শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২০

0
1365

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২০
#Tabassum_Kotha

” কাকে পাগল করার জন্য শাড়ি পরেছিস হ্যাঁ?”
কথার ঘরের ব্যালকোনির কাচে হেলান দিয়ে কথাটা বললো নীল।

ঘরে দ্বিতীয় একজন ব্যক্তির উপস্থিতি আগেই টের পেয়েছিল কথা। সেই ব্যক্তিটি যে নীল এটাও আন্দাজ হয়েছিল কথার, তাই তো নীল কে সামনে দেখে খুব একটা অবাক সে হয় নি।

হাতের কাজল টা ড্রেসিং টেবিলে রেখে শাড়ির আঁচল টা কোমড়ে গুজে দিয়ে নীল এর দিকে ঘুরে দাড়ালো কথা।

কথাকে দেখে নীল মুখ হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম নীল কথাকে এভাবে শাড়িতে দেখছে। তানিয়ার হলুদে দেখেছিল কিন্তু সেদিন রাগারাগিতেই সময় পার করেছে দুজন। সাজবিহীন কথাকে দেখে নীল এর মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম।
সদ্য গোসল করে আসার কারণে ভেজা চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি মেঝেতে পরছে।

শাড়ি কোমড়ে গুজে দেওয়ায় কথার ফর্সা পেটের অনেকটা বেরিয়ে আছে। যেটা নীল এর চোখ এড়ায় নি।

কেমন ঘোর লাগানো পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে চারপাশে। নীল এর চোখে নেশা ধরে যাচ্ছে কথার সৌন্দর্যের। তবুও নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছে সে। কোনো একটা সংকোচ কাজ করছে নীল এর মনে যার কারণে নীল কথার দিকে আগাতে পারছে না।

নীল এর অবস্থা কথা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। বিয়ের এতোদিন হয়ে গেছে অথচ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নীল কথার কাছে আসে নি। নিশ্চয়ই নীল এর মনে কোনো সংকোচ কাজ করছে।

কথা নিজে থেকেই একটু এগিয়ে এসে নীলের শরীর ঘেসে দাড়ালো। কথা নীল এর এতো কাছাকাছি আসাতে নীল এর বেশ অস্বস্তি হচ্ছে।

কথার হাত ধরে কথাকে নিজের কাছে থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় নীল বললো,
— আচ্ছা কথা অনেক রাত হয়েছে! তুই ঘুমা, আমি যাই। গুড নাইট।

নীল এর কথায় কথা ভ্রুঁ কুচকে বললো,
— যাই মানে কি!

— তোকে দেখতে এসেছিলাম। দেখা হয়ে গেছে তাই যাই আর কি!

— কোথাও যাচ্ছেন না আপনি। আমার সাথে আজ এখানেই থাকবেন।
কথাটা বলতেই কথা আবার নিজেকে নীল এর শরীরের সাথে চেপে ধরলো।

— ককথা! ততুই সসর আমার সামনে থেকে। এতো কাছে আসছিস কেনো?

— কেনো আমি তোমার কাছে এলে কি সমস্যা? আমি না তোমার বউ।

— তা তো সব ঠিক আছে কিন্তু তুই এতো পাতলা শাড়ি পরেছিস কেনো? (অনেকটা কাঁপতে কাঁপতে কথাটা বললো নীল)

নীল কে ছেড়ে দিয়ে নীল এর কলার চেপে ধরে বাজখাই গলায় চেচিয়ে উঠলো কথা,
— এই একই ধরনের শাড়ি যখন মুনতাহা পেত্নি পরে তখন তো দেখতে খুব মজা লাগে। আর এখন আমি পরেছি, তোমার ঘরের বউ পরেছে বলে ভালো লাগছে না! নিজের বউ ভালো লাগে না, আর অন্য মেয়েদের সাথে লুতুপুতু করিস! জানে মেরে ফেলবো তোকে আমি!

কথার এহেম কান্ডে নীল ভ্যাবাচেকা খেয়ে কথার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও এই মুহূর্তে কথার চোখে-মুখে অসীম রাগ ছাড়া আর কিছুই নেই।
তবুও এই পরিস্থিতিতে নীল এর চোখ কথার ঠোঁটে আটকে যাচ্ছে।

কথার লিপষ্টিক হীন গোলাপী ঠোঁট দুটোর দিকের কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নীল আচমকা কথার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে।

ঝগড়া চলাকালীন এভাবে কিস করে বসবে নীল এটা কথার ধারণার বাইরে ছিল। কথা নিজেকে ছাড়ানো জন্য হাত পা ছোড়া শুরু করলে নীল এক হাতে কথার কোমড় আকড়ে ধরে, অপর হাত দিয়ে কথাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। তবুও কথা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করতেই থাকে। ঝগড়ার মাঝে বাঁধা দেওয়াতে কথার আরও বেশি রাগ হয়, যার কারণে সে নীল কে নিজের কাছে থেকে সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে।
বেশকিছুক্ষণ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে দেয় কথা। এখন তার রাগ অনেকটা কমে গেছে। এখন অবশ্য ভীষণ লজ্জা লাগছে কথার, কারণ নীল এর হাত কথার পিঠে বিচরণ করছে। কথা চোখ বন্ধ করে শুধু সেই মুহূর্ত টা উপভোগ করছে।

আরও কিছুক্ষণ পর নীল কথার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কথাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে অগ্রসর হয়। কথা এখনও লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছে।

কথাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নীল তার পরনের শার্ট টা খুলে বিছানার উল্টো দিকে ছুড়ে মারলো।
কথার নিশ্বাস খুব দ্রুত উঠানামা করছে, লজ্জায় সে নীল এর দিকে তাকাতে পারছে না। এখনও চোখ বন্ধ করেই আছে।

নীল নিজের সমস্ত ভর কথার উপর ছেড়ে দিয়ে কথার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। উন্মাদের মতো চুমু খাচ্ছে নীল কথার গলায়-ঘাড়ে, গালে। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা কামড়ও দিচ্ছে। কথা শক্ত করে নীল কে আকড়ে ধরে আছে, দুটি মন ডুব দিচ্ছে ভালোবাসার সাগরে!

?

?

?

” নিতু আমার পা টা খুব ব্যথা করছে টিপে দে তো!”
ঘরে ঢুকতেই কাব্য এর এমন কথায় বেশ অবাক হয় নিতু।

একটু আগে কাব্য সিগারেট নিয়ে ব্যালকোনিতে চলে গেলে নিতুর বাসররাত এর স্বপ্নে পানি পরে যায়। একরাশ রাগ মনে নিয়ে নিতু কাব্য এর পিছন পিছন ব্যালকোনিতে যায়। সেখানে গিয়ে সে দেখে, কাব্য মনের সুখে স্মোক করছে আর ধোয়া আকাশের দিকে ছুড়ছে। কাব্য কে সরাসরি কিছু না বললেও মনে মনে একশো টা গালি দিয়ে ঘরের ভিতর চলে আসে সে।

” বিয়ের প্রথম রাত কোথায় বউ এর সাথে একটু রোমান্স করবে তা না, সে বাইরে গিয়ে ধোয়া উড়াচ্ছে। বলি কি আপনি কি বিবাহিত নাকি ব্যাচেলর? এতো সুন্দরী একটা বউ রেখে মানুষ সিগারেট হাতে নেয় কোন আক্কেলে!”

নিতু একা একা কিছুক্ষণ বকবক করে একটা শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ঘরে ঢুকতেই কাব্য এই কথাটা বলে বিছানায় বসে পা বাড়িয়ে দেয় সামনে।

নিতুকে ওয়াশরুমের দরজার কাছেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য বলে,
— কি রে এখনও ওখানে দাড়িয়ে আছিস যে! আয় কাছে আয়! পা টা টিপে দে। ভীষণ ব্যথা করছে!

নিতু কাব্য এর কথা শুনে অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে বলে,
— কি বললেন? পা টিপে দেবো?

কাব্য খুব শান্ত অথচ দুষ্টুমী ভঙ্গীতে উত্তর দেয়,
— হ্যাঁ। জলদি আয়। তুই না আমার বউ! আমার খেদমত করবি না!

— তাই বলে কি বাসর রাতে পা টিপে দিতে হবে নাকি?

— তো আর কি করবো?

— না মানে আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত কোথায় আমরা একটু রোমান্স করবো!

— এটাও তো রোমান্সই সোনা। এইটা একটু ভিন্নধর্মী রোমান্স। স্বামীর সেবা করা পূণ্যের কাজ বাছা।

— তাই বলে আজকে রাতে! বলি কি কালকে আপনার পা টিপে দেই? আজ রাতে আমরা গল্প করি, একটু রোমান্স করি!

— এটাও এক ধরনের রোমান্স বললাম না! নে পা টিপ এখন।

নিতু নাক মুখ কুচকে কাব্য এর পা টিপতে শুরু করলো। কোথায় সে ভেবেছিল তারা দুজন রোমান্স করবে! আর এখানে কি না সে পা টিপে দিচ্ছে।

স্বামীর সেবা করা ভালো কিন্তু তাই বলে বাসররাত এ এই ধরনের সেবা করতে হবে কে জানতো!

.
নিতুর অবস্থা দেখে কাব্য এর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। বেচারি কে আচ্ছা জব্দ করেছে সে। বাসর রাতে সারা রাত হাত-পা টেপাবে সে তার বউ কে দিয়ে। অবশ্য এই কাজ টা কাব্য কে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করার শাস্তি ছিল। বউ এর গায়ে তো কাপুরুষরা হাত তোলে। কাব্য শাস্তি দেবে তবে সেটা হবে ইউনিক। এই ধরনের আরো অনেক শাস্তির স্টক আছে কাব্য এর কাছে, যা ধীরে ধীরে প্রয়োগ করবে সে।
.

নিতু আধা ঘন্টার মতো কাব্য এর পা টিপে দিয়ে কাব্য এর গায়ের উপরই ঘুমিয়ে পরেছে। আর কাব্য নিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।
যদিও সে বিয়েটা নিজের ইচ্ছায় করে নি, তবুও নিতুর তো কোনো দোষ নেই। নিতুকে ভালো না বাসার কোনো কারণ তার কাছে নেই। তবুও সে তার মন কে বেঁধে রেখেছে শুধুমাত্র তানিয়ার জন্য। কিন্তু এটা তো নিতুর প্রতি অন্যায় হবে! মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে কাব্য এর। কি করবে সে!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সূর্যের প্রথম কিরণের একাংশ ব্যালকোনির কাচ ভেদ করে কথার চোখে মুখে এসে পরছে।

চোখে সূর্যের আলো পরাতে ঘুম ভেঙে যায় আমার। উঠতে গিয়ে বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করতেই চোখ খুলে নীল কে নিজের বুকের উপর পেলাম। নীল কে দেখে কাল রাতের সব ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ইশ! কাল রাতে আমরা দুজন একসাথে! ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগছে আমার। কাল রাতে আমি সঠিক অর্থে নীল এর স্ত্রী হয়ে উঠেছি। ইশ!!

নীল কে আস্তে করে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে নিচে পরে থাকা শাড়িটা কোনো মতে শরীরে পেচিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আয়নায় নিজের দিকে তাকাতে পারছি না। ভীষণ লজ্জা করছে আমার। ধ্যাত্ কি জালায় পরলাম!

.
গোসল সেরে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে কথা আর আয়নার ভিতর দিয়ে ঘুমন্ত নীল এর দিকে তাকিয়ে আছে। এখন নীল শুধু এই কথার,, আর কারো ক্ষমতা নেই নীল কে কথা এর থেকে আলাদা করার। নীল আর কথা সম্পূর্ণ রূপে দুজন দুজনার হয়ে গেছে

.
কথার ভাবনায় জগতে ছেদ ঘটে কলি বেগমের জোরে জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে।
— কথা দরজা খুল। এতো বেলা হয়ে গেছে এখনও ঘুমাচ্ছিস! তোর না পরীক্ষা! উঠ। কথা, দরজা খুল।

হঠাত করে এভাবে কলি বেগমের এসে পরায় কথা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় কি থেকে কি করবে। নীল কে কলি বেগম দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

— কথা! আমার ডাক কি কানে যাচ্ছে না? উঠছিস না কেনো? কথা!

এদিকে কথা ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার। দরজায় তার মা দাড়িয়ে আছে আর ঘরে নীল ঘুমিয়ে আছে। এখন কথা কি করবে? এখন নিশ্চিত একটা কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে!!

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে