#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৫
#অধির_রায়
নিয়তির চিৎকার শুনে নির্বণ দ্রুত পায়ে রুমে ফিরে আসে৷ রুমে এসে দেখে নিয়তি ফ্লোরে পড়ে আছে৷ নির্বণ দৌড়ে নিয়তির কাছে আসে৷ নিয়তিকে পাঁজা কোলা করে বিছানা শুয়ে দেয়৷
— হন্তদন্ত হয়ে, ” প্লিজ নিয়তি চোখ মেলে তাকাও? ” নিয়তি আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ জল লাগবে৷
নির্বণ নিয়তির মুখে জল ছিঁটিয়ে দেয়৷ যার ফলে নিয়তি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। নির্বণ যেন প্রাণ ফিরে পেল৷ নিয়তি এমন অবস্থা দেখে নির্বণ বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব করছিল। কেন এমন অনুভূতি হয়েছিল নির্বণ নিজেই জানে না?
নিয়তি চোখ মেলে তাকাতেই নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে৷ নির্বণ নিজেও জানে না সে কি করেছে? নিয়তি নির্বণকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ নির্বণের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” মি. নির্বণ চৌধুরি৷ আমাকে ধরার অধিকার আপনি এখনও পাননি৷ যদি সারাজীবন আমাকে আগলে রাখতে পারেন তাহলে আমার কাছে আসবেন।”
নিয়তি নির্বণের উপর রাগ দেখিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নির্বণ গালে হাত ঘষতে ঘষতে মনে মনে বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি কাজটা ঠিক করলে না৷ আমার গায়ে হাত তুলার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে ৷”
নির্বণ অফিসে চলে যায়৷
নিয়তি ওয়াসরুমের গ্লাসে নিজেকে দেখছে আর কেঁদে যাচ্ছে৷ নিয়তি কান্না করতে করতে, ” আমি এই হাত দিয়ে আজ আমার স্যারের গায়ে হাত তুললাম৷ কি করে পারলাম এমন অন্যায় কাজ করতে৷ কেন স্যার আমার ভালোবাসা বোঝে না৷ আমি স্যারকে ভীষণ ভালোবাসি৷ ” কিন্তু আমি স্যারকে নিজের করে পাওয়ার জন্য মাকে কিছু বলিনি৷
________
— এভাবে মন খারাপ করে আছ কেন? আমার উপর তোমার একটুও বিশ্বাস নেই৷ আমি যা করেছি তোমার আর নির্বণের ভালোর জন্যই করেছি৷
— আই অ্যাম ওকে৷ আমি এসব কিছু নিয়ে ভাবছি না৷ এক মুহুর্তের মাঝে আমার জীবনে কত বড় পরিবর্তন এসে পড়েছে৷ আমি নিজেই জানি না৷ যাকে একটু আগে স্যার বলে সম্মোধন করতাম সে আজ থেকে আমার স্বামী!
— তো কি হয়েছে? এসব বাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে দাও৷ আমি জানি আমার ছেলে একটু গম্ভীর টাইপের৷ কিন্তু সে ভালোবাসার কাঙাল। সে ভালোবাসা পেলে তোমাকে কখনও কষ্ট দিবে না৷ তুমি পারবে না আমার ছেলের কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করতে৷ আমি তোমাকে সাহায্য করব৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আমি পারব৷ আপনি আপনার কাজে মন দেন৷ ঠিকমতো থেরাপি নেন৷ আপনি সুস্থ থাকলেই আমি শক্তি পাব।”
— সোনা মা তোমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে৷ তুমিই পারবে নির্বণকে আবার আগের মতো হাঁসাতে।
— নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে, ” ডোন্ট ওরি। আমি আমার যথেষ্ট দিয়ে চেষ্টা করব৷ এভার দেখে যান নিয়তির খেলা৷”
— নিয়তির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে, ” এই তো আমার সোনা মা৷ আমি জানি তোমার কাছে সব সমস্যার সমাধান আছে। তুমি যে আমার ঘরের লক্ষ্মী।”
__________
নির্বণ অফিস থেকে ফিরে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে৷ এমন সময় নিয়তি নির্বণের খাবার নিয়ে রুমে আসে৷
— আপনার খাবার খেয়ে নেন৷ আজ থেকে আমিই আপনার খাবার নিয়ে আসব। আজ আপনি দিনে কিছু খান নি৷
— কাজে মনোনিবেশ করে, ” তুমি খেয়েছো?”
— আমি কে? আমি না খেলে আপনার কিছু যায় আসবে না৷ আপনার খাবার আপনি খেয়ে নেন৷
— নির্বণ চোখ রাঙিয়ে, ” সিম্পল কথাটা বলতে পার না৷ আমি তোমার কাছে কোন কৈফিয়ত চাইনি৷”
— আপনি সারাদিন খাননি কেন? কি মহাকাজে বিজি ছিলেন? খাবারের জন্য দশ মিনিট সময় পাননি৷
— তুমি কে? আমি তোমাকে কেন বলব কখন খাব, কখন খাব না ? আর আমার কোন ক্ষুধা নেই৷ খাবার রেখে আসো৷
— আমি খাবার নিয়ে এসেছি আপনার জন্য৷ আপনি খাবেন তার পর কাজ করবেন৷
— নিয়তি তুমি ভালো করেই জানো আমি কাজের সময় বিরক্ত একদম পছন্দ করি না৷
— আমিও যখন কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন সে সিদ্ধান্তে অটল থাকব।
নিয়তি কোন কথা না বলে নির্বণের ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়৷ নির্বণের হাত ধরে নিয়ে এসে বিছানায় নির্বণকে বসিয়ে দেয়৷ নিয়তি নিজ হাতে নির্বণকে খাইয়ে দেয়৷ নির্বণও কম নয় নির্বণ এক লোকমা খাবার মুখে দেওয়ার পর অন্য লোকমা জোর করে নিয়তির মুখে তুলে দেয়৷ নিয়তি খাবার যেন ফেলতে না পারে সেজন্য নিয়তির নাক মুখ চেপে ধরে৷ এভাবে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মাধ্যমে একে অপরকে খাইয়ে দেয়৷
_______________
— ” নির্বণ আজ তো রবিবার। আজ তোমাকে অফিসে যেতে হবে না৷ ” হাতের নখ কাটতে কাটতে।
— নির্বণ নিয়তির দিকে একবার তাকিয়ে, ” মা আমার একটা জুরুরি কাজ পড়ে গেছে৷ আমাকে আজ এক জায়গায় যেতে হবে৷”
— নিয়তি নির্বণের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমাকে দাও তো৷
— মা তুমি ফোন দিয়ে কি করবে? আমার ফোনে কত দরকারি ফোন আসে৷
— নির্বণের মা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে, ” তোমার কাছে আমি ফোন চেয়েছি৷ তুমি আমাকে ফোন দাও। আমি চাইনা তুমি আমার মুখের উপর কথা বল৷”
নির্বণ ভেজা বিড়ালের মতো হাত কাচুমাচু করে ফোনটা মায়ের দিকে এগিয়ে দেয়৷ নির্বণের মা নির্বণের ফোন ঘাটাঘাটি করে দেখে তেমন কোন ফোন আসেনি৷
— অগ্নিমূর্তি ধারণ করে, ” নির্বণ তুমি আমাকে মিথ্যা বললে! সেজন্য তোমাকে শান্তি পেতে হবে৷ শাস্তি হিসেবে তুমি আজ নিয়তিকে শপিং করাতে নিয়ে যাবে৷”
— নির্বণ কিছুটূ উঁচু স্বরে বলে উঠে, ” মা আমি পারব না নিয়তিকে শপিং এ নিয়ে যেতে৷ টাকা দিয়ে দাও, সে নিজে থেকে কিনে নিয়ে আসবে।”
— গম্ভীর কণ্ঠে, ” নির্বণ এসব কি ধরনের কথা? তুমি নিয়তিকে শপিং করাতে নিয়ে যাচ্ছো মানে নিয়ে যাচ্ছো। ইট’স মাই লাস্ট ওয়ার্নিং।”
___________
নিয়তি নিজের ইচ্ছামত শপিং করছে। কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনেনি৷ নির্বণ দেখতে পাচ্ছে নিয়তি বাড়ির সকলের জন্য অনেক কেনা কাটা করল।
— আমার সব শপিং শেষ৷ আপনার কি কি লাগবে কিনে নেন?
— আমার কিছু লাগবে না৷ আমি অন্য একদিন সময় করে কিনে নিব।
— অন্য একদিন কিনে নিবেন মানে কি? আমি আপনার জন্য পছন্দ করে দিচ্ছি৷
— লাগবে না। তোমার পছন্দ কেমন আমার জানা আছে? তুমি যেমন মিডিল ক্লাসের মেয়ে তেমনি তোমার পছন্দ হবে মিডিল ক্লাসদের মতো।
— নির্বণ চৌধুরী এভার মুখটা বন্ধ করেন৷ আর হ্যাঁ আমি যা পছন্দ করে কিনে দেব তাই পড়তে হবে আপনাকে৷
দাদা কালো রঙের পাঞ্জাবিটা বের করেন৷
— আমি পাঞ্জাবি পড়ি না৷ আমি পাঞ্জাবি নিব না৷
— একটা কথা বলবেন না৷ দাদা একটা স্কচটেপ দেন তো এই বাঁদরের মুখে লাগিয়ে দেয়৷
— ক্ষেপে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “কি আমি বাঁদর?”
— হ্যাঁ, আপনি একটা বাঁদর।
— বাসায় চল তারপর তোমাকে দেখাব।
শপিং শেষে নিয়তি নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷ নিয়তি অবাক চোখে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নির্বণ নিয়তির তাকানোর দিকে কোন পাত্তা না দিয়ে নিয়তিকে আবার শপিং মলে নিয়ে আসে।
— আবার আমরা শপিং মলে কি করব? বুঝতে পেরেছি। আমি নৃত্য করব আপনি ভিডিও করবেন৷ আমি ভাইরাল হয়ে যাব৷
— “জাস্ট সাট আপ। একটা কথাও বলবে না৷ আমি তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছি বলে তুমি মাথায় উঠে নৃত্য করবে। ” চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে।
নিয়নি নির্বণের এমন গর্জন শুনে চুপসে যায়। ভদ্র মেয়ের মতো নির্বণের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে৷ নির্বণ নিয়তির জন্য নিজে পছন্দ করে বাহারি রকমের শাড়ি কিনে৷ শুধু শাড়িতেই আবদ্ধ নয়৷ নিয়তির জন্য ওয়েস্টার্ন পোশাকও কিনে।
— আপনি ওয়েস্টার্ন পোশাক কার জন্য কিনছেন? মনে হয় শাড়িগুলো আমার৷ আমি তো ওয়েস্টার্ন পোশাক পড়ি না।
— আমি যার জন্যই কিনা কেন? তোমার জন্য কিনছি না আমি৷ এটা ভেবে নিও৷ তোমার তো কিছু লাগবেই না৷ তাহলে শাড়ি দিয়ে কি করবে?
নির্বণের কথা শুনে নিয়তির মুখটা ছোট হয়ে যায়৷ নিয়তি ভেবে ছিল তার জন্য শাড়ি কিনছে৷ কিন্তু সালা নির্বণ নিয়তির জন্য না কিনে তার প্রেমিকার জন্য কিনেছে৷ নিয়তি মনে মনে হাজারটা বকা দিয়ে যাচ্ছে নির্বণকে৷
নির্বণ নিয়তির এমন অবস্থা দেখে মুচকি হেঁসে যাচ্ছে৷ নিয়তি আরও রাগান্বিত করার জন্য নির্বণ নিয়তির হাত ধরে, ” মিস নিয়তি তুমি চাইলে তোমার জন্য কাজের মেয়ে জরিনার শাড়ি নিতে পারি৷”
নিয়তি নির্বণের কথা শুনে আরও ক্ষেপে যায়৷ নির্বণের হাত এক ঝাঁকি দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ নির্বণের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাহিরে চলে আসে৷
চলবে……
বানান ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।