শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৬

0
1608

#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#Writer_Nondini_Nila
#Part_6

আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি মাহেয আমাকে ছেড়ে গাড়ি উঠতে বললো আমি না উঠলে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নিজে বসে পরে। আর একটা নিরিবিলি জায়গায় এসে থামায়।
আমি ব্রু কুচকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি গাড়ি থামতেই মাহের দিকে তাকালাম,
এসব কি হচ্ছে আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে এলেন? এই মাঝরাতে।
উনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমার দরজা খোলে আমাকে হাত ধরে বের করে আনল। আমি প্রশ্নোত্তর দৃষ্টিতে দিয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।
কিছুটা যেতেই ভিন্ন কালারের লাইট জ্বলে উঠলো। সাথে দেখতে পেলাম আমার ওপর গোলাপের পাপড়ি পড়ছে নিচেও গোলাপ দিয়ে রাস্তা বানানো। আমি তার উপর দিয়ে হাঁটছি। ভিষ্ময়ে আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।
উনি আমার হাত ধরে গোলাপের রাস্তা পেরিয়ে নিয়ে এল তারপরে আমার চোখের সামনে লালবাতিতে লেখা উঠছে আই লাভ ইউ সুইট হার্ট।
মাহের আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই ফট করে আমার পায়ের কাছে বসে পড়ল।
আমি বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।মায়ের আমার দিকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো আই লাভ ইউ সুইট হার্ট। তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি ব‌উ। তোমার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাই।
আমি ছল ছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু ফুল নেয়নি আমার উনার হিংস্র চেহারা মনে পড়ে যায়। উনি আমার হাত টেনে নিয়ে ফুল দিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়। তারপর আচমকা আমার পা টেনে ধরা আমি চমকে উঠি।
কি করছেন কি?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে। আমার পায়ে নুপুর পরিয়ে দেয়।অনেক সুন্দর একটা দিন ছিল কিন্তু সেটা যদি ওর শাজান আহত একজন ভালো মানুষের সাথে হতো আমি অনেক খুশি হতাম।
ভাবনা থেকে বের হয়ে কাত হয়ে শুলাম। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আমি চোখ মুছে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
দেখতে দেখতে দু দিন কেটে গেল অদ্ভুত হলেও এই দুই দিন একবারের জন্য আমাকে ফোন করে নি উনি। আমি অবাক হচ্ছি এর আগেও উনি বিদেশে গিয়েছে সব সময় আমাকে কল করেছে
ওনাকে নিয়ে না ভাবতে না চাইলেও কেন যেন বারবার উনি আমার ভাবনা চলে আসছে।
নাচাইতে ওনাকে মিস করছি ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকছে ওনার ফোনের আশায়।
নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত হচ্ছি। দু দিন পেরিয়ে চার দিন চলে গেল। মাহেরের কোন খোজ খবর নাই। আমি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বারান্দায় গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছি। এমন তো উনি কখনো করে না।
ঐশী আমার পাশে এসে বসে পড়লো। আর আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
তোর কি মন খারাপ ছোঁয়া?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম নাতো।

মিথ্যে বলছিস কেন তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুই দুলাভাইকে নিয়ে খুব চিন্তা করছিস? তাকে মিস করছিস তাই না।
কি বলছিস এসব? ওই লোকটাকে আমি কেন মিস করতে যাব? শুনি নাই এটা আমি আরো খুশি!
তাই সত্যি বলছিস। তুই খুশি তাহলে তোর মুখে চিন্তা কেন মলিন কেন?
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।
তুই ও মনে মনে ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছিস কিন্তু মানতে চাইছিস না।
এমনটা না আমি,,,
আমাকে মিথ্যা বলে লাভ নেই।
ওকে আর বোঝাতে পারলাম না পরদিন ভার্সিটিতে যাবার সময় আমি নিজেই রুস্তম এর সাথে কথা বললাম। কেন জানিনা আমার মানের কথা খুব মনে পড়ছিল। উনার কেমন হয়েছে আমার সাথে কথা বলছে না। উনি ঠিক আছে তো।
রুস্তম এর থেকে যা শুনলাম তা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।
মাহেরকে শুট করেছে ও অসুস্থ। ওইখানে যাওয়ার পর‌ই নাকি এসব হয়েছে। যার সাথে ডিল করার জন্য গিয়েছিল সেই নাকি বিপক্ষ দলের চক্রান্ত করে নিয়েছে কিন্তু মাহিরের দলের লোক মাহেরকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল। আজকে ফিরে আসবে ওইখানে অনেক বড় বিপদ এই অবস্থা মাহেরকে নিয়ে এখানে থাকার রিক্স।
মাহের এর অবস্থা খারাপ ওকে ডক্টর সহ চিকিৎসা করাতে করাতে বাংলাদেশে আনা হবে।
রুস্তম কথা বলছিল আর কাদছিল। অজানতে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়।
উদাস হয়ে কলেজে গেলাম কিন্তু মন টিকছে না শুধু মাহের কথা মনে পড়ছে। তাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
তার জন্য আমার বুকের ভেতর ব্যথা অনুভব করলাম। বাসায় এসে সারা বিকেল মনমরা হয়ে বসে রইলাম। না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। তাকে আমি সহ্য করতে পারিনা কিন্তু চায় না তার কোন ক্ষতি হোক। শত হোক সে তো আমার স্বামী। আসার সময় রুস্তমের নাম্বার নিয়ে এসেছি।সন্ধ্যার পরে রুস্তম কল করে জানালো মাহির বাংলাদেশে এসেছে এখন ঢাকা হসপিটালে ভর্তি আছে।
সেই সময়ই ঐশীকে নিয়ে হসপিটালে চলে এলাম আমার আর তর সইছে না মানুষটাকে দেখার জন্য আমি ছটফট করছি।
কিন্তু হাসপাতালে এসে পড়লাম বেকাদায়। হসপিটাল ভর্তি মাহেরের লোক সবাই বন্ধুক হাতে হসপিটাল ঘেরাও করে আছে। এসব মাহেরের সুস্থতার জন্য।কারণ তার শত্রুর অভাব নেয়ার তার এই অবস্থা জানলে শত্রুরা তাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করবে এজন্য এত প্রটেকশন। কিন্তু সেই প্রটেকশনের সাথে যে আমাকে ও কেউ ঢুকতে দিচ্ছে না। আমাকে আর ঐশী দরজার কাছে দাড় করিয়ে রেখেছে মাহিরের কেবিনের ধারের কাছে যেতে দিচ্ছে না। কালকে তো আমাদের চেনা যেতে কেন দেবে।
না পেরে রুস্তমকে কল করলাম। রুস্তম এসে পরিস্থিতি সামাল করলো আর আমাদের নিয়ে গেল। আমি ঐশীর এক হাত শক্ত করে ধরে যাচ্ছি। মাহেনের কেবিনে ভেতরে যেতে পারলাম না জানালার থেকেই তার শুকনো মুখটা দেখলাম,
মুখের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম মানুষটার কি অবস্থা হয়েছে। এভাবে একদম দেখতে পাচ্ছি না তাকে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার।আমি হসপিটালে থাকতে চাইলাম রুস্তম থাকতে দিল না।
বিষন্ন মন নিয়ে বাসায় এলাম সারারাত আমার ঘুম হলো না শুধু মাহের এর জন্য মন কেমন করলো পরদিন সকালে আবার চলে গেলাম দেখতে।
আজকে মাহেরের কাছে যেতে পারলাম তার কাছে গিয়ে বসলাম। কাঁপা হাতে তার হাত স্পশ করলাম। তখন সে তাকালো আর আমার দিকে। এমন অবস্থায় ও মাহের ঠোঁটের কোনে হাসি এনে বলল,

সুইটহার্ট তুমি আমার জন্য। আমি ঠিক দেখছি তো।
আমি উনার কথা শুনে আর ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম উনি আমার হাত ধরে টেনে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে বললো।
সবাই তার প্রিয়তমার কান্না দেখলে কষ্ট পায় কিন্তু সুইটহার্ট আমার তোমার কান্না দেখে আনন্দ হচ্ছে সুখ পাচ্ছি। তোমার চোখের জল আমার জন্য
প্যাড আমার জন্য কতটা আনন্দে তুমি ভাবতে পারবে না।তোমার মনের গহীনে যে আমার জন্য অফুরন্ত ভালবাসা আছে তার প্রমাণ এই চোখের জল।
এমন অবস্থায় উনি এসব ভাবছেন আমি ঝাপসা চোখে অনাদিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।
তিনদিন পর মাহেরকে হসপিটাল থেকে ওনার বাসায় আনা হলো। আমি ওনার সাথে ওনার বাসায় চলে এলাম।কারো বাধায় শুনলাম না অদ্ভুত মাহের আমাকে কোন বাধা দেয়নি শুধু আমার কর্মকান্ড দেখেছিল।আমি ভালোবাসি স্বীকার করিনি কিন্তু। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে আমি চাইও না সেবা যত্ন করতে।
মাহের বিছানায় শুয়ে আছে। আমি উনার পাশে বসে আমাকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলাম।
খাওয়ার মাঝে হঠাৎ উনি বললেন,,
এইতো সেদিন তোমাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য ব্ল্যাকমেল করতে হলো। আর আজকে কি সুন্দর বউ স্বামীর সেবা যত্ন করে ভালোবেসে।সবকিছুই অসুস্থতার জন্য ইস আগে যদি জানতাম অসুস্থ হলে তুমি এত আদর যত্ন করবে তাহলে আরো আগেই আমি নিজে নিজেকে শুট করতাম।
উনার কথা শুনে আমি রেগে তাকালাম উনার দিকে।
আপনি আসলে একটা ফাউল লোক। এইসব কেউ বলে। নিজে নিজেকে শুট করতে মানে কি অন্যদের কষ্ট দিতে আপনার ভালো লাগে তাইনা?
অন্যদের না তোমার চোখে আমাকে হারানোর ভয় দেখলে আমার খুব ভাল লাগে।
আপনি খুব খারাপ জানেন আপনি?
হ্যাঁ জানি তো। আসনা যারা আমাকে গুলি করেছে না। ওদের উপর আমার প্রচুর রাগ হলো এখন ওদেরকে আমার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। কেন জানো আমাদের জন্য তুমি আমার এত কাছে।
কথাটা বলতে বলতে মাহের এগিয়ে এসে টপ করে আমার ঠোটে চুমু খেলো। আচমকা ঘটনায় আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম। মাহেরকে আর খাবার খাইয়ে দিতে পারলাম না আবার ওখানে ফেলেই দৌড়ে রুমের বাইরে চলে গেল বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করছে বুকে হাত দিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। লোকটা কখন কি করে বসে আমাকে একদম লজ্জায় ফেলে দেয়।

রাতে ঘুমানোর সময় মাহেরকে বিছানায় ঠিক করে দিয়ে আমি নিচে শুতে গেলে মাহের এক ধমক দিয়ে আমাকে টেনে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
আর ফিস ফিস করে কানে বলে ওঠে,
তুমি না চাইলে আমি তোমার সাথে কখনো জোর করব না শুধু তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।
আমি আর কিছু বললাম না মাহেরের বুকে চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন মাহেরের আগে আমার ঘুম ভাঙলো ঘুম থেকে উঠে মাহেরের নিষ্পাপ মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। ঘুমন্ত অবস্থায় কে নিষ্পাপ লাগে দেখতে। সকালে ব্রাউন কালারের ছোট ছোট চুল পড়ে আছে আমি হাত দিয়ে তার সরিয়ে দিলাম।ঠোঁটের দিকে চোখ যেতেই আমি চমকে গেলাম এত সুন্দর ঠোঁট আমি এত কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি। মাহের দেখতে অসম্ভব সুন্দর একদম নজরকাড়া তাকালে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
মাহের এর সুস্থ হতে এক সপ্তাহ লাগলো আমি সমস্ত দিক থেকে মাহের কে যত্ন করেছি। ওর সমস্ত খেয়াল রেখেছি।
সুস্থ হয়ে মাহের সুট বুট পড়ে তৈরি হতে লাগল আমি রুমে এসে এসব দেখে জিজ্ঞেস করলাম,

আপনি কোথায় যাচ্ছেন এরকম পরিপাটি হয়ে?
মাহের আমার দিকে ঘুরে আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে যাচ্ছি বউ।
মাহের এর মুখে ব‌উ শুনে হৃদয় স্পন্দন থেমে গেল। এটা সুখের অনুভুতি আমার সারা শরীর বয়ে গেল।
তুমি নিজের খেয়াল রেখো আমার আসতে লেট হবে বোধহয়।
কিন্তু আপনি আবার কোথায় যাচ্ছেন কেবল একটু সুস্থ হয়েছেন এখনই?
মাহের আমার গালে হাত দিয়ে বলল,
তুমি আমার জন্য চিন্তা করলে আমার ভাল লাগে কিন্তু বউ আজকে বলছি। তোমার চিন্তা করার দরকার নেই তোমার বরের কিচ্ছু হবে না। মায়ের হাতের বালা সেদিন আঘাত করতে পেরেছে বলে প্রতিদিন পারবে না। ডোন্ট ওয়ারী।
বলে আমার কপালে আবার চুমু খেয়ে চলে গেল গটগট পায়ে।আমি বারান্দায় এসে নিচে দাঁড়িয়ে দেখলাম মাহের এর সাথে পরপর তিনটা গাড়ি চলে গেল।
সারাদিন আমি মাহেরের চিন্তা করতে লাগলাম। ঐদিন অবস্থা কেউ সুস্থ হলেও তো এত বড় একটা ঝড় বয়ে গেল ওর উপর দিয়ে আবার কোথায় চলে গেল সারাদিন আমি দুশ্চিন্তায় কাটালাম দুপুরে একবার কথা হয়েছিল অবশ্য। আর কথা হয় নাই সন্ধ্যায় চলে আসবে বলেছিল সন্ধ্যার পর থেকে প্রহর গুনতে লাগলাম মাহের এর দেখা নেই দশটা বেজে গেল কাজের লোকের খাবার খেতে বলল আমি খেলাম না। মাহের আসল একদম খাব। 11 টা বেজে গেল আমি চিন্তায় রুমে পায়চারি করছি। আজকে আবার কোন বিপদ হলো না তো অজানা ভয় আমার বুকের ভেতর ছটফট করতে লাগলাম। বারবার আল্লাহ কে ডাকছি যেন মাহের সুস্থ থাকে।আমি নিজে অনুভব করলাম ইদানিং মাহের চিন্তা ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারছিনা। সব সময় তাকে হারানোর ভয়ে বিষন্ন হয়ে থাকছি তাহলে কি আমি মাহির কে ভালবেসে ফেলেছি। দেখতে দেখতে বারোটা বেজে গেল। আমি বিছানার কোনায় বসে বসে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। তিনটা জাগানা পেয়ে দেখি এখন ও মাহের আসে নি ধড়মড়িয়ে উঠে বসে আমার বুকের ভেতর কু ডাকছে আমি নিশ্চিত উনার কোনো বিপদ হয়েছে। ফোন নিয়ে বারবার নাকি ফোন করছি কিন্তু নাম্বার অফ
রুস্তম কে কল করলাম তার ফোন অফ।
আমি এবার ভয় কাঁদতে লাগলাম তখনই গাড়ির শব্দ পেয়ে ছুটে বেরিয়ে এলাম বারান্দায় এসে দেখলাম মাহের এসেছে তার শরীরে রক্ত দেখেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে