#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
১০
— বন্ধু হতে পারবো না আমি বর্তমান তাশরিফ খানের! এতটাই অযোগ্য আমি? ছুটির কথায় তাশরিফ বিমুঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে সহ্য করতে পারবে না জীবনের পরিসংখ্যান। অনেক জটিল যে সে পরিসংখ্যান। তাই আমি আর কাউকে রাখতে চাইনা জীবনে। একান্ত আমাকেই আমার প্রয়োজন কথাগুলো বলে চলে যায় তাশরিফ। ছুটি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে তাশরিফের কথার মধ্যে একটা রহস্য ছিলো যেটা তাশরিফ কথা দ্বারা হয়তো বোঝাতে চেয়েছে কিন্তু ছুটি বুঝতে পারেনি। ছুটির একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই বিদ্যমান থাকে না।
– কাটে দুদিন এইভাবে। ছুটি তাশরিফের ঘরে গিয়ে ওই কাগজ টা খোঁজার চেষ্টা করেছে অনেক কিন্তু কোথাও পাইনি৷ তাশরিফ হয়তো কাগজ টা কাবার্ডে লক করে রেখেছে৷ কিন্তু ওইটা কিসের কাগজ ছিলো দেখতে হবে ছুটিকে৷ ছুটি আবছা যতটা দেখেছিলো তাতে বুঝতে পারে তাশরিফের গান নিয়ে কিছু একটা।
–ছায়া আসে আজ আবারও৷ তবে আজ ছায়া নিজ ইচ্ছেতে নয় রোহান আসতে বলেছে তাকে। কিন্তু কেনো আসতে বলেছে সেটা জানায়নি। বলেছে আসলে বলবে। বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই আবিরের সাথে দেখা হয় ছায়ার৷ এই সময় ছায়াকে দেখে আবির একটু অবাক হয়৷ ব্যাপার টা স্বাভাবিক নিয়ে কৌতুহলী হয়ে বলে তুই এই সময় এখানে? যদি আসারই হয় তো আগে আসতে পারিস না৷ সন্ধ্যার পরেই কেনো আসতে হয় তোকে। কিছুটা রাগ প্রকাশ পাইও।
– আমার যখন ইচ্ছে হবে তখনই আসবো আপনার কি তাতে? মুখ বাকিয়ে বলে ছায়া।
– আমি তোর সাথে ফাজলামি করছি না ছায়া। জানিস দিনকাল কত খারাপ হয়ে গেছে৷ একা মেয়ে এইভাবে সন্ধা-রাতে বেরোনো উচিত না৷
– হয়েছে জ্ঞান দেওয়া এখন আমি উপরে যায়, আচ্ছা রোহান ভাইয়া আছে তো? ছায়ার কথায় আবির ভ্রু কুচকে বলে রোহানের সাথে তোর এত কিসের পিরিত?
– ছিহ আবির ভাইয়া এইসব কি কথা। চোখ মুখ কুচকে বলে ছায়া।
— কেন ভালো লাগলো না শুনতে। এসে পর্যন্ত দেখি রোহানের পেছনে পড়ে আছিস৷ তোদের মধ্যে কি চলছে বলতো? এত গায়ে পড়া স্বভাব কেন তোর? ছেলে দেখলেই গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে তাই না? আবিরের কথায় ছায়া রেগে গিয়ে বলে আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন এবার।।
– আবির রেগে ছায়ার দিকে তেড়ে যায়। হাত ধরে পিছু ঘুরিয়ে নেয়। ছায়ার পিঠ আবিরের বুকের সাথে লেগে, ছায়া ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে।
— একদম সহ্য হয়না তোদের এই আদিখ্যেতা। সব সময় চিপকে থাকিস দুজন কেনো? যেদিন থেকে পরিচয় হয়েছে তোদের সেদিন থেকে দেখছি বিষয়টা। রোহানের সাথে এত কিসের আলাপ তোর? এত কিসের হাসাহাসি? কই আমার সাথে তো কখনো হেসে কথা বলিস না৷ আমার কাছে আসিস না৷ ছায়ার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে অনবরত। ব্যথা পাচ্ছে সাথে আবিরের কটু কথা।
– আমার লাগছে আবির ভাইয়া কান্নারত কন্ঠে বলে ছায়া। এর মধ্যে ছুটি আসে সেখানে।
– ছায়ার হাত ছেড়ে দাও আবির। ছুটির কন্ঠস্বর পেতেই আবির ছায়াকে ছেড়ে দেয়। ছায়া হাত ধরে কান্না করতে থাকে। ছুটি একজনকে ডেকে বলে বরফ নিয়ে আসতে। আবির অপরাধী চোখে তাকায় ছুটির দিকে।
– ভালোবাসাটা অপরাধ নয়, কিন্তু ভালোবাসার কথাটা ভালোবাসার মানুষকে বলতে না পারাটা অপরাধ। ছায়ার মনে তোমার নামে অভিমান,অভিযোগ সৃষ্টি হওয়ার আগেই মনের কথা বলে দিও। নয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। আবির অবাক চোখে তাকায় ছুটির দিকে। ছুটি কি বোঝাতে চেয়েছে তার বুঝতে বাকি নেই৷ তার মানে ছুটি সব জানে, সব বুঝে গিয়েছে?
— ছায়াকে নিয়ে ঘরে যায় ছুটি। ছায়া এখনো কান্না করছে। হাতে ব্যথাও করছে৷ এমন শক্ত করে ধরেছে যে জায়গাটা লাল হয়ে আছে।
– কান্না থামা বোন। ঠিক হয়ে যাবে একটু পর দেখিস। ছুটি বলে ছায়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে।
– তুই উনাকে কিছু বললি না কেনো আপাই? আমার অনেক ব্যথা লেগেছে জানিস তুই! আর আমাকে অনেক বাজে বাজে কথাও বলেছে রোহান ভাইয়াকে নিয়ে। আমি নাকি উনার গায়ে পড়ি গিয়ে। ছায়া কথা গুলো বলে আবার কেঁদে দেয়। দরজার আড়ালে আবির দাঁড়িয়ে আছে৷ খুব খারাপ লাগছে তার এমন করার জন্য। রাগের মাথায় ছায়াকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে।
— আচ্ছা আবির কেনো এমন করলো? ছুটির কথায় ছায়া বলে আমি কি করে বলবো কেনো করলো! আমি বললাম রোহান ভাইয়া আসতে বলেছে আমাকে আর তখনই রেগে গেলেন আর এইসব কথা শুনিয়ে দিলেন।
-ছায়া মুচকি হেসে বলে, আমি ভেবেছিলাম আমার বোনটা অনেক বড় হয়ে গেছে। তাই তো আমাকে সামলায় আমাকে জ্ঞানের কথা বলে কিন্তু না। আমার বোন টা সেই ছোটই রয়ে গেছে দেখছি। ছুটির কথায় ছায়া বিস্ময় নিয়ে বলে মানে?.
– মানে অনেক কিছু৷ আগে চোখের পানি মুছ তারপর বলবো।
– আমি সত্যি তোর কথা বুঝতে পারছি না আপাই?
– আবির তোকে ভালোবাসে ছায়া! ছুটির ছোট বাক্য ছায়ার কর্ণধার হতেই শীতল হয়ে আসে শরীর। অবিশ্বাস চাহনি রাখে সে ছুটির দিকে।
– এই যে আবির তোর পেছনে লাগে, তোকে রাগায় তোর সাথে কথা বলার বাহানা খুঁজে কেনো জানিস? কারণ ভালোবাসা! আবির আড়ালে তোকে আগলেও রাখে যেটা তুই দেখতে পাসনা। তাই তো আবির রেগে যায় রোহানের কথা শুনে। কারণ, প্রিয় মানুষের পাশে যে কাউকে সহ্য করা যায়না ছায়া। একান্ত নিজের করে রাখতে চাই সবাই। আবির মুচকি হাসে ছুটির কথা শুনে। কেন জানি মনে শান্তি লাগছে তার।
– ছায়া কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ সত্যি আবির তাকে ভালোবাসে? কিন্তু কই কখনো বলেনি তো আর না মনে হয়েছে৷ আপাই কেনো বলছে তাহলে এইসব কথা?
– উনি কি তোকে এইসব কথা বলেছে আপাই? ছায়ার কথায় ছুটি মুচকি হেসে বলে সব কথা কেনো বলতে হবে। কিছু কথা না বলেও প্রকাশ করা যায় বুঝলি।
— ছায়া লজ্জা পাই। লালাভ আফা ফুটে উঠে বদন জুড়ে।
– আচ্ছা তোর মনে আবিরের জন্য কি অনুভূতি? ছুটির কথায় ঘাবড়ে তাকায় ছায়া।
– ঘাবড়ে গেলে চলবে না বনু, সঠিক সময়ে সঠিক মানুষ কে আঁকড়ে না ধরলে যে পরে আর সেটা পাওয়া হয়না। ছুটির আক্ষেপ প্রকাশ পাই কথাটাই।
– আমি জানি না আপাই, আমার মনে উনার জন্য কি অনুভূতি। তবে ভালো লাগে উনাকে, পছন্দও করি। উনি যে আমাকে জ্বালাতন করে আমার সাথে দুষ্টামি করে সব কিছু ভালো লাগে কিন্তু, তাহলে কি এটাই ভলোবাসা আপাই? নাকি শুধু ভালো লাগা?
— নিজের মনকে সে প্রশ্ন কর, বুঝতে চেষ্টা কর। ঠিক উত্তর পেয়ে যাবি৷ এখন বল তো উকিল সাহেব কেনো আসতে বলেছে তোকে?
– জানি না, বলেছে আসলে বলবে। এর মধ্যে রোহান হাজির সেখানে৷ রোহানকে আসতে দেখে আবির সরে যায়। রোহানের হাতে বেশ কিছু খাবারের প্যাকেট।
– এইগুলা কি? ছুটি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
– এখানে সব খাবার আছে, প্যাকেট গুলো রাখতে রাখতে বলে রোহান। নজর যায় ছায়ার দিকে।
– কি ব্যাপার ছায়া তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো? মনে হচ্ছে কান্না করেছো, তোমার কি শরীর খারাপ?
– ছায়া, ছুটি দুজনেই কিছুটা নড়েচড়ে উঠে।
– তেমন কিছু না৷ বাইরে থেকে এসেছে তো হয়তো ধুলোবালি পড়েছে চোখে তাই এমন দেখাচ্ছে। তুই যা তো ছায়া ফ্রেস হয়ে আয়।
– ছুটির কথা মতো ছায়া ওয়াশরুমে যায় চোখ মুখে পানি দিতে।
-হঠাৎ এতসব খাবার, কি উপলক্ষে উকিল সাহেব? ছুটির প্রশ্নে রোহান লম্বা একটা হাসি রেখে বলে গেস করো।
– I have no idea! ছুটি বলে এক কথায়।
– ভাবলে তবে না আইডিয়া পাবে৷ যাই হোক আমি কোর্টের পারমিশন পেয়ে গেছি কেসটা লড়ার জন্য। রোহানের কথায় ছুটি উত্তেজিত কন্ঠে বলে সত্যি? যাক অবশেষে একটা ভালো খবর শুনলাম।
– জ্বি ম্যাম” তাই তো সবাইকে নিয়ে এই মুহুর্তটা এনজয় করতে চাই। তুমি তো বাইরে যাবে না খেতে তাই ভাবলাম খাবার টা বাসায় নিয়ে আসি। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া হবে একদিন। এই জন্য ছায়াকেও আসতে বলেছি। রোহানের কথায় ছুটি ছোট করে ওহ বলে।
–আড়াল থেকে সব শুনে আবিরের খারাপ লাগে৷ শুধু শুধু ছায়াকে বাজে কথা শুনিয়েছে সে।
— আবির, বাইরে কেনো দাঁড়িয়ে আছো ভেতরে এসো! ছুটির কথায় হকচকিয়ে উঠে আবির৷ ছায়ার চোখ সে ফাকি দিতে পারলো না এবারও।
– আবির আড়াল থেকে বেরিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে না মানে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই..থেমে যায় আবির৷ ছায়া ফ্রেস হয়ে বের হয় ততখনে।
– আরে আবির এসো এসো৷ আমি তোমাকেও ডেকে পাঠাইতাম। ব্রোর কেসটা লড়ার জন্য আমি পারমিশন পেয়ে গেছি৷ এখন শুধু প্রমাণ কালেক্ট করা বাকি।
– বাহ এটা তো ভালো খবর আবির বলে হেসে।
— আবির আড়ে আড়ে ছায়ার দিকে চায়। ছায়া একবারও আবিরের চোখে চোখ রাখে না৷ লজ্জা,বিশেষ এক অনুভূতিতে সব গিলে খেয়েছে।
— সে সময় টা সবাই মিলে ভালোই কাটায়। আবির সরি বলে নেয় ছায়াকে। ছায়া ভেবেছিলো আবির তার মনের কথাসহ বলবে। কিন্তু আবির শুধু সরি বলে তাকে।
— দুদিন ছুটি তাশরিফের ঘরে যায়না সকালে কফি নিয়ে। তাশরিফের হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাচ্ছে সে সময়। এই সময় ছুটি এসে তাকে ডেকে তুলতো। তাশরিফ ঘুম থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে ছুটি কে খুঁজে কিন্তু পাইনা। টেবিলে কফির কাপও নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তাশরিফ। দুদিনেই অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে তার।
– তাশরিফ আজ যেনো তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে। এত সকালে কি করবে ভেবে না পেয়ে ছাদের দিকে যায়। অনেক দিন পর তাশরিফ ছাদে যায় আজ।
– ছাদের কিনারায় ছুটি দাঁড়িয়ে আছে। তাশরিফ জানতো না এখানে আসলে সে ছুটির দেখা পাবে।
– কারো পায়ের ভাঁজ পেয়ে ছুটি পিছু ফিরে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। তাশরিফ এই সময় ছাদে বিশ্বাসই হচ্ছে না। সকালের ফুরফুরে বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে দুজনকে।
– তুমি এখানে, এত সকালে উঠেছ যে? ছুটির কথায় তাশরিফ প্রকৃতির দিকে চোখ রেখে বলে ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ তাই আসলাম। তুমি এখানে কি করছো?
– আমি তো প্রতিদিনই আসি। প্রতিদিন সকালে ছাদে না আসলে আমার ভালোই লাগেনা৷ দেখো, হাওয়া বয়ছে কি সুন্দর।
– তাশরিফ কিছু বলে না আর তবে ছুটিকে আজ কেমন প্রানোবন্ত লাগছে।
– মন খারাপ? হুট করে বলে উঠে ছুটি! তাশরিফ ভ্রু কুচকে বলে আমাকে বলছো?
– এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আছে বলে আমার জানা নেই৷ আপনি কাউকে দেখছেন? হেয়ালি নিয়ে বলে ছুটি। তাশরিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ভেতরে তো মনই নেই তাহলে মন খারাপের প্রশ্ন আসে কোথা থেকে?
– মন আছে বলে আপনি এতটা কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন তাশরিফ ভাইয়া। ছুটির কথায় তাশরিফ ভ্রু কুচকে তাকায়।
– আচ্ছা ছুটি, একটা কথার জবাব দেবে আমায়? তাশরিফের কথায় ছুটি সন্দিহান হয়ে বলে চেষ্টা করবো।
– তুমি কেনো এত কিছু করছো আমার জন্য?
তাশরিফের কথায় ছুটি না জানার ভান ধরে বলে কি করছি?
– এই যে আমাকে নির্দোষ প্রমান করতে চাও, স্বাভাবিক লাইফ দিতে চাও। কেনো? কি লাভ তোমার তাতে?
– লাভ ক্ষতির হিসাব করে যদি জীবন চলতো তাহলে হয়তো সবার জীবনে লাভটাই বেশি প্রাধান্য পেতো৷ ক্ষতির সাক্ষাৎকার কেউ করতো না। ছুটির জটিল কথা বোধগম্য হয়না তাশরিফের।
– শুধু এতটুকু জেনে রাখো আমি তোমার জন্য কিছুই করছি।
– সত্যি কি তাই? বন্ধুত্বের জায়গাটা তাহলে নেই বলছো? আমি তো ভেবেছিলাম বন্ধু হিসেবে আমার জন্য লড়াই করছো তুমি! ছোট ছোট চোখ করে তাকায় ছুটি তাশরিফের কথায়। কি বলতে চাইছে তাশরিফ?
— ভিত্তিহীন কথাবার্তা না বলাই ভালো, তাই নয় কি?
তিন বছর আগের সম্পর্ক টা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। না তোমার দিক হতে না আমার। তুমি যেমন পারছো না আমাকে সম্পুর্ণ রুপে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে তেমন আমারও কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। আমি তো এইসব করছি শুধু মাত্র রানীমার কথা ভেবে। ছোট থেকে দেখে আসছি মানুষটাকে। মায়ের মতো আদর স্নেহ দিয়ে গেছেন সব সময়। তাই উনার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না৷ এতকিছুর পরও কিছু আশা নিয়ে পথ চলছেন তিনি আর তারই সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র ছুটি বলে আবেগ নিয়ে।
– আজও মনের কথাটা বলতে পারলে না ছুটি…
চলবে…
#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
১১
— এখনো মনের কথাটা বলতে পারলে না ছুটি! পারার কথাও যে নয়। তোমার কি দায় আমাকে ভালোবাসি বলার, যেখানে আমার নিজের দায়বদ্ধতা ছিলো বুঝে নেওয়ার। কিন্তু আমি পারিনি। তোমার ভালোবাসা আমি বুঝতে পারিনি আগে আর যখন বুঝতে পারলাম তখন কিছু করার ছিলো না৷ অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো যে তখন। যদি আগে জানতাম বা বুঝতাম তোমার অনুভূতি তাহলে হয়তো অন্য কারো মায়ায় আবদ্ধ হতে পারতাম না৷ ভাবতে পারতাম না কাউকে নিয়ে জীবন চলার কথা। আমি তো সব সময় বন্ধুত্বের জায়গায় অটুট ছিলাম। বন্ধুত্বের বাইরেও যে একটা সম্পর্ক আছে বা হয় সেটা কখনো মাথাতেই আসেনি আমার। আমার প্রতি তোমার আবদার, যত্ন, প্রত্যাশা সবকিছু যে ভালোবাসা ঘিরে ছিলো সত্যি বুঝিনি ছুটি।
– কি ভাবছো এতো? ছুটি বলে ভ্রু কুচকে তাশরিফকে ভাবুক হতে দেখে। তাশরিফ ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে করুণ একটা চাহনি রেখে বলে কিছু না।
— একটা কথা বলবো! ছুটির কথায় তাশরিফ বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকায়।
– জানিনা আমার এই কথাটা বলা ঠিক হবে কি-না,আর বললেও যে কতটা প্রাধান্য পাবে তাও জানি না। কিন্তু না বলে পারছি না কথাটা।
– ছুটির রহস্যময় কথায় তাশরিফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে এতো হেয়ালি না করে সোজাসাপটা বলে দিলে তো পারো। ছুটি মুচকি হাসে কথাটায়।
— তুমি তো মেনেই নিয়েছো তুমি অপরাধী, তুমি ইলহামকে খু’ন করেছো৷ সব প্রমাণ সব কিছু তোমার বিরুদ্ধে এরপরও যত দিন বাইরে আছো এখানে থাকার সুযোগ পাচ্ছো ততদিন কি পারোনা রানীমাকে একটু ভালো রাখতে। তার কথা একটু ভাবতে? রানীমা একদম ভালো নেই তাশরিফ ভাইয়া, তিলেতিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেতরে। তোমাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিছুই কি বুঝতে পারছো না তুমি? নাকি সব বুঝেও না বোঝার ভান ধরে থাকছো? কিভাবে পারছো নিজের মাকে কষ্ট দিতে। রানীমা বাইরে থেকে যতটা শক্ত দেখায় নিজেকে ভেতর থেকে ঠিক ততটাই দুর্বল। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে সব সময়। এরপরও তুমি চুপ করে থাকবে, সব অপরাধ তোমার এটাই বলবে। কেনো করছো এমন?.
– স্টপ ছুটি! আমি যা করেছি সেটাই বলেছি। তোমরা যদি সেটা বিশ্বাস না করো তাহলে সেটা তোমাদের সমস্যা আমার না। কাউকে নিয়ে ভাবতে চাইনা আমি। আমি একা থাকতে চাই একা বাঁচতে চাই যতদিন আছি। এই কথাটা যত তাড়াতাড়ি মানতে পারবে তোমরা ততই তোমাদের মঙ্গল। মিথ্যা আশ্বাস কাউকে দিতে চাইনা আমি।
– হতাশ হয় ছুটি, অসহায় লাগে নিজেকে। এত কিছুর পরও তাশরিফ তার জায়গা থেকে এক চুল পরিমাণ নড়ে না। কেনো? কিসের জেদ এতো?
– আর যাই হোক রানীমার কথাটা ভেবে দেখো। তুমি অপরাধ করেছো তার শাস্তিও তুমি পাবে এটা ঠিক তাই বলে বাকিদেরও দিতে পারো না সে শাস্তি। রানীমা তো কোনো দোষ করেনি তাহলে কেনো দূরে দূরে থাকছো তার থেকে৷ সময় টা দাও না যতদিন পাচ্ছো। এইসব কথা বলা অনর্থক, কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে। তারপরও না বলে পারলাম না। একটু ভেবে দেখো আমার কথাটা। ছুটি চলে যায় কথাগুলো বলে। তাশরিফ চুল টেনে আকাশের পাণে চায়। বিষন্ন সময় যাচ্ছে তার। জীবন অনেক কিছু দিয়েছিলো তাকে আবার তার বেশি কেড়েও নিয়েছে।
— সকালে সবাই নাস্তা করতে বসে। ছুটি সার্ভ করছে সবাইকে। মমতা খান অফিস যাবেন তাই খুব তাড়ায় আছে আজ। সকাল সকাল জরুরি মিটিং ডেকেছে তিনি আজ অফিসে। নাস্তা করার মতো সময়ও যেনো হাতে নেই তার। তাশরিফ বাদে সবাই উপস্থিত সেখানে। সকালের নাস্তা তাশরিফ করে না। ইনফ্যাক্ট কোনো সময়ের খাবারই সে বাড়িতে খাইনা এখন। বাইরে থেকে খেয়ে আসে নয়তো অনেক সময় না খায়ে থাকে৷ আবির থাকলে সেদিনের খাওয়া সম্পুর্ন হয়। যার জন্য আবির তাশরিফের কাছ ছাড়া হয়না৷ কোনো কাজে আটকে গেলে সেদিন ব্যতিক্রম হয়।
-;ছুটি মা আমাকে শুধু চা দে, আমার নাস্তা করার মতো সময় নেই। অনেক টা দেরি হয়ে গেছে আজ।
তা বললে তো শুনবো না রানীমা। তোমার সকালের ওষুধ খেতে হবে মনে আছে তো? এত ছোটাছুটি করো তুমি, তাছাড়া তোমার শরীর খারাপ যাচ্ছে দুদিন ধরে আমি জানি। তাই আমি যা বলবো তাই হবে।
– রানীমার উপরে আরেক রানীমার হুকুম। অমান্য করা যাবেনা ফুপি! রোহানের কথায় মমতা খান মুচকি হেসে বলে ওদের জন্য তো বেঁচে আছি আজও। ছায়া আর ছুটি দুজনেই যেনো আমার মা। ছুটির থেকে বাঁচতে পারলেও ছায়া একদম ছাড়ে না।
— মমতা খান চা খেয়ে উঠে পড়ে কথার ফাঁকে।
– একি রানীমা উঠলে কেনো? একটু কিছু খাও, তোমার ওষুধ নিয়ে আসছি দাঁড়াও।
– ছুটি মা প্লিজ আমি অফিসে কিছু খেয়ে নেবো প্রমিস। আমাকে ওষুধ গুলো দিয়ে দে।
–
– তুমি খাবার ওষুধ খেয়ে তবেই বের হবে আম্মা। তাশরিফের কথায় চমকে তাকায় সবাই। মমতা খান বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে যেনো। আজ তাশরিফের কথার সুর বলে দিচ্ছে এই তাশরিফ তার সেই তাশরিফ। যে তাশরিফ সব সময় আম্মাকে মিস করতো, আম্মার সাথে সব শেয়ার করতো। আম্মার সাথে একবেলা কথা না বললে যার ঘুম হতো না।
— তাশরিফ মমতা খানের পাশে এসে দাঁড়ায়।
– বসো! মমতা খানকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে ছুটিকে উদ্দেশ্য করে বলে আমার এবং আম্মার দু-জনেরই খাবার দাও।
– ছুটি ভীষণ শকড। সাথে সবাই। আর মমতা খান সে তো ছলছল চোখে এখনো তাশরিফকে দেখছে৷ এ যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
– ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো খাবার দাও! ছুটিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে । ছুটি ভ্রম থেকে বেরিয়ে বলে এ — হ্যা হ্যাঁ এখুনি দিচ্ছি।
– আর তুমি নাস্তা করে তবেই বেরোবে বুঝেছো? মমতা খানের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে আনন্দে।
— চোখের পানি আড়ালে মুছে বলে আমার অফিসে যেতেই হবে তাশরিফ। অনেক জরুরি মিটিং আছে আজ। আরমান ফোন করেছিলো। সবাই চলে এসেছে অলরেডি।
– কোনো কথা নয়। তোমার ছেলে এখনো বেঁচে আছে বুঝেছো। তাই যা বলবো তাই শুনবে৷ মমতা খান তাশরিফের মুখ চেপে ধরে বলে ও কথা বলিস না বাবা। তোকে হারানোর ভয় সর্বদা গ্রাস করে আমায়।
– তাশরিফের দম বন্ধ হয়ে আসে যেনো। অনেক দিন পর খুব কাছ থেকে দেখছে সে মাকে! সত্যি কতটা দমে গেছেন তার মা, কতটা ভয়ে থাকে তাকে হারানোর। শক্ত আবরণের ভেতরের মানুষ টা অনেক দুর্বল, ছুটি ঠিকই বলেছিলো তাহলে।
– তাশরিফ খাবার নিয়ে সামনে ধরে মমতা খানের। রোহানের খাওয়া তো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে৷ নতুন তাশরিফকে দেখছে আজ সবাই। মমতা খানের গলা পাকিয়ে আসে কান্নায়। আবেগ সামলাতে না পেরে তিনি কেঁদে দেন। ছুটির চোখেও পানি চলে আসে।
– কেঁদো না আম্মা। আমি কিন্তু চলে যাবো তাহলে। কেনো কান্না করছো তুমি? নিজেকে শক্ত করে রাখার চেষ্টা তাশরিফের।
– আমি আর কান্না করবো না। তাও তুই যাস না তাশরিফ। তোর হাতের খাবারটুকু খাওয়ার মতো ভাগ্যবান আমাকে হতে দে।
– তাশরিফ নিজ হাতে খায়ে দেয় মমতা খানকে। এরপর ওষুধ খেয়ে সে চলে যায়। সময়ের জ্ঞান নেই আর আজ। আজ তার পরম আনন্দের দিন ছিলো যে।
– রোহান নাস্তা করে উঠে গেছে। আবির এখনো খাচ্ছে তাশরিফ খাওয়া শেষ করে উঠবে তখন ছুটি বলে থ্যাংকস!
– কেনো? তাশরিফ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
– আমার কথাটা রাখার জন্য । রানীমাকে এমন খুশি আমি আগে হতে দেখিনি। আজ কতটা আনন্দ,সুখ তার মধ্যে ছিলো আমি দেখেছি।
– ধন্যবাদ তো আমার তোমাকে দেওয়ার কথা। কারণ তুমি না বললে আমি এইগুলা কখনোই ভাবতাম না৷ আম্মা যে কতটা কষ্টে আছে বুঝতেও পারতাম না। থ্যাংকস এগেইন ছুটি। তাশরিফ চলে যায়। ছুটির মধ্যে উচ্ছাস, আনন্দ, ভালোলাগা।
— এইভাবে কাটে আরো দুদিন৷ তাশরিফ পরিবারে সময় দেয় এখন। মমতা খানের আশেপাশে থাকেন সব সময়। মমতা খান এই সময় টা উপভোগ করতে চাই। তাই কোনো অবান্তর কথা বলে তাশরিফকে দূরে করতে চাইনা আর। তবে উনি এটা বুঝে গেছেন যদি কিছু বলার হয় তাহলে তাশরিফ নিজে থেকে বলবে তাকে।
— ছুটি স্টোর রুমে যায় মমতা খানের কথা মতো। সেখানে তাশরিফের গিটার রাখা আছে। অনেক দিন তাশরিফের গান শুনেনি কেউ । মমতা খানের খুব ইচ্ছে করছে তাশরিফের গলায় একটা গান শুনতে। ছায়া এসেছে সহ। তাশরিফের চেঞ্জ দেখে সেও অনেক খুশি।
— ধুলো জমে গেছে গিটারে। অবহেলায় পড়ে আছে এক কোণে গিটারটা৷ অথচ এই গিটারই একদিন প্রাণ ভোমরা ছিলো তাশরিফের। কাউকে হাত লাগাতে দিতো না। ছুটি অনেক বার নিয়ে ছুট লাগিয়েছে। তাশরিফও ছুটে গেছে গিটার ছিনিয়ে নিতে৷ কত মধুর সেসব স্মৃতি। এক কালবৈশাখী ঝড় এসে সব উলট পালট করে দিয়ে গেছে। ছুটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গিটার নিয়ে চলে আসে। তাশরিফ বাইরে গেছে। আসলে সবাই মিলে জেঁকে বসবে। তবে তাশরিফ কি রিয়াকশন দেবে কেউ জানে না।
— তাশরিফ কোথায় গেছে জানিস আবির? মমতা খান বলেন। সবাই ড্রয়িংরুমে উপেক্ষা করছে তাশরিফের জন্য। সন্ধ্যার দিকে ফিরে আসার কথা তার। কিন্তু রাত বাড়তে থাকে তাশরিফের খোঁজ নেই।
– আমাকেও বলে যায়নি মা। আমি কি একবার বাইরে গিয়ে দেখবো। আবিরের কথায় মমতা খান বলে না থাক। আসুক ওর সময় মতো।
– তাশরিফ কি গান গাইবে মা? যদি আবারও রেগে যায়? আবির ভয় পাই কিছুটা।
– হয়তো রাগ করবে তবে আমি যে আমার সেই তাশরিফকে দেখতে পাই আবির৷ সে তাশরিফ নিশ্চয় আমার কথা রাখবে।
– একদম ঠিক ফুপি৷ ব্রো কতটা চেঞ্জ করে গেছে জাস্ট দেখো। আমি তো দেখিনি তবে যা শুনেছি আর এসে যা দেখলাম তাতে অনেক আপসেট ছিলাম। এখন ব্রো স্বাভাবিক আমি হ্যাপি। রোহান বলে হেসে।
– সবই সম্ভব হয়েছে ছুটির জন্য। মমতা খানের কথায় হকচকিয়ে উঠে ছুটি।
– আ-আমি আবার কি করলাম রানীমা! লাজুক হেসে বলে ছুটি।
– সবই তো তোর কাজ। আমার ছেলেটাকে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক করে তুলছিস তুই আমি সেটা জানি৷ কেন যে আগে আনলাম না তোকে। তাহলে হয়তো এতদিনে আমরা সবাই সুস্থ জীবন কাটাতে পারতাম৷ আফসোস নিয়ে বলে মমতা খান।
– আমি কিছুই করিনি রানীমা৷ যা করার উনি করেছেন৷ উনি চেয়েছেন বিধায় সব হচ্ছে। উনি না চাইলে কিন্তু এইসব কেউ জোর করে করাতে পারতো না।
– সে তুই যতই যাই বল। সব ক্রেডিট তোর।
-মা একদম ঠিক বলেছে ছুটি। আমিও মায়ের সাথে একমত।
*তুমি তো দেখছি ম্যাজিক জানো ছুটি। রোহান বলে কথাটা।
* এরই মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠে। কলিংবেল বাজায় সবাই নড়েচড়ে বসে। তাশরিফ ফিরেছে ভেবে সবাই স্বস্তি পাই যেনো।
– আমি দেখছি কে আসলো ছায়া উঠে যায় আগে। সবাই উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
– ছায়া দরজা খুলতেই চমকে যায় সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে৷ চোখ যেনো ছানাবড়া তার। সাথে সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে।
— বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আসিফ ইকবাল আপনি? উত্তেজিত কন্ঠে বলে ছায়া। এদিকে ছায়াকে দেখে ফিদা হয়ে যায় আসিফ। চশমা পড়া গুলুমুলু লুক দেখে যে কেউ ফিদা হবে স্বাভাবিক। আসিফ ছায়ার দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– আমার না বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি এখানে? এই একটা চিমটি কাটবেন প্লিজ৷ ছায়ার কথায় আফিস মুচকি হেসে বলে স্বপ্ন নয় মিস কিউটি। আইম হেয়ার!
– ভেতরে যা! আবির বলে গম্ভীর কণ্ঠে। ছায়া মুখটা মলিন করে ফেলে। তবে আজ আর কিছু বলবে না সে আবিরকে।
– ওকে ভেতরে আসতে বল আবির। মমতা খানের কথায় আবির আসিফকে ভেতরে আসতে বলে।
– আমি কিন্তু একটু অটোগ্রাফ নেবো উনার! ছুটিকে বলে ছায়া।
– এমন পাগলামো কেনো করছিস। উনার থেকে তাশরিফ ভাইয়া ভালো গায়। মুখ বাকিয়ে বলে ছুটি।
– সে তো জানি৷ কিন্তু ভাইয়া তো আর গায়না এখন৷ এখন তো উনি টপে আছেন দেশে-বিদেশে। রিসেন্ট রিলিজ হওয়া গানটা শুনেছিস তুই আপাই? জাস্ট অসাম।
– হয়েছে এবার চুপ কর। ছুটি থামিয়ে দেয় ছায়াকে।
– কেমন আছেন আন্টি? কথাটা বলতেই আসিফের চোখ যায় গিটারে। ভ্রু কুচকে আসে তার সাথে মুখশ্রী বদলে যায়..
– চলবে