শেষ বিকেলের রোদ -২২ তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— দোকানের ভিতর ঢুকতেই ফুপা বলতে শুরু করলো তোরা দেখতো কোন শাড়িটা ভালো লাগে? দোকানি কয়েক রকম শাড়ি বের করে দিলো সকলে মিলে একটা হলুদ রঙ এর শাড়িই পছন্দ করলাম। সকলের জন্য এক রকম শাড়ি বেশ লাগছে ভাবতে। এর মাঝেই ফুপা বললো তোদেরতো হলো এখন ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবী পছন্দ করতে হবে এক রঙের। সে দোকান থেকে শাড়ি গুলো নিয়ে অন্য আরেকটা দোকানের ভিতর ঢুকলাম। সেখান থেকে হলুদ রঙের কিছু পাঞ্জাবী কিনে দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম।
ফুপা:- তোমাদের কারো আর কিছু কেনার থাকলে কিনে নিতে পারো।
— সকলেই টুকটাক কেনাকাটা করে গাড়িতে যেয়ে বসলো। সোহান আমার দিকে তাকিয়ে ফুপাকে বললো আপনারা সকলে চলে যান আমি আমরা দু’জন কিছুক্ষণ পর আসছি।
ফুপা:- কেন তোরা আবার কি করবি?
সোহান:- আমরা আরও কিছু কেনাকাটা করবো।
ফুপা:- আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।
— গাড়ি চলে যেতেই সোহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম কি হলো সবার সাথে গেলে না কেন?
সোহান:- দু’জন মিলে ঘুরবো বলে।
— তোমার সাথে আমার ঘুরতে বয়ে গেছে।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আর কি আমি একাই ঘুরি বলেই হাঁটা শুরু।
— এই দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো? আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাও।
সোহান:- কেন আমার সাথে বলে যাবি না?
— তুমিতো অভিমানও বুঝ না, রাগ ভাঙাবে কি করে?
সোহান:- আমার ঐসব বুঝার সময় নেই, সুন্দর মেঘলা দিন, খোলা আকাশের নিচে বসে ফুটপাতের ঝাল ফুচকা খাবার মজাই আলাদা।
— তুমিতো ভালো করেই জানো ফুচকা আমার কতটা প্রিয়।
সোহান:- হুম জানি বলেইতো সবাইকে পাঠিয়ে দিলাম দু’জন মিলে ফুচকা খাবো বলে।
— হয়েছে ঢং করো না, যদি বৃষ্টি আছে?
সোহান:- ভিজবো দু’জন।
— কথা বলতে বলতে একটা ফুচকার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালাম। দু’প্লেট ফুচকার অর্ডার করে দু’জন চেয়ার টেনে বসলাম। অল্প সময়ের ভিতর ফুচকা চলে আসলো। ফুচকা খাচ্ছি সোহান তাকিয়ে আছে দেখে কিছুটা লজ্জা লাগছে। মুখ ফুসকে বলে ফেললাম এমন করে কেন তাকিয়ে আছো?
সোহান:- চোখে চোখ রেখেই তোর ফুচকা খাবার দৃশ্যটা অসাধারণ। তাই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছি।
— হাসতে হাসতে কি যে বলো না সবাই এভাবেই ফুচকা খায়।
সোহান:- কি জানি কখনো এতো কাছে থেকে কাউকে খেতেতো দেখিনি।
— ওহ তাই না? বলতে বলতে সোহানের মুখের দিকে একটা ফুচকা তুলে ধরলাম।
সোহান:- আমি খাচ্ছিতো তুই খা।
— আমার হাতেরটায় বেশী টেস্ট আছে খেয়ে দেখো।
সোহান:- তাইনা?
— হুম তাইতো বলেই মুখে ঢুকিয়ে দিলাম ফুচকাটা।
সোহান:- হয়েছে এখন তুই খা আমি মুগ্ধ হয়ে তোর খাওয়া দেখি।
— এই মানুষজন হাসবে বুঝলে তোমার এসব কথা শুনলে।
সোহান:- তাতে আমার কি? আমিতো আমার প্রিয়সীকে দেখবো, অন্য কোন মানুষকেতো আর দেখবো না?
— আহা কত সখ, মুখে তুই তুই বলো সব সময় আর এখন প্রিয়সী।
সোহান:- তো তুই আমার ছোট তোকে তো তুই বলেই বলবো।
— তুমি আসলেই একটা পাগল, প্রমিকাকে কি কেউ তুই বলে নাকি? আমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে কি তুমি তুই করে বলতে?
সোহান:- এই তোর জায়গায় অন্য মেয়ে আসবে কেন? অন্য মেয়েকে কি আমি ভালোবাসি নাকি?
— উফ চুপ করে খাওতো।
সোহান:- আচ্ছা চুপ।
— আমি ফুচকা খেয়ে চলছি আর সোহান সেই একই রকম তাকিয়ে আছে। আচ্ছা এতো ভালোবাসে আমাকে কই কখনোতো বুঝতে দেয়নি আগে। ওর চোখে এতো মায়া আমি আগে কেন বুঝিনি। যতই দেখছি ততই ঐ চোখের মায়ায় পরে যাচ্ছি। খাওয়া শেষ করে দু’জন হাঁটতে শুরু করলাম। বাহিরে বাতাস হচ্ছে বাতাসে চুল গুলো এলেমেলো ভাবে উড়ছে। সোহান মাঝে মাঝে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দিচ্ছে। আমার ভীষণ রকম ভালো লাগছে অদ্ভুত এক ঘোর কাজ করছে ওর প্রতিটা স্পর্শে। হঠাৎ করেই হাঁটতে হাঁটতে সোহান আমার হাতটা চেপে ধরলো। এই প্রথম সোহান এভাবে আমার হাত ধরে হাঁটছে। আমি মনে মনে বলছি আরও আগে কেন তুমি আমাকে ভালোবাসো বলোনি। আরও আগে কেন তুমি আমার হাতে হাত রাখোনি? কেন এতোটা কাছে এসে এক সাথে পাশে থেকে পথ চলোনি?
সোহান:- এই তুই কি কিছু বলছিস নাকি?
— আমি কিছু বললে তুমি বুঝ নাকি?
সোহান:- আমি বুঝতে চাইনা কোন কিছু, তবে তোর প্রতিটা অনুভবে মিশে থাকতে চাই। আমি বুঝতে পারি না হয়তো অনেক কিছুই, তবে তোকে সারা জীবন এমনি করে ভালোবেসে যেতে চাই।
— ওহ তাই না? ভালোবাসি কথাটা বলানোর জন্য আমাকে কত কি করতে হলো আর সে বলে এমনি করে সারা জীবন ভালোবাসবে।
সোহান:- হুম তা ঠিক বলেছিস আচ্ছা তুই ও তো বলতে পারতি ভালোবাসার কথাটা?
— আমি কি করে বলবো? মেয়েরা কি ভালোবাসার কথা আগে বলে নাকি? আর তাছাড়া তোমার মনের ভিতর যদি অন্যকারো বসবাস থাকতো তখন আমি কি করতাম?
সোহান:- আর তোর মনে যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে কেমন হতো?
— নেই তো তাই না? হাঁটতে হাঁটতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। আশে পাশে কোন রিক্সাও দেখতে পাচ্ছি না। আমি সোহানের দিকে তাকালাম।
সোহান:- এদিক সেদিক তাকিয়ে, চল কোথাও যেয়ে দাঁড়াই, না হলে পুরো ভিজে যাবো।
— ভিজলে ভিজবো কি হবে একদিন না হয় দু’জন এক সাথে ভিজলাম।
সোহান:- কিন্তু যদি জ্বর চলে আসলো?
— কিছু হবে না, হাঁটোতো তুমি বলতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। দু’জন বৃষ্টিতে ভিজেই হাঁটছি জীবনের এতো গুলো বসন্তে আমি বহুবার বৃষ্টিতে ভিজেছি কিন্তু আজকের মত এতো আনন্দ আমি কোন দিনই পাইনি। হঠাৎ বেল বাজাতে বাজাতে একটা খালি রিক্সা পাশ কেটে যাবার সময় সোহান তাকে ডাক দিয়ে থামালো। দু’জন রিক্সায় উঠো বসলাম।
বৃষ্টিতে সমস্ত শরীর ভিজে গেছে দু’জনের। টপটপ করে চুল বেয়ে পানি গালে পরছে। চোখের কাজল পানিতে লেপ্টে গেছে, শরীরের সাথে জামা গুলো ভিজে লেগে আছে। হঠাৎ সোহানের দিকে তাকাতেই লক্ষ করলাম সোহান অপলক আমার দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ মেঘের গর্জনে সোহানকে জড়িয়ে ধরলাম।
সোহান:- কানের কাছে মুখ এনে আস্তে আস্তে এই কি করছিস? কেউ দেখলে কি ভাববে?
— জানি না কিছু কেউ দেখার মত আছে নাকি এখানে?
সোহান:- যে মেয়ে মেঘের একটা গর্জনে ভয় পায় সে মেয়ে আবার আমার সাথে ঝগড়া করতে আসে কি করে এটাই ভেবে পাইনা।
— সোহানকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কেন জানি তোমার সাথে ঝগড়া না করলে আমার ভালো লাগে না। আবার তোমার সাথে ঝগড়া করেও ভালো থাকতে পারি না। ভালোবাসা হয়তো এমনি।
সোহান:- কি জানি ভালোবাসার উপরতো আর আমি ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করিনি। যে বলবো ভালোবাসা কেমন হয়।
— সোহানের বুক থেকে মাথা তুলে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতো তুমি।
সোহান:- চোখে চোখ রেখে কি বলবো?
— ভালোবাসা কেমন হয়?
সোহান:- ভালোবাসা এক অদ্ভুত মায়া, যে মায়া সারা জীবনেও শেষ হয়না। রাগ অভিমান সব কিছুর পরেও প্রিয় মানুষটি কখনো অপ্রিয় হতে পারে না এই মায়ার কারণে। শত আবদার জুড়ে থাকে এই ভালোবাসার মানুষটি। অদ্ভুত ভালো লাগায় জড়িয়ে থাকে দু’জন মানুষ, এক জনের কষ্টে অন্য জনের কষ্ট হবার নামই হয়তো ভালোবাসা।
— এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছি সোহানের দিকে, মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছি, একটা মানুষ কত সুন্দর গুছিয়ে ভালোবাসার কথা বলে। মনে মনে আমিতো তোমার প্রেমে মরেই যাবো। এতো সুন্দর করে ভালোবাসার কথা কেমনে বলো তুমি। সোহানকে প্রশ্ন করলাম তুমি নাকি জানো না ভালোবাসা কি তাহলে কি করে বললে এসব?
সোহান:- বের হয়ে আসলো ভিতর থেকে একা একা।
— একা একা আবার বের হয়ে আসে কি করে।
সোহান:- এই যে যেমন করে তুই দেখলি সুনলি জানলি তেমন করেই।
— ওহ তাই বুঝি?
সোহান:- হ্যাঁ তাইতো।
— আচ্ছা তাড়াতাড়ি আই লাভিউ বলো।
সোহান:- মানে কি? এখন তোকে ভালোবাসার কথা বলতে হবে কেন?
— সোহানের কাধে একটা হাত রেখে ঝুম বৃষ্টি তুমি আমি পাশাপাশি একই রিক্সায় বসে আছি , দু’জনের বসার মাঝে দূরত্ব থাকলেও যাতে মনের মাঝে কোন রকম দূরত্ব না থাকে তাই বলবে।
সোহান:- তো আমাকে বলতে হবে কেন তুই বললেও তো পারিস।
— চোখ দু’টো বড় বড় করে সেহানের দিকে তাকিয়ে বলবা কিনা বলো?
সোহান:- চোখের উপর চোখ রেখে এতো বড় বড় চোখ করছিস কেন? তোকে পেত্নীর মত লাগে চোখ বড় বড় করে তাকালে। বলেই হাসতে শুরু করলো।
— কি বললা তুমি আমাকে পেত্নীর মত লাগে? বলেই সাহস করে আজ প্রথম বারের মত সোহানের ঠোঁটে কিস করে দিলাম। মেঘের গর্জন বেড়েই চলছে। সোহান আমার দিকে চেয়ে রয়েছে, এদিকে ঠাণ্ডায় পুরো শরীর কাঁপতে শুরু হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করেই সোহান বুকের সাথে চেঁপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে শুরু করলো। তোকে খুব ভালোবাসি, সব অবস্থায় তোকে অনেক সুন্দর দেখায়। সোহানের বুকে মুখটা চেপে ধরে বললাম তবে যে বলো আমাকে পেত্নীর মত লাগে।
সোহান:- ভেজা চুলে বিলি কাটতে কাটতে, তোকে রাগানোর জন্য বলি, রাগলে তোকে আরও বেশী সুন্দর লাগে।
— ওহ তাই না? বলেই সোহানের বুকের উপর উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে শুরু করলাম। আর বলতে শুরু করলাম আমাকে রাগাতে খুব মজা লাগে তাই না?
সোহান:- এই ব্যথা পাবো থাম।
— উহু থামবো না, তুমি এমন কেন বলতো বলেই সোহানের দিকে তাকালাম, তাকাতেই দেখতে পেলাম সোহানের বুকে কাজলের কালো দাগ লেগে গেছে। তা দেখে হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- পাগলের মত হাসছিস কেন?
— তোমার শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখ কি অবস্থা বলেই হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- এই যা শার্টটা নষ্ট হয়ে গেলো।
— রিক্সার হুটটা উঠিয়ে দিয়ে ভিজতে ভিজতে বললাম সমস্যা নেই বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাবে, আর যতটুকু থাকবে আমি ধুয়ে দিবো।
সোহান:- চল হারিয়ে যাই দু’জন।
— কোথায় হারাবে?
সোহান:- দূর অজানায় নতুন কোন শহরে যে শহরে শুধু তুই আর আমি থাকবো। নতুন জীবন শুরু করবো। চারিদিকে সবুজ অরণ্য থাকবে। থাকবে ছোট ছোট দীঘি দীঘির চারপাশে থাকবে অসংখ্য নানান রকম ফুলের গাছ। সেখানে শুধুই থাকবে ভালোবাসা, হারাবি আমার সাথে?
— হুম আমিতো তোমার সাথে হারাতেই চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে চাই। নিবে তুমি আমাকে তোমার সাথে?বলেই সোহানের দিকে তাকালাম, সোহান আমার দিকে চেয়ে আছে, কিছু বলতে যাবে তখনি রিক্সা চলে আসলো বাড়ির সামনে। সোহান রিক্সা থামাতে বললো। দু’জন রিক্সা থেকে নেমে বাড়ির ভিতর দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
চলবে…
শেষ বিকেলের রোদ- ২৩ তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— ঠিক স্বপ্নের মত একটি বিকেল কাটিয়ে ঘরে ঢুকছি। মনে হচ্ছে যেন যুগ যুগ ধরে এমনি একটি বিকেলের অপেক্ষায় আমি ছিলাম। ভেজা জামা চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলাম। ড্রেস চেঞ্জ করে বের হবার পরেই বুঝতে পরলাম যে শরীরের জ্বর জ্বর ভাব চলে আসছে, সেই সাথে ঠাণ্ডাও লেগে গেছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে কিন্তু বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই বরং সময় যত বাড়ছে মনে হচ্ছে বৃষ্টিও বেড়ে চলেছে। হঠাৎ করে ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই মোবাইলের হাতে নিতেই বড় চাচার ফোন দেখে কিছুটা চমকে উঠলাম।
ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে
বড় চাচা:- কেমন আছিস মা?
— জ্বি আমি ভালো আছি আপনারা সকলে কেমন আছেন?
বড় চাচা:- আমরাও সকলে ভালো আছি সোহানের ফোন বন্ধ পাচ্ছি তাই তোকে ফোন দিলাম।
— মনে হয় ফোনে চার্জ নেই তুমি লাইনে থাকো আমি যেয়ে ফোন ধরিয়ে দিচ্ছি।
বড় চাচা:- আচ্ছা ঠিক আছে যা।
— দৌঁড়ে সোহানের রুমে যেয়ে ফোনটা দিয়ে বললাম বড় চাচা ফোন দিয়েছে। সোহান ফোনটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো। অনেকটা সময় দু’জন কথা বলার পর লাইন কেটে দিলো। আমি জিজ্ঞাসা করলো?
সোহান:- তোকে কেন সব বলতে হবে?
— কি আজব তুমি বললে কি এমন ক্ষতি হবে?
সোহান:- সব বিষয়ে জানার এতো আগ্রহই কেন থাকবে তোর?
— হয়েছে আমার খুব ভুল হয়েছে আর কখনো কিছু জানতে চাইবো না মাফ করে দাও। বলেই ঘুরে চলে আসবো তখনি সোহান পেছন থেকে হাত টেনে ধরলো। কি হচ্ছে ছাড়ো আমাকে,
সোহান:- না ছাড়লে কি করতে পারবি? সব সময় এতোটা রাগ দেখাছ কেন?
— রাগ দেখাতে আমার বয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ছাড়ো না হলে কামড়ে দিবো, চিৎকার করবো, বাড়ির সব মানুষ জড়ো করবো।
সোহান:- আচ্ছা তাই বলেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নে চিৎকার কর এই বৃষ্টির ভিতর তোর আওয়াজ যদি কারো কান অব্দি পৌঁছায় তো চিৎকার কর বলেই বিছানার উপর শুয়িয়ে দিলো।
— ওমনি ঘুরে সোহানের হাতে কামড় লাগিয়ে দিতেই সোহান আহ বলে চিৎকার করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। এই সুযোগে বিছানা থেকে নামতে যাবো অমনি সোহান আবারও ধাক্কা মেরে বিছানায় শুয়িয়ে দেবার সাথে সাথে আমি ফুপু ফুপু বলে চিৎকার শুরু করলাম।
সোহান:- শক্ত করে দু’হাত চেপে ধরে চুপ করবি নাকি আমি চুপ করাবো?
— আমাকে ছাড়ো বলে দু’হাত ছুটানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু কোন ভাবেই পেরে উঠছি না।
করুণ চোখে সোহানের দিকে তাকালাম। সেখানে কোন রকম মায়া দেখতে পেলাম না বরং ভয়ংকর রকম রেগে আছে সে কিন্তু কেন আমি কামড় দিয়েছি তাই বলে কি? এদিকে মাথা প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়েছে, মনে হচ্ছে জ্বর বেড়ে গিয়েছে। সোহানের নিঃশ্বাসের শব্দ আমার কান অব্দি এসে পৌঁছাচ্ছে, অথচ আমি চিৎকার করার মত শক্তি পাচ্ছি না। ওকে বলতেও পারছি না আমার কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে।
— চোখ মেলে যখন তাকালাম রাত আনুমানিক দশটার মত বাজে, পাশেই আপু বসে আছে আমি উঠার চেষ্টা করবো,
আফরিন: শুয়ে থাক উঠতে হবে না। যা ভয় দেখিয়েছিলি।
— ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম আমি আফরিন আপুর রুমে, কিন্তু এ ঘরেতো আমি ছিলাম না, আপু আমি এ ঘরে কি করে আসলাম?
আফরিন:- তুই জ্ঞান হারানোর পর ভাইয়া তোকে কোলে করে নিয়ে এসে এই ঘরে শুয়িয়ে দিছে। এই বৃষ্টির ভিতরে তোর জন্য কত দৌঁড়াদৌঁড়ি করলো সে। ভিজে ভিজে ডাক্তারের কাছে গিয়ে সঙ্গে করে তাকে নিয়ে এসেছে। তোকে চেক আপ করিয়েছে। দেখেছিস তোকে কত ভালোবাসে। আচ্ছা তোর খারাপ লাগছিলো তুইতো আমাকে বা ভাইয়াকে বলতে পারতি।
— আরে হঠাৎ করেই এমনটা হলো, আমি ফোন নিয়ে গেলাম কথা বলিয়ে দেবার জন্য ফেরার সময় মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো তারপর আর কিছু মনে নেই।
আফরিন:- তুই রেস্ট কর আমি ভাইয়াকে যেয়ে বলে আসি তোর জ্ঞান ফিরেছে। আর তোর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।
— লাগবে না আপু, আমার খিদে নেই তোমরা খেয়ে নিও। আপু রুম থেকে বের হয়ে গেলো আমি দু’চোখ বন্ধ করে ভাবতে শুরু করলাম, ইস কত ব্যথায় না পেয়েছে সোহান। ওকে কামড়ে দিয়েছি অথচ ও আমার জন্য এই বর্ষার রাতে ভিজতে ভিজতে ছুটে যেয়ে ডাক্তার নিয়ে এসেছে, হ্যাঁ এটাইতো ভালোবাসা। ভাবনা বেশী দূর এগোনোর আগেই তাতে ছেদ পরে কপালে কারো ঠাণ্ডা হাতের স্পর্শে। চোখ মেলে তাকাতেই সোহানের মুখটা দেখতে পেলাম।
সোহান:- এখন কেমন লাগছে?
— উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে ভালো।
সোহান:- উঠতে হবে না, শুয়ে থাক কিছু খাবি?
— না কিছু খাবো না, তোমাকে ধন্যবাদ।
সোহান:- কেন?
— এই যে আমার জন্য কত কষ্ট করলে তাই।
সোহান:- ওহ তাই ধন্যবাদ দিয়ে কি ঋণ শোধ করতে চাস নাকি?
— এই সব কি বলো তুমি? আমি কি তা বলছি নাকি?
সোহান:- আচ্ছা শুয়ে ঘুমা আমি যাচ্ছি। বলে উঠে দাঁড়ালো।
— এই তোমাকে খুব ভালোবাসি,
সোহান:- জানি জানি,
— কি করে জানো?
সোহান:- যে মেয়ে জ্ঞান হারানোর পরেও শক্ত করে চেপে ধরে ভালোবাসি বলতে পারে সে নিশ্চই অনেক ভালোবাসে তা বুঝতে সমস্যা হবার কথা নয়।
— সত্যি করে বলোতো কিছু মিছু করোনিতো সে সুযোগে?
সোহান:- মানে কি? কিছুমিছু আবার কি? ওহ হ্যাঁ যেটা তখন করতে পারিনি ভাবছি এখন করবো।
— এই খবরদার বলছি আমার কাছে আসবে না নইলে চিৎকার করবো।
আফরিন:- ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কি হলো চিৎকার করবি কেন? চিৎকার না করে খেয়ে ঔষধ খা, তুই খাসনি বলে ভাইয়াও এখনো খায়নি।
— তোমার ভাইকে না খেয়ে থাকতে বলছে কে শুনি? শেষে অসুখ বাধলে সব দোষ আমার উপর চাপবে।
আফরিন:- উফ তোরা পারিস ও বটে, আচ্ছা তোদের দু’জনের কি একজনের ভাইরাস আরেক জনের গায়ে যায় নাকি?
সোহান:- মানে কি? তুই আবার এসব কি বলছিস?
আফরিন:- আরে ভাইয়া বুঝলে না, এই যে কয়দিন আগে তুমি জ্বরে পরলে আর আজ ওর জ্বর। এটাই বুঝালাম যে ছোঁয়াছে নাকি তোমাদের দু’জনের।
সোহান:- আরে না বাসায় ফিরার সময় ফুলটুসি খুব সখ করে বৃষ্টিতে ভিজেছে তাই এমন হুট করে জ্বর আসছে।
আফরিন:- আচ্ছা ভাইয়া তুমি যাও খেয়ে নাও, আমি ওকে খাওয়ি ঔষধ খাওয়াচ্ছি।
— সোহান আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলে আপু আমাকে খাবার বেড়ে দিলো। খেতে ইচ্ছে না করলেও আপুর জোরাজুরিতে আর না খেয়ে পারলাম না। খাবার খেয়ে ঔষধ খাওয়া শেষ হবার পরেই আপু ঘর থেকে বের হলো নিজে খাবার জন্য। বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ব্যাগ থেকে সোহানের দেয়া বই দু’টো বের করে নিয়ে আসলাম পড়ার জন্য। একটা বই খুলতেই ছোট কাগজে লেখা একটা চিরকুট বের হয়ে আসলো। তাতে লেখা।
“এই ফুলটুসি তোর বই খুব পছন্দ নারে? বই এতো পছন্দ করিস কেন? তোকে একদিন অনেক গুলো বই গিফট করবো যা পড়তে পড়তে তুই বুড়ি হয়ে যাবি।”
— হাসতে হাসতে আরেকটা বই খুলতে আরও একটা কাগজ বের হয়ে আসলো। তাতে লেখা
“তুই সারা জীবনই গাধাই থেকে যাবি, এতো কিছু বুঝিস অথচ ভালোবাসাটাই বুঝিস না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোকে মেরে মেরে বুঝাই আমিও খুব রোমান্টিক। তোর বইয়েরর গল্পের নায়কের চেয়েও বেশী রোমান্টিক। আমিও দেখতে অনেক সুন্দর মেয়েরা আমাকে দেখলেও ক্রাশ খায় বুঝলি, শুধু তুই বুঝস না। আচ্ছা শোন আমার লেখা এতো পড়তে হবে না তার চেয়ে বরং তুই গল্পের বই পড়।”
— হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করছে এমন লেখা শুধু পাগলরাই লেখতে পারে। যদিও লেখাটা কয়েকদিন আগেই লেখছে, এখন লেখলে নিশ্চই অন্য কিছু লেখতো হ্যাঁ জানিতো তুমি খুব রোমান্টিক পাগল। তাইতো এতো ভালোবাসি। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বই খুলে পড়তে শুরু করলাম। বই পড়তে পড়তে এক সময় আপু ঘরে চলে আসলো বই বন্ধ করে রেখে আপুর সাথে টুকটাক গল্প করতে শুরু করলাম। এমন সময় ফোনে মেসেজ আসলো, সোহানের নাম্বার থেকে, ছোট করে লেখা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর, কাল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এবাড়ি ও বাড়ি দৌঁড়াতে হবে শুভ রাত্রী। আমিও রিপ্লে দিলাম কেন দু’বাড়িতে সুন্দরি অনেক মেয়েই আছে তাদের সাথে প্রেম শুরু করবে নাকি? রোমান্টিক বয় লক্ষ মেয়েদের ক্রাশ। এভাবেই দু’জন দু’জনকে মেসেজ আদান প্রদান করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পরলাম।
আফরিন:- সকালে ডাক দিয়ে কিরে জ্বর কমেছে? শরীর কি ভালো লাগছে এখন?
— হুম আমি একদম ঠিক আছি কখন উঠলে তুমি?
আফরিন:- আমিতো ভোরে উঠছি আর এখন নয়টা বাজে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নে নাস্তা খাবি।
— নয়টা বাজে আর তুমি আমাকে ডাকোনি?
আফরিন:- ভাইয়া নিষেধ করছে তাই ডাক দেইনি।
— তাই বলে নয়টা বেজে গেছে ডাকবা না।
আফরিন:- আচ্ছা উঠে পর তাড়াতাড়ি তাহলেই হবে।
— আচ্ছা তুমি বসো আমি এখুনি ফ্রেস হয়ে আসছি, আপুকে বসিয়ে তাড়াতাড়া ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলাম। ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আপুকে সাথে নিয়ে ডাইনিং এর দিকে হাঁটতে শুরু করছি অমনি প্রচণ্ড শব্দ করে গান বাজতে শুরু করলো।
সোহান:- সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলো শুধু লাইটিং করলেই হবে নাকি বিয়ে বাড়ি? আজ বিয়ে বাড়ি বাড়ি মনে হচ্ছে, বিয়ে বাড়িতে নাচ হবে গান হবে তবেই মনে হবে বিয়ে বাড়ি কি বলিস তোরা?
আফরিন:- ধ্যাত ভাইয়া আমার ভীষণ লজ্জা করে বলেই দৌঁড় দিলো ডাইনিং এর দিকে।
সোহান:- হায় হায় নতুন বউ কেমনে দৌঁড়াচ্ছে দেখ দেখ চেয়ে।
— তুমিই চেয়ে দেখ, আমি যাচ্ছি খুব খুদা লেগেছে।
সোহান:- এই আমিও যাবো তোর জন্যইতো অপেক্ষা করছিলাম।
— আমার জন্য এতো অপেক্ষা করতে হবে কেন?
সোহান:- কারণ আমাদের দু’জনের বিয়ে হলে তখনতো তুই অপেক্ষা করবি খাবার টেবিলে খাবার বেড়ে আমার জন্য।
— সোহানের কথায় থমকে দাঁড়ালাম, সত্যিই কি আমাদের দু’জনের বিয়েটা হবে? আজও কি হবে নাকি হবে না। যে মানুষটাকে এতো ভালোবাসি সেই মানুষটাকে কি সারা জীবনের জন্য পাবো কিনা তা এখনো নিশ্চিৎ নয়। কারণ এই মানুষটাকে সত্যিই আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। শত প্রার্থনায় থাকা মানুষটাকে যে আমার সব কিছুর পরেও চাই। সব ব্যস্ততার শেষে এই মানুষটার বুকে মাথা রেখে আমি একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চাই। ভালোবাসি সোহান বড্ড ভালোবাসি তোমাকে। ভাবতে ভাবতে এক’পা দু’পা করে এগিয়ে চলছি ডাইনিং এর দিকে।
চলবে…