শেষ বেলা পর্ব-০৫

0
735

#আরোহী_ইসলাম
#শেষ_বেলা
#পর্ব: পাচঁ

ফারহাজ ঠাস করে রিনার মুখে থাপ্পড় মেরে বললো
‘ তোকে কিছু বলি না দেখে মাথায় উঠে গিয়েছিস। হুর তোর বয়সে অনেক বড় তারপরও তুই ওকে দিয়ে পা মালিশ করতেছিস। লজ্জা করে না আবার ওর নামে নালিশ করতেছিস। নেক্সট টাইম যেনো এই রকম না হয়। এখন থেকে বড়দেরকে সম্মান করবি।’
এই বলে ফারহাজ রুমে চলে গেলো।

ফারহাজের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। ফারহাজের থাপ্পড় খেয়ে রিনা চুপচাপ মাথা নিচু করে আছে। ফারহাজ যেতেই রিনা হুরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে তারপর বললো
‘ তোমার জন্য ভাইয়া আমার গায়ে হাত উঠালো। তোমাকে তো পরে দেখে নিবো।’
বলেই রিনা রাগে ফুসফুস করতে করতে চলে গেলো। হুরের শাশুড়ি হুরের দিকে তাকিয়ে বললো কাজটা ঠিক করলে না বউমা, এই বলে তিনিও মেয়ের পিছনে পিছনে চলে গেলো।

হুর চুপ করে আছে। হুরের চাচি শাশুড়ি হুরের কাধে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো
‘ মন খারাপ করিস না তুই যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস। এইভাবে প্রতিবাদ করবি।’
মিসেস রহিমার কথা শুনে হুর মুচকি হাসলো। তারপর হুর রুমে চলে গেলো। হুর রুমে এসে দেখে ফারহাজ ল‍্যাপটপ নিয়ে আবার বসে আছে। হুর ফারহাজ কে বললো রিনাকে থাপ্পড় দেওয়া আপনার ঠিক হয়নি ও তো ছোট বুঝে নাই।’

ফারহাজ হুরের কথায় হুরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ ও এখনো ছোট নেই আমি ঠিক করেছি। ও দিন দিন অনেক বেড়ে গেছে যাইহোক খাবার খেয়েছো তুমি?

হুর বললো
‘ হুম খেয়েছি।’

বিকেলে
হুর রান্নাঘরে কাজ করতেছে হুরের শাশুড়ি বললো
‘ শুনো আমার রুমটা গুছিয়ে দাও তো।

হুর বললো
‘ মা আমি রান্নাটা শেষ করে নেই তারপর না হয় দিচ্ছি।’

হুরের কথায় হুরের শাশুড়ি ধমক দিয়ে বললো
‘ বলেছি আমি এখন তো এখনই যাবে।’

হুর শাশুড়ির ধমক খেয়ে তাড়াতাড়ি করে রুম গুছাতে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর হুর রুমে বসে আছে রিনা এসে হুরকে বললো ভাবি সকালের কাজের জন্য আমি লজ্জিত আমায় ক্ষমা করে দিও।’

রিনার কথা শুনে হুর মনে মনে বললো
‘ রিনা আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে বিশ্বাস হচ্ছে না। হুর রিনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
‘ ইট’স ওকে রিনা।’

রিনা হুরকে জড়িয়ে ধরে বললো
‘ ভাবি চলো না বাহিরে যায় তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো তুমি তো এই জায়গা ঠিকমতো চিনো না।’

হুর বললো
‘ না তোমার ভাই জানলে বকবে।’

রিনা বললো
‘ কিছু বলবে না। ভাইয়া তো বাহিরে গেছে আসতে রাত হবে আমরা কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবো।’

রিনার জড়া জড়িতে হুর রাজি হয়ে গেলো। হুরকে রাজি হতে দেখে রিনা রহস্যময় হাসি দিলো। তারপর বললো আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসি।’
হুর আচ্ছা বললো।

————

ফারহাজ অফিসে এসেছে। ফারহাজ নিজের কেবিনে বসে আছে মিষ্টি ফারহাজের রুমে এসে বললো ফারহাজ কি হয়েছে এই ভাবে মন খারাপ করে আছিস কেনো?

ফারহাজ মিষ্টির কন্ঠ শুনে বললো
‘ দিদি তুমি তো জানোই বিজনেসের কি অবস্থা হচ্ছে এখন যদি পুলিশ জানে তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে বিজনেসের।’

মিষ্টি বললো
‘ কিছু হবে না আমি তোর সাথে আছি। আমাদেরকে ওই অফিসে যেতে হবে।’

মিষ্টির কথায় ফারহাজ বললো
‘ হ‍্যাঁ। আজকেই যাবো।’
তারপর মিষ্টি আর ফারহাজ ওই অফিসে আসলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর
ফারহাজ আর মিষ্টি ওই অফিসে আসতেই সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফারহাজ সবাই কে বললো
‘ আপনারা সবাই জানেন যে এই অফিসে কালো মাল পাচার হচ্ছে এইগুলো কে করতেছে ধরতে পারছি না। আপনারা কেউ যদি কিছু জেনে থাকেন তাহলে আমাকে বলুন।’
ফারহাজের কথায় সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফারহাজ সবার দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ একটা লোকের দিকে চোখ পরতেই ফারহাজ দেখে লোকটা কেমন যেনো ঘামতেছে ফারহাজ তার কাছে এসে পকেট থেকে টিস্যু তার দিকে দিয়ে বলে মুছে নিন। ফারহাজের কথায় লোকটা ভিতু চাহনিতে তাকিয়ে বলে
‘ না স‍্যার লাগবে না অনেক গরম তো সেই জন্য ঘামছি।’

ফারহাজ ভ্রু উচু করে বলে
‘ এসি থাকতেও আপনি ঘামছেন?

লোকটা মাথা নিচু করে নিলো। ফারহাজ বললো ‘ আপনি কি কিছু জানেন?

লোকটা বললো
‘ না স‍্যার আমি কিছুই জানিনা।’

ফারহাজ লোকটার সাথে কথা বলতেছে হঠাৎ ফারহাজের ফোন আসে অচেনা নাম্বার থেকে।

” হুর আর রিনা বাহিরে গাড়ির কাছে আসলো। রিনা নিজে ড্রাইভ করবে। হুর অনেক বার বলেছিলো ড্রাইভার কে নিয়ে যাও কিন্তু রিনা বলে ড্রাইভাইর লাগবে না আমি আছি তো। হুর আর কিছু বলে না। রিনা গাড়ি চালাচ্ছে হুর বাহিরে তাকিয়ে আছে।

হুর রিনাকে বলে
‘ রিনা কোথায় যাচ্ছি আমরা?

‘ সামনেই একটা পার্ক আছে ওইখানেই যাবো।’

হুর বললো
‘ আচ্ছা।
হুর বাহিরে তাকিয়ে আছে হঠাৎ দেখে রিনা অন্য রাস্তা দিয়ে যেতেছে।

হুর চমকে গিয়ে বললো
‘ রিনা আমি যতদুর জানি এই রাস্তা দিয়ে তো যায় না। তুমি এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো কেনো?

রিনা হেসে বললো
‘ পার্কে এই রাস্তা দিয়েও যাওয়া যায়।’

হুর ওহ বললো। হুরের কেমন জানি ঘটকা লাগছে রিনার কথায় তবুও বেশি কিছু ভাবলো না হুর।

বেশ কিছুক্ষন পর
একটা পার্কে গাড়ি দাড় করালো রিনা। রিনা হুরকে নামতে বললো রিনার কথা শুনে হুর গাড়ি থেকে নেমে দেখে অন্য একটা পার্ক। হুর চমকে গিয়ে রিনাকে বলে এইটা তো অন্য একটা পার্ক। তুমি এইখানে আনলে কেনো?

হুরের কথায় রিনা বললো
‘ আরে ভাবি এইটা অন্য একটা পার্ক এই জায়গাটা দেখো সুন্দর না?
হুর আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সত্যি অনেক সুন্দর। হুর বলে অনেক সুন্দর তো।

হুরের কথায় রিনা রহস্যময় হাসি দিয়ে আস্তে বলে
‘ এই জায়গাটা যেমন সুন্দর তেমনি অনেক ভয়ংকরও।’

‘ ভয়ংকর মানে?
ভ্রু কুচকে বলে হুর।

‘ না সুন্দর বলেছি তুমি হয়তো ভুল শুনেছো। আচ্ছা চলো ভিতরে যায়।’
রিনা বললো।
রিনার কথায় হুর আচ্ছা বললো।

” ফারহাজ ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে বলে
হ‍্যালো মিস্টার ফারহাজ নিজের প্রান বাচাতে চাইলে তিশ মিনিটের মধ্যে ওই অফিস থেকে বের হয়ে যা। এই অফিসে বোম লাগাতো হয়েছে যা কিছুক্ষন পরেই ঠুস করে ফেটে যাবে।’

লোকটার কথায় ফারহাজ অবাক হয়ে বললো
‘ হুয়াটটটটট..! কে বলছেন?

‘ আমার বিষয়ে পরে জান এখন তাড়াতাড়ি নিজের প্রান বাচাতে অফিস থেকে বের হ এই বলে লোকটা কল কেটে দিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো মিস্টার ফারহাজ তোর পতনের দিন আসছে।

ফারহাজ সবাই কে বললো
‘ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে সবাই বের হও এইখানে বোম লাগানো আছে। ফারহাজের কথায় সবাই তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলো। ফারহাজ অফিস থেকে বের হয়ে সবাই কে বললো সবাই বের হয়েছো তো?

‘ হ‍্যাঁ স‍্যার।

কিছুক্ষন পর
ফারহাজ ফোনের দিকে তাকিয়ে টাইম দেখতেছে হঠাৎ…

হুর পার্কটা ঘুরে দেখতেছে রিনা হুরকে বললো ভাবি ফুচকা খাবে?

ফুচকার কথা শুনে হুর আচ্ছা বললো। তারপর রিনা আর হুর ফুচকা খেতে লাগলো। ফুচকা খাওয়া শেষ হতেই রিনা বলে ভাবি তুমি একটু থাকো আমি একটু আসছি বলে রিনা চলে গেলো। হুর বসে আছে।
রিনা হুরের কাছ থেকে কিছুটা দূরে এসে বললো তুমি থাকো আমি যায় টাটা বলেই চলে গেলো। আর হুর রিনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে