#আরোহী_ইসলাম
#শেষ_বেলা
#অন্তিম_পর্ব
ফারহাজ চেচিয়ে বলে উঠলো
‘ শফিকুললললল কি হয়েছে ওইখানে?
হাসির শব্দে ফারহাজ মিস্টার আফজালের দিকে তাকিয়ে দেখে সে হাসতেছে ফারহাজ রেগে বললো কি হচ্ছে কি এই সব?আমি আপনার শত্রু মানে?
মিস্টার আফজাল হেসে বললো
‘ আমি বলতেছি। ‘
তারপর মিস্টার আফজাল বলতে লাগলো
‘ ফারহাজ তুমি আমার অনেক বড় শত্রু কারন হলো তুমি আমার বিজনেস পার্টনার ঠিকই কিন্তু তুমি এই দেশের টপ বিজনেস ম্যান যার কারনে আমার অনেক দিনের ইচ্ছা তোমাকে সরিয়ে তোমার সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিবো। তোমার ম্যানেজার আমার সম্পর্কে জেনে গিয়েছে ও তোমাকে আমার নাম বলার জন্যই কল দিয়েছে কিন্তু ও বলার আগে আমার লোকজন ওকে মেরে ফেলেছে। এইবার তোমার পালা তারপরেই আমার পথের কাটা শেষ।’
এই বলে হাসতে লাগলো মিস্টার আফজাল।
ফারহাজ অবাক হয়ে গেলো।
আমার ** এই অফিসে কালো মাল পাচার কি আপনিই করতেছেন?
অবাক হয়ে বললো ফারহাজ।
‘ হ্যাঁ। তুমি যাকে খুজতেছো সেই আমি।’
মিস্টার আফজাল বললো।
ফারহাজ রেগে বললো
‘ ছিহ্ তুই এতোটা খারাপ? আমি তোকে নিজের বন্ধু ভাবতাম আর তুই কিনা আমার সাথে এই রকম করলি?
‘ তোকে তো আমি কখনোই কিছু ভাবিনি। যাইহোক আজ তোর শেষ দিন মৃত্যুর জন্য রেডি হ,বলেই রিভলবার বের করে ফারহাজের দিকে তাক করলো। ফারহাজ কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিলো তারপর ফারহাজ বললো শফিকুল তুমি এইখানে?
ফারহাজের কথায় মিস্টার আফজাল অন্য দিকে তাকিয়ে বললো কোথায় শফিকুল?
ফারহাজ আফজাল কে অন্য দিকে তাকাতে দেখে তাড়াতাড়ি করে ওনার হাত থেকে রিভলবার নিয়ে আফজালের দিকে তাক করে বললো মিস্টার আফজাল তুই আমার প্রিয় ম্যানেজারকে মে’ রে ফেলেছিস। তোর জন্য আমি আমার অনেক কাছের মানুষদের হারিয়েছি আজ আমার শেষ দিন না আজ তোর শেষ দিন।’
ফারহাজের কথার আফজাল কিছুটা ভয় পেলো। আফজাল বললো
‘ দেখ রিভলবার নামা।’
ফারহাজ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো
‘ বিজনেসে যেমন টপার আমি তেমন তোদের মতো লোকদের ধরতেও টপার আমি, এই বলে ফারহাজ পুলিশকে কল দিলো। তারপর পুলিশ এসে মিস্টার আফজাল কে ধরে নিয়ে গেলো। তারপর ফারহাজ নিজের বাড়িতে চলে আসলো।
ফারহাজ বাড়িতে এসে সবাইকে ডাক দিলো সবাই ফারহাজের ডাক শুনে ড্রয়িং রুমে এসে বললো
‘ কি হয়েছে ফারহাজ?
‘ শুনো সবাই আমাদের বিজনেস পার্টনার মিস্টার আফজাল সে কালোমাল পাচার কারে আমার অফিসে। তারপর ফারহাজ সব বললো সবাই কে। সব শুনে ফারহাজের মা বললো
‘ ওনি এতোটা খারাপ?
‘ হুম মা।’
হুর কান্না করে ফারহাজকে বললো
‘ আপনাকে বলেছিলাম না যেতে হবে না যদি কিছু হয়ে যেতো আপনার তখন কি করতেন?
‘ আমার কিছু হবে না।’
ফারহাজ বললো।
ফারহাজের মা রেগে হুরকে বললো
‘ যবে থেকে তুমি এই বাড়িতে এসেছো সেই দিন থেকে এই বাড়িতে একটার পর একটা বিপদ আসতেছে আমাদের উপরে। একটা অ’লক্ষি মেয়েকে এনেছি বাড়িতে।’
শাশুড়ির কথায় হুর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহাজ বিরক্ত কন্ঠে বললো মা কি সব বলছো? হুরকে নিয়ে তোমার এতো সমস্যা কেনো?
‘ তোর বউ কে আমার একদম ভালো লাগে না অসহ্য।’
রূঢ় কন্ঠে বললো ফারহাজের মা।
হুর চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফারহাজ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হুরকে বললো মায়ের কথায় কিছু মনে করো না।’
‘ হুম।
মুচকি হেসে বললো হুর। হুর ভাবতেছে তার শাশুড়ি কি কখনোই তাকে মেনে নিবে না?
হুরকে কিছু ভাবতে দেখে ফারহাজ বললো
‘ কি ভাবতেছো?
হুর বললো
‘ তেমন কিছু না।’
—————–
পরেরদিন হুর ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে তার শাশুড়ি বসে আছে। হুরকে দেখে হুরের শাশুড়ি ফোড়ন কেটে বললো ঘুম ভাঙ্গলো তোমার?
হুর হুম বললো। হুরের শাশুড়ির হঠাৎ হুরের গলাই চোখ পরতেই সে হুরকে বললো
‘ হুর তোমাকে যে আমি সোনার চেইন দিয়েছিলাম ওইটা কোথায়?
হুর হঠাৎ এই রকম প্রশ্ন শুনে কিছুটা চমকে গেলো।হুর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। হুর মাথা নিচু করে বললো হারিয়ে গেছে মা।
হুরের শাশুড়ি রেগে বললো
‘ তুমি জানো এইটা কত মূল্যবান। এই চেইন টা আমার শাশুড়ি আমাকে দিয়েছিলো সেটা আমি তোমাকে দিয়েছি আর তুমি কিনা হারিয়ে ফেলেছো? সত্যি বলো তোমার মাকে তো দিয়ে দাওনি?
শাশুড়ির এই কথা শুনে হুর বললো
‘ মা কি বলতেছেন আমি কেনো আমার মাকে চেইন দিতে যাবো?
‘ তোমাদের মতো মেয়েকে আমার চেনা আছে।
ফারহাজ নিচে এসে মায়ের কথা শুনে বললো
‘ কি হয়েছে?
‘ তোর বউ চেইন বাপের বাড়ি দিয়ে এসেছে।
হুরের শাশুড়ি বললো।
হুর রেগে বললো
‘ আমি চেইন আমার বাড়ি দেয়নি।
‘ তাহলে কাকে দিয়েছো?
হুর শ্বাস নিয়ে বললো
‘ আজ আপনার মেয়ে পার্কে নিয়ে আমাকে রেখে চলে এসেছে। আমাকে আপনাদের পছন্দ না এইটা জানি কিন্তু একটা অচেনা জায়গাই আমাকে রেখে আসতে আপনার মেয়ের বিবেকে বাধলো না। আমার কাছে টাকা ছিলো না যার জন্য আমি রিকশাওয়ালাকে টাকা দিতে পারিনি আমি চেইনটা ওনাকে দিয়ে দিয়েছি।’
ফারহাজ বললো
‘ সব খুলে বলো আমায়। ফারহাজের কথায় হুর পার্কের কথা সব বললো। সব শুনে ফারহাজ রেগে গেলো। ফারহাজ রিনার গালে থা’প্পড় দিয়ে বললো
‘ রিনা তুই ও তো একটা মেয়ে তাই না। তোরও তো বিয়ে দিতে হবে বিয়ের পর যদি তোর শাশুড়ি আর ননদ তোর সাথে এই রকম করে তখন? সব সময় শুধু টাকা পয়সা এইগুলো দেখে মানুষকে সম্মান দিয়েছিস কিন্তু কখনো ভেবেছিস এই টাকা কিছু না।’
ফারহাজের অনেক রাগ হচ্ছে তার বোন এই রকম সে ভাবতে পারতেছে না। ফারহাজ বললো তোকে আমার বোন ভাবতেই লজ্জা লাগছে।
ফারহাজের কথার রিনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহাজ হুরকে ডাক দিবে দেখে হুর নেই। ফারহাজ দেখে দরজা খুলা। ফারহাজ তাড়াতাড়ি করে বাড়ির বাহিরে এসে দেখে হুর রাস্তায় দৌড়াচ্ছে।
হুর দৌড়াচ্ছে রাস্তায় হুরের নিজেকে অলক্ষি মনে হচ্ছে। আজ তার জন্য ফারহাজের বিপদ হচ্ছে।সে তো অলক্ষি হুর কান্না করতেছে।
এদিকে
” ফারহাজ হুরের পিছনে দৌড়াচ্ছে হঠাৎ ফারহাজ দেখে একটা ট্রাক আসতেছে। ফারহাজ চিৎকার করে হুরকে বললো হুর প্লিজ সরো।’
ফারহাজের চিৎকার হুরের কানে পৌঁছনোর আগেই ট্রাকটা হুরকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। ফারহাজ এক সেকেন্ডে যেনো থমগে গেলো। আশেপাশের মানুষ সবাই হুরের কাছে আসলো। ফারহাজ হুরের কাছে এসে চিৎকার দিয়ে কান্না করে বললো হুরপরী তোমার কিছু হতে দিবো না। প্লিজ তাকাও।’
পাগলের মতো কান্না করতেছে ফারহাজ। হুর তো তারার দেশে চলে গেছে যেখান থেকে আসা কখনোই সম্ভব না। ফারহাজ গাড়ি এনে হুরকে ডাক্তার কাছে নিয়ে আসলো। ফারহাজ ডাক্তারের কাছে এসে বললো ডাক্তার প্লিজ হুরকে বাঁচিয়ে দিন।
ডাক্তার হুরকে দেখে বললো
‘ এনি মা’ রা গেছেন।’
ফারহাজ ডাক্তারের কথা শুনে চিৎকার করে বললো
‘ না আমার হুর আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।’
ফারহাজের বাড়ির সবাই হাসপাতালে এসেছে। ফারহাজের মা কান্না করে দিয়ে রিনা কে বললো নিজেদের জন্য হুরের মতো ভালো একটা মেয়েকে অবহেলা করেছি। অনেক ভুল করেছি আমি।’
রিনা মাথা নিচু করে আছে।
এক বছর পর
কবরস্থানে দাঁড়িয়ে আছে ফারহাজ। ফারহাজ কান্না করে বললো হুরপরী তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই না?
রিনা আর ফারহাজের মা মুখ চেপে কান্না করতেছে। হুরের মৃত্যুর পর ফারহাজ পাগল প্রায় হয়ে গেছে।ফারহাজ সব সময় হুরের কবরের সামনে এসে কথা বলে। ফারহাজের মা ছেলের এই অবস্থা দেখে কিছু বলতে পারে না কারন তার জন্যই হুরের মৃত্যু হয়েছে। ফারহাজের মা ফারহাজকে বললো ফারহাজ বাড়ি চল।’
ফারহাজ কান্না করে বললো
‘ মা তোমার জন্য আমার হুর নেই। তোমরা ওকে সব সময় অবহেলা অপমান করেছো। এখন তো তুমি খুশি?
ফারহাজের মা চুপ করে আছে। ফারহাজ ভেজা কন্ঠে বললো শেষ বেলায় পেলাম না তোমায়। তবে আমাদের দেখা হবে অতি তাড়াতাড়ি।’
মুচকি হেসে বললো ফারহাজ।
– সমাপ্তি।