শ্রাবণ মেঘের ভেলা ৭ম পর্ব

0
1504

#শ্রাবণ_মেঘের_ভেলা
#৭ম_পর্ব

একে তুলোর মত ওজন উপরে এত ভারী গামলা, একটা সময় নিজেকে ব্যালেন্স করাই দায় হয়ে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই এক জোড়া শক্ত তাকে সামলে নেয়। মাথা উচু করে দেখে নীলাদ্রি তাকে বেশ সুন্দর করে আগলে নিয়েছে। পিউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই বুলেটের গতিতে ক্ষীপ্ত গলায় বলে উঠে নীলাদ্রি,
– নিজেকে তো সামলাচ্ছো এই অনেক, অহেতুক নিজের ওজনের কিছু সামলানোর চেষ্টা করে বাহাদুরী দেখানোর তো মানে হয় না। আমি তো ফ্রি ই ছিলাম আমাকে ডাকলেই তো হতো। আরেকটু হলেই গামলা সহ উল্টে পড়তে তখন এই তালের বড়ার মত নাকটা ভেঙ্গে যেতো।

বলেই গামলাটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো নীলাদ্রি। নীলাদ্রির কথাগুলো ঠিক হজম হলো না পিউ এর। অমনি তেড়ে চাপা গলায় বলতে লাগলো,
– আপনার বুঝি এতো সময় আমাকে সাহায্য করার, আমি তো ভেবেছি আপনি আজ ননীর পুতুল সেজে মেয়েদের ক্রাস খাওয়ানোর কাজে কার্যরত আছেন
– ও হ্যালো, ক্রাস খাওয়ানো মানে?
– মানেটা খুব সোজা, শিং ভেঙে বাছুর সেজে রয়েছেন কিনা, ছোট ছোট মেয়েরা আপনার উপর ক্রাস খাচ্ছে
– এখন আমি জন্মগতই হ্যান্ডসাম হলে আমার কি দোষ। কেউ যদি আমার উপর ক্রাস খায় আমি তো ডেকে তাকে বলতে পারি না, আমার উপর ক্রাস খেয়ো না, আমার উপর ক্রাস খেয়ো না।
– নির্লজ্জ লোক আপনি
– এই উপাধিটা না শুধু তুমি দিয়েছো, আমার মতো ইনোসেন্ট একটা ছেলেকে কিভাবে পারলে এমন অপবাদ দিতে? হায় নির্মম পাষাণ দুনিয়া! কোথায় যাবো আমি

নীলাদ্রির কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে সেটাই বুঝতে পারছে না পিউ। এর সাথে কথা বলে পারার সাধ্য তার নেই, চেপে যাওয়াটাই সুবিধার হবে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সামনে হাটা দিলো পিউ। নীলাদ্রি ও পেছন পেছন ছাদে গিয়ে পৌছালো। ছাদে যেতে না যেতেই আসমা বেগমের ডাক পড়লো,
– পিউ মা এদিকে একটু আয় তো
– আসি মামী মা

বলেই পিউ ছুট লাগালো আসমা বেগমের কাছে। নীলাদ্রির নজর তখন ও পিউকেই দেখে যাচ্ছিলো। পিউ এর কেসটা নীলাদ্রির কাছে বেশ নতুন। কারণ এ ধরণের মানুষের মাঝে কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায় না। পিউ স্বাভাবিকের চেয়েও স্বাভাবিক। কে জানে কোন অদৃশ্য ভবিষ্যৎ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। চিন্তার জাল থেকে বেরিয়ে কাজে মনোযোগ দিলো নীলাদ্রি। অবশ্য নীলাদ্রির এরুপ চাহনী কারোর চোখ এড়ালো না

রাত ১২টা,
অনুষ্ঠান শেষ এক ঘন্টা হয়েছে। সব গেস্ট চলে গেছে, সব কিছু গুছিয়ে সবাই এখন ঝাড়া হাত পা। এখন যে যেখানে জায়গা পাবে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়বে। আজকে বেশ খাটুনি গেছে। পিউ রুমে এসে দেখতে লাইট অন করতেই দেখতে পেলো খাটের এক কোনায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে ঐন্দ্রিলা। দিশা এবং তার শাড়ি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। দিশা তখন বারান্দায় তার হবু বর হৃদয়ের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাড়িগুলো গুছোতে লাগলো পিউ। মিনিট বিশেক পর নিজে ফ্রেশ হয়ে এসেও দেখে তার বোনদের কোনো পরিবর্তন নেই, যে যেখানে ছিলো তারা সেখানেই আছে। প্রচুর টায়ার্ড লাগছে তার কিন্তু এখন বিছানা করতে হবে, এখনই খালা মামীদের আগমণ ঘটবে। রুমের যেহেতু শর্টেজ সুতরাং এই রুমেই তারা থাকবেন। উপায়ন্তর না মেয়ে ঐন্দ্রিলাকে বেশ কিছুক্ষণ ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। কোনো হেলদুল না পেয়ে বাধ্য হয়ে কাঁথা সরিয়ে ধাক্কা দিয়ে উঠানোর সিদ্ধান্ত নিল পিউ। কাঁথা সরিয়ে গায়ে হাত দিতেই খেয়াল করলো ঐন্দ্রিলার গায়ে অসম্ভব জ্বর এবং সে অচেতন হয়ে ঘুমোচ্ছে। বিয়ে বাড়ি এমনেই কত ঝামেলা এখন ঐন্দ্রিলার কথা বললে হিতে বিপরীত হবে। তাই কোনো মতে উঠিয়ে একটা নাপা এক্সট্রা খাওয়িয়ে দিলো তাকে। কোনো মতে সবার জন্য বিছানা করেই গা এলিয়ে দিলো পিউ। আজকে মাত্রাতিরিক্ত খাটূনি হয়ে তার। চোখ বন্ধ করতেই ঘুমের সাগরে তলিয়ে গেলো সে।

০৯.
আজ দিশার বিয়ে। কমিউনিটি সেন্টারের লবিতে গেট সাজানো হয়েছে। বরের গাড়ি মাত্র পৌছালো, এখন দিশার সব কাজিন গেট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দাবি পাঁচ হাজার থেকে এক টাকা কম দিলে বরের প্রবেশ নিষিদ্ধ। দিশাকে কমিউনিটি সেন্টারের একটি রুমে রাখা হয়েছে। পিউ এবং ঐন্দ্রিলা দিশার কাছে আছে। বেচারি একটু পর পর প্যানিক করছে। ঐন্দ্রিলার শরীরটা এখনো ভালো নেই। জ্বর যদিও নেই তবে এখনো শরীরটা দূর্বল। মনের মধ্যে কোথাও যেনো একটা ভয় লাগছে আজ আবার ঐ অভ্র নামক লোকটার সাথে না দেখা হয়। আপন খালাতো বোনের বিয়ে না হয়ে কোনো একটা অজুহাত দিয়ে না আসার একটা চেষ্টা করতো। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।
– ওরা বোধ হয় এখনো হৃদয়কে ঢুকতে দেয় , ঐন্দ্রি আপু একটু দেখে আসবা, ওরা হৃদয়কে ঢুকতে দিলো কিনা?
এরই মধ্যে দিশার প্রশ্নে ঐন্দ্রিলার হুশ ফিরে। দিশার প্রশ্নে ঐন্দ্রিলা মজার ছলে বলে,
– তুই তো এখনই ওই বাড়ির হয়ে গেলিরে দিশা? এটা ঠিক। পিউ রে আমাদের বোনটা বিয়ের আগেই পর হয়ে গেলো
– সে আর বলতে? যাক যা একটু ভেবেছিলাম এই হাত ধোয়া, জুতো চুরি, গেট ধরার টাকা গুলোর ৫% শেয়ার তোকে দিবো দিশা কিন্তু তোর আর সেতা পাওয়া হবে না রে

পিউ ও ঐন্দ্রিলার সাথে তাল মিলিয়ে কথাটা বলে উঠলো। এমনেই বিয়ের হাজারো টেনশন এবং ভয়ে মেয়েটার অবস্থা খারাপ। এখন বোনদের এমন ঠাট্টার কবলে পরে আরো যায় যায় অবস্থা। এবার কাদোকাদো গলায় বলে উঠলো,
– ধুর, ভালো লাগে না। এমন করছো কেনো? আমি আর এই সাজ নিয়ে বসে থাকতে পারছি না। কখন এ অনুষ্ঠান শেষ হবে
– এখন থেকে বাসর ঘরে ঢুকার তাড়ায় আছিস তুই? (ঐন্দ্রিলা)
– সেটা কখন বললাম? তোমরা আমার বোনেরা তো?
– আচ্ছা থাক আর লেগ পুল করিস না ঐন্দ্রিলা, বেচারি এখনই কেদে দিবে। (পিউ)
– হাহা, তুই এখানে থাক আমি নিচের অবস্থা দেখে আসি। দুলাভাই কি জয়ী হলো নাকি আহত সৈনিক

বলেই নিচের দিকে রওনা দিলো ঐন্দ্রিলা। নিচে যেয়ে দেখলো আসমা বেগম আর জামাইকে বরণ করছেন। শেষমেশ তিন হাজার পাঁচশত টাকায় কনে পক্ষ রাজি হলো এবং হৃদয়কে ঢুকতে দেয়া হলো। ঐন্দ্রিলাকে দেখেই তার মেজো মামার মেয়ে সাফা এসে আক্ষেপের স্বরে বলতে লাগলো,
– আর বলিশ না ঐন্দ্রি আপু, এই দুলাভাইটা জন্মের কিপটা
– কেনো কি হয়েছে?
– দেখ না সাড়ে তিন হাজারের উপরে উঠলোই না। আর ফুপু ও এসে এমন রাম ধমক দিলো যে বাধ্য হয়ে গেট ছাড়তে হলো।
– সমস্যা নেই। স্টেজে এমন ব্যবস্থা করিয়েছি সে জুতো খুলে উঠা লাগবে
– তাই?
– হুম। রেডি থাকিস
– তুমি বেস্ট
– আই নো

ঐন্দ্রিলার হঠাৎ কেনো জানে মনে হচ্ছে এক জোড়া সূক্ষ্ণ চোখ তাকে নিপুন ভাবে দেখে যাচ্ছে। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে এত মানুষ কে দেখছে সেটা বুঝার কোনো উপায় নেই। ঐন্দ্রিলা ঠিক পাত্তা না দিয়েই দিশার কাছে চলে যাবার জন্য রওনা দিলো। হঠাৎ …………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে