শেষ পর্বের শুরু পর্ব -১০(শেষ পর্ব)

0
1187

গল্প: শেষ পর্বের শুরু (শেষ পর্ব)
__ ✍️ নীলিমা নওরীন মেঘলা

কয়েকদিন পর…

সকাল হতে না হতেই হামিদ সাহেব তড়িঘড়ি করে আমায় ডেকে তুললেন। আমি চরম বিরক্তি নিয়ে বললাম, ‘সাতসকালে এইভাবে হম্বিতম্বি করছেন কেন? ভূতের তাড়া খেয়েছেন নাকি?’

‘ভূতের তাড়ার থেকেও বেশি কিছু। তুমি আগে উঠে বসো, সব বলছি। শুনে একদম চমকে যাবে।’

‘আমার এখন চমকাতে ইচ্ছে করছে না। যা বলার পরে বলবেন। এখন ঘুমাতে চাই।’
কথাগুলো বলে আগের নিয়মে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। এমনিতেই কয়দিন ধরে শরীরের উপর দিয়ে বেশ ধকল যাচ্ছে, ঠিকমতো ঘুম হয় না। আজ যখন সুযোগ পেয়েছি, তখন সেই সুযোগ হাতছাড়া করছি না।

হামিদ সাহেব আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলেন না। একপ্রকার হড়বড় করে বলে ফেললেন, ‘হাশমত ব্যাপারিকে নাকি পুলিশে ধরেছে। তুমি কিছু জানো?’

আমি শুধু কম্বলের ভেতর থেকে মুখ বের করলাম। কৌতুহলে মানুষটার চোখজোড়া চকচক করছে। কোথাও যেন ব্যাপারির জন্য সহানুভূতিও দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এত সহানুভূতির কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

‘কী অপরাধে? নবগঙ্গার পানির সাথে ফেন্সিডিল মিশিয়ে তিনবেলা কুলকুচি করার জন্য?’
বেশ রহস্য করেই কথাটা বললাম।

আমার কথা শুনে উনি তব্দা খেলেন, কিছুটা বিরক্তও হলেন মনে হলো। তবে বুঝতে পারলেন, উনি মায়ের কাছে মাসির গল্প করতে এসেছেন৷ আমি সবকিছু আগে থেকেই জানি৷

হামিদ সাহেব এবার রীতিমতো ধাক্কা দেওয়া শুরু করলেন। মানুষটার কাণ্ডকারখানা দেখে আমার হাসি পেল। এমন ছেলেমানুষি করার মানে হয়!

‘ফেন্সিডিল মানে? কী বলছো পরিষ্কার করে বলো। হেয়ালি ভালো লাগছে না।’

অগত্যা বাধ্য হয়ে এবার উঠে বসতে হলো। উনি টেবিল লাগোয়া চেয়ারটা টেনে বসলেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ব্যাপারিকে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়েছিল। আপনার হয়নি?’

‘সন্দেহ কেন হবে?’
ভ্রুকুটি নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

‘একটা কথা আছে না- অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। ডে ওয়ান থেকে ওনার মধ্যে অতিরিক্ত ভক্তি দেখেছি আমার প্রতি। ওনার এই ভালোমানুষিটাই ওনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।’
আফসোসের সুরে মুখ দিয়ে টাহ্ করে শব্দ করলাম।

‘যা বলবে পরিষ্কার করে বলো। কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।’

আসল ঘটনা খুলে বলতে আমি এবার মুখ খুললাম। ইমলির ক্লু দেওয়া থেকে শুরু করে ব্যাপারির সাথে সমস্ত কথোপকথনের বিস্তারিত বললাম।
সবকিছু শুনে উনি বললেন, ‘ব্যাপারি এইসব কথা বলেছে আমার মেয়ের সম্পর্কে? তুমি আগে কেন সেটা বললে না আমায়?’

‘আগে বললে আপনি সব গড়বড় করে ফেলতেন। কোনো সমাধান হতো না। এখনই দেখুন না কত রিয়েক্ট করছেন।’

‘মৃত মানুষের নামে কুৎসা রটিয়ে ওর লাভ কী?’

‘লাভ তো অবশ্যই ছিল। উনি চেয়েছিলেন ওনার কথা শুনে আমি যেন বিভ্রান্ত হই। সত্যটা খুঁজে বের করতে না পারি। সেজন্য আমায় ভুল পথে পরিচালনা করার চেষ্টাও করেছিলেন। প্রথমে ওনার জ্যোতিষ শাস্ত্রের গল্প ফেঁদে আমার মনযোগ আকর্ষণ করলেন। তারপর ইমলির পোয়াতি হওয়ার গল্প বললেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত মিতুর বিষয়েও খারাপ মেয়ের তকমা লাগাতে ভুললেন না।’

‘সবই নাহয় বুঝলাম। কিন্তু সন্দেহের বশে তো আর পুলিশকে দিয়ে এরেস্ট করাওনি। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো প্রমাণ আছে। আর ফেন্সিডিলের বিষয়টাই বা কী?’
প্রশ্নটা করে উনি প্রবল আগ্রহ নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। পুরো কথাটা না বলা পর্যন্ত যে আমার রেহাই নেই সেটা বুঝতে পারছি।

‘আসলে এর পেছনে অনেকাংশেই মিতুর অবদান আছে। তদন্ত করতে সবচেয়ে বেশি মিতুই আমায় সাহায্য করেছে।’

‘কেমন সাহায্য?’

‘আপনি তো জানেনই, মিতু আর ইমলি ভীষণ ভালো বন্ধু ছিল। তাই অমাবস্যার রাতে ইমলি ক্লু হিসেবে মিতুর নামটা ডায়েরিতে লিখে রেখে যায়। আমি প্রথমে বিষয়টা ধরতে পারিনি। মিতুকেই ভেবেছিলাম আসল কালপ্রিট। সেই হিসেবে ওকে কথার বাণে ঘায়েল করার চেষ্টা করি। কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই স্বীকার করে না। পরে বলে ও আমায় সাহায্য করবে। আমার কাছে অন্য কোনো অপশনও ছিল না। তাই ওর সাহায্য গ্রহণ করাটাই উপযুক্ত মনে হলো।’

‘আহা, কখন থেকে শুধু বলে যাচ্ছো মিতু তোমায় সাহায্য করেছে। কী সাহায্য করেছে, সেটা তো বলো?’
হামিদ সাহেব একপ্রকার তাড়া দিতে লাগলেন।

আমি মৃদু হাসলাম। কোনো ভূমিকা না করে সরাসরি বললাম, ‘নবগঙ্গা নদী দিয়ে রাতের বেলা চোরাকারবার চলে। নেশা জাতীয় জিনিস পারাপার হয়। ইমলি মূলত সেটাই জেনে গিয়েছিল এবং সবকিছুর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপও নিতে চেয়েছিল। আর সবকিছুর ফলাফল হিসেবে অকালে কিনা প্রাণ বিসর্জন দিতে হলো।’
এতটুকু বলে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম। ইমলির মৃত্যুর কথা ঘুরেফিরে সামনে আসায় মানুষটা যথেষ্ট আঘাত পাচ্ছেন। কিন্তু সত্যিটা তো আমায় বলতেই হবে।

কিছুক্ষণ থেমে আবার বললাম, ‘এই কয়দিনে খেয়াল করে দেখেছি নদীর পাড় দিনের বেশিরভাগ সময়ই ফাঁকা থাকে। কারণটা প্রথমে ধরতে পারিনি। পরে বুঝেছি এই নদী নিয়ে মানুষের মনে রীতিমতো ভয় কাজ করছে। ইমলি ছাড়াও নাকি বেশ কয়জন রহস্যজনকভাবে মারা গেছে এই নদীতে। কোনোটারই পুলিশ কেস হয়নি। বলতে গেলে গ্রামের মোড়লরা নিরুৎসাহিত করেছেন। অবশ্য কেস করলে পিছে কিনা ওনাদেরই ক্ষতি। কে জেনেশুনে নিজের ক্ষতি করতে চাইবে বলুন!’

আমি থামা মাত্রই উনি মুখ খুললেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওনাদের ক্ষতি মানে? এসবের পেছনে কি ব্যাপারি ছাড়া আরও কেউ জড়িত নাকি?’

‘অবশ্যই জড়িত। হাশমত ব্যাপারির একার পক্ষে এতবড় কারবার চালানো তো আর সম্ভব না। তবে বাকিদের নাম এখনও জানা যায়নি, জেরা চলছে। পিঠে দুই ঘা পড়লেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

‘আচ্ছা তুমি আমায় একটা কথা বলো, মিতু যেহেতু আগে থেকেই সবটা জানতো তবে কেন মুখ খোলেনি? এত বছর কেন চুপ ছিল?’

‘আসলে মিতু সবকিছু জানতো এটা ভুল কথা। ও শুধু জানতো ইমলি নদীর ব্যাপারে কিছু জেনে গেছে। সবসময় নাকি সেই হিন্টস দিতো, কিন্তু সরাসরি কিছু বলতো না। রাত-বিরেতে ও লুকিয়ে লুকিয়ে নদীর পাড়ে যেতো সবকিছু খতিয়ে দেখার জন্য। মিতু কিছু জানতে চাইলেই বলতো, এমন একটা সত্য আবিষ্কার করেছে জানলে সবাই চমকে যাবে। মূল হোতাদের নাকি খুঁজে বের করবে। সবাইকে চমকাতে গিয়ে শেষমেশ এইভাবে যে অকালে প্রাণ চলে যাবে বোকা মেয়েটা বুঝতে পারেনি।’

হামিদ সাহেব আর কোনো প্রশ্ন করলেন না। চুপচাপ ঠায় মেরে বসে রইলেন।
.

আমি বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবো এমন সময় একটা ছেলে এসে ঘরের মধ্যে হাজির হলো, সঙ্গে মিতুকেও দেখতে পেলাম। যদিও আমার এখন অবাক হওয়ার কথা, তবে অবাক হলাম না। মনে মনে হাসলাম এই ভেবে যে, ‘হবু জামাইকে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ নিশ্চয়ই মিতুর বাড়ির কেউ হাতছাড়া করতে চায় না। কী অদ্ভুত কাণ্ড!’
.

‘মিতু আমায় সবটা বলেছে৷ অভিনন্দন আপনাকে।’
কথাটা বলে সমবয়সী একটা ছেলে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য। ছেলেটা সম্পর্কে মিতুর ভাই। কথায় কথায় সেটা জানতে পারলাম।

আমি মিতুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছেলেটার সাথে হাত মেলাতে মেলাতে রহস্য করে বললাম, ‘মিতু সব বলেছে বুঝি? সবকিছু?’

‘হ্যাঁ, মানে ইমলির মৃত্যু রহস্য কীভাবে উদঘাটন করলেন সেসবই বলেছে। আপনার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না। আপনি সত্যিই একজন জিনিয়াস।’

অপরিচিত একটা ছেলের মুখে নিজের নামে প্রশংসা শুনে ভালো লাগছে। অবশ্য নিজের বিষয়ে ভালো কথা শুনতে কারই বা খারাপ লাগে!
আমি বিছানায় ছেলেটাকে বসার জন্য জায়গা করে দিয়ে বললাম, ‘আমি জিনিয়াস কিনা জানি না, তবে আপনার বোনেরও কিন্তু হাত আছে। উনি আমায় যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।’

এতক্ষণে মিতু মুখ খুললো। মৃদু প্রতিবাদ জানিয়ে বললো, ‘আমার সাহায্য নিছকই সামান্য। যা করার আপনিই করেছেন। আগের ঘটনা তো জানিই, পরে কী হলো সেটা বলুন? কীভাবে শিওর হলেন হাশমত ব্যাপারি এসবের সাথে জড়িত?’
কথাটা বলে মিতু এগিয়ে এসে পাশে রাখা চেয়ারটা টেনে বসলো। ভাই-বোন দুজনেরই চোখেমুখে কৌতুহল স্পষ্টতর হলো।

হামিদ সাহেবকে আশেপাশে কোথাও দেখলাম না। কোন ফাঁকে যে ঘর থেকে বেরিয়েছেন খেয়ালই করিনি। নিশ্চয়ই মেহমানদের জন্য চা-নাস্তার আয়োজন করছেন। মানুষটা পারেনও বটে।

‘কী হলো কিছু বলছেন না যে?’

পুনরায় প্রশ্নটা করাতে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। আমতা-আমতা করে বললাম, ‘আসলে এর আগে আপনাকে বলেছিলাম না, নদীর পাড়ে একটা বোতল খুঁজে পাওয়ার কথা? মনে আছে?’

‘হ্যাঁ, মনে আছে।’

‘বোতলটা কিসের ছিল জানেন?’

‘কিসের?’

‘ফেন্সিডিলের।’

‘তারপর…’

‘আমার প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল নদীতে ডুবে মরার রহস্য নদীর মধ্যেই লুকিয়ে আছে। বোতলটা হাতে পেয়ে সেই ধারণা আরও প্রখর হলো। আমি দিনে একবার হলেও নদীর পাড়ে যেতাম তদন্ত করতে। ঘুরেফিরে ব্যাপারির সাথেই দেখা হয়ে যেতো। যদিও উনি কুলকুচি করার বাহানায় যেতেন। কিন্তু ঘটনা অন্যকিছু। উনি আসলে দেখতে যেতেন রাতে মালামাল পারাপারের সময় কোনো বোতল পাড়ে পড়ে গেছে কিনা। যেহেতু সেদিন বৃষ্টির দিন ছিল, তাই স্বভাবতই উনি নদীর পাড়ে যাননি। আর ক্লু হিসেবে আমার হাতে চলে আসলো বোতলখানা। তারপর আপনার কথা শুনে আরও নিশ্চিত হলাম নদীতেই আসল রহস্য লুকিয়ে আছে। মনে মনে ঠিক করে নিলাম রাতের বেলা গিয়ে দেখবো ঘটনা কী। সেই মোতাবেক সন্ধ্যার পরেই নদীর পাশের ঝুপড়ি ঘরটাতে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে রইলাম এবং সুযোগ বুঝে একটা ভিডিও করলাম। বাকিটা তো সবাই জানেনই।’
একনাগাড়ে এতগুলো কথা একসাথে বলে রীতিমতো হাঁপিয়ে গেছি।

হামিদ সাহেব জলের গ্লাস মুখের সামনে ধরে বললেন, ‘এত তাড়াহুড়ো কিসের? আস্তেধীরেও তো বলা যায়। কেউ তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। নেও পানি খাও।’

আমি ঢকঢক করে কয়েক ঢোক পানি গিলে ফেললাম। এখন কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছি।

মানুষটার হাতে ট্রে ভর্তি নাস্তা দেখে মনে পড়ে গেল সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি। অবশ্য এখনো বিছানা ছাড়া হয়নি, ফ্রেশ হওয়া তো দূরের কথা। তাই চাইলেও কিছু খেতে পারবো না।

বিস্কুট মুখ পুরে মিতুর ভাই আমায় উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, ‘আজ কিন্তু আপনাদের দাওয়াত রইলো আমাদের বাসায়। অবশ্যই যেতে হবে। না গেলে ভীষণ কষ্ট পাবো।’

আমি শুধু সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালাম। মনে মনে বললাম, ‘যেতে তো হবেই, তবে জামাই আদর নিতে নয়৷ এক বান্ধবীর কেসের ইতি ঘটলো, আরেকজনের ব্যবস্থাও তো করতে হবে। তাই না!’

যাওয়ার আগে মিতু শেষবারের মতো প্রশ্ন করলো, ‘আচ্ছা আপনার নামের এইচ এম কথার মানে কী?’

আমি হাসতে হাসতে জবাব দিলাম, ‘কিছুটা নাহয় রহস্য থাকলো। সবটা জেনে গেলে তো কোনো আকর্ষণ থাকলো না। তাই না?’

‘তা অবশ্য ঠিক।’

‘হুম।’
.

মিতুরা চলে যাওয়ার পরে হামিদ সাহেব কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠলেন, ‘এক ঢিলে দুই পাখি মরলো। তাই না? লাভটা শেষমেশ তোমারই হলো।’

‘দুই পাখি মানে? কিসের লাভ হলো?’

‘পাঁচ বছর আগে শেষ হয়ে যাওয়া একটা কেসের মীমাংসা করলে, আবার বিয়ের জন্য পাত্রীও পেয়ে গেলে। এক কাজে দুই কাজ। মন্দ কী?’

‘ভালো-মন্দ বুঝি না। আর মিতু অলরেডি এনগেজড, ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি রাস্তা থেকে সরে গেলে সেই ছেলেকেই বিয়ে করবে।’

কথাটা শুনে হামিদ সাহেবের মুখ পাংশুবর্ণ ধারণ করলো। মিতু এনগেজড এই কথায় ওনার মন খারাপ করার কী আছে সেটা বুঝতে পারলাম না। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললাম, ‘আপনার একটা কাজ আছে।’

‘কী কাজ?’

‘আমার যতটুকু করার ছিল করেছি। বাকিটা আপনি বুঝে নিবেন। হ্যাঁ, হাশমত ব্যাপারি ধরা পড়েছে ঠিকই, তবে সেটা চোরাকারবারের কেসে। ইমলির বিষয়টা এখনো সামনে আসেনি কিন্তু। যেহেতু কোনো কেস হয়নি আগে তাই আপনাকে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে একটা কেস করা যায় কিনা সেটা দেখতে হবে।’

উনি শুধু ‘আচ্ছা’ বলে মাথা ঝাঁকালেন।
.

আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া পর্ব সেরে ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম। ‘ফাইনালি এবার তাহলে আমার ছুটি’ কথাটা বলে মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
গোছগাছের এক পর্যায়ে ডায়েরিটা খুললাম৷ কেসের বাকি বিবরণী রাতেই লিখে রেখেছি। এখন শুধু একবার চোখ বুলিয়ে নিলেই হলো।

ডায়েরিটা খুলতেই দেখলাম একটা শব্দ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে সেখানে ‘ধন্যবাদ’।
হাতের লেখাটা আগেও কোথাও দেখেছি মনে হলো। খুব যদি ভুল না হয়ে থাকি তবে এটা ইমলির লেখা। কিন্তু ধন্যবাদ লেখার কারণ কী? তাহলে কি অবশেষে ইমলির আত্মা মুক্তি পেয়েছে?

আমি আনমনে হাসলাম। তারপর দেয়ালের যে জায়গায় ইমলির ছবিটা ভেসে উঠেছিল সেখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। শূন্যে কথা ছুঁড়ে দেওয়ার মতো করে প্রশ্ন করলাম, ‘আপনি খুশি তো?’

ওপাশ থেকে কোনো জবাব এলো না। অবশ্য জবাব আসার কথাও না। আমি আবারও আপনমনে বিড়বিড় করলাম, ‘আপনার উপস্থিতিটা কিন্তু আমার ভালোই লাগছিল ইমলি। সময় সুযোগ বুঝে নাহয় আবার গল্প করতে চলে আসবেন, কেমন! হাহাহা…’
.
এবার আমার ঘরে ফেরার পালা। হামিদ সাহেব যাবেন কিনা জানি না, তবে আমার যেতেই হবে। আর সময় নষ্ট করতে চাই না। কাল সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বো।

ডায়েরিটা ব্যাগে তোলার আগ মুহূর্তে কী মনে করে আবার বের করলাম। চটজলদি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে সবশেষে লিখে দিলাম, ‘দ্য কেস ইজ ফিনিসড’।

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে