#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৫।
আজকে একটু বেলা করেই রাবীরের ঘুম ভাঙে। যদিও এত সকাল অবধি ঘুমানোর অভ্যাস তার নেই। তবে অনেক বেশি ক্লান্ত বলে আজ আর সে উঠতে পারেনি। তবে ঘুম ভাঙার পর ঘড়িতে এগারোটা বাজে দেখে তাড়াহুড়ো করে সে উঠে বসে। এতক্ষণ সে ঘুমিয়েছে! ঐদিকের কী খবর কে জানে। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার পি.এ তাকে অনেকগুলো কল দিয়ে রেখেছে। আশ্চর্য, সে একটা কলও কী করে শোনেনি। পরে খেয়াল করে দেখে তার ফোন সাইলেন্টে ছিল। সে আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর দ্রুত তার পি.এ কে কল দেয়। পি.এ কল রিসিভ করে বলে,
‘স্যার, আপনাকে একটা খারাপ খবর দেওয়ার আছে।’
রাবীর চিন্তিত হয়ে বলে,
‘কী? ঐদিকে আবার কিছু হয়েছে?’
‘না, নতুন করে তো আর কিছু হয়নি। তবে এসব যে করেছে আমরা তার খোঁজ পেয়েছি। আমাদের গোডাউনে এমনি এমনি আগুল লাগেনি। বরং আগুন লাগানো হয়েছে। আর এই আগুনটা লাগিয়েছে সাদরাজ আহমেদ।’
রাবীরের মস্তিষ্কে নামটা পৌঁছাতেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি এই খবর কোথায় পেয়েছো?’
‘গোডাউনের দারোয়ানের কাছ থেকে। সে একজন অপরিচিত লোককে গোডাউনের ভেতরে ঢুকতে দেখেছিল। সে যখন গিয়ে তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করে, তখন নাকি ঐ লোকটা বলেছে সে আপনার লোক, আপনিই নাকি তাকে গোডাউনে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ঐ লোকের কাছে কোনো পাস ছিল না। আর দারোয়ান আপনার কথা শুনে তাকে যেতে দেয়। এখন আমার মনে হচ্ছে ঐ লোকটা নিশ্চয়ই সাদরাজের লোক। এছাড়া আর কার এত সাহস আছে বলুন।’
রাবীর ক্ষুব্ধ হয়ে বিছানায় বসে। বলে,
‘ঐ লোকটার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে?’
‘না, স্যার।’
‘আগে ঐ লোকটাকে খুঁজে বের করো। আমি উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কারোর উপর জোর করে দোষ চাপিয়ে দিতে পারব না। তোমরা ঐদিকে খোঁজ লাগাও। আমি আসছি।’
রাবীর কল কেটে দিয়ে তৈরি হয়ে নিচে যায়। তার মা আগে থেকেই খাবার টেবিলে নাস্তা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। রাবীর গিয়ে চেয়ার টেনে বসে। জিজ্ঞেস করে,
‘আমাকে আরো আগে ডাকনি কেন, মা? এগারোটার উপরে বাজে। এতক্ষণ ঘুমালে আমার আর কাজ করতে হবে না।’
তার মা খাবার বাড়তে বাড়তে বলেন,
‘প্রতিদিন তো আর ঘুমাও না, আজকে একটু ঘুমিয়েছো তো কী হয়েছে?’
রাবীর একটু দ্রুত খাচ্ছে। তার মা তখন বলেন,
‘কালকে তো মেহুল অনেক চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। আমার সাথেও কল দিয়ে কথা বলেছিল। তুমি ফোন ধরছিলে না বলে মেয়েটা কী অস্থির’ই না হয়ে উঠেছিল।’
রাবীর আলতো হাসে তখন। বলে,
‘প্রথম প্রথম তো, আস্তে আস্তে তোমার মতোই এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’
তিনি তখন ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘তোমারও এখন একটু বুঝে চলা উচিত। বিয়ে করেছো, বউ হয়েছে। এখন তোমার কিছু হলে আমরা দুজনেই কিন্তু নিঃস্ব হয়ে যাব। তাই সবকিছুতে এত জড়ানোর দরকার নেই। একটু বেছে বেছে চলো।’
রাবীর বলে,
‘মা, আমি তো চাইনা কোনো ঝামেলাতে জড়াতে। কিন্তু, চোখের সামনে যদি তুমি কোনো অন্যায় হতে দেখো, তুমি কি চুপ থাকতে পারবে? আমিও তো তাই পারি না। কেউ অন্যায় করলে আমার সহ্য হয় না। জনগণ তো আমাকে ভরসা করে তাই না, তাদের ভরসাও তো আমার রাখতে হবে।’
মা বলেন,
‘তা রাখো, সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা তোমার উপরেই নির্ভরশীল। আমাদের কথাও একটু ভেবো।’
রাবীর জবাব দেয় না। মায়ের দিকে চেয়ে মৃদু হাসে।
________
মেহুল একবার ফোনটা হাতে নিচ্ছে তো আরেকবার রেখে দিচ্ছে। মনটা তার উশখুশ করছে রাবীরকে একটা কল দেওয়ার জন্য। কিন্তু আবার ভাবছে, রাবীর নিশ্চয়ই আজকে খুব ব্যস্ত। তাকে এখন কল দিয়ে বিরক্ত করাটা কি ঠিক হবে? মেহুল নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে। কিন্তু কোনো উত্তর পায় না। ভাবতে ভাবতেই সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। রাস্তার দিকে চেয়ে দেখে একটা কালো গাড়ির সামনে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে মেহুল চিনতে পারে। কিন্তু, এই লোকটা এইসময় এখানে কেন? মেহুল তখন বাসার বাইরে যায়। রাস্তা পাড় হয়ে ওপারে গিয়ে লোকটাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি এখানে কেন?’
লোকটা মেহুলকে দেখে সালাম দেয়। বিনীত সুরে বলে,
‘স্যার বলেছেন আপনার খেয়াল রাখতে।’
‘আরে বাবা আমি তো এখন বাসাতেই আছি। এখন আপনার এখানে থাকার কী দরকার? আমি কোথাও বের হলে আপনি আমার পাশে পাশে থাকবেন, বাসায় থাকা অবস্থায় আপনাকে এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। আপনি যান।’
‘দুঃখিত ম্যাডাম, স্যারের অর্ডার ব্যতিত আমি এখান থেকে নড়তে পারব না।’
মেহুল তখন কপাল কুঁচকায়। গম্ভীর স্বরে বলে,
‘মিসেস মেহুল খান আপনাকে অর্ডার করছে, আর আপনি তার অর্ডার অগ্রাহ্য করছেন? নেতা সাহেবকে বলব কল দিয়ে। আপনার চাকরি কিন্তু শেষ।’
লোকটা ভীত সুরে বলে,
‘না না, ম্যাডাম। এমন করবেন না। আচ্ছা এক মিনিট, আমি স্যারকে একটা বার কল করে জিজ্ঞেস করে নিই।’
লোকটা সত্যি সত্যিই রাবীরকে কল দেয়। রাবীর তার কল সাথে সাথেই রিসিভ করে। জিজ্ঞেস করে,
‘কোনো সমস্যা? ম্যাডাম ঠিক আছেন তো?’
‘জি জি, স্যার। এইদিকে সব ঠিক আছে। আসলে স্যার, ম্যাডাম বলছেন আজ আমার এখানে থাকার দরকার নেই। উনি নাকি আজ বাসায়ই থাকবেন। তাই আমাকে চলে যেতে বলছেন, এখন আমি কি চলে যাব স্যার?’
‘আপনার ম্যাডাম কি আপনার সামনেই?’
‘জি স্যার।’
‘আচ্ছা।’
রাবীর তার কলটা কেটে দিয়ে মেহুলের ফোনে কল দেয়। রাবীরের কল দেখে মেহুল গার্ডের দিকে ভীত চোখে চেয়ে বলে,
‘আচ্ছা, উনি কি রেগে আছেন? কল ধরলে আবার বকবে না তো?’
গার্ড বলে,
‘না, মনে তো হয় না রেগে আছেন।’
মেহুল কলটা রিসিভ করে একটু দূরে গিয়ে। যেন তাকে বকলেও সেটা গার্ডের কানে না যায়। রাবীর বলে,
‘আপনি গার্ডকে চলে যেতে কেন বলছেন?’
‘আমি তো আজকে বাসায়ই থাকব। তাই বলছিলাম, বাসার মধ্যে থাকলে উনাকে আর এভাবে দাঁড় করিয়ে কষ্ট দেওয়ার কী প্রয়োজন?’
‘মেহুল, উনার তো এটাই ডিউটি। অলটাইম আপনার আশে পাশেই থাকবে। আমি তো এর জন্য উনাকে বেতন দিচ্ছি তাই না? এখানে কষ্ট দেওয়ার মতো কিছু নেই। যার যেটা ডিউটি সে তো সেটাই করবে।’
মেহুলের মাথায় যেন তখন কী একটা আসে। সে প্রশ্ন করে,
‘আচ্ছা, উনাকে আপনি এই কাজের জন্য মাসে কত টাকা দিবেন?’
রাবীর অবাক হয়ে বলে,
‘হঠাৎ এই প্রশ্ন।’
‘বলুন না।’
‘এই তো বিশ হাজারের মতো।’
মেহুল চমকে বলে,
‘বিশ হাজার!’
‘হ্যাঁ, কেন কম হয়ে গিয়েছে?’
‘না, কী বলেন? বিশ হাজার কম কীভাবে হয়? এত টাকা দিয়ে অযথা একটা গার্ড রেখে দিয়েছেন?’
মেহুল আবার মনে মনে ভাবে,
‘আর এই বিশ হাজার টাকাই বাড়ি ভাড়া দিতে এক সময় আমাদের হিমশিম খেতে হতো। আর উনি এই টাকা দিয়ে একটা গার্ড রেখে দিয়েছেন। বাহ, কী বড়োলোক!’
রাবীর তখন বলল,
‘আপনার সেইফটির কাছে আমার এই টাকা কিছুই না। যাকগে সেসব, এখন আপনি গার্ডের চিন্তা না করে বাসায় যান। গার্ডের যেটা ডিউটি গার্ড সেটাই করবে।’
‘আচ্ছা, আর ঐদিকে এখন সবকিছু ঠিকঠাক আছে?’
‘মোটামুটি। তবে এখন আরেক ঝামেলা লেগেছে। আগুন এমনি এমনি লাগেনি। বাইরে থেকে কেউ এসে লাগিয়েছে। এখন আমার লোকেরা ভাবছে এটা আমার বিরোধী দলের কেউ হবে। কিন্তু, প্রমাণ ছাড়া তো কিছু বলাও যাচ্ছে না। তাই এসব নিয়ে পুলিশের সাথে একটু পর মিটিং এ বসব।’
‘আচ্ছা, যাই করবেন সাবধানে করবেন। নিজের যেন আর কোনো ক্ষতি না হয়।’
‘হু, ঠিক আছে। আর হ্যাঁ, আপনার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে গার্ডের গাড়ি দিয়ে যাবেন। আলাদা ভাবে যাওয়ার দরকার নেই।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’
মেহুল তারপর কল কেটে দিয়ে বাসায় চলে আসে।
চলবে….
#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৬।
‘মি. রাবীর খান, আমার পি.এ কে ছেড়ে দাও। নয়তো তোমার পি.এ কে আমি জানে মেরে ফেলব।’
রাবীর দাঁতে দাঁত চেপে রাগী গলায় বলে,
‘আমার গোডাউনে আগুন লাগানোর সাহস হয় কী করে তোমার?’
‘প্রমান আছে? হু? আমি যে তোমার গোডাউনে আগুন লাগিয়েছি তার কোনো প্রমান আছে? আগে প্রমান দাও, তারপর কথা বলো।’
‘হ্যাঁ, সেই প্রমানের জন্যই তোমার পি.এ কে এখানে ধরে আনা হয়েছে। আর এই কাজটা আমি না, পুলিশ করেছেন।’
‘পুলিশকে দিয়ে তুমি করিয়েছো। খুব খারাপ করছো রাবীর খান। আমি কিন্তু এর শোধ নিয়েই ছাড়ব।’
সাদরাজ চেঁচিয়ে বলল। রাবীর ঠান্ডা মেজাজে বলল,
‘যদি তুমি বা তোমার লোক কিছু করে না থাকে তবে তুমি নিশ্চিন্তে থাকো, তোমার লোকের কিছুই হবে না।’
সাদরাজ কঠিন গলায় বলল,
‘আমি আমার পি.এ কে আধঘন্টার মধ্যে আমার অফিসে দেখতে চাই। আর তা না হলে কিন্তু, তোমার পি.এ আধঘন্টা পর আর এই দুনিয়াতেই থাকবে না। কথাটা যেন মাথায় থাকে।’
সাদরাজ কল কাটে। রাবীর ফোনটা চেয়ারের উপর ছুঁড়ে মারে। তার মন বলছে, এইসব কিছুর পেছনে সাদরাজের’ই হাত রয়েছে। কিন্তু, এখন উপযুক্ত প্রমানের অভাবে সে কিচ্ছু করতে পারছে না।
একজন অফিসার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। রাবীর তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
‘কিছু বলেছে?’
‘না। সে তখন থেকে এক কথাই বলছে, সে কিছু জানে না। তার স্যার কিছু করেনি।’
‘ঠিক আছে। তাকে এবার ছেড়ে দিন। প্রমান ছাড়া তো আর কিছু করা যাবে না। আগে প্রমান পায়, তারপর সব হবে।’
থানা থেকে বেরিয়ে রাবীর যখন গাড়িতে উঠে, তখনই তার ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কিছু ম্যাসেজ আসে। সে গাড়িতে গিয়ে বসে। ড্রাইভারকে বলে গাড়ি স্টার্ট দিতে। তারপর সে সেই ম্যাসেজ অপশনে ঢোকে। কিছু ছবি পাঠানো হয়েছে। রাবীর দেখে ছবিগুলো তো মেহুলের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সে একজনের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। তবে তার মুখ দেখা গেলেও তার অপর পাশের মানুষটাকে চেনা যাচ্ছে না। কারণ ছবিটা সেই ব্যক্তির পেছন থেকে তোলা। তবে এই ছবি দেখে একটা জিনিস ঠিকই আন্দাজ করা যাচ্ছে যে, ব্যক্তিটা একজন পুরুষ মানুষ। আর তার সাথে ছবিগুলোতে মেহুলের হাস্যজ্জ্বল মুখটাই দেখা যাচ্ছে। রাবীর বুঝতে পারে না লোকটা কে। সে সঙ্গে সঙ্গেই ঐ নাম্বারে কল দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে নাম্বারটাও বন্ধ। তাই সে আপাতত ছবিগুলো সেইভ করে গ্যালারিতে রেখে দেয়। তারপর সে ড্রাইভার কে বলে সংবাদপত্রের অফিসে যেতে। ড্রাইভার সেদিকেই গাড়ি ঘুরায়।
রাবীর সেই অফিসে গিয়েই সোজা বসের রুমে যায়। বস এবার তাকে দেখে জোরপূর্বক হাসে। সালাম দিয়ে বলে,
‘কেমন আছেন, খান সাহেব?’
‘জি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সেই রিপোর্টার ছুটি থেকে এসেছেন?’
‘হে? অহ হ্যাঁ হ্যাঁ, এসেছেন। আপনি বসুন। আমি উনাকে কল দিয়ে আসতে বলছি।’
তারপর তিনি একজন ব্যক্তিকে কল দিয়ে তার কেবিনে আসতে বলেন। রাবীরের দিকে চেয়ে বলেন,
‘কী খাবেন বলুন, চা না কফি?’
‘কিছুই না। কাজে এসেছি কাজ শেষে চলে যাব।’
বস জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালেন। তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। তিনি কোনমতেই চাইছেন না, তার অফিসের কোনো রেপুটেশন খারাপ হোক। কিন্তু, কীভাবে কী হয়েছে সেই ব্যাপারেও তিনি অবগত নন। তাই আপাতত তিনি চুপ রইলেন।
একটু পর সেই কেবিনে একজন ব্যক্তি আসেন। বস তাকে দেখে বলেন,
‘আসুন, আপনার সাথে রাবীর খান কথা বলতে চাইছেন।’
লোকটা ইতস্তত স্বরে রাবীরের দিকে চেয়ে বলে,
‘জি স্যার, বলুন।’
‘বসুন আপনি।’
লোকটি চেয়ারে বসে। তার চোখ মুখ স্থির নয়। সে ব্যস্ত চোখে এদিক ওদিক দেখছে। রাবীর জিজ্ঞেস করে,
‘গত বিশ তারিখের একটা প্রতিবেদন, যেটা একটা মেয়েকে নিয়ে তৈরি করা হয়; তার গানের বিষয়ে। সেই প্রতিবেদনটা কি আপনি তৈরি করেছিলেন?’
লোকটা ঢোক গিলে। অস্থির চোখে বসের দিকে তাকায়। বস তার দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। লোকটি বুঝতে পারছে না যে সে অন্যায়টা কী করেছে। সে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
‘জি।’
‘আচ্ছা। আর সেই প্রতিবেদনটা তৈরি করার কথা আপনাকে কে বলেছে?’
‘একজন লোক।’
রাবীরের দু ভ্রু এর মাঝে খানিক ভাঁজ পড়ে। সে জিজ্ঞেস করে,
‘কে সে?’
‘আমি তো তাকে চিনি না।’
‘নাম পরিচয় কিছুই জানেন না?’
‘নাম বলেছিলেন সিয়াম, যতটুকু মনে পড়ছে।’
‘আর পরিচয়?’
‘যেই ভার্সিটির মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছি সেই ছেলেটাও সেই ভার্সিটির।’
রাবীর তখন অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে,
‘আর কিছু জানেন আপনি তার ব্যাপারে?’
‘না স্যার।’
‘ঠিক আছে। তবে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন কারো অনুমতি ব্যতিত তাকে নিয়ে খবরের কাগজে কিছু লিখবেন না, বুঝতে পেরেছেন?’
‘জি স্যার।’
রাবীর উঠে দাঁড়ালে বস বলেন,
‘কিছু খেয়ে যান। এভাবে খালি মুখে চলে যাচ্ছেন..’
রাবীর এক পলক তার দিকে চেয়ে বলে,
‘আমি আপনার বাড়ির মেহমান নয় যে খেয়ে যেতে হবে। আসছি।’
________
রাবীর মেহুলকে কল দিচ্ছে। কিন্তু রিং বাজলেও কল রিসিভ হচ্ছে না। বেশ অনেকক্ষণ পর মেহুল ওয়াশরু থেকে বেরিয়ে আসে। একটা লম্বা সময় ধরে শাওয়ার নিয়েছে সে। ভেজা চুল ভালোভাবে মুছেওনি। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজেকে দেখে ভাবনায় পড়ে। কাল রাতের কথা মনে হয়। রাবীরের শরীরের উষ্ণতা গায়ে যেন এখনো মিশে আছে তার। খানিক লজ্জা পায়। ঠোঁট চেপে হাসে। তখনই ফোনটা তার আবার বেজে উঠে। উঁকি দিয়ে স্ক্রিনে নেতা সাহেব নামটা দেখতেই দ্রুত কল রিসিভ করে সে। রাবীর জিজ্ঞেস করে,
‘কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?’
‘শাওয়ার নিচ্ছিলাম।’
রাবীর ঘড়ির দিকে চেয়ে বলে,
‘বিকেল পাঁচটায়?’
‘হ্যাঁ, আজকে একটু ঘর দোর পরিষ্কার করেছি তো। তাই একেবারে সব করে এখন শাওয়ার নিয়েছি।’
‘খেয়েছেন?’
‘না, এখন গিয়ে খাব। আপনি খেয়েছেন?’
‘জি, আমি সবকিছু সময়মতো করি।’
মেহুল তখন ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘আপনি কি আমাকে খোঁচা দিতে চাইছেন নাকি?’
‘না, আমার এসব খোঁচাখুঁচির অভ্যাস নেই। একটা জরুরি কাজে ফোন দিয়েছিলাম।’
‘জি, বলুন।’
‘সিয়াম নামে কাউকে চিনেন?’
মেহুল অল্প অবাক হয়। বলে,
‘জি, ও তো আমার ফ্রেন্ড। কেন?’
‘আপনার নামে প্রতিবেদন ওই লিখিয়েছে।’
‘কী?’
মেহুল চমকে যায়। বলে,
‘না, ও এমন কিছু করলে তো আমাকে বলতো।’
‘আমি আজকে সেই রিপোর্টারের সাথে কথা বলে এসেছি মেহুল। উনি আমাকে এই নামটাই বলেছেন। আর বলেছেন, এই ছেলেটা নাকি আপনার ভার্সিটিতেই পড়ে।’
মেহুল তো বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। এমন কিছু হবে সে ভাবেনি। তার ক্লাসের কেউই এই ব্যাপারটা স্বীকার করেনি। আর সিয়াম, এই ছেলে হুট করে কেন এসব করতে যাবে? ওর সাথে তো খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তার নেই। তাহলে?
মেহুলের ভাবনার মাঝেই রাবীর বলে,
‘আপনার সাথে আমার আরো কিছু কথা আছে। আমি একটু পর আসছি।’
‘আবার কী হয়েছে?’
‘এসেই সবকিছু বলব। আপনি গিয়ে এখন আগে খেয়ে নিন।’
রাবীর এই বলে কল কেটে দেয়। মেহুলের চিন্তার মাত্রা এবার দ্বিগুণ হয়। রাবীর আর কী বলতে চায়? এমন কী কথা, যার জন্য সে নিজেই এখানে চলে আসছে? আবার গুরুতর কিছু হয়েছে নাকি? উফফ, একটার পর একটা ঝামেলা যেন লেগেই যাচ্ছে। আজকাল একটুও শান্তি পাচ্ছে না সে। আর এইসব হলো একজন নেতাসাহেবকে বিয়ে করার সাইড ইফেক্ট।
চলবে…