#সংসার
#পর্ব_১০
#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি
আমার তার কথা শুনে ঘৃণায় চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পড়লো। রাকিব ভাই তাকে কিছু না বলে রুম থেকে রেগে নিচে চলে যায়।
আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম বাসায় ফিরে কি জবাব দিবো রাইমা আপুকে? কী করেই বা এই বিয়ে ভাঙবো ?”
আমি আর কিছু না ভেবে দৌড়ে রাকিব ভাইয়ের মায়ের কাছে চলে গেলাম। তাকে বুঝালাম যে এই বিয়ে হলে রাকিব ভাই জান্ত লাস হয়ে যাবে। আর রাইমা আপুর ব্যাপারে সব টা বললাম। সব শুনে আন্টি যা বললো তাতে আমি ধমকে দাড়াই।
২০.
“আনুর বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে অনু এখানেই থাকতো। ওর পড়ালেখা করতে হোস্টেল এ গেলেও লেখাপড়ার খরচ আমরা দিতাম। ছোট বেলায় অনু লক্ষী পতুলের মতো ছিল দেখে তখনই অনুর মাকে কথা দেয় তার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করবো। কিন্ত অনু হোস্টেল এ গিয়ে পুরোপুরি বদলে যায়। ব্যবহার ও বদলে যায়। খারাপ জিনিসে আসক্ত হয়ে পরে। তারপর শুনি রাকিব তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু ও আমাদের আগেই বলে যতদিন প্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন যেন তোমাদের ফ্যামিলি কে না জানাই।
কিন্তু আস্তে আস্তে সব শেষ হয়ে যায়। পরিস্থিতির চাপে পরে তুমি বিয়ে করে ফেলো সেদিন আমি তোমার ফুপির কাছে বলতে চাইলে রাকিব আমাকে আর যেতে দেয়নি। ও চাইতো তুমি সুখে থাকো। কিন্তু সেই দিন তোমার ফুপির কাছে বলব না কিন্তু সর্ত দিয়েছিলাম দুই দিনের ভিতর বিয়ে করতে হবে। তারপর ওই বাড়িতে মেয়ে পছন্দ হলেও শুনেছি রাকিব বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আমি ভাবতাম কারণ হিসেবে হয়তো ও তোমাকে ভুলতে পারছে না। এদিকে শুনি অনুর সাথে রাকিবের বিয়ে না দিলে ও সুইসাইড করবে সব চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পরি। তারপর সবাইকে বলি সব কিছু তৈরি করতে আর রাকিবকে এনে সরাসরি বিয়ের পিরিতে বসাই। কিন্তু আজ শুনলাম ও অন্যজন কে ভালোবাসে তাই বিয়ে ভেঙ্গেছে। কিন্তু এখন যদি বিয়ে ভেঙ্গে দেয় তাহলে অনু নিজের কি ক্ষতি করে জানি না। সেই সাথে অনুর মা মনি কে আমাদের সারা জীবনের মতো হারাতে হবে।
যেটা হচ্ছে হোক আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আমি আন্টির কথা শুনে রুম থেকে চলে আসি। আন্টির কথাই ঠিক হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু রাইমা আপুর কী হবে? সে না করবে কোনদিন বিয়ে আর না পারবে ভালো ভাবে বাঁচতে। আর রুদ্র স্যার তার বোনকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখেতে সহ্য করতে পারবে না।
আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রুদ্র স্যার ১১ টা কল দিয়েছে। ফোন সাইলেন্ট ছিল। আমি নিজেই রুদ্র স্যারকে কল দিলে সাথে সাথে ফোন ধরে ধমকের সুরে বলে-
“ইডিয়েট, ফোন ধরতে এতক্ষণ লাগে? কোথায় তুমি,পূর্ণতা কাঁদছে ওকে কী খেতে দিব? আর কিভাবে কি বানাবো?”
আমি এতগুলো প্রশ্ন একসঙ্গে বলতে দেখে মিনমিন করে বলি-“আমি রাকিব ভাইয়ের বাড়িতে। পূর্ণতা খাবা,,,,”
আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দেয়। আমি কয়েক বার কল দিলে ফোন বন্ধ করে রেখে দেয়।পূর্নতা কাঁদছে, কিছু খাইয়েও যায় নি না জানি এখন কি রকম আছে। আমি আর কিছু না ভেবে রাইমা আপুকে ফোন করে পূর্ণতাকে খবার খাওয়াতে বলি।
২০.
কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা অনুদের বাসায় চলে আসি। বিয়েটা অনুর পৈতৃক বাড়িতেই হবে। আমি অনুকে দেখতে তার রুমে যাই। আর দুই ঘন্টার পর কাজী আসলেই বিয়ে হবে।
আমি অনুর রুমে গিয়ে নক করতেই শুনি অনু কারো সাথে কথা বলছে আর কাঁদছে। আমি বাহিরে আওয়াজ কথা গুলো ক্লিয়ার শুনতে পেলাম না তবে এটা অনুমান করলাম ও হয়তো ওর কোন লাভারের সাথে কথা বলছে।
আমি দরজায় নক না দিয়েই ঢুকে গেলাম। আমাকে অনু সামনে দেখে থতমত খেয়ে ফোন কেটে দিল।আমি অনুকে আস্থত করে সব বলতে বললে অনু বলে-
“কলেজ লাইফে রাজ নামে একটা ছেলের সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব ছিল পরে রিলেশনে জড়ায়। কিন্তু ভুল বসত শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। হঠাৎ একদিন অনু সেই ছেলেটার ফোন নাম্বার থেকে সব কিছু বন্ধ দেখে পাগলের মতো হয়ে যায়। ওর বাড়িতে গিয়েও কোন খোজ পায় না। তারপর আস্তে আস্তে ভেবে নেয় ছেলেটা ওর সুযোগ নিয়েছে। তারপর বাড়ি ফিরে রাকিব ভাইয়ের উপর আগে থেকেই দুর্বলতা কাজ করত। সেই জন্যই সবাই ইমোশনাল ব্লাক মেইল করে বিয়েতে রাজি করায়। এর মাঝে একটা অননোন নাম্বার থেকে কল আসলে দেখে ওটা রাজের গলা। পরে রাজের থেকে সব জানতে পারে। রাজের বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছিল আর সে এতোদিন কোমায় ছিল। যার কারনে কারো সাথে যোগাযোগ হয়নি। আর তার যে চাকরি টা ছিল সেটাও চলে গিয়েছে। সব শুনে অনু ছেলেটার সাথে পালাতে চাইলে ছেলেটা না করে দেয়, এটা বলে যে তার চাকরি নেই এখন সে বিয়ে করে অনুকে সুখী রাখতে পারবে না। খাবার তো দূর ঘুমানোর জায়গা টুকুও দিতে পারবে না।”
আমি অনুর কথা শুনে ভাবতে থাকি একটা মেয়ে একজনকে কতটা ভালোবাসলে অন্য জনকে বিয়ে করার জন্য ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে পারে?
তবে ওদের সমস্যা মিটিয়ে দিতে পারলেই হবে হয়তো ওদের সম্পর্ক মিলিয়ে দিলে আরো একটা ভালোবাসার সংসার বেঁচে যাবে।
অনুর ভালোবাসায় ক্ষাত ছিল, তবে অনুর চোখে জল দেখে মনে হচ্ছে সে অনুতপ্ত। সে তার ক্ষাতটা পূরণ করে নিতে চায়, ভালোবাসা দিয়ে।
” ছিহ অনু, তোমাকে কিছু বলতেও ঘৃণা লাগছে। তুমি নিজে তো নিজের ভালোবাসা হারিয়েছো আর অন্যের ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছো। তোমার ধারনা আছে আজ বিয়েটা হলে কতো কিছু হতে পারতো?
রাজের নাম্বার টা দাও, আমি ওর সাথে কথা বলে সব ঠিক করছি।”
“প্লিজ আপু আমাকে বকো মারো তুমি রাজ কি কিছু বলো না, ও জানে না আজ আমার বিয়ে। আর তাছাড়া আমি কিভাবে এখন সবাইকে ছেড়ে পালিয়ে যাব।”
আমি অনুকে ধমক দিয়ে বলি-
” আবার ভুল সিধান্ত নিচ্ছো কেন? পালিয়ে যেতে হবে কখন বললাম। আমাকে ওর ফোন নাম্বার দাও কথা বলছি।”
আমি রাজকে ফোন দিয়ে কথা বলে জানতে পারি রাজ আগে রুদ্র স্যারের অফিসে কাজ করতেন, এক্সিডেন্টের কারণে চাকরি চলে গিয়েছে আর সে চাকরি ছাড়া অনুকে বিয়ে করতে চায় না। পরে আমি বলি তার আগের চাকরি ফিরিয়ে দিব, আর যদি সে অনুকে পেতে চায় তাহলে সে জেনে এখনি অনুর বাসায় এসে অনুর বিয়েতে গন্ডগোল করে। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছু কিছু সময় গন্ডগলেও ভালো কিছু পাওয়া যায়।
কিছু মেয়েরা মিলে অনুকে নীচে নিয়ে এসেছে। কাজী সাহেব ও এসেছে। চারদিকে বিয়ের উৎসবে মেতে আছে। সবাই নিজের ভাবনায় ব্যস্ত, কেউ নতুন বউ ঘরে নিবে সেই আনন্দে আবার কেউ নিজেদের মেয়ে বিদায়ের বেদনায় কাতর। আমি বার বার চারদিকে তাকিয়ে রাজকে খুজছি। রাকিব ভাই রোবটের মতো বসে আছে। অনু চোখ দুটো ভয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দুরন্ত মেয়েটা আজ ভালোবাসার কাছে চুপসে গেছে। কি অদ্ভুত এই ভালোবাসা?
বারবার কাজি অনুকে কবুল বলতে বলছে, অনু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোট দুটো কাঁপছে চোখের কাজল লেপ্টে আছে। আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেউ ভিতর থেকে চেপে ধরেছে। এতো কষ্ট করেও দুটো ভালোবাসার সংসার টিকিয়ে রাখতে পারলাম না। এখানেই সব শেষ। বেঁচে থেকেও চারজন মানুষ জীবন্ত লাস হয়ে থাকবে।
#চলবে,,,,,,,