শ্বাশুড়ি পর্বঃ১১

0
1205

শ্বাশুড়ি
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ১১
.
.
আলোর মাঝেমধ্যে অই বেহায়া নরপিশাচ টার কথা জানতে ইচ্ছে করে।
আপু কি বলেছিলো তারপর? কি হয়েছে তাদের মাঝে? আপু কি মেনে নিয়েছিলো ওই শয়তান কে? আচ্ছা আপুর মেয়েটা কার মতো হয়েছে? ও কি জানে ওর একটা মামি আছে? বড় হয়ে যদি কখনো জানতে পারে ওর বাবার কাজ তখন ও কিভাবে নিবে? ওর বাবা কি কখনো ওর সামনে চোখ তুলে তাকাতে পারবে?
.
এসব প্রশ্নের উত্তর নেই আলোর কাছে। থাকবেই বা কি করে। অয়ন এর পর থেকে কিছুই আলোকে জানায় নি। মাঝে বড্ড ঝড় বয়ে গেছে ওদের বোনের জীবনে কিন্তু সেই ঝড়ের দমকা বাতাস লাগেনি আলোর জীবনে।
.
আলো অয়ন কে বড্ড ভয় পায়। না আলো ভয় পায় অয়নের রাগ কে। যা অয়ন সহজে দেখায় না, আলো দেখতেও চায় না।
.
.
আমিনের বিয়ে নিয়ে আলোর খুব ইচ্ছে ছিলো কিন্তু আলোই আসতে পারলো না তাই খুব একটা আমেজ নেই বিয়েতে। আলো এতে মন খারাপ করেনি, হয়তো গেলে অনেক কথার সম্মুখীন হতে হবে যা এখন সে নিতে পারতো না৷
.
.
.
এদিকে আলোর ডেলিভারির ডেট এসে গেছে। নরমাল ডেলিভারিতে রিস্ক আর যেহেতু টুইন বেবি তাই আর কোন রিস্কের প্রশ্ন আসেনি। যতক্ষণ অটিতে ছিলো অয়ন শুধু এপাশ ওপাশ করেছে।
গতকালের আলোর কথা তার মন থেকে যাচ্ছিলো না। আলো মজার ছলে বলা কথাও যে এতটা ইফেক্ট ফেলবে কেউ বুঝেনি।
.
-শুনো! আমি মরে গেলে কি করবা?
– লাল টুকটুকে বউ আনবো। আর কি করবো?
-আর আমার বাচ্চারা?
– থাকবেই।
– সৎ মা যদি ভালো না হয়?
– তাহলে একটু বড় হলেই হোস্টেলে দিয়ে দিবো।
– আচ্ছা।
.
আলো কিছুটা মন খারাপ করে। তখন অয়ন মাথার কাছে বসে বলে
– কাল যদি ডেলিভারির ডেট না হতো তাহলে ঠাটিয়ে দুটো চড় তুমি দুগালে খেতে ।
এমনি তেই আমার প্রাণ যায় যায় আর উনার মুখের কি বুলি। বাহ্! মরে যাবে? যাও তবুও শান্তুি দিবো না। কেনো জানো? তোমার জন্য অনেক ছাড়ছি কিন্তু তোমাকে ছাড়তে পারবো না৷।
.
– মরে গেলে আটকে থাকবা তো আর না? তখন লাল টুকটুকে বউ এনো।
– তোমাকেই রাখবো। মেনিকুইন বানিয়ে তোমাকেই রাখবো। তোমার সাথেই সংসার করবো, প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় তোমার কপালেই চুমু দিবো, ফিরে এসে ঘামে ভেজা শরীরে জড়িয়ে ধরবো, রাত্রে তোমার সাথেই থাকবো৷
– ছিঃহ্! কি অশ্লীল চিন্তাভাবনা।
– অশ্লীল হলে অশ্লীল। তবে এটাই সত্যি।
.
.
কালরাতের কথা আলোর কথা অয়নের মন থেকে যাচ্ছে না। প্রায় সাত মিনিটের মাথায় আলো অয়নের প্রথম সন্তান পৃথিবীতে এলো। ছেলে হয়েছে কিন্তু অয়ন দেখছে না। দৃষ্টি অটির লাইটে স্থির হয়ে গেছে তার।
পাঁচ মিনিট পর সাদা তোয়ালে তে প্যাচানো মেয়েকে ও নিয়ে এলো।
সবাই খুশি। আমিন তো দুই জন ভাতিজা,ভাতিজি পেয়ে খুশি হয়ে কান্না করে দিছে। রাহেলা বেগম কে কতবার বললো আসতে কিন্তু সে এলো না। সে তার প্রথম বংশধরের মুখ দেখলো না শুধু মাত্র আলো জন্ম দিলো বলে?
.
.
আলো সুস্থ আছে। কেবিনে দেওয়া হলে সবাই ওদের প্রাইভেসি দিয়ে চলে যায়।
আলো দেখে অয়নের চোখ লাল। এমন তখন হয় যখন ও চোখের পানি পড়তে না দেয়।

.
-ওগো! তোমার আর লাল টুকটুকে বউ আনা হলো না।
..

অয়ন চুপচাপ আলোর মাথায় হাত রেখে কান্না করতে থাকে।আলো বেশ ঘাবড়ে গেলেও কিছু সামলে নিয়ে বলে।

– আমি ঠিক আছি, তুমি বাবুদের দেখছো?
– উঁহু
– কেনো?
– তোমার চিন্তায় ছিলাম৷
.
..
সাত দিন পর আলো বাসায় আসে৷ আকীকা করে দু বাচ্চার নাম রাখা হয়
আরশান মেহেবুব রোদ, আরশি ইসলাম মেঘ । দুটো নাম আলোর রাখা।
.
এই সাত দিন অয়নের কষ্ট বেশি হয়েছে। অফিস থেকে ক্লিনিক, ক্লিনিক থেকে বাসা আবার অফিস। রাত গুলো কাটিয়েছে ওয়েটিং চেয়ারে।
অদ্ভুত! মানুষ মনে করে মা হওয়া শুধুই মেয়ের কষ্ট। কিন্তু না তা নয়। বাবার দায়িত্ব তখন দ্বিগুণ হয়।
মা কে আরাম দিতে গিয়ে বাবা যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে এটা সচরাচর চোখে পড়লেও আমরা মানতে চাই না।
.
.
অফিস থেকে অয়ন এসেছে অনেক ক্ষণ এদিকে আলোর সাথে ওর মা থাকবে। বাবুকে নিয়ে রুমে এসে দেখে অয়ন দিব্যি আলোর ডান কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। আলো কিছু বলার আগেই আলোর মা ঈশারা করলো না জাগাতে৷
বেচারা অনেকদিন ঠিক করে ঘুমায় না।
আমিনের বিয়ের সময় আলোর মা দেখেছে কিভাবে অয়ন প্রতি রাতেই ফিরে আসতো। সারা দিন প্রোগ্রাম আবার রাতেই ফিরে এসে সকালে চলে যেতো শুধু আলোকে ছাড়া থাকবে না বলে৷
.
.
.
দেখতে দেখতেই আট মাস পার হলো। আলোর বাবুরা এখন হামাগুড়ি দেওয়া শিখেছে। সারাদিন বাসা মাতিয়ে রাখে। কিন্তু দুই বাচ্চার প্রভাব আলোর উপর খুব একটা পড়েনি। অয়ন, আলোর পরিবার যথেষ্ট দেখাশোনা করে৷ কিন্তু বাচ্চা তো বাচ্চাই হয়। আলোর দিকেও কম ঝামেলা হয় না। সারাদিন সামলাতে হয় ছেলেটা শান্ত হলেও মেয়েটা খুব চঞ্চল।
এই আট মাস আলো রাহেলা বেগমের জন্য অনেক অপেক্ষা করেছে কিন্তু সে একবার কল দেয় নি। এসব ভেবে মন খারাপ হলেও প্রকাশ করার উপায় নেই।
.
সারাদিন মায়ের কাছে খেলেও রাতের খাবার আর ঘুম টা কিন্তু অয়নের দায়িত্ব । দুই বাচ্চাকে এক সাথে বুকে নিয়ে দিব্যি ঘুমায়। মাঝেমধ্যে দুজন কে এক সাথে কোলে নিলে আলো বলে
-ওগো! আমি বাদ থাকবো কেনো? আমিও আসি?
.
রাত প্রায় তিনটে। গভীর ঘুমে সবাই। হঠাৎ অয়নের ফোনে কল আসে। আলো রিসিভ করলে অয়ন কে চায়৷ কিন্তু সে তো দুই বাচ্চার মাঝে। খুব্ আস্তেধীরে ডাক দিলে অয়ন ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
এসেই দ্রুত রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় শুধু আলোকে বলে সাবধানে থাকতে সে দ্রুত আসবে। বাবুদের খেয়াল রাখতে আর আলোর মা কে না যেতে কারণ কাল তার চলে যাওয়ার কথা।
.
ভোর রাতে অয়নের কি কাজ পড়লো আলো জিজ্ঞেস করেনা। প্রয়োজনীয় হলে অয়ন বলেই যেতো।
এদিকে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললো। অয়নের আসার কোন খবর নেই।
মাঝে আলো কল দিলে ম্যাসেজ দিয়েছে, সে ব্যস্ত আছে কিন্তু তাও পাঁচ ঘন্টা আগে।
এবার আলোর অস্থির লাগছে, কখন আসবে, কোথায় গেছে কিন্তু অয়ন আসার নাম নেই। প্রায় সন্ধ্যা সাত টায় কলিং বেল বাজলো। দরজা খুলে আলো যা দেখলো তাতে তার ভিতরে হাজারো প্রশ্নের ঝড় বইতে শুরু করেছে।
.
.
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে