সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০৪

0
1571

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_04
#writer_Fatema_khan
সকাল ১০ঃ৩০টা বাজে,
আরিশঃতাহিয়া,তারাতাড়ি আসো তোমাকে দিয়ে আমাকে অফিস যেতে হবে।

তাহিয়াঃএই মিস্টার অসভ্য নামক লোকটা আমাকে শান্তিমত তৈরি হতেও দিবে না।বাহ!আমাকে তো আজ একদম নীল পরী লাগছে এই নীল সালোয়ার কামিজে।

আরিশঃআর কতক্ষণ লাগবে,বিয়েতে যাচ্ছো না তুমি।তোমার বাবার বাড়িতে যাচ্ছো সো একটু কম সাজলেও তোমাকে সবাই চিনবে।

তাহিয়াঃআমি রেডি।আর এতো চিল্লাচ্ছেন কেনো।আমি কালা না আমি শুনতে পাই।
(আরিশ কেমন আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,তারপর রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম)

তাহিয়াঃমা(নীলিমা খান) আমি আর আরিশ ভাইয়া একটু আমাদের বাড়িতে যাচ্ছি সন্ধ্যায় চলে আসবো।

নীলিমাঃআচ্ছা যা।সাবধানে যাস আর তারাতাড়ি ফিরে আসিস।

তাহিয়াঃচলুন এবার যাওয়া যাক।আর কত দেখবেন আমাকে আপনার বউ আমি সারাদিন দেখতে পারবেন।

আরিশঃহোয়াট আমি তাও তোমাকে দেখছিলাম,হাসালে।আমার তো বিরক্ত লাগছে তোমাকে পুরাই হারপিক লাগছে এই নীল সালোয়ার কামিজ পরে।

তাহিয়াঃকি আমাকে হারপিক লাগছে।আর আপনাকে পুরো আলকাতরা লাগছে।উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব কালো পরে বসে আছে সে বেলায় আমি কিছু বলেছি।

আরিশঃএখন আমার সাথে জগড়া করবে নাকি তোমাদের বাড়িতেও যাবে।

তাহিয়াঃ😏চলুন।

___________________________________

প্রায় ৩-৪মিনিট ধরে কলিংবেলটা বাজতেছে।কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।আবার বাজানোর আগেই দরজা এসে খুললো আফসানা রহমান।

আফসানাঃতনিমা তুই এসেছিস মা।

তনিমাঃহ্যা আম্মু ।আমি এসে গেছি।তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি মা।

আফসানাঃতোরা আগে ভিতরে আয় পরে কথ……
(আফসানা রহমানকে বলতে না দিয়ে আরমান রহমান বললেন)

আরমানঃকি চাই তোমার।আমার মান সম্মান তো সব শেষ করে গেছো।আর কি চাই।

তনিমাঃদৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে বাবার পা ধরে আমাকে মাফ করে দাওনা তোমরা।অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমিও জানি।

__________________________________

তাহিয়াঃএকটু তারাতাড়ি গাড়ি চালালে কি আপনার মস্ত বড় ভুল হয়ে যাবে।

আরিশঃআচ্ছা ব্যাপার কি বিয়ের দিন তো কারো সাথে কথাও বললে না আর আজ যাবার জন্য এত উতলা হচ্ছো যে।

তাহিয়াঃআপনি বড্ড বেশি কথা বলেন।তারাতাড়ি গাড়ি চালান তাহলেই দেখতে পারবেন।

আরিশঃওকে তুমি বেশি কথা বলো না।ড্রাইভ করতে দাও আমাকে।

তাহিয়াঃকি আমি কখন বেশি কথা বলি। “সারাদিন তো নিজে বকবক করে আসছে আমারে বলতে আমি বেশি কথা বলি(মনে মনে)”
__________________________________

১০মিনিট পর আমি আর আরিশ বাসায় আসলাম।দরজা খোলাই ছিলো।আমার আর বুঝতে বাকি নেই আপু আর রাসেল ভাই বাসার ভিতরে আছে।

তাহিয়াঃআপু……দৌড়ে গিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরি।কেমন আছো আপু?আমি কত মিস করেছি তোমাকে।

তনিমাঃএইতো আছি কোনরকম।তোদের ছাড়া কি আমি ভালো থাকি।আরিশ কেমন আছো?

আরিশঃআলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।রাসেল কি খবর তোমার বলো?কখন আসলে এখানে?

রাসেলঃ হুম ভালো।এইতো বেশিক্ষণ হয়নি আসলাম।

“আমি বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার আর আপুর দিকে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে আছে।তা দেখে আমিও বাবাকে মুখভেংচি দিয়ে দেই😏😏।”

আফসানাঃতোরা দুইজন আমার সাথে উপরে চল।

তারপর আমি,আপু আর আম্মু উপরে চলে গেলাম।

আরমানঃরাসেল আর আরিশ তোমাদের বিয়েটা তো যেমন তেমন হলো।কিন্তু আমি চাই বৌ-ভাত টা যেনো অনেক বড় করে হয়।

আরিশঃআপনি যেমন ভালো মনে করেন।

রাসেলঃজ্বি বাবা আপনি যা বলবেন তাই হবে আপনি শুধু আমাদের মন থেকে মেনে নিন।তনিমা খুব কষ্ট পাচ্ছে।

আরমানঃরাসেল আমি তোমার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই।আর বৌ-ভাত ৩দিন পরে হবে।আর বিয়েটা যেহেতু হয়েই গেছে তাই না মেনে আর উপায় নেই।

আরিশঃ৩দিন পরে(খানিকটা অবাক হয়ে)

আরমানঃকেনো তোমার কোনো সমস্যা থাকলে বলো।

আরিশঃকপালের ঘামটুকু মুছে বললো আমার কোনো সমস্যা নেই।

আরমানঃআচ্ছা তাহলে ৩দিন পর।আর রাসেল আমি কথা বলবো তোমার মা-বাবার সাথে।

রাসেলঃআচ্ছা ঠিক আছে।

আরমানঃতোমরা রেস্ট নাও।আমি একটু বের হলাম।
“বলেই বের হয়ে গেলেন।”

__________________________________

হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ডুকলেন রায়হান খান(আরিশের বাবা)

নীলিমাঃতুমি আজ বাসায় চলে এলে।তোমার তো কাল আসার কথা ছিলো।ছেলেটার বিয়েটা হবার আগেই চলে গেলে।

রায়হানঃআরিশ কোথায়?ওকে একটু ডেকে দাও তো।

নীলিমাঃ আরিশ তো তাহিয়ার সাথে ওদের বাসায় গেছে।কেনো বলতো,কি হয়েছে?

রায়হানঃতাহিয়ার বাবা কল করেছিলেন,উনি বললো তনিমা-রাসেল,তাহিয়া-আরিশের বৌ-ভাত হবে ৩দিন পরে।কত কাজ পরে আছে।তাই তো চলে এলাম।

নীলিমাঃঅহ।আরিশ আসলে ওর সাথে কথা বলে নিও।এখন ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নাও।

_________________________________

বিকাল ৫টা,

আরিশঃতাহিয়া তারাতাড়ি চলো আমাদের বাসায় যেতে হবে,মা কল করেছিলো বাবা আসছে।

তাহিয়াঃআমি আজকে এখানে থেকে যাই না।কাল চলে আসবো

আরিশঃনা কাল তোমাকে কলেজে এডমিশন নিতে হবে।নাকি স্কুল শেষ আর বিয়ে হয়ে গেলো বলে কলেজে পড়তে চাও না।

তাহিয়াঃআমি কি বলছি যে আমি পড়বো না।
“আর বাসায় থেকেই কি লাভ যা নিরামিষ জামাই একে দিয়ে কিচ্ছু হবে না(আস্তে আস্তে বললো তাহিয়া)”

আরিশঃতুমি কি আমাকে কিছু বললে?

তাহিয়াঃকই নাতো।চলুন এবার যাওয়া যাক।

তারপর মা-বাবাকে বিদায় দিয়ে আমি আর আরিশ চলে গেলাম ওইদিকে রাসেল ভাইয়া ও তনিমা আপু চলে গেছে।তূর্য ভাইয়া বাসায় ছিলো না।তাই তার সাথে দেখা হলো না।

_______________________________

তাহিয়াঃএকটু আস্তে গাড়ি চালান মনে হচ্ছে প্লেন করে উড়ে যাচ্ছি।

আরিশঃচুপ করে বসে থাকতে পারো না।

তাহিয়াঃ মিস্টার অসভ্য গাড়ি থামান।আমি ফুচকা খাবো।(জোরে চিল্লাতে চিল্লাতে)

আরিশঃ তুমি সত্যি ষ্টুপিড এই সময় কেউ ফুচকা খায় তাও বাইরের।

তাহিয়াঃআমি খাই।এবার নামুন।

আরিশ আর তাহিয়া ফুচকার দোকানের সামনে গিয়ে এক প্লেট ফুচকা অর্ডার করে তাহিয়া খাওয়া শুরু করলো।

আরিশঃতুমি ফুচকা খাও আমি একটা কল করে আসি।এখানেই থেকো।আমি যাচ্ছি আর আসছি।

তাহিয়াঃঠিক আছে আপনি যান।এমনিতেও আপনার এখানে কোনো কাজ নেই।
________________________________

আরিশঃসব ঠিক আছে তো।হ্যাঁ আমি মেসেজ পাইছি।
“কথা বলতে বলতে আরিশ অনেক দূরে চলে যায়।”

তাহিয়াঃফুচকা তো শেষ তো আরিশ কই।

ঠিক এই সময় রাস্তার অন্য সাইড থেকে একটা গাড়ি খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে তাহিয়ার দিকে।তাহিয়া তো বোকার মত দাড়িয়ে আছে।গাড়িটা যখনই তাহিয়ার কাছে চলে আসে তাহিয়া চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠে।

সেই মূহুর্তে তাহিয়াকে কে যেনো হাত টেনে অন্য সাইডে নিয়ে যায়।তাহিয়া তাকিয়ে দেখে ফুচকাওয়ালা তাকে টেনে নিয়ে আসে,তার যেন জান ফিরে আসে।তাহিয়া তাকিয়ে দেখে গাড়ির মধ্যে কালো মাস্ক পরা একটা লোক তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাহিয়ার তাকে দেখে ভাবছে তাকে হয়তো তাহিয়া চিনে কিন্তু তার আগেই গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় লোকটা।

কিছুক্ষণ পর আরিশ দৌড়ে আসে তাহিয়ার কাছে আর বলে তোমার কোথাও লাগেনি তো।

তাহিয়া অবাক হয়ে বললো,
তাহিয়াঃ আপনি তো বাম দিকে গেছিলেন কথা বলতে বলতে।তাহলে ডান দিক থেকে কিভাবে আসলেন।

আরিশঃইয়ে মানে ওই আর কি গাড়ির পিছনে গেলাম ধরার জন্য।কিন্তু চলে গেলো।

তাহিয়াঃকই আপনাকে তো দেখলাম না গাড়ির পিছনে যেতে।

আরিশঃতুমি খেয়াল করো নি হয়তো।আচ্ছা মামা কত দাম হলো ফুচকার আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার ওয়াইফকে বাচানোর জন্য।

তাহিয়াঃআপনি কিছু তো লুকাচ্ছেন,কিন্তু সেটা কি?আর আপনি মিথ্যা বললেন কেন। কিছুই বুঝতে পারছি না(মনে মনে কথাটা ভাবলো)

চলবে…….

[ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।আর কেমন হয়েছে কমেন্টে বলতে ভুলবেন না।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে