শেষ রাত পর্ব-১২+১৩+১৪

0
1300

#শেষ_রাত
#পর্বঃ১২
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘অনুপাখি শুনছো! ভালোবাসি।’

অসময়ে কাঙ্ক্ষিত এই কথাটা শোনা মাত্রই খাঁ খাঁ করে উঠলো কান দুটো। যেন জ্বলন্তআগুনের শিখা ঢেলে দিয়েছে কান দু’টোতে। মূর্তির ন্যায় স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নোনাজলের স্রোতে ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম সামনের মানুষটার দিকে। ঠোঁটের কোণে মনকাড়া হাসির রেখা টেনে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ। চোখদুটোতে তার অসীম মুগ্ধতা। হাসি মুখে এগিয়ে এলো সে। আমাকে নিরুত্তর নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিকটা ঝুঁকে মুখোমুখি হলো। আমার ডান গালে হাল্কা টান দিয়ে অত্যন্ত নরম গলায় বলল-

‘কি হলো অনুপাখি? বিশ্বাস হচ্ছে না আমি এসেছি!’

সাদাফের স্পর্শে পুরো শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কেঁপে উঠলো। তার ছোঁয়া কাঁটার মতো বিঁধলো গায়ে। মস্তিষ্কের পুরোটা জায়গায় এলোমেলো হয়ে ছুটতে লাগলো একটাই কথা। আমাকে স্পর্শ করা তার উচিত হয়নি। মোটেও উচিত হয়নি। অনুচিত ভীষণ অনুচিত এই স্পর্শ। আমি ধ্রুব স্ত্রী। ধ্রুব হাসানের স্ত্রী আমি। আমাকে স্পর্শ করার অধিকার সাদাফের নেই। একদমই নেই।

‘এই যে কোথায় হারিয়ে গেলে?’

সাদাফ আবারও গালে টান দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে। সাদাফের কন্ঠে আমার হুশ ফিরলো। সচল হলো আমার মস্তিষ্ক। তৎক্ষনাৎ সাদাফের হাত এক ঝাটকায় সরিয়ে দিয়ে দু এক পা পিছিয়ে গেলাম। তীক্ষ্ণ চোখে তাকালাম তার দিকে। আকাশসম অভিমান আর রাগের নিচে চাপা পরে গেল আমার কন্ঠস্বর। এতদিন ধরে জমিয়ে রাখা সকল কথা হঠাৎ করেই যেন স্মৃতির পাতা থেকে মুছে গেল৷ ভুলে গেলাম আমি সব কিছু।
সাদাফ দু’হাত উঁচু করে রসিকতার ভঙ্গিতে বলল-

‘ওকে ধরবো না তোমার গাল৷ রাগে তো দেখছি একদম আইটেম বোম হয়েছে আছো। একটা প্রবাদ শুনেছো নিশ্চয়ই- যাহার মস্তিষ্কে রাগের পাহাড়, তাহার মস্তিষ্কে’ই ভালোবাসার শৃঙ্গ। তবে যাইহোক রাগলে তোমাকে ভীষণ কিউট লাগে। বিশেষ করে তোমার টমেটোর মতো গাল গুলো।’

আমি এবারও চুপ করে রইলাম। সাদাফকে বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পেলাম না। মস্তিষ্কে ঘুরছে হাজারো কথা তবে সব কিছুই এলোমেলো। দলা পাকানো।
সাদাফ হাত নামিয়ে পকেটে গুঁজে দিলো। নিখুঁত চোখে আমার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন। কন্ঠে কিঞ্চিৎ বিস্ময় নিয়ে বলল-

‘কি ব্যাপার! তোমাকে আজ একটু ভিন্ন লাগছে। একটু ভিন্নরকম সুন্দর লাগছে। আগের থেকেও যেন দ্বিগুণ সুন্দর হয়ে গেছো। তবে শুকিয়ে গেছো অনেকটা। চোখের নিচে কালিও পরেছে। আচ্ছা তুমি কি অসুস্থ! ঠোঁট গুলো কেমন ফ্যাকাসে শুকনো লাগছে। তোমাকে দেখেই কেমন জ্বর জ্বর ভাব লাগছে। জ্বর এসেছিলো না-কি? আমি কি তোমার কপালে হাত রাখতে পারি অনুপাখি!’

সাদাফের কথায় তিক্ততায় থিতিয়ে গেল মন। বিস্মিত হলাম বেশ খানিকটা। সামান্য একটু সময়েই সব কিছু এতটা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ কীভাবে করলো সাদাফ! আগেও কি এভাবেই সব কিছু খেয়াল করেছিলো? মনে পরছে না। হাতে চেপে রাখা ফোনটা তীক্ষ্ণ সুরে বেজে উঠল। ব্যাঘাত ঘটালো আমার ভাবনায়। ফোনটা চোখের সামনে তুলে আনতেই কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেলাম। চোখজোড়া স্থির হলো ফোনের স্কিনে ভেসে ওঠা ‘তুলতুলের আব্বু’ লেখাটার দিকে। নির্জীবের মতোই আমি ফোন রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম। সঙ্গে সঙ্গেই ধ্রুবর নির্লিপ্ত কন্ঠেস্বর শোনা গেল।

‘তুলতুলের আম্মু! আমি গেইটের কাছে গাড়িতে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। তাড়াতাড়ি চলে আসুন।’

আমার গলার স্বর ফুটলো। অস্ফুটস্বরে ছোট্ট করে বললাম-

‘হুম আমি আসছি।’

ফোনে রেখে দেওয়া মাত্রই সাদাফ মন খারাপ করে উদাসীন গলায় বলল-

‘চলে যাবে? আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়না আনুপাখি? আমার সাথে তো একটুও কথা বললে না। ভালোবাসি বললাম তা-ও কিছু বললে না। এত অভিমান কেন তোমার? আরও সময় লাগবে অভিমান ভাঙতে!’

আমি নিজেকে যথাসাধ্য গম্ভীর করে নিলাম। ফোনটা ব্যাগে রেখে ভারি কন্ঠে বললাম-

‘আমি তোমাকে জাস্ট একটা কথাই বলবো সাদাফ। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তুমি আর আমার কাছে আর এসো না।’

কথাটা বলে আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম না সাদাফের ভাবভঙ্গি। আশেপাশের সব কিছু উপক্ষা করে নির্বিকার ভঙ্গিতে হেঁটে চললাম আমার সঠিক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ভার্সিটি থেকে বের হতেই রাস্তায় ডান পাশে গাড়ি দাঁড় করানো দেখলাম। ধ্রুব আমাকে দেখামাত্রই জানালা দিয়ে হাত বের করে নাড়লেন। আমি এগিয়ে গেলাম। গাড়ির কাছে এসেই নিঃশব্দে সামনের সিটে বসলাম। ধ্রুব আমার দিকে ঝুঁকে এলেন। ব্যস্ত ভঙ্গিতে আমার কপালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন-

‘জ্বর আছে এখনো!’

আমি বরাবরের মতোই তার স্পর্শ পেয়ে স্তব্ধ হয়ে রইলাম। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে ইতস্তত করে বললাম-

‘আমি ঠিক আছি। এখন জ্বর নেই।’

‘জ্বর নেই তাহলে মুখ এমন ফ্যাকাসে বিবর্ণ হয়ে আছে কেন?’

ধ্রুবর প্রশ্নে আমি নিরুত্তর হতাশ মুখ নিয়ে বসে রইলাম। আমার মনে হলো ধ্রুব বুঝবে আমার পরিস্থিতি। আমার নিশ্চুপ থাকার কারণ। ঠিক তাই হলো। ধ্রুব আর কোনো কথা বাড়ালো না। সে হয়তো বুঝেছে এই নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। আমাকে চুপ থাকতে দেওয়াই এখন শ্রেয়। মানুষটা সব কিছুই বুঝতে পারে। সব কিছুরই খেয়াল রাখে সে।

বাসার সামনে এসে গাড়ি থেকে নামতেই ধ্রুব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন-

‘জ্বর কমেছে। আবার যেন ঘাড়ে ভূত চেপে না বসে। তাহলে এবার সত্যি সত্যিই চড় দিয়ে সেই ভূত নামাবো।’

ধ্রুব আমার কোনো কথার অপেক্ষা না করেই গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। আমি স্থির চেয়ে রইলাম তার যাওয়ার পথে। ওনার কথার মানে কি হুমকি ছিল না-কি কেয়ার! ঠিক বুঝতে পারলাম না। ছোট্ট করে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বাসায় চলে আসলাম। রুমে ব্যাগ রেখেই চলে গেলাম মনি মা’র রুমে। মাত্রই ওয়াশরুম থেকে বের হলেন তুলতুলকে কোলে নিয়ে। আমাকে দেখেই মনি মা ক্লান্তিমাখা স্বরে বললেন-

‘অনু তুই কি কাল আমার সাথে একটু মার্কেটে যেতে পারবি? ইদানিং প্রচন্ড গরম পরেছে তুলতুলের জন্য হাল্কা পাতলা কিছু জামা কিনতে হবে। ওরা বাপ ছেলে নাকি কাল অফিসের কাজে খুব বিজি থাকবে। সময় হবে না ওনাদের।’

আমি বিছানায় বসে তুলতুলের ভেজা শরীর মুছতে মুছতে বললাম-

‘এ নিয়ে তুমি চিন্তা করো না মনি মা। কাল কখন যাবে আমাকে বলে দিও আমি রেডি হয়ে থাকবো।’

রাত প্রায় দশটা। বারান্দার আবছায়া আলোয় দাঁড়িয়ে আছি। এলোমেলো একটা মস্তিষ্ক আর বিষন্নতায় ঘেরা মন নিয়ে। ধ্রুব রুমে ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। তুলতুল মেয়েটাও ঘুমিয়ে পরেছে। মেয়েটা ঘুমিয়ে থাকলেই সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মস্তিষ্কে তখন হানা দেয় পুরনো সব কথা। বিষাদে ছেয়ে যায় চারপাশ। সব কিছুতেই তখন থাকে বিষন্নতা।

‘নিন’

আমি ঘাড় বাঁকিয়ে পাশে তাকাতেই ধ্রুব আমার দিকে কফির মগ বাড়িয়ে দিলেন। আমি মলিন হেসে কফির মগ হাতে নিলাম। আবারও দৃষ্টি দিলাম অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশের দিকে। নিরবতায় কেটে গেল মিনিট পাঁচেক সময়। নিস্তব্ধতা ভেঙে ধ্রুব স্বাভাবিক ভাবে বললেন-

‘আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু সেদিন উত্তর পাইনি।’

আমি জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি ধ্রুবর দিকে চাইলাম। ধ্রুব বুঝলেন আমার দৃষ্টির মানে আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন-

‘আপনার প্রাক্তন এসে সব কিছু ঠিক করে দিলে কি আপনি তার কাছে ফিরে যাবেন?’

তপ্ত শ্বাস ফেললাম। কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে বাকিটুকু রেখে দিলাম টেবিলের উপরে। আবারও বারান্দার রেলিঙের হাত দিয়ে দাঁড়ালাম। ডান পাশের বেলি গাছটায় দৃষ্টি স্থির করে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম-

‘আপনার এই বেলি গাছ গুলোতে একদিনও ফুল ফুটতে দেখলাম না। কিন্তু কেন?’

ধ্রুব আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। হাল্কা হেসে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল-

‘যত্ন করা হয়নি তাই। এবাসায় শিফট করার পর নানান কাজ আর বিয়ে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম সবাই। একারণেই আর গাছের সঠিক যত্ন নেওয়া হয়নি। তবে এখন যেহেতু আপনি আছেন তাই আমার বেলি গাছের দায়িত্ব এখন থেকে আপনার।’

আমি ধ্রুব কথার প্রতিত্তোরে মৃদু হাসলাম। আবারও দু’জনই ডুব দিলাম নিরবতার অতলে গহ্বরে। এভাবেই হয়তো শেষ হবে আমাদের রাত। অনুভূতিহীন, ভালোবাসাহীন রাত।

মার্কেটে মানুষের ভীড় আর হৈচৈয়ে অস্থির হয়ে তুলতুল কেঁদেকেটে অস্থির করে ফেলছে। হেঁচকি তুলে দম আটকানো কান্না। কোনো কিছুতেই তার কান্না থামানো যাচ্ছে না। মনি মা এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিলেন। তুলতুলকে আমার কোলে দিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বললেন-

‘মা তুই যা তো ওকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আয়। আমি কেনাকাটা শেষ করে তোকে ফোন দিবো।’

আমি মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে আসলাম। মার্কেটের বাহিরের ফাঁকা জায়গা তুলতুলকে নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতেই তুলতুল থেমে গেল। ক্লান্ত হয়ে ঘাড় কাঁত করে শুইয়ে রইলো আমার কোলে। একটু পর পর বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে পায়চারি করছি। সূর্য ঢলে পরছে পশ্চিম আকাশে। রক্তিম বর্ণে রঙিন হচ্ছে পশ্চিমাকাশ।

‘এখানে কি করছো অনুপাখি?’

সাদাফের কন্ঠ শুন্স চমকে পাশ ফিরে চাইলাম। আশ্চর্য যার মুখোমুখি হতে চাচ্ছি না বার বার তার কাছে এসেই কেন ধরা দিতে হয়! এসব কি কাকতালীয় ব্যাপার? নাকি অন্য কিছু!

‘কি হলো এভাবে ভূত দেখার মতো চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছো কেন?’

আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম-

‘তুমি এখানে কি করছো?’

‘একটু কেনাকাটা করতে এসেছিলাম। এই কিউটিপাই-টা কে?’

সাদাফ আমার দিকে এগিয়ে এসেই তুলতুলের গালে টান দিল। তুলতুল মাথা তুলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো সাদাফের দিকে। সাদাফ মুখের নানান রকম ভঙ্গিমা করে তুলতুলকে হাসানোর চেষ্টা করছে। তার চেষ্টা সফল হলো। তুলতুল খিলখিল করে হেসে উঠলো সাদাফের দিকে চেয়ে। সাদাফ আমার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে বলল-

‘বিয়ের পর আমাদের বাবুও এমন হবে দেখে নিও। একদম তোমার মতো কিউটিপাই।’

আমি চোখমুখ কঠিন করে শক্ত গলায় বললাম-

‘আমাদের বিয়ে হবে না সাদাফ। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আর তুলতুল আমার মেয়ে।’

সাদাফ ঝংকার তুলে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে তার মুখ আর কান দুটো লাল হয়ে আসলো। কোনো রকম হাসি থামিয়ে এক প্রকার জোর করেই তুলতুলকে আমার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। তুলতুলের গালে শব্দ করে কয়েকটা চুমু খেয়ে বলল-

‘এই কিউটিপাইয়ের নাম তাহলে তুলতুল? নামটাও একদম ওর মতোই কিউট। আর হ্যাঁ কি যেন বললে ও তোমার মেয়ে? যদিও তোমার মতোই দেখা যায় তবে এটা আরেকটু বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো যদি আমি কয়েক বছরের জন্য বিদেশ যাত্রা করে ফিরতাম তাহলে।’

‘আমার বিয়ে হয়ে গেছে সাদাফ। কেন বিশ্বাস করছো না?’

আমি দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত গলায় বললাম। সাদাফ ঠোঁট চেপে হাসি থামানোর চেষ্টা করছে। আমার রাগ দেখে যেন ভীষণ মজা পাচ্ছে সে। সাদাফের হাসি থেকে তরতর করেই আমার মাথায় রাগ উঠে গেল। আমি আবারও রাগান্বিত কন্ঠে বললাম-

‘হাসি বন্ধ করো সাদাফ। আমার কথা তোমার হাসির মনে হচ্ছে? আমি কি কৌতুক করছি তোমার সাথে?’

সাদাফ হাসি থামলো। ঠোঁটে চাপা হাসি নিয়ে বলল-

‘আচ্ছা আচ্ছা মানলাম তোমার বিয়ে হয়েছে। এটা তোমার মেয়ে। আর তোমার স্বামী। চলো এবার বাসায় যাই।’

কথাটা বলেই সাদাফ আবারও হাসা শুরু করলো। আমি জ্বলন্ত চোখে সাদাফের হাসি মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। আচমকাই আমার ফোন ভেজে উঠলো। আমি তুলতুলকে সাদাফের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। পেছন থেকে সাদাফ হাসতে হাসতে বলল-

‘আমি, তুমি আর তুলতুলকে নিয়ে আমাদেরও সুখের সংসার হবে অনুপাখি। খুব শীগ্রই হবে।’

চলবে…

#শেষ_রাত
#পর্বঃ১৩
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘আমি, তুমি আর তুলতুলকে নিয়ে আমাদেরও সুখের সংসার হবে অনুপাখি। খুব শীগ্রই হবে।’

আমি থমকে দাঁড়ালাম৷ পেছন ফিরে দেখলাম সাদাফের প্রাণোচ্ছল হাসি। এই প্রথম ঘৃণা করলাম আমি সাদাফকে। জীবনে প্রথম কাউকে ঘৃণা করলাম। সেটাও আবার আমার ভালোবাসার মানুষকেই। ঘৃণার দৃষ্টিতে সাদাফের দিকে চেয়ে শক্ত গলায় বললাম-

‘তুমি আজও সব কিছুতে হেয়ালি করছো সাদাফ। তোমার অবহেলা পেয়েও আমি সব সময়ের মতো ভালোবাসা নিয়ে তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা করতে পারিনি। শেষ দিনের কথাটা খুব হাস্যকর ভাবেই সত্যি হয়ে গেল সাদাফ। তুমি ফিরে এসে আমাকে আর পাওনি। আমি এখন অন্যকারো অর্ধাঙ্গিনী। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এটা তোমাকে মানতেই হবে আজ না-হয় কাল। সত্যিটা তোমাকে মেনে নিতেই হবে। তেতো হলেও মানতে হবে। কষ্টের হলেও মানতেই হবে সাদাফ।’

সাদাফ তার হাসি থামিয়ে বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলো আমার দিকে। কয়েক পা এগিয়ে এসে কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে-

‘তুমি আমাকে শায়েস্তা করার জন্য এমনটা করছো তাই না অনন্যা!’

আমি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাসলাম। তুলতুলের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে সহজ গলায় বললাম-

‘তোমার আমার কখনও সুখের সংসার হবে না। তুলতুলের আব্বু কখনই তা হতে দিবে না। আর তুলতুলের আম্মু কখনই তুলতুলকে ছাড়বে না।’

কথাটা বলেই আমি চলে আসলাম মনি মা’র কাছে। তুলতুলকে মনি মা’র কোলে দিয়ে আড়ালে এসেই কল করলাম সানিয়াকে। দু-তিন বার রিং বাজতেই কল রিসিভ হলো। সানিকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই আমি গম্ভীরমুখে বললাম-

‘শোন সানি! সাদাফ হয়তো তোর কাছে ফোন করবে৷ আমার বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে তুই সরাসরি বলে দিবি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ও যেন এই সত্যিটা মেনে নেয় ব্যস।’

ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে সানিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল-

‘সাদাফ ভাই কি এখনও বিশ্বাস করছে না তোর বিয়ের কথা?’

‘তোর কি মনে হয় সাদাফ এতসহজেই সব বিশ্বাস করবে?’

আমার পালটা প্রশ্নে সানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে। নিম্ন স্বরে বলল-

‘আচ্ছা আমি বলে দিবো। আর হ্যাঁ তোর বউ সাজের কিছু ছবি আছে আমার কাছে ওগুলো কি দেখাবো?’

‘তোর যা ভালো মনে হয়।’

আমি ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে কথাটা বলেই ফোন রেখে দিলাম। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পা বাড়ালাম তুলতুলের উদ্দেশ্যে। মেয়েটা আবারও কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে কি-না কে জানে!

অপেক্ষা করার মতো বিরক্তিকর আর যন্ত্রণাদায়ক হয়তো কিছু নেই। আমার প্রথম অপেক্ষা করা শুরু হয়েছে সাদাফের জন্য। আমাদের সম্পর্কের ছ’মাস চলছিলো তখন। হঠাৎ করেই একদিন সাদাফ বলল সে তার বন্ধুদের সঙ্গে তিনদিনের জন্য কক্সবাজার যাবে। আমি রাজি হয়েছিলাম। তবে খুব আকষ্মিকভাবেই খেয়াল করলাম কক্সবাজার যাওয়ার পর সাদাফ আমার সাথে পুরোপুরিভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ভয় পেয়েছিলাম খুব। কোনো দূর্ঘটনা হয়েছে কি-না ভেবেই আঁতকে উঠেছিলাম বার বার। ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছিলাম তিন দিন। নির্দিষ্ট সময়েই সাদাফ ফিরেছিল। সে ছিল স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করাটাও স্বাভাবিক। আমাকে ফোন দিয়ে নিজের খোঁজ খবর না জানানোও বেশ স্বাভাবিক। এর কারণ জানতে চাইলেই সহজ জবাব দেয়- ‘ঘুরতে গিয়েছিলাম তাই শুধু প্রকৃতিকেই অনুভব করতে চেয়েছি। এ কারণেই ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম।’ আমি রাগ করেছিলাম তারপর আবারও সব স্বাভাবিক। এর পর থেকে দু এক মাস পর পর তার ট্যুর দেওয়াই ছিল নিয়ম। যোগাযোগও বরাবরের মতোই ছিল বিছিন্ন। আস্তে আস্তে তার ট্যুর দেওয়ার সময় দীর্ঘ হতে লাগে। তিন দিন থেকে পাঁচ দিন। পাঁচ দিন থেকে সপ্তাহ খানেক। এভাবেই আমার অপেক্ষার প্রহর গুনা শুরু হয়। আজও অপেক্ষা করছি। তবে সাদাফ নয় ভিন্ন মানুষের জন্য। ধ্রুবর জন্য। সকাল সকাল বেরিয়েছে আব্বুর সাথে অফিসে কাজে। আব্বু সন্ধ্যা হতেই ফিরে এসেছে তবে ধ্রুবর এখনও ফিরেনি।

কলিং বেলের শব্দেই আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো। সোফা থেকে উঠে দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখলাম। বারোটা বেজে পনের মিনিট। আমি ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। দরজা খুলতেই ধ্রুব খানিকটা উৎকন্ঠিত হয়ে বলল-

‘সরি অনেক দেরি হয়ে গেল। আসলে অফিসে…’

ধ্রুবকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আমি শান্ত গলায় বললাম-

‘সমস্যা নেই। আমি আপনার কাছে কোনো কৈফিয়ত চাইবো না। আমি যথাসম্ভব আপনার শর্তগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবো।’

আমার কথা শুনে ধ্রুব অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলো। হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছেন তবে পারছে না। ধ্রুব হতাশ হয়ে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে থমথমে পায়ে রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে খাওয়ার মাঝে হঠাৎ করে বলল-

‘সেদিন আমি ওভাবে কথা গুলো বলতে চাইনি। আমার কথায় আপনি কিছু মনে করে থাকলে আমি সরি।’

আমি গ্লাসে পানি ঢেলে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বললাম-

‘আমি কিছু মনে করিনি। আপনি আপনার মতো থাকবেন এটাই আমাদের মাঝে শর্ত ছিল। তাই আপনাকে কোনো কিছু নিয়ে আমাকে কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

ধ্রুব নিশ্চুপ। খাবার শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল-

‘সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠবো। তাই কাল ড্রাইভার আপনাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিবে।’

আমি মাথা নাড়িয়ে ‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলতেই ধ্রুব ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে রুমে যায়।

ক্লাসের মাঝেই রাফিন ভাই আমাকে ক্লাস থেকে ডেকে আনে। মাঠের এক পাশে সাদাফকে আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে দিয়েই তিনি নিঃশব্দে চলে যান। আমি গম্ভীর পায়ে সাদাফের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম-

‘তুমি আবারও এখনে কেন এসেছো সাদাফ!’

আমার প্রশ্নে সাদাফের কোনো ভাবান্তর হলো না। শূণ্য দৃষ্টিতে স্থির তাকিয়ে রইলো আমার চোখের দিকে। তার চাহনিতে কোনো পরিবর্তন হলো না। শূন্য দৃষ্টিতেই তাকিয়ে থেকে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল-

‘আমি খোঁজ নিয়েছে। সবাই বলছে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে৷ তোমার বউ সাজের ছবি দেখিয়েছে। আমি অন্য কারও কথা কিংবা কোনো ছবি কোনো কিছুই বিশ্বাস করি না। আমি শুধু তোমার মুখে সত্যিটা শুনতে চাই অনন্যা।’

‘তুমি যা শুনেছো সবটাই সত্যি। আমি তোমাকে আগেও অনেক বার বলেছি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। কেন বিশ্বাস করছো না আমার কথা?’

আমার সহজ প্রতিত্তোরে সাদাফ খানিকটা হাসার চেষ্টা করলো। আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে জোড়ালো কন্ঠে বলল-

‘তুমি মজা করছো তাই না অনুপাখি!’

আমি খুব সাবধানে সাদাফের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম। দু পা পিছিয়ে এসে তপ্ত শ্বাস ফেললাম। সাদাফের দিকে তাকাতেই হতভম্ব হলাম আমি। তার চোখদুটো ছলছল করছে। মুখটাও কেমন মলিন হয়ে আছে। হয়তো দোটানায় পরে গেছে। আমার বিয়ের কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে তবে তার মন হয়তো বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না এই কথা।

‘আমি মজা করছি না সাদাফ। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আর আমি এখন অন্য একজনের ওয়াইফ এটা তোমার বিশ্বাস করতেই হবে। তুমি চলে যাওয়ার বিশদিন পরেই আমার বিয়ে হয়। আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও ব্যর্থ হয়েছি।’

আমি তাচ্ছিল্যের সুরে কথা গুলো বলেই হাল্কা হাসলাম। সাদাফের চোয়ালে শক্ত হলো। মুহুর্তেই পরিবর্তন হয়ে এলো তার মুখের ভঙ্গিমা। গম্ভীর থেকেই গম্ভীরতর হলো তার চাহনি। দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত গলায় বলল-

‘বিয়ে হয়ে গেছে তোমার? অন্য কারও ওয়াইফ তুমি! এতটা সহজে বলে দিলে এসব! যাকে তাকেই বিয়ে করে নিবে। বিয়েটা কি তোমার কাছে ছেলেখেলা মনে হচ্ছে অনন্যা?’

‘ছেলেখেলা তো আমাদের সম্পর্কটা ছিল তোমার কাছে। দিনের পর দিন অবহেলা করেছো। ছন্নছাড়া ভাব নিয়ে আমার সাথে থেকেছো কয়েকটা বছর। আমার অনুভূতি, আমার অভিমান, অভিযোগ, রাগ কোনো কিছুরই গুরুত্ব তোমার কাছে ছিল না। ছেড়ে দিয়েছো আমাকে আমার মতো একা। একটা বার খোঁজ নিয়ে দেখো নি আমি কীভাবে তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। কীভাবে অভিমান গুলোকে নিজের মনে চাপা দিয়ে থেকেছি এতটা দিন।’

সাদাফ কিছুটা সময় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পকেট থেকে ফোন বের করে আমার বউ সাজের ছবি আমার দিকে তুলে ধরে। ভীষণ শান্ত গলায় বলে,

‘তুমি বউ সেজেছো অন্য কারো জন্য? এই লাল শাড়ি সাজগোজ সব কিছু অন্য কারও জন্য? এতটাই অভিমান ছিল যে একেবারে অন্যকারো সাথে নিজের জীবন জড়িয়ে নিলে? এতটাই রাগ ছিল আমার উপর যে এত বড় একটা শাস্তি দিলে আমাকে!! আমার জন্য কি আর একটু অপেক্ষা করা যেতো না অনন্যা???’

সাদাফ লাস্টের কথাটা হুংকার দিয়ে বলেই ফোনটাকে মাটিতে আছাড় মা’রে। চোখের পলকেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল ফোন। রক্তিম হয়ে এলো সাদাফের চোখ দুটো। আজ প্রথম সাদাফের এমন রূপ দেখছি। তার হাসিখুশি মুখের পেছনে এতটা রাগ লুকিয়ে আছে আগে কখনই তা প্রকাশ পায়নি। আমি অপ্রস্তুত হয়ে খানিকটা দূরে সরে গেলাম। ভয় জড়ানো দৃষ্টিতে তাকালাম সাদাফের রাগান্বিত চেহারার দিকে। আশেপাশের দু একজন স্টুডেন্ট কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। সাদাফ চোখ বন্ধ করে কিড়মিড়িয়ে বলল-

‘আমার সামনে থেকে যাও অনন্যা। আমি চাই না রাগের মাথায় আমি তোমাকে আঘাত করি। আমি চাই না এই মুহুর্তে তুমি আমার সামনে থাকো। অনন্যা ক্লাসে যাও বলছি।’

সাদাফের ধমকে আমি কেঁপে উঠলাম। ভয়ে এলোমেলোভাবে পা ফেলে ফিরে আসলাম ক্লাসে। সাদাফেএ এমন রূপ দেখে আমার পুরো শরীর অসাড় হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। কিভাবে সামলাবো আমি সব কিছু? হতভম্ব হয়েই হাঁটতে লাগলাম। ক্লাসে এসে আবারও সানিয়ার পাশে মূর্তির মতো বসে রইলাম। সানিয়া নানানরকম প্রশ্ন করেছে তবে তার উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। গলার স্বর আটকে গেছে। এভাবেই নিস্তব্ধ হয়ে কাটয়ে দিলাম এক ঘন্টা। ক্লাস শেষ খানিকটা ভয় নিয়ে বের হলাম। সাদাফ এখনও মাঠে আছে কি-না ভেবেই চিন্তায় অস্থির হয়ে পরলো মস্তিষ্ক। সাদাফের এমন ভয়ংকর রাগ দেখার পর যেন আত্মা শুকিয়ে গেছে আমার। ভার্সিটির মাঠে সাদাফকে না দেখে মনে মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলাম। তবে এই স্বস্তি বোধ বেশিক্ষন টিকলো না। বড়সড় এক ধাক্কা খেলাম ভার্সিটির গেইট থেকে বের হয়েই। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলাম সামনের দিকে। চোখদুটোকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। পর পর কয়েকবার চোখের পলক ফেলে আবার দৃষ্টি স্থির করলাম সেদিকে। নাহ এটা কল্পনা না। আমি সত্যি দেখছি। ধ্রুব সাদাফের সাথে কোলাকুলি করছে। ভীষণ হাসি হাসি তাদের দুজনের মুখ। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেলাম আমি। কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। সাদাফের সাথে ধ্রুবর কি সম্পর্ক? ধ্রুব কি সাদাফকে চেনে? আর ধ্রুব হাসিমুখেই বা কেন কোলাকুলি করছে সাদাফের সঙ্গে?

চলবে..

#শেষ_রাত
#পর্বঃ১৪
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

একের পর এক ধাক্কা খেয়ে নিজেকে সামলাতে সময় লাগলো মিনিট খানেক। সাদাফের ভয়ংকর রাগী রূপ হজম করার আগেই এখন আবার আরেক নতুন চমক। আজ বোধহয় সবাই আমাকে চমকে দিতে দিতেই মা’রার প্ল্যান করেছে। মাথার মধ্যে ভনভন করেই ঘুরে যাচ্ছে হাজারো প্রশ্ন। ধ্রুব কেন হাসিমুখে জড়িয়ে ধরলেন সাদাফকে? আর সাদাফই বা স্বাভাবিক আছে কি করে! অতীতকে পিছু ছাড়তে চাচ্ছি তাহলে কেন অতীত এসে আমার বর্তমানে মিলে যাচ্ছে? এসব অতীত আর বর্তমানের মাঝে যেন পিষে যাচ্ছি আমি। অসহায় হয়ে পরেছি পরিস্থিতির কাছে। কে উদ্ধার করবে আমাকে এই দোটানার মধ্য থেকে!

‘তুলতুলের আম্মু এদিকে আসো।’

সাদাফের পাশ থেকেই ধ্রুব আমাকে দেখে হাত নাড়িয়ে ডাকলো। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি সেদিকে। সাদাফের দৃষ্টি আমার মাঝেই নিবদ্ধ সেটাও বুঝতে পারছি স্পষ্ট৷ ধ্রুব আবারও আমাকে ডাকলো। আর কোনো উপায় না পেয়ে আমি থমথমে পায়ে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে যেতে গেলাম। ধ্রুবর তর সইলো না। সে নিজেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে আমার দিকে। আমার হাত ধরেই টেনে নিয়ে যায় সাদাফের কাছে। সাদাফের সামনে দাঁড় করিয়ে আমাকে এক হাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। আমি যেন আরও স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। বরফের ন্যায় জমে গেলাম আমি। তবে ধ্রুব বেশ আনন্দিত গলায় বললেন-

‘এই হলো আমার ওয়াইফ অনন্যা। কিছুদিন আগেই আমাদের বিয়ে হয়েছে।’

সাদাফ তাকিয়ে আছে নিষ্পলক। তার চেহারাতে স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে তার চমকিত ভাব। আমাকে হয়তো এখানে আশা করেনি। হয়তো কল্পনাও করেনি অন্য কোনো পুরুষের বাহুতে দেখবে নিজের অনুপাখিকে। এমনটা না ভাবারই কথা এতটা বছর ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল আমাদের মাঝে৷ আর এখন কি-না আমি অন্য কারও স্ত্রী!
ধ্রুব আবারও বেশ উৎসাহ নিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বললেন-

‘ওর নাম সাদাফ। আমি লাস্ট ইয়ার ট্যুরে খাগড়াছড়ি গিয়েছিলাম সেখানেই ওর সাথে পরিচয়। সপ্তাহ খানেক এক সাথেই ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা। খুব ভালো বন্ডিং হয় আমাদের মধ্যে।’

আমি অবাক হলাম। তার চেয়েও বেশি হলো রাগ। ইচ্ছে করছে দুজনকে একসাথে সারাজীবনের ট্যুরে পাঠিয়ে দেই। ট্যুর ট্যুর করে এরা দুজন আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলবে হয়তো। ধ্রুব আমাকে অস্বস্তিতে মিইয়ে যেতে দেখে বললেন-

‘তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে তুলতুলের আম্মু?’

আমি রবোটের মতো ডানে বায়ে মাথা নাড়লাম। সাদাফ মুখ খুললো। তার চমকিত ভাব চাপা দিয়ে ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করে-

‘কিছুদিন আগে বিয়ে হলো অথচ এখনই তুলতুলের আম্মু মানে!’

ধ্রুব তার সহজাত সহজ সরল হাসি দিয়ে বললেন-

‘পূর্নতার ডাক নাম তুলতুল। পূর্নতার কথা তো বলেছিলাম তোমাকে।’

সাদাফ নিম্নস্বরে আনমনা হয়ে ‘ওহ আচ্ছা’ বলেই আবারও চুপ করে রইলো। ধ্রুব ফের আমার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে নিলেন। আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে সাদাফকে বললেন-

‘আচ্ছা আজ যাই। তুলতুলের আম্মু ধুলোবালিতে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। এল্যার্জির প্রব্লেম হয়। তোমার সাথে অন্য কোনো একদিন সময় করে আড্ডা দিবো। আজ আসি।’

সাদাফ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই ধ্রুব আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। উনি নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। সাদাফ অপলক তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই চোখের আড়াল হয়ে গেল সাদাফের অস্তিত্ব। দূরে, অনেকটাই দূরে চলে আসলাম সাদাফের কাছ থেকে। চুপচাপ জানালার দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বসে রইলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম ধ্রুব সাদাফের আসল পরিচয় পেলে কেমন রিয়েক্ট করবেন। তাদের বন্ধুত্ব নিশ্চয়ই থাকবে না। ধ্রুবকে কি এখন বলা উচিত সাদাফ আমার প্রাক্তন যাকে তিনি সহ্য করতে পারেন না। আচ্ছা পরে যদি সাদাফের কাছ থেকে সত্যটা জেনে যায় তখন কি তিনি আমাকে ভুল বুঝবেন! এসব কোনো প্রশ্নের উত্তরই আমার জানা নেই।
বেশ খানিকটা সময় পর ধ্রুব নিরবতা ভেঙে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন-

‘কি ব্যাপার! আপনি এতো চুপচাপ কেন আজ?’

ধ্রুবর কথায় শুনেই আমার রাগ হলো। মনে পরে গেক তার ট্যুরে যাওয়ার কথা। আমি ক্ষিপ্ত গলায় প্রশ্ন করলাম তাকে,

‘আপনি ট্যুরে যান?’

‘হ্যাঁ যাই তো।’

ধ্রুব নির্লিপ্ত জবাবে আমার রাগ তরতর করেই মাথায় উঠে যায়। যে আমি কখনও রাগ প্রকাশ করতাম না। আজ সেই আমিটাই ধ্রুবর সামান্য কথাতেই রাগ প্রকাশ করছি। আমার অধিকার নেই জেনেও আমি অনুচিত কথা বলে ফেললাম মুখ ফসকে।

‘আপনি আর কখনও এসব ট্যুর ফুরে যাবেন না বলে দিচ্ছি। আমার এসব মোটেও ভালো লাগে না। অসহ্য লাগে ভীষণ।’

কথা গুলো বলেই আমি থমকে গেলাম। আমি ধ্রুবর শর্তের বিরুদ্ধে গিয়ে তার লাইফে হস্তক্ষেপ করছি এ কথা মনে পরতেই নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনা হলো। ধ্রুব হাসলেন অমায়িক ভঙ্গিতে। সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই শান্ত গলায় বললেন-

‘বউ বাচ্চা নিয়ে গেলে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা হবে না তাই না!’

আমি চুপ করে রইলাম। তার কথার প্রতিত্তোরে টু শব্দটিও করলাম না। তবে ধ্রুব মুচকি হাসি আমার দৃষ্টির আড়াল হলো না। কেন হাসছেন তিনি তার কারণ বুঝতে পারলাম না।

‘অনু তুলতুলকে আমার কাছে দে আমি ওকে খাওয়াচ্ছি। তুই বরং ধ্রুবর সাথেই খেয়ে নে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।’

আমি তুলতুলের মুখে খাবার দিয়ে মনি মা’কে বললাম-

‘এখন আমার খিদে নেই মনি মা। তুমি এখন খেয়ে নাও আমি আজ খাবো না।’

মনি কিছুটা সময় চুপ থেকে শাসনের সুরে বললেন-

‘দুপুরেও তো ঠিক মতো খেলি না। খাওয়া দাওয়া নিয়ে হেয়ালি আমার একদম পছন্দ না অনু। তুলতুলকে খাওয়ানো শেষ হলেই তুই আমার সাথে খাবি।’

আমি মলিন মুখে মনি মা’র দিকে চেয়ে হতাশ নিঃশ্বাস ফেললাম। আড় চোখে পাশে তাকিয়ে ধ্রুবর চাপা হাসি দেখেই আমার গাঁ জ্বলে গেল। মনি মা আমাকে বকা দিলেই যেন উনি সব চেয়ে বেশি খুশি হোন। ধ্রুব এখনও ঠোঁট চেপে হাসছেন। হয়তো আমার তাকিয়ে থাকা দেখেই আরও বেশি করে রাগাতে চাচ্ছেন। আমি ওনার হাসি পাত্তা না দিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেই। তুলতুলের মুখে আবারও খাবার তুলে দিতেই তুলতুল তার সরু দাঁত দিয়ে আমার আঙুলে কামড় বসিয়ে দেয়। সাথে সাথেই আমি মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে হাত সরিয়ে নিলাম। ধ্রুব, মনি মা আর আব্বু তিনজনই চমকে তাকালেন আমার দিকে। মনি মা আর আব্বু এক সাথেই জিজ্ঞেস করলেন-

‘কিরে! কি হলো?’

আমি আঙুলের দিকে তাকাতেই দেখলাম তুলতুলের দাঁতের ছাপ পরে গেছে। আমি হাল্কা হাসার চেষ্টা করে ক্ষীন স্বরে বললাম-

‘তুলতুল কামড় দিয়েছে।’

হঠাৎই ধ্রুব ঝুঁকে এলেন আমার দিকে। আমার ডান হাত ধরে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন। গম্ভীরমুখে তুলতুলের দিকে চেয়ে বললেন-

‘তুলতুল পাখি তোমাকে বলেছি না মাম্মাকে ব্যথা দিবে না! তুমি দিন দিন পঁচা হয়ে যাচ্ছো। এই যে দেখো তোমার মাম্মাকে কামড় দিয়ে লাল করে ফেলেছো।’

আমি ধ্রুবর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মনি মা আব্বুর দিকে লাজুক চোখে তাকাই। তাদের ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি দেখে আরও লজ্জা পেলাম। ধ্রুব আঙুল উঁচু করে তুলতুলকে নানান কথা বলে শাসন করছেন। তুলতুলের দিকে চেয়ে দেখলাম মেয়েটা ঠোঁট উল্টে ফোপাঁচ্ছে। হয়তো এখনই কান্না দিবে মেয়েটা। বিরক্তিতে ভাঁজ পরলো আমার কপালে। ধ্রুবর দিকে চেয়ে বিরক্তির স্বরে বললাম-

‘আহহ! বকছেন কেন মেয়েকে? ও বুঝেশুনে ব্যথা দিয়েছে না-কি!’

ধ্রুব সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-

‘বকা দিচ্ছি না বোঝাচ্ছি যেন আবারও কাউকে ব্যথা না দেয়।’

ধ্রুব আবার তুলতুলের দিকে তাকিয়ে শাসনের সুরে বললেন-

‘আবারও কামড় দিলে মাম্মার হাতে খাওয়া বন্ধ করে দিবো। আমার কথা মনে থাকে যেন তুলতুল পাখি।’

তুলতুল এবার ফোপাঁতে ফোপাঁতেই চিৎকার দিয়ে কেঁদে দিলো। আমি তুলতুলে ভালো করে কোলে নিয়ে তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। জ্বলন্ত চোখে চাইলাম ধ্রুবর দিকে৷ ক্ষিপ্ত গলায় বললাম-

‘আজব মানুষ তো আপনি! শুধু শুধুই মেয়েটাকে কাঁদালেন।’

আমার কথা শেষ হতেই মনি মা তিক্ত গলায় বললেন-

‘একদম বাপের মতো হয়েছে। যেমন বাপ তেমন তার ছেলে।’

‘এই ফাজিল ছেলে একদমই আমার হয়নি। আমি কোনো কালেই ধ্রুবর মতো বেপরোয়া ছিলাম না। ধ্রুব তো তোমার মতো হয়েছে।’

তৎক্ষনাৎ আব্বু প্রতিবাদ করলেন মনি মা’র কথায়। আব্বুর প্রতিবাদে তেঁতে উঠলেন মনি মা। রাগান্বিত হয়ে বললেন-

‘একদম বাজে বলবেন না ধ্রুবর বাবা। ধ্রুব হুবহু আপনার মতো হয়েছে। মনে নেই ধ্রুব ছোট বেলায় খেলনার গাড়ি দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি দিয়েছিলো বলে ওর পিঠে থাপ্পড় দিয়ে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিয়ে ছিলেন!’

ধ্রুব এতটা সময় নিশ্চুপ থালকেও এবার বিস্ফোরিত চোখে তাকায় আব্বুর দিকে। খানিকক্ষণ স্থির থেকে তীক্ষ্ণ গলায় জিজ্ঞেস করলেন-

‘আব্বু! মা কি সত্যিই বলছে?? তুমি আমাকে মেরেছিলে?’

আব্বু হকচকিয়ে গেলেন। মনি মা’র কথাই সত্যি সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি বোকার মতো বসে তাদের তর্ক করা দেখছি। তুলতুলও এখন কান্না থামিয়ে তাদের কান্ডকারখানা দেখছে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলতুলকে খাওয়ানো শুরু করলাম। যাকে নিয়ে ঝগড়ার শুরু তার দিকেই এনাদের খেয়াল নেই। কি অদ্ভুত মানুষ। একজন আরেকজনের সাথে যেন সাপেনেউলে সম্পর্ক। ঝগড়া আর ধমকা ধমকি মাঝেই যেন এনারা একজন আরেক জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন।

‘তুমি নিজ ইচ্ছেতে বিয়ে করনি তাই না অনুপাখি? আমি জানি তুমি কখনই অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।’

সাদাফের মেসেজ দেখেই খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম। সাদাফের নাম্বার ব্লক ছিল। এখন আবার অন্য নাম্বার দিয়ে মেসেজ দিয়েছে। আমি পাশ ফিরে তাকালাম খুব সাবধানে। ধ্রুব ঘুমিয়ে আছে। তুলতুলকে আজ মনি মা নিয়ে গেছে। মনি মা’র মনে হচ্ছিলো আমি ঠিক নেই তাই আমাকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরার হুকুম দিয়েছে। তবে মনি মাকে কীভাবে বলি আমার ঘুম হবে না। ঘুম এসে ধরা দিবে না আমার চোখের পাতায়। আমার ভাবনার মাঝেই আবারও মেসেজ টোন বেজে উঠল। আমি মেসেজ না দেখেই তাড়াহুড়ো করে নাম্বার ব্লক করে দিলাম। ফোনটা বালিশের নিচে রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। মিনিট খানেক পর আবারও ফোন বেজে উঠল। অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে। আমি খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই সাদাফ হড়বড়িয়ে বলল-

‘আমার নাম্বার ব্লক করে দিচ্ছো কেন অনন্যা?’

ভীষণ রাগ হলো। রাগে চিড়বিড়িয়ে উঠলো আমার সারা শরীর। মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে বয়ে তীব্র রাগ। আমি সাদাফের প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়েই ফোন কেটে দিলাম। সাথে সাথেই আবারও ফোন আসলো। এবার আর রাগ সামলাতে পারলাম। হাতের ফোনটা ছুড়ে ফেললাম মেঝেতে। ফোন ভাঙার ঝংকার তোলা শব্দে ধ্রুব খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই উঠে আমার দিকে ফিরে বসলেন। ওনার চোখ মুখ আর উঠে বসার ভঙ্গি দেখে মনে হলো না তিনি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন। আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে অত্যন্ত শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন-

‘কেমন আছো সানসাইন?’

ওনার কন্ঠে আর ওনার প্রশ্নে অদ্ভুত কিছু ছিল। আমার রাগ জেদ নিমিষেই উবে গেল। ক্লান্ত বোধ করলাম খুব। হাঁপিয়ে উঠেছি প্রতিদিনের এত ঝামেলা আর সবার সামনে অভিনয় করতে করতে। ভীষণ অসহায় হয়েই কান্না শুরু করে দিলাম। ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি। খানিকটা সময় পর ধ্রুব আমার পাশে এসে শুয়ে পরলেন। আমাকে টেনে ওনার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন খুব যত্নসহকারে। আমাকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্ত গলায় বললেন-

‘আমার পারসোনাল বুকটা আজ থেকে তোমার সাথে শেয়ার করলাম সাইনসাইন।’

কান্নার মাঝেও শান্তি অনুভব করলাম আমি। এত এত কষ্টের মাঝেও শেষ রাতে এসে কারও বুকে ঠাঁই পেলাম। মাথায় কারও ভরসার হাত পেলাম। চোখেরজলে কারও একজনের বুক ভেজা ওর অধিকার পেলাম খুব। শান্ত হলাম আমি। সকল কষ্ট, বিষন্নতা যেন বিদায় নিলো ধ্রুবর কাছে এসে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে