শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৮

0
1684

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৮
#Tabassum_Kotha

??

কথা কে পাঁজাকোলে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালের করিডোর দিয়ে ছুটে চলছে নীল। পিছনে পিছনে কলি বেগমও ছুটে আসছে আর্তনাদ করতে করতে। নিস্তেজ হয়ে পরে থাকা কথাকে দেখে নীল এর বুকের ভিতর যেনো আগুন জ্বলছে। বারবার নিশ্বাস আটকে আসছে নীল এর।

কিছুক্ষণ আগে কথাদের বাড়ির সামনে বেশকিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলেও যখন কেউ দরজা খুলে না তখন নীল এর সন্দেহ হয়। কোনো একটা অঘটন ঘটেছে। হাতের ব্যাগ টা নিচে রেখে দরজা ধাক্কা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে করতেই কলি বেগম ভিতর থেকে দরজা খুলে দেয়। ক্রন্দনরত অবস্থায় কলি বেগমকে দেখে নীল এর মনের সন্দেহ টা আরও গাঢ় হয়ে যায়।

বুকের মধ্যে ইতোমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে নীল এর। বারবার মন বলছে তার কথা! তার কথা ঠিক নেই!

— নীল কথা কে বাঁচা বাবা। আমার কথা মা কে বাঁচা।

কলি বেগমের কথা শুনে যেনো নীল এর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। এমন কিছু তো সে কোনো দুঃস্বপ্নেও চিন্তা করে নি।

— নীল! আমার মেয়েকে বাঁচা। ওর ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। প্রায় আধা ঘন্টা যাবত দরজা ধাক্কাচ্ছি কিন্তু কথা সাড়া দিচ্ছে না। কিছু একটা কর। কাব্য ওর বাবার সাথে গেছে। তুই আমার মেয়েকে বাঁচা। আমার মন কুঁ ডাকছে। নিশ্চিত কথার কিছু হয়েছে।

নীল কলি বেগমের দিকে একনজর তাকিয়ে কিছু না বলে হাতের ব্যাগটা মেঝেতে ফেলে বিদ্যুৎ গতিতে কথার ঘরের দিকে ছুটলো। ডান-বাম না দেখে স্বজোরে কয়েকটা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলো নীল। ভিতরে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য নীল বা কলি বেগম কেউই প্রস্তুত ছিল না। কথা নিস্তেজ হয়ে বিছানার সাথে লেপ্টে আছে। পাশেই ঘুমের ঔষধের পাতাটা পরে আছে।

নীল এর যা বোঝার সে বুঝে নিয়েছে। তার ভিতর ঝড় শুরু হয়ে গেছে। মনে মনে শুধু আল্লাহ কে ডাকছে সে, যাতে এই ঝড় তার কথাকে তার কাছে থেকে কেঁড়ে না নেয়। কলি বেগম কান্নাকাটি করে মুহূর্তেই পুরো বাড়ি মাথায় করে নিয়েছে। নীল কলি বেগম কে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে কথাকে পাঁজাকোলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরলো। নষ্ট করার মতো আর এক মিনিট সময় তার হাতে নেই। কথাকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে। এটাই তার বর্তমান লক্ষ্য।

কলি বেগম নীল এর সাথে জিপ এ বসে পরলো কথার মাথা তার কোলে নিয়ে। নীল পাগলের মতো ড্রাইভ করছে। আর বারবার পিছন দিকে তাকিয়ে কথা কে দেখছে। কথাদের বাড়ি থেকে হাসপাতালের দুরত্ব প্রায় ২০ মিনিট কিন্তু আজ যেনো পথ শেষ হচ্ছে না। যদিও নীল ৮ মিনিটের মধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছে গেছে। কিন্তু তবুও তার মনে সংকোচ রয়ে গেছে যে সে দেরি করে ফেলেছে।

?

কথাকে ভর্তি করা হয়েছে। কলি বেগম হাসপাতালের করিডোরে বসে কান্নাকাটি করছে আর কিশোর সাহেবকে ফোন করছে। নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য কিশোর সাহেবের ফোন লাগছে না। সময় টা দুপুরের কিন্তু আকাশ কালো মেঘে ঢেকে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হতে আর কিছুক্ষণ বাকি।

হাসপাতালের ছাদে হাটুতে বসে কান্না করছে নীল। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই, কিন্তু নীল আজ এই অপরাধ টা করছে। কিভাবে সে তার কান্না আটকাবে তার জন্যই তো কথার এই অবস্থা। এতোটা নিষ্ঠুর সে কিভাবে হতে পারলো, কিভাবে কথাকে সে এতো কষ্ট দিলো। কথার ভালোবাসাকে সবসময় সে দূরে ঠেলে দিয়েছে। যা নয় তা বলে অপমান করেছে।

