শ্বাশুড়ি পর্বঃ৮

0
1330

শ্বাশুড়ি
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৮
.
.
আলো ঘুমিয়ে আছে। কে বলবে মেয়েটার উপর দিয়ে এত ঝড় ঝাপ্টা গেছে?
অয়ন আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। বাহির থেকে আমিনের চিতকারের শব্দ আসছে।
এতক্ষণ তো শুধু অয়নের মা বলছিলো এখন ওর বোন ও বলছে।
আলো না কি এক সাথে দুই ভাইয়ের সংসার করছে৷।.
.
.
আলোকে রুমে রেখে অয়ন তালা দিলো। যদিও কেউ আর এই দুসাহস করবে না তবুও রিস্ক সে নিবে না৷
.
চাবিটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের পকেটে রেখে শার্ট পাল্টে টিশার্ট পড়ে নিয়েছে। এতক্ষণ শার্টে আলোর রক্ত লেগেছিলো। ফোন দুটো হাতে রেখেই আয়েশ করে মায়ের সামনে গিয়ে বসেছে সে।
.
সবাই অয়ন কে দেখে চুপ। আচ্ছা অয়ন কি বলতে যাচ্ছে?
.
-মা! জানো? আলো আমার থেকে গুণে গুণে আট বছরের ছোট। প্রথমে আমি ওর সাথে সম্পর্কে জড়াতে চাই নি। কিন্তু ওর বিহেভিয়ার কিংবা ওর স্বভাব আমাকে খুব টানতো৷ যখন ওর বাবা আমার সাথে বেরিয়ে আসতে বললো
ও ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। কিন্তু আমি ওকে ছাড়া চিন্তা করতে পারিনি নিজেকে৷ ও যদি সেদিন না আসতো আজ আমার এই শরীর হয়তো মাটিতে মিশতে শুরু করতো৷ কি বলো তো? ওকে তুমি প্রথম থেকেই মেনে নিতে পারো নি। বিবাহিত হওয়া স্বত্বেও তুমি আমার থেকে দূরে দূরে রেখেছো। কিছুই বলিনি । এর কারণ কি? শুধুই তানজীন কে বিয়ে? মা! আলো আমার সবটা জুড়ে আছে। থাকবেও। ও আমাকে জাদু করে বশ করছে?
তাহলে তো বলতে হয় তোমার মেয়ে তাও পারেনি।
আলোর জাদুতে তো তাহলে শক্তি আছে যে সে তার স্বামীকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে তার কাছে রেখেছে।পরনারীর আসক্তি হতে দেয় নি । এটা যদি আলোর আমার প্রতি জাদুটোনা হয়ে থাকে তাহলে আমি রাজি৷ আমি রাজি ওর কাছেই বশ হয়ে থাকতে।
.
অয়ন এই কথা বলে উঠে যায়। রুমের তালা খুলে আলোকে এক নজর দেখে এসে আবার আসে।
.
.
আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি অন্য সবার মতো হবে না। তোমার মেয়ে, মেয়ে অন্য কারো মেয়ে, মেয়ে না??
.
.
তোমার মেয়ে রোজা রেখে শরবত বানাতে পারবে না অথচ পরের মেয়ে বাড়ির সব কাজ করবে। তোমার মেয়ের জন্য মেয়ের জামাই কিছু কিনা আনলে বাহ্ বাহ্ কপাল করে মেয়ের জামাই পাইছি আর ছেলের বউ সামান্য কিছু চাইলেই না জানি কত জন্মের পাপ?
.
.
কথা তো ঘুরে ফিরে সেই এক কথাই হয়।
আমার মেয়ের জামাই কত্ত ভালো আমার মেয়ে যা বলে তাই শুনে একবারে সোনার টুকরা আর শ্লার পোলাডায় মানুষ হইলো না। উঠতে বসতে বউয়ের কথা শুইনা নাঁচে।
.
তোমার প্রতি মা এগুলো আলোর অভিযোগ না কিন্তু। আলো তো কিছুই বলেনি৷ জানো? তোমার মাঝে ও নিজের আম্মু কে খুজে। তোমার সব কথা শুনে। তুমি চাইলে ওকে আগলে ধরে রাখতে পারতা। একদম বুকের ভিতর কিন্তু তুমি তাড়িয়েছ বার বার।
আজকে আলোর সাথে যা যা হয়েছে তোমার উচিৎ ছিলো আলোর পক্ষ নেওয়া। অন্তত মেয়ে হয়ে তুমি কি করলে?
ছিহ্! এত জঘন্য ভাষা তোমার? তোমাকে আমার কিছুই বলার নেই। আলো এবাড়িতে থাক তোমার এটা পছন্দ না। তাই তো? থাকবে না ও এবাড়িতে। চিন্তা করো না।
.
.
-দুলাভাই! ডাকতে মুখে বাজছে কিন্তু কি করবো? বোন দিয়েছিলাম যে। আফসোস চেহারা দেখে চরিত্র বুঝা যায় না।
আলো আপনাকে কাছে টেনেছিলো?
তাহলে কাল আপনি কেনো ঘুমন্ত আলোর পেটে হাত দিচ্ছিলেন?
আলো আপনাকে আসতে বললেই কেনো আসলেন? আপনি কি বাচ্চা? আচ্ছা সব মানলাম। আলো যে আপনাকে ম্যাসেজ দিয়েছিলো সেইটা কোথায়?
প্লিজ দেখান।
.
এই সময় দুলাভাই আমতা আমতা শুরু করে।
-আসলে তখন ফোন কই যে! আমি ঠিক জানি না।
-আলো কখন ম্যাসেজ দিছিলো? বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর?
-হু! তার দশ মিনিট পর।
– ম্যাসেজ কি আলোর নাম্বার থেকেই দিছিলো?
-হ্যাঁ রে ভাই। আমি মিথ্যা কেনো বলবো?
.
অয়ন সামনের টেবিলে জোরে দুহাতে থাপ্পড় দিয়ে বলে
.
-আপনি মিথ্যা বলছেন কারণ আলোর ফোন আমার কাছে ছিলো। আপনি মিথ্যা বলছেন কারণ আপনি একটা কুলাংগার।
-অয়ন! সাবধানে কথা বলো।
-কি বলবো?কিছু বলার রেখেছিস তুই? কাল যদি আমার আলো আমাকে সব না বলতো আমি ওকে অবিশ্বাস করতাম। আজ যদি আলো নিজের রক্ষা না করতে পারতো আমি মরে যেতাম। তোর সাহস কি করে হয় আলোর দিকে তাকানোর? ও শুধু আমার সম্পদ। রেপ এত সোজা না। তোকে আমি চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াবো কুত্তার বাচ্চা। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। তোকে আমি ছাড়বো না। কাল সকাল হতে দে একবার।
.
.
অয়ন রুম থেকে চলে যেতে নিলে অয়নের বড় খালু ওকে থামায়।
-বাবা শান্ত হও। জানি রাগ হচ্ছে কিন্তু রাগের মাথায় নেওয়া সিদ্ধান্ত ঠিক হয় না৷ শুনো তোমার বোনের দিক টা চিন্তা করো। কেস কামারি তে গেলে দুই মাইয়্যার ইজ্জত যাবো। তুমি শিক্ষিত মানুষ। একটু চিন্তা করো।
.
.
অয়ন উত্তর না দিয়ে রুমে চলে আসে। রাগ এখন কান্নায় পরিবর্তন হয়েছে। আলোর পায়ের কাছে বসে কান্না করেই যাচ্ছে। সে পারেনি আলোকে সুরক্ষা দিতে।
.
.
ভোর রাতে আলোর ঘুম হালকা হয়। বুঝতে পারে কেউ ওর উপর দিয়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে আছে। কোন চিন্তা না করেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চিৎকার করে উঠে।
.
-আলো! আলো! আমি অয়ন। প্লিজ শান্ত হও । আমি তো দেখো? কিছুই হয় নি।
.
অয়ন কে পেয়ে সব কিছু আবার মনে পড়ে। ফুপিয়ে কেঁদে উঠে আলো। অয়ন কে সব বলতে থাকে। অয়ন হেসে বলে
-একবার বলেছেন! ভুলে গেলেন?
-বাহ্ রে! ঘুম থেকে উঠলেন,খাবার খেলেন। সব ভুলে গেছেন?
– তুমি কি আমাকে ছেড়ে দিবে?
– আশ্চর্য তো! এটা কেমন কথা?
– আমি তোমার দুলাভাই এর মাথা ফাটিয়েছি।
– জানি।
– আমি ……..
– তুমি নিজের রক্ষা নিজেই করেছো। তাছাড়া খারাপ কিছু হলেও আমি তোমায় ছাড়বো না। কারণ তুমি আমার টুনটুনি।
-আমি টুনটুনি না। মা কে কি বলবো? আপু? আমার খুব ভয় লাগছে।
-হয়েছে? এখন উঠো। যাও কফি করে নিয়ে এসে ৩০ মিনিটের মধ্যে রেডি হবে। ৭.১০ এ আমাদের বাস। এখন বাজে ৬.১২। দ্রুত করো যাও।
-কোথায় যাচ্ছি আমরা?
-টুনাটুনির সংসার পাততে…….
.
.
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে