[সত্য ঘটনা অবলম্বনে] গল্পঃ শেষ ঠিকানা [শেষ পর্ব]

0
3315

[সত্য ঘটনা অবলম্বনে]
গল্পঃ শেষ ঠিকানা [শেষ পর্ব]
written by Nahid
……………………..
পরদিন সকালে উঠেই ঘটতে থাকে আজব সব ঘটনা, পুরো গ্রামের মানুষ আমাকে দেখতে এসেছে। আমি নাকি একটা সন্তান, স্বামী ছেড়ে মানছুরের সাথে পালিয়ে এসেছি। বিভিন্ন জনে বিভিন্ন কথা বলতে থাকে, চোখে চশমা পড়ে আছি তাই বলে আমি নাকি চোখে কম দেখি। এই দিক আগেরদিন হেটে হেটে পা ব্যাথা হয়ে থাকায় ভালো করে হাঁটতে পারছিলামনা আমি, তাই আমি নাকি প্রতিবন্ধি। যাই হোক সব কিছু মেনে নিয়েও চুপ ছিলাম। এই দিকে কোন খাবার দেওয়া হয়নি আমাকে। রাত হলে লজ্জা সরম ছেড়ে ক্ষুধার জ্বালায় মানছুরের ভাবিকে বললাম,,,, ভাবি আমাকে অল্প কিছু একটু খাবার দিবেন খুব ক্ষুধা লেগেছে আমার। ভাবি আমাকে খাবার দিলো কিন্তু মানছুরের মা সেটা দেখতে পেয়ে ভাবিকে অনেক বকাবাজি শুরু করলো। তারপর রাত যখন একটু গভীর হলো আমি আর মানছুরের বোন এক সাথে শুয়ে ছিলাম!! হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার কাঁধে সে হাত দিলো। কিন্তু আমি কিছু মনে করিনি কিন্তু একটু পর আমার কানের কাছে এসে বলল,,,
—– আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি লতা।
আমি চমকে গেলাম মানছুর!! পেছনে ঘুরে দেখি তার বোন নেই। সেখানে এখন মানছুর।
— মানছুর তুমি?
— লতা আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমি আসলে পরিবারের ভয়ে এমনটা করছি কিন্তু আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসি।
আমি সবকিছু সত্যিই ভেবে নিলাম আর সেই রাতে তার সাথে আমি শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। মানছুর চলে যাবার আগে আমাকে ওয়াদা করিয়ে নেই এই কথা যেনো আমি কাউকে না বলি। মনে মনে ভাবলাম সব কিছু হয়ত স্বাভাবিক কিন্তু পরদিন সকাল হতেই মানছুর কোথা থেকে জেনো এসে অমানুষের মত ব্যবহার শুরু করে দেয়। আমি রুমে বসে ছিলাম ও এসেই আমাকে মারতে শুরু করে দেয়, এক পর্যায়ে আমার হাত বেধে আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় আর এতে তার মা উৎসাহ দিতে থাকে। আমি তাকে ছেড়ে যাব কিনা বার বার জানতে চাওয়া হয়, আমি বলি না। যদি যেতেই হয় দুজন এক সাথে যাবো। আমাকে আমার বাসায় ফিরে যেতে বলে মানছুর, আমি বললাম,,,,,তাহলে তোমাকেও যেতে হবে আমার সাথে। এক পর্যায়ে সে হয়। তারপর আমার আপু দুলাভাইকে মোবাইল করে সাইনবোর্ডে আসতে বলে আমি আর মানছুর রওনা দিলাম।
দুলাভাইদের বাসাতেও থাকতে পারলামনা আমরা একদিন পরেই আমাদের চলে যেতে বললো। আমরাও বেরিয়ে পড়ি তারপর আবার সাইবোর্ড তারপর তার ফুফুর বাসা। তারপর একটা বাসা নেই আমরা আর সাতদিন পর থেকে আমি টিউশানি+কিন্ডার গার্ডেনে বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করি। একদিন নামাজ শেষে কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে মানছুরকে বলি,,
—তুমি এই কোরআন শরীফ টা ছুয়ে বলো তো, আমাদের সংসার টা কয়েকটা দিনের নাকি সারাজীবনের?
— সারাজীবনের। (কোরআন হাতে নিয়)
আমি খুব খুশি হলাম আর সব বিশ্বাস করে নিলাম কেননা কোরআন ছুয়ে তো আর মিথ্যা বলবেনা।
বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর মানছুরও একটা চাকরি পেয়ে গেলো। সংসারটা ভালোই চলতে থাকে এক পর্যায়ে আমার পেটে বাচ্চা আসে। তারপর আবার নতুন করে পাগলামি শুরু, আমার বাচ্চা নষ্ট করতে চায় মানছুর। অনেক বোঝানোর পর সে মেনে নিলো। তারপর অনেক কেয়ার করতে থাকে আমার বলে,,,,, আমি না খাইলেও যেনো তাঁর সন্তানের জন্য খাই।
একদিন হুট করে একটা স্টাম্প পেপারে সাইন করতে বলে কিন্তু তাতে কিছু লেখা ছিলোনা। জানতে চাইলাম কিসের এটা?? বলল আমি যদি কখনো আত্মহত্যা করি তার জন্য কেউ দায়ী থাকবেনা। আমি একটু অবাক হলাম কি বলছে এসব। পরে সাইন দিলাম। মানছুর অফিসে চলে গেলো তার বোন আসে এসে বলে আমি নাকি ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছি সেই পেপারটা সে নিতে এসেছে। কিন্তু তার বোনটা অনেক ভালো ছিলো, পেপার টা আমার হাতে দিয়ে ছিড়ে ফেলতে বললো!! আমি সেটা ছিড়ে ফেললাম। আমি মানছুরের বাসায় ফোন করে বললাম এমব করলে আমি তাদের বাসায় যেতে বাধ্য হব। তারপর টিউশানিতে যাব বোরখা পড়ে বের হতেই মানছুর বাসায় আসে আর কোন কথা ছাড়ায় আমাকে মারতে থাকে। তখন মনে হয়েছিলো মানছুর আমাকে কখনোই ভালবাসেনি। কেননা সে আমার পেটে আঘাত করে, এর ফলে বাচ্চা নষ্ট ও হতে পারে। আমার রক্ত ক্ষরন হতে থাকে তারপর হাসপাতালে নেওয়া হয়। আমাকে মারার কারন,,, আমি কেনো পেপার ছিড়েছি আর তার বাসায় যাওয়ার হুমকি দিয়েছি। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলে এলাকার লোকজন পুলিশকে জানালে পুলিশ আসে। তারপর আমি বিয়ের কাগজ দেখালাম পুলিশ তখন আমার পক্ষে। তারপর মানছুরকে হুশিয়ারি দিয়ে গেলো।

কিছুদিন পর আমি টিউশানি থেকে ফিরে দেখি মানছুর বাসায় নাই, অফিস থেকে আর বাসায় ফিরেনি। ফোন করলেও ফোন বন্ধ দেখায়। কয়েকদিন পর আমি মানছুরের বাড়িতে গেলাম, কিন্তু তার বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাকে জানানো হয় কোর্ট থেকে তালাক করা হয়েছে আমাকে। কথাটা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা, এটা কি শুনলাম আমি। কিছুদিন একা একাই ছিলাম এক সময় পেটের ব্যাথা হতে থাকলে মেডিকেলে যায়। তিনদিন মেডিকেলে থাকার পর আমাকে জানানো হয় বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে গেছে। কান্না ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলোনা।
[ মেয়েটি আবারো তার বাবার বাড়ি মানে দিনাজপুর ফিরে এলো। ছেলেটি মোহরানার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সময় চাইলেও মোহরানা এখনো ফেরত দেয়নি।]
[ মানুষকে বিশ্বাস করেন কিন্তু এমন অন্ধ বিশ্বাস করবেন না, যার জন্য আপনার মাশুল গনতে হয়। সর্বদা চেষ্টা করবেন মা বাবা কে খুশি রাখার। কোন কিছু করার আগে অন্ততপক্ষে নিজের মায়ের অনুমতি টা নেওয়ার চেষ্টা করবেন। ]
গল্পটি কেমন হয়েছে জানিনা, গল্পটি আরো অনেক বড় কিন্তু সামনে আমারা পরিক্ষা তাই লেখার মত সময় হচ্ছেনা এই কারনে সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হলাম।
গল্পের নাম আমার নিজের দেওয়া আর গল্পটি বলেছেন নুসরাত জাহান লতা।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে গল্পটি পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন সবাই।
আল্লাহ হাফেজ।
$tupid

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে