#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
১৪
– ব্রো সা’প! হঠাৎ রোহানের এমন কথায় ঘাবড়ে যায় তাশরিফ। ভ্রু কুচকে বলে কোথায় সা’প?
– গার্ডেনে অনেক বড় সা’প’! কিছুটা হাঁপানোর সুরে বলে রোহান।
– গার্ডেনে সাপ তো তুই এখানে করছিস? মালি কাকা কোথায় তাকে গিয়ে বল। তাশরিফের কথায় রোহান বলে মালি আঙ্কেল কে পেলাম না বলে তো তোমার কাছে আসলাম। তাড়াতাড়ি চলো ব্রো নয়তো পরে সমস্যা হতে পারে। বাড়িতে এখন মেয়েরা থাকে৷ কখন কোন ঘরে ঢুকে যাবে তখন কি হবে বুঝতে পারছো? তাছাড়া তুমি তো জানোই আমি সা’প দেখে কতটা ভয় পাই ছোট থেকে। রোহানের কথায় তাশরিফ বিরক্তিকর চাহনি রেখে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়৷ যাওয়ার আগে বলে আবিরকে নিয়ে গার্ডেনে আসতে। তাশরিফ বেরিয়ে যেতেই রোহান ইয়েস বলে লাফিয়ে উঠে। আলমারি খোলা থেকে যায় তাশরিফের। রোহান ছুটি আর ছায়াকে ইশারা করে ডাকে৷ ওরা আসলে রোহান চলে যায় গার্ডেনের দিকে।
– তাড়াতাড়ি করবি কিন্তু আপাই৷ বেশি সময় আমাদের হাতে নেই৷ রোহান ভাইয়ার আইডিয়াটা কিন্তু জোশ ছিলো বল। ছায়া বলে হেসে।
— ছুটি আলমারিতে কাগজটা খুঁজতে থাকে। নিচের থাকে তিনটা ফাইল রাখা আছে। এর মধ্যে কোনোটাই আছে হয়তো। ছায়া দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে কেউ আসছে নাকি। আর ছুটি তার কাজ করছে৷ ওইদিকে রোহান,আবির, তাশরিফ সা’প খুঁজতে ব্যস্ত৷ সাপ থাকলে তবে না পাবে৷ রোহান তো মিথ্যা বলে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায় তাশরিফকে। রোহান সুযোগে ছিলো। যখনই তাশরিফ আলমারি খুলে কিছু করবে তখনই কিছু একটা বলে বাইরে নিয়ে যাবে তাশরিফকে। আর এই আইডিয়ার কথায় গতদিন বলেছিলো সবাইকে। কিন্তু কেউ পাত্তা দেয়নি তখন রোহানের কথা৷
— ছুটি খুবই ব্যস্ততার সাথে কাগজটা খুঁজছে। ছায়া তাড়া দিচ্ছে ওদিক থেকে। মধ্যেকার ফাইলে কাঙ্ক্ষিত বস্তুর দেখা মিলে। প্রাপ্তির হাসি ফুটে ছুটির মুখে। সময় নষ্ট না করে ছুটি ফোনে ছবি তুলে নেয়। এখন এত কিছু দেখার সময় নেই। তাছাড়া তাশরিফ আসলে সন্দেহ করবে। ছুটি সব কিছু জায়গা মতো রেখে আলমারি বন্ধ করে তখনই তাশরিফ আসে ঘরে।
– তুমি এখানে? হকচকিয়ে উঠে ছুটি। ছায়া তো তাশরিফকে দেখেই কেটে পড়েছে। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে ফোন টা পেছনে করে।
– কি লুকাচ্ছো তুমি? আর তুমি কি করছিলে আমার আলমারিতে? গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে তাশরিফ।
– কিছু না তো! আ-আ আমি আবার কি লুকাবো।তোমার আলমারিতে আমার কি কাজ। হাসার চেষ্টা করে বলে ছুটি।
