#শেষ_পরিণতি
(সিজন ২ পর্ব ৮)
আমি হাঁটতে হাঁটতে নীলিমার রুমের সামনে চলে যাই। সেখানে গিয়ে শুনতে পাই রাজন নীলিমার উপর বাজে ভাষা ব্যবহার করে চিৎকার চেঁচামেচি করছে।
রাজনকে একটা পর্যায়ে বলতে শুনলাম,
তুবার চেহারা তোমার মত সুন্দর না হলেও ও আমার কিংবা আমার পরিবারের কোন ক্ষতি চায়না। চেহারায় সুন্দর হলেই হয়না নীলিমা, মনটাও সুন্দর হওয়া লাগে৷ সাথে সাথে নীলিমা বলে, তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও রাজন, আর কখনো আমার রুমে আসবেনা। আজ তুমি তুবাকে আমার সামনে ভালো বললে.. আছে টা কি ওর! তোমার জন্য ও-ই ঠিক আছে।
বুঝতে পারলাম হয়ত রাজন নীলিমার রুম থেকে এখন ই বের হবে। আমি দ্রুত একটা পর্দার আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। রাজন রাগন্বিত চেহারা নিয়ে বের হয়ে যায়। আমি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকি।
রাজন খালি গায়ে একটা থ্রি কোয়ার্টার-প্যান্ট পরা অবস্থায় নীলিমার রুম থেকে বের হলো৷ সে দ্রুত পায়ে হেটে চোখের আড়াল হয়ে গেলো। নীলিমা ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো৷ আমার পেটের ভেতরে কেমন যেন লাগছিলো। বাবুর নড়াচড়া অনুভব করতে পারছিলাম। অন্যরকম একটা শান্তি কাজ করছে। মনে হচ্ছে পেটের ভেতর থেকে আমার বাচ্চাটা আমাকে শান্তনা দিয়ে বলছে মা শান্ত হও৷
তবে আমি শান্ত হতে পারছিনা। আমি হেঁটে আমার রুমে চলে গেলাম। মাকে ঠেলে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললাম মা, আমার শ্বাশুড়ি আম্মা দেখলাম জেগে গেছে৷ ওনার বোধ হয় কষ্ট হচ্ছে। তুমি আমার শ্বাশুড়ি আম্মার কাছে আজ রাতটা থাকো৷
মা কি বুঝলেন না বুঝলেন জানি না। সে শোয়া থেকে উঠে কোনো কথা না বলে চলে গেলো। আমি আমার রুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম। বারান্দায় চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে পড়লাম কিছু হিসেব নিকেশ মিলাতে।
রাজনের একটা খারাপ ভিডিও সামনে আসার পরে আমি ওর প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা পোষন করে বসে আছি।
রাজন আমার ভালোবাসা থেকে বহুদূরে ছিটকে গেছে। কিন্তু এখন যদি নীলিমার ভেতর থেকেও এরকম কিছু বের হয়!!
নিজের মনকে শান্তনা দিলাম-
পৃথিবী উলটে যাক নিজের বাচ্চার সুস্থতার কথা চিন্তা করে আমাকে সুস্থ থাকতে হবে।
চোখ বুজলাম…
রাজন আমাকে কোনো জিনিস উপহার হিসেবে দিলে সেটা যদি অন্য কারো হাতেও দেখতো খুব রাগ করতো।
কিন্তু সেদিন নীলিমা যখন আমাকে উপহার দেয়া কালো শাড়িটি পড়লো, রাজন কোনো রাগ না করে বরং ওর প্রশংসা করলো।
এরপর নীলিমা চাকরীর কথা বলে বাইরে গেলো.. ড্রাইভারকে দিয়ে আসতে বললাম ও বললো রিকশায় যাবে কিন্তু গেলোনা। বরং গেলো রাজনের সাথে।
আমার সুস্থ অবস্থায় রাজন সারাদিন আমাকে ফোন দিত। ফোন দিয়ে না পেলে আমাকে বকা দিত৷ গর্ভাবস্থায় রাজনের কোন কেয়ার এটেনশন ই আমি পাইনি। বিষয়টা এতদিন আমার গায়ে লাগেনি৷ কারণ আমার মা শ্বাশুড়ি মা সবসময় সাথে ছিলেন। নীলিমাও অনেক কেয়ার করেছে। তবে আজ ভাবতে বসে দেখলাম রাজনের অংশটায় শুধুই শূন্যতা। একটা ফল কিনে এনেও আমার হাতে দেয়নি। ভালোবাসি বলা দূরে থাক কখনো জিজ্ঞেস ও করেনি আমি খেয়েছি কিনা।
রাজনের ঐ ভিডিও আমার কাছে আসার পরে রাজনের কেয়ার আমার কাছে অসহ্য লাগতো। এজন্য বিষয়গুলো আমি খেয়াল করিনি৷নীলিমা সেদিন আমাকে হাতজোড় করে বলছিলো একটা শর্ত মেনে নিলে আমরা সারাজীবন একত্রে থাকতে পারবো।
কথাটা এখন আমার কাছে বোধগম্য হয়েছে ও কি বলতে চাচ্ছিলো।
চোখ বুজে থাকার পরও চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে আমার।
আহ – রাজন.. কতটা বিশ্বাস- ভালোবাসা দিয়েছিলাম ওকে। কিন্তু ও যার কাছে বারবার অপমানিত হয়েছে আমার অগোচরে তার সাথেও সম্পর্ক গড়ে তুলছে.. এ সম্পর্ক কত গভীর তা আমার বোধগম্য নয়৷ আজ রাজন আর নীলিমার কথাবার্তাগুলো শোনার পরে একজন বোকা মানুষও বুঝতে পারবে সবটা। মাথার ভেতরটা শূন্য হয়ে আছে।নীলিমা, বোনের সংসার নষ্ট করার জন্য কেনো ও উঠেপড়ে লাগলো! যখন কেউ পাশে ছিলোনা। ওকে বাঁচার জায়গাটা আমি ই দিয়েছিলাম।
শ্বাশুড়িমা সুস্থ থাকলে এসব জানতে পারলে মনে হয় হার্ট এট্যাক করত। কারণ তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। আমি কি অন্ধের মত ছিলাম। তিনি বার বার নীলিমার বিরুদ্ধে কথা বললেও আমি আমলে নেইনি।
হঠাৎ করে শ্বাশুড়িমার কথা মাথায় আসায় মনে খটকা লাগলো..
শ্বাশুড়ি মা নীলিমাকে পছন্দ করতেন না। তাহলে নীলিমা কি আসলেই ডাক্তারকে টাকা খাইয়ে ভুল ঔষধ সেবন করিয়েছে মাজেদা বেগম কে?
আমার ড্রয়ার থেকে টাকা গায়েব হওয়ার রহস্যটা হালকা করে হলেও মাথায় ঢুকলো। তবে এসবই আমার ধারণা।
আমার পৃথিবী যখন চারদিক থেকে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসছিলো আমি আবারো অনুভব করলাম পেটের ভেতর নড়াচড়ার অনুভূতি। একজন নারীর মা হয়ে ওঠার পরম অনুভূতি।
.
.
.
রাজনের পিঠে বুকে ঠোঁটে বেশ কিছুদিন ধরে ফুঁসকুড়ির মত দেখা যাচ্ছে। ডাক্তার দেখাবে দেখাবে করে দেখানো হয়না। তবে সমস্যা এত বেড়ে গেলো যে আজ আর না এসে পারলোই না। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ রিয়াজের কাছে এসেছে সে।
ডাক্তারের সাথে রাজন সবকিছু খুলে বলার পরে সে ডাক্তার জানালো তার সিফিলিস নামক একটি রোগ হয়েছে। রাজনের দিকে ডাক্তার রিয়াজ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো.. আপনি কি ব্রোথেলে যাওয়া আসা করেন? রাজন না বোধক উত্তর দেয়, জানায় সে বিবাহিত৷
ডাক্তার বলেন, এটি একটি যৌনরোগ। আপনার বিশেষ অংগেও এরকম ফুঁসকুড়ি উঠেছে তাইনা? রাজন উপর নিচ মাথা দুলিয়ে জানায় হ্যাঁ। ডাক্তার বলেন, যারা ভিন্ন ভিন্ন শয্যাসঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হন, তাদের সিফিলিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। সাধারণত আক্রান্ত কারও সঙ্গে যৌ’ন মিলনের ২-৪ সপ্তাহ পরে এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
রাজন বলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাবো কিভাবে?
ডাক্তার জানায় কিছু ঔষধ লিখে দিব সেটা নিয়মিত সেবন করতে হবে৷ এবং সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তো বটেই অনিরাপদ মিলন করা যাবেনা কখনোই৷ মাইন্ড করবেন না এমন ও হতে পারে আপনার স্ত্রী হয়ত বাইরে অনেকের সাথে শারিরীকভাবে মেলামেশা করে যাদের এ রোগটি আছে। সেখান থেকে আপনার স্ত্রীর শরীরে এবং পরে আপনার শরীরে এসেছে।
রাজন কোন জবাব না দিয়ে চুপ থাকে।
রাজনকে ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দেয়।
চেম্বার থেকে বের হয়ে রাজন রাস্তায় হাঁটতে থাকে আর ভাবতে থাকে নীলিমার ব্যপারে,
নীলিমা এর আগে অনেক পুরুষের সাথেই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মিলিত হয়েছে। সেখান থেকেই হয়ত নীলিমার শরীর এবং পরে তার শরীরে এসেছে এ রোগটি। তুবার দেহে এমন কোনো রোগ নেই৷ গত এক বছর ধরে ওরা একসাথে।
রাজন আস্তে আস্তে বুঝতে পারে সে কতবড় ভুল করেছে। রূপের মোহে নীলিমার সাথে মিলিত হয়েছে সে। কিন্তু শুধুমাত্র চেহারা একটু খারাপ ভালো ব্যবধানে তুবা এবং নীলিমার সাথে মিলিত হওয়ার মাঝে আর কোনো তফাৎ নেই। একই রকম অনুভূতি। তাও ৫/ ১০ মিনিটের সাময়িক অনুভূতি। এটুকুর জন্য এমন কিছু কেনো করলাম! যাতে আমার সামাজিকভাবে পারিবারিকভাবে ছোট হতে হবে! নীলিমা বৌ হওয়ার বায়না ধরেছে। নীলিমাকে বৌ না করলে ও সবার কাছে যখন রাজনের সব কথা ফাঁস করবে তখন কতবড় সমস্যা হবে!
কপাল চাপড়াতে থাকে রাজন। সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে তুবা ই তার জন্য সঠিক মানুষ, তুবা তার এবং তার পরিবারের মঙ্গল চেয়েছে সব সময়।
কিন্তু নীলিমা অনেক স্বার্থপর। তুবা কোনদিন রাজনের মুখে মুখে তর্কও করেনি। কিন্তু নীলিমা! ওকে রুম থেকে অপমান করে বের করে দিয়েছে।
রাজন অপরাধবোধ নিয়ে ভাবতে থাকে- সে এখন কি করবে? তার কি তুবার কাছে সব স্বীকার করে মাফ চাওয়া উচিৎ? কিন্তু সে কিভাবে এই মুখ নিয়ে তুবার সামনে দাঁড়াবে?
.
.
রাজনের বাবাকে কল দেয় তুবা।
সে তার নিজের খারাপ ব্যবহারের জন্য মাফ চায় এবং পুনরায় বাসায় আসার অনুরোধ জানায়৷ রাজনের বাবা জানান, সে মোটেই রাগ করেন নি। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের একটু মেজাজ বিগড়ে থাকে এটা সে ভালোভাবেই জানে।
এদিকে রাজন যখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিজের ভুল কাজের জন্য অনুতপ্ত হচ্ছে..
তখন তুবা সব দুঃখ কষ্ট অবিশ্বাসের চাপা কষ্টকে চাপা রাগের আগুনে পরিণত করে ভেবে চলেছে.
রাজন – নীলিমা.আমার ভালোবাসার দুই প্রান্ত ছিল।
মন ভাঙ্গার শাস্তি/ বিশ্বাস ভাঙ্গার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দিলে খুব কম পরে যাবে। ওদের এমন শাস্তি দিবো!! এমন শাস্তি!!! বলে তুবা তার হাতে থাকা পানির গ্লাসে জোরে চাপ দেয়। গ্লাসটি ভেংগে তুবার হাত কেটে রক্ত ঝড়তে শুরু করে। ওর চোখের রাগ ওঠা অশুরের মত টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে।
তুবা অস্ফুট স্বরে বলে..
এর শেষ পরিনতি কি হয়?
যাস্ট ওয়েট এন্ড সি…
(চলবে….)
লেখিকাঃ Tuba Binte Rauf