শেষ বিকেলের রোদ-২০ তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— নাস্তার পর্ব শেষ হতেই আফরিন আপু আমাকে ডাক দিয়ে বললো আয়তো আমার সাথে রুম গুলো গুছিয়ে দেই। আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে চোখ দু’টো বড় বড় তাকাতেই সে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আমরা দু’জন রুম থেকে বের হয়ে গেস্টদের জন্য রুম গুলো গুছাতে শুরু করলাম। ঘর গুছাতে গুছাতে আপু প্রশ্ন করলো
আফরিন:- কাল এতো রাত পর্যন্ত বাহিরে কি করেছিস?
— কত রাত পর্যন্ত?
আফরিন:- আমিইতো প্রায় সাড়ে বারোটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম তারপর আর কত রাত বাহিরে ছিলি আমি কি করে বলবো।
— আপুকে জড়িয়ে ধরে পুকুর ঘাটে বসে ছিলাম তোমার ভাইয়ের সাথে। গতরাতটা ছিলো আমার জীবনের সব চেয়ে সেরা রাত।
আফরিন:- মানে কি? কিছু করছিস নাকি?
— আরে ধুর কে যে বলো না তুমি, কাল রাতে তোমার ভাই আমাকে প্রপোজ করছে।
আফরিন:- শক্ত করে চেপে ধরে সত্যি?
— হ্যাঁ আপু সত্যি বলছি।
আফরিন:- বাহ তাহলেতো হয়েই গেলো, খুব তাড়াতাড়ি তোদের বিয়েটাও খেতে পারবো মনে হচ্ছে।
— আগেতো তোমারটা খাই তারপর আমারটার চিন্তা, আগেতো চিন্তা করতাম কি করে সোহানের ভালোবাসা পাবো আর এখন চিন্তা হচ্ছে এই ভালোবাসা সারা জীবন আগলে রাখতে পারবোতো?
আফরিন:- কি সব উল্টাপাল্টা কথা, কেন পারবি না শুনি?
— আসলে আপু, বাবা মাকে কোন না কোন ভাবে মানানো যাবে। কিন্তু বড় চাচা আর চাচীকে কোন ভাবেই হয়তো মানানো যাবে না। সব চেয়ে বড় কথা আমাদের রিলেশনের কথা যদি বাবা মা জানে তবে খুশি হবে। আর বড় চাচা চাচী জানলে ভয়ংকর রকম রাগ করবে। কেন জানি তারা সোহানকে দেখতে পায় না।
আফরিন:- আরে ঐসব কিছু না, দেখবি জানলে পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
— হ্যাঁ আপু দোয়া কইরো তাই যেন হয়। আসলে ওর একটা চাকরি থাকলে আমার এতো টেনশন লাগতো না।
আফরিন:- বুঝছিরে দেখ তুই কোন চিন্তা করিস না দেখবি সব ভালোই ভালো হবে।
— আচ্ছা আপু তুমি ঘরে যাও আমি ওর রুম থেকে বই দু’টো নিয়ে আসি।
আফরিন:- আচ্ছা তাড়াতাড়ি আছিস, তোরতো ভাইয়ার রুমে গেলে আর আসতে ইচ্ছেই করে না।
— শুধু শুধু আমাকে দোষ না দিয়ে, তোমার ভাইটাকেও একটু মানুষতো করতে পারো। সে যদি তার রুম থেকে না আসতে দেয় তাহলে আমি কি করে আসবো?
আফরিন:- হয়েছে হয়েছে সবই বুঝি আগে আমার বিয়ের ঝামেলাটা শেষ হোক তারপর তোদেরটা দেখতাছে।
— থাক থাক তুমি বরং এখন ফোনে আকাশ ভাইয়ার সাথে কোন এক রোমান্টিক শহরে হারিয়ে যাও। বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে সোহানের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম, বারান্দায় এসে বুঝতে পারলাম পুরো আকাশ মেঘে কালো হয়ে গিয়েছে যে কোন মুহুর্তে বৃষ্টি নামবে। আমি তাড়াতাড়ি পা বাড়ালাম সোহানের রুমের উদ্দেশ্যে। দরজার সামনে যেয়ে নক করতেই সোহান বললো ভিতরে যাবার জন্য। আমি ভিতরে ঢুকতেই সোহান কিরে কিছু বলবি? তুমি আমাকে তুই তুই করে কেন বলছো?
সোহান:- তো কি আপনাকে আপনি আপনি করে বলতে হবে নাকি?
— মানে কি তুমি আমার সাথে এমন করে কেন কথা বলছোে আমি কিন্তু কান্না করে দিবো।
সোহান:- এই আমার সামনে নেকি কান্না করবি না। কেন এসেছিস তা বল।
— আচ্ছা ভালোবাসার মানুষকে কি কেউ তুই করে বলে?
সোহান:- তো তুই আমার ছোট তোকে কি আপনি করে বলবো?
— ধ্যাত আমি কি বলছি তুমি আমাকে আপনি করে বলো, একটু আদুরে তুমি করেওতো বলতে পারো।
সোহান:- কান টেনে ধরে ওরে আমার তুমিটারে, নাক বুচি ফুলটুসি কোথাকার ওরে নাকি তুমি করে বলতে হবে।
— উফ ছাড়ো ব্যথা লাগছে তোমার আমাকে তুমি করে বলতে হবে না, দেশে কত মানুষ আছে আমাকে তুমি করে বলার জন্য।
সোহান:- কথাটা শোনার সাথে সাথেই ধাক্কা মেরে খাটের উপর ফেলে দিয়ে, দু’হাত দিয়ে দু’হাতের কব্জি চেপে ধরে কতজন আছে শুনি তুমি করে বলার জন্য।
— বাহিরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে, টিনের চালায় টপটপ শব্দে বৃষ্টির পানি পড়ছে। হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে যাওয়ায় পুরো রুম অন্ধকার হয়ে এলো। সোহানের হাত থেকে একটি হাত ছাড়িয়ে ওর কলারটা টান দিয়ে ধরে মুখটা ওর কানের কাছে নিয়ে ভিজবে আমার সাথে? সোহানের মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ হচ্ছে। আমি প্রশ্ন করলাম ভিজবে?
সোহান:- উঠার চেষ্টা করতে করতে না জ্বর এসে যাবে কাল বাদে পরশু বিয়ে। এখন জ্বর বাধানো যাবে না, তোর যত ইচ্ছে হয় ঢাকায় যেয়ে ভিজবি।
— বলেই উঠার চেষ্টা করতেই হাত দিয়ে কলার টেনে রাখার কারণে উঠতে পারলো না, বরং ঠোঁটের উপর এসে পরলো সোহানের ঠোঁট জোড়া। নিজের মানুষ ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে নিজেকে সামলে রাখা সত্যিই খুব কষ্ট কর। নিজেকে কখনো কখনো শত বাঁধা দিয়েও আটকে রাখা যায় না। সোহানের ভারী নিঃশ্বাসে আমার সমস্ত শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। সমস্ত শক্তি দিয়ে সোহানকে বিকের সাথে লেপ্টে নিতেই, দরজার সামনে কারো পায়ের শব্দ পেলাম। দ্রুত সোহানকে ছেড়ে দিয়ে দু’জনেই উঠে দাঁড়ালাম। যে এসেছিলো সে চলে গিয়েছে, আমি সোহানকে বললাম বই দাও।
সোহান:- ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে টেবিলে ড্রয়ার খুলে বই দু’টো বের করে হাতে দিয়ে ফুলটুসি ভালোবাসি।
— আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি এখন যেতে দাও আপু জানে আমি তোমার রুমে এসেছি আর এতো সময় একটা ঘরে থাকা অনেকেই খারাপ চোখে নিবে। যদিও আপু জানে আমরা একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসি, কিন্তু বাকিরাতো আর তা জানে না।
সোহান:- আচ্ছা যাবি যা কিন্তু যাবার আগে একটা দিয়ে যা না?
— কি দিবো বলতেই কারেণ্ট চলে আসলো আমি সোহানের নাকের উপর লিপিস্টকের দাগ দেখে হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- এমন করে হাসতেছিস কেন?
— তুমি যা চাইসো তা তোমার নাকের উপর লেগে আছে, ঐখান থেকেই নিয়ে নিও বলে দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। রুমে এসে আপুকে না দেখে মনে মনে বললাম বেঁচে গেছি। বই দু’টো টেবিলের উপর রেখে ফ্রেস হবার জন্য ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলাম। ওয়াশ রুমে ঢুকার পর পরই আপুর ডাক শুনতে পেলাম। ভিতর থেকে উত্তর দিলাম।
আফরিন:- তাড়াতাড়ি বের হো মা ডাকছে।
— আসছি তুমি যাও, আপু চলে যেতে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে ফুপুর রুমের দিকে রওনা হলাম। রুমে ঢুকতেই ফুপু কাছে ডেকে বসালেন, আমার কিছুটা ভয় আর শরম লাগতেছিলো এটা ভেবে যে ফুপু কি সে সময় সোহানের রুমের সামনে গিয়েছিলো নাকি? এক প্রকার লজ্জা পেয়েই মাথা নিচু করে ফুপুর সামনে বসে আছি।
ফুপু:- কিরে মা তোর কি মন খারাপ?
— কই নাতো ফুপু কেন ডাকছো বলো?
ফুপু:- কালতো গায়ে হলুদ, বিকেলে তুই সোহান তোর ফুপা আর উনার ভাই বোনের ছেলে মেয়েরা মিলে যেয়ে গায়ে হলুদের শাড়ি আর পাঞ্জাবী কিনে নিয়ে আসবি তাই তোকে আসতে বলেছি।
— মনে মনে একটা দীর্ঘশাস্ব ছেড়ে যাক বাবা বাঁচা গেলো ফুপু তাহলে কিছুই বুঝেনি। আমি মাথা নাড়িয়ে ফুপুর কথায় সম্মতি দিলাম। এরপর তিনজন মিলে অনেকটা সময় গল্প করলাম। তখনো মুশুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, আর আমরা তিন জন নানান রকম গল্প করে চলেছি। ফুপু আপুকে বুঝাচ্ছে বিয়ের পর মেয়েদের কিভাবে মানিয়ে নিতে হয় ফুপু কিভাবে মানিয়ে নিয়েছে, এমন সব বিষয়ে ফুপু আপুকে বলছে সেই সাথে কথা গুলো আমাকেও বলছে। আপু গভীর মনোযোগে ফুপুর কথা শুনলেও আমি তার কথায় কেন জানি মনোযোগ দিতে পারছি না। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে এখন সোহানকে নিয়ে একরোখা মানুষ সে। কারো কোন কথাই শুনবে না। নিজের মত চলবে এই অবস্থায় পরিবারকে ওর কথা জানানোরও কোন উপায় নেই। দীর্ঘসময় ফুপুর সাথে সময় কাটালাম। আপুকে সঙ্গে নিয়ে রুমে ফিরে আসলাম। বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে।
আফরিন:- কিরে তখন থেকে দেখছি তুই কি যেন ভাবছিস।
— কিছু না আপু, তুমি কি কোথাও বের হবে নাকি?
আফরিন:- আমি একা না তুই ও আমার সাথে বেন হবি।
— কোথায় যাবে?
আফরিন:- বেশী দূর না নাস্তা ছেড়ে পাশেআ যাবো আমার বান্ধবির বাসায় ওর সাথে কিছু কথা আছে বলতে বলতে আপু রেডি হয়ে নিলো। দু’জন চলে আসলাম ডাইনিং এ সেখানে সবাই বসে আছে, অল্প সময়ের ভিতর সোহানও এসে আমার সামনের চেয়ারে বসলো। সোহান এক মনে আমার দিকে চেয়ে আছে। দেখে টেবিলের নিচ দিয়ে ওর পায়ে পা দিয়ে খোঁচা দিলাম। ইশারায় প্রশ্ন করলাম অমন করে তাকিয়ে আছে কেন?
সোহান:- মাথা নেড়ে বুঝালো কিছু না।
— মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া আপুর কাজিন সোহানের দিকে চেয়ে আছে দেখে অনেকটা বিরক্ত লাগছিলো। মেয়েটাকে মনে মনে অনেক গুলো গালি দিলাম, জীবনে মনে হয় ছেলে মানুষ দেখে নাই কেমন করে তাকিয়ে আছে বেহায়ার মত। নাস্তার পর্ব শেষ হতেই সকলে বের হলাম। আপু আর আমি বাড়ি থেকে বের হচ্ছি এমন সময় পেছন থেকে ডেকে সোহান জিজ্ঞাসা করলো কোথাও যাচ্ছি কিনা।
আফরিন:- হ্যাঁ ভাইয়া একটা বান্ধবির বাসায় যাচ্ছি তুমি যাবে?
সোহান:- তোর বান্ধবির বাসায় যাবো না তবে আমিও একটু হেঁটে আসি। বাসায় বসে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে গিয়েছি।
— মনে মনে খুশিই হলাম ঐটা ফ্রেমের চশমা পড়া মেয়েটার সামনে থেকেতো দূরে থাকবে সোহান।
সোহান:- কিরে ফুলটুসি কিছু ভাবছিস নাকি?
— কই নাতো কিছু ভাবছি না বলে সোহানের দিকে তাকালাম।
আফরিন:- আর বলো না ভাইয়া ও কি জানি ভাবে কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না। বলে শুধু কিছু না।
সোহান:- কি জানি তোর বোনের কই হইছে তুই খুঁজ নিয়ে দেখ, আমি আর কি বলবো।
আফরিন:- তোমাদের সমস্যা তোমরা বুঝ আমি আর কারো কাছে কিছু জানতে চাইবো না।
— উফ কি শুরু করলা তোমরা চলোতো যাই, কিছু হলেতো আমি বলবো যে আমার কিছু হইছে। কথা বলতে বলতে এগিয়ে চললাম আপুর বান্ধবির বাসার দিকে।
চলবে..
শেষ বিকেলের রোদ- ২১ তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— আপুর বান্ধবির বাসার সামনে আসতেই আপু ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?
সোহান:- না তোরা যা, আমি এদিক দিয়েই ঘুরিফিরি তোরা বের হলে এক সাথে বাসায় যাবো।
আফরিন:- কোথায় ঘুরবে তুমি? শেষে গ্রামের লোকজন নানান রকম কথা বলবে।
সোহান:- নানান কথা বলবে কেন? আমি কি চোর নাকি যে মানুষ উল্টা পাল্টা কথা বলবে?
আফরিন:- মানুষতো আর তোমাকে চিনে জানে না। তাই ভাবতেও পারে এসব।
— দু’জনের কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলাম। সোহান রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো একটা চড় মেরে তোর সবকটা দাত ফেলে দিবো। এমন কথা শুনে আমার হাসির শব্দ আরও বেড়ে গেলো।
আফরিন:- থামতো তুই, ভাইয়া তুমি আমাদের সাথে চলো।
— আর কোন কথা না বলে তিনজন বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলাম। বাড়িতে ঢুকতেই আপুর বান্ধবী ছুটে এলো, সকলকে বসার জন্য চেয়ার এনে দিলো বসার জন্য। সকল মিলে গল্প করছি এমন সময় আন্টি চা নাস্তা নিয়ে এলেন। নাস্তা শেষ করে বের হয়ে আসার সময় আপু বার বার করে বলে আসলেন আগামিকাল সকালেই ঐ বাড়িতে যেয়ে নাস্তা করতে এবং সারা দিন ঐ বাড়িতেই থাকতে হবে। এসব বলে আমরা সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম।
সোহান:- এখন কি বাড়িতে যাবি তোরা?
আফরিন:- নয়তো কোথায় যাবো?
সোহান:- না মানে বাড়ি ভর্তি মেহমান আমার কেমন জানি লাগে?
— কেমন লাগে তোমার আমিতো দেখি বেশ ভালোই আপুর ঐ মোটা ফ্রেমের চশমা পরা কাজিনের সাথে চোখাচোখি করো।
সোহান:- রেগে তোর মাথা করি, পৃথিবীর সব মেয়েই আমার প্রমিকা আর আমি একাই তাদের প্রমিক হয়েছে এখন তো খুশি তুই?
— আমার খুশিতে বা কষ্টে তোমার কিছু আসে যায় কি?
সোহান:- না আমার কিছু আসে যায় না তবে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোর মোটা মাথাটা ফাঁটিয়ে দেই।
— ঢং দেখলে আর বাঁচি না।
আফরিন:- উফ তোমরা আবার শুরু করলে? আল্লাহ জানে তোমাদের বিয়ে হলে তারপর কি করবে।
সোহান:- এই ফুলটুসি মাথা মোটা মেয়েকে আমি বিয়ে করবো তুই ভাবলি কি করে?
— আমিই তোমাকে বিয়ে করবো না। দেশে কি ছেলের অভাব পরছে যে তোমাকেই আমার বিয়ে করতে হবে।
সোহান:- সে দেখা যাবে আমার চেয়ে ভালো কাউকে পাস কিনা। আর তোকেই বা কে বিয়ে করতে আসে তাও আমি দেখে নিবো।
— হ্যাঁ দেখে নিও তোমার চেয়ে ভালো ছেলেই আসবে। ঝগড়া করতে করতে তিনজন বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরলাম। সোহান ওর রুমের দিকে আমি আর আপু আমাদের রুমের দিকে এগিয়ে আসলাম।
আফরিন:- পারিস ও তোরা দু’জন।
— আরে আপু এটাই আমাদের ভালোবাসা।
আফরিন:- আচ্ছা তুই রেস্ট নে আমি গোসলটা সেরে ফেলি। তারপর তুই গোসল করিস বলতে বলতে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো।
— বাবা মায়ের সাথে কথা হয়না ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে নিতেই আবারো দেখতে পেলাম আরমানের মিসকল। এতো ভালো সময় পার করছিলাম যে ফোনের দিকে নজর দেবার মত সময় পাইনি। আরমানকে ফোন ব্যাক করলাম।
আরমান:- ফোন রিসিভ করে কি ব্যাপার খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে?
— জ্বি কিছুটা ব্যস্ত, আসলে বিয়ে বাড়ি অনেক মেহমান কত রকম কাজকর্ম তাই ফোনটা কাছে রাখা হয়না। তারপর বলুন এতো বার ফোন দিয়েছেন আপনি ঠিক আছেনতো?
আরমান:- জ্বি আমি ঠিক আছি, আসলে আপনাদের ওখান থেকে বাসায় ফিরে কল দিলাম বলার জন্য যে বাড়িতে ফিরে এসেছি। ধরলেন না তাই আবারও সকালে ফোন দিয়েছিলাম।
— সরি আসলে ফোনের কাছে ছিলাম না, রাতে ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম মাত্রই হাতে নিলাম বাবা মাকে কল দেবার জন্য। আপনার কল দেখে আগে আপনাকেই ফোন করলাম।
আরমান:- ধন্যবাদ ম্যাডাম আমাকে এতোটা প্রায়োরিটি দেবার জন্য।
— আরে কি যে বলেন না। তো কি করছেন?
আরমান:- তেমন কিছু না, আসলে বাংলাদেশে আপাতত খাওয়া আর ঘুরা ছাড়া আমার তেমন কাজ নেই। আপনি কি করছেন আর বাড়ির সবার কি অবস্থা?
— এইতো আপুর এক বান্ধবির বাড়ি থেকে মাত্রই বাসায় ফিরলাম, এখন ফ্রেস হবো। বাড়ির সকলেই ভালো আছে।
আরমান:- তাহলে কাল গায়ে হলুদে দেখা হচ্ছে কি বলেন?
— হ্যাঁ নিশ্চই, এভাবে আরও কিছু সময় কথা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে বাবাকে কল দিলাম। বাবা জানালো আগামি কাল সকালে সকলে রওনা দিবে সন্ধ্যার ভিতরেই চলে আসবে। বাবার সাথে কথা বলে ফোন রাখতে রাখতেই আপু গোসল শেষ করে বের হয়ে এলো।
আফরিন:- যা গোসল করে নে, লাঞ্চ করে আবার শপিং এর জন্য বের হতে হবে। আমি ডাইনিং এর দিকে যাচ্ছি।
— আপু চলে যেতেই আমি ওয়াশ রুমে চলে আসলাম। গোসল শেষে নতুন একটা জামা পরে ডাইনিং এ যেতেই আপু বললো সোহান ভাইয়াকে ডাক দেবার জন্য। আমি রুমের দরজায় নক করে কোন রকম সারা শব্দ না পেয়ে রুমে ডুকে দেখি সোহান ঘুমিয়ে আছে, মাথায় একটু শয়তানি বুদ্ধি আসলো যদিও সব সময়ই এমন হয়। আবার গতবারের কথা চিন্তা করে কিছুটা ভয়ও লাগলো। ভাবতে ভাবতে ভেজা চুল গুলো সোহানের মুখের উপর নিয়ে ধরলাম। কয়েক সেকেন্ডের ভিতর সোহান লাফিয়ে উঠে বসলো। ওর অবস্থা দেখে আমি হো হো করে হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- এসব কি ধরণের ফাজলামো ফুলটুসি? আমি কতটা ভয় পেয়েছি তুই জানিস?
— হাসতে হাসতে এতো বড় ছেলে আবার ভয়ও পাও নাকি? তোমার আমার বিয়ে হলে প্রতিদিন তোমাকে এভাবে জাগাবো তখন ও কি এভাবে লাফিয়ে উঠবে নাকি?
সোহান:- তোকে বিয়ে করবো কখনোই না, তুই কখনোই বদলাবি না।
— কি আমাকে বিয়ে করবে না? থাকো তুমি তোমার মত আমি যাচ্ছি বলে ঘুরার সাথে সাথেই সোহান হাত ধরে টান দিয়ে খাটের উপর ফেলে দিলো।
সোহান:- এতো রাগ কোথায় থাকেরে তোর?
— যেখানে খুশি সেখানে থাকে তাতে তোমার কি ছাড়ো আমাকে। যাকে বিয়ে করবে তার সাথে এমনটা কইরো। আমাকে ছেড়ে ডাইনিং এ আসো লাঞ্চ করবে।
সোহান:- তোকে খুব সুন্দর লাগছে আজ অপূর্ব মায়াবতী লাগছে। খাবারতো খুব ঝাল হবে তার আগে একটু মিষ্টি মুখ করে নিলে মন্দ হয়না কি বলিস। বলেই একটা হাত দিয়ে চিবুক ধরে উপরের দিকে তুললো।
— দু’চোখ বন্ধ অবস্থায় বুঝতে পারছি সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটের খুব কাছে চলে এসেছে। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম ছেড়ে দাও আমাকে। অনেকটা সময় পার হলেও যখন সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটকে স্পর্শ করলো না। তখন চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলাম সোহান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। সে চাহনিতে খারাপ কিছু নেই তবে গভীর মায়া আর ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রচণ্ড রকম লজ্জা লাগছিলো। একটা মানুষের চোখে এতোটা মায়া এতোটা নেশা থাকে আজ সোহানের এমন চাহনি না দেখলে আমি কখনো জানতেই পারতাম না। কোন সে মোহে চেয়ে ওর দিকে জানি না। যতই দেখছি মন ভরে যাচ্ছে, মনে মনে বলছি যখন তুমি সামনে থাকো মন ভরে দেখি, যখন তুমি দূরে থাকো দেখতে তোমায় পায় না চোখ বুকের মাঝে কিসের ব্যথা টনটন করে রোজ। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায়, নিঃশ্বাসটা যে বন্ধ হয়ে যায়। এই অনুভুতিটাই কি সত্যি কারের ভালোবাসা নয়? সোহানের ফোনটা বেজে উঠতেই কল্পনার সকল জগৎ ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে আসলাম।
সোহান:- সালাম দিয়ে হ্যালো কে?
— কথপোকথনে বুঝতে পারলাম আরমানের বোন নীলা ফোন দিয়েছে, সব ভালোবাসা মুহুর্তেই উবে গেল, রাগে সমস্ত শরীর লাল হয়ে গেলো যখন সোহানকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখলাম। জিদ্দে একটা ধাক্কা মেরে খাটের উপর থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। ডাইনিং এ আসতেই আপু সোহানের কথা জানতে চাইলো আমি বললাম ফোনে কথা বলতাছে একটু পরে আসবে। কথা শেষ হতে না হতেই সোহান চলে আসলো। সকলে মিলে খাওয়া শেষ করলাম। রুমে এসে কিছু সময় রেস্ট নিয়ে রেডি হতে শুরু করলাম।
আফরিন:- কিরে গাল এমন ফুলিয়ে রাখছিস কেন?
— তো কি করবো তোমার ভাই কি সুন্দর হেসে হেসে ঐ নীলার সাথে কথা বলছিলো ফোনে, দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।
আফরিন:- তো একটা মানুষ ফোন দিলে কি কথাও বলবে না?
— কথা বলতে তো নিষেধ করিনি, তার জন্য আমার সামনে হেসে হেসে কথা বলতে হবে?
আফরিন:- হাসতে হাসতে নে রেগে থাকিস না, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। রাগ করে থাকলে সাজলে পেত্নীর মত লাগবে।
— আপুর কথা শুনে হেসে দিয়ে বললাম কি সব বলো না তুমি।
আফরিন:- প্রেম রোগ কঠিন রোগ এ জন্যই কখনো কাউকে আর ভালোবাসা হয়ে উঠেনি, ভেবেই রেখে ছিলাম যখন বিয়ে করবো তখন বর কেই ভালোবাসবো।
— তুমি খুব ভাগ্যবতী আপু দেখবে আকাশ ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসবে।
আফরিন:- আর ভাইয়া বুঝি তোকে ভালোবাসে না?
— কি জানি বলতে পারি না। কথা বলতে বলতে সেজে নিলাম।
আফরিন:- আজ তোকে একদম পরীর মত লাগছে দেখতে, ভাইয়া তোর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারবে না দেখিস।
— হয়েছে তোমার ভাইয়ের দেখার জন্য কত মেয়ে আছে। অল্প সময়ের ভিতর ফুপা এসে ডাক দিতেই আমরা দু’জন রুম থেকে বের হয়ে এলাম। ফুপা বললো গেটের সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে তাড়াতাড়ি যেয়ে গাড়িতে বসতে সকলে গাড়িতে অপেক্ষা করছে। আপু আর আমি বাড়ির বাহিরে বের হতেই দেখতে পেলাম গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সকলে গাড়ির ভিতর বসে আছে সোহান সামনের সিটে বসে আছে ড্রাইবারের সাথে। পেছনের সিটে যেয়ে আপুর কাজিনদের সাথে বসলাম। সোহানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই গভীর মনোযোগ দিয়ে সে মোবাইল টিপে চলেছে। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। একবারের জন্যও সে পেছনে তাকাচ্ছে না। ফুপা এসে সোহান ভাইয়ার সাথে সামনে বসতেই গাড়ি এগিয়ে চললো শপিং মলের দিকে। গাড়ির ভিতর সকলে মিলে গল্প করছে আমার কেন জানি কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বুকের ভিতর শূন্যতার হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। সব কিছু থেকেও মনে হচ্ছে কি যেন নেই। ভাবতে ভাবতে গাড়ি শহরের ভিতর ঢুকে পরলো। একটা শপিং মলের সামনে যেয়ে গাড়ি দাঁড়ালো। একে একে সকলে নেমে পরলাম গাড়ি থেকে। ফুপা এগিয়ে চললো শপিং মলের দিকে সাথে সকলে আমিও মাথা নিচু করে হাঁটতে শুরু করলাম। হঠাৎ করেই কেউ পেছন থেকে হাত টেনে ধরতেই চমকে ঘুরে তাকালাম।
সোহান:- কিরে ফুলটুসি তুই এমন মুড অফ করে হেঁটে চলেছিস কেন?
— কই নাতো।
সোহান:- তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
— আমাকে সুন্দর লাগলেই কি কেউ দেখার মত আছে?
সোহান:- এই দেখিস কান্না করিস না। তাহলে এতো সুন্দর কাজল চোখের পানিতে লেপ্টে যাবে। তখন কিন্তু ভুত ভুত লাগবে।
— তাতে কারো কিছু আসে যায় না, আমাকে কেমন লাগলো তা নিয়ে কি কারো কোন মাথা ব্যথা আছে?
সোহান:- মাথা যদি থাকে তবে ব্যথাও করবে। কারো না থাকলেও আমার আছে।
— সেতো দেখতেই পাচ্ছি সেই যে গাড়িতে বসে ফোন টিপছিলে একটা বারও আমার দিকে তাকালে না।
সোহান:- তখনতো বলতি যে অন্য মেয়েদের দিকে তাকিয়েছি।
— হয়েছে আমার সামনে আর সাধু সাজতে হবে না। ফোনেতো কি রোমান্টিক ভাব নিয়ে কথা বলো, সে আমার দেখা হয়ে গেছে।
সোহান:- বেশী বুঝিস না আয়তো সেল্ফি তুলি।
— না তুলবো না।
সোহান:- জোড় করে হাত ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ছবি তুলতে শুরু করলো।
ফুপা:- একটা শাড়ির দোকানে ঢুকে কইরে ইকরা তাড়াতাড়ি আয় ফিতরে।
— সোহানের বুক থেকে ছুটে হ্যাঁ ফুপা আসছি।
চলবে…