শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-২৪+২৫

0
1028

শেষ বিকেলের রোদ-২৪ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

সোহান:- এই ফুলটুসি কোন দিকে যাচ্ছিস?

— সোহানের ডাকে তাকিয়ে দেখি আমি ডাইনিং ছেড়ে অনেকটা দূর এগিয়ে গিয়েছি। কিছুটা লজ্জা নিয়ে আবার পেছন দিকে ফিরে এসে ডাইনিং এ ঢুকলাম। সকলে নাস্তা শুরু করে দিয়েছে আমরা দু’জন ও তাদের সাথে যোগ দিলাম। নাস্তার টেবিলে সকলে হাসি খুশি কথাবার্তা বলছে।

ফুপু:- তোর শরীর কেমন এখন?

— জ্বি ফুপু ভালো, টুকটাক কথা বলতে বলতে নাস্তা করছি, হঠাৎ আপুর এক কাজিন বললো গান বাজছে নাচ হবে না? ঠিক সেই মুহুর্তে আপুর দু’জন বান্ধবী রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো নাস্তা শেষ হলেই নাচ শুরু হবে। আপনারা এতো গুলো মানুষ শহর থেকে এসেছেন আপনাদের নাচতো দেখবোই।

ফুপু:- আসো আসো তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নাও।

— সকলে এক সাথে নাস্তা শেষ করে ডাইনিং থেকে বের হলাম।

রুমি:- আফরিন তোর সব কাজিনদের নিয়ে উঠানের ঐ দিকে আয়, নাচ গান সেখানেই করবো।

আফরিন:- কিন্তু ঐ দিকটাতো ভেজা,

রুমি:- আরে কিছু হবে না একটু ঝাড়ু দিয়ে দিলেই হবে। আর কাদার ভিতর নাচ গানইতো মজা।

আফরিন:- আচ্ছা তোরা দু’জন যা আমি সবাইকে নিয়ে আসছি।

— আপু এসে আমাদের সবাইকে বাড়ির উঠানে ডেকে নিয়ে আসলো। বিশাল উঠান এরই মধ্য আপুর বান্ধবীরা ঝাড়ু দিয়ে অনেকটাই পরিষ্কার করে ফেলেছে। মোটামুটি ভালোই পরিষ্কার অবস্থা পানি জমা নেই কোথাও তবে কাদা মাটি ঠিকই বুঝা যাচ্ছে। আর এটাও বুঝা যাচ্ছে যে বা যারাই নাচানাচি করবে পরে যাবার সম্ভাবনা একশো ভাগই থাকছে। যে পরবে না এই কাদামাটিতে লাফিয়ে সেই ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী। আমি শিউর এই কাজটা আপুর বান্ধবীরা ইচ্ছে করেই করছে। যেন দু’চার জন পিচ্ছিলেয়ে পরে সবাই কে বিনোদন দিতে পারে সেজন্যই।

আফরিন:- ইকরা ভুলেও কিন্তু এই কাদা মাটিতে লাফাতে যাবি না। এমনিতেই তোর শরীরের অবস্থা ভালো না পরে গেলে শেষে কোমড়টা ভেঙে বসে।থাকতে হবে ঘরে।

— না না আমার পক্ষে নাচা সম্ভব নয়। তোমরাই নাচানাচি করো আমি বরং বসে বসে দেখবো। এমন সময় দুম করে আবারো সাউন্ড বক্সে বেজে উঠলো,
“হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে
হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে
সুরমা-কাজল পরাও কন্নার ডাগর নয়নে,
আলতা বিছপ রাঙা দুটি, রাঙা চরণে
ভরা কলস ছলাৎ ছলাৎ ডাঙা এ নিতল ।
হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে”

— সকলের চেহারাতেই আনন্দের ছাপ, সকলেই গানের তালে তালে হাত পা নাড়াচ্ছে, আপুর দুই বান্ধবী গানের তালে তালে নেচে চলেছে, এদিকে আশে পাশের বাড়ি থেকে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা আসতে শুরু করেছে নাচ দেখার জন্য। রুমি আপু আপুর কয়েকজন কাজিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো কাদার মাঝে নাচার জন্য, তারাও কোন রকমে হাত পা ছুড়ে নাচার চেষ্টা করছে। সেদিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে কিছু সময়ের জন্য সোহানের দিক থেকে নজর কিছুটা সরে গিয়েছিলো। হঠাৎ করে গাঢ়ে কারো স্পর্শে চমকে উঠলাম। ঘুরে তাকিয়ে দেখি সোহান? ইশারায় জিজ্ঞাসা করলাম কি?

সোহান:-নাচবি নাকি তুই?

— মাথা নেড়ে তুমি যেয়ে নাচো, আমার এতো সখ নেই।

সোহান:- ঠিকতো শেষে আবার হিংসা করিস না,

— আমার বয়েই গেছে তোমার সাথে হিংসে করতে।
সোহান হাসতে হাসতে চলে গেলো আমিও নাচ দেখায় মনোযোগী হলাম। হঠাৎ করে সোহান আপুর দু’জন ছেলে কাজিন আর এলাকার ছোট ছোট ছেলে গুলোকে নিয়ে সেখানে নাচতে শুরু করলো। ওদের নাচ দেখে আস্তে আস্তে আপুর বান্ধবীরা থেমে গেলো। এবং এক সময় তারাও এসে সাইডে দাঁড়িয়ে সোহানদের নাচ দেখতে শুরু করলো। এর আগে গ্রামের বিয়ে কখনো দেখিনি শুধু শুনেছি যে অনেক মজা হয় আজ তা অনুভব করছি সত্যিই উপভোগ্যময়, দীর্ঘ সময় সকলে নাচ গান করে পুকুরে চলে গেলো, ছেলেরা এক পাশে আর মেয়েরা একপাশে গোসল করতে শুরু করলো, ছোট বেলার কথা মনে করিয়ে দিলো, কতই না পুকুরে লাফিয়ে লাফিয়ে গোসল করছি, মন চাইলেও আজ পুকুরে নামতে পারছি না। গোসল শেষে সবাই মিলে এক সাথে খেতে বসেছি উঠানে। এরপর শুরু হলো নানান আয়োজন সন্ধ্যায় বর পক্ষের লোকজন আসবে আপুকে গায়ে হলুদ দিতে। সকলে মিলে হলুদ, মেহেদী বাটতে শুরু করেছে। সত্যিই মুগ্ধ হচ্ছি এতো সুন্দর পরিবেশ দেখে, মনে মনে লজ্জা লাগছে যখন ভাবছি আমার বিয়েতেও এমনটা হবে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আকাশ ভাইয়াদের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে তারা অলরেডি রওনা হয়ে গেছে হয়তো আর কিছুক্ষণের ভিতর তারা চলেও আসবে। এদিকে সোহানকে আজ বড্ড বিজি দেখাচ্ছে নানান রকম কাজে সবাইকে সাহায্য করছে আমার সাথে কথা বলার মত সময়ও কি ওর বের হয়না। ভাবতে ভাবতে আকাশ ভাইয়াদের বাড়ির লোকজন বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলো। মুরুব্বিদের সাথে আকাশ ভাইয়ার ছোট বোন, আরমান, নীলা আরও অনেক অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা এসেছে। ছোট করে একটা স্টেজ সাজানো হয়েছে সেখানেই হলুদের শাড়ি পরে আপু বসে আছে। আকাশ ভাইয়ার বাড়ি থেকে আসা সকলেই হলুদের ড্রেস পরে আসছে। বেশ লাগছে একে একে সকলে আপুর মুখে হলুদ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ পেছন থেকে,
আরমান:- বলে উঠলো কেমন আছেন? মন খারাপ নাকি?

— এইতো ভালো আছি আপনি কেমন আছেন। মন খারাপ না শরীরে কিছুটা জ্বর।

আরমান: ওহ আচ্ছা ডাক্তার দেখান নি? আমরাও সকলে ভালো আছি।

— হ্যাঁ ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাচ্ছি, টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে এর মাঝে সকলকে নাস্তা খাবার জন্য ডাক দিলো, আরমানকে বললাম যেয়ে নাস্তা খেয়ে নিন।

আরমান:- হ্যাঁ আসুন আপনিও খেয়ে নিবেন।

— আপনারা খেয়ে নিন, আমি পরে খাবো। আরমান উনার আত্মীয়দের সাথে নাস্তা খাবার জন্য চলে গেলো। আমিও কিছুক্ষণ পর মেহমানদের খাবার ঠিক মত দেয়া হয়েছে কিনা দেখার জন্য সেদিকে গেলাম।

ফুপু:- কিরে মা তুই ও খেয়ে নে হালকা নাস্তা।

— না ফুপু আমার খিদে নেই, এর মাঝে বাহির থেকে বাবার ডাক শুনে ছুটে গেলাম। বাবা মা, চাচা চাচী সকলে চলে এসেছেন। আমি ছুটে যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। সকলে মিলে বাড়ির ভিতর ঢুকলাম। সবাইকে রুমে রেস্ট নিতে বলে আমি বের হয়ে ফুপুকে ডাক দিয়ে বললাম বাবা মা এসেছে।

ফুপু:- তুই এই দিকটা দেখ, আমি যেয়ে সকলের সাথে দেখা করে আসছি।

— ফুপু চলে যেতেই আমার নজর গেলো সোহানের দিকে। সোহান সকলকে খাবার পরিবেশন করছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতেই

সোহান:- জিজ্ঞাসা করলো কিছু বলবে?

— ঢাকা থেকে সবাই চলে এসেছে, তুমি কি দেখা করবে না?

সোহান:- দেখা করবো না কেন? মেহমান যাক তারপর দেখা করে আমরা ঐ বাড়িতে যাবো। তুই অপেক্ষা কর খাওয়ার পর্বটা শেষ হোক।

— আমিও এদিক সেদিক ঘুরে দেখছি কারো কিছু লাগবে কিনা। কিছুক্ষণের ভিতর মোটামুটি নাস্তার পর্ব শেষ হয়ে গেলো। মেহমানরা বের হতে শুরু করলো। সকলে বাড়িতে যাবার জন্য রেডি হলো, আরমান আমার কাছে এসে বললো আপনিও চলুন আমাদের সাথে। আপনারা যান আমরা পরে আসবো।

আরমান:- আমাদের সাথে গেলে আপনার ভালো লাগবে।

— সমস্যা নেই আপনারা যান আমরাও কিছু সময় পর আসছি, আর ঢাকা থেকে বাবা মা এসেছে এখনো ঠিক মত কথা বলা হয়নি।

আরমান:- ওহ আচ্ছা আপনার বাবা মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন না?

— আরমানের কথায় কিছুটা লজ্জাবোধ হলো, আমি বললাম উনারাতো রেস্ট নিচ্ছে বের হয়নি এখনো, চলুন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় নীলা আরমানকে ডাক দিলো বের হবার জন্য।

আরমান:- আচ্ছা এখন থাক পরে এক সময় পরিচিত হবো, এখন সকলে যাবার জন্য অপেক্ষা করছে, আপনারও তাড়াতাড়ি ঐ বাড়িতে চলে আসুন।

— হ্যাঁ অবশ্যই, আরমান বিদায় নিয়ে চলে যেতেই আমি বাবা মায়ের রুমে ছুটে আসলাম। এসে দেখি সোহান আগে থেকেই সকলের সাথে কথা বলছে। আমি যেতেই বড় চাচা রেগে আমাকে বলতে শুরু করলো।

বড় চাচা:- তোদের কি আমরা কিছু লাগি না নাকি?

— কেন এমন করে বলছো তোমরাইতো আমাদের দু’জনের সব।

বড় চাচা:- তাহলে কি তোরা এমনটা করতে পারতি, অসুস্থ হলি দু’জনে অথচ একটি বারের জন্যও জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। সোহানের কথা বাদ দিলাম কিন্তু তুই কি করে পর করে দিলি?

— আমি ছুটে বড় চাচার বুকের উপর মাথাটা লাগিয়ে দিয়ে এমন করে বলতে পারলে তুমি।

বড় চাচা:- আমি বললেই দোষ আর তোরা অন্যায় করলে কোন ক্ষতি নেই তাই না?

— থাকবে না কেন একশো বার থাকবে হাজার বার থাকবে কিন্তু তোমরা কেন বুঝনা, তোমরা দূর থেকে চিন্তা করবে আমরা কি করে সামান্যতেই তোমাদের চিন্তায় ফেলে দেই বলো?

বাবা:- হয়েছে বেশ বড় হযে গিয়েছিস দু’জন দেখতে পাচ্ছি।

— কথা বলতে বলতে আফরিন আপু ঢুকে বলতে শুরু করলো তোরা এখনো তৈরি হলি না? সকলে তোদের জন্য অপেক্ষা করছে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে তুই আর ভাইয়া। আমি আর সোহান বাবা মাকে বলে বের হয়ে এলাম। সোহান নিজের রুমে আর আমি আমার রুমে চলে আসলাম। তাড়াতাড়ি হলুদেে জন্য নিয়ে আসা জামা কাপড় গুলো বের করে পরতে শুরু করলাম। খুব সুন্দর করে সেজেছি তবুও কি যেন কম কম মনে হচ্ছে ভাবতে ভাবতে বাহির হতেই। পেছন থেকে কেউ হাত ধরে টান দিতেই ফিরে তাকালাম।

সোহান:- কানের কাছে চুলে গোলাপ ফুলটা গেথে দিতে দিতে বললো এটা না দিলে মানাবে না। সাথে এই ফুলের মালাটা খোপায় দিতে হবে তবেই পারফেক্ট লাগবে।

— আমি অবাক হয়ে সোহানের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সত্যিই আমি মনে মনে ঠিক এই ফুল গুলোয় খুঁজতে ছিলাম। কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।

সোহান:- এই ফুলটুসি কোথায় হারালি?

— তোমার ফুলের মাঝে হারিয়ে গিয়েছি, হারিয়ে যেতে চাই এখন তোমার হাতে হাত রেখে দূর বহু দূর। বলেই সোহানের দিক হাত বাড়িয়ে দিলাম।

চলবে…

শেষ বিকেলের রোদ- ২৫তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— সোহান হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো, আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করলাম।

সোহান:- এমন করে আমার দিকে না তাকিয়ে থেকে সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁট নয়তো পরে যাবি।

— পরবো না তুমি ধরে রেখেছো না? কি করে পরবো। আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

সোহান:- উহু তোকে খুব সুন্দর লাগছে ঠিক যেন আসমানের পরী মাটিতে নেমে এসেছে।

— ইস ঢং করো নাতো, কি সব বলো না তুমি।

সোহান:- সত্যি বলছি, আজ সব ছেলেরা তোর পিছু লাগবে রে।

— কথা বলতে বলতে সকলের সাথে যেয়ে যোগ দিলাম, গায়ে হলুদে যাবার জন্য দু’টো গাড়ি আনা হয়েছে ছেলেদের জন্য একটা আর মেয়েদের জন্য একটা গাড়ি, সোহান ছেলেদের গাড়িতে আর আমি যেয়ে মেয়েদের গাড়িতে বসলাম। আপুর কাজিনরা আর রুমি আপুরা এ গাড়িতে বসেছে।

রুমি:- ইস আমার মনেই ছিলো না ফুলের কথা, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ইকরা।

— ধন্যবাদ আপু তোমাদেরকেও খুব সুন্দর লাগছে,

ফারিয়া:- আপুর সেই মোটা ফ্রেমের চশমা পরা কাজিন, কোথায় পেলে ফুল? ইস আমাদের জন্যও নিয়ে আসতে।

— হুম ভুল হয়ে গেছে সোহানকে বলার দরকার ছিলো তোমাদের জন্যও নিয়ে আসতে। আসলে ব্যস্ততার মাঝে কি আর এতো কিছু মনে থাকে বলো।

ফারিয়া:- ওহ সোহান ভাই এনে দিয়েছে?

— হ্যাঁ ওইতো এনে দিলো। কথা বলতে বলতে গাড়ি এগিয়ে চলছে আকাশ ভাইয়াদের বাড়ির পথে, এদিকে ফারিয়া মুখ ভার করে বসে আছে, দেখে মনে হচ্ছে খুব কাছের কারো সাথে প্রচণ্ড রকম ঝগড়া হয়েছে যার কারণে এমন ভাবে বসেছে, রুমি আপুদের সাথে গল্প করতে করতে এক সময় আমাদের দু’টো গাড়িই ঢুকে পরলো আকাশ ভাইয়াদের বাড়ির ভিতর। বিশাল বড় বাড়ি বিশাল জায়গা জুড়ে লাইটিং করা হয়েছে। মিউজিক বেজে চলেছে, আমরা গাড়ি থেকে নামতেই আকাশ নীলা আরও কয়েকজন এগিয়ে এসে আমাদের স্বাগতম জানিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকালো।বিশাল বড় করে স্টেজ বানানো হয়েছে, সেখানেই বসে আছে আকাশ ভাইয়া। তার চারিপাশে বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনরা ঘিরে রেখেছেন। একে একে সকলে এগিয়ে গেলো হলুদ দেবার জন্য আমি ছবি তুলছি প্রচণ্ড ভীর লেগে গেছে সেখানে, হঠাৎ করে কাপড়ের ভিতর দিয়ে পেটের উপর কারো স্পর্শে কেঁপে উঠি। মনে করি যে সোহান দুষ্টমি করছে, কিন্তু ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠি, অপরিচিত কেউ একজন যাকে এর আগে কখনোই দেখি নি, হাতে হলুদ লাগানো। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই তাকে বললাম কি সব অসভ্যতা করছেন।

— খিলখিল করে হাসতে হাসতে লোকটা বললো বিয়ে বাড়িতে এমটা হবেই সুন্দরি মেয়েদের সাথে, চলো নিরিবিলি কোথাও যাই অনেক মজা হবে।

— তার এমন নোংড়া ইঙ্গিতে মনে চাচ্ছিলো পা থেকে জুতা খুলে সোজা গালে চালিয়ে দিতে, কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ে তা না করে তাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম। তাকে বললাম এ নোংড়া কথা বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যেতে।

— রাগী রাগী ভাব নিয়ে তোমার খুব দেমাগ দেখছি, এখুনি সব ভেঙে চূরমার করে দিচ্ছি, বলেই হলুদ মাখা হাত নিয়ে এসে মুখের সামনে ধরতেই, সোহান কোথা থেকে এসে দু’হাত চেপে ধরলো।

সোহান:- হাত দু’টো মোচড় দিয়ে খুব সখ মেয়েদের গায়ে হলুদ দেবার?

— ছেড়ে দে না হলে খুব খারাপ হবে তোর।

— লোকটার মুখ থেকে প্রচণ্ড রকম বাজে গন্ধ বের হচ্ছিলো। মনে হচ্ছে লোকটা নেশা করেছে, আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম ছেড়ে দাও।

সোহান:- এক হাত ছেড়ে দিয়ে লোকটার মুখ বরাবর প্রচণ্ড জোড়ে থাপ্পর মেরে দিয়ে কি খারাপ করবি বল?

— চিৎকার চেঁচামেচিতে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেলো। সবাই জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে কি হয়েছে, এমন সময় ঐ লোকটাই চিৎকার করতে করতে বললো, একটুইতো হাত দিয়েছি বেশী কিছুতো করিনি, তবে সুযোগ পেলে ছাড়বো না। লোকজনের আর বুঝতে বাকি রইলো না ঘটনা কি ঘটেছে। আমি সকলের সামনে মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করেছি। আরমান ঐ লোকটাকে মারতে মারতে সেখান থেকে বের করে দিলো। আকাশ ভাইয়া স্টেজ থেকে নেমে এসে ক্ষমা চাইলো।

সোহান:- আরে এ কি করছো? তোমার কোন দোষ নেই, আর উনি নেশায় ছিলো নেশার মাঝে নিজের সেন্স হারিয়ে এমনটা করেছে।

— সোহান আমাকে নিয়ে সাইডে চলে আসলো, ঐ বাড়িতে হলুদের পর্ব শেষ হতেই আমরা রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়িতে উঠার সময় সোহান সবাইকে বলে দিলো এ বাড়িতে যা হয়েছে তা যেন ঐ বাড়িতে কাউকে না জানাই, বিয়ে বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি হবে। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে আকাশ ভাইয়া আর আরমান ও দু’বার করে ফোন দিয়েছে, এবং বার বার দুঃখ প্রকাশ করেছে। সকলে বাড়িতে চলে আসলাম, দুমদাম মিউজিক বাজছে বাড়িতে, মুরুব্বিদের ভিড় সব কিছুর মাঝ দিয়ে নিজের রুমে চলে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোজা ওয়াশ রুমে চলে আসলাম। মুখ চেপে ধরে কান্না করে দিলাম। কোথায় থেকে কি হলো বিয়ে বাড়িতে এমন জগন্য একটা ঘটনা ঘটে যাবে কোন ভাবেই ভাবতে পারি নাই। ফ্রেস হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। আসতেই আপুকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখলাম।

আফরিন:- কিরে কেমন মজা করলি ঐ বাড়িতে?

— মুখে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে তুলে হুম আপু অনেক মজা করেছি, ইস গ্রামে না আসলেতো জানতেই পারতাম না বিয়ে বাড়ি গুলোতে এতো মজা হয়।

আফরিন:- আর তোর দুলাভাইকে কেমন দেখলি? ছবি তুলিস নাই নাকি?

— ওহ দুলাভাইতো পুরো হিরোর মত ছিলো, মেয়েনা যে ভাবে ঘিরে রেখেছিলো চারিদিক থেকে তুমি দেখলে হিংসেয় মরে যেতে।

আফরিন:- থাক থাক আমার এতো হিংসা করে মরে মরার দরকার নেই, দেতো দেখি এখন কি কি ছবি তুললি।

— ওহ হ্যাঁ এই নাও ফোন, তুমি ছবি দেখো আমি সবার সাথে দেখা করে আসি বলে ফোনটা আপুর হাতে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। বাবা মাকে খুঁজতে বের করলাম।

বড় চাচী:- কিরে ইকরা তোর মুখটা এতো শুকনো দেখাচ্ছে কেন?

— কই আমিতো ঠিকই আছি, জার্নি করে এসেছি তাই হয়তো এমন লাগছে।

বড় চাচী:- না নিশ্চই কিছু হয়েছে, সোহান কিছু বলেছে? শুধু আমাকে একবার বল, এই বিয়ে বাড়ি থেকেই ওকে বের করে দিবো।

— বড় চাচীর গলা জড়িয়ে ধরে উহু ও আমাকে কিছুই বলেনি, সত্যি বলছি তোমার ছেলে এখানে আসার পর আমাকে একটুও জ্বালায়নি, বরং অনেক অনেক কেয়ার করেছে।

বড় চাচা:- কই তোমরা বাড়িতে কত কাজ আর তোমরা এখানে বসে গল্প করছো, ইকরা তোর শরীর ভালো না যা মা গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে নে।

— সকলে রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আমিও রুম থেকে বেরিয়ে আমার রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। চারিদিকটা অন্ধকার হয়ে আসছে মনে হচ্ছে যে কোন মুহুর্তে পরে যাবো, অনেক কষ্টে হেঁটে রুমে যেয়েই বিছানায় শুয়ে পরলাম।

আফরিন:- কিরে ঘুমিয়ে পরবি নাকি?

— চোখ বন্ধ অবস্থাতেই আপু আমার ভালো লাগছে না।

আফরিন:- তোর কি হয়েছো বলেই কপালে হাত দিয়ে একিরে তোরতো আবার জ্বর এসেছে ইস ডাক্তারের দেয়া ঔষধ গুলোও খাসনি। আমি পানি নিয়ে আসছি তুই শুয়ে থাক ঔষধ গুলো খেয়ে ঘুমাবি।

— অল্প সময়ের ভিতর আপু পানি আর ঔষধ আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি ঔষধ খেয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। একটা সময় ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মা পাশে বসে আছে। আমি উঠে বসতে বসতে জিজ্ঞাসা করলাম কখন এলে তুমি?

মা:- সারা রাত এ ঘরেই ছিলাম তুইতো বেহুশ হয়ে ছিলি, আর আমরা সারা রাত জেগে তোর মাথায় পানি দিয়েছি, শরীর মুছে দিয়েছে। ইস কি যে ভয় পেয়েছি, তার উপর বাহিরে যাবার মত কোন অবস্থাই ছিলো না, সারা রাত কি বৃষ্টিটাই না হয়েছে।

— চিন্তা কইরোনাতো মা আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ আছি দেখছো না।

সোহান:- ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নে, পার্লারে যেতে হবে আফরিনকে নিয়ে সেই সাথে তোকেও ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসবো।

— আমি যেয়ে কি করবো তুমি সাথে গেলেইতো হবে।

সোহান:- বেশী কথা বলিস নাতো আমি কি পার্লারের ভিতর ঢুকবো নাকি? মেয়ে মানুষ তুই ঢুকবি তাছাড়া তোকেওতো টুকটাক রেডি সাজতে হবে আজ পার্লার থেকে। সব চেয়ে বড় কথা বাহির থেকে ঘুরে আসলে মন ভালো হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি নাস্তা করে কোন শাড়ি পরবি নিয়ে বের হয়ে নে। বলে সোহান বের হয়ে গেলো রুম থেকে,

— আম্মুও বললো সোহান ঠিকই বলেছে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে ঔষধ খেয়ে যা পার্লার থেকে ঘুরে আয়। আমি উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে এসে ঔষধ খেয়ে ব্যাগ থেকে নীল রঙের শাড়িটা বের করলাম আর সোহানের জন্য কেনা পাঞ্জাবীটা এক বার বুকে জড়িয়ে আবার ব্যাগের ভিতর রেখে রুম থেকে বের হলাম। আপু আর সোহান আগে থেকেই রেডি হয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো আমাকে দেখে সোহান বলতে শুরু করলো তাড়াতাড়ি চল বাহিরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, আল্লাহ জানে কয় ঘন্টা লাগবে তোদের রেডি হতে ইস বসে বসে আমিতো বোরিং হয়ে যাবো।

আফরিন:- কেন কেন বোরিং হবে তুমি বরং বাহিরে এসে ঘুরবে ফিরবে মেয়েদের সাথে ইটিস পিটিস করবে।

সোহান:- থাক সাথেই দু’টো সুন্দরি আছে আর কয়টা লাগে শুনি?

— কথা বলতে বলতে গাড়িতে উঠবো এমন সময় কেউ একজন বলে উঠলো দাঁড়াও দাঁড়াও। সকলে এক সাথে পেছনে ফিরে তাকাতেই আমি চমকে গেলাম।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে