শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৬

0
1977

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৬
#Tabassum_Kotha

“I love you Kotha. Will you marry me?”

কোচিং এর ঠিক সামনে একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে নিয়ে কথার সামনে হাটুতে ভর দিয়ে বসে কথাগুলো বললো নীরব।

চোখ কপালে তুলে নীরবের দিকে তাকিয়ে আছি। এভাবে সবার সামনে প্রপোজ করে বসবে ভাবতেই পারছি না। এখন ঠিক কিভাবে রিয়েক্ট করবো বুঝতে পারছি না। নীল ব্যতিত কারো সম্পর্কে এরকম আমি ভাবতেও পারি না। আর তো নীরব! নীরব ভাইয়াকে তো দেবরের রূপেই ভেবেছি সবসময়। কিন্তু এটা কি হলো!

কিছুক্ষণ আগে,,

কোচিং এ গিয়ে দেখি নিতু আসে নি। হয়তো তানিয়া আপু আর দুলাভাই বেড়াতে এসেছে তাই আসে নি। আমি আর তুলিই ছিলাম শুধু। আজ একবারের জন্যও নীল এর দিকে তাকাই নি। সারা ক্লাসে মাথা নিচু করে বইয়ে মুখ গুঁজে বসেছিলাম। নীল এর দিকে তাকালেই আবার পাগলামি শুরু হয়ে যাবে। আমার আত্মসম্মাণ কে এভাবে বিসর্জন তো দিতে পারবো না তার সামনে। তাই তার দিকে তাকানোই ছেড়ে দেবো।

পুরো ক্লাসে নীলের মনোযোগ কথার উপর ছিল। এই তিনদিন কথা কে না দেখে খুব কষ্টে তার সময় কেটেছে। আগে কথার পাগলামিগুলো বিরক্তিকর লাগতো তার কাছে। কিন্তু এই কয়েকদিন সে এই পাগলামি গুলো মিস করেছে। কথার চাঞ্চল্যতার কমতি খুব ভালো ভাবেই অনুভব করছে নীল।
সে নিজেও ভাবে নি সে কথার প্রতি দুর্বল হয়ে যাবে। না ভাবলেও সে জানে কথার প্রতি আসা তার সব আবেগ অন্যায়। এই তুচ্ছ আবেগের জন্য ছোট বেলার বন্ধুত্বকে হারাতে পারবে না সে। কিন্তু কথার এভাবে তাকে ইগনোর করাও সে মানতে পারছে না। নীল মনে প্রাণে চায় সবকিছু আগের মতো হয়ে যাক। কিন্তু তার ইচ্ছা কতোদূর পূর্ণ হয় এটাই দেখার বিষয়।

কোচিং এর শেষ ক্লাস টা নীল এর অন্য এক বন্ধু করায়। তাই নীল তার ক্লাস শেষ করে কোচিং এর সামনের চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। কথা আর তুলি ক্লাস শেষ করে কলেজে যাওয়ার জন্য এগুতে থাকে। কিন্তু কোচিং থেকে বেরিয়ে চায়ের দোকানের সামনে যেতেই নীরব পথ আটকে দাড়ায়। কথার কিছু বুঝে উঠার আগেই নীরব পিছন থেকে গোলাপের গুচ্ছ সামনে এনে হাটুতে বসে পরে।
ঘটনার আকস্মিকতায় কথা চমকে উঠে। সেই সাথে নীলও অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে যায়। নীল এর নিজের ভাই যে কথা কে সবার সামনে প্রপোজ করতে পারে সেটা নীল এর ধারণার বাইরে ছিল। নীল নিজে যেখানে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে নিজের অনুভূতিগুলো কে লুকিয়ে রাখছে সেখানে এসবকিছু তার হজম হচ্ছে না।

বর্তমান,,

একটু আশে পাশে তাকাতেই দেখলাম এক গাদা মানুষ জরো হয়ে তামাশা দেখছে। এই জনগনেরও কোনো কাজ নেই। খালি খালি বসে থাকে আর মানুষের জীবন নিয়ে গবেষণা করে। ভীরের মাঝে নীল কে দেখে আমার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নীল অগ্নিমূর্তি ধারণ করে তাকিয়ে আছে আমার আর নীরবের দিকে।

নীলের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এখনি আমাকে খেয়ে ফেলবেন। হার্ট টা অসম্ভব দ্রুত বিট হচ্ছে। তবে আজকে ভালোবাসার অনুভূতির জন্য নয় আজকে তো ভয়ে বুক কাঁপছে।

— বলো না কথা, করবে আমাকে বিয়ে? — নীরব

— আআমমি মমানে!!

— দেখো আমি অন্য সবার মতো রিলেশন করে মজা নিতে চাই না। আমি সত্যি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।

— মানে কি!

— তোমাকে আগেও আমি অনেক দেখেছি। নিতুর সাথে তুমি বাসায় আসতে, কিন্তু কখনও খারাপ চোখে দেখি নি। তানিয়া আপুর হলুদে তোমাকে প্রথমবার শাড়িতে দেখলাম। আগে শুধু শুনেছি মেয়েদের শাড়িতে অপরূপা লাগে। তোমাকে শাড়িতে দেখার পর এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি। সেদিনের পর থেকে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এখন এমন অবস্থা যে তোমাকে ছাড়া আর একদিনও কাটবে না আমার।

— এসব কি বলছেন নীরব ভাইয়া! আমি আপনাকে সবসময় কাব্য ভাইয়ার মতোই দেখেছি।

— এতোদিন যাই ভেবেছো, এখন তো আমাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারো। এমন তো না যে আজকেই আমাকে উত্তর দিতে হবে, তুমি তোমার সময় নাও। যতো সময় দরকার সবটাই নাও। তারপর উত্তর ‘হ্যাঁ’ দাও।

কি মুশকিল রে বাবা! যার ভালোবাসা চাই সে পাত্তা দেয় না, আর যাকে দেবর মনে করি সে ভালোবাসা চায়!

নীল এখনও আগের ভঙ্গিতেই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। তফাত শুধু এটুকুই এখন তার চোখ নিয়ে আগুন ঝরছে, আর সেই আগুনে আমি যেকোনো সময় জ্বলে-পুড়ে যাবো। জামাইর সামনে দেবর প্রপোজ করছে বিয়ের জন্য। “ওও ভাই মারো মুঝে মারো,” বলে চিত্কার করতে ইচ্ছে করছে।

— কথা কিছু একটা তো বলো! কদিন সময় চাও বলে দাও আমি অপেক্ষা করবো। কজ আই লাভ ইউ।

লে হালুয়া! জামাই জি এর খবর নাই আর দেবরজি আমাকে লাভ ইউ বলছে।

— ভাইয়া আপনি আগে সোজা হয়ে দাড়ান। অনেক অস্বস্তি হচ্ছে আমার আপনি এভাবে বসে আছেন!

— তুমি আগে বলো আমাকে বিয়ে করবে!

— ভাইয়া পাগলামো বন্ধ করেন। মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে আছি আমরা।

— সরি কথা। আসলে তোমার সামনে এলেই নিজেকে গুলিয়ে ফেলি। সো সরি। তোমাকে আমার জন্য সবার সামনে লজ্জা পেতে হলো। আমি চলে যাচ্ছি। তুমি তোমার সময় নিয়ে আমাকে উত্তর জানিয়ে দিও।

নীরব ভাইয়া গোলাপগুলো জোর করে আমার হাতে গুজে দিয়ে চলে গেলেন। গোলাপ হাতে নিয়ে হ্যাবলা কান্তের মতো নীল এর দিকে তাকিয়ে আছি। আর নীল রাগে সাপের মতো ফুস ফুস করছে। আচ্ছা নীল রাগ হচ্ছেন কেনো? আর আমিই বা ভয় পাচ্ছি কেনো?

নীল তো আমাকে ভালোবাসেই না, তাহলে আমাকে অন্যকেউ প্রপোজ করলে তো তার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না! তাহলে কেনো সে এমন ফুসছে রাগে? আচ্ছা এমন নয় তো নীল আমাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে! ডাল মে কুছ কালা হেই। নীল কি জেলাস ফিল করছে নীরবের আমাকে প্রপোজ করাতে? যদি সত্যি এমন হয় তাহলে এই জেলাসি টা আমি কাজে লাগাতে পারি। নীল এর মনে আমার জন্য ভালোবাসা থাকলে নীরবের সাথে আমাকে দেখে সে অবশ্যই জেলাস হবে। নীলের ভালোবাসায় তো আর কম নির্লজ্জ হই নি, এই শেষ উপায় টা অবলম্বন করতে দোষ কি!

নীল আমার আত্মসম্মানে আঘাত করেছেন, কিন্তু তবুও তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারি না। নীল এর ভালোবাসা পাওয়ার লোভ ছাড়তে পারি না। কেনো আমি এতো বেহায়া, কেনো বারবার খালি হাতে ফেরার পরেও মন তাকেই কাছে পেতে চায়? এই প্রশ্নগুলোর সঠিক কোনো উত্তর আমার জানা নেই। হয়তো উত্তর একটাই, তাকে খুব ভালোবাসি।

সেদিন কলেজের কোনো ক্লাসেই আমার মন বসে নি। বারবার ঘুরে ফিরে আমার মস্তিষ্ক নীল এর মধ্যেই আটকে ছিল।

ছুটির পর তুলি আর আমি হেটে যাচ্ছি চৌরাস্তা পাড় হয়ে।

— সকালে কি হলো বলতো! তুই তো নীল ভাইয়া কে ভালোবাসিস। আর নীরব তোকে প্রপোজ করলো। ব্যাপার টা কেমন যেনো হয়ে গেলো না!

— হলো তো বটেই কিন্তু এমন কিছু হবে কে জানতো?

— নীল ভাইয়া সবটাই দেখেছেন। এখন সে কি করবেন? আবার নীরব যদি জানতে পারে তোর আর নীল ভাইয়ার ব্যাপারে তখন কি হবে?

— নীল আর আমার ব্যাপারে মানে? নীল আমাকে কখনই ভালোবাসে নি। নীল কে আমিই এক তরফা ভালোবেসে এসেছি সবসময়। আর রইলো নীরব ভাইয়া! তাকে আমি সব বুঝিয়ে বলবো।

— দেখ কথা আমার বিশ্বাস আজ নয়তো কাল নীল ভাইয়ার মনেও তোর জন্য ভালোবাসা জন্মাবে।

— সেটা নিতান্তই একটা স্বপ্ন। স্বপ্ন আর বাস্তবতা অনেক পার্থক্য। নীল আমাকে কখনই ভালোবাসে নি হয়তো আর ভালোবাসবেনও না।

— তুই তো জ্যোতিষী তাই না!

— আচ্ছা শুন! একটা আইডিয়া মাথায় দৌড়াচ্ছে!

— বলে ফেল কি বলবি?

— না কিছু না। তুই যা।

— বল না!

— বললাম তো কিছু না। যা তুই।

— হুম, যাচ্ছি।

?

গোধূলি বেলা শুরু হয়ে গেছে, আকাশে মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে, যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। অনেকদিন পর আজ এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করছে। নীল এর ভালোবাসা পাওয়ার লোভ টা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। মনকে হাজার বেঁধে রেখেও নীল এর জন্য ভালোবাসা কমাতে পারি নি। আরও একবার বেহায়া আর ছ্যাঁচড়া উপাধি টা পেতে চলেছি আমি। কিন্তু এসবের মাঝে নীরবের তো কোনো দোষ নেই। নীরবকে ইউজ করে নীল এর ভালোবাসা পেতে চাইছি আমি! ছিঃ! কতোবড় অন্যায় করতে যাচ্ছি আমি। কারো ফিলিংস্ নিয়ে খেলে আমি কিভাবে সুখী হতে পারবো!

বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। শ্রাবণের এই মেঘ যদি আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে এনে দিতো!
এই বর্ষণের ধারা যদি আমার ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট আর হাহাকার ধুয়ে নিয়ে যেতো তাহলে কি খুব ক্ষতি হতো!!



সেদিন রাত টা কি করবো সেটা চিন্তা করতে করতেই কেটে গেলো। নীল কে পাওয়ার লোভ টা তীব্র আঁকাড়ে কাজ করছে আমার মধ্যে। একই সাথে নীরব ভাইয়ার সাথে অন্যায় হবে সেই দুশ্চিন্তা টাও আছে। বুঝতে পারছি না কি করবো!

পরদিন সকালে নিজে থেকেই খুব তাড়াহুড়া করে কোচিং এ গেলাম। আজ কলেজ অফ, সেজন্য আম্মুকে বলে এসেছি নিতুদের বাড়িতে যাবো তানিয়া আপুর সাথে দেখা করতে। যদিও উদ্দেশ্য তানিয়া আপুকে দেখা নয়। মূল উদ্দেশ্য নীরব কে নীল আর আমার সম্পর্কে সব জানিয়ে দেওয়া। আগে নীরবকে সব বলে তারপর হেল্প চাইবো নীল কে একটু জেলাস ফিল করানোর কাজে আমার সাথে থাকার জন্য। নীরব ভাইয়া কে রাজী করানো কোনো ব্যাপার না। নীরব ভাইয়া নীল এর মতো যমরাজ না।

আজকে নীল ভাইয়া কোচিং এ আসে নি, জানি না কেনো। তবে নিতু এসেছে। কোচিং শেষে তুলি কে বিদায় দিয়ে নিতুর সাথে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। খান বাড়িতে পৌঁছে তানিয়া আপু আর রাজীব দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করে নীরব ভাইয়ার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু ঘরে ঢোকার আগেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে গেলাম।

এই বাড়িতে এলেই আমি ধাক্কা উষ্টা সব খাই। কুফা একটা বাড়ি।

” এই কথা! দেখে চলতে পারিস না? যখন দেখি তখনই আমার সাথে যেচে একটা ধাক্কা খেতে আসিস!”
ভ্রুঁ কুঁচকে নয়নতারা বেগম কথাগুলো বললেন।

— আসলে খালাম্মা আমি আপনাকে দেখি নি।

— কোন খেয়ালে থাকিস যে সামনে কে আছে দেখতে পাস না?

— আপনার ছেলের খেয়ালেই তো থাকি। (বিরবির করে)

— কি বললি?

— ককোই কিছু না তো!

— শোন কথা। তুই নিতুর বান্ধবী, তাই আমারও মেয়ের মতো। কিন্তু তোকে বুঝতে হবে। এই বাড়িতে দুইটা যুবক ছেলে আছে। আর তুইও এখন ছোট না। বেশ বড় হয়েছিস। আমি চাই না আশাপাশের লোকজন কথা বলার সুযোগ পাক। তাই এখন থেকে এই বাড়িতে আসা যাওয়া টা একটু কমিয়ে দে।

— আমি কি কিছু ভুল করেছি খালাম্মা?

— ভুল এখনও করিস নি কিন্তু করতে কতোক্ষণ? এমনিতেও তুই নীল এর প্রতি অনেক দুর্বল। দুর্বলতা টা কাটিয়ে উঠ।

নয়নতারা খালাম্মার কথায় আমি একপ্রকার চমকে উঠলাম। খালাম্মা কিভাবে জানলেন? কপাল বেয়ে চিকন ঘাম দিচ্ছে। এখন কি হবে? নীল তো আমাকে ভালোবাসলেনই না। তবুও কি সবাই সবকিছু জেনে যাবে?

