#শ্রাবণ_ঝরা_মেঘ
#শেষ_৩২
#জেরিন_আক্তার_নিপা
রাতটা তাশফিনের শ্বশুরবাড়িতে কাটানোর ভাগ্য হয়েছে। রাতে জ্বর ওঠায় বউ, শাশুড়ির সেবাযত্নও কম পায়নি। এই বাড়িতে এসে অনেকদিন পর তাশফিন মায়ের অভাব ভোগ করেছে। মায়ের চেহারাটাও এখন ভালো করে মনে পড়ে না। কিন্তু মা বেঁচে থাকলে হয়তো এভাবেই তার খেয়াল রাখতো। এই মানুষ গুলোকে সে অনেক কষ্ট দিয়েছে। অনেক জ্বর থাকলেও রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় আর বৃষ্টির কারণে ডাক্তার ডাকা সম্ভব হয়নি। মিজানুর রহমান তারেক চৌধুরীকে অবগত করেছেন, আপনার ছেলে আমাদের বাড়িতে আছে। সকালে এসে ওকে নিয়ে যাবেন। তারেক চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলের কীর্তিকলাপের কথা ভাবছেন।
-জ্বর নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে হাজির হয়ে গেছে! অপদার্থ কোথাকার।
তাশফিনের এই অবস্থার জন্য মৌরি নিজেকে দায়ী করছে। তার জন্যই মানুষটা নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে। রাত জেগে মাথায় জলপট্টি দিয়ে ভোরের দিকে তাশফিনের মাথার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সকালে চোখ খুলে মৌরিকে ওভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তাশফিন হাসলো। মুখে যতই বলুক ভালোবাসে না, কিন্তু মনকে কি আর ভালোবাসা থেকে আটকাতে পেরেছে? বেশি নড়াচড়া করলে যদি মৌরি উঠে পড়ে এই ভয়ে তাশফিন খুব সাবধানে কাত হয়ে শোলো। মৌরির মুখের উপর চুল এসে পড়েছে। আলতো হাতে তাশফিন চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিল। মায়াভরে কতক্ষণ প্রিয়তমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কপালে ভালোবাসার পরশ ছোঁয়ালো।
-তোমার অভিমান কি আমার ভালোবাসার থেকেও বেশি? ঠিক কতটুকু ভালোবাসা দিয়ে তোমার অভিমানের পাহাড় ভেঙে ফেলা যাবে?
মৌরি ঘুমের মাঝেই একটু নড়ে উঠলে তাশফিন চোখ বন্ধ করে ফেললো। না মৌরির ঘুম ভাঙেনি। তাশফিন বিছানা থেকে উঠে পড়ে মৌরিকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল।
আরিয়ান রাতেই চলে গিয়েছিল। যাবার সময় মাহিমের সামনা হলে ভালো করে কথাও বললো না। ফাইজার পরিবারের মাহিমকে পছন্দ। কেন? সে কোন দিকে দিয়ে মাহিমের থেকে কম?
আজকের সকাল এবাড়িতে তাশফিনের জামাই আদর দিয়ে শুরু হয়েছে। একমাত্র মৌরির চাচা ছাড়া আর কেউ তার উপর রেগে আছে বলে মনে হলো না। সবাই তার খাতিরযত্নে ব্যস্ত। বিশেষ করে মৌরির মা। তিনি তাশফিনকে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন,
-এখনও জ্বর আছে বাবা?
-না আন্…
তাশফিন জবাবে না আন্টি বলতে গিয়েও থেমে গেল। মৌরির মা তার আন্টি হবে না। শাশুড়ির মন জয় করতে মিষ্টি করে হেসে তাশফিন বলল,
-আমি আপনাকে মা ডাকতে পারি? আপনি রাগ করবেন না তো?
তাশফিনের কথা শুনে তিনি হাসলেন। বললেন,
-রাগ করবো কেন? তুমি আমাকে যা খুশি ডাকতে পারো।
-ঠিক আছে। তাহলে মা-ই ডাকব। আমার তো মা নেই। অনেকদিন ধরে এই ডাকটা কাউকে ডাকা হয়নি।
হুট করেই অপছন্দের তালিকা থেকে তাশফিন ফাইজার পছন্দের তালিকায় চলে এসেছে। লোকটা তার বোনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। একমাত্র শালিকাকে দলে পেয়ে তাশফিনও মহা খুশি। শালি দুলাভাই মিলে খাবার টেবিলে গল্প জুড়ে দিয়েছে। মাহিমও চেয়ার টেনে ওদের সাথে বসলে তাশফিন ওর উদ্দেশ্যে বলল,
-শালাবাবু কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ। আপনার খবর কী?
-আছি মোটামুটি। আপনার বোন একটু সুনজর ফেললেই আরও ভালো থাকতে পারতাম।
-নজর তো ফেলেছে। এতেই শুকরিয়া আদায় করুন।
-হ্যাঁ তা তো দিনে অসংখ্য বার করছি। তোমার জীবন কেমন কাটছে? সব ঠিকঠাক?
তাশফিনের এই কথা জিজ্ঞেস করার মানে মাহিম ঠিকই বুঝেছে। কিন্তু ফাইজার সামনে এই ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছে না। তাই মাহিম কথা কাটিয়ে নিতে চাইলে তাশফিন অবুঝ বান্দা ফাইজার সামনেই সব বলতে লাগল,
-তোমার জীবন অবশ্য ভালোই কটবে। আমার বোন তো তোমার বোনের মত রাগী না। জিতেছ শালাবাবু।
ফাইজা ওদের কথা শুনছিল। এপর্যায়ে এসে খটকা লাগলে সন্দেহের দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-কোন ব্যাপারে কথা বলছো তোমরা?
ছোট বোনের সামনে মাহিম লজ্জা পাচ্ছিল। বেচারা তোতলাতে লাগল।
-তেমন কিছু না। তুই বুঝবি না।
একমাত্র শালার হাবভাব দেখে তাশফিন মনে মনে হাসছে। মাহিমের কথার মাঝখানে ফোঁড়ন কেটে বলল,
-আরে কী যে বলো! ফাইজা বুঝবে না কেন? ও কি এখনও ছোট? আমার শালিকারও এসব বিষয়ে ভালোই জ্ঞান আছে।
তাশফিন ফাইজাকে আরিয়ানকে নিয়ে ক্ষেপাচ্ছে। এতক্ষণ একা পেয়ে ক্ষেপিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু মাহিমের সামনে এসব কথা কেন বলছে? ফাইজা চোখে ইশারা করে তাশফিনকে থামতে বলল। মাহিমও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে। ফাইজার আবার কী হলো? তাশফিন দুই ভাইবোনের অবস্থা দেখে হাসছে। তাশফিনও ফাইজার মতোই চোখে ইশারা করে মুখে বলল,
-আরে সমস্যা নাই। দু’জনই আমার ভাইবোন।
মাহিম কিছুই বুঝতে পারছে না। সে বোকার মতো জিজ্ঞেস করল,
-আপনারা চোখে চোখে ইশারা করে কী বোঝাচ্ছেন আমাকে একটু বলবেন?
-ফাইজা যে ভবিষ্যতে আমাদের বাড়ির বউ হবে এটাই তোমাকে বলতে বারণ করছে।
মাহিম মুখ হাঁ করে ফাইজার দিকে তাকালো। ফাইজা কপাল চেপে ধরলো। অবিশ্বাস্য গলায় মাহিম বলল,
-ফাইজা!
তাশফিনের উপর ফাইজার রাগের শেষ রইল না। লোকটা কী পরিমাণ শয়তান! এভাবে বাঁশ খাওয়ালো তাকে?
-উঁহু মাহিম, তুমি কিন্তু ফাইজাকে কিছু বলতে পারবে না। তাহলে আমি ফাইজাকে এই কথাও বলে দেব যে, তুমি আমার বোনের জন্য বেচারীর সাথে বিয়ে ভেঙেছ।
ফাইজা অবাক চোখে মাহিমের দিকে তাকাল। মাহিম অসহায় মুখে তাশফিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
-ভাইয়া, তুমি দুলাভাইয়ের বোনকে পছন্দ করো! কই আমাদের তো জানাওনি। কেমন মানুষ তুমি!
-তোরও যে ওই বাড়িতে যাওয়ার প্ল্যান আছে আমাকে জানিয়েছিস?
-আমি কীভাবে জানাবো? আমি নিজেই তো জানতাম না।
-আমিও তোদের জানানোর সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম।
-তোমার সঠিক সময় কখন আসতো? আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে?
-বিয়ে হয়েছে? তুই তো কিছু করতে পারিসনি। আমাকেই সবার চোখে খারাপ হতে হলো।
-হবে না? তুমি আমার বড়। বড়দেরই সাহস দেখাতে হয়।
-বেশি সাহস দেখাতে গিয়েই পুরো পরিবার মিলে বাঁশ দিয়েছে।
-ভালোবাসার থেকে বড় বাঁশ পৃথিবীতে আর কিছু নেই। এই বাঁশ হজম করে ফেলেছো ফ্যামিলির বাঁশ কিছুই না।
দুই ভাইবোনের তর্কবিতর্ক দেখে তাশফিন হাসি থামাতে পারলো না। হো হো করে হাসতে লাগলো। মাহিম, ফাইজা দু’জনই কঠিন দৃষ্টিতে তাশফিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
তাশফিনের মধ্যে বাড়ি ফেরার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। খাচ্ছেদাচ্ছে, ঘুরছে। আর মৌরিকে বিরক্ত করে মারছে।
-বউ! ও বউ, শোনো না বউ।
মৌরি রাগী চোখে তাশফিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
-কী নতুন ঢঙ শুরু করেছেন! বউ ডাকছেন কেন?
-ডাকব না? তুমি আমার বউ লাগো না! বউকে আর কী ডাকবো?
-আপনি বাড়ি যান তো৷ বাড়ি যাচ্ছেন না কেন?
-বাড়িঘর কিছু চিনি না। আমার বউ যেখানে থাকবে আমিও সেখানেই থাকব।
মৌরি বিরক্ত হয়ে বলল,
-যা মন চায় করুন।
তাশফিন মৌরির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হেসে বলল,
-এভাবে বললে কিন্তু অনেক কিছুই করতে মন চাইবে।
মৌরির হতবাক হওয়া চাহনির দিকে তাকিয়ে তাশফিন শব্দ করে হাসতে লাগল। মৌরি নিঃশব্দে উচ্চারণ করল,
-অসভ্য লোক!
”
”
লায়লা আরিয়ানকে পাগল করে দিচ্ছে। আরিয়ান বলে দিয়েছে সে ফাইজাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। কিন্তু লায়লা ছেলেকে কিছুতেই এই মেয়েকে বিয়ে করতে দিবে না।
-মম প্লিজ। তোমাকে তো বলেছি আমি ফাইজাকে ভালোবাসি।
-চুপ কর। ভালোবাসার কী বুঝিস তুই?
আরিয়ান হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ভালোবাসার কিছু বুঝি না। কিন্তু বিয়ে আমি ফাইজাকেই করবো।
লায়লা মাথা ধরে বসে পড়লেন। ওই মেয়ে তার ছেলেকে নিশ্চয় জাদু করেছে। লায়লার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে একটা মেয়ের জন্য তার ছেলে মায়ের কথা শুনছে না।
-ওই মেয়েটা তোকে কী এমন জাদু করেছে যে, তুই অন্য কোন মেয়েকে দেখতেই পারছিস না!
আরিয়ান উদাস গলায় জবাব দিল।
-ভালোবাসার জাদু মম। তুমি বুঝবে না।
”
”
-কেন দেখা করতে বলেছ?
পিহু এসেই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল। এতগুলো দিন পর পিহুকে দেখে মাহিম বলল,
-একটু জিরিয়ে নাও। তারপরও প্রশ্ন করা যাবে।
-আমি কোন কঠিন কাজ করে আসিনি যে জিরিয়ে নিতে হবে। বলো কী বলবে।
-বসো।
-বসতেও আসিনি।
মাহিম পিহুকে দেখছে। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিহু বলল,
-ওভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য তোমার এখন অন্য মানুষ আছে।
পিহুর জেলাসি দেখে মাহিম হাসছে। পিহু বসবে না। তাই মাহিমই উঠে পড়ে বলল,
-আচ্ছা চলো।
-আমি তোমার সাথে কোথাও যাব না। যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। তুমি যে আমার সাথে দেখা করতে এসেছ এটা তোমার হবু বউ জানে?
-পিহু।
-শুনছি বলো।
-চলো বিয়ে করে ফেলি।
পিহু এই কথাটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। বেচারি এতটা চমকে গেছে যে খুশি হতেও ভুলে গেল। কতক্ষণ মাহিমের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল।
-তুমি আমার সাথে মজা করছো? তোমার এরকম ফাউল মজা কিন্তু আমি নিতে পারব না। দেখা যাবে রেগে গিয়ে তোমার মাথা ফাটিয়ে দেব।
-আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে কাজী অফিসে চলো৷ আগে তোমাকে বিশ্বাস করাই। তারপর পরিবারকে কোনো না কোন ভাবে মানিয়ে নেব।
-তুমি কি সিরিয়াস মাহিম?
-এখনও অবিশ্বাস করছো! হাহ্। মেয়ে মানুষদের বিশ্বাস অর্জন করা কঠিন কাজ।
”
”
শ্বশুরবাড়িতে তাশফিনের এক সপ্তাহ কেটে গেছে। তবুও তার বাড়ি ফেরার গরজ নেই। মৌরির চাচা যিনি তাশফিনকে সবথেকে বেশি অপছন্দ করত তার সাথেও তাশফিনের ভাব জমে গেছে। সকলে মিলে ক্যারাম খেলতে বসলে তিনিও কাছাকাছি বসেন। অনেক জোড়াজুড়ি করলে কখনো-সখনো খেলেনও। তাশফিনকে কেউ হারাতে পারে না। কিন্তু চাচা শ্বশুরকে পটাতে তাশফিন উনার কাছে ইচ্ছে করে হেরে যায়। শ্বশুরের প্রিয়পাত্র হবার জন্যও কম চেষ্টা করছে না। তাশফিন একা বসে আছে দেখে মিজানুর রহমান তার কাছে এসে বসলেন। শ্বশুরকে দেখে তাশফিন সোজা হয়ে বসল।
-ঘুমাবে না? এখনও বাইরে বসে আছো।
তাশফিন বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
-ঘরে গেলেই কী? আপনার মেয়ে কথা বলে না। বাইরেই ভালো সময় কাটছে।
মিজানুর রহমান মনে মনে হাসলেও চেহারার ভাব কঠিন করে রাখলেন।
-আপনার ভাইও আমার সাথে বসে ক্যারাম খেলে। কিন্তু আপনার মেয়ের মন গলে না।
-হার মেনে নিচ্ছ?
-এতো সহজে তো না। কিন্তু একটা কথা ভাবছি। এক সপ্তাহ ধরে এখানে থাকছি। আরও বেশি থাকলে আপনারা বিরক্ত হয়ে যাবেন না তো?
মিজানুর রহমান উঠে পড়লেন। রাত হয়েছে ঘরে যাও কথাটা বলে রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন। তাশফিন মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-যেমন মেয়ে তেমন বাপ!
মুখ অন্ধকার করে তাশফিন ঘরে গিয়ে হাজির হলো। মৌরি ফোনে হেসে হেসে কার সাথে যেন কথা বলছে। তাশফিন ভেতর থেকে জ্বলে গেল। তাশফিনকে দেখিয়েই মৌরি ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগল,
-আমার বিয়ে হয়ে গেছে! দূর এই কথা তোমাকে কে বলেছে? আমার বিয়ে হলে তুমি দাওয়াত পেতে না? হ্যাঁ রে বাবা, সবই গুজব। আমি এখনও পিওর সিঙ্গেল।
তাশফিন কপাল কুঁচকে কোমরে হাত দিয়ে মৌরির দিকে তাকিয়ে আছে। জামাইকে সামনে রেখেও বলছে আমি পিওর সিঙ্গেল। তাশফিনও কি কম? মৌরির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে বলল,
-আহ বউ! রোমান্স করার টাইমে তুমি কার সাথে এত কথা বলছো? ফোন রেখে আমার বুকে আসো। মানুষ বড্ড জ্বালায়।
না চাইতেও মৌরিকে কল কেটে দিতে হলো। হাত থেকে ফোন রেখে রাগী চোখে তাশফিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
-আপনি কি আমাকে কোথাও শান্তি দিবেন না?
-তুমি আমাকে শান্তি দিচ্ছ? নিজের রুম, বেড ছাড়া আমি ঘুমাতে পারি না। তবুও তোমার জন্য এক সপ্তাহ ধরে এখানে পড়ে আছি। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধিয়ে মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া তো দূর দেখাও করছি না। চব্বিশ ঘণ্টা তোমার চোখের সামনে ঘুরঘুর করছি। কিন্তু তুমি আমাকে পাত্তাই দিচ্ছ না। ভালোয় ভালোয় বলছি, কাল আমার সাথে বাড়ি ফিরবে। নইলে তোমাকে কিডন্যাপ করে বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাব। যেখানে আমাদের ঠিকানা কেউ জানবে না। তুমি আমাকে ভালোবাসো এটা আমিও জানি। এখন স্বীকার করো আর না করো। আমার সাথেই তোমাকে থাকতে হবে।
-আমি আপনার সাথে কেন থাকব?
-কারণ তুমি আমার বউ।
-কবুল বলেছিলেন?
এই প্রশ্নে তাশফিন কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলো। তারপরই মৌরির হাত ধরে টেনে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে সবাইকে ডাকতে লাগল,
-শ্বশুর আব্বা, শাশুড়ী মা। কাকা-কাকী, মাহিম সবাই বেরিয়ে আসো। কাজী ডাকো। আজ রাতেই আবার বিয়ে করবো। কবুল না বলে ভুল করেছিলাম। তাই এবার তিন বারের জায়গায় তিনশো বার কবুল বলবো। তবুও বউ ছাড়বো না।
-কী করছেন! হাত ছাড়ুন। পাগল হয়ে গেছেন?
-কবুল কবুল কবুল।
-আমার হাত ছাড়তে বলছি। আপনি কবুল বলছেন কেন?
-কবুল কবুল কবুল। যতক্ষণ স্বীকার না করবে তুমি আমার বউ ততক্ষণ আমার মুখ থেকে কবুলই বের হবে।
সমাপ্ত