হাজার অপমান সত্ত্বেও কথা তাকে নিস্বার্থভাবে ভালোবেসে গেছে। আর সে কি না আজ কথার এই অবস্থার জন্য দায়ী! আজ যদি কথার কিছু হয়ে যায় সে কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।

“আমার পাপ এর শাস্তি আমার কথা কে দিও না আল্লাহ। আমার কথা কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। আর কখনও কথা কে কষ্ট দেবো না আমি ওয়াদা করছি। আমার কথাকে সুস্থ করে তোলো। বিনিময়ে আমার জীবন নিয়ে নাও, যা শাস্তি ইচ্ছা আমাকে দাও। আমার বাকি জীবন কথার পায়ের কাছে কাটাতে হলেও আমি রাজি। শুধু আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।”

নীল এর আর্তনাদে যেনো আকাশও বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। বজ্রপাত আর বিদ্যুতের ঝলকানি অনাগত ঝড়ের জানান দিচ্ছে। নীল এর মনের মতো প্রকৃতিও অন্ধকারে ছেয়ে আছে। নীল এর অস্থির অশান্ত মন কে শান্ত করতে এখন কথার স্নিগ্ধতা প্রয়োজন। একবার কথাকে বুকে জরিয়ে না নিতে পারলে নিশ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে তার।



ছাদ থেকে নেমে কথার কেবিনের বাইরে যেতেই ডাক্তার আর কলি বেগমের কথা শুনতে পায় নীল।

— আমার মেয়ে কেমন আছে ডাক্তার?

— চিন্তার কোনো কারণ নেই। হয়তো ঘুমের ঔষধ খেয়েছিল। তবে এখন সুস্থ আছে। কিছুক্ষণ পর বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।

— ধন্যবাদ ডাক্তার। আমি কি কথা কে দেখতে পারি?

— হ্যাঁ অবশ্যই।

কলি বেগম কথার কাছে চলে গেলে নীল দৌড়ে এসে রুমের বাইরে দাড়ায়। ভিতরে ঢুকতে গিয়েও নীল এর পা থেমে যায়। আজ কথার এই অবস্থার জন্য শুধুমাত্র সে দায়ী। সে কিভাবে কথার সাথে চোখ মেলাবে? জানালার কাঁচ দিয়ে অবচেতন কথার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীল। তার অজান্তেই দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো তার চোখ দিয়ে। হয়তো এই অশ্রুর কারণ সে জানে! সে নিজেও তো কথা কে ভালোবাসে।

নীল এর ভাবনার সুঁতো কাটে কলি বেগমের ডাকে। কথার জ্ঞান ফিরেছে। কলি বেগমের চোখে মুখ থেকে দুশ্চিন্তার ছাঁপ টা কেটে গেছে। কথার জ্ঞান ফেরাতে নীল যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। কিন্তু সেই সাথে এক অজানা কষ্ট তাকে জাঁকড়ে ধরছে। কথা একবারের জন্যও নীল এর দিকে তাকায় নি। কথাকে দেখে মনে হচ্ছে নীল তার সামনে উপস্থিত নেই। একবার নীলের দিকে তাকালে হয়তো তার অশ্রুভেজা চোখ জোড়া কথার চোখে পরতো। নীল আকুতি ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কথার দিকে কিন্তু কথা ভুলেও তার দৃষ্টি নীল এর দিকে ফেলছে না।

কিছুক্ষণ কথার দিকে অস্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নীল বাইরে চলে গেলো। বুকের বা পাশে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার, কথার অবহেলা কিভাবে মেনে নেবে সে! তবে তাকে যে এই কষ্ট মেনে নিতেই হবে। একই কষ্ট সে এতোদিন কথাকে দিয়ে এসেছে। এখন হয়তো তার পালা সহ্য করার।

?

?

সন্ধ্যার আগ দিয়ে কথা কে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়। কাব্য আর কিশোর সাহেবকে কলি বেগম আর কিছুই জানান নি। হাসপাতালে সবকিছু নীল ই ম্যানেজ করে নিয়েছে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা অব্দি কথা নীল এর সাথে ভালো মন্দ কোনো কথাই বলে নি।

নীল কথা কে জিপ থেকে নামাতে গেলে কথা বাঁধা দেয়।

— আমি এখন ঠিক আছি। হেঁটে যেতে পারবো।

— কথা ডাক্তার তোকে নড়তে চড়তে মানা করেছে। (কলি বেগম)

— কিন্তু আমি হেঁটে যেতে সক্ষম।

— নীল সাহায্য করছে তাতে তোর সমস্যাটা কি বলতো! নীল তুই একটু কথাকে ভিতরে দিয়ে যা তো। আমি বাড়িতে যাচ্ছি।

কলি বেগম বাড়ির সদর দরজা খুলে ভিতরে চলে গেলেন।

কথা নীলের বিপরীত দিকে বেঁকে বসে আছে।

— এদিকে ঘুর। নামাতে হবে তোকে।

— তুমি! সরি! আপনি সরুন আমি নামতে পারবো।

— বেশি বুঝিস না। বলেছি তো আমি নামাবো। ঘুর এইদিকে।

— আমিও তো একবার বলেছি যে আমি একাই পারবো।

— বড্ড বেশি বড় হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে। সব একা করতে শিখে গেছিস।

— শিখতে হয়। নির্লজ্জের মতো কদিন আর অন্যের আশায় বসে থাকবো।

— হুম।
নীল জোর করে কথাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো।

— ছাড়ুন আমাকে। এসব কি অসভ্যতামি। ছাড়ুন বলছি।

— ছাড়ার জন্য তো ধরি নি। এবার যখন ধরেছি আর কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।

কথা আর কিছু না বলে রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো নীলের মুখপানে। কথা যতোই রাগ দেখাচ্ছে নীল যেনো সবটা শুষে নিচ্ছে একটা ম্লান হাসি দিয়ে। এটাও কথার কাছে চরম বিরক্তির মনে হচ্ছে। কথা তো এমন রুক্ষ ব্যবহার করছে যাতে নীল কষ্ট পায় কিন্তু নীল কেনো কষ্ট পাচ্ছে না!

নীল কথা কে তার ঘরে শুইয়ে দিয়ে কথাদের বাড়ি থেকে চলে যায়। কলি বেগম কথার মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে সবার জন্য রান্না করার জন্য চলে যায়।



বিছানার সাথে লেপ্টে আছি, বেশকিছুক্ষণ ঘুম হয়েছে আজ তবুও ভিতরের জ্বালা পোড়া টা কমছে না। কে যেনো বলেছিল ঘুমালে কষ্ট কমে যায়। সেই লোকটাকে আজ হাতের কাছে পেলে কুচি কুচি করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিতাম। হ্যাঁ রে ভাই, তোরা এতো সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলে কি লাভ পাস! কষ্ট তো কমলোই না আমার। উল্টো অপরাধ বোধ কুঁড়ে খাচ্ছে। দুই বছরের ভালোবাসার জন্য আমি আমার জন্মদাতা মা-বাবা কে কষ্ট দিতে যাচ্ছিলাম। আমার মা বাবা ভাইয়া এরাই তো আমার জীবন। আমার কিছু হয়ে গেলে সব চেয়ে বেশি কষ্ট এদেরই হতো। তখন আমি কিভাবে ক্ষমা করতাম নিজেকে!

বিছানা ছেড়ে উঠে আস্তে আস্তে আম্মুর কাছে গেলাম কিচেনে। আম্মুকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম।

— কি হলো উঠে এলি যে! আরেকটু শুয়ে থাক শরীর টা ভালো না।

— তুমি একবারও জিজ্ঞেস করলে না আমি কেনো ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম!

— না। কারণ আমি জানতাম কিছুক্ষণ পর তুই নিজ থেকে আমাকে সব খুলে বলবি।

— এতো বিশ্বাস কেনো করো আমাকে? আমি তোমাদের বিশ্বাসের যোগ্য নই।

— কে বলেছে এই কথা? আমার কথা মার মতো ভালো মেয়ে আর কয়টা আছে শুনি!

— সরি মা। ভুল হয়ে গেছে। আর কখনও এমন হবে না।

— আমি জানি। যা এখন একটু বিশ্রাম নে। একটু পরে খাইয়ে দেবো।

কথা কিচেন থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই একটা শপিং ব্যাগ নিচে পরে থাকতে দেখে তুলে নিলো। কিছু একটা ভেবে কথা ব্যাগ টা নিয়ে তার ঘরে চলে গেলো। ঢুলু ঢুলু শরীরের বিছানার উপর বসে ব্যাগ থেকে একে একে সব জিনিস বের করতে লাগলো।

প্রথমেই ব্যাগ থেকে অনেকগুলো নীল কাঁচের চুড়ি বের করলো কথা। তারপর নীল শাড়ি আর কাজল টাও বের করলো। কদমের গুচ্ছটা মলিন হয়ে গেছে। ঠিক যেমন কথা মলিন হয়ে গেছে। অন্য সময় হলে হয়তো জিনিস গুলো দেখে কথা খুশিতে লাফিয়ে উঠতো কিন্তু এখন এই জিনিস গুলো দেখে তার বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। এবার আর সে নীল এর ভালোবাসার সামনে তার আত্মসম্মাণ কে বিসর্জন দিবে না।

অনেক অপমানিত হয়েছে সে। এখন আর অপমান সহ্য করার মতো শক্তি তারমধ্যে অবশেষ নেই। যতোই নিজেকে শক্ত করুক তার মনে নীল এর জন্য ভালোবাসা তো আজও আগের মতোই আছে। সেই ভালোবাসা তো বিন্দুমাত্র কমে নি। হ্যাঁ সেই ভালোবাসার সাথে জমা হয়েছে একরাশ ঘৃণা অথবা অভিমান! পরম যত্নে জিনিসগুলো ব্যাগে ভরে ধীর পায়ে ব্যালকোনিতে গিয়ে দাড়ালো কথা।

বৃষ্টি হচ্ছে মুশুলধারে। রাতের আকাশ আর কথা হয়তো পাল্লা দিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। কিন্তু যার জন্য এই চোখের পানি ফালাচ্ছে সে কি আদৌ এই পানির যোগ্য! নাহ সেই মানুষটা তো সবসময় তাকে অপমানই করেছে। কখনও ভালোবাসে নি। তাহলে কেনো এতোকিছুর পরেও কথা নীল কে মন থেকে সরাতে পারছে না। হয়তো এটাই ভালোবাসা! নির্লজ্জতার শেষ সীমা হলো ভালোবাসা!!



আমাদের বাড়ির ঠিক সামনে, আমার ব্যালকোনি বরাবর কোনো এক ছায়ামূর্তি একটা জিপ এ হেলান দেওয়া অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। আমার দূরের দৃষ্টি একটু দুর্বল, লোকটার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পারছি না। কিন্তু আমি জানি লোকটা নীল। নীল কে চেনার জন্য আমার স্পষ্ট দৃষ্টির প্রয়োজন নেই। চোখ বন্ধ করেও আমি উপস্থিতি টের পাই। নীল এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে, নিশ্চিত পরদিন তার জ্বর হবে। কিন্তু তাতে আমার কিছু আসবে যাবে না। এই তুচ্ছ আবেগ আমি ঝেরে ফেলে দিয়েছি আমার মন থেকে। সত্যি কি ফেলে দিয়েছি? হাতে রাখা শপিং ব্যাগটাও নীল এর দেওয়া। আমি কি এতোটাই নিম্ন স্তরের হয়ে গেছি যে এতো অপমান সহ্য করে তার দেওয়া উপহার নেবো!

এতোটা তুচ্ছ নই আমি, আর এটা নীল কে বুঝতে হবে। তার দেওয়া অপমান গুলো আপন করে নিয়ে নিয়েছি। এখন আর এসব উপহার চাই না!

কথা তার হাতের ব্যাগ টা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। বৃষ্টি হওয়ার দরুণ বাগানে কাঁদা জমে ছিল। শাড়িটা আর কদমের গুচ্ছটা উড়ে কাঁদায় গিয়ে পরলো। কাঁচের চুড়ি গুলো নিচে পরে ঝনঝন শব্দে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।

দূরে দাড়িয়ে নীল সবটাই দেখছে। কথার দৃষ্টির সাথে সাথে মনে অবস্থাটাও নীল বুঝতে পারছে। যদিও এভাবে শাড়িটা ফেলে দেওয়াতে নীল এর ভীষণ কষ্ট লাগছে। কিন্তু সে সব কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত। কথার প্রতি সে অনেক অন্যায় করেছে। তার করা সব অপমানের ফলস্বরূপ এটুকু তার পাওনা। সব কষ্টের পর সে তার কথার ভালোবাসা পুনরায় ফিরে পাবে।

নীল এর দেওয়া সব জিনিস ফেলে দিয়েও শান্তি পাচ্ছি না। বুকের বাম পাশের চিনচিনে ব্যথাটা কমছে না। দুচোখের পানিও থামছে না। কিন্তু নীলকে আমি আমার চোখের পানি দেখাবো না। তার সামনে আর দুর্বল হবো না। চোখের পানি মুছে নিয়ে ঘরের ভিতরে চলে এলাম। হয়তো নীল এখনও রাস্তায় দাড়িয়ে ভিজছেন, হয়তো না। কিন্তু আমি আর তার চিন্তা করবো না।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে পরে থাকা হ্যান্ড ব্যাগটা দেখে তানিয়া আপুর বিয়ের দিনের কথা মনে পরে গেলো। বিয়ের দিন আপুর আলমারি থেকে পরে যাওয়া একটা চিরকুট রেখেছিলাম ব্যাগটাতে। এতোদিন নিজেকে নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলাম যে এই কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। ব্যাগ থেকে চিরকুট টা বের করে পড়া শুরু করলাম। বেশি না মাত্র দুই তিনটা লাইন লেখা।

“প্রিয় তানু,

চলো পালিয়ে যাই দূরে কোথাও, যেখানে সমাজের কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম থাকবে না। থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। থাকবো শুধু তুমি আমি, আর আমাদের ছোট্ট একটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সংসার।

——–তোমার কাব্য”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে