#সংসার
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।
মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি আর প্রার্থনা করছি। এবারের মত আল্লাহ বাঁচিয়ে দেও আর কখনো ভিজে গেলে গা থেকে কোট খুলব না।
গাড়ি এসে বাসার সামনে থামতেই রুদ্র স্যারের বের হওয়ার অপেক্ষা না করে আমি দৌড়ে গাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে পা আটকে পরে যাই। তারপর ও না দাড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তারাতারি রুমের ভিতর ডুকে দরজা আটকিয়ে দেয়। পিছন ফিরে দেখি রুদ্র স্যার অবাক হয়ে হতভম্বের মত তাকিয়ে আছে। সে হয়ত ভাবেনি আমি এভাবে বের হয়ে যাব।
রুমে এসে হাটুর উপরে কাপড় টেনে দেখি পরে যাওয়ার কারনে মচকে গিয়ে ফুলে লাল হয়ে আছে। আমি মলম দিতে গিয়েও ব্যাথার কারনে দিতে পারি নাই।
২৭.
অনেকক্ষণ থেকে রুদ্র স্যার দরজায় নক করছিলো। আমি খুলছি না দেখে এবার বেশ জোরে ধাক্কা দিচ্ছে।
“মেঘ দরজা খুলো বলছি। আমি এমনেতেই রেগে আছি আর রাগাবা না। তারাতাড়ি দরজা খুলো নয়ত এই দরজা ভাঙ্গে ফেলতে আমার সময় লাগবে না।”
এর মাঝে রাইমা আপুরাও বাড়িতে এসে রুমের বাহিরে চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে। সবাই বার বার দরজা খুলতে বলছে। এবার আমি ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে পা বাড়াই।
দরজা খুলেই এক দৌড়ে ওয়াশরুমের ভিতর ডুকে যাই। রুমের ভিতর কিছুক্ষণ সবার আনাগোনা থাকলেও কিছুক্ষণ পর কারো শব্দ না পেয়ে সবাই চলে গেছে ভেবে দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে দেখি বেডের উপর রাইমা আপু আর রুশা ম্যাম বসে চুপচাপ ফোন টিপছে। রাকিব ভাই সোফায় পা দুলিয়ে বসে আছে আর রুদ্র স্যার কই দেখার জন্য ঘাড় ঘুড়াতেই দেখি আমার পিছনে চোখ বড় বড় করে দাড়িয়ে আছে। আমি ভয়ে ওল্টো দৌড় দিয়ে ওয়াশরুমের ভিতর ডুকতে গেলে রুদ্র স্যার হাত ধরে টান দিয়ে বুকের মাঝে নিয়ে নেয়।
পায়ে ওল্টো মুচড়ে যাওয়ার জন্য ব্যাথায় শব্দ করে আহ বলে চিৎকার করে নিচে বসে পরি।
আমার সাথে সাথে রুদ্র স্যারও কি হইছে দেখার জন্য নিচে বসে আমার হাঁটুর ওপরে কাপড় তুলে দেখতে নেয়। আমি লজ্জায় তাড়াতাড়ি প্লাজুটা নিচে নামিয়ে নেয়। রুদ্র স্যার পরিস্থিতি বোঝার জন্য একবার রাইমা আপুদের দিকে আবার একবার রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকায়। তারাও যেন রুদ্র স্যারের চোখের ভাষা পরে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার সময় রাকিব ভাই মুচকি হেসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে যায়।
সবাই চলে যেতেই রুদ্র স্যার আবার প্লাজু হাঁটুর উপর ওঠাতে গেলে আমি চেপে ধরি। কি করে স্যারকে বোঝাও শুধু তাদের দেখে লজ্জা পাইনি আপনাকে দেখেও লজ্জা পাই।
“স্যার প্লিজ হাঁটুর ওপারে ওঠাবেন না। আমি মলম দিয়ে নিচ্ছি। আপনি প্লিজ এখন যান।”
“এই মুহূর্তে আমার যা ইচ্ছে করছে মেঘ। একবার না তোমাকে স্যার ডাকতে নিষেধ করলাম? এক সাথে এতগুলো শাস্তি নিতে পারবে না তুমি। তাই দিচ্ছি না বলে ভেবেও না ছেড়ে দিব। দেখি পা ছাড়ো আমাকে দেখতে দাও।”
আমি করুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে পা ধরে রাখি। রুদ্র স্যার আমার দিকে রাগী চোখে তাকালে আমি তাড়াতাড়ি পা ছেড়ে দেই।
স্যার কিছুক্ষণ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে পা দেখে হঠাৎ পা ধরে সোজা করে টান দেয়। আমি ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠতেই স্যার আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।
“আপনি মানুষ না রাক্ষস। এভাবে ব্যাথা পা ধরে কেউ টান দেয়?”
“কেন জানু এর আগে অপরাধ করার সময় মনে ছিলো না আপনার এর শান্তি কতটা রোমান্টিক ভাবে ভয়াবহ হতে পারে?”
আমি ওঠে দাড়াই। আশ্চর্যজনক ভাবে পায়ে একটুও ব্যাথা নেই। পা মচকে যাওয়ায় সোজা করে টান দেওয়ার কারনে সব ঠিক হয়ে গেছে তবুও কপাট রাগ নিয়ে বললাম।
“এভাবে কেউ ব্যাথা পায়ে টান দেয়। অন্তত দু তিন দিন পর এভাবে ঠিক করতে পারতেন। তার উপর ব্যাথা দিয়ে মন খুলে চিৎকারও করতে দিলেন না ঠোঁটে উপরে ঠোঁট,,,,”
রাগের মাথায় কার সামনে কি বলছি মন পরতেই কথা ধামিয়ে এমন ভাব করি যেন এই মুহূর্তের যে কথাটা বলছি এটা কখনোই আমি বলেনি।
“কেন জানু কি হলো? ডাবল ডোজের শাস্তি তোমার ভালো লাগলো না? আর ঠোঁটের উপরে ঠোঁট কী বলো তো? কি হলো বলো?”
আমি লজ্জায় কথা ঘুরানোর জন্য বললাম-
“পূর্নতা খেয়েছে কি না দেখে আসছি?”
রুদ্র স্যারকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি দৌড়ে রুমের বাহিরে চলে আসি।
২৮.
দশদিন পর রাকিব ভাই আর রাইমা আপুর বিয়ে। বাড়িতে মোটামুটি মেহমান আসতে শুরু করেছে। এর মাঝে বেশ কয়েকবার রুদ্র স্যার আমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য রুশা ম্যামের স্যাহায্য নিছে।
,
রাত ১২ টা।
আর দুইদিন পর রাইমা আপুর বিয়ে। বাসা প্রত্যেকটা রুম বিভিন্ন ভাবে সুন্দর করে ডেকারেশন করা। আমি আমার রুমের ভিতর পূর্ণতা কে ঘুম পরিয়ে দোলনার পাশের বড় জানলাটা খুলে দাড়ালাম। ঝিরঝির করে বাতাস আসছে। আমি মন খুলে প্রকৃতিকে অনুভব করছিলাম আর ভাবছিলাম রুদ্র স্যারের নেইক্স জেলাস ফিল করানোর জন্য কি উপায় ব্যবহার করবে। এবার আর অপেক্ষা করাব না এখানেই সব শেষ করে নতুন করে সাজিয়ে নিব।
আমাকে জেলাস ফিল করাতে গিয়ে বেচারা রাইমা আপুর বিয়েটা এতদিন আটকে ছিল। আমাকেও পটাতে পারছিল আর বিয়েটাও হচ্ছিলো না।
সেদিন রাইমা আপুর রুদ্র স্যারের কাছে এসে বলে- “অনেক হইছে এবার বিয়েতে রাজি হয়ে যা ভাই”
রুদ্র স্যার তখন এক কথায় বলে দেয় আমি যতদিনে রুদ্র স্যারকে প্রপোজ না করব ততদিনে বিয়েতে সে রাজি হবে না। আর আমিও তার কথার উপরে বলে দেই আমি কাউকে প্রপোজ করতে পারব না।
রাইমা আপু আমাদের দুজনের অবস্থা দেখে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিল। তার অবস্থা ছিলো- “ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।”
রাইমা আপু সেদিন আপসুসের স্বরে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেছিল-
“ভাইরে ভুলটা যেহেতু আমার শাস্তি টা তো পেতেই হবে। আমারই উচিত হয়নি তোকে সেদিন সবটা জাননো। আর জানালাম তো জানালাম তার উপর মেঘকেও সতর্ক করে দিলাম। আমার ভুল ছিল ওই লোক টার মতো যে, চোরকেও বলত চুরি করতে আর বাসার গিয়ে লোকদের বলত জেগে থাকতে নয়ত চোর আসবে তার মতো। নয়ত এতদিন ভাইয়া তুমি যেসব করলে ততদিনে মেঘ কেঁদে কেঁদে কবেই পটে যেত।”
সেইদিনের কিছুদিন পর রাকিব ভাইয়ের মা অসুস্থ হয়ে পরাই রুদ্র স্যার এমনিতেই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।বিয়ের ডেট ঠিক করার পর রাইমা আপুও হাসতে হাসতে রদ্র স্যারকে বলেছিল-
“বুঝলি ভাইয়া তুমি যদি চলো ডালে ডালে তো আমার হবু শাশুড়ি চলে পাতায় পাতায়। সেদিন সে অসুস্থ হয়নি। তোমার আর মেঘের জেদের কথা শুনে একটু অভিনয় করেছিলো। দেখলে তো কিভাবে বিয়েতে রাজী করাতে হয়।”
রুদ্র স্যার সব শুনে রাইমা আপু মারতে গেলে রাইমা আপু হাসতে হাসতে বলে-
” হুহহ বউ সাথে তো পারিস না তাই বোনের পিছনে পরছিস।”
,,,,,,,,
রাইমা আপুর কথাটা মনে পরতেই খিলখিল করে হেসে ওঠলাম। জানালা থেকে এখনো ফুরফুর করে হাওয়া আসছে। ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বাজে। রুদ্র স্যার এখনো রুমে আসেনি। হঠাৎ ফোনে মেসেজের শব্দ আসলে আমি ফোনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখি রুদ্র স্যারের মোবাইলে রুশা ম্যামের মেসেজ এসেছে। যাতে লেখা-
“রুদ্র আর নাটক ভালো লাগে না। এই বিষয়ের ইতি টানো। পূর্ণতাকে নিয়ে তো তোমার চিন্তা আমি পূর্ণতাকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করতে পারবো। বৃষ্টি মেঘের বোন দেখে তার মেয়েকে মানুষ করতে পারলে তোমাকে ভালোবেসে আমি তোমার মেয়েকে আমার মেয়ে কেন মানতে পারব না? তাড়াতাড়ি ছাদে এসো কথা আছে। তোমার দুটো ফোনের কোনটা তোমার সাথে জানি না তাই দুটোই এই মেসেজটা দিলাম।”
আমি মেসেজ দেখে জেলাস ফিল করার জন্য নতুন ফন্দি ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আমি রুশা ম্যামের মেসেজ উপরে টেনে তুলতেই দেখি বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবে রুশা ম্যাম আর রুদ্র স্যারের ছবি। রুদ্র স্যারের নগ্ন বুকে রুশা ম্যাম চোখ বুঝে শুয়ে আছে। ছবিটা ইডিট করা ভেবে আরো ভালো করে জুম করে দেখি। ছবিতে রুদ্র স্যারের বুকের মাঝখানে তিলটা ফুটে আছে। সেই সাথে রুশা ম্যামের ঘাড়ের তিলটা ফুটে আছে।
মেসেজ দেখার সাথে সাথে একটা ভিডিও আসে। আমি সাথে সাথে ভিডিওটা অন করতেই দেখি রুশা ম্যামের নগ্ন দেহের ভিডিও। এতো পুরোপুরি মিল তো আর ইডিট করে করা যায় না। ভিডিওটার নিচে আর একটা মেসেজ আসে।
“নাও এই বার হলো? এখন একটু রাগ কমাও রুদ্র। আমি ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি এসো। আজ আমাকে যেভাবে চাইবে আমি তোমাকে সেভাবেই সপে দিব। বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমাকে।”
আমি ভিডিওটির সাথে রুদ্র স্যার আর রুশা ম্যামের ছবিটা বেশ কয়েকবার মিলিয়ে পার্থক্য হিসেবে রুশা ম্যামের তিলটা ভিডিওটির সাথে মিলছেনা তাছাড়া সবটাই এক। মনে একরাশ সন্দেহ আর ভয় নিয়ে নিচে বসে পরি। তারপর আবার ওঠে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
কাঁপা কাঁপা পায়ে ছাদে উঠি। ছাদের চারপাশে অন্ধকার একপাশ থেকে কারো ফিসফিসিয়ে কথা শুনে সেদিকে পা বাড়াই।
রুদ্র স্যারের পিছন দিক থেকে দেখেই বুঝতে পারি এটা রুদ্র স্যার। রুশা ম্যামকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর রুশা ম্যাম বিরবিরের মতো শব্দ করেই বলছে-
“এসব বাদ দাও রুদ্র, আমি আর পারছিনা মেঘ কে মানতে। প্লিজ সব ছেড়ে চলো আমরা দূরে কোথাও চলে যাই। এই অভিনয়ের শহরে আর ভালো লাগে না।”
রুদ্র স্যার রুমা ম্যামকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করছে এটা বলে কিছুদিনের ভিতর সব ঠিক হয়ে যাবে। সাথে সাথেই রুশা ম্যাম রুদ্র স্যারের ঠোঁটে গভীর ভাবে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
আমি সেখানে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এটা স্বপ্ন কিছুক্ষণের ভিতর ভেঙ্গে যাবে। দুঃস্বপ্ন থেকে বের হওয়ার জন্য আমি ছটফট করতে লাগলাম।
নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না। চিৎকার করে ডুকরে কেঁদে ওঠলাম। নাহ আমার রুদ্র এসব করতে পারে না, কখনোই না। অনেক বেশি ভালোবাসি। মন কিছুতেই চোখের দেখাকে বিশ্বাস করছে না।
আচ্ছা আমার মন যেটা বলছে সেটা কী সত্যি নাকি চোখের দেখা সত্যি?
সত্যিই কী তবে রুদ্র পূর্ণতার জন্য ভালোবাসর নাটক করছে?
#চলবে,,,,,