#শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায়
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_ছয়
ঠোঁট যুগল নিজের করে নিলো তাজওয়ার। ঘটনার আকস্মিক’তায় তারিনের চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো হয়ে গেলো। স্বপ্ন দেখছে নাকি এটা সত্যি? তারিনের শরীর শীতল হয়ে গেলো। শিরা-উপশিরায় রক্ত চলাচল খানিক’ক্ষনের জন্য বন্ধ হয়ে রইলো। বিশ্বাস করতে পারছে না। নিজের চোখ নিজের মস্তিষ্ক’কে? মস্তিক জানান দিচ্ছে পুরুষের স্পর্শের শিহরণ। তাজওয়ার তারিনের ঠোঁটদ্বয়ে চু’মু খেলো আবেশে। তারিনের দিকে তাঁকালো নেশাময় চোখে। তারিনের চোখের কোন বেয়ে ঝড়ছে অশ্রু ফোটা। যেই মেয়ে’টা কিছুক্ষন আগে অব্দি ছটফট করছিলো রাগে সেই মেয়েটা এই মুহূর্তে নিরব ভূমিকা পালন করছে। শান্ত হয়ে গেছে তারিন। বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি লোপ পাচ্ছে ধীরে ধীরে। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসচ্ছে ক্রমশ। কেনো এমন হচ্ছে? কি হতে চলেছে তারিনের সাথে? এক বছর ধরে নিজের সাথে নিজে লড়াই করেছে। ভালোবাসা নাকি প্রতিশোধ? এই লড়াইয়ে কে জিতবে? শীতল চাহনি দিলো তাজওয়ারের দিকে। শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট দ্বয়ে হাসির রেখা ফুটলো। নুড়িয়ে পড়লো তাজওয়ারের বুকে। হাত দুটো অনেক আগেই খুলে দিয়েছিলো তাজওয়ার। শক্তিহীন হাত দুটো দিয়ে আকড়ে ধরলো তাজওয়ারের গলা। অস্পষ্ট স্বরে বলতে লাগলো….
–ভালোবাসি। ভালোবাসি। ভা.লো.বা.সি…..
আর বলতে পারলো না। থেমে গেলো তারিনের অস্পষ্ট স্বর। শরীরের সমস্ত ভর পড়লো তাজওয়ারের উপর। তাজওয়ার বুঝতে পারলো তারিন জ্ঞান হারিয়েছে। সময় না নিয়ে তারিন’কে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শোয়ালো। রুমের মধ্যে পানি না পেয়ে ব্যস্ত হয়ে দরজা খুলতে’ই ওমর তাজওয়ারের কলার চে’পে ধরলো। শাসানোর শব্দে বলে উঠলো…..
–আমার বোনের গায়ে হাত তোলার অধিকার তোকে দিয়েছে? তোর মতো কয়েক’টা সুপারস্টার’কে কেনার ক্ষমতা ওর আছে…..
ওমরের রাগের কারন বুঝতে পারলো তাজওয়ার। তাই কলার’টা ছাড়িয়ে নিতে নিতে শান্ত শব্দে বললো….
–তারিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আমাকে না হয় পরে দেখে নিও। আগে ওর জন্য একটু পানির ব্যবস্থা করে দাও প্লিজ….
তাজওয়ারের কথা শুনে ওমরের হাত’টা নরম হয়ে এলো। উঁকি দিয়ে চেয়ে দেখলো তারিন বিছানায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। দেরি না করে ছুটে গেলো নিচে পানি আনার জন্য। তাজওয়ার একবার নিশ্বাস ছাড়লো শব্দ করে। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো তারিনের মাথার কাছে। হাত বুলালো মাথায়। এক নজরে তাঁকিয়ে রইলো তারিনের মুখ পানে। মেয়েটার মুখে কঠোরতার কোনো ছাপ নেই। কিন্তু, তাও মেয়েটা এত কঠিন। কেনো? কি রয়েছে এই কঠিন মুখের আড়ালে। কোনো ভয়ংকর অতীত নাকি অন্য কিছু? কিসের প্রতিশোধ নিতে চায় ও আমার কাছ থেকে? এইসব ভাবছিলো তাজওয়ার এর মধ্যে’ই ওমর হন্তদন্ত হয়ে হাত জগ ভর্তি পানি নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। নিজেই হাটু ভেঙে বসে পড়লো খাটের সামনে। পানি নিয়ে তারিনের মুখে ছিটিয়ে দিতে দিতে বললো…..
–বোন চোখ খোল। কি হয়েছে তোর? তোর গায়ে যে হাত দিয়েছে ওর হাত আমি কে’টে নিব। শুধু একবার চোখ’টা খোল প্লিজ…..
তাজওয়ার অবাক হয়ে ওমরের মুখে তাঁকিয়ে আছে। ওমরের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জলধারা। ওর কলিজা’টা বোধহয় ছিড়ে যাচ্ছে তারিনের এই অবস্থায়। ওমর কি রেখে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাজওয়ার ও’কে শান্ত করার জন্য ওর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো….
–বেশি উত্তেজিত হয়ে যাওয়ায় ও সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। এত’টা টেনশন করার মতো কিছু হয়’নি….
কথা’টা শেষ হতে’ই ওমর এক ঝটকায় তাজওয়ারের হাত’টা সরিয়ে নিয়ে তাজওয়ারের দিকে আঙ্গুল তাঁক করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো…..
–সার্ট-আপ। আমি তোমার মুখ থেকে একটাও শব্দ শুনতে চাই না। এক্ষুনি আমার চোখের সামনের থেকে দূর হয়ে যাও। নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না সুপারস্টার তাহমিদ তাজওয়ার। আমি ভুলে যাব তুমি কে?
তাজওয়ার ওমরের মুখোমুখি দাড়িয়ে নরম কন্ঠেই বললো…..
–বেশি চিৎকার চেঁচামেচি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
কথাটুকু শেষ হতে’ই ওমর পূর্নরায় খাবলে ধরলো তাজওয়ারের কলার। কলার ধরে টেনে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকলো। তাজওয়ার সব’টা দেখে ও চুপ করে আছে। কোনো প্রতিবাদ করছে না। নিজের শরীরের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। ওমর তাজওয়ার’কে টেনে নিয়ে দরজার সামনে এসে দরজার বাইরে ধাক্কা দিয়ে বের করে বলে উঠলো……
–আমার বোনের থেকে একশো হাত দূরে থাকা’টাই তোমার মঙ্গল। নয়তো, তোমার নাম খ্যাতি ধুলোয় মিশে যাবে।
বলে তাজওয়ারের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। সেই সাথে সিকিউরিটি’কে ফোন করে বলে দিলো যেনো তাজওয়ার’কে আর ভেতরে ঢুকতে না দেয়। তাজওয়ার দরজার সামনে দাড়িয়ে মুচকি হাসলো। এই হাসির মানে জানা নেই ওর নিজের ও। কোনো রিয়েক্ট না করে বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
____________________________________________
প্রায় আধা ঘন্টা পর তারিন চোখ মেলে তাঁকালো। মাথা অজস্র ব্যাথা অনুভব করলো। চোখ দুটো নিভে আসলো বারংবার। ভনভন করে চারদিক ঘুরছিলো। চোখ খুলেই দেখলো ওমর ওর পাশে চিন্তিত মুখে বসে আছে৷ তারিন’কে চোখ খুলতে দেখে ওমরের যেনো প্রান ফিরে এলো। পাগলের মতো বলে উঠলো…..
–তুই ঠিক আছিস…
ওমরের চেহারা’টা দেখেই তারিন বুঝে গেছে সব সময়ের মতো ছেলে’টা আজো টেনশনে পাগল হয়ে গিয়েছিলো। রক্তের কেউ না হয়েও কেউ এত’টা ভালোবাসতে পারে মাঝে মাঝে ভেবে পায়না তারিন। তারিন হাসি মুখে উওর দিলো…..
–আমি ঠিক আছি….
তারিনের উওর শুনে ওমর স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো আদরে। তারপর মিষ্টি হেসে বললো….
–তুই রেস্ট নে আমি আসচ্ছি….
বলে উঠে দাড়ালো। যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে’ই পেছন থেকে তারিন বলে উঠলো……
–তাজ কোথায়?
তাজওয়ারের কথা শুনে ওমর রাগী দৃষ্টি’তে তাঁকালো তারিনের দিকে। গম্ভীর ভাবে উওর দিলো…..
–তুই ভুলে যাচ্ছিস তাজ তোর প্রতিশোধ। আর আমি কিছুতেই তোর লক্ষ্য থেকে তোকে পিছিয়ে আসতে দিব না। আজকের পর তাজওয়ার’কে ভুলে যেতে শিখ……..
বলে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো। ওমর’কে এতটা কঠিন ভাবে কথা বলতে দেখে তারিন হতবাক। মাঝে মাঝে ছেলেটা এতটা রেগে থাকে যে তারিন ও’কে বুঝতে পারে না। ওমর চলে যেতে’ই তারিন দুই হাতে ভর দিয়ে উঠে বসলো। শরীর খুব পরিমান দূর্বল লাগছে। চোখ বুঝ’তেই পাঁচ বছর আগের ভয়ংকর অতীত চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললো তারিন। তাজওয়ারের চেহারা’টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। নিজে নিজেই তারিন বলতে লাগলো…..
–তুমি এতটা নিচে নামতে কি করে পারো হিরো? যেই তারিন’কে তুমি পাঁচ বছর আগে অব্দি পাগলের মতো ভালোবাসতে আজ সেই তারিন’কে তুমি চিনেও না চেনার ভান করে আছো। এতটা হার্টলেস তুমি নাকি এসব শুধু নিজের পাপ ঢেকে রাখার জন্য করছো? তুমি যতই নিজেকে আড়াল করে রাখো না কেনো? আমি তোমাকে কিছুতেই ছাড়বো না। ভেবোনা তারিন পাঁচ বছর আগের মতো এখনো দূর্বল আছে? তারিন এখন নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেও জানে। আবার প্রতিশোধ ও নিতে জানে। তোমার এত নাম খ্যাতি সব আমি খুব শিঘ্রই কেড়ে নিব। রাস্তায় নামিয়ে তোমাকে তিলে তিলে শেষ করব। সহজ মৃত্যু তোমার প্রাপ্য নয়…….
বলে রহস্যময় হাসি দিলো। বৃদ্ধা আঙ্গুলি দ্বারা নিজের ঠোঁটে স্লাইড করলো যেখানে তাজওয়ার চুমু খেয়েছিলো। তাজওয়ারের ছোয়া মনে পড়তেই তারিনের রাগ হলো। কয়েক বার ঠোঁট ঘষে পাশের ফুলদানী’টা ছুড়ে ফেললো মেঝে’তে। চেঁচিয়ে বলতে লাগলো…..
–তোমার স্পর্শ’কে আমি ঘৃনা করি। আমার থেকে আমার বাবা’কে কেড়ে নেওয়ার সাথে সাথে আমাকে বাজে ভাবে ঠকানোর শাস্তি তুমি খুব শিঘ্রই পাবে তাহমিদ তাজওয়ার…….
#চলবে