#সংসার
#পর্ব_১১ #বোনাস_পার্ট
#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি
বারবার কাজি অনুকে কবুল বলতে বলছে, অনু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোট দুটো কাঁপছে চোখের কাজল লেপ্টে আছে। আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেউ ভিতর থেকে চেপে ধরেছে। এতো কষ্ট করেও দুটো ভালোবাসার সংসার টিকিয়ে রাখতে পারলাম না। এখানেই সব শেষ। বেঁচে থেকেও চারজন মানুষ জীবন্ত লাস হয়ে থাকবে।
হঠাৎ কোথা থেকে দুই জন পুলিশ আর সাথে একটা ছেলে আসে। অনুর বর্ণনায় মনে হলো এই ছেলেটি রাজ। পুলিশ কেন নিয়ে আসলো এমনি গোলমাল করলেই তো রাকিব ভাই একটা উছিলা পেয়ে ভেঙ্গে দিতো। পুলিশ দেখে অনু আর রাকিব ভাইয়ের কাকা মামারা এগিয়ে যায়।
“কি সমস্যা স্যার, আপনারা হঠাৎ এখানে?”
“আমাদের কাছে নোটিশ আছে আপনারা অন্যের বউকে বিয়ে দিচ্ছেন। সেটা সত্যিই কি না দেখতে আসলাম।”
“কি বলছেন এসব? এখানে আমাদের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।সাপনাদের নিশ্চয়ই কোনো ভুল হইছে স্যার।”
পুলিশ দুটো তাদের কথায় উওর না দিয়ে অনুকে প্রশ্ন করলো-
“আপনার নাম কি অনু?”
অনু মাথা দুলায় যার মানে হ্যাঁ।
পুলিশ আবার জিঙ্গেস করে, “আপনি কি রাজ সাহেব কে চিনেন? আপনাদের ভিতর অন্য কোন সম্পর্ক আছে?”
অনু আবার মাথা দুলালে উপস্থিত সবাই অনুর দিখে ভুত দেখার মতো তাকিয়ে থাকে। এতোক্ষণ এখানে খুশির বন্যা বয়ে গেলেও এখন সবার মাঝে হৈচৈ লেগে গেছে।
২২.
পুলিশ অনুর আর রাকিব ভাইয়ের ফ্যামিলিকে দুইটা অপশন দেয়। এই মুহূর্তে রাজের সাথে অনুর আবার বিয়ে দিতে হবে,নয়তো রাকিব ভাইয়াকে স।তাদের সাথে নিয়ে যাবে, তারপর যে কথা হবে থানায় যেয়ে হবে।
ওখানের সবাই থানার কথা ভেবে কেঁপে ওঠে, অনুর পরিবার রাকিব ভাইয়ের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালে রাকিব ভাই মুচকি হেসে বলে-
“আংকেল আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না, আমি অনুর ভালো চাই। আপনারা ওই ছেলেটার সাথে বিয়ে দিতে পারেন আমার আপওি নেই।”
রাকিব ভাইয়ের কথা শুনে ওখানের সবাই স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ে। আস্তের ওদের বিয়ে হয়ে যায়। আমি অনুর কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করি-
“অনু তোমাদের যে আগে বিয়ে হইছে, কই তুমি তো বললে না।”
“মেঘ আপু আমিও জানতাম না। এটা রাজ বানিয়ে বলেছে। আর ওই যে ওই দুটো পুলিশ ওটাও নকল ছিলো। রাজের ফ্রেন্ড ছিলো তারা দুইজন।”
আমি অনুর কথা শুনে কিছু অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। রাজ ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান তাকে প্রথম দেখাই বুঝেছি।
ওদের ওখানে সব কিছু ঠিক করে অনেক রাত হয়ে যায়। এদিকে আমার পূর্ণতাকে দেখার জন্য মনও মানছে না। তাই রাকিব ভাইকে চলে যাওয়ার কথা বললে প্রথমে যেতে চায় না। আজ রাত এখানেই থাকতে চায়। যেতে তিন ঘন্টা সময় লাগবে। আর এতো রাতে নিরাপদ নয় এসব রাস্তা তবুও আমি জেদ ধরি সে নিয়ে না গেলে আমি একা যাব। তারপর রাকিব ভাইও রাজি হয়।
রাকিব ভাঈয়ের সাথে বিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় রাকিব ভাইয়ের পরিবারের লোকজন রেখে চলে গেছে শুধু আমি আর ভাইয়া থেকে গেছি। আমরা ফিরে যাওয়ার সময় অনু আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলো কৃতজ্ঞার কান্না।
আমারা বাসে করে বাসায় ফিরবো। বাসে ওঠেই ক্লান্ত হয়ে আমি সিটে গা এলিয়ে দেয়। কয়েক মিনিট পর রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রাকিব ভাই আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। আমি সিটে আবার এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝে জিঙ্গেস করি।
“কিছু বলবেন রাকিব ভাই?”
“আচ্ছা মেঘ বিয়েটা তুমি ভেঙ্গেছো?”
আমি সেভাবেই চুপচাপ উওর দেয়।
“হুমমম”
“জানো আমি জানতাম তুমি বিয়েটা আটকাবে। নিছের থেকে আমি তোমাকে বেশি বিশ্বাস করি মেঘ। জানো আজ আমি কতটা খুশী। তোমাকে বোঝাতে পারব না।”
আমি রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
“রাইমা আপুকে ভালোবাসেন?”
“জানি না।”
আমি আবার সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুঝে বললাম-
“প্রত্যেক মানুষের জীবনে অতিত থাকে। তাকে কখনো ভুলা যায় না। তাকে নিয়ে যত অনুভূতি থাকে সব জীবনের প্রথম অনুভূতি। আপনি যখন সেই অনুভূতির সাম্মোখিন হবেন ততবার আপনার তার কথা মনে পরবে। তাই বলে এই নয় দ্বিতীয় বার কারো প্রেমে পরা যাবে না। প্রেমে মানুষ পরে বহুবার তবে হ্রদয়ের প্রেম একবারই হয়। যাকে সে হ্রদয়ে ভিতর রেখে দেয়। তবে বেঁচে থাকা ভালো থাকার জন্য আমার আরো একজনকে বেঁছে নিতে হয়। দিন শেষে অতীত ভুলে সেই মানুষটার খুশির জন্য আমাদের প্রানপণ লড়তে হয়। কারন আমরা সেই মানুষটাকেও ভালোবাসি। ”
কিছুক্ষন দুজনের মাঝে পিনপতন নিরাবতা। নিরবতা কাটিয়ে রাকিব ভাই কিছুক্ষণ পর বলে
“কোথায় যাবে?”
আমি গভীর নিশ্বাস নিয়ে বললাম
“পূর্ণতার কাছে।”
এতো রাতে বাড়িতে ডুকলে কে কি বলবে ভেবে আত্মা কেঁপে ওঠে। বাসার সামনে রাকিব ভাই এগিয়ে দিয়ে রিসকা নিয়ে চলে যায় তাদের বাসায়। আমি আমাদের রুমের দিক তাকিয়ে দেখি রুদ্র স্যার বারান্দা দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে তাকাতে দেখেই রুমের ভিতরে চলে যায়।
আমি আস্তে আস্তে পা রেখে বাসার ভিতরে ডুকি। ভাবছিলাম শাশুড়ি মা আজো বাসায় ফিরেনি কিন্তু বাসায় ফিরে দেখি তিনি বাড়িতে এসেছেন সাথে তার বোন আছে। তারা দুজন হল রুমে বসে গল্প করছে। এত রাতে তাদের বসে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হই। আমি তাদের সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে উপরের রুমে সিড়ি দিয়ে ওঠে আসি। শাশুড়ি মা খুব কড়া শাসনের তবে আজ এতো রাতে বাসায় ফিরে কিছু বশছে না দেখে অবাক হয়ে রুমের দিকে পা বাড়াই।
আমি দরজা ঠেলে রুমে ডুকে দেখি স্যার বেডের এক কোনায় বসে আছে আছে। আর পূর্ণতা রুমে নেই। তখন শাওয়ার রুম থেকে কেউ একজন কথা বলতে বলতে বের হয়েছে।
“দেখে তো রুদ্র এই ড্রেসে কেমন লাগছে?”
আমি তাকিয়ে দেখি রুশা ম্যাম বের হচ্ছে। তাকে আমি আরো আগে দুবার দেখেছি রুদ্র স্যারের অফিসে। সে সেখানে লেডি ম্যানেজার। কিন্তু এতো রাতে স্যারের রুমে কেন জিঙ্গেস করতে গিয়েও জিঙ্গেস না করে বলি- “পূর্ণতা কোথায়?”
স্যার আমাকে দেখেও না দেখার মত করে তাকিয়ে থাকে। রুশা ম্যাম আমিকে দেখে বলে- “ওহহ মেঘ তুমি, এতরাতে কোথা থেকে আসলে? আমরা ভবছিলাম তুমি আসবে না। আর পূর্ণতা রাইমার রুমে। তুমি সেখানে যাও।”
রুশা ম্যাম এক প্রকার জোর করেই আমাকে রুমের বাহিরে বের করে দেয়। অনিচ্ছা সত্যেও আমি রাইমা ম্যামের রুমে যাই।
সেখানে যাওয়ার পরই, রাইমা আপু আমাকে হাতে একটা অফ হোয়াইট কালারের উপর মুক্ত পাথরের লেহেঙ্গা ধরিয়ে দিয়ে পরতে বলে। আজ নাকি সারপ্রাইজ আছে।
আমি কিছু না বুঝলেও রুইমা আপুর কথা মতো লেহেঙ্গা পরে আসি। রাইমা আপু চুল বাঁধছে আর আজ সারাদিন কি হলো জিঙ্গেস করছে।
আমি আজ সারাদিন কি কি হলো বলতেই রাইমা আপু চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পরে। আমাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
আমাকে রাইমা আপু নীজের হাতে সাজিয়ে দেয়। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের নিক্ষুত ভাবে দেখতে থাকি। রাইমা আপু আমার দুগালে হাত দিয়ে বলে-
“মাশাআল্লাহ আজ আমার ভাবি কে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কেউ যেন নজর না দেয়। রুদ্র ভাইয়া তোমাকে দেখে জ্ঞান না হারালে হয়।”
আমি রাইমা আপুর কথা শুনে লজ্জায় চোখ নিচে নামিয়ে নিয়ে আসি। এভাবে সাজানোর কারন জিঙ্গেস করলে চোখ টিপে বলে সারপ্রাইজ আছে।
“চলবে,,,,,,