— সেদিন রাতে ছাদ থেকে নামতে দেখেই বুঝেছিলাম সব। কিন্তু চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করেছি। নীল এর থেকে যতো দুরত্ব বজায় রাখবি ততো ভালো তোর জন্য। এসব বয়ঃসন্ধিকালের আবগ কে প্রশ্রয় দিস না। নীল আর তোর একসাথে কোনো ভবিষ্যত নেই। যা নিতুর সাথে আড্ডা দে আমি রূপা কে দিয়ে নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

দুইচোখ ইতোমধ্যে পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পরবে। আমার সাথেই সবসময় এমন কেনো হয়? কি দোষ করেছি আমি যার জন্য কারো প্রিয় হয়ে উঠতে পারলাম না কখনও। নীল কে পাগলের মতো ভালোবাসি কিন্তু তার চোখে আমি চরিত্রহীন। আজকে নীল এর মা সরাসরি বলে দিলেন নীল এর থেকে দূরে থাকতে। আমি তো নীল কে ভালোবাসি। এটা তুচ্ছ বয়ঃসন্ধিকালের আবেগ না। কেনো কেউ বুঝতে চায় না? এটা ভালোবাসা। আমি নীলকে ভালোবাসি।

নীরব ভাইয়ার ঘরের সামনে থেকে চলে যাচ্ছিলাম তখন নীরব ভাইয়া ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।

— কথা তুমি! আমার ঘরের সামনে! কিছু বলতে এসেছিলে আমাকে? বাইরে দাড়িয়ে আছো কেনো, আসো না ভিতরে এসে বসো। কদিন পর তো এই ঘরটা তোমার ঘর হবে।

কান্না চেপে নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বললাম,
— ভাইয়া আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি একটু সময় দিতেন।

— আমার সব সময় তো তোমার জন্যই। বলো না কি বলবে।

— এভাবে নয় একটু একা কথা বলার সুযোগ যদি পেতাম।

“প্রেম তো মনে হচ্ছে জমে ক্ষীর হয়ে গেছে তোদের,” তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বললো নীল।

— কি যে বলিস নীল!

— যা দেখছি তাই বললাম আর কি। এখন থেকেই একা দেখা করতে চায়, একা কথা বলতে চায়! এতেই বোঝা যায় তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে কথা।

— নীল প্লিজ কাব্যকে কিছু বলিস না। সময় হলে আমিই সব বলে দেবো কাব্য কে। তারপর বাবাকে বলে আমার আর কথার বিয়ে টা ঠিক করে নেবো।

নীরবের মুখে তার আর কথার বিয়ের কথাটা নীল এর বুকে তীর মতো বিধলো। তীর বুকের এপার উপার বেরিয়ে গেলে যতোটা ব্যথা পাওয়া যায় হয়তো নীল তার থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছে। তবুও জোরপূর্বক মুখে একটা হাসি ফুঁটিয়ে কথার দিকে তাকালো।

— ভাই তুই আমার আর কথার সম্পর্কে খুশি তো! — নীরব।

— খুশি হবো না কেনো! অনেক খুশি আমি। কিন্তু একটু সাবধান ভাই। আজকালকার মেয়েরা জামা পাল্টানোর মতো ভালোবাসা পাল্টায়। আজ একজন কে ভালোবাসি বলে কাল অন্য কারো হাত ধরতে এদের সময় লাগে না।

নীলের কথার মানে বেশ ভালোই বুঝতে পারছি আমি। এবারও সে আমাকে কথা শুনাচ্ছে। কিন্তু এবার আমি নির্দোষ, নীরবের সাথে আমি শুধু কথা বলতে এসেছিলাম। আর নীরব সেই কথা বলা টা কে সম্পর্কের নাম দিয়ে দিলো! এই খান বাড়ির ছেলেরা পারেও বটে!!

— কথা এমন না নীল। ও অনেক ভালো।

— হ্যাঁ আমি জানি কথা এমন না। কথা আমার স্টুডেন্ট, ও কেমন সেটা কি আমি জানবো না!

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে