শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৭

0
1587

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৭
#Tabassum_Kotha

“নীরবের সামনে এসব কি হলো?” – প্রচন্ড রাগ নিয়ে নীল কে কথা টা জিজ্ঞেস করলো কথা।

— কি হলো?

— এসব কথার কি মানে? কেনো বললেন নীরবকে এসব?

— কি বললাম?

— কিছুই বুঝেন না তাই না?

— কি বুঝতে হবে?

— আপনি এমন কেনো নীল? কেনো সবসময় এমন করেন? আমার মনের অবস্থা কি একবারও বুঝতে পারেন না? কতোটা ভালোবাসি আপনাকে আপনার ধারণাও নেই। এই ভালোবাসার জন্য বারবার আপনার অপমানের পরেও ফিরে আসি আপনার কাছে,, নির্লজ্জের মতো। তবুও আপনার চোখে আমি খারাপ। কেনো আপনার চোখে আমি খারাপ বলুন তো! একটা কারণ দেখান আমাকে! নীরব ভাইয়া আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।

— সম্পর্ক নেই বলেই শাড়ির আঁচল ফেলে কোমড় জরিয়ে ধরে। সম্পর্ক নেই বলেই মাঝ রাস্তায় গোলাপ নিয়ে প্রপোজ করে আর সম্পর্ক নেই বলেই একা কথা বলার ইচ্ছা জাগে,, তাই না রে কথা?

— আপনি ভুল বুঝছেন!

— আমি ভুল বুঝছি? আমাকে কি ছোট বাচ্চা মনে হয় তোর? আমি কিছুই বুঝি না! ব্যাপারটা বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে গেছে আর তুই বলছিস আমি ভুল বুঝছি! তোকে সেদিন এতো বাজে বাজে কথা বলার পর থেকে অপরাধবোধে ভুগছিলাম। ভেবেই নিয়েছিলাম তোর প্রতি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। যা যা বলেছি তা বলা আমার একদম ঠিক হয় নি। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু আমি তো ভাবতেই পারি নি তুই গাছের টাও খাবি তলার টাও কুড়াবি। আমাকে ভালোবাসি বলে নীরবের সাথে সম্পর্ক করবি! এতো প্ল্যানিং কিভাবে করিস একটু বলবি?

— আপনি আবারও আমাকে ভুল ভাবছেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন এবার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা বাকী নেই আমার মধ্যে আপনার ভুল ভাঙার। সত্যি বলতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। ধৈর্য জিনিস টা আমার মধ্যে একদমই নেই। তবুও অনেক চেষ্টা করেছি আপনার ভুল ভাঙানোর, আমার ভালোবাসা টা বোঝানোর। কিন্তু পারি নি।

সেদিন বলেছিলাম ভালোবাসার দাবি নিয়ে আর কখনও আপনার সামনে আসবো না, কিন্তু তবুও আপনার কাছে আসার পাপ আমি করে ফেলেছি। কেনো জানেন?
ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে। ভালোবাসার কোনো পরিমাপ বা সীমা যদি থাকতো, তাহলে হয়তো আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা সীমাহীন হতো। আমার প্রতিটা নিশ্বাস জানান দেয় আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি। কিন্তু আমি জানি না ঠিক কোন কারণে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, উল্টো ঘৃণা করেন। প্রিয়জনের অবহেলা সহ্য করে কি করে বাঁচতে হয় আমার জানা নেই। তবে আপনাকে আর কখনও কষ্ট দেবো না আমি। ভালো থাকবেন। আজ শেষ বারের মতো ওয়াদা করছি, ভালোবাসার দাবি নিয়ে আর কখনও আপনার সামনে আসবো না।

কথা কাঁদতে কাঁদতে খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এতোক্ষণ নীল এর ঘরে দাড়িয়ে নীল এর সাথে কথা বলছিল কথা। নীরবের হঠাত করে বিয়ের কথা তোলায় নীল ভুল বুঝেছে সেটা কথা ভালো করেই বুঝেছিল। তাই নীলের পিছে ছুটে গিয়েছিল তার ভুল ভাঙানোর জন্য। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও সেই অবহেলা আর অপমানই ফিরে পেলো কথা।

?

সেন্টার টেবিলে রাখা ফুলদানি টা হাতে নিয়ে স্বজোরে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুড়ে মারলো নীল। বিকট শব্দ করে কাঁচ টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পরলো। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার, এতোটা বাজে ব্যবহার সে কি করে করতে পারলো কথার সাথে! যেই মেয়েটা তাকে এতোটা ভালোবাসে তাকেই কেনো সে বারবার এতো কষ্ট দেয়। কেনো সে নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারে না! কথা কে সে নিজেও ভালোবাসে তাহলে কেনো সে কথাকে আপন করে নিতে পারে না? কেনো বারবার কথা কে অপমান করে তারিয়ে দেয়। এতোটা কঠোর তো সে ছিল না কখনও! তাহলে কেনো কথার বেলাতেই এতো রুড!

বুকের বা পাশ টা অসম্ভব রকম জ্বালা পোড়া করছে নীল এর। ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে কথা কে বুকে জরিয়ে নিতে। কাব্য এর সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে সে কথা কে আর নিজেকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। আচ্ছা কাব্য তো তার ছোট বেলার বন্ধু, সে কি বুঝবে না তার আর কথার সম্পর্ক টা? এক বার একটু স্বার্থপর হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে? কথার ভালোবাসায় সাড়া দিলে তো কোনো অন্যায় হবে না! আর অন্যায় হলেও সব শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত নীল। আর সহ্য করতে পারছে না সে। খুব কষ্ট হয় তার কথাকে কষ্ট দিতে, কথার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। সব কষ্টের সমাপ্তি আজকেই করবে নীল। আর ভাবাভাবি নয়। আজকেই কথার কাছে ক্ষমা চাইবে সে। হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় নীল।

— নীল দাড়া। রাজীব বাবাজির বাড়ি গিয়ে এই জিনিসগুলো দিয়ে আয়। তোর বাবা তোকে এখনই যেতে বলেছেন। (নয়নতারা বেগম)

— মা আমার একটু তাড়া আছে। নীরব কে পাঠাও।

— এই বাড়ির বড় ছেলে তুই। তোর বাবার শরীর ভালো না তাই তোকে যেতে বলেছে। নীরব হলো ছোট। নীরব গেলে ব্যাপার টা খারাপ দেখায়। তুই যা।

— মা এখানে বড় ছোট এর কি হলো? নীরব আর আমি দুজনেই খান বাড়ির ছেলে এতে সমস্যার কি আছে?

— মেয়ের শ্বশুরবাড়ি বলে কথা। এতো বেশি বুঝিস না। তোর বাবার পর এ বাড়ির কর্তা তুই। তাই তোকেই যেতে হবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে রূপা কে দিয়ে জিপ এ রাখাও সব জিনিস আমি জিপ এর চাবি নিয়ে বেরুচ্ছি।

কথার সাথে দেখা করতে গিয়েও যেতে পারলো না নীল কাজের জন্য। এদিকে সারা রাস্তা কান্না করতে করতে বাড়ি ফিরেছে কথা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। নীল এর অপমান, অবহেলা, ভালোবাসার ব্যর্থতা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। এই অসহ্য যন্ত্রণা তার ভিতরটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এই মুহূর্তে তার যন্ত্রণা না কমলে সে আর ঠিক থাকতে পারবে না। কি করবে কিছু দিশা পাচ্ছে না। বারবার মাথায় ঘুরছে এই যন্ত্রণা কমাতে হবে।

দিশাহীন ভাবে তার অস্থির মন ছুটে চলছে। কি রেখে কি করবে সে জানে না। অস্থির হয়ে বাবা-মার ঘরে ছুটে গেলো কথা। কিছু একটা খুঁজছে সে, তার শান্তি প্রয়োজন। হয়তো ঘুমালে ভিতরের অস্থিরতা টা কমে যাবে। কিন্তু দুচোখের কোনায় ঘুম নেই। ঘুমের ঔষধ লাগবে। তাই বাবার ঘরে ঘুমের ঔষধ খুঁজছে কথা।

কিছুক্ষণ খোঁজার পর ঘুমের ঔষধের পাতা খুঁজেও পেলো। বেশি ঔষধ নেই তিন টা ট্যাবলেট আছে। কথা ঔষধের পাতা নিয়ে তার ঘরে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে আটকে দিলো। ঔষধের পাতা থেকে একটা ঔষধ বের করে খেয়ে নিলো। ঔষধের পাতা টা নিচে ফেলে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলো। ঘুম আসছে না, অশান্তিও কমছে না।

কথা ঝট করে বিছানা থেকে উঠে বাকী দুইটা ট্যাবলেটও খেয়ে নিলো।

আমাকে ক্ষমা করে দিও আব্বু-আম্মু ভাইয়া। আমি তোমাদের যোগ্য সন্তান হতে পারি নি। এই কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না। জানি তোমাদের সাথে অন্যায় করছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। ভালোবাসা মানুষ কে কি থেকে কি বানিয়ে দেয়! এই ভালোবাসা তো আমার আত্মসম্মাণটাও শেষ করে দিলো। আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে এই ভালোবাসা তবুও ভুলতে পারছি না নীল কে।

ভালো থাকবেন নীল, আর জ্বালাতন করবো না। ধীরে ধীরে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে ঘুমের দেশে পাড়ি দিচ্ছি। এটাই কি আমার শেষ নিদ্রা! এরপর কি আর ঘুম ভাঙবে না? আমি যদি মরে যাই তখন কি নীল বুঝতে পারবে আমার ভালোবাসা টা!!

?

দুই ঘন্টা পর,

কথাদের বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে নীল। হাতে একটা বড় শপিং ব্যাগ, যার মধ্যে রয়েছে একটা নীল শাড়ি, অনেকগুলো কাঁচের চুড়ি, একটা কাজল আর এক গুচ্ছ কদম। সবকিছুই কথার জন্য এনেছে সে। কথার কাছে তার পূর্ব ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছে সে। তার করা অপমান শুধু একটা সরির মাধ্যমে মুছে ফেলা যাবে না সে জানে। কিন্তু সে অসহায় ছিল, কথাকে সেদিন নীরবের সাথে ওই অবস্থায় দেখে কিছুতেই রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি। আজকেও নীরব আর কথাকে একসাথে দেখে সে আহত হয়েছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই আজও কথা কে যা নয় তা বলেছে। তবে আজ সে তার সব ভুল শুধরে নেবে। কথার প্রতি তার করা সব অন্যায়ের জন্য সে ক্ষমা চাইবে। ততোদিন সে অপেক্ষা করবে যতদিন না কথা তাকে ক্ষমা করতে সক্ষম হচ্ছে। এবার নীল আঁদা-জল খেয়ে মাঠে নামবে কথার ভালোবাসা পুনরায় অর্জন করার জন্য। কথার সেই চাঞ্চল্যতা নীল এর ফিরে চাই। এর জন্য সে সব করতে প্রস্তুত।

ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে নীল কলিং বেল এ চাপ দেয়। একবার কলিং বেল চেপে মিনিট দুয়েক এর মতো সে অপেক্ষা করে। কিন্তু ভিতর থেকে কেউ দরজা না খুললে নীল আরও একবার কলিংবেল বাজায়। কিন্তু এবারও কেউ দরজা খুলে না। কেনো যেনো নীলের মনে কু ডাকছে। কিছু একটা গরমিল হয়েছে। এই সময় কথা আর কলি বেগমের বাসায় থাকার কথা। তাহলে কেনো দরজা খুলছে না!

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে