সংসার পর্ব-১৩

0
1495

#সংসার
#পর্ব_১৩

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

রুদ্র স্যার তার বুকের মাঝে টেনে নিয়ে কপালে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বালিসে মাথা রাখল।
আমিও রুদ্র স্যারের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম।

আজানের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি ওঠে ওজু করে রুদ্র স্যারকে ডেকে তুলি। দুজনে একসঙ্গে নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পরি। শেষ রাতে ঘুমানোর জন্য এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি। বিছানার উপর শুতেই আবার ঘুমে তলিয়ে যাই।

২৫.
একের পর এক ফোনের রিংটনের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি সকাল ১১ টা বাজে। বাহিরে রোদ ঝলমল করছে। আমি ওঠে ফ্রেশ হয়ে রুদ্র স্যারকে ডেকে তুলি সে ওঠে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়ে।
আবার ফোন বেজে ওঠলে দেখি রাকিব ভাই কল দিচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরি। এর আগেও আট বার কল দিয়েছে।

“হ্যালো, হ্যালো মেঘ শুনতে পাচ্ছো? কই ছিলে এতক্ষণ কত কল দিলাম ধরলে না যে?”

” ঘুমে ছিলাম রাকিব ভাই তাই ধরতে পারেনি। এতগুলো কল দিলেন কিছু কি বলবেন?”

“হুমম মেঘ, আজ রাইমার সাথে মিট করার কথা ছিল। কিন্তু আমি ভিষন নার্ভাস তাই বলছি তুমি আমাদের সাথে যাবে। সেই সাথে রাইমা রুদ্র সাহেব কে নিয়ে আসবে। যদি সবাই মানে তবেই সামনে আগাবো। তুমি আমার সাথে থাকবে আর রাইমার সাথে রুদ্র সাহেব আসবে।”

আমি রাকিব ভাইয়ের কথায় তাড়াতাড়ি নাস্তা করে রাকিব ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরি। আজ ফুপি আর বাবা দুজনেই এখানে থাকবে তাই পূর্ণতাকে ফুপি নিজের কাছে রেখে দিছে। আমি কয়েক বার রুদ্র স্যার কে ডাকলে সে ওঠে না তাই না বলেই চলে আসি।
,
,
আমরা রেস্টুরেন্টের ভিতর বসে আছি। আমি, রাকিব ভাই, রুদ্র স্যার, রাইমা আপু, আর রুশা ম্যাম। রাকিব ভাই রুদ্র স্যারকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব বুঝিয়ে বলছে।

“রুদ্র সাহেব আমি বুঝতে পারছি আপনার মাঝে এই মুহূর্তে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। তবে সেগুলোর কিছুটা সত্য আর কিছু টা ভুল। আপনি হয়তো জানেন আমার সাথে মেঘ একটা সম্পর্কে আছে কিন্তু সত্যিই বলতে সেই দিন বৃষ্টির বিয়ে যাতে ভেঙ্গে না যায় তাই মেঘ মিথ্যে বলেছিল আমার আর মেঘ আলাদা সম্পর্ক আছে। তবে হ্যাঁ মেঘের উপর আমার একটা আলাদা দুর্বলতা আছে যেটা আমি রাইমাকে আগেই বলেছি। কিন্তু আমাদের অন্যকোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া আমি রাইকে ভালোবাসি আর আমার বিশ্বাস আমি রাইমাকে সুখী রাখতে পারব। বাকিটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।”

“আমি সবটা জানি। আজ সকালেই রাইমা আমাকে সব বলেছে। আপনার কথার ধরন আমার পছন্দ হয়েছে। তাছাড়া রাইমা ছোট না ওর ভালো টা ও সবার আগে বুঝবে। আপনার সাথে আমার আলাদা কথা আছে আপনি একটু আমার সাথে অন্যপাশে চলেন। সেই সাথে খাবারের অর্ডার ও দিয়ে আসি”

রুদ্র স্যার রাকিব ভাইকে তার সাথে করে অন্যপাশে হেঁটে চলে গেলে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম এখানে তৃতীয় ব্যক্তি কে আছে যে যার কারণে অন্য পাশে চলে গেল? রাকিব ভাই আর রুদ্র সাহেবের সাথে রুশা ম্যাম ও চলে গেল খাবার অর্ডার দিতে। যাওয়ার আগে রুশা ম্যাম সবাইকে জিঙ্গেস করছে কার কি লাগবে তখন আমি বলি- “ম্যাম আপনার পছন্দ মত সবার জন্য একই খাবার অর্ডার দেন।”

আমি রুশা ম্যামকে ম্যাম বলায় রাইমা আপু শব্দ করে হেসে বলে।
“ওহহ মেঘ এখনো কি তুমি অফিসে কাজ করছো নাকি তুমি এখন আমাদের বাড়ির বউ। আমাকে রুশা আপিকে তুমি আপু বলেই ডেকো।”

রাইমা আপুর কথা শুনে রুশা ম্যাম অহংকার করে বলে-
“উহু রাইমা তুমিও না। মেঘের কি যোগ্যতা আছে আমাকে আপু বলার। কোন রকমে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য মেঘ এই বাড়িতে ডুকছে। তাছাড়া কি যোগ্যতা আছে মেঘের। এত লাই দিলে দেখবে মাথায় উঠে নাচবে।

“আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল-
“এই যে মেঘ তুমি সব ম্যাম বলেই ডাকবে।”

রুশা ম্যাম চলে যেতে রাইমা আপু আমার পাশে এসে বলল-

“মেঘ কিছু মনে করো না, রুশা আপি এমনই আর শুনো এখন যা হবে কিছুই সিরিয়াসলি নিবে না। আমি আজ সকালে ভাইয়াকে সব বলার পর সে তোমার উপর রেগে ছিল। এতো বড় সত্যি কথা কেন লুকালে চাইলে ভুল বুঝে বড় কিছু হতে পারত। তাই তোমাকে কী করে শাস্তি দেওয়া যায় সারা রাস্তা ভাইয়া ভেবেছে। শাস্তি হিসেবে তোমার ভাইয়াকে প্রপোজ করতে হবে। কিন্তু আমি যে তোমাকে এসব বলছি ভাইয়া যেন না জানে। তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য অনেক কিছু করবে। তুমি রাগ করবে না কোন কিছুতে ঠিক আছে।”

২৬.
রুদ্র স্যারদের আসার শব্দ পেয়ে রাইমা আপু তাড়াতাড়ি আবার তার জায়গায় গিয়ে সাধারণ হয়ে বসলো। আমি মনে মনে ভেবে নিয়েছি রুদ্র স্যারকে ওল্টো আমি জেলাস ফিল করাব ওল্টো সেই আমাকে প্রপোজ করবে। মনে মনে এই রকম বাচ্চাদের মতো প্রতিজ্ঞা করতেই নিজের আনমনে হেসে ওঠলাম।

রাকিব ভাই আমার পাশে বসতে বসতে বলল-

“বুঝলে মেঘ এই বিয়ে সম্ভব না, এখানেই সব কিছুর ইতি টানা দরকার। রুদ্র সাহেবের ও এটাই ইচ্ছে। আমি চায় তুমি রুদ্র সাহেবকে যেভাবে পার রাজী করাও।”

আমার রাকিব ভাইয়ের কথায় দম ফেটে হাসি পাচ্ছে। লোকটা গুছিয়ে মিথ্যে কথাও বলতে পারে না আর আমার সাথে তো মোটেই না। আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম-

“কি আর করবেন রাকিব ভাই সবার কপালে সব থাকে না। রুদ্র স্যার এটা চাচ্ছে না তাহলে ভালো কিছু ভেবেই নিষেধ করছেন। আমিও এটাই চাই। এখানেই সব কিছুর ইতি হোক।”

আমার কথা শুনে রাকিব ভাই আর রুদ্র স্যার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। রুদ্র স্যার সন্দেহের চোখে রাইমা আপুর দিকে তাকালে রাইমা আপু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকায়।

রুদ্র স্যার আর কিছু না ভেবে রুষা ম্যামের পাশে গিয়ে বসে পিঠের উপর হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। এতক্ষণ সব ঠিক চললেও এবার বেশ রাগ হলো। আমি চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছিলাম। রুশা আপু রুদ্র স্যারের সাথে লেপ্টে বসে আছে। আবার দুজন দুজনে খাইয়ে দিচ্ছি। রাগে আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পড়লো। সবার আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলেও রুদ্র স্যার দেখে ফেলে। সাথে সাথে রুশা ম্যামকে ছেড়ে দুরত্ব বজায় রেখে বসলো। হঠাৎ এমন হওয়ার রুশা ম্যাম রুদ্রের স্যারের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্যার কিছু না বলে চুপচাপ খেতে থাকল।

হঠাৎ রুশা ম্যামের হাতে ধাক্কা লেগে একটা গ্লাসের পানি সব এসে আমার গায়ের উপর পড়লো। হালকা সিল্ক কাপড়ের জামা উপর পানি পড়ায় উপর থেকে পেট দেখা যাচ্ছে। আমি কোন রকমে উরনা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছি। বসে থাকার জন্য না বুঝালেও যখন উঠে দাড়াই তখন বিচ্ছিরি ভাবে শরীরের ভিতরের অংশ ফুটে ওঠে। আমি এসব খেয়াল করেনি কিন্তু রুদ্র স্যার তার গায়ের কোট খুলে আমাকে পরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ আগের কাহিনী মনে পরলে রাগে আমি কোট টা খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হাঁটতে শুরু করে।

রুদ্র স্যার ওখানেই দাড়িয়ে রুশা ম্যামকে বকতে থাকে কারন রুশা ম্যাম ইচ্ছে করেই আমার গায়ে পানি ফেলে রেস্টুরেন্টের ভিতর অপমান করতে চেয়েছিল। রুদ্র স্যার আমার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে সবটা দেখছেন।

আমি সেদিকে না তাকিয়ে একা একা গাড়ির দিকে পা বাড়াই। তখন রাস্তার কিছু বাঝে ছেলেরা খারাপ ভাবে ইঙ্গিত করে কথা বলে।

“কি মালরে মামা। দেখছিস পুরাই হট।”

কথাটা শুনে পাশের ছেলেটা দাত কেলিয়ে বলে ওঠলো- “মামা রে কি দেখাইলি। একে পেলে তো জীবন ধন্য হয়ে যাবে।”

“আরে মামা কস কি, এরে কি তোরা দুজনেই নিবি? আমাদেরও একটু ভাগ দিস।”

“ও ফুলটুসি, এভাবে আগুন লাগিয়ে হেঁটে কই যাও, একটু দাড়াও।”

ছেলেগুলো আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে রুদ্র স্যারকে জড়িয়ে ধরি। এতক্ষণ রুদ্র স্যার রুশা ম্যামকে বকার জন্য এসব কিছু খেয়াল করেনি। হঠাৎ এভাবে এসে দৌড়ে জড়িয়ে ধরার কারণে সামনে তাকিয়ে দেখে আমার পিছনে কয়েকটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। রুদ্র স্যারের বুঝতে বাকি রইলো না কি হইছে।
ছেলেগুলো রুদ্র স্যারকে দেখে ভয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

স্যার আমাকে আড় কোলে তুলে নিয়ে হনহন করে হেঁটে গাড়ির ভিতরে এনে ধক করে গাড়ির সিটে উপর ছুড়ে মারে। ছেলেগুলোর উপর রাগ এখন আমার উপর ঝাড়ছে। রুদ্র স্যার গাড়িতে ওঠে আর কারো অসার অপেক্ষা না করেই আমাকে নিয়ে চলে যায়। রাইমা আপুও ভয়ে কিছু বলে না। ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। আমি ভয়ে শ্বাস নিতে ভুলে গেছি। মনেহচ্ছে এখনি না আবার এক্সিডেন্ট করি।

মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি আর প্রার্থনা করছি। এবারের মত আল্লাহ বাঁচিয়ে দেও আর কখনো ভিজে গেলে গা থেকে কোট খুলব না।

#চলবে,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে