শ্বাশুড়ি পর্বঃ৭

0
990

শ্বাশুড়ি
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৭
.
.
আলোকে দেখে অয়নের চিৎকার আসছে। কোন মতে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুয়িয়ে দিলো।
কারণ আলোর কপালের বা পাশে কেটেছে। বাম পায়ে কাচঁ ভাঙা, দুহাতে খামছির দাগ।
.
অয়ন আমিন কে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বললো।
আমিন বেরিয়ে গিয়ে বাকী সবাই কে বাসায় আসতে বলে। দুলাভাই পড়েই আছে। আমিনের নূন্যতম মায়া হচ্ছে না তার জন্য। মগে করে পানি আর ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন অয়ন দরজা খুলবে।
.
আলোর এমন অবস্থা যে অয়ন ধরতেও ভয় পাচ্ছে৷ কোন মতে সালোয়ার কামিজ চেঞ্জ করে দেয়। হাত গুলোতে তাকিয়ে দেখে ওর অবস্থা খুব খারাপ।
অথচ অয়ন ওকে কখনো জোরে ধরেনি। ব্যথা পাবে বলে না। আলো প্রচন্ডরকম ফর্সা। রিলেশনের সময় একদিন রাগ করে অয়ন ওর হাত খুব জোরে চেপে ধরে অনেকটা পথ এসে যখন হাত ছাড়ে তখন দেখেছিলো।
কালো বোরকায় আবৃত আলোর হাত পুরো লাল হয়ে আছে। অয়নের আঙুলের দাগ স্পষ্ট। সেই থেকে অয়ন খুব সাবধানে আলোকে স্পর্শ করে আর আজ না কি সেই আলোর দু হাত লাল হয়ে রক্ত পড়ছে।
রাগ সামলাতে না পেরে দেয়ালে জোড়ে দুবার ঘুষি দিতেই আমিন ডাক দেয়।
.
.
আমিন আলোর পায়ে ব্যান্ডেজ করছে অয়ন কপালে আর হাতে। আমিন মেডিসিন নিয়ে পড়ালেখা করাতে এবিষয়ে মোটামুটি ধারণা রাখে।
.
স্যাভনল লাগানোর সময় আলো বারবার ব্যথায় কান্না করে উঠছিলো।
.
কিছুটা হুশ হলে আলো অয়নকে দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
.
আমিন গিয়ে হাত ধরে বলে।
.
-আপু! তুমি আমার থেকেও চার বছরের ছোট। ভাই হিসেবে তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো। জোড় করে না। কিন্তু আমার জানা প্রয়োজন। না হলে তোমাকে কেউ ছেড়ে দিবে না যে।
.
অয়ন জড়িয়ে রেখেছে আলোকে। অয়নের গলায় নাক ডুবিয়ে অনবরত কান্না করছে আলো।
.
-বলো আপু! কি হয়েছে?
-ভাইয়া!
-বলো
– আপনারা চলে যাওয়ার পর মা বললো আমাকে বাসায় থাকতে আর রাতের খাবার বানিয়ে বাসা ঠিকঠাক করতে। আমি উনার কথার উপর কথা বলিনি৷ আপনার ভাইকে কল দিবো তখন দেখি আমার ফোন উনি নিয়ে গেছেন৷ তাই কাজ করছিলাম। হঠাৎ গেটে নক হয়। দেখি দুলাভাই আসছে। উনি না কি ভুলে মানিব্যাগ রেখে গেছে। তো উনি ভিতরে আসার পর আমি আমার মতো কাজ করছিলাম। কিছুক্ষন পর মনে হলো উনি চলে গেছেন তাই ওড়না রেখে ড্রয়িং রুমে কাজ করছিলাম। হঠাৎ উনি এসে……
.
.
আলো আর কিছু বলে না। ফুপিয়ে কান্না করছে। অয়ন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । অয়নের এই চুপচাপ থাকা যেনো ঝড়ের পূর্বাভাস।
.
-উনি কি তোমার কোন ক্ষতি করতে চেয়েছিলো?
.
আলো এত কথা বলতে পারে না। ঘুমের ইঞ্জেকশন এর কারণে কথা আওড়িয়ে যাচ্ছে।
শুধু বলে ও অনেক হাতে পায়ে ধরে কিন্তু উনি জবরদস্তি করতে থাকে। আলো কিছু না পেয়ে হাত পা দিয়ে আঘাত করে। কিন্তু তাও পেড়ে উঠছিলো না। লোকটা খুব খারাপ ভাবে স্পর্শ করছিলো। তারপর হাতের কাছে কাসার একটা গ্লাস পায়। ওটা দিয়ে ওর মাথায় বাড়ি মারে আর কোন ভাবে নিজেকে স্টোররুমে বন্ধ করে দেয়। ও ইচ্ছা করে মারেনি। ও নিজেকে বাচাঁনোর জন্য মেরেছে।
.
শেষের কথা গুলো বার বার আওড়াতে আওড়াতে আলো ঘুমিয়ে যায়।
.
অয়নের চোখ জ্বলছে। লাল হয়ে গেছে। আজ ও ওই ব্যাটার জান নিয়েই নিবে৷ বোনের জামাই বলে কিছু বলেনি এতদিন। কিন্তু আজ অয়নের সম্পদে হাত দিছে৷ ওর হাত ভেঙে ফেলবে।
.
.
বাড়ি এসে রাহেলা বেগম আর আলিশা এসব দেখে চিৎকার করতে থাকে। আমিন গিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেয়।
.
কেউ কিছুই বলছে না। তবে সবাই জানে আলো কে নিয়েই কিছু হয়েছে।
দুলাভাইয়ের কিছুটা জ্ঞান ফিরলে সে যা বলে তাতে সবাই অবাক হয়ে যায়।
.
-বাড়ি থেকে যাওয়ার পর আলো আমার ফোনে ম্যাসেজ দেয়। ভাই একটু বাড়ি আসেন। খুব দরকার। আমি ভাবলাম আমরা সবাই এখানে না জানি মেয়েটার কি বিপদ হলো। বাড়ি আসতেই দেখি সে সুস্থ। বসে কথা বলার সময় বার বার কাছে আসছিলো। আমি ওকে কত ভাবে বুঝালাম। কিছুতেই বুঝলো না। ও আমার সাথে জবরদস্তি করতে লাগলো৷ নিজেকে নানা ভাবে আমার কাছে আনতে চাচ্ছিলো। আমি রাজি হচ্ছিলাম না। কারণ ও আমার শালার বউ তো…..
কিন্তু যখন ও খেয়াল করলো অয়ন আমিন বাড়িতে আসছে তখন ও আমার মাথায় বাড়ি দিয়ে লুকিয়ে পড়লো না হলে যে ওর সব সত্য বেরিয়ে যাবে।
.
.
ওর কথা শুনে সবাই অবাক। রাহেলা বেগম তো আরো জ্বলে উঠলো। যা ইচ্ছে তাই বলছে। ওর শরীরের ক্ষুধা এত্ত? মেয়ের জামাই কেও ছাড়লো না?
.
.
.
অয়ন চুপচাপ শুনছিলো। আলো গভীর ঘুমে। হঠাৎ আমিন এসে আলোকে ডাকে। আলো চোখ খুলতেই আমিন ওর হাত ধরে নিয়ে বাড়ির সবার সামনে দাঁড়ায়।ভর সামলাতে আলো পুরোটা সময় অয়নের বুকে মাথা রেখে আছে।
.
.
আল্লাহ্ কে ভয় করো মা! আল্লাহ্ কে ভয় করো । পরের মেয়েরে এসব কিভাবে বলতে পারো? আর দুলাভাই? আলো আপনাকে কখন ম্যাসেজ দিছে? কাইন্ডলি দেখাবেন? আর হুম! আলো যদি আপনাকে জোড় করতো না? তাহলে এই যে ওর শরীরের দাগ গুলো আপনার শরীরে থাকতো। আমরা আসার পর আলো যদি আপনাকে আঘাত দিতো তাহলে এত রক্ত পড়ছে কেনো? আর আলোকে আমরা কি অবস্থায় দেখেছি আমরা জানি।
বাই দি ওয়ে আপনি এত দুধে ধোয়া তুলশি পাতা হলে সেদিন রাতে আলো গোসল করছিলো আপনি গোসল খানার আশেপাশে কি করছিলেন?.
ওকে আমি ছোট বোনের মতো আগলে রাখতাম যখন যখন আপনি বাড়ি আসতেন। আপনাকে আমি সেদিনই মেরে তক্তা বানাতাম যেদিন আপনি ওর দিকে খারাপ নজর দিয়েছিলেন। কিন্তু পারিনি। কেনো জানেন তো? ওই যে আরেক বোন আপনার কাছে দিছি। আপনাকে কিছু বললে তো ওর সংসার যাবে। কিন্তু আজ পানি গলার উপরে উঠে গেছে। আপনার অশ্লীল ভাষায় হাসিতামাশা আপনার অঙভংগী সব ছাড়িয়ে গেছে৷
আজ আমি পারলাম না বড় বোনের সংসারের কথা চিন্তা করতে। তা করতে গেলে আমার এই বোন টা আজ মরে যাবে। আমি পারবো না এটা করতে।
.
.
আমিন যে কতটা রেগে আছে সেটা ওর কথায় স্পষ্টত। আলোকে বুকে নিয়ে অয়ন দাঁড়িয়েই আছে। আলো চোখ খুলে ফিসফিস করে অয়নের কানে বললো…
.
– আমার না প্রচন্ডরকম ক্ষুধা পেয়েছে। কিছু না খেলে এখনি বমি করে দিবো৷ তখন কিন্তু তোমার পরিষ্কার করতে হবে।
.
আলোর কথা শুনে অয়ন ফ্যালফ্যাল করে তাকালো আলোর দিকে। সজ্ঞানে থাকলে মেয়েটা কান্না করতে করতে অস্থির থাকতো। অথচ এই অবস্থায় ক্ষুধার কথা বলছে। অয়ন হাসে। চুপচাপ ওকে ধরে একটা চেয়ারে রান্না ঘরে বসিয়ে খাবার গরম করে হাতে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। আলো হঠাৎ করে বলে
.
-ওগো! এত সুখ আমার কপালে সইবে তো?
.
.
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে