সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ২৩
.
.
সীমন্তিনীর কোলে মাথা রেখে দিব্যি আমলকি খেয়ে যাচ্ছে অনু।
সীমন্তিনী চুলে বিলি কাটছে। গল্প জুড়ে বসেছে দুজন।
– আচ্ছা শিমুদি! তোমার নাম এত বড় কেনো? সীমন্তিনী…
– তার আগে শোন তুই যে আমাকে দি আর ভাইয়া কে সাম্যদা বলিস! এটা নিয়ে ইরা একদিন খুব ভাষণ দিয়েছে।
– মানে?
– এই হিন্দু, মুসলিমদের ডাক কেনো ডাকিস এই সব।
– আচ্ছা।
– শোন না! আমরা দুই বোন একসাথে থাকবো। আর ইরা কে আলাদা করে দিবো।
– বিয়ের আগেই সংসার ভাগ করছো?
– আরে মেয়েটা ভালো না। একেতো চুরি উপরছে শিনাজুড়ি।
– হিহিহি। কি বলো এসব?
– মনে কর, তুই একটা গল্প লিখছিস, নিজের বুদ্ধি মেধা দিয়ে, সেই গল্প টা অন্যরা নিবে। নিজেদের কাজে লাগাবে আবার তুই বলতে গেলে বলবে দুই দিনের লেখক হয়ে এত কি বুঝিস?
– আচ্ছা! শোন লেখক কয় দিনের সেইটা তোমাকে বুঝাতে কেনো হবে? লেখার মান কেমন সেইটা মেইন ফ্যাক্ট! আর বাই দি ওয়ে কলমের শক্তি অনেক। রাস্তায় চলার সময় তো একটু আধটু হোচট আসবেই।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, হোঁচট না খেয়ে উপরে উঠে কি মজা?
-হুম! কিন্তু তাদের ভাব দেখে মনে হয় তারা উল্টো দয়া দেখাচ্ছে।
– শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করে শির! লিখে রেখো এক ফোটা দিলেম শিশির। এদের কথা কখনো ধরতে নেই।
– হুম! তা ঠিক কিন্তু ইরাকে ভালো লাগে না।
– শিমুদি আমাদের বড় জা।
– হ্যাঁ! না চাইতেও সহ্য করতে হবে। আমিও দেখে নিবো এখন থেকে তোকে কিছু বললে
– তাই না?
– হুম! আমার ছোট্ট বাচ্চাটাকে কিছু বললে খবর করে ফেলবো।
– তোমার ছোট্ট বাচ্চার পেটে মনে হয় চারটা বাচ্চা!
– যা কি বলিস?
– দেখো না। কত বড় হয়েছে পেটটা।
– হুম! তা ঠিক। আচ্ছা তোর জমজ বাচ্চা হলে আমাকে দিবি। আমরা দুজনে মিলে ওদের বড় করবো আমি আর বাচ্চা নিচ্ছি না।
– হিহিহি
– সত্যি বলছি।
.
.
এমন সময় সাম্য এলো। অনুর পাশে শুতে গেলেই অনু চেচিয়ে উঠলো।
– সাম্যদা তুমি অন্য বিছানায় যাও। এবাড়িতে অনেক ঘর আছে।
– সীমো তোর বাচ্চা কে বল চুপ থাকতে
– শিমুদি তুমি তোমার ভাইকে বলো চলে যেতে। আমি বালিস দিবো না।
– সমস্যা নেই। তোর পেটে মাথা রাখবো। বালিশ হিসেবে একটু বড় হবে। তবে চলবে ….আই উইল ম্যানেজ।
.
– সাম্যদা!
– রেগে লাভ নেই৷ আচ্ছা! বেবির কষ্ট হবে। ওকে তাহলে বুকে মাথা রাখবো?
– বাড়াবাড়ি হচ্ছে না?
– কোন বাড়াবাড়ি হচ্ছে না। তুই আমার ছিলি শুধু সীমন্তিনীর বোকামির কারণে তোকে হারিয়েছি।
আচ্ছা ও না হয় বললো তুই কেনো রাজি হয়েছিলি? তখন আমার কথা মনে হয় নি? মনে হয় নি তোর দাদুবাড়ি আমার বুকে মাথা রেখে কাটানো রাত গুলোর কথা? মনে পড়েনি?
– পড়েছিলো! খুব করে পড়েছিলো তাই বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তুমি ছিলে না।
– আমি ছিলাম অনু। তোর মাঝে। তুই মানিস আর না মানিস তোর মাঝে এখনো সাম্যর সত্ত্বা আছে। চিরকাল থাকবে।
– আমি নিলয়ের স্ত্রী । তুমি হয়তো জানো?
– সেটা বাস্তবতার শিকার।
– প্লিজ তুমি উঠো আমার ভালো লাগছে না।
-চুপচাপ থাক। বিদ্যুৎ নেই বাতাস করছি আমি।
.
.
সীমন্তিনী নিরবে সব দেখছিলো। তাহলে ওর ধারণা ঠিক ছিলো। ভাইয়া আর অনু!
হাত কাপছে, চোখেও পানি।
আদরের পিচ্চি বোন টা যাকে সে নিজের থেকে বেশি করে ভালোবাসে, বাচ্চার মতো আগলে রাখে নিজের অজান্তেই এত বড় ক্ষতি করেছে?
এর কি কখনো ক্ষমা হয়?
.
.
.
নিলয়ের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করছিলো অনু।
বেচারা কাল ব্লাড দিয়েছে। সুই লাগাতে সমস্যা হওয়ায় রক্তের দাগ সারা শরীরে লাগে।
রাতে বাধ্য হয়েই গোসল করতে হয়েছে। খারাপ লাগছিলো খুব। কথা বলার ফাকে এক সময়।
.
নিলয় – আচ্ছা শানসাইন! যদি কখনো জানতে পারো যে আমার জীবনে অন্য কেউ আছে মেনে নিতে পারবে?
.
.
অনু- আপনি যদি কখনো জানতে পারেন যে আমার শরীর, মন, আত্না তে অন্য কারো অধিকার ছিলো আছে আর থাকবে তাহলে আপনি মেনে নিতে পারবেন? যদি পারেন তো আমিও পারবো।
.
.
চলবে …