শ্বাশুড়ি
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৩
.
.
রুমে এসে আলো হেসে কুটিকুটি অবস্থা কিন্তু অয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে৷
.
-এতো হাসার কি আছে?
– উঁহু! কিছু না৷ এমনি
.
অয়ন চুপচাপ নিজের ব্যাগ থেকে কিছু বের করছে । আলো দেখতে পাচ্ছে না। চুপচাপ চুল ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ভেজা চুলে গরম আরো বেশি লাগছে।
.
-এই তুমি কি ঘুমাইলা না কি?
– উঁহু!
-আলো শোন….
-জ্বী বলেন
– আমি জানি তুমি মায়ের ব্যবহারে কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু আমার তো কিছু করার নেই গো। একটু সহ্য করো, প্রমিস তোমার একটু কষ্ট দশগুণ ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবো।
.
কথা গুলো বলতে বলতেই অয়ন গিয়ে আলোর পেটে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
গল্প করতে করতে প্রায় রাত সাড়ে বারোটা ।
একসময় আলো ঘুমিয়ে যায়৷ অয়ন দেখে আলো গভীর ঘুমে। গায়ে কাথা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের রুমে আসে।
মায়ের শরীর ঠিক আছে এখন। ধীরেধীরে রান্না ঘরের দিকে যায়৷
.
যেহেতু বোনের জামাই এসেছে তাই প্রিপারেশন টা ভালোই করতে হবে৷
ফ্রিজে দেখে কৈ মাছ রাখা৷ এক চুলোয় ভাত বসিয়ে কৈ মাছ ভাজা শুরু করে।
ব্যাচেলর তো! তাই একটু আধটু না ভালোই রান্না জানতে হয়েছে তাকে। মাছ ভাজি,মুরগির মাংস, ভাত আর দুধ সব মোটামুটি শেষ করতে প্রায় আড়াইটা বেজে যায়।
অয়ন কাজ শেষে সব পরিষ্কার করার সময় চিন্তা করে যে ও না থাকলে হয়তো আলোকে একাই উঠে সব কাজ করতে হতো। কেনোনা এখনো কেউ উঠেনি। অথচ মেয়েটা একা থাকতে আগে কতই না ভয় পেতো।
.
আলোর পাশে বসে আলোকে দেখেই মুচকি হাসে অয়ন।
রাজ্যের চিন্তা নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ঘুমাচ্ছে সে।
ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে পরিবার কে ছেড়ে আসা এত সহজ না। পরিবার,সমাজ সব কিছুর কথা শুনতে হয়। কিন্তু পরিবার,সমাজ এটা কেনো বুঝে না যখন দুজন মানুষ একে অপরের সাথে থেকে খুশি তখন তাদের থাকতে দিতে সমস্যা কি? সংসার তারা দুজন করবে পরিবার বা সমাজ করে না।
.
.
অয়ন আবারো হাসে। আলোর গলায় আংগুল ছোয়াতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আলো।
বেশ ভয় পেয়েছে বুঝাই যাচ্ছে।
.
-ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি তো
.
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। দুইটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট। আল্লাহ্! আগে ডাকোনি কেনো? রান্না করবো কখন?
অয়ন পিছন থেকে জড়িয়ে কোলে বসিয়ে চুলে নাক ডোবায় এদিকে আলো তাড়াতাড়ি করছে।
.
-কি শুরু করলা? রান্না করবো তো
– উঁহু
– কি উঁহু? সবাই কি চাল পানি খেয়ে থাকবো?
– একদিন না হয় তাই থাকুক।।
-আরে! ছাড়ো! মা বকবে তো।
-আমরা ঠিক তিনটার সময় বের হবো। আরো বিশ মিনিট।
-রান্না?
-সে তখন দেখা যাবে।
-তো এতক্ষণ আমি কি করবো?
-আমার কোলে বসে গল্প করবে।
– আচ্ছা শুনো না, একটা কথা বলি? কিছু মনে করবে না তো?
– বলো
-আমি জানি না কিন্তু প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না
-কি বলো
– আসলে রহমান ভাই….
-দুলাভাই কি?
– উনার তাকানো,উনার ব্যবহার কেমন কেমন যেনো লাগে। তুমি আমায় প্লিজ….
-মানে…কেমন?
– হাসি তামাশা ঠিক আছে কিন্তু লিমিট ক্রশ করে যায়৷ অশ্লীল ভাষায় কথা বলে।
.
.
অয়ন জানে বিষয় টা আগেও খেয়াল করেছে তবে আলোকে কিছু বলা যাবে না। ভয়ে ভয়ে থাকবে।
.
-আচ্ছা শুনো। তুমি উনাকে ইগ্নোর করো তাই হবে৷ এখন যান ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি সবাই কে ডাকি।
.
.
খাবার টেবিলে চক্ষু চড়কগাছ। সব রান্না করা আছে । অয়ন মুচকি মুচকি হাসে। আলো সব টা বুঝেও কিছু বলতে পারে না। সবার সামনে বলতে গেলেই অয়ন থামিয়ে দিয়েছে।
.
খাবার টেবিলে আলোচনা হলো কাল অয়ন আর দুলাভাই একটু শহরে যাবে আর বাকী সবাই শপিংয়ে কারণ ঈদের আর দুই দিন বাকী।
.
খাবার পড়েও অয়ন হাতে হাতে কাজ করতে আসলে আলো বলে মসজিদে নামাজ পড়ে এসো।
.
সারাদিন বেশ ভালোই ব্যস্ততায় কাটলো সবার। বাসায় এসে গেটে নক করতেই তানজীন দরজা খুলে দেয়। তানজীন কে দেখেই অয়নের মুডের বারোটা বেজে যায়। এই সেই মেয়ে যার সাথে মা পারলে এখনো ওর বিয়ে দিয়ে দেয়। এই মেয়েও তাতেও রাজি৷
.
অয়ন কিছু না বলেই রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু আলো নেই। ইফতারের এক ঘন্টা বাকী । সে রান্নায় ব্যস্ত। ওকে আড্ডায় ডাকতেই অয়ন বললো
-আড্ডা টা পরে দিয়ে যদি আলোর হাতে হাতে কাজ গুলো করতি তাহলে হয়তো সময় তাড়াতাড়ি কাটতো।
.
বলেই রান্না ঘরে যায়। আলো ইলিশ মাছ রান্না করে কেবল নামালো। বাটিতে বাড়তে বাড়তে বললো
-তুমি যাও। রেস্ট নাও। আমি পারবো।
.
অয়নের চাহনি দেখে সে বুঝলো অয়ন বেশ রেগে আছে তাই আর কিছু বলার সাহস করলো না।
অয়ন হাতে হাতে কাজ করাতে প্রায় ১৫ মিনিট আগেই সব রেডি। আলো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অয়ন বিছানায় ফোন চাপছে।
.
-কি গো এখানে কেনো? চলো?
-তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
-ঈশ্! আমি যদি জানতাম তুমি আমার হেল্পার হইয়া যাবা তাইলে পুরো রোজার ছুটি নিতে বলতাম গো
-তাই না?.
-হু! এখন চলো
.
.
ইফতারের পর রাহেলা বেগম সবার ঈদের শপিং ব্যাগ যার যার টা হাতে দিচ্ছে শুধু নেই তো আলোর টা।
এতে আলোর কোন আফসোস নেই কারণ কোথাও না কোথাও সে জানতো এমন হবে।
নিজের ঘরে এসে অয়নের ফোনে গেমস খেলতে লাগলো। বাহিরে চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। হ্যাঁ অয়ন করছে।কিন্তু কি নিয়ে?
.দৌড়ে বাহিরে যেতে কানে শুধু এটুক আসলো যে
.
-বাহ্! মা বাহ্! সবার কথা তোমার মনে থাকলো যে আমাদের বাসায় টুকটাক কাজ করে তার কথাও মনে আছে শুধু মনে নেই তো বাড়ির বউয়ের কথা??
.
.
চলবে।