শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-১৮+১৯

0
1094

শেষ বিকেলের রোদ -১৮ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— সোহানের নিঃশ্বাসের শব্দ জোড়ে জোড়ে এসে কানে বিঁধছিলো। নিজের হার্টবিটের শব্দ সে শব্দের কাছে হেরে গিয়েছে। হঠাৎ করেই সোহান কপালে হাত দিতেই চোখ মেলে তাকালাম।সোহানের হাতে টিপের পাতা সেখান থেকে হয়তো কোন একটা টিপ কপালে পড়িয়ে দিয়েছে, এতো সময় কি ভেবেছি আর হলো এটা ভাবতেই লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠেছে এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি। সোহাত হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো ডাইনিং এর আয়নার সামনে, কপালের মাঝ বরাবর একটা কালো রঙের টিপ পরিয়ে দিয়েছে। বেশ লাগছে সুন্দর্য্য যেন বহু গুন বেড়ে গিয়েছে।

সোহান:- এখন তোকে খুব সুন্দর লাগছে।

— আমি সব সময় সুন্দর তোমার দেখার চোখটাই আসলে ঠিক নেই। তুমি থাকো আমি যাচ্ছি বলে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বের হয়ে আসলাম। বসার রুমে এসে আরমানের দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলাম।

আরমান:- ধন্যবাদ,

— মুখে হাসি টেনে ইটস ওকে। এমন সময় সোহান রুমে এসে সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। আমিও যেয়ে বসে সকলের সাথে টুকটাক কথা বলছি, আর এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে শুরু করলাম। হঠাৎ নজর পরলো নীল জামা পরা আরমানের বোনের দিকে, সে এক নজরে সোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মেজাজটা গরম হয়ে গেলো ইচ্ছে করছিলো যেয়ে ঠাস করে একটা চর মেরে দিতে। কিন্তু তা করা সম্ভব নয়। তা নিরবে সব সহ্য করে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আপু এসে ইশারায় বললো বের হয়ে আসতে। আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম।

ফুপু:- নে তাড়াতাড়ি খাবার গুলো দু’বোন মিলে ডাইনিং এ নিয়ে যা।

— আমি আর আপু মিলে সব খাবার নিয়ে এসে ডাইনিং এ গুছিয়ে রাখলাম। ডাইনিং থেকে বের হয়ে বসার রুমে যেয়ে ফুপাকে বললাম সবাই কে নিয়ে তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ যেয়ে খাবার খেয়ে নিতে। বলেই আবার বের হয়ে ডাইনিং এ আসলাম। অল্প সময়ের ভিতর একে একে সকলে ডাইনিং এ উপস্থিত হলো। এর ভিতর ফুপুও চলে আসলো ডাইনিং।

ফুপু:- আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন সকলে বসুন। ইকরা আর আফরিন সকলকে খাবার বেড়ে দে।

— সকলে চেয়ার টেনে বসতে শুরু করলো, আরমানের বোন যেয়ে বসলো সোহানের পাশে। খুব ক্লোজ হয়ে বসতে শুরু করলো। সোহান কিছুটা আন ইজি ফিল করলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। মনে মনে ভাবছি কেমন নির্লজ্জ মেয়ে ছেলে মানুষ দেখেছে কিনা ওমনি তার পাশে বসার জন্য পাগল হয়ে গেছে। সকলের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে শুরু করলাম দু’জন মিলে। খাবার বেড়ে দেওয়া শেষ হতেই আকাশ ভাইয়া বলতে শুরু করলো তোমরা দু’জন ও বসে পরো।

আফরিন:- আপনারা খেয়ে নিন আমরা পরে বসবো।

আরমান:- ভাবি বসুন না আমাদের সাথে ভালো লাগবে।

আফরিন:- আজ না ভাইয়া অন্য আরেক দিন বসবো। আপনারা খেয়ে নিন আমরা এগিয়ে দিচ্ছি।

— সকলের খাওয়া শেষ হতেই তারা বাড়িতে যাবার জন্য বিদায় নিতে আসলো। সোহান বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো আরমানের বোন সেখানে যেয়ে আরমানের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তা দেখতে শুরু করলাম।

নীলা:- ভাইয়া আমার নাম নীলা, আপনিতো আমার সাথে কথাই বলছেন না।

সোহান:- ওহ আচ্ছা আমি একটু কম কথা বলি।

নীলা:- একদিন বেড়াতে আসুন না আমাদের বাড়িতে।

সোহান:- হ্যাঁ আসবো বিয়ের আরতো দু’দিন বাকি বিয়েটা হোক তারপর আসবো।

নীলা:- আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?

সোহান:- হ্যাঁ বলুন কোন সমস্যা নেই।

নীলা:- না মানে আপনার ফোন নাম্বারটা দেয়া যাবে? যদি না আপনার কোন সমস্যা থাকে।

সোহান:- না কোন সমস্যা নেই, নাম্বাটা হলো, ০১৭…

নীলা:- অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সোহান:- ইটস ওকে।

নীলা:- আচ্ছা তাহলে আজ আসি, ফোনে কথা হবে ভালো থাকবেন নিজের খেয়াল রাখবেন।

সোহান:- হ্যাঁ আপনিও।

নীলা:- আরেকটা কথা বলি, আপনি খুব সুন্দর আর স্মার্ট।

সোহান:- জ্বি ধন্যবাদ।

— নীলা ওর পরিবারের সবার সাথে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে একটু যাচ্ছে আর পিছু ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। মনে চাচ্ছে যেয়ে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে ফেলি। মনে মনে নিজেই নিজেকে বলছি এতো রাগ করা ভালো রা কন্ট্রোল কন্ট্রোল, হঠাৎ করে মনে পরলো সেদিনের কথা আমিতো এর চেয়ে অনেক বেশী গভীর ভাবে সেদিন আরমানের সাথে মিশে ছিলাম। আর তাও ইচ্ছে করে সোহান কে জ্বালানোর জন্য, তখন ওর মনেও এমনই আঘাত লেগেছে নিশ্চই, আর ঐ মেয়ে সামান্য কথা বলছে তা আমি সহ্য করতে পারছি না। ওরা বাড়ির ভিতর থেকে বের হতেই পুরো বাড়ি নিরবতায় ভরে। যে যেখানে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। সকল নিরবতা ভেঙে ফুপু বলে উঠলো তোরা দু’জন আয় খেয়ে নিবি। আমি সোহানের দিকে তাকালাম সে উপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিষ্কার আকাশে সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ ঝকঝক করছে। আমরা তিনজন চলে আসলাম ডাইনিং এ। ফুপু আমাদের দু’জনকে খাবার বেড়ে দিলো।

আফরিন:- মা তুমি খাবে না?

ফুপু:- নারে আজ আর খাবো না তোরা খেয়ে নে।

আফরিন:- অল্প একটু খেয়ে নিতে।

ফুপু:- না ভালো লাগছে না, তোরা খা পরে যদি খেতে ইচ্ছে করে তবে খেয়ে নিবো। তোরা খেয়ে প্লেট গুলো গুছিয়ে রেখে রুমে চলে যাস। আমি চলে গেলাম।

— আর কোন কথা না বলে ফুপু উঠে চলে গেলো। এদিকে আফরিন আপু আমাকে খোঁচাচ্ছে। আমি প্রশ্ন করলাম এমন করছো কেন?

আফরিন:- আজ তোকে খুব সুন্দর লাগছে মালাটা কোথায় পেলি?

— কেন তোমার লাগবে নাকি মালা?

আফরিন:- আরে ধ্যাত কোথায় পাইলি তাই জানতে চাইলাম।

— কোথায় আর পাবো তোমার ভাই এনে দিয়েছে, আচ্ছা আপু একটা কথা বলতো,

আফরিন:- কি কথা?

— না মানে তোমার ননদ গুলো এমন গায়ে পরা কেন?

আফরিন:- মানে বুঝলাম না বুঝিয়ে বল।

— মানে ঐ যে আরমানের বোনটা কেমন গায়ে পরে সোহানের সাথে কথা বলছিলো দেখোনি? কেমন করে যেয়ে পাশে বসে পরলো। আবার সবাই যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিলো তখনো এসে একা একা কথা বলছিলো।

আফরিন:- আহা বলতেই পারে কথা বেয়াইন, বেয়াই কথা বলবে এটাইতো স্বাভাবিক তাই না? আর তোর এতোদিকে নজর দিতে হবে কেন?

— বারে চোখের সামনে পরলে নজর দিবো না? কথা বলতে বলতে হঠাৎ মনে পরলো সোহানের কাছে নতুন দু’টো বই আছে বলছে সবাই যাবার পর দিবে। তাই আর কথা না বলে দ্রুত খাবার খেয়ে আপুকে বললাম তুমি রুমে চলে যাও আমি সোহান ভাইয়ার সাথে দেখা করে পরে আসছি। ডাইনিং থেকে বের হয়ে সোজা সোহানের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। ভিতর থেকে দরজা লাগানো বাহির থেকে নক করলাম ভিতর থেকে সোহান জানতে চাইলো কে। উত্তর দিলাম আমি।

সোহান:- দাঁড়া আসছি, দরজা খুলে দিয়ে কিরে কিছু বলবি?

— কিছু বলবি মানে কি? কি বলছিলা তুমি মনে নাই?

সোহান:- কি বলছিলাম আমি? মনে করতে পারছি না। বলতে বলতে রুমের ভিতর ঢুকে পরলো।

— আমিও ওর পিছু পিছু ঢুকতে ঢুকতে বলতে শুরু করলাম করলাম তা মনে করতে পারবে কেন? নীল পরীর সাথে গা ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলবা তাহলে কি আর অন্যদের কথা মনে থাকবে নাকি?

সোহান:- নীল পরী কোথায়রে চলতো যেয়ে দেখি।

— একদম ফাজলামো করবি না আমার সাথে বলে দিচ্ছি ভালো হবে না।

সোহান:- কোথায় ফাজলামো করলাম? কেনরে তোর জ্বলে নাকি আমি কারো সাথে কথা বললে?

— আমার জ্বলবে কেন?

সোহান:- ওহ তাই বলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নীলারা কত দূর গেছে একটা ফোন দেই।

— খবরদার ফোন দিবে না বলে হাতটা এগিয়ে ফোনটা নিতে যাবো।

সোহান:- ওমনি সোহান হাত চেঁপে ধরে কেন তোর নাকি জ্বলে না? বলে হাতটা মোচড় দিয়ে পেছন দিকে নিয়ে ঘাঢ়ের উপর মুখটা নামিয়ে নিয়ে আসলো।

— ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি আমার জ্বললেই তোমার কি আর না জ্বললেই তোমার কি? তুমি কি আমাকে বুঝ? তুমি আমাকে কখনোই বুঝ না।

সোহান:- তুইতো খুব বুঝিস ঐ অমুক তমুক কে আমাকে কি আর বুঝিস?

— তোমাকে কি বুঝবো আমি তুমি কে হে আমার?
কথাটা বলতে দেরী হলেও সোহান সেই অবস্থাতেই টেবিলের উপর চেঁপে ধরে হাতটা পেছনে রেখেই বলতে শুরু করলো আমি কে আজ তোকে বুঝাবো। ব্যথায় মনে হচ্ছিল হাত ভেঙে যাচ্ছি, চিৎকার করবো এমন শক্তিও গায়ে নেই। দু’চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি টেবিলের উপর পরছে। আমি মৃদু স্বরে বললাম ছাড়ো আমাকে। হাতটা ভেঙেই ফেলবে নাকি?

সোহান:- ভেঙে গেলে যাবে, প্রয়োজনে আরেক জনের হাত জোড়া লাগিয়ে এনে দিবো পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যেয়ে।

— সোহানের কথায় হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না, মুখ থেকে বের হয়ে গেলো ব্যথায় মরে যাচ্ছি।

সোহান:- সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিয়ে কোমর ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে এতো সহজে তোকে মারছি না আমি।

— তো কিভাবে মারবে খুব কষ্ট দিয়ে বুঝি?

সোহান:- আরও শক্ত করে চেঁপে ধরে মুখটা ঠোঁটের কাছে নিয়ে এসে কিভাবে যে মারবো নিজেই বুঝতে পারছি না।

— হয়েছে ঢং বাদ দাও আমাকে ছাড়ো, ঐ যে তোমার সুন্দরী নীল পরী বেয়াইন আছে তাদের সাথে ঢং করো গিয়ে। কথাটা বলা শেষ হবার আগেই সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটকে চেঁপে ধরলো।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ-১৯ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— হয়েছে ঢং বাদ দাও আমাকে ছাড়ো, ঐ যে তোমার সুন্দরী নীল পরী বেয়াইন আছে তাদের সাথে ঢং করো গিয়ে। কথাটা বলা শেষ হবার আগেই সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটকে চেঁপে ধরলো। দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো, অনুভুতিরা তখন সব শূন্যের খাতায়। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে সোহানকে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এক চুল ও সরাতে পারলাম না। এতো জোড়ে দু’হাত দিয়ে চেঁপে ধরে রেখেছে যে আমার নিঃশ্বাস নিতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। ভালোবাসার পরশ এতো কঠিন হয় নাকি? সত্যিইতো এটা একটা কঠিন শাস্তি। সোহান ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিতেই, জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকলাম। সোহান কোমর ছেড়ে দিয়ে বলতে শুরু করলো।

সোহান:- জীবনে আর কোন দিন যদি উল্টা পাল্টা কথা বলছিস তবে তোকে..

— তবে কি করবে শুনি? আর আমার সাথে তুমি এমন করো কেন? কোন অধিকারে তুমি আমার সাথে এমনটা করলে বলো? আমি কি লাগি তোমার উত্তর দাও। সোহান প্রশ্ন শুনে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো তারপর বলতে শুরু করলো।

সোহান:- তুইতো হৃদয়ের ভাষা, চোখের ভাষা কোনটাই বুঝিস না। তোকেতো মুখ দিয়ে বলেই বুঝাতে হবে। তবে শোন আমি তোকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি আর এতোটাই ভালোবাসি যে তোর পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না। তোকে কেউ স্পর্শ করলে আমার শরীরে আগুন লেগে যায়। তোকে আমি আমার চেয়েও বেশী ভালোবাসি। সেই ছোট বেলা থেকেই তোকে আমি ভালোবাসি, যখন তুই ভালোবাসা কি বুঝতি না।তখন থেকে ভালোবাসি, কখনো তোকে বলিনি ভালোবাসি ভেবেছিলাম তুই বড় হয়েছিস এমনিতেই বুঝে যাবি কিন্তু তুই বুঝিস না।

— সোহানের ভালোবাসি কথা শুনে কখন যে দু’চোখ বেয়ে পানি পরতে শুরু করেছে খেয়াল করিনি। এই ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য আমি কতকাল অপেক্ষায় ছিলাম তা জানি না। সোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কত সময় সোহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিলাম হিসেব নেই।

সোহান:- এই ছাড় চল বাহিরে যাবো।

— বাহিরে কেন?

সোহান:- আমার সাথে গেলেই বুঝবি।

— সোহান হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে আমি হেঁটে চলছি ওর সাথে। দু’জন হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ে চলে আসলাম।

সোহান:- তাকিয়ে দেখ কত সুন্দর জ্যোৎস্না উঠেছে।

— আকাশে তাকিয়ে দেখি সত্যিই দারুণ জ্যোৎস্না উঠেছে। হাত ধরে দু’জন বসে পরলাম।

সোহান:- সারা জীবনতো ঘরের থাকি, ঘরেই থাকবো ভাবছি আজ সারা রাত দু’জন এখানে বসে জ্যোৎস্না বিলাস করবো তুই কি বলিস?

— আমি কি বলবো তুমি যা বলবে তাই হবে। ভালোবাসি যে তোমাকে আমি।

সোহান:- যদি হারিয়ে যাই কভু বহুদূর।

— আমি অপেক্ষা করবো, অনন্তকাল তোমার ফিরে আসার।

সোহান:- যদি কখনো ফিরে না আসি?

— তবুও অপেক্ষা করবো আমৃত্যু।

সোহান:- এতো ভালোবাসিস কই কখনোতো বলিস নি?

— কি করে বলবো তুমিওতো কখনো বলোনি আমাকে তুমি ভালোবাসো। একজন মেয়ে হয়ে কি করে আগে বলি নিজের মনের কথা?

সোহান:- ওহ তাই না যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ তোকে ভালোবাসার কথা বলতো তখন তুই কি করতি?

— কি আর করতাম রাজী হয়ে যেতাম বলে দিতাম আই লাভিউ টু।

সোহান:- কি?

— হা হা হা দুষ্টমি করলাম। এমনটা কোন দিনও হতো না। আর হ্যাঁ তোমাকে যদি দেখছি কোন মেয়ের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছো তাহলে তোমার খবর আছে।

সোহান:- মানে কি? আমি আবার কখন মেয়েদের সাথে হেসে হেসে কথা বললাম?

— বলোনি মানে? আজও ঐ যে নীল জামা পরা মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছো। আমি কি দেখিনি মনে করছো?

সোহান:- ওমা! কেউ যদি আমার সাথে ইচ্ছে করে এসে কথা বলে আমি কি তাকে বলবো আমার সাথে কথা বলতে এসো না? আর তাছাড়া ওরা মেহমান।

— মেহমান তো কি হয়েছে সে তো একজন মেয়ে নাকি? সেই আসার পর থেকেই দেখছি তোমাকে কেমন ঘুর ঘুর করে দেখছিলো।

সোহান:- আর তুই যে ছেলেদের সাথে কথা বলিস তখন?

— আমিতো তোমাকে জ্বালানোর জন্য এমনটা করি, যাতে তোমার মুখ থেকে ভালোবাসিটা শুনতে পারি। অবশেষে বললে তুমি ভালোবাসি।

সোহান:- ও তাই না, আমাকে জ্বালাতে খুব ভালো লাগে?

— উহু তোমাকে জ্বালিয়েতো নিজেও জ্বলে যাই।

সোহান:- তাই না?

— সোহানের বুকে মাথা রাখতে রাখতে হ্যাঁ তাইতো তুমি কখনো তা বুঝতে চাওনি।

সোহান:- আর তুই খুব বুঝিস তাই না ফুলটুসি।

— হ্যাঁ বুঝিতো তুমি আমাকে ভালোবাসো তাইতো কারো সাথে কথা বললে তোমার জ্বলে।

সোহান:- এখন পারলে জ্বালাতো।

— উহু আর জ্বালাবো না এখন থেকে অনেক ভালোবাসবো।

সোহান:- দু’হাতে বুকের সাথে মাথাটা চেপে ধরে হুম এখন থেকে অনেক ভালোবাসবো।

— এখন ছাড়োতো আপু নিশ্চই অপেক্ষা করে আছে আমার ঘরে যাবার।

সোহান:- ঘুমিয়ে পরেছে হয়তো এতো সময়ে।

— তুমি ঘোরার ডিম জানো, এখনো নিশ্চই আকাশ ভাইয়ার সাথে গল্প করছে।

সোহান:- তুই কি করে জানিস?

— আমি জানবো না কেন? এক সাথেইতো দু’জন ঘুমাই রাতে, আমিতো দেখি তারা কত সুন্দর রোমান্টিক গল্প করে রাত জেগে ফোনে।

সোহান:- ওহ তাই না?

— হ্যাঁ তাই, সবাইতো আর তোমার মত ঝগড়াটে না।

সোহান:- কি বললি আমি ঝগড়াটে? আসল ঝগড়াটেতো তুই।

— মোটেও না তুমি ঝগড়া করো।

সোহান:- ঝগড়া করি না, ঐটা অভিমান যা তুই বুঝিস না।

— কত যে অভিমান করতে পারো তাতো দেখতেই পারি। সব সময় ফুলটুসি এমন করবি না অমন করবি না। কারো সাথে কথা বলবি না। আরও কত কি। আর আসল কথাটাই বলতে পারো না।

সোহান:- আসল কথা কি?

— ঢং করো না তো। ছাড়ো এখন।

সোহান:- না ছাড়বো না সারা রাত এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখবো।

— সামনে জড়িয়ে ধরে রাখার জন্য অনেক সময় পাবে।

সোহান:- হুম তা হয়তো পাবো কিন্তু এতো সুন্দর পরিবেশ কি পাবো? খোলা আকাশ জ্যোৎস্না রাত, পুকুর ঘাট কত সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশ। যদি কবি হতাম তবে বিশালাকার এক কবিতা লেখে ফেলতাম।

— মানা করছে কে কবিতা লেখতে? তুমি যা বলো তাইতো ভালো লাগে তোমার বলা কথা কবিতার চেয়ে কোন কিছুতেইতো কম নয় আমার জন্য। সোহান বলতে শুরু করলো তাই না?

“খোলা আকাশের নিচে, নির্ঘুম রাত্রি জেগে আছে প্রিয়সী।
হালকা বাতাসে উড়ছে প্রিয়সীর খোলা চুল
আকাশ সমান ভালোবাসা নিয়ে সে মাথা রেখেছে
বুকের মধ্যখানে।
যেখানে লুকিয়ে আছে তাকে না বলা হাজারো ভালোবাসার কথা।
প্রতিদিন ভাবি বলবো তাকে বলবো আমি ভালোবাসি।
হয়না বলা পারি না বলতে সেওতো কখনো বুঝে না।
আজ সাক্ষী আকাশ, সাক্ষী বাতাস
চিৎকার করে বলছি ভালোবাসি, ভালোবাসি
ভালোবাসি তোমাকে।”

— আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি সোহানের মুখ থেকে ভালোবাসার কথা, গভীর রাত চারিদিকে নিরবতা, আমরা দু’জন বসে গল্প করে চলেছি মনে মনে ভাবছি এই রাত যেন কখনো শেষ না হয়। হাজার বছর এভাবে সোহানের বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে চাই। আমিও চিৎকার করে বলতে চাই ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকে। বিধাতা কি এতো সুখ সইবে আমার কপালে? ভাবতে ভাবতেই সোহান বলে উঠলো কিরে কি ভাবছিস? মাথা নেড়ে কিছু না।

সোহান:- কিছুতো ঠিকই ভাবতেছিস সত্যি করে বলতো কি ভাবতেছিস?

— সত্যি বলছি কিছু না, তোমার বুকে সারা জীবন থাকতে চাই সে অধিকার দিবেতো আমাকে?

সোহান:- আমিও যে চাই এমনি করে তোকে সারা জীবন বুকে জড়িয়ে রাখতে। এখন ঘরে চলে যা সত্যিই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।

— আরও কিছুটা সময় সোহানের বুকে শুয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালাম, দু’জন এক সাথে হাঁটা শুরু করলাম সোহানকে বিদায় দিয়ে আমার রুমে আর সোহান ওর নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। আস্তে করে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতে দেখতে পেলাম আপু ঘুমিয়ে আছে, আপুকে না ডেকে আমি ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম। আজ যে আমার সব চেয়ে আনন্দের দিন আজ সোহান আমাকে ভালোবাসি বলেছে। সে আনন্দেই হয়তো দু’চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না। বার বার শুধু সোহানের কথাই মনে পরছিল। বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি শুধু রাত কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোনের স্কিনে টাচ করতেই দেখতে পেলাম রাত সাড়ে তিনটা বাজে, সেই সাথে দেখলাম তিনটা মিসকল। ফোনের লক খুলতেই ভেসে উঠলো আরমানের নাম্বার। আজ কেন জানি আরমানের নাম্বারটা দেখে বেশ বিরক্ত লাগলো। ফোনটা রেখে দিলাম, সত্যিই সোহানকে জ্বালাতে যেয়ে কেন যে এই আরমানের সাথে কথা বলতে গেলাম। নানান রকম কথা চিন্তা করতে করতে এক সময় দু’চোখের পাতা এক হয়ে আসলো। আফরিন আপুর ডাকে দু’চোখ মেলে তাকালাম।

আফরিন:- তাড়াতাড়ি উঠ মেহমান আসছে।

— কোন মেহমান কোথায় থেকে আসছে?

আফরিন:- আমার চাচা ফুপুরা এসেছে, উঠে ফ্রেস হয়ে নে আমি ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসছি। সকলে মিলে এক সাথে নাস্তা করবো।

— আচ্ছা, আপু যেতেই উঠে ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বের হতেই সোহানকে দেখতে পেলাম ডাইনিং এ ঢুকছে আমিও দৌঁড়ে ডাইনিং এর দিকে ছুটলাম।

সোহান:- চেয়ার টেনে বসতে বসতে কিরে ফুলটুসি এতো হাঁপাচ্ছিস কেন?

— চোখ বড় বড় করে চেয়ার টেনে সোহানের পাশে বসলাম। আরে মনে মনে বলতে শুরু করলাম আজ তোমাকে একা পেয়ে নেই, তারপর মজাটা বুঝাবো। এমন সময় আপু সবাইকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। একে একে উনার চাচা ফুপু আর ফুপাতো ভাইবোনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। উনারাও ঢাকাতেই থাকে তবে কখনো দেখা হয়নি।
এদিকে সোহানের বা পাশে যেয়ে বসলো আফরিন আপুর চাচাতো বোন, চোখে ইয়া বড় চশমা লাগানো, দেখলে মনে হয় এই মেয়ে সারা দিন বই নিয়েই বসে থাকে আর কিছু বুঝে না। আমি হাতের কুনুই দিয়ে সোহানকে গুতা দিলাম। সোহান আড় চোখে আমার দিকে তাকাতেই আমি ইশরার বুঝালাম যদি পাশে বসা মেয়ের দিকে তাকাও তাহলে তোমার খবর আছে। সোহান মুচকি মুচকি হাসছে আর আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মনে মনে বকা দিচ্ছি আর নাস্তা করছি।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে