শেষটা সুন্দর পর্ব-১৯+২০

0
944

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৯।

‘আপনাকে নিয়ে আজকে এখানেই থেকে যেতাম যদি বেডরুমে একটা বিছানা থাকত। তবে আপনি চিন্তা করবেন না, আমি এক সপ্তাহের মধ্যেই সমস্ত ফার্নিচারের ব্যবস্থা করে ফেলব।’

মেহুল তার সিটে হেলান দিয়ে বসে। ঘাড় কাত করে রাবীরের দিকে চেয়ে থাকে অনেকক্ষণ। রাবীরও সেটা টের পায়। সে মৃদু সুরে,

‘কাউকে এভাবে দেখতে নেই, তার নজর লাগে।’

‘লাগুক, একটু নজর লাগা ভালো। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো বউয়ের নজর লাগলে স্বামীর শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।’

‘আচ্ছা, তাই?’

‘জি।’

‘আপনার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত নতুন অনেক কিছুই শিখছি।’

‘হ্যাঁ, তা তো শিখবেন’ই। এমন ট্যালেন্টেট মেয়ে বিয়ে করেছেন, ভবিষ্যতে আরো কত কিছু শিখবেন।’

রাবীর ঠোঁট গুঁজে হাসে। মেহুল বলে,

‘এই যে আজ আপনার এত টাকা গেল, আপনার মায়া লাগছে না?’

রাবীর কপালের ক্ষুদ্র ভাঁজ ফেলে। জিজ্ঞেস করে,

‘টাকার মায়া?’

‘হু।’

‘না। টাকার প্রতি মায়া দেখিয়ে কী হবে? এটা তো আর পারমানেন্ট কিছু না। আজকে আছে কালকে নেই। যেই জিনিস ক্ষণস্থায়ী সেই জিনিসের প্রতি মায়া থাকতে নেই।’

মেহুল নিশ্বাস ফেলে। বলে,

‘আপনি বড়োলোক মানুষ। এই টাকা হয়তো আপনার জন্য কিছুই না। তবে আমার মায়া লাগছিল। আমি দেখেছি, টাকা হাতে না থাকলে মানুষকে কত কষ্ট করতে হয়। আবার বাবা যখন প্রথম অসুস্থ হোন, তখন বাবার চাকরিটাও চলে যায়। আমি তখন দেখেছিলাম কীভাবে মা কিছু টাকার জন্য খেয়ে না খেয়ে টিউশনি করিয়েছেন। মা কে তখন খুব একটা বাসায়ই পেতাম না। এই বয়সে কতদিকে ছুটেছেন। কষ্ট হতো মা’কে দেখে। পরে আমিও দুই একটা টিউশনি নেই। তবে মা আমাকে সেটা বেশিদিন কন্টিনিউ করতে দেননি। মা একাই সবকিছু সামলান। এর মাঝে বাবার অফিস থেকে বলা হয়, বাবার শারিরীক অবস্থার কথা বিবেচনা করে উনারা বাবার পেনশনের ব্যবস্থা করে দিবেন। এখন মাসে মাসে মা বাবার এই পেনশনের টাকা তুলেই সমস্ত খরচ মেটান। তবে এতকিছুর পরও আমাকে কিছু করতে দেন না। আমার নাকি খালি একটাই কাজ, পড়াশোনা করা। তাই সেই সময়ে আমি বুঝেছিলাম টাকার কী মূল্য।’

রাবীর এক হাত দিয়ে মেহুলের হাতটা এনে তার কোলের উপর রাখে। সামনের দিকে চেয়েই বলে,

‘টাকা তখনই মূল্যবান যখন আপনি সেটার সঠিক ব্যবহার করবেন। আমার কাছেও টাকা দামি বস্তু। কারণ, এর জন্য আমাকেও কষ্ট করতে হয়। আমাকেও পরিশ্রম করতে হয়। তাই আমি জানি টাকার মূল্য কতখানি। তবে আরেকটা কথাও বিশ্বাস করি, টাকা ততক্ষণ পর্যন্তই মূল্যবান যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা ব্যবহার করার মানুষ থাকে। এই যেমন ধরুন, আপনার কাছে কোটি কোটি টাকা আছে, অথচ আপনিই নেই। তাহলে এই টাকার কী হবে। কী হবে এত টাকা থেকে? কিছুই হবে না। আপনি ছাড়া আপনার এই টাকারও কোনো মূল্য নেই। সেই জন্যই সঠিক সময়ে টাকার ব্যবহার করতে হয়, হোক সেটা যতই বড়ো অংকের। আপনার প্রয়োজনে আপনি সেটা অবশ্যই ব্যবহার করবেন। আর হ্যাঁ, এখন থেকে মা বাবার সমস্ত দায়িত্ব আমার। আপনি মা’কে বলবেন, উনাদের ছেলে উনাদের দায়িত্ব নিতে চাইছে। উনারা যেন অনুমতি দেন।’

মেহুলও রাবীরের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। মিহি সুরে বলে,

‘নেতা সাহেব, আপনি এত ভালো কেন?’

রাবীর তার দিকে এক পলক তাকায়। মৃদু হেসে বলে,

‘আপনি আমাকে ভালো চোখে দেখছেন বলে।’

মেহুল তখন ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘তাহলে কি আপনি খারাপ?’

রাবীর জবাব দেয় না। তার দিকে চেয়ে কেবল মুচকি হাসে।

_______

গাড়ি থেকে নেমে মেহুল বলল,

‘আপনিও ভেতরে চলুন। মা না হলে আমাকে বকবে।’

‘না না, মেহুল। আমার এখন গিয়ে একটা মিটিং এ যেতে হবে। দেখছিলেন না কতবার করে কল আসছিল। আবার অন্যদিন আসব। মা’কে বুঝিয়ে বলবেন।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে। সাবধানে যাবেন।’

‘আচ্ছা, আপনি আগে ভেতরে যান। তারপর আমি যাব।’

মেহুল হেসে তাকে বিদায় জানিয়ে বাসার ভেতরে গেল। রাবীরও তারপর আর দাঁড়ায়নি। মিটিং আছে বলে সে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।

_______

রামিনা বেগম বললেন,

‘জামাইকে বাসায় নিয়ে আসতি পারলি না?’

‘মা, আমি উনাকে বলেছিলাম। কিন্তু, উনার নাকি মিটিং আছে। তাই আসতে পারেননি। বলেছেন অন্য একদিন আসবেন।’

তিনি আশ্বস্ত হয়ে বিছানায় বসলেন। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বললেন,

‘হে রে, কোথায় ঘুরতে গিয়েছিলি?’

মেহুল বড়ো করে নিশ্বাস নিয়ে দু পা তুলে মায়ের মুখ বরাবরি বসে। বড়ো বড়ো চোখ করে বলে,

‘তোমার জামাই আজকে কী করেছে, জানো?’

‘কী করেছে?’

‘দাঁড়াও, দেখাচ্ছি।’

এই বলে সে ব্যাগ থেকে একটা দলিলের কাগজ এনে মায়ের হাতে দেয়। রামিনা বেগম জিজ্ঞেস করেন,

‘কী এটা?’

‘খুলেই দেখো না।’

তিনি দলিল খুলে পড়তে আরম্ভ করলেন। পড়া শেষ করে হা করে মেহুলের দিকে চাইলেন। অবাক হয়ে বললেন,

‘মেহুল, এটা সত্যি? এত বড়ো জমি তোর নামে?’

‘হ্যাঁ, মা। আজ তো সারাদিন উনি এসবই করেছেন। খালি জমি না, ঐ জমির উপর বিশাল এক ডুপ্লেক্স বাড়িও আছে। সেটাও আমার। তুমি বুঝতে পারছো মা, উনি কী করেছেন?’

রামিনা বেগম আবার দলিলের দিকে চাইলেন। তারপর মেহুলের দিকে চেয়ে আফসোসের সুরে বললেন,

‘কতগুলো টাকা!’

‘হ্যাঁ, আমিও তো সেইজন্য উনাকে বারণ করেছিলাম। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আজকে সব ফাইনাল করে তবেই ফিরবেন। এই দলিলও তাই আগেই বানিয়েই রেখেছিলেন।’

রামিনা বেগম বুকে হাত দিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেললেন। বললেন,

‘রাবীর তোকে কত ভালোবাসে দেখেছিস? তুই কোনোদিন ছেলেটাকে কষ্ট দিস না। ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করিস না। ওর মতো তোর কথা কেউ এত ভাববে না, মা। ওকে তুইও আগলে রাখিস।’

মেহুল মাথা নিচু করে স্মিত হাসল। বলল,

‘আচ্ছা।’

________

সকাল বেলা মায়ের চিৎকারে মেহুলের ঘুম ভাঙে। সে উঠে বসে এদিক ওদিক তাকায়। কী হয়েছে বুঝতে পারছে না। মা এত সকালে চেঁচাচ্ছেন কেন? ঘড়িতে চেয়ে দেখে দশটা বেজে পঁচিশ মিনিট। মেহুল বালিশের পাশ থেকে উড়নাটা নিয়ে গায়ে দেয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে আস্তে করে দরজা মেলে বাইরে যায়। বাবা মায়ের রুমের কাছে গিয়ে একটু উঁকি দিয়ে দেখে, মা তার ভীষণ চটে আছেন। কিন্তু, হঠাৎ উনার হলো কী। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর বাবার উপর আর উনি কখনোই রাগ দেখাননি। এখন একমাত্র এই বাড়িতে পড়ে আছে সে নিজেই, যার উপর উনি এত রাগ দেখান। কিন্তু, মেহুলের জানা মতে সে তো এমন কিছু করেনি, যার জন্য একদম সকাল হতে না হতেই এমন চিল্লা ফাল্লা শুরু হয়ে যাবে।

মেহুল তাই ভয়ে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাওয়ার আর সাহস পাচ্ছে না। রামিনা বেগম এর মাঝেই আবার চেঁচিয়ে উঠেন,

‘এই মেহুল, তোর ঘুম হয়নি এখনো। উঠবি, নাকি কিছু উত্তম মধ্যম খেয়ে তোর ঘুম ভাঙবে?’

মেহুল এক ছুটে ভেতরে গিয়ে বলে,

‘না না মা, আমার ঘুম ভেঙে গেছে।’

রামিনা বেগম চোয়াল শক্ত করে তার দিকে চাইলেন। কর্কশ স্বরে বললেন,

‘এদিকে আয়।’

মেহুল ঢোক গিলে। এমন ভয়ংকর ভাবে মা কেন ডাকছেন? সে কী করেছে? মেহুল এক জায়গায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। রামিনা বেগম আবার বলেন,

‘কী হলো, কথা কি কানে যাচ্ছে না? বললাম না, এদিকে আসতে।’

মেহুল ভয়ে ভয়ে দু কদম এগিয়ে গেল। রামিনা বেগম তখন তার মুখের উপর একটা পেপার ছুঁড়ে মারেন। ক্ষিপ্ত সুরে বলেন,

‘এসব কী?’

মেহুল বুঝতে পারে না কিছু। পেপারটা নিচ থেকে তুলে চোখের সামনে মেলে ধরে। নিউজ পেপারে ফ্রন্ট পেইজটা চোখে পড়তেই সে যেন আঁতকে উঠে। বিস্ময়ে রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে সে।

চলবে….

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২০।

মেহুল কাঁপাকাঁপা স্বরে বলল,

‘মা, এসবের আমি কিছু জানি না।’

রামিনা বেগম গর্জে উঠে বললেন,

‘তোমাকে নিয়ে খবরের কাগজের হেডলাইন হয়েছে, আর তুমিই সেটা জানো না? আমাকে কি বোকা পেয়েছ? তোমার শাশুড়ি ফোন দিয়ে কত কথা বলেছেন, জানো? তোমার জন্য আজ আমি এত অপমানিত হয়েছি।’

মেহুল মাথা নুইয়ে ভেজা গলায় বলে,

‘আমি এসবের সত্যিই কিছু জানতাম না, মা। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, আমাদের ভার্সিটিতে কালকে কোনো সাংবাদিক যাননি। এটা একটা ভার্সিটি প্রোগ্রাম। আমি তো এর আগেও গান গেয়েছি। কিন্তু, কালকের গানের ব্যাপারটা এত হাইলাইট হলো কী করে?’

‘নিশ্চয়ই কেউ হাইলাইট করেছে। এমনি এমনিই তো খবরের কাগজে চলে আসেনি, নিশ্চয়ই কেউ ছাপাতে বলেছে। তুমি না করলে তোমার বন্ধুদের মাঝে কেউ করেছে। যাও এখন গিয়ে খোঁজ নাও কে এসব করেছে।’

রামিনা বেগমের রাগ বিন্দুমাত্র ও কমেনি। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছেন তিনি। মেহুল অসহায় চোখে বাবার দিকে তাকায়। বাবাও উদাস চোখে তার দিকেই চেয়ে আছেন। মেহুল ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে,

‘ঐ মহিলা তোমাকে কী কী বলেছেন, মা?’

রামিনা বেগম কটমট করে তাকালেন। ক্ষিপ্ত স্বরে বললেন,

‘ঐ মহিলা তোমার কি হয়? কোন সাহসে তুমি উনাকে “ঐ মহেলা” বলে সম্বোধন করছো?’

মেহুল নিচের দিকে চেয়ে বলে,

‘আমার শাশুড়ি মা তোমাকে কী বলেছেন?’

‘কী বলবেন? তুমি কি আর কিছু বাকি রেখেছো বলার? বলেছেন, আমরা নাকি ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা রাখতে পারিনা। বিয়ের আগে ওয়াদা দিয়েছি মেয়ে গান গাইবে না। অথচ বিয়ের পর আমাদের মেয়ে ঠিকই গান গেয়েছে। আর এখন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ চারদিক। উনার অসম্মানে লেগেছে ব্যাপারটা। আশেপাশের মানুষ নাকি উনাকে এসে বলেছেন, ছেলের বউ দেখি খবরের কাগজে উঠে এসেছে। কার এসব শুনতে ভালো লাগে? উনি তোমার উপর রেগে আছেন। এখন তুমিই ভাবো কী করবে?’

মেহুল নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,

‘ছোট্ট একটা ব্যাপারকে উনি টেনেটুনে এত বড়ো কেন করছেন? আর আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে উনার তো উল্টো আরো খুশি হওয়ার কথা, উনার ছেলের বউয়ের গানের এত প্রশংসা, তার নামে খবরে কাগজে শিরোনাম এসেছে। উনি খুশি না হয়ে উল্টো কথা শুনিয়েছেন? আর তুমিও কিছু বলতে পারলে না।’

‘হে, আমি কী বলব? উনার সাথে ঝগড়া বলব। বলব যে, আমার মেয়ে যা করেছে বেশ করেছে। এটাই বলা উচিত ছিল আমার? এই শিক্ষা তোমাকে আমি দিয়েছি? শুনো মেহুল, তোমার এখন বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন তুমি না চাইলেও তোমার শাশুড়ি আর স্বামীর কথামতোই তোমাকে চলতে হবে। উনারা যখন তোমাকে গান গাইতে বারণ করেছেন, তার মানে তুমি গান গাইবে না। এই নিয়ে যেন আর কোনো কথা না হয়।’

মেহুলের চোখে কোণে পানি জমে। সে দ্বিতীয় কোনো কথা না বলে নিজের রুমে ছুটে যায়। রুমে গিয়ে দেখে তার ফোন বাজছে। হাতে নিয়ে দেখে রাবীর কল করছে। ইচ্ছে করে সে কলটা কেটে দেয়। মেহুলের ভীষণ রকম কান্না পাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে তার। চারদিকে অপরিচিত মানুষরা তার আজ এত প্রশংসা করছে অথচ তার কাছের মানুষরাই তাকে কোনো দাম দিচ্ছে না। তার স্বপ্নের কথা কেউ ভাবছেই না।

রাবীর ক্রমাগত তাকে কল দিতেই থাকে। মেহুল এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে। কানে ফোন ধরে চুপচাপ বসে থাকে। রাবীর ঠান্ডা গলায় বলে,

‘আমি জানি আপনার মন ভালো নেই। বিশ্বাস করুন, আমি মা’কে অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তবে মা বোঝেননি। তিনি কোনোভাবেই আপনার গান গাওয়াটাকে মেনে নিতে পারছেন না। তারউপর আজকে খবরের কাগজ দেখে আরো বেশি মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে উনার। আমার উপরও রেগে আছেন, আপনাকে অনুমতি দিয়েছি তাই। আমি সবটুকু দিয়ে মা’কে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, মেহুল। তবে মা’কে কোনোভাবেই রাজি করাতে পারিনি। আর মা রাজি না হলে আমার পক্ষেও আপনাকে সাপোর্ট করা সম্ভব না। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।’

রাবীরের বলা শেষ হলেও মেহুল কিছু বলে না। রাবীর তার নিশ্বাসের শব্দগুলো ঠিকই শুনতে পারছে। মেয়েটা যে খুব কষ্ট পাচ্ছে সেটাও সে বুঝতে পারছে। রাবীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘এই নিউজটা বের না হলে হয়তো মা’কে আমি পরে সবটা সুন্দর করে গুছিয়ে বলতে পারতাম। কিন্তু, সকাল হতেই চোখের সামনে এই নিউজ দেখে উনার মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে। এখন আমি হাজার বোঝালেও উনি বোঝবেন না। কী দরকার ছিল, এই প্রতিবেদন দেওয়ার?’

মেহুল এবার মুখ খুলে। বলে,

‘আমি এই প্রতিবেদন দেইনি। কে দিয়েছে সেটাও জানি না। আমি নিজেই তো সকালে মায়ের মুখে সব শুনে অবাক।’

রাবীর অবাক হয়ে বলে,

‘আপনি কিছু জানতেন না? আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনার নামে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে?’

‘জি।’

‘কে করেছে এসব? আপনার কোনো ফ্রেন্ড?’

‘না, আমার তো তা মনে হয় না। কিছু করার আগে ওরা অবশ্যই আমাকে জানাতো।’

‘আপনি এক্ষুনি ওদের সাথে কথা বলে সিউর হোন। তারপর আমাকে জানান। আর মায়ের কথায় কষ্ট পাবেন না। আমি মা’কে আবার বোঝাব।’

‘ঠিক আছে।’

রাবীর কল কাটার পর মেহুল রিতাকে কল দেয়। রিতার কল রিসিভ করে “হ্যালো” বলতেই মেহুল বলে,

‘তুই ঘুমাচ্ছিস?’

‘হ্যাঁ, বন্ধের দিনে ঘুমাব না তো জেগে থাকব?’

‘খবরের কাগজ দেখেছিস?’

‘ঘুমের মধ্যে খবরের কাগজ কেন দেখতে যাব, পাগল হয়েছিস নাকি?’

‘ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজটা আগে দেখ, তারপর আমাকে আবার কল দিস।’

এই বলে মেহুল কল কেটে দেয়। রিতা তার কথার আগা মাথা কিছু বুঝতে পারে না। তাই সে উঠে বসে। ফ্রেশ হয়ে তাদের বসার রুমে যায়। সেখানে তার বাবা খবরের কাগজ পড়ছিলেন। রিতাকে দেখে তিনি হেসে বললেন,

‘দেখ রিতা, মেহুলকে নিয়ে খবরের কাগজে শিরোনাম হয়েছে।’

রিতা চমকে খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে। প্রতিটা লাইন পড়ে অবাকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায় সে। দৌড়ে আবার রুমে গিয়ে মেহুলকে কল দেয়। মেহুল ফোন হাতে নিয়েই তার অপেক্ষা করছিল। কলটা তাই সাথে সাথেই রিসিভ করে। রিতা তখন বিস্ময়ে বলে উঠে,

‘তুই তো এক রাতেই বিশাল গায়িকা হয়ে গেছিস, মেহুল। এগুলো কে করেছে? নিশ্চয়ই ভাইয়া?’

‘ভাইয়া? মানে রাবীরের কথা বলছিস?’

‘হ্যাঁ, তা নয়তো আর কে?’

মেহুল নিশ্বাস নিয়ে বলে,

‘রাবীর এসব করেনি, রিতা। কে করেছে আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। তুই কি জানিস কিছু?’

‘না, আমি মাত্র জানলাম। ভাইয়া না করলে, কে করবে এসব?’

‘আমাদের বন্ধুদের মাঝে কেউ?’

‘একদমই না। ওরা কেউ করবে না। আর করলেও তোকে বলে করতো। এটা অন্য কেউ করেছে, আমি ডেম সিউর।’

‘কিন্তু, সে কে? আমি কী করে তাকে খুঁজে বের করব?’

‘আরে এটা তো সিম্পল ব্যাপার। জাস্ট এই নিউজ পেপারের অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করবি, এই নিউজটা কে পাবলিশ করতে বলেছে। উনাদের কাছে নিশ্চয়ই সব ইনফরমেশন রয়েছে। তুই ভাইয়াকে নিয়ে গেলেই দেখবি, ইজিলি সবকিছু বের করে ফেলতে পারছিস।’

মেহুলেরও তাই মনে হয়। নিউজ পেপারের অফিসটাতে গেলেই সে সব তথ্য পাবে। আর তারউপর তার কেন যেন মন বলছে, এটাও সেই অচেনা মানুষটাই যে তাকে ঐ চিরকুট আর ফুল দিয়েছিল। এইসব কিছু একজনই করছে। কিন্তু, সেটা কে?

চলবে ….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে