এবার মোক্ষম হাতিয়ার পেয়েছে।
.
.
খাওয়ার সময় কাকতালীয় ভাবে অনুর বসার জন্য শুধু একটা চেয়ার বাকী যা নিলয় আর সাম্যর মাঝে।
যদি বসে তাহলে অতীত পোড়াবে আর না বসলে বর্তমান কষ্ট পাবে।
অনু বসলো৷ মাঝেমধ্যে আজ ভালো রাখতে গতকাল কে ভুলতেই হয়৷
সাম্য খাওয়ার সময় দেখলো নিলয় অনুকে খাইয়ে দিচ্ছে। সাম্যর আর খাওয়া হলো না।
অনু আশা কে দিয়ে খাবার পাঠাবে ভাবছিলো কিন্তু বলবে কি করে? পরে আশা নিজেই নিয়ে গেলো।
.
.
অনুষ্ঠানের শেষে বাসায় আড্ডার পালা। গানের আসর জমেছে।
নিলয় অনুর জন্য গান ধরলো
– Dewana kar raha hain tera rup
.
মাঝের অংশ টা সাম্য গাইলো যা আরো বেশি নিলয়ের সন্দেহ করাকে বাধ্য করছিলো। নীলাভ্র কিছুটা বুঝলো তাই সেও মিল ধরে শেষের অংশ ইরা কে ডেডিকেটেড করে ওর হাতে হাত রাখলো।
ইরা বেশ বুঝলো। এ যেনো বাঘ বন্দি খেলা চলছে৷
.
.
.
হঠাৎ নিলয়ের কল এলো। খুব দরকারী কাজে এখনি তাকে ময়মনসিংহ যেতে হবে।উপায় নেই। অনু সব গুছিয়ে দিলো। খাইয়ে দিলো। কেনো যেনো ওকে ছাড়তেই ইচ্ছে করছিলো না। খুব সময় নিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।
রাত ১১ টায় গাড়ি আসবে নিলয় কে নিতে। তখন রাত আটটা বেজে গেছে।
– না গেলে হয় না?
– আমার হাতে থাকলে আমি যেতাম না।
– ভয় করছে
– কেনো?
– জানিনা। যদি আমার কিছু হয়ে যায়?
– এখনো অনেক সময় বাকী তো।
.
অনুর মন খারাপ নিলয় বুঝে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকে। একান্তে কিছু সময় কাটিয়ে নিলয় চলে যায়। অনুর কেনো যেনো খুব কান্না পাচ্ছে।
.
.
অনুর মামা ওর শ্বশুরের কাছে একটা আবদার করে। সে অনুকে কয়েকদিনের জন্য নিতে চায়। যেহেতু বাচ্চা হওয়ার সময় থাকতে দিবে না তাই এখন কিছুদিন থেকে আসুক।
ওর মামার কথা ফেলতে পারে না।
.
.
.
অনু পরদিন সকালে বারবার নিলয় কে কল দিচ্ছে যাওয়ার কথা জানাতে কিন্তু কল ধরছে না।
পরে ম্যাসেজ করলো।
বাধ্য হয়েই আসতে হলো সাম্যদের সাথে।
আগের গাড়িতে সাম্যর মা,বাবা আর সীমন্তিনী।
সাম্যর গাড়িতে অনু আর সাম্য। সে মামার গাড়িতে যাবে কিন্তু যে গরম পড়েছে যেহেতু ওই গাড়িতে এসি নেই তাই সাম্যর সাথে যেতে বলছে সবাই।
অনু বারবার বলার পরেও কাজ হলো না।
অনুর বিশ্বাস ছিলো অন্তত মামা – মামি কিছু বলবে কিন্তু তারাও ভ্রুক্ষেপহীন।
অগত্যা যেতেই হলো।
.
গাড়িতে বসে নিলয় কে কল দিয়েই যাচ্ছে অনু । এবার রিসিভ হলো
– জ্বী শানশাইন!
– আসসালামু আলাইকুম। কই আপনি কল ধরেন না কেনো?
– মিটিং এ ছিলাম! তুমি ঠিক আছো?
– তো কি? ফোন তো দেখা যায়? কলিজায় পানি শুকিয়ে গেছে।
– আসো পানি দিয়ে দেই৷ উম্মম্মমাহ! পানি পাইছো?
– সব সময় মজা। ম্যাসেজ পেয়েছেন?
– হুম! তুমি কি গাড়িতে?
– হুম!
– যেতে ইচ্ছে করছে না? তাই না?
– হুম!
– বাসায় ব্যাক করবা?
– হ্যাঁ! প্লিজ প্লিজ
– না! আমি নেই এই সুযোগে বেড়িয়ে আসো৷ হাওয়া বদল হবে।
– দরকার নেই তো।
– আছে রে বাবা।
– উহু!
– আমি গিয়েই নিয়ে আসবো।প্রমিজ। নিজের খেয়াল রেখো।
– হুম!
– এখন রাখি? কাজে আছি তো।
– হুম!
– আই লাভ ইউ শানশাইন।
– হুম!
– আই লাভ ইউ বলতে হয় হুম না
– আচ্ছা!
– পাশে কেউ?
– হুম!
– ওরে লজ্জাবতী লতারে। আচ্ছা বায়।
.
.
অনু হেসে কান থেকে ফোন নামায়। সাম্য ড্রাইভ করছিলো আর আড়চোখে দেখছিলো অনুকে। জ্যামে পড়ে আছে তারা।
অসহ্য গরম মনে হয় বাহিরে। কিন্তু অনু বেশ শান্ত। এসির গন্ধ সহ্য হয় না। কিন্তু আজ সে পাচ্ছে না। হালকা লেবুর স্মেল আসছে।
.
পুরো রাস্তা সাম্যর সাথে অনু কোন কথাই বলছিলো না৷ এতটা অভিমান?
– নাকফুল টা আশার কাছে কেনো?
সাম্যর কথার উত্তর অনু দিচ্ছিলো না। চুপ ছিলো। সাম্যর রাগ হলো গাড়ি থামিয়ে দিলো।
– কিছু বলেছি।
অনু নামতে নিলেও পারলো না।
– লাভ নেই।মাষ্টারলক করা। আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
– যার কাছে থাকার কথা তার কাছেই আছে।
– তোর কাছে থাকার কথা ছিলো, ওটা তোর অধিকার।
.
প্রতিউত্তরে অনু শুধু হাসলো। গা জ্বালানো হাসি৷
.
.
চলবে….