শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২২

0
1288

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২২
#Tabassum_Kotha

” আপনার প্রতি আমার বিশ্বাসকে আপনি নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করেছেন।”
নীল এর হাত থেকে নিজেকে এক ঝটকায় সরিয়ে নিলো কথা।

” এভাবে বলিস না কথা। মুনতাহা আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আর এতোদিন আমাদের বিয়ের কথাটা লুকিয়েছিলাম শুধু ঝামেলা যেনো না সে জন্য। কিন্তু তুই আমাকে একটু সময় দে আমি সবাইকে আমাদের বিয়ের কথা বলে দেবো।”

কথা নীল এর সব কথা উপেক্ষা করে দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। নিতুর কাপড়ের ব্যাগ টা না নিয়েই কথা খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নীল কথার পিছন পিছন ছুট লাগালেও কথাকে ধরতে পারে না।

.
কথার মনের মতো আকাশেও আজ মেঘ জমে আছে। চারদিকে ঠান্ডা ঝড়ো বাতাস শুরু হয়ে গেছে। যেকোনো সময় আকাশের বুক চিড়ে জল রাশি নেমে এসে পৃথিবীকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে পাগলের মতো ছুঁটে চলছে কথা। যেই ভালোবাসার জন্য সে এতোকিছু সহ্য করেছে, সেই ভালোবাসা তাকে এভাবে ঠকাবে! এটাতো সে কখনও কল্পনাও করে নি। নীল কে ভালোবেসেই দুইবছর সে সব অপমান অবহেলা সহ্য করেছে। সেই নীল তাকে এভাবে ঠকালো! ভাবতেই ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে তার। কথার দুচোখে যেনো শ্রাবণের বর্ষণ হচ্ছে। কষ্টরা অশ্রুকণা হয়ে ঝরে পরছে তার চোখ বেয়ে। তার ভালোবাসা তো নিস্বার্থ ছিল,, তাহলে তার ভালোবাসা পরিণতি বিশ্বাসঘাতকতা কেনো হলো? তার ভালোবাসায় কি এমন কমতি ছিল!!

.
গুড়ুমগুড়ুম শব্দ করে, আকাশ কাপিয়ে বজ্রপাতের সাথে ঝুম বৃষ্টি আশেপাশের উত্তপ্ত পরিবেশকে ভিজিয়ে শান্ত করে দিচ্ছে। কিন্তু কথার মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। তার মনের সেই কষ্টের ঝড় টা আগের মতোই তীব্র গতিতে বয়ে যাচ্ছে। এই কষ্টের কি কোনো শেষ আছে? কথার জীবন কি এখানেই থমকে যাবে! নীল কে ছাড়া বেঁচে থাকা কথার পক্ষে সম্ভব নয়, আবার নীল এর ধোঁকা কেও মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। কি করবে সে এখন, কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। নিশ্বাস নেওয়াটাও কেমন কষ্টকর মনে হচ্ছে তার কাছে।

বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা কথাকে ভিজিয়ে একাকার করে দিচ্ছে। আকাশে মেঘ জমে এমন অন্ধকার অবস্থা বিরাজ করছে যে বোঝার ক্ষমতা নেই সময় টা বিকেল নাকি সন্ধ্যা! কথা ভেজা অবস্থায় নদীর পাড় বেয়ে গন্তব্যহীন হেটে যাচ্ছে। আশে পাশের কোনো কিছুর দিকে তার নজর নেই। কি হচ্ছে কোনো হুশ নেই! বারবার চোখের সামনে নীল আর মুনতাহার একে অপরের বুকের উপর থাকার দৃশ্যটাই ভেসে উঠছে।

” কথা তুমি ভিজছো কেনো?”
পিছন থেকে নীরব কথার দিকে উৎসুক কিন্তু খানিকটা চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছাতা হাতে দাড়িয়ে আছে সে।

নীরবের ডাকে কথার হুশ ফিরে আসে। নিজের দুঃখে এতো মুশগুল ছিল যে, সে যে বৃষ্টিতে ভিজছিল এটা তো সে খেয়ালই করে নি। কথা নীরবের দিকে একনজর তাকিয়েই বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কেননা নীরব একদৃষ্টিতে কথার শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে।

এতোক্ষণে কথার খেয়াল হলো যে সে একটা সাদা চুড়িদার পরে আছে যেটা বৃষ্টিতে ভেজার দরুণ তার শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। নীরবের লালসা ভরা দৃষ্টি কথা ভালোই বুঝতে পারছে। কথার এখন আরও বেশি কান্না পাচ্ছে। এতোদিন নীল তাকে ব্যবহার করেছে আর এখন নীল এর ভাই তার দিকে কুনজর দিচ্ছে।

” চোখ উপরের দিকে তোলেন নীরব ভাইয়া। ছিঃ! আপনি এতো খারাপ আগে জানা ছিল না আমার। আর কখনও আপনি আমার সামনে আসবেন না।”

” আরেহ কথা শুনো তো! আই এম সরি আসলে এভাবে তাকানো আমার ঠিক হয় নি কিন্তু ট্রাষ্ট মি আমি খারাপ চোখে তাকাই নি।”

” আমি অবুঝ শিশু নই। এতোটুকু বোঝার বয়স আমার হয়েছে।”

কথা আর কিছু না বলে সেখান থেকে বাড়ির পথে হাটা ধরলো। নীরব পিছন থেকে অনেক বার ডাকলেও কথা আর সাড়া দেয় নি। এতোটা নিচু মনের মানুষের সামনে দাড়িয়ে থাকার মানে হয় না।

.
পরনের ওড়না টা শরীরে পেচিয়ে নেয় কথা। আমাদের সমাজে ভদ্রতার মুখোশ পরে অনেক নরপশু ঘুরে বেড়ায়। কখন এই মুখোশধারীদের ভিতরকার অমানুষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে কে জানে! এদের অমানুষী কাজকর্মের ফলও মেয়েদেরই দিতে হয়। কষ্টদায়ক হলেও এটাই সমাজের বাস্তবিক চিত্র। সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সহজ নয় তাই নিজেদের সচেতন থাকা উচিত।

?

?

দিন শেষে রাত এর আঁধারে ঢেকে গেছে ধরা। বিকেলে শুরু হওয়া বৃষ্টি এখনও আগের মতোই ঝরছে। হয়তো আজ আকাশেরও মন ভেঙেছে, তাই তো এতো অশ্রু বর্ষণ করছে।



তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে,
চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম।

আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি
– তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।



” খুব সুন্দর গান করিস তো তুই!”
কাব্য এর হঠাত করা উক্তিতে চমকে পিছন ফিরে তাকায় নিতু।

ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে ধরতে ধরতে গান টা গাইছিল নিতু। হঠাত কাব্য এসে পরাতে বেশ লজ্জার মুখে পরে যায় সে।

” ওই একটু আধটু আর কি! আপনি কখষ এলেন?”

” একটু আগেই। তোর গান টা শুনলাম। এমন বৃষ্টি ভেজা দিনে এই ধরনের গান এক অন্যরকম ভালোলাগার দোলা দেয় মনে।”

” আপনার ভালো লেগেছে আমার গাওয়া গান?”

” ভালো না লাগার কি আছে? আর তুই বারবার আপনি বলছিস কেনো? আগে তো তুমি করে বলতি!”

” আগে কি আপনি আমার স্বামী ছিলেন? এখন আপনি আমার স্বামী, তাই!”

” এসব ফরমালিটির কোনো প্রয়োজন নেই নিতু। যেই জিনিসটা আমি তোকে দিতে পারবো না সেটার জন্য তোকে ফোর্স করবো না। সো ডোন্ট ডু দিস!”

” আমি এসব করছি কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনার আমাকে এখনই ভালোবাসতে হবে এমন তো নয়। আপাতত আমার একার ভালোবাসা আমাদের দুজনের জন্য যথেষ্ট।”

” আমি দুঃখিত নিতু!”

” কেনো?”

” তোকে তোর স্ত্রী হওয়ার অধিকার দিতে পারছি না।”

” আমার কাছে না অনেক সময় আছে।”

” মানে? কিসের সময়?”

” আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময়! আপনি জানেন, অপেক্ষা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর অনুভূতি! আর আপনার জন্য আমি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অনেক্ষা করতে প্রস্তুত আছি।”

কাব্য কিছুক্ষণ নিতুর দিকে তাকিয়ে থেকে ঘরে চলে গেলো। নিতু কাব্য যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু ম্লান হেসে পুনরায় বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা শুরু করলো। সেই সাথে তার কন্ঠে গুনগুন করে উঠলো,
.
.
আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি
– তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম!!!!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে