সত্যি ভালোবাসো পর্ব-১৮+১৯

0
1524

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_18
#writer_Fatema_Khan

প্রতিটি সূর্যদয় প্রত্যেক মানুষের জন্য নতুন কিছু নিয়ে আসে।কেউ নতুন করে বাঁচার জন্য মাঝ সমুদ্রেও ভেলা পেয়ে বসে।সবাই বাঁচতে চায়,নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে।কেউবা তাদের প্রথম ভালোবাসা পায় না।সব ভালোবাসা যে পূর্ণতা পাবে তেমনটা না ও হতে পারে।কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ থাকাই শ্রেয়।তবে একজনকে ভালোবাসলে তা পূর্ণতা না পেলে যে অন্য কাউকে ভালোবাসা যাবে না এমনটা কোথাও লিখা নেই।চেষ্টা করলেই ভালোবাসা যায়।প্রথম ভালোবাসাকে ভুলতে না পারো কিন্তু নতুন কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে ক্ষতি নেই তাই না।একবার চেষ্টা করেই দেখো না সব হবে তোমার দ্বারা।

(তাহসিনের হাত ধরে কথাগুলো বলল তাহিয়া)

_______________________________

ফ্ল্যাশব্যাক,,,

তাহসিনঃবাবা তুমি আমাকে মিথ্যা বলে দেশে আনলে কেনো?

আবিরঃদেখো তোমাকে দেশে আনা দরকার ছিলো।

তাহসিনঃকি এমন দরকার ছিলো,তুমি জানো আমি কেনো দেশে আসতে চাই নি।আমি তাহিয়ার থেকে দূরে থাকার জন্য কানাডা চলে গেলাম যাতে ওর আর আরিশের জীবনে আমার জন্য কোনো সমস্যা যেনো না হয়।সব জেনেও তুমি আমাকে মিথ্যা বলে কেনো আনলে বলো

আবিরঃআমি একদম হেয়ালি পছন্দ করি না,তাই তোমাকে সোজাসাপটা উত্তর দিবো।আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।

তাহসিনঃমানে কি এসবের?আমি বিয়ে করতে পারবো না।

আবিরঃআমি তোমার থেকে জিজ্ঞেস করি নাই তোমাকে আমার সিদ্ধান্ত জানালাম।

তাহসিনঃবাবা আমি কালই চলে যাবো কানাডা।

আবিরঃতোমার পাসপোর্ট আমার কাছে যা তুমি পাবে না।

তাহসিনঃএবার কিন্তু বেশি করে ফেলছো তুমি।

আবিরঃবাবার একমাত্র মেয়ে।কাল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে।ওইখানেই লেখাপড়া করে।তুমি চাইলে বিয়ের পর তাকে নিয়ে কানাডাতে সেটেল্ড হতে পারো।আর আমরা আজ বিকেলে ওদের বাড়িতে যাবো।এনগেজমেন্ট করে ফেলবো তোমাদের।

(হাতের কাছে থাকা গ্লাসটি ফ্লোরে ছুড়ে মেরে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে চলে যায় তাহসিন)

আবিরঃহ্যালো তাহিয়া মা একটু বাসায় আসবি।(তাহিয়াকে সব খুলে বলল)

তাহিয়াঃআমি আসছি আংকেল।

আবিরঃধন্যবাদ মা,তাহসিন তোর কথা শুনবে আমি জানি।

তাহিয়াঃআমি আর আরিশ আসছি।
_________________________________

ফ্ল্যাশব্যাক শেষ,,,

তাহিয়াঃকি বলো ভাইয়া নিজের জীবনকে আরেকটা সুযোগ দিবে না।

তাহসিনঃআমার দ্বারা যে এই বিয়ে টিয়ে হবে না,তুই যা এখান থেকে।

আরিশঃ চেষ্টা করে দেখো তাহসিন।কারো জন্য জীবন থমকে থাকে না।

তাহিয়াঃভাইয়া প্লিজ একটাবার ভেবে দেখো।আংকেলের কথা। সে তোমায় এভাবে দেখে কত কষ্ট পাচ্ছে।নিজের কথা ভাবো এভাবে কষ্ট পেয়ে নিজে কি খুব সুখে আছো।আমরা তোমাকে সুখি দেখতে চাই।তুমি সুখে থাকলেই সবাই সুখে থাকবে।

আরিশঃবিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাও।সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমার কি এমন কাউকে চাই না যে শুধু তোমাকে ভালোবাসবে।প্রথম ভালোবাসা ভুলা যায় না আমি মানছি,কিন্তু নতুন একজনকে ভালোবাসার চেষ্টা করতে তো আর দোষ নেই।একবার চেষ্টা করেই দেখো।

(তাহসিন নির্বাক কি বলবে সে।আরিশ আর তাহিয়া যা বলছে সব সত্যি।কিন্তু সে যে তাহিয়াকে খুব ভালোবাসে)

তাহিয়াঃকি হলো ভাইয়া কিছু তো বলো?

তাহসিনঃঠিক আছে আমি রাজি বিয়ে করতে।

তাহিয়াঃ সত্যি তুমি নিজের জীবনকে আরেকটা সুযোগ দিবে।

তাহসিনঃ হুম দেখি কি হয়।

(আরিশ তাহসিনকে জড়িয়ে ধরলো)

তাহিয়াঃ আচ্ছা এখন চলো আমরা বের হই,বিকালে তো আবার জারা ভাবিদের বাসায় যেতে হবে।

তাহসিনঃজারা ভাবি কে?

আরিশঃনিজের হবু বউয়ের নাম এখনো জানা হয়নি বুঝি?আজ তো তোমার আর জারার এনগেজমেন্ট তার কথাই বলছিলো তাহিয়া।

তাহসিনঃঅহহ

তাহিয়াঃ তো আমরা এখন যাই বিকালে দেখা হবে।

(তাহসিনকে বিদায় দিয়ে তাহিয়া ও আরিশ বের হয়ে যায়)

তাহসিনঃজারা নামটা যেনো কোথায় শুনেছি আমি।ওহ হ্যা কাল যে মেয়েটার সাথে ধাক্কা লেগেছিল সেই মেয়েটার নামও জারা ছিলো।কি ঝগড়ুটে মেয়েরে বাবা।(ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে)

___________________________________

রাসেলঃএকদম বায়না করবে না।নিয়ে যাচ্ছি আমার সাথে সাথেই থাকবে।আমার চোখের আড়াল হলেই সোজা নিয়ে আসবো।

তনিমাঃএমন করছো কেনো?সবাই যাবে তাহসিনের এনগেজমেন্টে আমি যদি না যাই আমার মনটা তো ওইখানে পরে থাকবে আর আমার কত খারাপ লাগবে বলো।আর মনে হয় বাচ্চাটা একলা তোমারই আমার না।তোমার থেকে আমার বেশি টেনশন বুঝলা।

রাসেলঃ হুম বুঝলাম।আমার রাজকন্যা ভালো থাকলেই হলো।

তনিমাঃরাজকন্যা কেনো হতে যাবে।আমার তো রাজপুত্র হবে।

রাসেলঃআচ্ছা দেখা যাবে।এখন চলো লেট হয়ে গেছে।

________________________________

(জারাদের বাড়িতে সবাই বসার ঘরে বসে আছে।জারাকে নিয়ে তাহসিনের সামনে বসানো হলো।সবাই বিভিন্ন কথা বলছিলো।তাহসিন জারার দিকে তাকাচ্ছিলো না।আর জারা লজ্জায় মাথা তুলছে না।তা দেখে আরিশ আর রাসেল মিলে সবাইকে বলল তাহসিন আর জারাকে আলাদা কথা বলতে দিতে।কারণ ওদের তো আগে দেখা বা কথা হয়নি।তাই নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করুক।সবাই রাজি হলো।তাহসিন আরিশ আর রাসেলের দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।তারা দুইজন তাহসিনের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলালো।)

ছাদের এককোণে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাহসিন।কারো পায়ের শব্দে বুঝতে পারে জারা এসে গেছে।তাহসিন পিছনে ফিরে দেখে কালকের রাস্তায় যার সাথে ধাক্কা লেগেছিল সেই মেয়েটাই।

তাহসিনঃআপনি?😳

জারাঃআপনি😳

চলবে,,,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_19
#writer_Fatema_Khan

আরিশ আর রাসেল তাহসিনকে ছাদে দিয়ে নিচে আসছে।জারাকে ওর কাজিনরা উপরে দিয়ে আসছে।আসার সময় জারার এক কাজিন পরে যেতে নিলে আরিশ তাকে ধরে ফেলে।মেয়েটি আরিশের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে।আরিশ মেয়েটিকে ছেড়ে বলে-

আরিশঃআপনি ঠিক আছেন তো

মিতাঃজ্বি এখন ঠিক আছি।

আরিশঃঅহ।

মিতাঃআমি মিতা,আপনি?

আরিশঃআমি আরিশ(কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল)আচ্ছা আসি ভালো থাকবেন

মিতাঃসেকি চলে যাচ্ছেন কেনো একটু কথা বলি ভালোই তো লাগছে।

আরিশঃআসলে আমার ওয়াইফ অপেক্ষা করছে আমার জন্য তাই যেতে হবে।

মিতাঃআপনার বিয়ে হয়ে গেছে?(কাদো কাদো ফেস নিয়ে বললো)

আরিশঃজ্বি।

বলেই চলে গেলো।মিতা ভাবেনি যে আরিশ বিবাহিত হবে।মন খারাপ করে সেও চলে এলো সবার কাছে।এইদিকে তাহিয়া দূর থেকেই সব দেখছিলো আর রাগে ফুলে উঠছিলো।আরিশ এসে তাহিয়ার পাশে বসলে তাহিয়া মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলে।আরিশ ব্যাপারটি খেয়াল করলেও বুঝতে পারলো না তাহিয়া কি জন্য রাগ করেছে।আরিশ তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে তাহিয়ার গালদুটো রাগে লাল হয়ে আছে।আরিশ বুঝতে পারে তাহিয়া তার উপর রেগে আছে কিন্তু কি নিয়ে রাগ করবে সেটা তার বোধগম্য হলো না।একটু আগেও তো ভালো ছিলো।সবাই বিয়ের বিভিন্ন কথা বলছিলো আর এইদিকে আরিশ তাহিয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু সে ব্যর্থ।তারপর আর সে কিছু বললো না আরিশ সবার সাথে কথা বলতে থাকলো।

__________________________________

জারাঃএই যে আপনি আমার পিছু নেন নি তো?আপনি তো ভারি অসভ্য লোক।

তাহসিনঃআমি আর আপনার মত পাগলের পিছু নিবো।

জারাঃআমাদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে বলছে আমার পিছু নেই নি।আমি জানি আমি অনেক সুন্দরী তাই বলে আমাদের বাড়িতে এসে পরবেন নাকি।নিজেকেও তো আয়নায় একটু দেখে আসবেন

তাহসিন চুপ করে জারার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা সত্যি অনেক সুন্দরী।বা গালে টোল পড়ে,ঠোঁটের নিচে একটা তিল আছে, চোখের ঘন পাপরি গুলো কথা বলার সময় বারবার ঝাপটানো,গোলাপি ঠোঁট,পরনে সবুজ রঙের শাড়িতে অপুর্ব লাগছে।যেন এক অপ্সরা তার সামনে দাড়িয়ে আছে।

জারাঃএই যে আপনি শুনছেন

তাহসিনঃকি?

জারাঃ তাড়াতাড়ি যান।এখন আমার হবু বর চলে আসবে।আপনাকে আমার সাথে দেখলে খারাপ ভাববে।

তাহসিন ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি দিয়ে জারার অনেক কাছে এসে দাঁড়ায়।যার দ্বারা জারা অনেকটা অস্বস্তিবোধ করে।

জারাঃকি হলো আপনি এভাবে এগুচ্ছেন কেনো?

তাহসিনঃআপনি সত্যি খুব সুন্দরী,তাই ভাবছি আপনার হবু বর আসার আগে একটু কাছে আসলে দোষ কি

জারাঃকি সব বলছেন(পিছিয়ে যেয়ে)

পিছনে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে জারার পিঠ ঠেকে যায়।জারা চলে আসতে চাইলে তাহসিন দেয়ালে হাত দিয়ে আটকিয়ে দেয়।জারা ভয় পেয়ে যায়।

তাহসিনঃকি যেনো বলছিলেন আপনি,আমি কি?

জারাঃ ক-কই কি ব-বলছিলাম।কি-কিছু বলছিলাম না তো

তাহসিনঃআপনার কথা আটকে আসছে কেনো?এতোক্ষণ তো খুব কথা শোনাচ্ছিলেন আমাকে।আমি অসভ্য,নিজেকে আয়নায় দেখতে তাই না।

জারাঃ না না ওইগুলো তো এমনি বলছিলাম।

তাহসিনঃআচ্ছা বুঝলাম আপনার হবু বর কই সে এখনো আসলো না যে

জারাঃআপনি একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলুন

তাহসিন দূরে সরে দাড়ালো।আর বলল-

তাহসিনঃ আমার সাথেই আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে,কিন্তু আপনি নিচে গিয়ে বলবেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না।আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি।

জারা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তাহসিনের দিকে,কি বলে এই ছেলে পাগল হয়ে গেলো নাকি।

জারাঃদেখুন আমারও আপনাকে বিয়ে করার কোনো শখ নেই বুঝলেন আপনি।আর এমন গায়ে পরা ছেলেকে তো আমি কখনোই বিয়ে করবো না।

তাহসিনঃগুড গার্ল।

জারাঃকিন্তু আমি মানা করতে পারবো না।আপনি বলে দিয়েন আপনি রাজি না থাকলে।

তাহসিনঃআমি বলতে পারলে আপনাকে বলতে বলতাম না।কথাটা আপনাকেই বলতে হবে।

জারাঃআমি বলতে পারবো না।আর যদি বলতে না পারেন তাহলে আমাকে বিয়ে করার জন্য তৈরী হোন মিস্টার।

তাহসিনের রাগ উঠে গেলো জারার কথা শুনে।সে জারার কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আর বললো খুব শখ না আমাকে বিয়ে করার।জারা আচমকা এমন হওয়ায় ঘাবড়ে গেলো,আর নিজেকে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।জারার পুরো শরীর কাপছে।তাহসিন এতো কাছে আসাতে তার নিঃশ্বাস জারার মুখের উপর পরছে।জারা চোখ বন্ধ করে ফেলে।এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে তার।কেমন শীহরন বয়ে যাচ্ছে তার শরীরে।তাহসিনের সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই।

জারাঃকি করছেন ছাড়ুন আমাকে? কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।

তাহসিনঃএখন কেনো দূরে যেতে চাইছেন,দুইদিন পর তো বিয়ে হবেই তাই কাছে আসতে তো দোষ নেই তাই না।

জারাঃবিয়ের পর কাছে আসবেন মিস্টার এখন না।

এইটুকুই যথেষ্ট তাহসিনের রাগ দ্বিগুণ করার জন্য।সাথে সাথে সে এমন একটি কাজ করে বসলো যা জারার কল্পনার বাইরে ছিলো।

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে