#শেষ_পরিণতি
( সিজন ২ পর্ব ৬)
_________________
যাইহোক রাজন আমাকে খুন করতে চাইবে এটা আমি ভুলেও ভাবিনি।
কিন্তু না ভাবলেও এটাই সত্যি যে, আমি হয়ত আর কয়েক সেকেন্ড বেঁচে থাকবো।
তার থেকে কষ্টের কথা এটা হলো যে, আমার মৃত্যুর কারণ “রাজন” যাকে আমি নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতাম।
নিশ্বাস ফুরিয়ে আসায় গলা থেকে গোঙানির শব্দ বের হচ্ছে আমার।
তবুও নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছি আমি।
শেষ পর্যন্ত পারবো কি না জানি না।
তবুও বাঁচার লড়াই করে যাচ্ছি আমি।
মার ধাক্কাধাক্কিতে আমি লাফিয়ে উঠলাম।
রীতিমতো হাঁপাচ্ছি আমি।
মা আমাকে বললেন,
-কি হয়েছে তুবা? ঘুমের ঘোরে ওভাবে গোঙাচ্ছিলি কেন?
মার কথা শুনে চারদিক তাকাই আমি। স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলি, “যাক এটা স্বপ্ন ছিলো। ” কিন্তু স্বপ্ন এতোটা বাস্তবিক ছিলো যে,এখনো স্বাভাবিক হতে পারছি না। গলাটা শুকিয়ে এসেছে আমার।
আমি মাকে বললাম,
-এক গ্লাস পানি দিবে?
মা টেবিল থেকে গ্লাসভর্তি পানি এনে আমাকে দিলো। আমি ঢকঢক করে সবটুকু পানি নিমিষে শেষ করে ফেললাম।
মা পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?
আমি মাথা নেড়ে হ্যা-সূচক জবাব দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে শুরু করি।
মা আমাকে স্বান্তনা দিয়ে বলেন,
-আরে বোকা মেয়ে স্বপ্ন দেখে কেউ এভাবে কাঁদে? স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়।
আমি মাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
মাকে কি করে বোঝাই, স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয় সেটা আমি জানি, কিন্তু স্বপ্নের চেয়েও ভয়ংকর আমার বর্তমানের বাস্তবটা।
.
.
.
( গল্পের এই অংশটুকু তৃতীয় পুরুষের বলা)
মাজেদা বেগম ও তুবা অসুস্থ থাকায় বেশ সুবিধা হয়েছে রাজন ও নীলিমার।
মাজেদা বেগমকে মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে, আর রাতে দেখভালের জন্য তুবার কাছে থাকছে তার মা।
সেই সুযোগের একটুও হাতছাড়া করছে না রাজন। রাত একটু গভীর হলেই চুপি চুপি সে নীলিমার রুমে চলে যায়।
তারপর মেতে ওঠে নোংরামিতে।
আজও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না।
রাত একটু গভীর হতেই রাজন নীলিমার রুমে চলে যায়,
নীলিমাও ঠিক এই সময়ে সেজেগুজে প্রতিক্ষায় থাকে রাজনকে সবটা উজাড় করে দিয়ে খুশি করিয়ে দেয়ার।
রাজন যখন নীলিমার রুমে ঢুকলো বেলীফুলের এয়ারফ্রেশারের কড়া ঘ্রাণ তার নাকে এসে লাগলো।
সে দেখলো, নীলিমার রুম জুড়ে লাল,হলুদ, রঙের লাইট জ্বলছে। লাইটগুলোর মৃদু আলোয় রুমটা অনেক মোহনীয় হয়ে উঠেছে।
মেঝেতে ছোট ছোট অনেকগুলো মোমবাতি দিয়ে বড় করে লেখা হয়েছে “লাভ ইউ রাজন”
রাজন আরও দেখলো,
শাড়ি গয়না পরে, মুখের উপর লম্বা করে ঘোমটা টেনে, সদ্য বিয়ে করে আনা নতুন বউয়ের মতো বিছানায় বসে আছে নীলিমা।
রাজন নীলিমার পাশে বসে বলে,
-আজ এতো আয়োজন? আর তুমি এভাবে নতুন বউয়ের মতো সেজেছো কেন?
রাজনের প্রশ্নের উত্তরে নীলিমা ঘোমটা তুলে বলে,
-আমার কি বউ সাজার শখ হওয়াটা পাপ? আমি কি কারও স্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি না?
নীলিমার প্রশ্নে রাজন একটু অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করে বলে,
-না নীলিমা, আমার বলার উদ্দেশ্য এটা ছিলো না। আসলে….
-আসলে কি রাজন? এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতোদিন? তুমি আমাকে ভালোবাসো কিন্তু এই বাড়িতে তার মূল্য কি?
তুবা যদি তোমার স্ত্রী হিসেবে, বাড়ির মালিক হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে, তাহলে আমি কেন তোমার ভালোবাসা হয়ে সেই জায়গাটা পাবো না?
কেন আমাকে এই বাসায় একজন আশ্রিতার মতো থাকতে হবে?
-আমি তোমার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি নীলিমা।
কিন্তু বর্তমানে বাসার যেই পরিবেশ, এখন আমাদের বিয়ের কথা বলাটা মোটেও ঠিক হবে না।
মা অসুস্থ, তুবাও প্রেগন্যান্ট। ও যদি আমার সিদ্ধান্ত শুনে আরও অসুস্থ হয়ে যায় বা আমার নামে মামলা করে তখন কি হবে ভেবে দেখেছো?
রাজনের কাঁধে হাত রেখে নীলিমা বলে,
-তুবাকে আমি ছোটকাল থেকে চিনি। ও এমনটা করবে না। তাছাড়া আমরা তো ওকে জানিয়েই বিয়েটা করবো।
বাকি রইলো তোমার মার অসুস্থতার কথা!
ভেবে দেখো রাজন, এটাই সুবর্ণ সুযোগ।
আন্টি সুস্থ অবস্থায় কখনোই আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না। এখন যদি আমরা একবার বিয়েটা করে ফেলি, পরবর্তীতে একসময় না একসময় আন্টির মেনে নিতেই হবে।
-কিন্তু তুবা বিষয়টা কিভাবে নেবে? আমার মনে হয় না ও কখনো সম্মতি দেবে।
পরে যদি উল্টো রিয়েক্ট করে বসে তখন কি করবো?
-তুবার মনটা অনেক নরম। ও একটা ভালো মেয়ে। আমাকে ভালোওবাসে খুব। আমাদের এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে।
আমি বোনের ভালোবাসার দাবী নিয়ে যদি কান্নাকাটি করে বলি ও আমাকে ফেরাতে পারবে বলে মনে হয় না।
এরপর তোমার উপর বেশি প্রেসারও পড়বে না।
শুধু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে আমাদের।
নীলিমার কথা শুনে রাজন বলে,
-তুমি যেমন সুন্দরী তেমন বুদ্ধিমতীও।
আমরা না হয় দু’দিন সময় নিয়ে ভাবি কিভাবে কি করা যায়। এরমাঝে ভালো কোনো সমাধান পেতেও পারি।
নীলিমা রাজনের কথায় সম্মতি জানিয়ে চুপ হয়ে যায়।
রাজন পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নীলিমাকে বলে,
-রুমটা তো অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছো।
তো বাসর ঘর যখন সাজিয়েই ফেললে এখন বাকি কাজটাও সেড়ে ফেলি?
নীলিমা মুচকি হেঁসে বলে,
-আমি কি বাঁধা দিয়েছি কখনো?
(গল্পের বর্ণনা প্রথম পুরুষে)
আজ আমি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পরলাম। আজকে আমার শ্বশুর মশাইয়ের আসার কথা।
জরুরী কাজে তিনি বেশ কয়েকদিন দেশের বাইরে ছিলেন।
গতকাল রাতেই তিনি দেশে ফিরেছেন।
আজ সকালে শ্বাশুড়িমাকে দেখতে আসবেন, সেটা আমাকে গতকাল রাতেই জানিয়ে রেখেছিলেন।
আমিও সেই মোতাবেক সকাল সকাল উঠে, আমার শ্বশুরের জন্য নিজ হাতে তার পছন্দের কিছু খাবার তৈরি করছি।
আমার শ্বশুরও আমাকে অনেক স্নেহ করেন।
আমার সাথে রাজনের বিয়ের কিছুদিন পরে আমার শ্বশুর কোন একটা কারণে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দেন।
এরমাঝে আমার শ্বাশুড়িও মানিসিকভাবে সুস্থ হয়ে গেলে আমার শ্বশুর তার কাছে পুনরায় ফিরতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু আমার শ্বাশুড়ি রাজি হন নি,
পুরোনো ব্যথাটা হয়তো এখনো ভুলে উঠতে পারেননি তিনি।
তবে বর্তমানে আমার শ্বশুরমশাই তার ভুল বুঝতে পেরে একদম মাটির মানুষ হয়ে গেছেন।
.
.
.
রান্নার কাজ শেষ আমার।
বুয়াকে সবকিছু গোছাতে বলে ডাইনিংরুমে বসতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
কলিংবেলের শব্দ শুনে নীলিমা এগিয়ে যায় দরজা খুলতে।
আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলি,
-হয়ত বাবা এসেছেন , আমি খুলছি।
মাথায় ওড়না টা টেনে দিয়ে আমি দরজা খুলে দেই।
দরজা খুলে দেখি, বাবা অনেকগুলো শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি বাবাকে সালাম দিয়ে ভেতরে আসতে বলি।
বাবা ভেতরে ঢুকে ব্যাগগুলো সোফার উপরে রেখে বলেন,
-এসবকিছু শুধু তোমার জন্য। সুখবর পাওয়ার পরে তো দেখতেই আসতে পারিনি।
সোফার উপরে থাকা ব্যাগ থেকে একটা ব্যাগ আমার হাতে দিয়ে বললেন,
-এটা আমার দাদুভাইর জন্য।
এরপর ই জিজ্ঞেস করলেন,
-মা! তোমার শ্বাশুড়ি কোন রুমে আছে?
আমি হাত থেকে ব্যাগটা রেখে বাবাকে নিয়ে শ্বাশুড়িমার রুমে গেলাম।
শ্বাশুড়িমার হাত ধরে বাবা বসে আছেন।
বাবার দু’চোখে পানি..
কিন্তু আমার শ্বাশুড়িমা’র চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না, বাবা আসাতে তিনি খুশি হয়েছেন।
বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি, তিনি শ্বাশুড়ি মাকে একান্তে অনেক কথা বলতে চাচ্ছেন। তাই আমি তাদের একা রেখে বের হয়ে আসি আমি
সোফার উপরে রাখা ব্যাগটা হাতে নিই আমি।
আমার বেবির জন্য বাবা কি এনেছেন দেখার জন্য মনটা উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।
ব্যাগ থেকে জিনিসগুলো বের করে খুশিতে মনটা ভরে যায় আমার।
ব্যাগে ছোট বেবিদের জামা কাপড়সহ হরেকরকমের খেলনা।
সাথে ছোট ছোট দুইটা জুতাও আছে।
এসব দেখে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।
ছোট ছোট জিনিসগুলো আমি বুকের সাথে জড়িয়ে ধরি।
চোখ বন্ধ করে একটা অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করছি আমি।
.
.
.
হঠাৎ বাবা ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আমার নাম ধরে ডাকে।
আমি সবকিছু রেখে দ্রুত পায়ে শ্বাশুড়িমার রুমের দিকে এগিয়ে যাই।
রুমে ঢুকতেই বাবা আমাকে একটা ঔষধের পাতা দেখিয়ে বলেন,
-এখানে এই ঔষধ কি কিভাবে এলো?
আমি বললাম,
-ডাক্তারই তো এটা মার জন্য দিয়েছিলেন।
বাবা অবাক হয়ে বললেন,
-ডাক্তার এই ঔষধ কেন দেবেন? এই ঔষধ মানুষকে ধীরে ধীরে সারাজীবনের জন্য প্যারালাইজড করে দেয়। আর তোমরা এই ঔষধ এতোদিন ধরে মাজেদাকে খাইয়ে যাচ্ছো!
ওহ মাই গড! কোন ডাক্তার এসব দিয়েছেন? ডাকো তাকে।
বাবার কথা শুনে আমি কেমন যেন আকাশ থেকে পড়লাম।
আমি বাবাকে ঔষধের প্যাকেট দেখিয়ে বললাম,
-এই দেখুন বাবা। ঔষধের গায়ে ডাক্তারের নির্দেশনাবলীও লেখা আছে।
বাবা প্যাকেট টা না দেখেই বললেন,
-আমি প্যাকেট না, প্রেসক্রিপশন দেখতে চাই।
বাবাকে “এক্ষুনি আনছি ” বলে আমি বেরিয়ে আসি।
আমার আলমারির ড্রয়ার থেকে প্রেসক্রিপশনটা বের করার সময় আমি খেয়াল করি, প্রেসক্রিপশনের সাথে আমি বেশকিছু টাকা রেখেছিলাম, যেগুলো এখন নেই।
ড্রয়ারে ভালোভাবে খুঁজেও টাকাটা না পেয়ে আমি আরও অবাক হলাম।
আলমারির চাবিতো আমার কাছেই থাকে তাহলে টাকাগুলো কোথায় গেলো?
টাকাগুলো রাখার পর থেকে তো আলমারি আর খুলতেই হয়নি, তাহলে টাকাগুলো হারানোর কথা না।
এক দুশ্চিন্তার মাঝে আরেক দুশ্চিন্তা মাথায় ঢুকে গেলো আমার।
টাকার টেনশন আপাতত সাইডে রেখে আমি প্রেসক্রিপশন নিয়ে শ্বাশুড়ি মার রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
.
.
.
চলবে
– Tuba Binte Rauf