শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৫

0
1730

#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#Writer_Nondini_Nila
#Part_5

আমি ফ্যালফ্যাল করে বেক্কেল হয়ে মাহের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি।উনাকে আমি চিনি না জানি না কখনো দেখি এই ফাস্ট দেখলাম কিন্তু নাম টা বহু বার শুনেছি মাফিয়া উনি।সেই হঠাৎ আমার সামনে এসে আমাকে বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছে সাথে ভালোবাসি বলছে হচ্ছে কি এসব?
একটু আগেই গরগর করে নিজের নাম বলেছে।আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আপনি কি পাগল?
“আমার কথা শুনে মাহের বলল, হুম আমি পাগল হয়ে গেছি তোমার জন্য। চলো আমার সাথে।
“ইম্পসিবল সরুন যতসব ফালতু লোক।
বিরক্তে আমার কপাল কুঁচকে আসছে। উনি কতো ভয়ংকর শুনেছিলাম আর এখন তো দেখছি এর মাথায় প্রবলেম।
আমি পাস কাটিয়ে চলে আসতে গেলে মাহের আমার হাত ধরে নেয় আমি থমকে দাঁড়ালাম। আবার টাচ করছে রেগে পেছনে ঘুরে বললাম হাত ছারুন।
ছেলেটা হাত ছারছেনা হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি রাগে গজগজ করছি মন চাইছে চর মেরে গাল লাল করে দেয় কিন্তু উনি তো তাহলে আমাকে মেরেই ফেলবে নিশ্চিত।

কি অসভ্যতামি হচ্ছে ছারুন হাত?
হাত ছুটানোর চেষ্টা করে বললাম।
মাহের বলল, নো সুইটহার্ট আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না। তুমি আমার দেখা প্রথম নারী যাকে প্রথম দেখেই আমি থমকে গেছি যার সুরের প্রমে পরেছি। যার দৃষ্টিতে আমি খুন হয়েছে। সারারাত তোমার বিরহে আমি ঘুমাতে পারি নি ছটফট করেছি। এমনটা কখনো হয়নি আমার সাথে এই প্রথম এমন অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছি আমি। তোমাকে আমি ছারতে পারবো না।
আমি অবাক হয়ে মাহের এর দিকে তাকিয়ে আছি‌।
মাহের নিজের প্রেয়সীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রেগে আছে তার প্রেয়সী রাগে নাক লাল হয়ে গেছে কি মিষ্টি লাগছে দেখতে পরনে সুতির ছেলোয়ার কামিজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কম দামী ড্রেস এটা।
সবুজ কালারের চুল পেছনে বেনি করে রেখেছে কিছু ছোট চুল কানের পেছনে গুঁজে রেখেছে। হাতে নীল রঙের চুরি কানে সাদা পাথরের ছোট দুল। চুরি কালকের ছিলো এই গুলোই জামার সাথে ম্যাচ করে নাই কিন্তু তবুও খুব সুন্দর লাগছে অন্য কালারেও ওর কি আর চুরি নেই?ম্যাচ করে পড়েননি কেনো তাহলে বেশি ভালো লাগতো।

মনের কথা মনে রেখে দিলো মাহের। কিছু বলতে যাবে তখন রুস্তম এসে কানে কানে বলল,
স্যার ম্যাম কে ছেড়ে দেন?
রুস্তমের কথা শুনে মাহের ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
স্যার এভাবে তাকাচ্ছেন কেন আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি।
কি বলতে চাস সরাসরি বল?
স্যার এখন ছেড়ে দেন এইভাবে কেউ বিয়ের কথা বলে দুদিন যেতে দিন আস্তে আস্তে আপনি ম্যামকে এক দেখায় ভালোবেসেন ম্যাম তো ভালবাসেনি তাকে একটু সময় দিন।
নো রুস্তম আমি সময় দিতে পারবো না। তুমি তো জানো আমি যেটা চাই সেটা নিয়ে কখনওই টাইম স্প্রে করিনা।
কিন্তু এই ভাবে যদি এখন ম্যাম কে জোর করে ধরে নিয়ে যান তাহলে তারা গুন্ডামি করা হবে।যদি এইভাবে বিয়ে করেন তাহলে তো গুন্ডামি করে বিয়ে করা হবে।
হলে হবে।
কিন্তু ম্যাম তো এতে আপনাকে আরো ভুল বুঝবে।
মাহের কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে ছোঁয়ার হাত ছেড়ে দিল। ছোঁয়া ছাড়া পেতে ছুটে পালালো কোনমতে। কোন পাগলের পাল্লায় পড়ে ছিলাম আল্লাহ জানে খুব জোর বেঁচে গেছি।
সেদিন থেকে আমার ডিস্টার্ব শুরু হলো। প্রতিদিন ভার্সিটি আশার সময় যাওয়ার ওই মাহের লোকটা আমাকে নিয়ে যায় দিয়ে যায়।আর প্রতিটা সময় আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে আর ভালোবাসা নিয়ে বড় বড় কাহিনী কবিতা শোনায়। তার এমন লাগছে তার আমাকে এতোটা মিস করেছে। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম তাকে বললেও সে শোনে না। একদিন আমাকে একটা ইয়া শপিং মলে নিয়ে এলো। আর নিজের পছন্দমত একশোরকম না ড্রেস কিনে দিলো শাড়ি 12 কালারের বারোটায় থ্রি পিস গ্রাউন।তারপর নিয়ে গেল কসমেটিক দোকানে সেখানে গিয়ে দোকানের যতরকম কসমেটিক আছে সব কিনে দিল। আসলে প্রথমে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
“সুইট হার্ট তোমার ইচ্ছামত কসমেটিক নিয়ে নাও।
আমি রাগে কটমট উনার দিকে তাকে বলেছিলাম,,
“আমি কসমেটিক ইউজ করি না আমার লাগবে না।
“তা বললে তো হবে না সেটা না তুমি আমার বউ হবে তোমার কসমেটিক তো লাগবেই আর মার্কেটের সেরা তাই লাগবে।
বলে নিজের ইচ্ছামত কিনেছে আমি রাগে কটমট করে তাকিয়ে ফুসফুস করতে করতে শুধু দেখেছি।
সবকিছু কিনে আমাকে ভাসায় দিয়ে গেল।
এতদিনে ঐশীকে সব বলে দিয়েছি ও সব জানে ওতো মাহেরের সাপোর্টার। ওর শুধু একটাই কথা মাহে্য তোকে লাইক করেছে ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই প্লিজ রাজি হয়ে যা। আমি বলেছি ওমন গুন্ডা মাস্তান কে আমি কখনোই বিয়ে করব না।আর তাকিতাম ভালোবাসি না সে ভালোবাসলেই হলো নাকি কেমন জোর করে সবকিছুতে এমন পাগল কে আমি বিয়ে করতে পারবোনা।
আমাকে বোঝাতে না পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও
ঐশী।
ইনকোর্স পরীক্ষা নিয়ে একটা ইম্পরট্যান্ট চাপটার আমি যেটা পারি না।চিন্তায় আঙুল কামড়াচ্ছি ম্যাম কে বলেছে ম্যাম বলেছে এখন তার হাতে সময় নাই কি করব আমি তো প্রাইভেটে পড়ি না। তখন ম্যাম আমাকে সাজেস্ট করলো আমাদের ক্লাসের ফার্স্টবয় রবিনের সাথে কথা বলার জন্য। রবিন নাকি খুব ভালো পারে ওর থেকে আমি যেন চ্যাপ্টারটা বুঝিনেই।ছেলেমানুষ দেখে আমার একটা আনইজি ফিল হল কিন্তু তবুও নিজের স্বার্থে আমি রাজি হলাম।
আর রবিনের সাথে কথা বললাম ছেলেটা মোটামুটি ভালোই তাই ও আমাকে বলল ক্লাস শেষে আমাকে মাঠে একটা জাম গাছ আছে সেইটা নিচে থাকতে। ওখানে আমাকে পড়াবে সেদিনই আমার কাল হলো। আমরা পরছিলাম তখনই কোথা থেকে হতদন্ত হয়ে মাহের এসে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল রবিনের দিকে। সেইদিনই আমার জন্য ছিলো সবচেয়ে অভিশপ্ত দিন। রবিনের অবস্থা সেদিন আধমরা করে ছেড়েছে।সেদিনে মাহের আমাকে বিয়ে করে আমি বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিলাম না বলে ও বলে রবিনকে মেরে ফেলবে বলে যদি বিয়ে না করি। বাধ্য হই আমি রাজি হই।
মাহের আমাকে আর ওর একটা বাসায় নিয়ে আসে। তারপর বিয়ের জন্য লাল বেনারসি কসমেটিক সবকিছু আনে। আমি শুধু পাথর হয়ে বসেছিল। মাহের নিজে আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেয়। আমার চোখ দিয়ে শুধু গল গল করে পানি পড়ছিল। সেইদিনের থেকে মাহেরকে আমি ঘৃণা করি। এইটা ঠিক ও আমার সাথে ফিজিক্যালি আসেনি এখনো।
আমাকে সময় দিয়েছে আমি নিজে থেকে ওর কাছে নাই গেলে নাকি আমার সাথে সম্পর্ক তৈরী করবে না।কিন্তু ওরেই ভালো না ভাসলেও আর করা পাগলামি তে আমি শুধু রাগতাম এর বেশি কিছু। মনে মনে একটু হলেও অনুভূতি জন্মেছিল ঐদিন কার পর থেকে আমি ওকে শুধু ঘৃণা করি। পরেও জানতে পেরেছে রবিনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এজন্য হাজার বার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু আমি নরম হয়নি। সেদিন আমিও হিংস্র রূপ দেখেছি। কতটা নির্দয় এর মত মেরেছিল রবিনকে। এতটা পাষাণ কি করে হতে পারে মানুষ।
বিবাহের দুদিন পরে ও আমাকে আমার বাসা ভাড়া বাসায় রেখে যায়।তার কারণটা জানতে পেরেছি ওর শত্রুরা নাকিজেনে গেছো বিয়ে করেছে তাই সে এখন টুপ হিসেবে আমাকে ব্যবহার করতে চাই।
এজন্য ও আমাকে নিয়ে কোন রিক্স নিতে চায় না তাই আবার আমার জীবন আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু মাসে মাসে টাকা আর আমার জন্য ফলো করার জন্য রুস্তম কে রেখেছে আর নিচে লুকিয়ে আমার সাথে দেখা করে। এইতো কিছুদিন আগে ভালোবাসা দিবস গুলো,
আমি বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাত আমার ফোনটা বেজে ওঠে ফোন রিসিভ করে দেখি মাহির ফোন দিয়েছে।
ফোন কানে নিতেই মাহের স বলে,, তাড়াতাড়ি নিচে নামো, আমি নিচে আছি।
আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে কি সব বলছেন এই মধ্যে রাতে আমি নিচে নামবো কেন?
আমি বলেছি তাই ।
আমি আসতে পারবো না সরি।
তারাতাড়ি আসো নাহলে কিন্তু আমি উপরে চলে আসবো।
বলেই ফোন কেটে দেয় আমি হতদম্ব হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি। তারপর তারাতাড়ি নিচে এলাম। দারোয়ান কে দেখলাম না তাই বাইরে এলাম। গাড়িতে হেলান দিয়ে মাহের দাড়িয়ে আছে তার চোখে-মুখে ক্লান্ত ভড়া আমি যেতেই ক্লান্ত চোখেই হাসি ফুটালো আর আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে