#শেষ_ডাইরি
#লেখক_আরিফ_ইসলাম
#দ্বিতীয়_পর্ব
আরিফের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। গত রাতে নিজের চোখে দেখা ঘটনা গুলো বার বার মনে পড়ছে। কিন্তু কী বলবে ? তার কাছে এই দেখার কোনো ভিত্তি নেই যে । মির্জা হারুন অর রশিদ আরিফের হাব ভাব দেখে তার দিকে ড্যাড ড্যাব করে তাকালো । “_আরিফ তোর কোনো আপত্তি নেই তো?
মির্জা হারুন এর কথা শেষ হতেই সালেহা বেগম বলে উঠেন। “_ আরিফের আপত্তির কী আছে? বাবা মায়ের কথা ও অবশ্যই রাখবে।
আরিফ এই পরিস্থিতিতে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। বলতে যেয়েও বলতে পারছে না কিছু। কারন প্রমান তো নেই তার কাছে। হতে পারে সে মনের ভ্রমে এসব দেখেছে। আরিফের চুপ করে থাকা দেখে মির্জা সাহেব মৃদু হাসলেন । “_চুপ থাকা মানেই ও রাজি আছে !
সালেহা বেগম মির্জা সাহেবের গায়ে ধাক্কা দিয়ে মুচকি হাসলেন । আরিফ চুপচাপ খাওয়া সেরে নিজের কক্ষ ঢুকে । মাথায় তার হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আদৌও কি গত রাতে মা দেখেছে এটার কোনো সত্যতা আছে কী ?
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে ঈশিতা। ভাবীকে দেখে আরিফ নড়েচড়ে বসে। “_ ভাবী কিছু বলবে?লাজুক হাসি দিয়ে ঈশিতা বিছানায় আরিফের পাশে লেপ্টে বসে পড়ে। “_ কী দেওরা! তুমিও তো দেখছি আমারে মনে মনে চাও । না হলে ওখানে আপত্তি না দেখিয়ে চুপ হয়ে গেলে যে।
আরিফ বিরক্তিকর চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ঈশিতা ভাবীর দিকে। “_ ভাবী দেখো আমি এখনো আমার মত জানায় নি। একটু সময় লাগবে আমার।
ঈশিতা ভ্রু কুঁচকে আরিফের দিকে হিংস্র চাহনি তে তাকায়। ঈশিতার চাহনিতে আরিফের হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে। এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করছে। ভয়ে ভীতু হয়ে যেনো বেলুনের মত চুপসে গেছে । “_লক্ষি ছেলের মতো তোমার বাবা কে এখন গিয়ে বিয়ের জন্য হ্যা বলে দিবে। না হলে আমি তাদের বলবো কাল রাতে তুমি আমার সাথে জোর পূর্বক স*ঙ্গম করেছো। তখন কিন্তু বিয়ে করতে হবে সাথে সম্মান ও যাবে ।
নম্র ভদ্র ভেবে আসা ভাবীর মুখে এমন কথা শুনে আরিফ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশিতা আরিফের কপালের চুল সরিয়ে দিয়ে ঘাড়ে চুমু এঁকে দিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়। আরিফ নির্বাক নয়নে এক স্থানে ঠাঁই বসে আছে। এ যেনো সব সপ্নের মতো দেখছে। এক রাশ নিরবতা সাথে নিয়ে ঘরে বসে পাহাড় সমান চিন্তা নিয়ে বসে আছে। হঠাৎ মনে পড়লো সেই ডাইরিটার কথা। নিরবতার অবশান ঘটিয়ে দ্রুত বিছানার নিচ হতে ডাইরিটা বের করে। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে দেখে ডাইরির প্রথম পৃষ্ঠা উল্টায় । বাহ্ অনেক সুন্দর হ্যান্ড রাইটিং।
সিয়াম মির্জা বরাবরই ক্লাস টপার ছিলো। সুন্দর হাতের লেখার জন্য কয়েকবার পুরষ্কারও পেয়েছিলো সে। ভাইয়ের কথা হঠাৎ মনে পড়ায় চোখের কোণে পানি জমে গেছে। অজান্তেই দুই ফোটা পানি ঝড়ে ডাইরিতে পড়ছে। যেহেতু পার্সোনাল ডাইরি, তাই প্রথম পৃষ্ঠায় সূচনায় নিজ পরিবার সম্পর্কে লিখেছে ।” _বাহ্ আমার কথাও দেখি লেখা আছে।
বিড়বিড় করে বলে আরিফ মির্জা। উত্সাহ নিয়ে পড়ের পৃষ্ঠা উল্টায়। সেখানে একটা মেয়ের কথা বলেছে, কিন্তু নাম লেখা নেই।
*আজ একটা মেয়ের সাথে দেখা হয়েছে আমার। মায়ায় ভরা চাহনি তার। যদি আবার একদিন দেখা পেতাম তাহলে বিয়ের প্রস্তাব দিতাম।
ভাইয়ের এমন আবেগ ময় লিখনি দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে আরিফ মির্জার। পরের পৃষ্ঠা উল্টায়।
*আজও তার সাথে দেখা হয়েছিল। তার নামটা অনেক সুন্দর। ঈশিতা পারভিন। অনেক রোমান্টিক নামটা ।
আরিফ চমকে যায় । “_ তাহলে ঈশিতা ভাবীকেই দেখেছিলো সিয়াম ভাই ।
পরের পৃষ্ঠায় লেখা আছে * আজ আমি অনেক খুশি। তাকে প্রেম নিবেদন করেছি । সে রাজিও হয়েছে।
এভাবেই পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিদিনের প্রেম কাহিনী লেখা আছে ডাইরিটাতে । পরিবার কে না জানিয়ে বিয়ে করার কথাও লেখা আছে সেখানে।
* আজ আমি জিবনের সব থেকে বেশি আনন্দ পেয়েছি। কারন আজ আমার পরিবার ঈশিতা এবং আমার বিয়ে মেনে নিয়েছে।
এতো টুকু বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়লো আরিফ মির্জা । পরের পৃষ্ঠা উল্টাতেই আরিফের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল । রক্তিম কালি ( রক্ত মাখা হাতে কলম ধরে লিখেছে, রক্তের স্রোতে হয়তো কলম ভিজে ডাইরির খাতায় পড়েছে) রক্তের বিন্দু দিয়ে লেখা কিছু কথা।
*আমি না বুঝে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। হয়তো এই ভুলের মাশুল আমার পরিবার কে পেতে হবে। আমার স্ত্রী ঈশিতা কোনো সাধারণ মানুষ নয়। আজ আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরে ঘরের সব এলোমেলো অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে যায়।কিছুর আভাস পেয়ে নিঃশব্দে ঘরে ঢুকতে দেখি ঈশিতা একটা রক্ত মাখা লাশের পাশে বসে আছে। ঈশিতার মায়াবী মুখ খানা তখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। মুখে তার তাজা রক্ত। মৃত মানুষের ঘারে কামড়ানোর চিহ্ন ফুটে উঠেছে।আমাকে সেখানে দেখে ঈশিতা ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকায়। ভয়ে আমার শরীর অবশ হয়ে গেছে। ঈশিতা বিকট হাসি দিয়ে আমার পানে তাকিয়ে আছে। ধীর পায়ে আমার দিকে অগ্রসর হয়। আমি তার থেকে বাঁচতে এখন লুকিয়ে আছি । অনেক কষ্টে আমার ব্যাগে থাকা ডাইরিতে কথা গুলো লিখলাম। আমার হাত কাঁপছে, হয়তো এটাই আমার শেষ লেখা ডাইরি। এরপর হয়তো আমি আর বাঁচবো না। কিন্তু আমার পরিবারের লোকদের বড় বিপদ। কেউ এই ডাইরিটা হাতে পেলে তাদের রক্ষা করেন।
ইতি
মির্জা সিয়াম।
ভাইয়ের শেষ লেখাটা পড়ে আরিফের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে । যাকে এতদিন সাধারণ মানুষ ভেবে এসেছে সে বাস্তবে কোনো পিচাশ!
বড় করে ঢেকুর তুলে বিছানায় থ মেরে বসে পড়ে আরিফ মির্জা। বাবা মাকে কিভাবে বিশ্বাস করাবে।
“_ তাদের কী এই ডাইরি টা দেখানো ঠিক হবে? যদি তারা ভয় পেয়ে যায়। কিংবা উত্তেজিত হয়ে কিছু করে দেয়। হেতে বিপরীত হতে পারে। ঈশিতা যেনো ভুলেও টের না পায় যে আমি তার আসল পরিচয় জানি।
আপন মনে বিড়বিড় করছে আরিফ মির্জা।
সেদিন রাতে একজন কেয়ারটেকার নতুন এসেছে মির্জা বাড়িতে। রাতের আকাশে গেটের পাশে বসে সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে সুখ টান দিচ্ছে। হঠাৎ নুপুরের আওয়াজে চমকে যায়। এতো রাতে নুপুরের আওয়াজ বেশ অবাকের বিষয়। মির্জা বাড়ির পিছন থেকে আসছে শব্দটা । কেয়ারটেকার রহম আলী ধীর পায়ে সেদিক পানে এগোতে থাকে। বেশ সুন্দরী এক রমনী দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।
রূপের জালে বন্দি হয়ে যায় রহম শেখ । মেয়ের নেশা বড়ই মারাত্মক। ঈশিতার পিছু পিছু ঘরে প্রবেশ করে। দরজা আটকে যায়।
সেদিন মাঝরাতে আবারো পানির শব্দ পায় আরিফ মির্জা। “_ আবারো কেউ শিকার হয়েছে ঈশিতার হাতে।
পরদিন সকালে মা সালেহা বেগম এসে আরিফের হাতে ২০ হাজার টাকা দেয় । “_ আরিফ দেখ বাবা, আমরা চাই তোর আর ঈশিতার বিয়ে আগামী দু একদিনের মধ্যেই হয়ে যাক। এখানে ২০ হাজার টাকা আছে, নিজের জন্য কিনা কাটা করে আয়।
মায়ের কথায় আরিফ মাথা নেড়ে হাতে টাকা গুলো নেয়। এখন তার মাথা গরম করলে চলবে না । মাথা ঠান্ডা রেখে বের করতে হবে ঈশিতাকে ধংসের উপায়।
তার জন্য বিয়েটা করতে হলেও করবে সে।
আরিফ চুপচাপ হয়ে গেছে। আড়ালে ঈশিতা কে অনুসরণ করে কখন সে কী করে , কোথায় যায়। দুদিন এভাবেই কেটে যায়।
বাসর ঘরে বধু সেজে বসে আছে ঈশিতা। বিয়েটা শুধু পরিবারের কয়েকজন সদস্য কে নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আরিফ দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে। ঈশিতা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে খাটের মাঝ বরাবর। কাঁচা ফুলের বাসরে আরিফ আকর্ষিত না । তার একটাই উদ্দেশ্য এই মৃত্যুর খেলা তাকে বন্ধ করতেই হবে।
ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি সারা রাত?
চলবে __
উৎসাহ দিয়ে যাবেন 😊🥀