#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_১৫
#Tabassum_Kotha
??
আম্মুর কথা শুনে আমার খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমার কাছে তো লুঙ্গি নেই। চোখ বন্ধ করে কল্পনাতে আব্বুর একটা লুঙ্গি এনে দিলাম ইচ্ছে মতো কতোক্ষণ লুঙ্গি ডান্স। আতিকা ফুপি আম্মু কে ডাকায় আম্মু আমার ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। এখন আর কল্পনা নয় এখন সত্যি নাচ হবে। বেশ কিছুক্ষণ নাচার পর ক্লান্ত হয়ে হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে বিছানার সাথে লেপ্টে গেলাম। আজ আমার নতুন এক পরিচয় হয়েছে। আজ থেকে নীলের বউ আমি। নীল আমার স্বামী। ভাবতেই কেমন সুড়সুড়ি লাগে!
.
.
.
.
চিত হয়ে শুয়ে সিলিং ফ্যানের ঘুর্ণয়ণ দেখছিলাম আর লজ্জায় লাল হচ্ছিলাম তখন টুংটাং শব্দ করে মোবাইলে একটা মেসেজ এলো। মেসেজে নাম টা দেখেই আমার ঠোঁট দুটো একাই প্রসারিত হয়ে গেলো। নীল স্যার মেসেজ দিয়েছে, যদিও আজ থেকে উনি আমার স্বামী। মেসেজ টা পেয়ে যতোটা খুশি হয়েছিলাম ওপেন করে ততোটাই হতাশ হলাম।
” জলদি পড়তে বস। একদম টাইম ওয়েষ্ট করবি না।”
এটুকুই লেখা ছিল মেসেজে। বিয়ে হয়েছে কোথায় একটু রোমান্টিক মেসেজ করবে,, তা না করে এই মেসেজ করেছে! ইচ্ছে করছে মোবাইলটা ওই নীলের বাচ্চার মাথার ওপর আঁছাড় মারি। কিন্তু এখন মোবাইল ভাঙলে আমারই লস। তাই মোবাইলটা বিছানায় রেখে দিয়ে নিজেকে পড়ার টেবিলে নিয়ে গেলাম।
?
?
রাতে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছি। আদনান ভাইয়া আমার ঠিক সামনের চেয়ারে বসে আছেন আর বারবার আঁড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। যদিও ব্যাপার টা বেশ অস্বস্তিকর তবুও মনের মধ্যে একটু শান্তি আছে ভেবে যে ফুপি আম্মু নিতুকে পছন্দ করেছেন। আর এমনিতেও আমি এখন অন্য কারো বিবাহিতা স্ত্রী। আমাকে তো আর আদনান ভাইয়া বিয়ে করতে পারবেন না।
— কিশোর, আজকে আদনানের জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছি। (আতিকা বেগম)
আতিকা বেগমের কথায় খাওয়ার মাঝেই বিষম খেলেন কিশোর সাহেব। এভাবে হঠাত করে এই ধরনের কোনো কথা শুনতে হবে তার সেটা সে ভাবে নি।
— কোন মেয়ে আপা? (কিশোর সাহেব)
— মেয়েটাকে তুই চিনিস। আমাদের কথার ছোট বেলার বান্ধবী। নাম নিতু, ভারী মিষ্টি মেয়ে। আমার জীবন বাঁচিয়েছে আজ।
আতিকা বেগমের কথায় কিশোর রহমানের হাসি মুখটা মুহূর্তেই মলিন হয়ে গেলো। আর এদিকে আদনান ভুত দেখার মতো চমকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সে তো কথাকে বউ বানানোর স্বপ্নে বিভোর। আর তার মা নাকি অন্য মেয়ে পছন্দ করে বসে আছে।
খাবার টেবিলে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে ঝরের পূর্বের নীরবতা এটা। আতিকা ফুপি যেই বম ফুটিয়েছেন, সেটার ধামাকার শব্দ কতোটা জোরে হবে কে জানে! পরিস্থিতি ক্রমেই বেগতিক মনে হচ্ছে। আব্বু খাওয়া বন্ধ করে চোয়াল শক্ত করে বসে আছেন। আমি আর আম্মু একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি। আর আদনান ভাইয়ার অবস্থা সবচেয়ে বেশি শোচনীয়। তাকে দেখে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে।
— মেয়েটাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আমি মেয়েটার সাথে কথা বলে সব খোঁজ খবর নিয়ে নিয়েছি। বলি কি কিশোর তুই একটু মেয়ের বাবার সাথে আলাপ করে দেখ। আমার আদনান তো হীরের টুকরো, এমন ছেলে তারা আর কোথায় পাবে!
— আচ্ছা আপা আমি দেখছি।
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললো কিশোর সাহেব।
আব্বু রীতিমত রাগে ফুসছেন। কোনোরকম খাবার গিলে উঠে পরলাম টেবিল থেকে। যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ হতে পারে। আমার এখানে না থাকাই শ্রেয়।
”
”
”
”
”
”
”
”
ফ্রেশ হয়ে টি শার্ট আর প্লাজু পরে ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই কেউ পিছন থেকে কোমড় জরিয়ে ধরলো। এমন আকস্মিক আক্রমণে আমি ভয়ে পুরোই ফ্রিজ হয়ে গেছি। হার্ট টাও অসম্ভব দ্রুত বিট হচ্ছে। রাত এখন কম করে হলেও দশটা বাজে। এই অসময়ে আমার ঘরে কে এভাবে আমাকে জরিয়ে ধরবে! আমি আগের ভঙ্গিতেই দাড়িয়ে আছি আর লোকটা ধীরে ধীরে আমার গলায় তার নাক ঘসছে। এতোক্ষণে লোকটার স্পর্শ আমার কাছে পরিচিত পেলো। আগুন্তকটা আর কেউ নয়, আমার স্বামী, নীল!
কথার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে নীল তার ঠোঁট জোরা সেখানে বসাতেই হালকা কেঁপে উঠলো কথা। নীলের ঠোঁট জোড়া কথার গলা আর কাঁধে বিচরণ করছে। কথা চোখ মুখ খিচে ধরে রেখেছে, হয়তো লজ্জা পাচ্ছে সে। নীল কথার টিশার্ট খানিকটা উচু করে কথার নগ্ন পেটে হাত রাখতেই কথা চট করে চোখ খুলে ফেলে। নীল কে হালকার উপর একটা ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরে দাড়ালো কথা।
লজ্জায় লাল হয়ে গেছে কথা, সেই সাথে কপালে জমা হয়েছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। মাথা নুইয়ে দাড়িয়ে আছে কথা নীল এর সামনে। কথার এই অবস্থা দেখে নীল এর খুব হাসি পাচ্ছে। নীল একটু এগিয়ে গিয়ে কথাকে কোলে তুলে নিলো। হঠাত কোলে তুলে নেওয়াতে কথা চোখ বড় বড় করে নীল এর দিকে তাকিয়ে আছে।
— ওভাবে কি দেখছিস?
— আপনি এতো রাতে এভাবে এলেন যে?
— কেনো আসতে পারি না বুঝি?
— না একদমই আসতে পারেন না।
— কেনো গো বউ ভুলে যাচ্ছো নাকি আজ আমাদের বাসর রাত!
নীল এর কথায় কথা ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।
— অ্যাঅ্যা কি বলছেন এসব? বাসররাত মানে!
— এখন কি ন্যাকা সাজা হচ্ছে? আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত। তাই তো এতো কষ্ট করে ব্যালকোনি টপকে এলাম। বাসররাত পালন করতে!
— আআপনি ককি সত্যি বববাসররাত করতে এসেছেন?
— কেনো কোনো সন্দেহ আছে নাকি?
— আমার না শরীর টা ভালো না আপনি চলে যান হ্যাঁ! আমাকে নামিয়ে দিয়ে যান!
— হুশ! যাবো না। এখন রোমান্স হবে। নিউলি ম্যারিড কাপল আমরা।
— আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আপনি চলে যান। আপনিও ঘুমান।
— আজ রাতে আর ঘুমানোর দরকার নেই।
— এই না না প্লিজ কিছু করবেন না।
নীল কথাকে খাটে শুইয়ে দিয়ে নিজের সব ভর কথার উপর ছেড়ে দিলো। কথা এখনও চোখ মুখ খিচে ধরে আছে। আর নীল মুগ্ধ নয়নে তার পরীকে দেখছে। বিয়ের প্রথম রাত নিয়ে সব মেয়েদের কতোরকম জল্পনা কল্পনা থাকে আর কথারাণী সে কিনা বাচ্চাদের মতো টিশার্ট পরে কান্না করছে! কথার মুখের দিকে তাকিয়েই হেসে পরে নীল।
কিছুক্ষণ নেশা ধরানো দৃষ্টিতে কথার দিকে তাকিয়ে থেকে কথার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে নীল। প্রথমে কথা হালকা বাঁধা দিলেও একটু পরেএ শিথিল হয়ে যায়। নীল এর ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে কথাও নীল কে আঁকড়ে ধরে। বেশকিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর হঠাত কথা নীল এর শার্টের বোতাম খুলতে গেলে নীল কথার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে নিজেকে কথার উপর থেকে সরিয়ে নেয়।
নীল এর হঠাত এভাবে সরে যাওয়ার মানে না বুঝতে পেরে কথা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকায়। নীল একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে কথাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পরে। কথা নীল এর বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণ ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে।
— সরি রে! এভাবে তোকে বিয়ে করলাম, কিন্তু কাউকে জানাতে পারলাম না। জানি তুই আমার উপর ভীষণ রাগ করেছিস। কিন্তু বিশ্বাস কর, এভাবে হুট করে তোকে বাড়িতে নিলে আরও বড় ঝামেলা হবে। যেটা আমি চাই না। তোকেও হারাতে চাই না। এজন্য কিছুদিন সময় দে, সব ঠিক করে দেবো।
ওপাশ থেকে কথার কোনো সাড়া নি পেয়ে নীল কথার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো কথা ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেছে। নীল একটা মুচকি হাসি দিয়ে কথাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।
চলবে…