#শ্রাবণ_মেঘের_ভেলা
#২৪তম_পর্ব
জানালা দিয়ে সমুদ্র দেখায় যখন ব্যস্ত ঐন্দ্রিলা তখন অনুভব করে কেউ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে, পেছনে না ফিরেই খুব শান্তভাবে বললো,
– হঠাৎ জড়িয়ে ধরার কারণ?
– তোমাকে জড়িয়ে ধরতে বুঝি কারণের প্রয়োজন হয়?
ঐন্দ্রিলার কাধে থুতনি ঠেকিয়ে অভ্র উত্তর দেয়। ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা একে ঐন্দ্রিলা বলে,
– ধন্যবাদ
– কেনো বলতো?
– এই যে সমুদ্রের এতো কাছে নিয়ে আসার জন্য
– ঐন্দ্রিলা
– হুম, কিছু বলবে?
– নাহ, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আমি খাবার ওর্ডার করেছি, এখনি চলে আসবে। খাওয়া দাওয়ার পর বিচে যাবো।
– আচ্ছা
অভ্র কিছু বলতে যেয়েও কেনো জানে বলতে পারলো না। নিজের মধ্যে একটা ব্যপার খুব খচখচ করছে, ঐন্দ্রিলাকে বলাটা খুব দরকার,কিন্তু কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ঐন্দ্রিলা এক মনে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, সেদিনের পর থেকে অভ্রের মনের মাঝে এক প্রকার ঝড় চলছে যা ঐন্দ্রিলা খুব ভালো করে বুঝছে। ঐন্দ্রিলা চাচ্ছে অভ্র নিজ থেকে তাকে সব খুলে বলুক। তাই সে বেশ শান্ত থেকেই সব দেখে যাচ্ছে। অভ্রের ফ্রেশ হবার মাঝেই খাবার চলে আছে, খাবার রিসিভ করএ টেবিলে রাখতেই ঐন্দ্রিলার ফোন বেজে উঠে, ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো একটা আননোন নাম্বার। ঐন্দ্রিলা সাত পাঁচ ভেবে ফোনটা রিসিভ করে কিন্তু অপরপাশ থেকে কোনো সাড়া পায় না। অভ্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই ঐন্দ্রিলাকে প্রশ্ন করে,
– কি হয়েছে? কে ফোন দিয়েছে?
– জানি না, অচেনা নাম্বার
– দেখি
ঐন্দ্রিলা ফোনটি অভ্রের দিকে এগিয়ে দিলে অভ্র নিজেই কথা বলে,
– হ্যালো
– তাহলে অভ্র সাহেবকে খুজে পাওয়া গেলো
ফোনের অপাশ থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেলে অভ্র বেশ হতচকিয়ে যায়। সামনে ঐন্দ্রিলা, তার সামনে কথা বললে ঐন্দ্রিলা নানা প্রশ্ন করতে পারে বিধায় বারান্দায় চলে যায় সে। কড়া কন্ঠে বলে,
– তুমি এ নাম্বারে কেনো ফোন দিয়েছো? আর এই নাম্বার কোথায় পেলে?
– এটা এমন কোনো কঠিন কাজ না, একটা নাম্বার ই তো
– কি চাই তোমার?
– কিছুই না, শুধু তোমার বউ এর সাথে কথা বলার আছে, তাকে তো তোমার কীর্তি গুলো জানানোর দরকার আছে তাই না!
অভ্রের মুখ নিমিষেই বদলে গেলো, চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। রাগে তার গা রি রি করছে, মেয়েটি আর কেউ নয়, অভ্রের এক্সগার্লফ্রেন্ড নিশি। ক্রমাগত অভ্রকে ফোন দিয়ে শুধু ডিসটার্ব করছে না নয় রীতিমত ব্লাকমেইল করছে যাতে সে আবার তার কাছে ফিরে আসে। অভ্র তার ফোন না ধরলে এখন ঐন্দ্রিলার ফোনে ফোন করে যাচ্ছে। ফোনটা কেটে বিছানায় ছুড়ে মারলো সে, তারপর দু হাত দিয়ে চুল টেনে বিছানায় বসে পড়লো অভ্র। যদি নিশিকে সামনে পেতো খুব করে ফেলতো। কিন্তু পারছে না। ঐন্দ্রিলা চুপচাপ দেখে যাচ্ছে সব কিছু। একটা সময় আর না পেরে জিজ্ঞেস করেই বসলো,
– কে ফোন করেছিলো?
– রং নাম্বার
– তাহলে এতোক্ষণ কথা বললে যে?
– আজিব তো, এখন আমি কথা বলার জন্য ও কি তোমার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে?
অভ্রের কথায় বেশ তব্দা খেয়ে যায় ঐন্দ্রিলা, কি এমন বললো সে যে এতোটা কাটা কাটা কথা বলছে অভ্র। নিজেকে শান্ত রেখে খুব নম্রভাবেই বললো ঐন্দ্রিলা,
– আমি সেটা কখন বললাম? আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো কেনো?
– কি ব্যবহার করলাম? রঙ নাম্বার ছিলো বলার পর ও তুমি কথা বাড়িয়ে যাচ্ছো
– অভ্র আমি খুব স্বাভাবিক একটা কথা বলেছি, রং নাম্বার ই যদি হয় এতোক্ষণ কথা বলার তো কিছু ছিলো না। তাই জিজ্ঞেস করেছি, আর আমি তোমার ওয়াইফ, আমার জানার অধিকার আছে। তোমাকে আমি বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি একটা ফোন আসলেই তুমি বদলে যাও। আমার তো চোখ আছে না? এখনো তোমার ব্যবহার বদলে গেছে। ফোনের মানুষটা কে ছিলো অভ্র?
– বউ হয়েছো বলে কি আমাকে আমাকে কিনে নিয়েছো? নাকি আমার মাথার উপরে উঠে নাচার পারমিশন দিয়েছি তোমাকে কোনটা? আসলে তোমাদের মেয়েদের এই এক সমস্যা তোমরা নিজেদের কি ভাবো আল্লাহ জানে। বসতে চেলে শুতে চাবার মতো অবস্থা।
– অভ্র মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ, কিভাবে কথা বলছো তুমি?
– আমাকে আমার ল্যাঙ্গুয়েজ শিখিয়ো না, আমার ভালো করেই জানা আছে সেটা। ফারদার আমাকে জেরা করতে এসো না, এটা লাস্ট ওয়ার্নিং ছিলো।
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় অভ্র। ঐন্দ্রিলা হা হয়ে যায় তার ব্যবহার দেখে। এই না কিছুক্ষণ আগে এতোটা মায়া নিয়ে কথা বলছিলো সে। হুট করে কি হলো? চোখের কোনায় পানি জমতে লাগলো ঐন্দ্রিলার। আগে অভ্র এমন ব্যবহার করলে হয়তো এতোটা খারাপ লাগতো না। কিন্তু এখন যেনো কেউ গলা টিপে শ্বাস রোধ করে আছে এমনটা লাগছে। অভ্রের বের হওয়ার পর ওখানেই বসে ঐন্দ্রিলা, হাটুতে মুখ গুজে কাঁদতে থাকে। বুঝতে পারছে না সে এটা কি তার রাগের কান্না, নাকি কষ্টের, নাকি আঘাতের___
বিকেল ৪.৩০টা,
কফি শপে মুখোমুখি বসে আছে আহানা এবং নীলাদ্রি। নীলাদ্রি এক মনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আহানা তা্র দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আহানার মনে যে নীলাদ্রির জন্য একটা আলাদা জায়গা হয়ে গেছে এটা সে বুঝতে পেরেছে। আগে মনে করেছিলো লোকটাকে শুধু চোখের শান্তির কারণে দেখতে ভালো লাগে কিন্তু এখন ব্যাপারটা না নয়। এখন যেনো মনের শান্তির একটা ব্যাপার জুড়ে গেছে। হর=ড়ির দিকে তাকিয়ে নির্বিকার ভাবে বলে উঠলো নীলাদ্রি,
– আমাকে উঠতে হবে, আমার কিছু প্যাশেন্ট ৫.৩০টায় আসবে।
– মাত্র তো পনেরো মিনিট ও হয় নি
– আসলে আমি একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি আজকে। তুমি বললে তাই এই কিছু সময় বের করলাম
– ওহ, নীলাদ্রি ভাই আমার কিছু বলার আছে আপনাকে
– হুম বলো শুনছি
– আসলে, আসলে
– হুম?
– আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি
– কিহ?
– আমি বইয়ের ভেতরে একটা চিঠি লিখে আপনাকে দিয়েছিলাম, ভেবেছি আপনি হয়তো পরবেন কিন্তু আপনি হয়তো দেখেন ও নি। তাই সরাসরি দেখা করতে চেয়েছিলাম। আপনার বাড়িতে হুট করে যাওয়াটা ভালো দেখায় না, তাই এখানে দেখা করতে বলি।
– আহানা তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো?
– হ্যা ভেবেই বলছি, আসলে আপনাকে আমার প্রথম দেখা থেকেই ভালো লাগতো কিন্তু তখন ভেবেছিলাম এটা হয়তো ইনফ্যাচুয়েশন কিন্তু এখন আমি শিওর আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি জানি আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন কিন্তু আমার মনের উপর তো আমার কোনো হাত নেই তাই না? আমার মনে হয়েছে কথা গুলো আপনাকে জানানোটা দরকার।
– আমাকে ক্ষমা করো আহানা, আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি হতে পারছি না। আসলে কি বলো তো, তুমি যেমন তোমার মনের কাছে হেরে আমাকে ভালোবাসার কথাটা বলছো। আমিও সেই একই রকম আমার মনের কাছে হেরে আছি। তাকে ভুলে তার জায়গা কাউকে দেবার কথা আমি চিন্তাও করতে পারি না। সে অনেকটা আমার নেশার মতো। একটা সময় দম বন্ধ লাগে তাকে না দেখলে। আমার জীবনে সে না থাকলেও সে আমার সর্বোত্র জুড়ে আছে। তোমার জীবনের পুরোটা পরে আছে, আমার মতো মানুষকে ভালোবেসে নিজেকে কষ্ট দিয়ো না।
– ……………
– আমি উঠছি, আমাকে ভুলে যাও। দেখবে ঠিক ভালো থাকবে। আমি তোমাকে সবসময় দিশার মতো বোনের চোখেই দেখেছি। আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও।
বলেই সেখান থেকে উঠে চলে যায় নীলাদ্রি। আহানা এখনো বসে রয়েছে সেখানে। এটা তার জানা ছিলো নীলাদ্রি তাকে গ্রহণ করবে না, তবুও একটা চিনচিনে ব্যাথা বুকে করেই যাচ্ছে এ ব্যাথা যেনো থামবার ন্য। ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে_____
২৫.
রাত ৮টা,
অভ্র রুমে ঢুকতেই দেখলো পুরো রুম অন্ধকার। ঘড়ির কাটা ৮টা ছুই ছুই, অথচ ঐন্দ্রিলা রুমে লাইট না লাগিয়ে বসে আছে। রুমের লাইট অন করতেই দেখলো ঐন্দ্রিলা পিঠ করে শুয়ে আছে বিছানায়। খাবার খাবারের মতোই পড়ে আছে, একবার ছুয়েও দেখে নি। তখন হুট করে কেনো যে রাগ উঠলো কে জানে। স্বাভাবিক কথায় ও খারাপ ব্যবহার করলো ঐন্দ্রিলার সাথে। আসলে নিশির কথাগুলো শুনে এতোটা রাগ উঠে গেছিলো অভ্রের বলার মতো না। সেই রাগটা ঐন্দ্রিলার উপর ঝাড়লো সে। এটা সে একদম ভালো হয় নি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে এ। না ঐন্দ্রিলাকে সব খুলে বলতে হবে। তারপর সে যা ডিসাইড করবে সেটাই হবে। অভ্রের যাবার পর কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পরে ঐন্দ্রিলা। হঠাৎ ঘাড়ে কারো নিঃশ্বাস পড়তেই……………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি