#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
১৮
— একটা নাইট ক্লাবে বসে আছে ছায়া আর আসিফ। আসিফ আজ অত্যন্ত খুশি ছায়া তার প্রস্তাবে রাজি হওয়াতে। প্রথমে আসিফের সন্দেহ হয়েছিলো হঠাৎ ছায়ার রাজি হওয়া, তার ব্যাক করা দেখে৷ কিন্তু ছায়া তার অভিনয় এতটা নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে যে আসিফ তাতে বাজিমাত হয়ে যায়। ছুটি যখন ছায়াকে তার সমস্ত প্ল্যান জানায় তখন ছায়া ঘাবড়ে গিয়েছিলো। সে পারবে না ভেবে ভয় পাচ্ছিলো। সবাই মিলে ছায়াকে বোঝানোর পর ছায়া রাজি হয় এবং নিজেকে সেভাবে তৈরি করে। তবে ছায়া একা নয়। ওর পাশে সবাই আছে এবং সব সময় থাকবে। তাই ছায়ার কোনো ক্ষতি হবে না,এটা যেনো নিশ্চিত থাকে সে ভরসা সবাই দিয়েছে তাকে। আর মাত্র কয় ঘন্টা, এরপর কোর্ট। তাশরিফের জীবনের শুরু নয়তো শেষ হয়ে যাবে দিনের আলো ফোটার সাথে সাথে।
— আপনাকে আমার প্রথম থেকে অনেক পছন্দ। আপনার গান আমার খুব ভালো লাগে। আর এই ভালো লাগা থেকে একপ্রকার ভালোবাসা আপনার প্রতি বলতে পারেন৷ আমি না কখনো ভাবতেও পারিনি আপনার সাথে দেখা হবে আর আপনি আমাকে বিয়ের, ছায়া লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে হেসে মাথা নোয়ায়। আসিফ মুচকি হেসে ছায়ার হাত ধরলে ছায়া ঘাবড়ে যায় কিন্তু আসিফকে বুঝতে দেয়না।
— তুমি এত সুন্দর আর কিউট দেখতে না, তোমাকে দেখে যে কেউ ফিদা হয়ে যাবে। আমিও তাই হয়েছি৷ আচ্ছা তুমি আজ চশমা পড়োনি কেনো। চশমায় তোমাকে বেশি সুন্দর লাগে। আসিফ বলে ছায়ার হাত ধরে।
— এই ক্লাবে চশমা! মানুষ তো হাসাহাসি করবে আমাকে দেখে। আমি লেন্স পড়ে এসেছি প্রবলেম হবেনা। তাছাড়া ওইসব চশমা পড়তে আমার ভালো লাগেনা৷ কেমন জানি ক্ষেত গাইয়া লাগে নিজেকে। আসলে আমি স্মার্ট একটা মেয়ে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিই না৷ সকলের সামনে এমন নম্রভদ্র হয়ে থাকি যে সবাই ভাবে আসল ওইটাই আমি। কিন্তু না! এই আমিটাই আসল আমি।
– সে তোমাকে দেখে বুঝতেই পারছি। নাহলে কেউ প্রথম দেখা ক্লাবে করতে চাই। আমি তো ভীষণ অবাক হয়েছিলাম শুনে। বাট আই লাইক ইট। আমার জীবন সঙ্গী আমার মতো আই মিন আমার স্ট্যাটাসের হবে তবেই না মানাবে আসিফ বলে বিস্ময় নিয়ে। ছায়া হাসে আসিফের কথায়।
– বাই দ্যা ওয়ে, আপনি সত্যি রেগে নেই তো আমার উপর? হঠাৎ ছায়ার এমন কথায় আসিফ বলে কেনো? রাগ কেনো করবো তোমার উপর?
– ওই যে বাসা থেকে ফিরায় দিলাম আপনাকে তাই। আসলে কি বলুন তো, বাসায় না কেউ আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতো না৷ বিশেষ করে আপাই। আমি যদি সেদিন রাজি হতাম আপনাকে বিয়ে করতে, তাহলে আপাই কিছু একটা করে সেটা ভেস্তে দিতো। তাই আমি সেদিন মিথ্যা বলি, আমি অন্য কাউকে না, আপনাকে ভালোবাসি আপনার গানকে ভালোবাসি। আবারও লাজুক ভাব এনে বলে ছায়া। আসিফ যেনো আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে আকাশে৷ তার কাছে সব কিছু স্বপ্ন লাগছে আজ।
— আসলে যখন যার সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার জন্য কতবড় বিপদ অপেক্ষা করছে সে নিজেও বুঝতে পারেনা একটা মোহে আবৃত হয়ে। আসিফের ব্যাপারটাও তাই। সে ছায়ার প্রেমের মোহে অন্ধ এখন৷ তাই ছায়া তাকে যা বলছে যা বোঝাচ্ছে তাই সাদরে গ্রহণ করছে। আর এটাই চেয়েছিলো ওরা।
— একটা সিক্রেট কথা বলি! বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে ছায়া। আসিফ ভ্রু কুচকে বলে কি বলো?
– জানিনা কথাটা কিভাবে নিবেন, তারপরও আপনি যখন আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হতে যাচ্ছেন তখন সবটা জানিয়ে রাখা ভালো। তাশরিফ ভাইয়া আপনার বন্ধু তাই আমার কথাটা আপনার ভালো নাও লাগতে পারে৷
— ছায়ার হেয়ালিপণা দেখে আসিফ বলে কোনো সংকোচ ছাড়াই বলতে পারো তুমি। এখন তো তুমি আমার সব আর আমি তোমার তাই না?
— আসলে তাশরিফ ভাইয়াকে আমার একদমই পছন্দ না৷ আমি চাই ওর ফাঁসি হোক। সারাজীবনের মতো শেষ হয়ে যাক দাঁতে দাঁত চেপে বলে ছায়া।
এদিকে আসিফ ভীষণ তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে আছে ছায়ার দিকে। এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি তার জন্য।
– কেনো পছন্দ নয় জানতে চাইবেন না? আসিফকে ছায়ার দিকে সন্দিহান ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে ছায়া।
– কেনো? আসিফ বলে কৌতুহল নিয়ে।
– কারণ, ওই তাশরিফ খান আমার আপাইকে রিজেক্ট করেছে। আমার আপাইকে ছেড়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনে। ছোট থেকে একসাথে বেড়ে উঠেছে আপাই তাশরিফ ভাইয়ার সাথে। তাকে অজান্তে ভালোবেসেও ফেলে আপাই কিন্তু কখনো বলতে পারেনি। আপাইয়েরও মনে হতো তাশরিফ ভাইয়া আপাইকে পছন্দ করে ভালোবাসে। কিন্তু যেদিন ইলহাম কে নিয়ে আসে বাড়িতে। সেদিন আপাই অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। খুব কান্না করেছিলো সেদিন। কেউ না দেখলে আমি দেখেছিলাম সে কান্না। আর সেদিনের পর থেকে তাশরিফ খানকে ঘৃণা করি আমি। যতই তার শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়ার অভিনয় করিনা কেনো আসলে আড়ালে আমি তার ক্ষতি চাই। জানেন আমি কতটা খুশি হয়েছি ইলহাম খু’ন হওয়ার পর। আর তারই খু’নের দায় তাশরিফ খানের উপর। আমি তো মহাখুশি, এবার উনার ফাঁসির রায় হলে আমি নিশ্চিত। আমার ইচ্ছে, আমার আপাইয়ের কষ্টের কিছুটা লাঘব হবে।
— আর তো কয়েক ঘন্টা, এরপর তোমার এই ইচ্ছেটাও পূরণ হয়ে যাবে ছায়া। তুমি যখন চেয়েছো তখন তো হতেই হবে। আসিফ বলে হেসে।
– আচ্ছা আমরা কি এইভাবে গল্প করবো। ড্রিংক করবো না? ছায়ার কথায় আসিফ অবাক হয়ে বলে তুমি ড্রিংকও করো?
– যে মেয়ে ক্লাবে আসতে পারে সে কেনো ড্রিংক করতে পারবে না? শুনুন, ভবিষ্যতে যেহেতু আমরা একসাথে থাকবো তাই আমি চাই আপনি আমার সব অভ্যাস আমার আচরণ, চলাফেরা সবকিছু জেনে রাখুন। সব জেনে আমাকে এক্সেপ্ট করুন,যাতে পরে গিয়ে আমাদের কোনো প্রবলেম না হয়।
–তুমি ঠিকই বলেছো। রিলেশনে বোঝাপড়াটা জরুরি। তাছাড়া তোমার আর আমার সবদিকে মিলে যাচ্ছে তাই আমাদের সম্পর্কটা কেউ ভাঙতে পারবে না। আসিফের কথায় ছায়া হেসে বলে তাহলে ড্রিংক অর্ডার করা যাক। অনেক দিন হলো ড্রিংক করিনা আপাইয়ের ভয়ে। আজ নিশ্চিন্তে ড্রিংক করবো মাস্তি করবো। আপাই তো এখন নেই, আপাতত তাশরিফ খানকে নিয়ে ব্যস্ত। কেনো যে করছে এইসব বেকার বেকার বুঝিনা৷ নাক ছিটকিয়ে বলে ছায়া। এদিকে আসিফের মনে লাড্ডু ফুটে। ছায়া যে এমন প্রকৃতির মেয়ে জানা ছিলো না।
ক্লাবে আসার বুদ্ধিটা তাশরিফের ছিলো। কারণ তাশরিফ জানে আসিফের ক্লাবে আসার অভ্যাস আছে। প্রায় সে ড্রিংক করে নেশা করে বেরিয়ে যায়। আর এটারই ফায়দা নিতে চাই সবাই।
” বলছিলাম কি আমরা একটা রুমে গেলে ভালো হতো না। ছায়ার কথায় আসিফ গদগদ কন্ঠে বলে সত্যি রুমে যাবে তুমি?
– কয়দিন পর তো আমাদের বিয়ে হবে, তো আজ যদি রুমে যায় সমস্যা কি? তাছাড়া এই হট্টগোলের মধ্যে ভালো লাগছে না। আমি নিরালায় বসে শান্তিতে ড্রিংক করতে চাই আর আপনার সাথে টাইম স্পেন করতে লাজুক হেসে বলে ছায়া।
আমি এখুনি ব্যবস্থা করছি। এরপর আসিফ একজনকে ডেকে একটা রুমের ব্যবস্থা করতে বলে
। রুম তো আগে থেকেই রেডি। আবির সব ঠিক করে রেখেছে টাকা দিয়ে। শুধু আসিফের যাওয়ার অপেক্ষা।
আচ্ছা তুমি আমাকে আপনি আপনি কেনো করছো? নিজেকে বড় বড় লাগছে তাতে। মনে হচ্ছে আমি তোমার কেউ না। দূর সম্পর্কের কেউ একজন আমরা । প্লিজ তুমি করে বলো আসিফের কথায় ছায়া মৃদু হেসে বলে ওকে তুমি, এবার ঠিক আছে।
একটু পর ওয়েটার ফিরে এসে বলে স্যার আপনার রুম রেডি। আপনারা যেতে পারেন।
ওকে, এরপর আসিফ কিছু টাকা বের করে ওয়েটারের হাতে দিয়ে বলে দেখো কেউ যেনো না যায় রুমে। সারারাতের জন্য রুমটা আমার লাগবে।
জ্বি স্যার কেউ যাবে না সেখানে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। এরপর ওয়েটার চলে যায়। আসিফ উঠে ছায়াকে নিয়ে রুমে যায়। ছায়ার মধ্যে ভয় দেখা দেয় একটু। সব না ভেস্তে যায় শেষে এসে। ছায়া ভয়ার্ত চোখে ছুটিদের দিকে তাকালে ছুটি চোখ দিয়ে ইশারা করে আশ্বস্ত করে ছায়াকে। ওরা সবাই ছদ্দবেশে দূরে বসে ছিলো।
প্রথম প্ল্যান ডান। এবার শেষটা প্ল্যানমতন হলে আসিফ শেষ আজ। আমরা কি এখানে ওয়েট করবো নাকি উপরে যাবো? ছুটির কথায় রোহান বলে ওয়েটারকে ডাকি থামো।
– ওয়েটার এসে বলে সব ঠিকঠাক আছে সমস্যা নেই। এরপর ওয়েটার চলে যায়। ছুটিরা আলাদা একটা রুম নিয়েছে। যেখানে থেকে ল্যাপটপে সব কিছু দেখবে তারা। আসিফরা যে রুমে গেছে সেখানে আগে থেকেই ক্যামেরা লাগানো ছিলো।
— আসিফ আর ছায়া রুমে এসে দেখে সাজানো গোছানো সুন্দর রুম। এই ক্লাবে আসিফ প্রথম এসেছে৷ ছায়ায় বলেছিলো এখানে আসতে। তার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ক্লাব তাই সমস্যা হবেনা। আর আসিফ তাই মেনে এখানে চলে আসে।
— সামনে টেবিলে অনেকগুলো ড্রিংকসের বোতল রাখা। ছায়া মনে মনে ভাবে এই সময়টা কিভাবে সামলাবে। সে তো ম’দ খাইনা আর না কখনো ছুঁয়ে দেখেছে। তাছাড়া ম’দের গন্ধই সহ্য হয়না ছায়ার।
— কি হলো ছায়া বসো! আসিফ বসে বলে।
– এহ, হ্যাঁ বসছি আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি ওয়ান মিনিট।
– ওকে তুমি যাও আমি ড্রিংকস রেডি করি। আসিফের কথায় ছায়া হাসার চেষ্টা করে বলে ওকে।
– ওয়াশরুমে এসে ছায়া কান্না করবে এমন ভাব। হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে তার। এদিকে ছুটিরা সবটাই দেখতে পাচ্ছে ল্যাপটপে।
— আবির, ছায়াকে ফোন দাও।
– ছুটির কথায় আবির বলে এখন ফোন দেওয়া কি ঠিক হবে?
– দেখছো না কেমন ঘাবড়ে গেছে গা’ধিটা। শেষে এসে সব না ডুবে যায়। তাহলে আর কিছু করার থাকবে না আমাদের।
– তুমি শান্ত হও ছুটি। ছায়া পারবে, আমার বিশ্বাস ও ঠিক পারবে। ওকে একটু সময় দাও। রোহানের কথায় ছুটি ওর দিকে একবার তাকিয়ে চুপ হয়ে যায়। এদিকে ছায়া জোরে জোরে নিশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে চোখ মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে আসে৷
— ছায়া আসিফের বিপরীতে বসে।
– আচ্ছা এই ড্রিংক গুলোতে নেশা কেমন হবে? ছায়ার কথায় আসিফ ভ্রু কুচকে বলে মানে?
-ছায়া ঘাবড়ে যায়। হাসার চেষ্টা করে বলে না মানে অনেক দিন পর ড্রিংক করছি তো তাই নেশাটা বেশি চাই। আমি না কখনো ঠিক ভাবে এনজয় করতে পারিনি ড্রিংকটা। বাবা-মা আর আপাইয়ের ভয়ে সব সময় অল্প খেয়েছি আর নরমাল গুলো। আজ তো বাড়ি ফিরছি না, বাসায় বলে এসেছি ফ্রেন্ডের বার্থডে আছে সেখানে থাকব৷ তাই আজ প্রাণ ভরে নেশা করবো। নেশার জোয়ারে ভাসবো।
– বাহ,অনেক বুদ্ধি তো তোমার। তুমি দেখছি প্রস্তুত হয়ে এসেছো আজ। আচ্ছা নেশা করে যদি আমি নিজেকে সামলাতে না পারি৷ কোনো ভুল হয়ে যায় তখন? এইগুলা কিন্তু অনেক পাওয়ারফুল ড্রিংক খেলে অবশ্য বুঝবে।
– আসিফের কথায় ছায়া লাজুক হাসার ভান করে বলে আমি তো চাই ভুল হোক আমাদের। আমার সমস্যা নেই।
– আসিফের লালসার যে তৃপ্তি সেটা আস্তে আস্তে প্রকাশ পাই ছায়ার কথায়৷ ছায়ার সম্মতি পেয়ে আসিফ যেনো সা’পের পাঁচ পা দেখে।
— দুইটা গ্লাস নিয়ে একটা ছায়াকে দেয় আর একটা নিজে রাখে আসিফ। বিশ্রি গন্ধে মাথা ঘুরিয়ে আসছে ছায়ার। ইচ্ছে করছে এক ছুটে পালিয়ে যায় সেখানে থেকে…
চলবে..
#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
১৯
— কি হলো খাও!ছায়াকে গ্লাস ধরে রাখতে দেখে বলে আসিফ। ছায়া মলিনতার একটা হাসি দিয়ে বলে শিওর। আসিফ অলরেডি এক প্যাক খেয়ে নিয়েছে। ছায়া নিশ্বাস বন্ধ করে গ্লাসটা মুখের সামনে নেয় তাতেও যেনো অনেক বাজে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে তার চারপাশে। হঠাৎই বিষম খাই ছায়া। আসিফ হকচকিয়ে উঠে পানি খুঁজে সামনে কিন্তু ওয়েটার পানির বোতলটা সামনে দিতে ভুলে গেছে। পাশে টেবিলে রাখা আছে। আসিফ উঠে পানি আনতে যাই সে সুযোগে ছায়া ড্রিংকস ফেলে দেয় কার্পেটের উপর।
— এই নাও পানি খাও! ব্যস্ত হয়ে বলে আসিফ। এরপর গ্লাসে তাকায়েই আসিফ ভ্রু কুচকে তাকায়।
— রিলাক্স আসিফ, ড্রিংক থাকতে আবার পানির কি প্রয়োজন? শেষ করে দিয়েছি Look it। ছায়া নিজেকে নিজে বোঝায়, শেষে এসে এত নার্ভাস হলে হবে না। তার কাজটা ঠিক ভাবে শেষ করতে হবে তাকে। আর তার জন্য নিজেকে সেইভাবেই উপস্থাপন করতে হবে আসিফের কাছে। আর ছায়া আবারও সেটাই করছে যাতে আসিফের কোনো কিছুতে সন্দেহ না আসে।
– ওহ আচ্ছা! আরো দিই? আসিফের কথায় ছায়া বলে শুধু তুমি কেনো সার্ভ করবে। আমিও ট্রাই করি। আচছা কমপিটিশন হয়ে যাক একটা। ছায়ার কথায় আসিফ কৌতুহল নিয়ে বলে কমপিটিশন?
– কে কত প্যাক দিতে পারে এই আর কি! হেসে বলে ছায়া।
– ও আচ্ছা। তবে তুমি হেরে যাবে আসিফ বলে কনফিডেন্স নিয়ে।
– তাই! ওকে দেখা যাক তাহলে। আসিফ গ্লাসে একের পর একটা ড্রিংক নিয়ে সাভার করতে থাকে। এদিকে ছায়া খাওয়ার অভিনয় চালায় শুধু।
– খা না আরো খা,তবেই না কাজ হবে। এই খাওয়ায় তোর শেষ খাওয়া হবে। এরপর সোজা জেলে বসে মশা মারবি ষ্টুপিড একটা মনে মনে বলে ছায়া আসিফের দিকে তাকিয়ে। ছায়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই আসিফ ছায়ার হাত ধরে টেনে বিছানার উপর পড়ে যায়। আসিফের বুকের উপর ছায়া। ছায়া অনেক ভয় পেয়ে যায়। হাত-পা আবারও কাঁপতে শুরু করে। আসিফ হুট করে এমন কিছু করবে বুঝতে পারিনি। এদিকে আবিরের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এটা দেখে। হাত গুটিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে।
– রিলাক্স ব্রো” রোহান আবিরের কাধে হাত রেখে বলে।
— আসিফের নেশা হয়ে গেছে বেশ ভালোই। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে। দামি ড্রিংক দেওয়া হয়েছে ওদের। যেটা দুই থেকে তিন প্যাক নিলে মানুষ তার স্বাভাবিক ভারসাম্য, হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মাতলামো করে। সেখানে আসিফ তো প্রায় পুরো বোতল শেষ করার পথে।
– I need you baby. আসিফ তার মুখটা ছায়ার মুখের দিকে নিয়ে আসে কথাটা বলে। ছায়া ঘাবড়ে গিয়ে আসিফকে সরিয়ে উঠে পড়ে।
— কি হলো এটা? আধো আধো কন্ঠে বলে আসিফ।
— আমার লজ্জা করছে, এর আগে কখনো এইসব করিনি তো! ছায়ার লাজুক ভাব দেখে আসিফ দাঁত বের করে হেসে বলে You are soo pretty Chaya. I love very much and I need also. please come to me. আবারও হাত ধরে ছায়ার।
— ছায়ার অসহ্য লাগছে আসিফের এই ছোঁয়া তারপরও কিছু করার নাই৷ হাসি মুখে মেনে নিতে হচ্ছে তাকে।
– একটা কথা বলবো তোমায়! ছায়ার কথায় আসিফ ছায়ার ঘাড়ে মাথা রেখে বলে হুম বলো। আমি তোমার সব কথা শুনতে চাই। তোমার কথা শুনতে তোমাকে কাছে পেতে ভালো লাগে সব সময়।
— ছায়া আসিফের চুলে হাত দিয়ে সেগুলো ঠিক করতে করতে বলে তোমার কি মনে হয় তাশরিফ ভাইয়া ইলহাম ভাবির মার্ডার করেছে? কথাটা বলে ছায়া ঢোক গিলে। আসিফ না সন্দেহ করে এই কথায়। যদিও আসিফ already drunk.
আবার ওদের কথা কেনো বেবি। আসিফের কথায় ছায়া বলে না এমনি মনে হলো তাই। বলো না তোমার কি মনে হয় তাশরিফ ভাইয়া খু’ন করেছে? ছায়ার কথা শেষ হতেই আসিফ হেসে উঠে শব্দ করে।
– ছায়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
– তোমাকে একটা সিক্রেট বলি, কাউকে বলবে না কিন্তু। ফিসফিস কন্ঠে বলে আসিফ।
– সিক্রেট! হুম বলো। আমি আর তুমি তো এখন একই। আমাদের মধ্যে কোনো সিক্রেট কাউকে বলবো না প্রমিস জানু। ছায়া আসিফের হাত ধরে বলে। এতে আসিফ যেনো মহাখুশি।
ইলহামের খু’ন আসিফ নয়, আমি করেছি! কথাটা শোনামাত্র ছায়ার ইচ্ছে করছিলো আসিফকে সপাটে কয়টা চ’ড় বসিয়ে দিতে৷ কিন্তু এখনো সে সময় আসেনি।
— কিহ! ছায়া অবাক হওয়ার ভান করে বলে তুমি কি ফান করছো আমার সাথে। তাশরিফ ভাইয়া তোমার ফ্রেন্ড তাই এমন বলছো তাই না। কিন্তু তুমি তো জানো আমার একদম পছন্দ করিনা উনাকে। মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে ছায়া।
-I’m serious bab. আমি ইলহামের খু’নের জন্য দায়ী। কিন্তু আমি তাশরিফকে ফাঁসিয়ে দিয়েছি। কেনো দেবো না বলো, সব সময় আমাকে টেক্কা দিয়ে চলতো তাশরিফ। ক্লাসে,কমপিটিশনে, গানে সব কিছুতে ফার্স্ট ছিলো ও। আর আমি! আমি সব সময় সেকেন্ড হতাম। ইচ্ছে করতো তাশরিফকে আমি খু’ন করে দিই। পথের কাটা দূর করে দিই এক নিমিষে। কিন্তু পারতাম না। তাশরিফের কিছু হলে আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। এইভাবে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে যেতাম৷ কিন্তু মনে মনে নিজেকে তৈরি রাখতাম তাশরিফের সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য।
— হঠাৎ তাশরিফ একদিন ইলহামের কথা জানায় আমাকে। আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা অনেক ভালো ছিলো তবে আমি ওকে কখনোই বন্ধু ভাবতাম না। মুখে বন্ধুত্ব দেখালেও, মনে মনে ও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, আমার শত্রু ছিলো।
তাশরিফ ওর সব কথা শেয়ার করতো আসিফের সাথে। সেদিন ইলহামের কথাও জানিয়েছিলো। তবে আসিফ ইলহামকে দেখেনি তখনো। এরপর তাশরিফ হঠাৎই ইলহামকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এবং কিছুদিনের মধ্যে সেটা হয়েও যায়। তবে আসিফ সেখানে উপস্থিত ছিলো না। একটা গান রেকর্ডিং এর জন্য দেশের বাইরে যেতে হয় তাকে। তাশরিফের বিয়ের একমাস পর আসিফ দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরেই আসিফ সোজা তাশরিফের বাড়ি আসে ইলহামকে দেখার জন্য।
– ইলহামকে প্রথম দেখায় আসিফের মাথা ঘুরে যায়। ইলহাম অনেক সুন্দর আর মায়াবী ছিলো দেখতে৷ দুধে-আলতা গায়ের রঙ, চোখ দুটো টানা টানা। মাথা ভর্তি লম্বা চুল।
— আসিফের লালসার দৃষ্টি পড়ে ইলহামের উপর। তাশরিফের এত ভালো তার সহ্য হচ্ছে না। সব কিছু থেকে তাশরিফ এগিয়ে থাকবে তার থেকে এটা আসিফ মানতে পারেনা। প্রথম দেখায় আসিফকে ভালো লাগেনি ইলহামের। আসিফের তাকানো তার হাসি কোনো’টাই সুবিধার লাগেনি ইলহামের কাছে। একটা পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি মেয়েরা খুব ভালো করে বুঝতে পারে। যেটা ইলহামও বুঝে গিয়েছিলো আসিফকে দেখে। সেদিনের পর কিছুদিন কেটে যায়। হঠাৎ একদিন ইলহামের ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। ইলহাম কৌতুহল নিয়ে ফোন রিসিভ করতে দেখে আসিফ ফোন করেছে তাকে। আসিফ ইলহামের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে। কিন্ত সে ব্যর্থ হয়। কারণ প্রথমেই তো আসিফকে ভালো লাগেনি ইলহামের সেখানে ফোন আলাপ করা অতি বিরক্তিকর ব্যাপার। ইলহাম, আসিফকে এভোয়েড করে ফোন কেটে দেয়। যেটা আসিফের একদম ভালো লাগেনি। ভেতরে নোংরা মানসিকতা জেগে উঠে আসিফের মধ্যে। একে তো তাশরিফকে শেষ করতে চাই যেকোনো ভাবে আবার ইলহামকে পাওয়ার লালসা সব কিছু একাকার হয়ে হিংস্র হয়ে আসিফ।
— আসিফ প্রায় যাতায়াত শুরু করে তাশরিফের বাড়িতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইলহামকে আসিফের সামনে আসতে হতো, কথা বলতো হতো। একদিন ইলহাম তাশরিফকে জানায় আসিফকে তার ভালো লাগেনি৷ এক কথায় সুবিধার না আসিফ। সেদিন তাশরিফ হেসেছিলো ইলহামের কথায়৷ কারণ অনেক দিনের সম্পর্ক তাদের৷ আসিফের খারাপ কিছু কখনোই চোখে পড়েনি তাশরিফের। তাই হুট করে এমন কথা শুনলে কারোরই বিশ্বাস যোগ্য হবেনা। তাই তাশরিফও সেদিন ইলহামের কথাগুলো সিরিয়াস নেয়নি।
— কিছুদিন এইভাবে যাওয়ার পর, ইলহাম দুপুরের খাওয়া শেষ করে রুমে আসে তখন তার খালার ফোন আসে। ইলহাম ফোন ধরে শুনে ইমরানকে পাওয়া যাচ্ছে না। ইমরান সেদিন স্কুল যায়নি শরীর খারাপের বাহানায়। পাড়ার মাঠে খেলতে গিয়েছিলো তার বয়সী ছেলেদের সাথে। এরপর আর ফিরেনি। তখন ইমরানের বয়স ছিলো নয় কি দশ। ইলহামের বিয়ে হওয়ার পর ইমরান একা হয়ে যায়। তাশরিফ চেয়েছিলো ইমরানকে তাদের কাছে নিয়ে রাখতে কিন্তু ইলহামের খালা বারণ করেন। বলেন কিছুদিন পর ইমরান তাদের কাছে থাকবে৷ সবে নতুন বিয়ে হয়েছে এখনই পরিবারের কেউ ওই বাড়ি গিয়ে উঠলে লোকে নানান রকম কথা বলবে। যেহেতু তারা সমাজ নিয়ে থাকে। কিন্তু তাশরিফ বোঝায় এইসবে তার কিছু আসে যায় না। কারো কথায় সে কান দেয়না৷ কিন্তু ইলহামও মানা করে। বলে ইমরান আর কিছুদিন পর তার কাছে থাকবে৷ নতুন শ্বশুর বাড়ি আগে মানিয়ে উঠুক সে। তাই তাশরিফও আর জোর করে না৷ তবে ইমরান, খালার আর এতিমখানার খরচ তাশরিফ চালাতে শুরু করে তাদের বিয়ের পর থেকে।
— পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি খালা! দেখো আশেপাশে আছে কোথাও। ইলহাম চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাশরিফ বাড়ি ছিলো না সেদিন। একটা কর্নসাট করার জন্য শহরের বাইরে যেতে হয় তাকে। ফিরতে দুদিন দেরি হবে। ইলহাম খবরটা পেয়ে বেরিয়ে যায়। মমতা খান অফিসে ছিলেন যার জন্য কাউকে বলে যায়না ইলহাম।
— সারাদিন খুঁজেও ইমরানের খোঁজ পাইনি ইলহাম। হতাশ হয়ে ফিরে আসে সে। ইমরান কোথায় যাবে বুঝতে পারেনা। তাশরিফকে ফোন দেয় অনেকবার কিন্তু তাশরিফ ফোন ওঠায় না৷ ফোন তো তাশরিফের কাছে ছিলো না যার জন্য ইলহামের ফোন সে পাইনি।
– রাত প্রায় আটটা তখন আবারও আসিফ ফোন করে ইলহামকে। ইলহাম বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয়। দুই-তিনবার ফোন কাটার পর একটা এসএমএস আসে ফোনে। যেখানে লেখা ছিলো ইমরানকে খুঁজছো?
– ইলহাম সাথে সাথে ফোন ব্যাক করে আসিফকে।
— সেই তো নিজেই ফোন দিলে আমাকে। কি লাভ হলো ফোন কেটে? আসিফের হাস্যজ্বল কন্ঠ।
– আমার ভাই কোথায়? ইলহাম রেগে বলে কথাটা।
— আসিফ জানায় ইমরান তার কাছে আছে আর ভালো আছে। ইলহাম যেনো আসিফের সাথে দেখা করে পরেরদিন। তারপর ইমরানকে ছাড়বে৷ ইলহাম রাজি নাহলে আসিফ ভয় দেখায় ইমরানের ক্ষতি করার এবং তাশরিফকে জানাতেও বারণ করে। তাহলে ইমরান তাশরিফ সবারই ক্ষতি করবে আসিফ। যেহেতু ইমরান আসিফের কাছে আছে তাই ইলহাম আসিফের কথা মেনে নেয়। কাউকে কিছু জানায় না৷ আর এটাই ছিলো ইলহামের বড় ভুল।
– পরের দিন ইলহাম আসিফের সাথে দেখা করলে আসিফ কু-প্রস্তাব রাখে। ইলহামকে বলে তাশরিফকে ছেড়ে তার কাছে চলে আসতে। ইলহাম রাগে চ’ড় মা’রে আসিফকে। এতে আসিফ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
— ইলহাম জানায় সব কিছু তাশরিফকে জানিয়ে দেবে৷ আসিফের আসল চেহারা সবার সামনে নিয়ে আসবে৷ কিন্তু এর কিছুই হয়না। কারণ আসিফ আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছিলো। যেখানে ইলহামের ভাবনা ছিলো খুবই নগন্য।
–আসিফ ইমরানকে গুটি করে ইলহামকে ব্ল্যাকমেইল করে। ইলহাম কি করবে বুঝতে পারেনা৷ ইমরান তার প্রাণভোমরা। বাবা-মা মা-রা যাওয়ার পর ইলহাম কোলেপিঠে করে মানুষ করে ইমরানকে। ইমরানের কিছু হলে ইলহাম বাঁচতে পারবে না আর না নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে কখনো।
— আসিফ, ইলহামকে জানায় তার কথা মতো চলতে৷ যখন যেখানে আসতে বলবে সেখানে আসতে। তাশরিফ তাদের সম্পর্কে কিছুই জানবে না৷ তবে যদি ইলহাম কোনো চালাকির চেষ্টা করে ইমরানকে তো হারাবে সাথে তাশরিফেরও ক্ষতি করে দেবে৷ ইলহাম ছিলো সহজ সরল আর ভীতু টাইপের। যার জন্য এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত কি করবে বুঝেনি।
— তাশরিফ দুদিন পর ফিরে আসে। তবে ইলহামকে সব সময় অন্যমনস্ক লাগে,হীনতায় ভুগতে থাকতে। তাশরিফের থেকে দুরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে। হাসিখুশি যে ইলহামকে রেখে গিয়েছিলো তাশরিফ সে ইলহাম যেনো নেই। তাশরিফ ইলহামকে জিজ্ঞেস করে তার কি হয়েছে কিন্তু ইলহাম কিছুই বলতে পারেনি সেদিন। ইমরানের কথা জিজ্ঞেস করলে ইলহাম বলে গ্রামে তার আত্মীয় বাড়ি গেছে ইমরান। ইলহামের খালা সবটা জানতো। তিনিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ইমরানের ক্ষতি হয়ে যাবে ভেবে৷ তাই তিনিও চুপ ছিলেন সব কিছু জেনে…
চলবে…
❌কপি করা নিষেধ ❌ ভুলক্রুটি মাফ করবেন।