শ্রাবণের মেঘ শেষ_পর্ব(২৮)

0
1911

#শ্রাবণের_মেঘ?
#শেষ_পর্ব(২৮)
#Tabassum_Kotha

নীল তার নিজের আর কথার কাপড় গুছিয়ে কথার হাত ধরে নিচে নামতে শুরু করলো।

— নীল আমরা বাবাকে বোঝাতে পারি, আমাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে পারি। বাবা আমাদের রাগের মাথায় যেতে বলেছেন, আমরা তো তার রাগ ভাঙাতে পারি!

— যদি রাগ ভাঙাতে পারতাম তাহলে কি চেষ্টা করতাম না বল! বাবা অনেক রাগি সেটা আমি আগেই জানতাম।

— শেষ চেষ্টা করেই দেখি না!

— জানি না!

নীল কথার হাত ধরে সিড়ি বেয়ে নেমে সদর দরজার ঠিক সামনে চলে এসেছে। পাশেই নয়নতারা বেগম বসে আহাজারি করছেন। তার একমাত্র ছেলে, তার কলিজার টুকরা তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তায়েবা আর তানিয়া এতোক্ষণ তার বাবাকে বোঝাচ্ছিল নীল কে বাড়ি থেকে না তাড়াতে। কিন্তু নজরুল সাহেব তার নির্ণয় থেকে এক চুলও নড়ে নি।

.
কথা একবার নজরুল সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইতে যাবে, কিন্তু নীল হাত টেনে আটকে ধরে কথাকে। চোখের ইশারায় সে বোঝায় কোনো লাভ হবে না।
আর কোনো উপায় না পেয়ে নীল আর কথা সদর দরজার দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে।

তারা বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে নজরুল সাহেব পিছন থেকে ডেকে উঠেন,
— নীল! আমি তোমাকে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছি। আমার বউমা আর দাদাভাই কে নিয়ে যাচ্ছো কেনো?

নজরুল সাহেবের কথায় নীল খানিকটা অবাক হয়ে কথার হাত ছেড়ে দেয়। নজরুল সাহেব বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে আবার বলতে শুরু করেন,

— আমার বউমা আর দাদাভাই কোথাও যাবে না। আমার বংশের প্রথম নাতি নাতনি আসতে চলেছে। আর সে কি না তোমার সাথে সাথে রাস্তায় ঘুরবে! সে তো আমি হতে দিতে পারি না। এ বাড়ি থেকে তুমি একা যাবে।

নজরুল সাহেবের কথায় নীল হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না সে কি করবে!

নয়নতারা বেগম স্বামীর কথা শুনে মনে হলো কান্নার বেগ আরও বাড়িয়ে দিলেন। কথার জন্য নজরুল সাহেবের এতো দরদ অথচ নিজের সন্তানকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন!

.
কথা নীল এর হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে ধীর পায়ে নজরুল সাহেবের সামনে এসে দাড়ালো।

— বাবা আপনার বউমা যে তার স্বামীকে ছাড়া এই বাড়িতে থাকতে পারবে না! ভুল যা করার আমরা দুজনে করেছি, শাস্তিও তো দুজনেরই পেতে হবে।

— আমি আমার নাতি নাতনির কষ্ট হতে দিতে পারবো না। তাই তোমরা এখানেই থাকবে। নীল যাবে।

— আপনার নাতি নাতনি তাদের বাবাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে! আর আপনিই বা আপনার বড় ছেলেকে ছাড়া কিভাবে থাকবেন?

নজরুল সাহেব কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলেন, হয়তো কিছু একটা চিন্তা করছেন।

— বাবা আমরা ভুল করেছি, আমাদের কি একবার ক্ষমা করা যায় না? আমাদের ক্ষমা করে দিন বাবা, নিজেদের থেকে দূর করবেন না আমাদের। সন্তান ভুল করলে বাবা মা তাকে সঠিক পথ দেখায়। নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে দিলে ভুল টা কিভাবে শুধরাবো আমরা? একটা সুযোগ দিন আমাদের বাবা। (কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে কথা দম নিলো)

নীল এখনও লাগেজ হাতে আগের ভঙ্গিতেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নজরুল সাহেব কিছুক্ষণ বসে থেকে দাড়িয়ে নীল এর কাছে গেলেন। আশ্চর্যজনক ভাবে নীল কে জরিয়ে ধরলেন নজরুল সাহেব। বাবার এভাবে জরিয়ে ধরায় অনুশোচনায় নীল এর দুচোখ পানিতে ভরে যায়।

— আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা। একটা সুযোগ দেও নিজের ভুলগুলো শুধরানোর। নিজের থেকে দূর করো না বাবা। অন্য কোনো শাস্তি দাও। তোমাদের থেকে দূর হয়ে যে আমরা ভালো থাকতে পারবো না।

— আমি তোমাদের চাইলেও শাস্তি দিতে পারবো না নীল। শতো অন্যায় করলেও দিন শেষে তোমরা আমাদেরই সন্তান। যাও ঘরে যাও।

নজরুল সাহেব রূপা কে ডেকে লাগেজ নীল এর ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। লাগেজের সব জিনিস গুছিয়ে রাখার জন্য। নয়নতারা বেগম ছেলেকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করা শুরু করে দিলেন।

— মা কাঁদছো কেনো? (নীল)

— আজকে মনে হয়েছিল আমার কলিজার টুকরা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছি নীল আমাকে মাফ করে দে বাবা। মুনতাহার মা কে কথা দিয়েছিলাম যে মুনতাহাকে তোর বউ বানাবো। এজন্যই এতোকিছু করেছিলাম তোকে আর কথাকে আলাদা করতে। কথা! আমাকে ক্ষমা করে দে মা। তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি। (হাত জোর করে নয়নতারা বেগম কথার দিকে এগিয়ে গেলেন)

কথা এগিয়ে গিয়ে নয়নতারা বেগমের হাত চেপে ধরলেন,
— ছিঃ মা এসব কি বলছেন। আপনি আমার মা, আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন এটা তো হতে পারে না। আমার আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমার জন্যই নীল কে সবার কাছে মিথ্যা বলতে হয়েছে।

— না বউমা। তোমার কোনো দোষ নেই।

— ঠিক বলেছিস নয়ন। ছোটো মানুষ ওরা। না বুঝে যেই ভুলটা করেছে সেটা তো আর পাল্টানো যাবে না। তবে সব ভুলে নতুন করে সব শুরু করা যাবে। (তাহেরা বেগম)

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
” নিতু তুমি কি আগে থেকে জানতে কথা আর নীল এর সম্পর্কের ব্যাপারে?” — কাব্য।

নিতু কিচেনে কাচের গ্লাস পরিষ্কার করছিল। কাব্য এর আকস্মিক প্রশ্নে তার হাত থেকে কাচের মেঝে তে পরে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যায়। খান বাড়িতে কাব্য এর রাগ দেখে ভীষণ ভয়ে আছে নিতু। এখন যদি সে কাব্য কে বলে দেয় সবকিছু সে জানতো তাহলে কাব্য কিভাবে রিয়েক্ট করবে কে জানে!

কাব্য কর্কশ কন্ঠে আবারও জিজ্ঞেস করে,
— উত্তর দিলে না যে! তুমি কি জানতে ওদের সম্পর্কের কথা?

নিতু আমতা আমতা করতে করতে না সূচক উত্তর দেয়। কিন্তু তার কপাল বেয়ে পরে যাওয়া চিকন ঘাম কাব্য এর চোখ এড়ায় নি।

— সত্যি করে বলো নিতু। তুমি সব জানতে তাই না! (নিতুর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে)

কাব্য এর ধমকে নিতু ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। কম্পিত কন্ঠে সে বললো,
— আমি জানতাম কথা ভাইয়াকে ভালোবাসে কিন্তু তারা যে বিয়ে করেছে সেটা জানতাম না।

কাব্য নিতুর হাত টা ছেড়ে দিয়ে বললো,
— তোমরা প্রত্যেকে আমাদের ঠকিয়েছো। তুমি, তোমার ভাই এমনকি আমার নিজের বোনও।

— বিশ্বাস করুন আমি ওদের প্রেম বা বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। শুধু জানতাম কথা ভাইয়াকে,,

— থামো। আর কিছু শুনতে চাই না। অনেক শুনেছি আর অনেক দেখেছি।

— আমার কথাটা তো শুনুন।

— আর কি শোনার বাকি আছে। তোমার ভাই আমার বন্ধুত্বকে ঠকিয়েছে। আর আমার আপন বোন, আমার রক্ত আমার সাথে বেইমানি করেছে। এতোকিছুর পর ওদের ক্ষমা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

— আপনি আমার কথাটা তো শুনুন। মাথাটা একটু ঠান্ডা করুন।

— আজকের পর থেকে কথা আর নীল এর সাথে তোমার কোনো ধরনের সম্পর্ক আমি মেনে নিতে পারবো না। আমি নিজেও ওদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবো না। কথার জন্য আমাকে খান বাড়িতে সবার সামনে অপমান হতে হয়েছে। ও বাড়ির জামাই আমি। তবুও সবার কাছে আমাকে ছোট হতে হয়েছে।

— এসব কি বলছেন কাব্য! আমার ভাইয়া আর ভাবির সাথে সম্পর্ক রাখতে মানা করছেন?

— তুমি যদি ওদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখো তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও। আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দাও।

— কাব্য! আপনি কি বলছেন এসব। আপনি আমাকে আমার ভাই আর স্বামীর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বলছেন?

— হ্যাঁ। এ বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।

কাব্য নিতুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেখান থেকে চলে গেলো। নিতু কিচেনের মেঝেতে হাটু ভেঙে নিচে বসে কান্না শুরু করে দিলো।

.

কিশোর সাহেব আর কলি বেগম খান বাড়িতে এসেছেন অনেকক্ষণ হয়েছে। নজরুল সাহেব আর তাহেরা বেগমের সাথে কথা বলে তাদের রাগ অনেকটাই মাটি হয়ে গেছে। যদিও তারা এ বাড়ি ভীষণ রাগ আর কষ্ট নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু এখন তারা তাদের অনাগত নাতি-নাতনি নিয়ে মজার আলাপে মত্ত হয়েছেন। কাব্যকে খান বাড়িতে যাওয়ার জন্য নজরুল সাহেব আর কিশোর সাহেব অনেক বার বললেও সে মানা করে দেয়। স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে যেতে পারে নি।

.
তানিয়া আর তায়েবা কথার ঘরে বসে আছে আর নয়নতারা বেগম নিজে হাতে কথাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। সারাদিনের ধকলে কথার খাওয়াই হয় নি। কথার মুখে খাবার পুরে দিচ্ছেন আর রাগারাগি করছেন।

— তুই না খেয়ে কান্না করিস সারাদিন। এদিকে আমার দাদুভাইয়ের কিছু হলে দেখিস তোর কি করি।

— মা পেট ভরে গেছে আর খেতে পারবো না।

— চুপচাপ খা। আমার নাতি নাতনিকে কি রোগা বানাতে চাস নাকি?

নয়নতারা বেগম আরেক লোকমা ভাত কথার মুখে ঢুকিয়ে দিলেন।

.
.
.
.
.
.
.
” কথা তোর সাথে আমি আর কোনো কথাই বলবো না।”
ঘরে ঢুকতেই নীল রাগি গলায় কথাটা বললো।

কথা বিছানায় উপুর হয়ে মোবাইলে গেম খেলছিল। নীল এর কথায় অবাক হয়ে তার দিকে ফিরে তাকালো কথা।

— কথা বলবেন না কেনো এই কিউটি কথার সাথে?

— তুই আমাকে একবারও বলিস নি যে তুই প্রেগন্যান্ট আর আমি বাবা হতে চলেছি!

— আরেহ কিভাবে বলবো আমিও তো কালকেই সন্দেহ করেছিলাম। আর আজ শিউর হলাম।

— তো কালকেই তো বলতে পারতি।

— ভুলে গিয়েছিলাম।?

— কিহ! তুই বাবুর মা হতে চলেছিস আর সেটা তুই ভুলে গিয়েছিলি!

— হ্যাঁ তো!

— ছাগলি!

— আর আপনি ছাগলির ছাগল।

— সর সর সাইড দে।

— কেনো? কি হলো?

— আমি আমার বাবুর সাথে কথা বলবো।

— আরেহ মাথার তার ছিড়ে গেলো নাকি? বাবু তো মাত্র এক মাসের!

— তোর সমস্যা টা কি বলতো? আমার বাচ্চার সাথে আমি কথা বলবো!

নীল কথার শাড়ির আঁচল সরিয়ে পেট উন্মুক্ত করে কোমড় জরিয়ে ধরে তার বাবুর সাথে কথা বলা শুরু করে দিলো। কথা এদিকে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে নীল এর কান্ড দেখে। বেশ কিছুক্ষণ নীল এভাবেই তার বাচ্চার সাথে কথা বললো। কথা বলা শেষে কথার দিকে মুখ ঘুরাতেই দেখে কথা ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে।

নীল হালকা হেসে তার ঠোঁট দুটো দিয়ে কথার ঠোঁট চেপে ধরে। এক হাত দিয়ে কথার কোমড় চেপে ধরে নীল ঘুমন্ত কথাকে অনবরত চুমু খাচ্ছে। মিনিট তিনেক এভাবে থাকার পর কথার দম ফুরিয়ে গেলে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই সে নিজেকে নীল এর বাহুডোরে আবিষ্কার করে। আর নিজের ঠোঁট দুটো নীল এর ঠোঁটের দখলে।

কথা কিছুক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। তবুও নীল এর কোনো হেলদুল না দেখলে হাল ছেড়ে দেয়। নীল কে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে নীল এর ভালোবাসায় সাড়া দেয়।

?

?

পরদিন সকালে কাব্য অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে ঘর থেকে বেরুতেই নীল আর কথাকে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে। এতোক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও কথা আর নীল কে দেখে মুহূর্তেই কাব্য এর চোয়াল শক্ত হয়। কাব্য এর পিছন পিছন নিতু ঘর থেকে বেরিয়ে নীল আর কথাকে দেখে ঘাবড়ে যায়। কাল রাতে কাব্য এর বলা প্রতিটি কথা মনে পরলে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে নিতুর।

.
কাব্য অফিসের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে গেলে কথা ছুটে এসে কাব্য কে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। কাব্য অনেক চেষ্টা করেও কথাকে ছাড়াতে না পেরে এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেয়। কথাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে কাব্য স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে।

— প্লিজ ভাইয়া এভাবে রাগ করে থাকিস না। আমি তোর রাগ সহ্য করতে পারি না জানিস তো! ক্ষমা করে দে আমাদের। প্লিজ।

কথার কান্না সহ্য করতে না পেরে কাব্যও কথাকে জরিয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।

— চাইলেও তোর সাথে রাগ করে থাকতে পারি না কেনো বলতো! ভেবেছিলাম আর কখনও কথা বলবো না তোদের সাথে। কিন্তু ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল খুব ভালোই করতে পারিস তুই!

— ভাইয়া তুই আমাদের ক্ষমা করেছিস তো?

— ক্ষমা না করলে কি আর কথা বলতাম? বাবুর বাবা তুই ওইখানে কি করছো? এখানে আসো তোমার চাঁদমুখ খানা একটু দেখি।

নীল গিয়ে কাব্যকে জরিয়ে ধরলো। দুই বেষ্টফ্রেন্ড তাদের মধ্যাকার সব সমস্যা হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে শেষ করে নিলো।

নিতু কথাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে কান মলা দিলো তাকে নীল আর কথার বিয়ের কথা না বলার জন্য।

— সরি রে পেত্নি। তোর ভাইয়ার দোষ সব। কাউকে বলতে দেয় নি আমাকে।

— হুহ পেত্নি।

— হুহ।

— আচ্ছা বলতো আমি বাবুর ফুপি আম্মু হবো নাকি মামি??

— ভাববার বিষয় তো?

কথা আর নিতু সারা দিন চিন্তা করেও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলো না।









গোধূলী লগ্ন শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পরেছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাছপালা ভিজে পানি জমে আছে। সূর্যের আলো পরাতে পানির ফোঁটাগুলো মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করছে। নদীর পাড় বেয়ে আঁকাবাকা হয়ে চলে গেছে দীর্ঘ পথ। এক পাশে বড়বড় গাছপালার ছায়া লম্বা হয়ে পরেছে। রোদের আড়ালে মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে।

সেই পথ ধরে হেটে যাচ্ছে নীল আর কথা। কিছুক্ষণ আগেই তারা কিশোর সাহেবের বাড়ি থেকে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। কথা বায়না ধরাতেই পায়ে হেটে যাচ্ছে তারা। আজ সকালেই নীল কথার জন্য একটা নীল শাড়ি আর নীল কাচের চুড়ি এনে দিয়েছে। সেই শাড়িটাই কথা পরে আছে। সাথে কাচের চুড়ি আর দুচোখ ভর্তি কাজল। কথার খোঁপা থেকে কাটা টা খুলে দিলো নীল।

দমকা বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে কথার। কখনও বা মুখে আসছে। নীল মুগ্ধ নয়নে তার মায়াবতীকে দেখে যাচ্ছে। অবাক হয়ে চিন্তা করছে নীল, এই মায়াবতীকে সে পিচ্ছি বলতো, ছ্যাঁচড়া বলে টিজ করতো। সেই পিচ্ছি আজ তার অনাগত সন্তানের মা। তার মায়াবতী তার জীবন আজ। বাকি সব কথা বাদ দিলেও একটা কথা নীল জানে। মৃত্যুর পরেও সে তার কথাকে তার সাথে চায়। কথা শুধুই নীল এর। নীল থেকে কথাকে আলাদা করার মতো শক্তি একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কারও নেই।

— ওভাবে কি দেখছেন? (কথা)
নীল এর ভাবনার সুঁতোয় টান পরে কথার ডাকে।

— আমার জীবনকে! (নীল)

— হিহিহি। কি যে বলেন না!

নীল কথার হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো,
— অনেক ভালোবাসি তোকে। আমার বাবুর আম্মু!

কথা নীল কে জরিয়ে ধরলো।
— আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি যমরাজ।

— কিহ আমি যমরাজ?

— হ্যাঁ আমার যমরাজ!

ঠিক তখন আকাশে মেঘেরা গর্জন করে মুশুলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। কথা জেদ করে বৃষ্টির মধ্যেই নীল এর হাতে হাত রেখে হাটা ধরলো।
নীল শক্ত করে কথার হাত ধরে রেখেছে। #শ্রাবণের_মেঘেরা তাদের দায়িত্ব পালন করে বর্ষণ ঘটাচ্ছে। আর দুটো ভালোবাসায় শিক্ত হৃদয় বৃষ্টিবিলাস করছে।
কথা গুণ গুণ করে গেয়ে চলেছে,



আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি
– তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।??

——————-
শ্রীকান্ত আচার্য


—– সমাপ্ত —–

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে