শ্বাশুড়ি
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৫
.
.
.
আলোর চুল দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। সে দ্রুত হাতে খাবার সাজিয়ে রুমে গেলো। আজ শেষ সাহরি। সবাই উঠলেও অয়ন উঠেনি।
রুমে গিয়ে দেখে সে ঘুমে বিভোর।
কোন মতে তাকে জাগিয়ে আলো গেলো শ্বাশুড়ির রুমে।.
.
আলোর শ্বাশুড়ি আলোকে দেখছে। আজ তার চোখে মুখে আলাদা একটা আলোর ছটা। বিরক্তিকর ভাব ফুটে উঠেছে তার মুখে।
অয়ন কে আসতে দেখে তানজীনের মুখের রঙ পাল্টে গেছে।
তবে কি শেষ রক্ষাও হলো না?
.
.
সাহরি খাওয়া শেষে আলো রুমে এসে বসলেই অয়ন বলে
.
-পেয়ারা ভর্তা করেছিলা?
-পেয়ারা কই পাবো?
-আলো! এখন এটা বলবে না যে তুমি পেয়ারা নিয়ে ওয়ারড্রবে রেখে দিয়েছো!
-হুম?
-শপিংব্যাগ কই?.
-ওয়ারড্রবে
– যাও দেখো ওখানে রাখা আছে। কাল না বললে খাবে তো না খেয়ে সাজিয়ে রাখছো ক্যান?
-তুমিও তো বলো নাই
-বলার মতো অবস্থা কাল তুমি রেখেছিলে?
-মানে?.
-কিছু না! যাও দেখো।
.
.
তানজীন প্রচন্ডরকম কান্না করছেভ।কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে। তবুও কান্না থামাতে পারছে না রাহেলা বেগম।
ভাতিজির এমন কান্না দেখে সে নিজেই কান্না করতেছে। এসব হয়েছে আলোর জন্য। মেয়েরা আর যাই পারুক না কেনো নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখতে পারে না৷
.
.
-কান্না করিস না মা!
-আপনি পারেন নি, পারেন নি আলো কে আলাদা রাখতে।
-আমি তো চেষ্টা করেছিলাম তাই না? কাল রাতে তোকেও তো পাঠালাম।
-তাতে কি হলো? সর্বনাস তো আমার হলো। তাই না?
– দেখিস আমি একদিন ঠিক ওরে তাড়াবো।
– হুহ! কি বললা? জীবনেও পারবা না। তাতে কি আর আজকের রাত টা বদলে যাবে?
.
-শোন মা! পুরুষ মানুষের এসব দোষ ধরতে নেই৷ থাকুক না ওর সাথে। তাতে কি অয়নের কিছু আইবো যাইবো না কি? তুই হাল ছাড়িস না, তাতেই সব হবে।
.
.
রান্নাঘরে থেকে আসার সময় আলো সবটা শুনলো। খুব কষ্ট হচ্ছিলো। হ্যাঁ! সে তানজীনের মতো এত সুন্দরী না তবে কি অয়ন সত্যি ছেড়ে দিবে? যদি দেয় তাহলে কোথায় যাবে?
.
-তুমি অয়ন ভাইরে তোমার মাথায় হাত রাইখা প্রতিজ্ঞা করাও যে আলোকে ছাড়বে। তাহলেই আমি মানবো।
.
তানজীনের এই কথা শোনার পর আলোর পা আর চললো না। এমন টা হলে সব শেষ হয়ে যাবে। আলো বেশ বুঝতে পারছে তার সময় ফুরিয়ে গেছে এবাড়িতে।
হয়তো আর দু একদিন। অথবা কয়েকঘন্টা।
যখন শ্বাশুড়ি চাইবে ওকে বের হয়ে যেতে হবে। কারণ অবশ্যই কোন ছেলে মায়ের জীবনের বদলে বৌ কে চাইবে না। যেখানে সে আলোর থেকে রূপবতী মেয়ে পাচ্ছে।
.
.
আলো রান্নাঘরে ফিরে এলো। হাতে হাতে সব কাজ করছে। মোটামুটি কাজ করতেই সকাল হলো। অয়ন ঘুমেই ছিলো। ওর পাশে বসে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে আলো বেরিয়ে যায়।
.
আজ সারাদিন অনেক কাজ। রোজা রেখে এসব করতে কষ্ট হচ্ছিলো তবুও করে যাচ্ছে। মনে ভয় তো ছিলোই।
.
অয়ন ঘুম থেকে উঠে আলো কে খুজছে কিন্তু সে এত ব্যস্ত? রোজা রেখে এসব করার কি দরকার?
দুপুর নাগাদ আলোর সব কাজ শেষ হলে গোসল করে রুমে এসে দেখে সবাই শ্বাশুড়ির ঘরে বসে কথা বলছে।
হয়তো সময় শেষ। দ্রুত সে নামাজ পড়ে শ্বাশুড়ির ঘরে যেতে যেতে দেখলো অয়ন বেরিয়েছে।
.
.
বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করেছিলো আলো। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পায় পেটে।
চোখ খুলতেই দেখে দুলাভাই।
উঠে বসতে বসতে বললো
.
-দুলাভাই! আপনি? কিছু লাগবে?
-চাই তো অনেক কিছুই৷
-কি? বুঝলাম না?
-তোমার কাছে মাথা ঠান্ডার তেল আছে? থাকলে দেও তো। তোমার বুবুর মাথা ধরছে।
.
.
আলো কিছু না বলে উঠে হাতে তেলের বোতল ধরিয়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
.
.
-অয়ন ভাই কাল তোমার জন্য কাল এত কি কি আনছে?
-সব তো খুলে দেখিনি।
-মেহেদী?
-হয়তো বা
-জানো প্রতি বছর আমি ভাইরে মেহেদী দিয়ে দেই৷ আমার হাতে মেহেদী না দিলে না কি তার ভালো লাগে না।সে মেহেদী তো আর হাতে দেয় না। দেয় তার বাহুতে । দেইখো কি কাহিনী করে এই মেহেদী নিয়া।
.
.
কথাগুলো বলে তানজিন চলে যায়, যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে আলো।
.
.
বিকেল হতেই সারা বাড়ি মানুষে ভরে গেছে। আরো অনেক কাজিন এসেছে। এদের সবার রান্নাবান্না করতে আলো হিমশিম খাচ্ছে।
কেউ এগিয়েও আসছে না৷ হ্যাঁ এসে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছে।
আজ একটু বেশিই খাটনি হচ্ছে।
.
.
পিছন থেকে দুটো হাত এসে আলোকে জড়িয়ে ধরলো। আলো কিছু না ভেবেই হাতে গরম ভাজা কাটার ছ্যাক দিতে অয়ন ওকে ছেড়ে দূরে দাড়ায়।
.
-এটা কি ছিলো?
-ওহ! তুমি?
– অন্য কাউকে আশা করেছিলে? দেখি সরো তো বেগুনি টাও ভাজা শিখলা না। দাও দাও আমি ভাজি।
-হু!
-কি?
-কিছুনা।
-তা তো অবশ্যই। জলদি বলে ফেলো না হলে তো জানোই…
.
আলো ধীরেধীরে সাহরি থেকে শুরু করে দুপুরের সব কিছু বললো।
অয়ন শুধু বললো
– ছাড়ার হলে আগেই ছাড়তাম। এত কষ্ট নিতাম না। মা মায়ের জায়গায় আর স্ত্রী স্ত্রীর জায়গায়। দুজনের তুলনা হয় না। তাই নিশ্চিত থাকো।
.
.
ইফতারের সময় বয়স্ক আলাদা বসেছে আর সবাই আলাদা। অয়ন,আমিন হাতে হাতে সব টা করেছে। আলো অয়নের পাশে বসে।
.
ইফতারের সময় বেশ আড্ডা জমে উঠেছে। তো শালিরা হাসি তামাশা করে দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করে
.
-আমরা এত গুলো শালী, দুলাভাই আজকে শোয়ার জায়গা পাবেন তো?
-আরে সমস্যা নাই, সমস্যা নাই। আমার একটা লাঠি আছে না? ওই লাঠি তে একজন একজন করে আইসা শুইবা। সময়, রাত, ঘুম সব পাড় হবে।
.
এমন কথা শুনে বেশির ভাগ চুপ হয়ে গেলো আর তানজীন তো হেসেই খুন। আলো প্রথমে না বুঝে অয়নের দিকে তাকাতেই অয়ন ঈশারা করলো ওর খাবার নিয়ে রুমে চলে যেতে। এমন অসুস্থ পরিবেশে না থাকাটাই ভালো। সময় বুঝে ও উঠে চলে এলো। তানজীন আটকে দিতে চাইলে ও তানজীনের কানে কানে বললো
.
-তাঞ্জু! আজকে চাঁদ রাত। আর আমি আমার চাঁদ টা একা রেখে এখানে কিভাবে বসি বলতো.? তুই প্লিজ সামলে নে, আমার চাঁদ আবার অভিমান করবে দেরি হলে…….
.
.
চলবে।
Next Part……????