#শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায়
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#সূচনা_পর্ব
ভার্সিটি’র প্রোগ্রামে ভরা ক্যাম্পাসে সবার সামনে দাড়িয়ে সুপার স্টার তাহমিদ তাজওয়ারের কপালে রিভলবার ঠেঁকিয়ে দাড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। চারদিকে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। আর মিডিয়ার লোকেরা লাইভ সম্প্রচার করে যাচ্ছে। চ্যানেলের নাম করার জন্য হয়তো এমন তাঁক লাগানো একটা নিউজ যথেষ্ট। ক্যাম্পাসের উপস্থিত সবাই অবাক নয়নে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। একটা মেয়ের এত সাহস কি করে হতে পারে? সামান্য একটা মেয়ে হয়ে সুপারস্টারের দিকে রিভলবার তোলে? কেউ ভাবতে পারছেনা। মেয়েটার মনে কি এক বিন্দু ভয় নেই। এত এত ক্যামেরা, গার্ডদের মাঝে এমন সাহস দেখানো কোনো মেয়ের পক্ষে আদৌ কি সম্ভব? এদিকে তাজওয়ারে’র সমস্ত গার্ড গুলো মেয়ে’টার দিকে গান তাঁক করে আছে। সেদিকে মেয়েটার কোনো নজর নেই। ওর নজর তাজওয়ারে’র দিকে। মুখে আছে রহস্যময় হাসি। কারন, মেয়ে’টা জানে প্রথম হুম’কি শুনে কেউ ভয়ে ও এগিয়ে আসবে না। এদিকে তাজওয়ার ভড়কে না গিয়ে খুব শান্ত দৃষ্টি’তেই তাঁকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে। ভার্সিটি’র সমস্ত টিচার-স্টুডেন্ট’রা ভয় পেয়ে আছে। আজ ভার্সিটির ফাংশনে তাজওয়ার’কে এক ঘন্টার জন্য অনেক অনুরোধ করে আনা হয়েছে। আর এসেই তাকে এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হতে হবে জানা ছিলো না কারোর। সবার মুখে লেগে আছে আতঁকের ছাপ। এর মধ্যে হুট করে আকাশের বুক চিড়ে নেমে পড়লো শ্রাবন ধারা৷ ভরা বর্ষায় শ্রাবনের প্রথম সপ্তাহ চলছে। সূর্য্যের দেখা পাওয়া মুসকিল আজকাল। এই সময়ে বৃষ্টি আসার ও কোনো নাম গন্ধ পাওয়া যায়না। যখন ইচ্ছে হয় তখন নেমে পড়ে মুষলধারে। তাজওয়ারে’র গার্ড’রা সহ তাজওয়ার আর মেয়েটা বৃষ্টি’তে ভিজে নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে৷ তাও মেয়েটা ওর লক্ষ্য থেকে এক বিন্দু নড়ছে না। সন্ধ্যার ঘন অন্ধকারে চারদিকে কৃত্রিম লাইটের আলো জ্বলজ্বল করছে। নানা রকম লাইটের এত আলোয় তাজওয়ার সামনে থাকা মেয়ে’টার মুখ দেখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। পড়নে সাদা আর কালোর কম্বিনেশনে হাটু অব্দি একটা টপস সাথে ব্লাক লেডিস জিন্স। গলায় সাদা স্কাফ খুলানো। মাথায় ক্যাপ’টা এমন ভাবে পড়া যে মেয়ে’টার চোখ ঠিক করে দেখা যাচ্ছেনা। আর মুখে রয়েছে সার্জারিক্যাল মাস্ক। অনেক ক্ষন যাবৎ এইসব কিছু দেখে ও তাজওয়ার বেশ শান্ত ভাবে প্রশ্ন করলো…..
–হোয়াট ইজ দিস?
তাজওয়ারের কথা শুনে মেয়েটা নরম স্বরে উওর দিলো…..
—আই লাভ ইউ….
এইবার যেনো তাজওয়ার আকাশ থেকে পড়লো। এই কয়েক বছরে তাজওয়ার অনেক পাগলা’টে ফ্যান দেখেছে। কিন্তু, লাইফে এই ফাস্ট টাইম কেউ কপালে রিভলবার ঠেঁকিয়ে প্রোপজাল দিলো। এমন সুন্দর শ্রাবনের এক সন্ধ্যায় এত’টা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে ভাবতেও পারেনি তাজওয়ার। তাজওয়ার অবাক স্বরে কিছুটা চেঁচিয়ে বললো……
—হোয়াট?
বলে হঠাৎ হেসে উঠলো তাজওয়ার। তারপর হাসতে হাসতেই বললো….
—আই থিংক আপনার মাথায় প্রবলেম আছে। ডাক্তার দেখান। এক্সকিউজ মি…..
বলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে’ই মেয়ে’টা রিভলবার টা এইবার তাজওয়ারের বুকে ঠেঁকালো। তাজওয়ারে’র একদম মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে তাজওয়ারের গালে স্লাইড করতে তাজওয়ার ঠান্ডা শিহরণে খানিক’টা কাঁপলো। মুহূতেই মেয়ে’টার হাত চেপে ধরে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেয়ে’টার দিকে। ছিটকে মেয়ে’টার হাত সরিয়ে দিয়ে রাগী ভাব’টা মিষ্টির হাসির আড়ালে লুঁকিয়ে বলে উঠলো…..
–হেই বিউটিফুল লেডিস, ডোন্ট ক্রোস ইউ লিমিট। এন্ড ডোন্ট ফরগেট হু আই এম? আন্ডারস্ট্যান্ড….
তাজওয়ারের কথা শুনে মেয়ে শব্দ করে হাসলো। হাসির শব্দে ঝংকার দিয়ে তীব্র বেগে কেঁপে উঠলো তাজওয়ারে’র হৃদ স্পন্দন। এত সুমধুর কন্ঠ কারোর হতে পারে জানা ছিলো না ওর। ঝড়েরবেগে চারদিকে বাতাস বইছে। সব স্টুডেন্ট,টিচার্স’রা ভার্সিটির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে এই মুহূর্তে। বৃষ্টি’তে ভিজে একাকার অবস্থা সবার। বৃষ্টির বেগ মিনিটে মিনিটে বেড়ে যাচ্ছে। এত শ্রাবন ধারায় বার বার চোখের পাপড়ি ভিজে যাচ্ছে তাজওয়ার। ঠিক করে তাঁকাতে অব্দি পারছেনা। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারলে এখন ও বেঁচে যায়। মন মস্তিষ্ক বার বার প্রশ্ন করছে। কে মেয়েটা? কেনো এমন করছে? কি চায়? হঠাৎ করেই ক্যাম্পাসের সমস্ত লাইট গুলো বন্ধ হয়ে গেলো। চারদিকে শোরগোল পড়ে গেলো। হঠাৎ করেই তাজওয়ারে’র কানে মৃদু কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। অন্ধকারের মাঝে তাজওয়ার বুঝতে পারলো মেয়ে’টা একদম ওর গা ঘেষে দাড়িয়ে আছে। এইবার মেয়েটা মৃদু স্বরে বলে উঠলো….
–ইয়াহ, আই নো হু আর ইউ? ইউ আর মাই হিরো, মাই সুপারস্টার, মাই জান, মাই লাভ,এন্ড মাই এভ্রিথিং এন্ড মাই এডিক্টেড রিভেঞ্জ ….
বলে মেয়ে’টা হাসতে লাগলো। হাসি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষন পর চারদিকের হৈচৈ এর মাঝে হঠাৎ করে কারোর চিৎকার ভেসে আসলো। এর মধ্যেই লাইট জ্বলে উঠলো। বৃষ্টির পানির বর্ন লাল হয়ে আছে চারদিকে। আর তার পাশেই তাজওয়ার মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। ওর মাথা’ থেকে রক্ত গলগল করে বের হচ্ছে। উপস্থিত সবাই তাজওয়ারে’র রক্ত বর্ন দেহ’টা দেখে আতৎ’কে উঠলো।
____________________________________________
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হসপিটালের গেট দিয়ে ভীড় ঠেলে জহির রায়হান পাগ’লের মতো দৌড়ে এসে ভেতরে প্রবেশ করলো। হসপিটালের করিডোরে আসতেই রাইমা বেগম ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো…..
—আমার তাহমিদ’কে ঠিক করে দাও প্লিজ। ছেলে’টা তো ঘন্টাখানিক আগে অব্দি ঠিক ছিলো হঠাৎ কি হয়ে গেলো?
স্ত্রীকে কি বলে স্বান্তনা দিবে বুঝতে পারছেনা জহির রায়হান। ছেলের এই অবস্থা দেখে সে নিজেও ঠিক থাকতে পারছেনা। প্রথম থেকে ঘটনা’টা সোশাল মিডিয়া’তে লাইভ টেলিকাস্ট হলেও হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। সবাই বুঝে উঠার আগে’ই মেয়ে’টা তাজওয়ার’কে আঘাত করে চলে যায়। তাজওয়ারের মাথায় কেউ ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করেছে। ক্ষত’টা বেশ গভীর হওয়ায় তাজওয়ারের অবস্থা আশাঙ্কাজনক। হসপিটালের বাইরে মিডিয়া ও সাধারন মানুষের ভীড় জমেছে। সবার মুখে এক প্রশ্ন কে ওই মেয়ে’টা? তার সাথে কি সুপারস্টার তাহমিদ তাজওয়ারের পূর্বের কোনো শত্রু’তা রয়েছে? জহির সাহেব নিজেকে সামলে স্ত্রীকে স্বান্তনা স্বরে বলে উঠলো….
–কান্না থামাও রাইমা। আমাদের ছেলের কিছু হবে না। আর যে ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে তাকে আমি খুঁজে বের করবোই। একটা সামান্য মেয়ে হয়ে আমার ছেলে’কে আঘাত করার শাস্তি তো ও’কে পেতে হবে…
রাইমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে সামনের বেঞ্চে বসে পড়লেন। এর ম
____________________________________________
বাইরে মুষলধারে শ্রাবন ধারা বইছে। ডুপ্লেক্স বড় বাড়ির সামনে কালো রঙের একটা গাড়ি এসে থামতেই, ভেতর থেকে একটা মেয়ে বেড়িয়ে আসলো। বৃষ্টি’তে ভিজে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। মেয়ে’টা রুমে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ঝর্না’টা ছেড়ে দিয়ে দেয়াল ঘেষে বসে হাটু’র ভাঁজে মুখ লুঁকালো। চোখ দুটো ভয়ংকর লাল হয়ে আছে। বাধ ভেঙে কান্না’রা উঁকি দিচ্ছে। আর শক্ত থাকতে পারলো না ডুঁকরে কেঁদে উঠলো মেয়ে’টা৷
চিৎকার করে বলতে লাগলো…..
–আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি হিরো। বিশ্বাস করো, সত্যি ভালোবাসি। কিন্তু তোমাকে কোনোদিন নিজের করে নিতে পারব না আমি। কারন, তুমি একটা খু’নী। ঘৃনা করি তোমাকে। ভালোবাসার চাইতেও দ্বিগুন ঘৃনা করি তোমাকে। তুমি আমার কাছ থেকে আমার সব থেকে প্রিয় মানুষ’টাকে কেড়ে নিয়েছো। সব চাইতে যন্ত্রনাদায়ক মৃ’ত্যু দিয়েছো তাকে……..
বলে এইবার শব্দ করেই কেঁদে উঠলো। রুমের ভেতর’ থেকে ফোনের শব্দ কানে আসতে’ই ধ্যান ফিরে আসলো ওর৷ ভেজা শরীর নিয়েই বেড়িয়ে গেলো। রিসিভ করে কানে ধরতে’ই ওপাশ থেকে একজন বলে উঠলো…..
–ম্যাম আপনি চলে আসার পর তাজওয়ার স্যারের উপর অ্যাটাক করা হয়েছে……..
কথাটুকু কানে আসতে’ই মেয়ে’টার চারদিকে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো মুহূর্তে। ভনভন করে ঘুরতে লাগলো সব কিছু। চোখের সামনের সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো। ঘুরে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো….
–আমি ছাড়া আর কারোর অধিকার নেই তোমাকে আঘাত করার…..
#চলবে