– তাশরিফ সন্দিহান চোখে এগিয়ে যায় ছুটির দিকে৷ ছুটি শুকনো ঢোক গিলে পিছিয়ে যায়।
– তোমার হাতে কি দেখি? তাশরিফের কথায় ছুটি হাত সামনে এনে বলে কোথায় কি? আমার ফোন! তাশরিফ এখনো সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থাকে।
– আজব তো এইভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে। তোমার কি মনে হয় আমি তোমার ঘরে চুরি করতে ঢুকেছি৷ ধন-সম্পদ রাখা আছে তোমার আলমারিতে তাই নিতে এসেছি? আমি তো এপাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম তোমার ঘরের আলমারি খোলা তাই এটা বন্ধ করতে আসলাম৷ এখন দেখছি উল্টো আমাকেই সন্দেহ করা হচ্ছে৷ এখনো এখানেই আছি কোথাও তো যাইনি, তুমি দেখোনা তোমার আলমারির কিছু হারিয়েছে কি-না।
– শাট আপ ছুটি, কি বাজে বকছো? আমি কখন বললাম তুমি কিছু চুরি করেছো আমার ঘরে৷ আমি তো জাস্ট এমনি জিজ্ঞেস করলাম এখানে কি করছো? তাশরিফের কথায় ছুটি রাগী ভাব নিয়ে বলে সে তো বুঝতে পারছি আপনি কি বলছেন না বলছেন৷ আমার আসাই ভুল হয়েছে এখানে কথাটা বলতে বলতে বেরিয়ে যায় ছুটি। তাশরিফ বোকা বনে যায় নিজের কাজে। ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটি টানা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। জোর বাঁচা বেঁচে গেছে সে। কিন্তু ছায়া টা গেলো কোথায় খুঁজে ছুটি।
– তাশরিফের খেয়ালে আসে কাগজটার কথা। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ফাইল খুলে কাগজ টা দেখে শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে। তার মানে ছুটি কিছু দেখেনি ভাবে তাশরিফ।
— ফোন সামনে নিয়ে গম্ভীর মুখে বসে আছে সবাই। কাগজে যা লেখা আছে তা যেনো কারোরই বিশ্বাস হচ্ছে না। তাশরিফ টাকার জন্য তার কন্ঠ বিক্রি করবে এটা কখনোই হতে পারেনা। তাও আসিফের কাছে। কাগজ টা হলো একটা এগ্রিমেন্ট। যেখানে লেখা আছে তাশরিফ দুই কোটি টাকার বিনিময়ে তার গান, তার কন্ঠ বিক্রি করে দেয় আসিফের কাছে। আসিফ না চাওয়া পর্যন্ত তাশরিফ কখনো গান গাইতে পারবে না।
— এটা কখনোই হতে পারেনা৷ তাশরিফ এমন কাজ কখনো করবে না আমি জানি। এটা মিথ্যা, আবির বলে উত্তেজিত কন্ঠে।
– কিন্তু এটা তো ব্রোর সাইন! মনে হচ্ছেনা কেউ নকল করেছে। আর যদি তাই হবে তাহলে ব্রো কেনো যত্ন করে এই কাগজ রেখে দেবে? রোহানের কথায় ছুটি বলে এই জন্য উনি গান থেকে দূরে আছেন৷ কিন্তু উনি কেনো আসিফের কাছেই এটা করতে গেলেন তাছাড়া উনার তো টাকার দরকার ছিলোনা৷ টপ বিজনেসম্যানদের মধ্যে রানীমা একজন। তাহলে কিসের প্রয়োজন তার এত টাকার?
– ঘুরেফিরে সেই আসিফ চলে আসছে সব জায়গায়। আমার তো এখন আসিফকেই সন্দেহ হচ্ছে আপাই। ছায়ার কথায় আবির বলে আমারও।
— উকিল সাহেব কিছু বুঝলেন? আপনি উকিল মানুষ আপনার তো চিকন বুদ্ধি থাকার কথা৷ কি করছেন না করছেন কিছুই বুঝছি না৷ এইভাবে এগুতে থাকলে পারবেন নির্দোষ প্রমাণ করতে আপনার ক্লায়েন্টকে? ছুটির কথায় রোহান অসহায় মুখ করে বলে আমাকে কেনো বলছো এইসব। আমি তো চেষ্টা করছি আমার মতো। আমি বুঝতে পারছি না এই এগ্রিমেন্টের মানে কি? ব্রো এমন কাজ করবে আমি বিশ্বাস করিনা৷ সব যেনো গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে।।
– আচ্ছা আমি কি একবার আসিফের সাথে কথা বলে দেখবো এই বিষয়ে? ছুটির কথায় আবির বলে একদম এমন কিছু করতে যেওনা৷ তাশরিফ জানতে পারলে খুব খারাপ হয়ে যাবে ব্যাপারটা। ওকে সামলানো যাবে না তখন৷ তাছাড়া আসিফকে কিছু জিজ্ঞেস করলে যে সব বলে দেবে এমন নয়। আবিরের কথায় হতাশ হয় সবাই।
— কিছু দিন পর,,,,
– তাশরিফ হাজির হয় ছুটির বাড়িতে। সাথে আসিফও আছে। আসিফের সাথে ছায়ার বিয়ের কথা বলার জন্য এসেছে তারা। তাশরিফ আগেই সবটা জানিয়ে রেখেছে আরমান তালুকদারকে৷ বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়ের বিয়ে কিভাবে দেবে সে। পরে যখন শুনে আসিফের কথা তখন রাজি হয়ে যায় তিনি৷ কিন্তু তাশরিফ বারণ করেন আরমান তালুকদারকে। আসিফের সামনে কি কি বলতে হবে সবটাই বলে রাখেন৷ যাতে আসিফ এটা বুঝে তাশরিফ তার কাজ করেছে কিন্তু আরমান তালুকদার রাজিনা মেয়ের বিয়ে দিতে। যাকে বলে” সা’পও মরবে লাঠিও ভাঙবে না।”
— তাশরিফ ছুটিদের কিছু জানায় না এই বিষয়ে৷ কিছু বলতে গেলে সন্দেহ করবে সবাই৷ তাই যা করার আরমান তালুকদারকে দিয়ে করাতে চাই তাশরিফ । শুধু সবাইকে ছুটির বাড়িতে আসতে বলে বিকালের দিকে।
–ছায়া, ছুটি, আবির, রোহান সবাই উপস্থিত। আসিফ বসে, তার পাশে তাশরিফ। সামনে অনেক গুলো মিষ্টির প্যাকেট আর কিছু ফলমূল রাখা। আরমান তালুকদার একপাশে বসে৷ ছাবিনা তালুকদার সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করছে।
— তোমরা হঠাৎ আমার এখানে কি মনে করে তাশরিফ বাবা? আরমান তালুকদার এমন ভান ধরে যে,তিনি কিছুই জানেন না।
– তাশরিফ একটু নড়েচড়ে বসে, এরপর সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলে আসলে আঙ্কেল আমি এসেছি ছায়ার সাথে আসিফের বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে। কথাটা সবার কর্ণপাত হওয়া মাত্রই পায়ে তলা থেকে মাটি সরে যায় যেনো। বিশেষ করে ছায়া, ছুটি আর আবিরের মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে।
– কিহ! উচ্চস্বরে বলে ছুটি। ছায়া ঘাবড়ে যাওয়া ফেসে আবিরের দিকে তাকায়। আবিরের অসহায় চাহনি।
– কি বললাম শুনতে পাওনি। আসিফ আর ছায়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি। আসিফ, ছায়াকে অনেক পছন্দ করে ফেলে সেদিন দেখে৷ তাই ওকে বিয়ে করতে চাই। আসিফ কিন্তু অনেক ভালো ছেলে৷ নাম ডাক যথেষ্ট আছে, ছায়া সুখেই থাকবে৷ তাশরিফের গলা ধরে যায় কথাটা বলতে গিয়ে। এদিকে আসিফ মুখে হাসি ঝুলিয়ে লাজুক ভাব নিয়ে বসে।
— উনার পছন্দই তো সব না, আমাদেরও পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে! ছুটি বলে কড়া মেজাজে। এদিক আসিফের মুখটা যেনো মলিন হয়ে যায়।
– মানে? তাশরিফ মনে মনে খুশি হয় ছুটির কথায় কিন্তু উপরে ভাব রাখে সে বিষয় টা নিয়ে সিরিয়াস।
— মানে আমি বলছি ভাইয়া! ছায়ার কথায় আসিফ, তাশরিফ রোহান সবাই ওর দিকে তাকায়।
– আমি উনাকে বিয়ে করতে পারবো না। উনি আমাকে পছন্দ করলেও উনাকে আমার পছন্দ না জীবন সঙ্গী হিসেবে। একজন পছন্দের গায়ক উনি ঠিক আছে তাই বলে বিয়ে ইম্পসিবল।
– কারণটা জানতে পারি? গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে আসিফ।
– অবশ্যই! কারণ আমি একজনকে ভালোবাসি। ছায়ার কথায় উঠে দাঁড়ায় আসিফ।
– কাকে ভালোবাসো? দাঁতে দাঁত চেপে বলে আসিফ.।
– সে যেই হোক! আপনার না জানলেও চলবে৷ আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না এইটুকু জেনে রাখেন শুধু।
আসিফ রাগে মুষ্টিবদ্ধ করে। তাশরিফ বেজায় খুশি।
– তুমি কিন্তু ভুল করছো ছায়া, আসিফকে ফিরিয়ে দিয়ে ঠিক করছো না। এখনো সময় আছে ভেবে দেখো তুমি। তাশরিফের কথা শেষ হতেই আসিফ বলে চল এখান থেকে।
– কিন্তু আসিফ ছায়া,, আসিফ তাশরিফের দিকে তাকিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়। এদিকে আবির খুশি খুব৷ ছায়া কি তাহলে তার কথায় বললো।
– আসিফ যেতেই তাশরিফ মুচকি হাসে।
– আমাকে তো কিছুই করা লাগলো না তাশরিফ, যা বলার আমার মেয়েরাই বলে দিলো। আরমান তালুকদারের কথায় তাশরিফ ছুটির দিকে তাকিয়ে বলে আপনি আর কি বলবেন আঙ্কেল আপনার মেয়ে তো ফিরায় দিলো৷ এটা কিন্তু ঠিক হলো না।
তাশরিফের কথায় আরমান তালুকদার অবাক হয়ে বলে এইসব কি বলছো তুমি? তুমি না আমাকে বলেছিলে.. হ্যাঁ বলেছিলাম তো আসিফের কথা তাতে কি? যাই হোক আমি আসছি বলে তাশরিফ বেরিয়ে যায়। ছুটি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থাকে। এদিকে আরমান তালুকদার কিছুই বুঝতে পারেনা কি হলো ব্যাপারটা।
–ঘরের জিনিস একে একে ছুড়ে মারে আসিফ। ছায়া রিজেক্ট করায় ইগোতে লাগে তার৷ সবার সামনে এইভাবে অপমান মেনে নিতে পারছে না৷ তাশরিফও এর মধ্যে আছে বলে ধরে নিয়েছে আসিফ।
* আমার সাথে কাজটা ঠিক করলে না তোমরা। আর তাশরিফ তুই! তুই আমার সাথে চালাকি করিস তাই তো৷ তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু বুঝবো না৷ এবার দেখ এই আসিফ কি করতে পারে। ছায়াকে আমার করে ছাড়বো৷ ওকে আমার পায়ের তলায় এনে ফেলবো। আমাকে রিজেক্ট করার শাস্তি ভোগ করবে ও। আচ্ছা ছায়া কাকে ভালোবাসে? জানতে হবে এটা। এরপর একজনকে ফোন দিয়ে ছায়ার উপর নজর রাখতে বলে। কোথায় যায় কি করে সব কিছু।
— রাতে তাশরিফ বাড়িতে ফিরলে ছুটি আসে তাশরিফের ঘরে। তাশরিফের সাথে জরুরি কথা আছে তার। তাশরিফ ফ্রেস হয়ে এসে বসেছে মাত্র, তখনই ছুটি আসে।
– আসতে পারি? ছুটিকে দেখে তাশরিফ ভ্রু উঁচিয়ে বলে তুমি?
– তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার! ছুটির কথায় তাশরিফ ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলে কি কথা?
– তুমি কি সত্যি চাও ছায়া আর আসিফের বিয়েটা হোক? ছুটির কথায় ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকায় তাশরিফ। ছুটি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে..
চলবে..
#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
১৫
– তুমি কি সত্যি চাও ছায়ার সাথে আসিফের বিয়েটা হোক? ছুটির কথায় তাশরিফ ছোট ছোট চোখ করে তাকায়।
– তুমি কি এইসব কথা বলার জন্যই এখানে এসেছো? তাশরিফ কথাটা বলে বারান্দার দিকে যায়।
– কেনো তুমি কি অন্য কিছু আশা করেছিলে? ছুটি ভ্রু কুচকে বলে। তাশরিফ ছুটির কথার জবাব না দিয়ে বলে এক কাপ কফি খাওয়াবে, হঠাৎই মাথা ধরেছে। ছুটি অবাক হয়ে যায় তাশরিফের কথায়। তার থেকে কফি চেয়ে নিচ্ছে নিজ থেকে এ যেনো অবিশ্বাস্য এখনকার সময় অনুযায়ী।
– ছুটি কফি করার জন্য যেতে গিয়েও থেমে যায়। তাশরিফ উল্টো দিক ঘুরে দাঁড়িয়ে।
– তুমি কি কোনো ভাবে কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছো? ছুটির কথায় ঘুরে দাঁড়ায় তাশরিফ। ছুটির চোখে চোখ রেখে বলে, বলো কি জানতে চাও?
– ছায়ার আর আসিফের বিয়ের ব্যাপারে! শটকার্ট জবাব দেয় ছুটি।
– তোমার কি মনে হয় এমনি এমনি তোমার ওইখানে গিয়েছিলাম আমি। আমার কি আর কোনো কাজ নেই?
– আমার তো তাই-ই মনে হয়! গা ছাড়া উত্তর ছুটির।
* মানে? কৌতুহলী হয়ে বলে তাশরিফ।
– আমার মনে হচ্ছে তুমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিয়েছো সেখানে! কিন্তু কেনো? বিস্ময় নিয়ে তাকায় ছুটি।
– আর সব ধারণার মতো এটাও তোমার ভ্রান্ত ধারণা। আমাকে দিয়ে কেউ কখনো জোর করে কিছু করাতে পারেনা,যদি আমি সেটা না চাই। আসিফ ছায়াকে পছন্দ করে, চেয়েছিলো বিয়ে করতে তাই ওকে নিয়ে যায়। দ্যাটস অল! তাশরিফ ছুটির দিক হতে চোখ নামিয়ে কথাটা বলে।
– তাহলে বলছো ছায়ার সাথে আসিফের বিয়েটা দেওয়া যায়? তাশরিফ আতংকিত চোখে তাকায় ছুটির দিকে। তা দেখে ছুটি মুচকি হাসে। কারণ ও আগেই সন্দেহ করেছিলো সব।
– কফি নিয়ে আসছি তোমার জন্য কথাটা বলে ছুটি চলে যেতে পা বাড়ায় তখন তাশরিফ বলে ছায়া তখন কাকে একটা ভালোবাসার কথা বলছিলো, তুমি জানো কে সে? ছুটির পা থেমে যায়।
– তোমার এইসবেও খেয়াল আছে নাকি? ব্যঙ্গ করে বলে ছুটি।
– সব কথা এত জটিল করে নাও কেনো তুমি? সোজা কথার সোজা উত্তর দিতে পারো না? ছুটি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আবিরকে ভালোবাসে।
হোয়াট? উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে তাশরিফ।
– কোনো সমস্যা তাতে? ভ্রু উঁচিয়ে বলে ছুটি।
– আবির জানে?
– ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে! ছুটির কথাটা শেষ হতেই তাশরিফের মুখে হাসি দেখা যায়। ছুটি তো চোখ মুখ কুচকে থাকে।
— আবির প্রেম করছে আর আমি জানিনা। ইডিয়টটা কখনো বলেওনি আমাকে। তাশরিফের মধ্যে বেশ আগ্রহ উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
– কেনো বলতে হবে তোমাকে? তাছাড়া কে কি করলো না করলো তাতে তো তোমার কিছু যায়-আসে না। ছুটির কথায় তাশরিফ রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে বলে আমার ভাই প্রেম করছে আর আমি জানবো না।
– জানলে মনে হচ্ছে উদ্ধার করে দিতো, বিড়বিড় করে বলে ছুটি।
– যা বলার স্পষ্ট করে বলো, তাশরিফের গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথায় দাঁত বের করে হেসে বলে কিছু না কফি নিয়ে আসি এবার।
– তাশরিফ ছুটির দিকে কিছুক্ষণ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে আসতে পারো। ছুটি একটা ভেংচি কেটে বেরিয়ে যায়।
— কি উকিল সাহেব, মনে হচ্ছে খুবই চিন্তিত কিছু নিয়ে? রোহান ড্রয়িংরুমে একা একা বসে কিছু একটা ভাবতে ছিলো। তখনই ছুটি গিয়ে বলে।
— আর মাত্র ৩ টা দিন, এরপর কোর্ট। এখনো কোনো কিছুই করতে পারলাম না ব্রোর জন্য! ব্রো তার কথা থেকেও সরছে না৷ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। হতাশ হয়ে বলে রোহান।
— ছুটিরও মন খারাপ হয়ে যায়।
— আচ্ছা সত্যি কি উনি দোষী? নাহলে এমন জেদ ধরে থাকবে কেনো? ছুটির কথায় রোহান অবাক চোখে তাকিয়ে বলে তুমিও তাই বিশ্বাস করো?
– করিনা! আর করিনা বলেই সত্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। কিন্তু উনি যেভাবে একগুঁয়ে আচরণ করছেন তাতে আমার বিশ্বাসের ভীত নড়ে যাচ্ছে। তখনই একটা আননন নাম্বার থেকে ফোন আসে ছুটির ফোনে। ফোন স্ক্রিনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নাম্বারটা চেনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ততখনে কেটে যায় ফোন। আবারও পুনরায় বাজতে লাগলে ছুটি কৌতুহল নিয়ে ফোন রিসিভ করে।
রোহান আগ্রহপূর্ণ দৃষ্টি রেখেছে জানতে। ছুটি ফোন কানে নিয়ে রোহানের দিকে তাকায়৷ ছুটির চেহারার পরিবর্তন দেখা যায় ফোন টা আসায়।
– ওকে আমি আপনাকে পরে জানাবো বলে ফোন কেটে দেয় ছুটি।
– কে ফোন করেছে? পার্সোনাল কিছু? রোহানের কথায় ছুটি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আসিফ আমার সাথে দেখা করতে চাই। আমাকে নাকি কিছু দেখানোর আছে তাশরিফ ভাইয়ার বিষয়ে। রোহানের চোখ চকচক করে উঠে তাশরিফের কথা শুনে।
– কখন যেতে বলেছে? আমিও যাবো তোমার সাথে। উত্তেজিত হয়ে বলে রোহান।
– আমাকে একা যেতে বলেছে৷ আর টাইম এখনো করিনি। আমার সুবিধা মতো যেতে বলেছে। কিন্তু কি দেখাবেন উনি তাশরিফ ভাইয়ার?
– না যাওয়া পর্যন্ত তো বোঝা যাবে না তাই না৷ তুমি আর দেরি করো না৷ কালই একটা টাইম দিয়ে দাও সুবিধা মতো। রোহানের কথায় ছুটি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
— আচ্ছা কফি খাবেন, আমি তাশরিফ ভাইয়ার জন্য কফি করতে যাচ্ছি। ছুটির কথায় রোহান বলে তোমার হাতের কফি৷ আমার পরম সৌভাগ্য হবে তাহলে তুমি নিজ হাতে কফি করে এনে দিলে, প্লিজ দিও। রোহানের কথায় ছুটি মুচকি হেসে চলে যায়। রোহানও হাসে ছুটির দিকে তাকিয়ে।
— পরের দিন সকালে… তাশরিফ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হচ্ছে বাইরে যাবে৷ সকাল ৯টা বাজে। হাতে ঘড়ি পড়তে থাকে তাশরিফ তখনই মমতা খান আসেন তাশরিফ ঘরে।
আসবো? মায়ের কন্ঠস্বর পেয়ে তাশরিফ মুচকি হেসে বলে আম্মা তুমি! ভেতরে এসো।
— কোথাও কি যাচ্ছিস? কথার মধ্যে মলিনতা প্রকাশ পাই মমতা খানের।
– তাশরিফ কিছুটা বিচলিত চোখে তাকিয়ে থেকে মমতা খানকে ধরে বিছানায় বসায়।
– তোমার কি শরীর খারাপ আম্মা? কি হয়েছে তোমার? তাশরিফের কথায় হুহু করে কেঁদে দেন তিনি। তাশরিফের বুকে পাথর জমে আসে যেনো সে কান্নায়। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে তার।
– কি হয়েছে আম্মা? তুমি কান্না করছো কেনো? মলিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে তাশরিফ।
– আর মাত্র দুদিন। এরপর তুই হারিয়ে যাবি আমার থেকে। একবারও আমার কথাটা ভাবলি না তাই না? তুই ছাড়া যে তোর আম্মার আর কেউ থাকবে না এটা একবারও ভেবে দেখলি না। সেই জেদ ধরে বসে থাকলি তুই। কেনো তা্শরিফ? তোর কি কোনো দায়িত্বই নেই মায়ের উপর? কেনো এত কষ্ট দিচ্ছিস বাবা? এর থেকে নিজ হাতে মে’রে ফেলতি আমায় তবুও শান্তি পেতাম আমি। তাশরিফের হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কথা বলার শক্তিটুকু করে উঠতে পারছে না সে। মায়ের চোখের পানি গাল বেয়ে তার ডান হাতে গিয়ে পড়ছে।
— জানিস তাশরিফ, তোর বাবা সব সময় একটা কথা বলতেন আমায়। শুনো মমতা, কখনো যদি আমি হারিয়ে যায় তাহলে মন খারাপ করবে না, কষ্টও পাবে না। আমার থেকেও দামি জিনিস তোমাকে উপহার দিয়ে যাচ্ছি আমি আমাদের সন্তানকে৷ আমি না থাকলেও সে তোমাকে আগলে রাখবে দেখো। আমি উনার কথার প্রতিবাদ করতাম না৷ কারণ সত্যি তুই ছিলিস আমার জন্য। আমার সবচেয়ে সুখের স্থান৷ তোর বাবা চলে যাওয়াতে আমি একটুও ভেঙে পড়িনি। তার কথাটা আমাকে শক্তি যুগিয়েছে, আমার ভরসার জায়গা দেখিয়েছে৷ আর আজ! আজ সে ভরসাটাও আমার জন্য বিদ্যমান থাকছে না৷ আমি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি একবারে৷ আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো বাবা? কি হবে আমার বেঁচে থেকে বলতে পারিস? তাশরিফের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। চোখের পানি মুছে মাথা নিচু করে রাখে মায়ের পায়ের কাছে বসে। মমতা খানও অঝোরে কান্না করছেন আজ৷ দুদিন পর যে তার বুকের মানিক আর থাকবে না৷ কিছু করতে পারবে না তার জন্য। চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলবে তাকে৷ আর এটাই মানতে পারছেন না তিনি। যতবার ভাবছেন ততবারই হাহাকার ডেকে যাচ্ছে ভেতরে।
— তাশরিফ নিজেকে সামলে নিয়ে, মায়ের চোখে চোখ রাখে। হাঁটুতে ভড় দিয়ে বসে, মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দেন৷ মমতা খান ছেলের ভালোবাসার আবেশে আবারও শব্দ করে কেঁদে উঠেন।
– শান্ত হও আম্মা! এইভাবে ভেঙে পড়লে হবে? তুমি তো স্ট্রং মাদার আমার। সবাইকে একদিন না একদিন চলে যেতে হয়। হয় আগে নয় পড়ে। ধরে নাও না তোমার ছেলেরও সময়টা আগে নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি অনেক অন্যায় করেছি তোমার প্রতি জানি, তোমাকে ভালো রাখতে পারিনি। তোমার কথা শুনিনি কিন্তু বিশ্বাস করো আম্মা আমি এমন কিছু হোক কখনোই চায়নি৷ কিন্তু ভাগ্য! ভাগ্য আমার সাথে অনেক নিষ্ঠুর খেলা খেলেছে আম্মা৷ ভালো থাকতে দেয়নি আমাকে,তোমাকে,ইলহামকে সবাইকে। আমরা ভাগ্যের কাছে হেরে গেছি।
— তুই নির্দোষ আমি জানি তাশরিফ। মায়ের মন কখনো মিথ্যা বলে না। তাহলে কেনো সত্যিটা বলছিস না আমায়? কেনো সবটা নিজের উপর নিচ্ছিস?
যদি এই কথার উত্তর তোমায় আজ দিতে পারতাম তাহলে অনেক আগেই কারণ গুলো বলে দিতাম তোমায় আম্মা। এমনকি সবাই জানতে পারতো তাশরিফের সত্যি। দুনিয়ার সবাই আমাকে যে ঘৃণার চোখে দেখে সে দেখার বদল ঘটতো। কিন্তু আমি এর কোনো কিছুই চাইনা৷ কিছু করতে পারবোও না। তাই যা হচ্ছে হতে দাও, মেনে নাও। আবির,ছুটি, ছায়া এরা আছে তোমাকে দেখার জন্য। আমার বিশ্বাস আমি না থাকলেও এরা তোমাকে সামলে রাখবে।
— মমতা খান কি বলবে আর৷ তাশরিফ এখনো তার কথায় অনড়। অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন তিনি ততটাই নিরাশ হয়ে ফিরছেন।
– আল্লাহর কাছে দোয়া করিস বাবা,তোর মৃ’ত্যুর আগে আমার ম/রার খবরটা যেনো তোর কানে যায় কথাটা বলে মমতা খান কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায়। তাশরিফ ওইখানেই বসে পড়েন। চোখ বারবার ঝাপসা হয়ে আসছে তার পানিতে৷ মায়ের বলা শেষ কথাটা বারবার কানে বাজছে।
–বিকালের দিকে ছুটি রেডি হয়ে বেরিয়ে যায় আসিফের সাথে দেখা করার জন্য। রোহান ছাড়া আর কেউ জানে না। ছুটি সকালে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আসিফের কাজ থাকায় বিকেলে আসতে বলে।
— রোহান চেয়েছিলো ছুটিকে পৌছে দেবে ক্যাফেতে৷ কারণ তারা সেখানেই মিট করবে দুজন। কিন্তু ছুটি বারণ করে। সে একাই যাবে জানায়।
– আসিফ আগে থেকে অপেক্ষা করে ছুটির জন্য। পুরো ক্যাফে বুক করে নিয়েছে আসিফ।
*-কিছুক্ষণ বাদে ছুটি উপস্থিত হয়। ছুটিকে দেখে আসিফ উঠে দাঁড়ায় হাসি মুখে।
— ছুটি পুরো ক্যাফেতে চোখ বুলিয়ে নেয় একবার, এরপর সন্দিহান চোখে আসিফের দিকে তাকালে আসিফ মৃদু হেসে বলে ভয় নেই ছুটি, তুমি আর আমি ছাড়া কেউ আসবে না এখানে৷ পুরো ক্যাফেটা আমি বুক করে নিয়েছি একদিনের জন্য। ছুটি ভ্রু কুচকে তাকায়।
– দাঁড়িয়ে কেনো বসো! আসিফ কথাটা বলে বসে সাথে ছুটিও সামনের চেয়ারে বসে।
— কি খাবে বলো? আসিফের কথায় ছুটি বিরক্ত হয়ে বলে আমি এখানে কিছু খেতে বা আড্ডা দিতে আসিনি। কেনো ডেকেছেন তাই বলুন, আমার হাতে বেশি সময় নেই।
– আসিফ আবারও হাসে। এরপর একজনকে ডেকে বলে দুইটা কোল্ড কফি দিতে।
– ওকে তাহলে শুরু করা যাক….
— বিকেলের দিকে তাশরিফ হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে। বাড়ির মধ্যে ঢুকেই ছুটিকে ডাকে সে। তাশরিফের ডাকে রোহান,আবির বেরিয়ে আসে। মমতা খান বাসায় নেই।
– কি হয়েছে ব্রো? রোহানের কথায় তাশরিফ ব্যস্ত হয়ে বলে ছুটি কোথায় রোহান? রোহান ঘাবড়ে যায় তাশরিফের কথায়। তাহলে কি সবটা জেনে গেছে তাশরিফ।
– ছুটিকে কেনো ডাকছিস তুই? ওকে তো দেখলাম বিকেলে কোথায় একটা যেতে আবির বলে।
– আমার ওর সাথে কথা আছে অনেক ইমপোর্টেন্ট। ইনফ্যাক্ট তোদের সবার সাথে আমার কথা আছে। কিন্তু ছুটি না থাকলে তো হবে না৷ ওকে আমার বেশি দরকার এই মুহুর্তে। অনেক দেরি হয়ে গেছে আর নয়।
– তাশরিফের কথা শুনে রোহান রিলাক্স হয়। শান্তির নিশ্বাস ছেড়ে ভ্রু কুচকে বলে কিসের দেরি হয়ে গেছে ব্রো?
চলবে…